প্রথম যখন ইউরোপে এসেছি, পাশ্চাত্য এ পৃথিবীর অনেক ব্যাপারই মুগ্ধ করেছিল
আমাকে। এখনও করে। একটি বিষয়ের দ্বন্দ্ব থেকে মুক্ত হতে সময় লেগেছিল একটু
বেশি, তা হচ্ছে, ইউরোপীয় নর-নারীর প্রেম। পেশাগত কারণে ইউরোপের প্রায় সব
দেশের বিভিন্ন বয়সের, বিভিন্ন ধরনের মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে উঠেছে আমার।
সেটাও সাহায্য করেছে এ বিষয়ের দ্বন্দ্ব অতিক্রম করতে।
অযৌক্তিক প্রথা থেকে মুক্ত এই দেশে, চার-পাঁচ বছরের একটি শিশু যদি মা-বাবাকে বলে, অমুকের সঙ্গে আমার প্রেম হয়েছে, আমি তাকে ভালবাসি। তাহলে মা-বাবা এ বিষয়ে জানতে চান। শিশুর প্রেমিক বা প্রেমিকাটির সম্পর্কে আগ্রহ দেখান। কখনও যদি শিশুটি তার প্রেমিক বা প্রেমিকার সঙ্গে ঝগড়া করে এসে বলে, ‘ওকে আমি আর ভালবাসি না, ওর সঙ্গে আমার ঝগড়া হয়েছে।’ তাহলে মা খুব আদুরে গলায় জানতে চাইতে পারেন, ‘কেন ঝগড়া হোল, এখন কী হবে, কাকে ভালবাসবে তুমি?’ কিছুদিন পরে শিশুটি যদি বলে, এখন আমি অন্য একজনকে ভালবাসি, তখনও মা-বাবা, দাদু-নানুরা একই রকমভাবে আগ্রহ দেখান এবং শিশু তাকে কিছু উপহার দিতে চাইলে, অবশ্যই তা কিনে দেন। এই প্রেম প্রেম খেলার ভেতর দিয়েই শিশুর বিকাশ ঘটতে থাকে, প্রেম উপলব্ধির। অন্যান্য শারীরিক এবং মানসিক বিকাশের মতোই।
চতুর্থ শ্রেণী থেকে শুরু হয় প্রেম ও সেঙ্ বিষয়ে স্কুলগত শিক্ষা। নির্দিষ্ট সব প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকেও এসব বিষয়ের ভালমন্দের ওপর সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা-বিশেস্নষণও দেওয়া হয়।
শিশু বয়স থেকে টিনএজ পর্যন্ত যে প্রেম, তার সময়সীমা দীর্ঘ হয় না মোটেও। কিছুদিন আগে যে বালক-বালিকাকে হাত ধরে হাঁটতে, চুমু খেতে দেখেছি তাদেরই যখন আবার একইভাবে অন্যজনের সঙ্গে দেখতাম, তখন মনে হতো এসব কি সত্যিই প্রেম? এ রকম বালক-বালিকা, কিশোর-কিশোরীদের সঙ্গে এ ব্যাপারে আলাপ করে যা বুঝেছি, তার স্বাভাবিকতা না মেনে উপায় ছিল না।
টিনএজ মার্লিনাকে একদিন প্রশ্ন করেছিলাম, ‘কিছু দিন আগে অলিভারের জন্য অস্থির থাকতে তুমি, আর এখন ভালবাস স্টিভেনকে, কি করে সম্ভব?’ ‘তখন ওটাই সত্যি ছিল, এখন এটাই সত্যি। অলিভারের ভেতরের দিকটা যখন জেনেছি, তখন আর ভাল লাগেনি ওকে’ বলেছিল মার্লিনা। ‘যদি স্টিভেনের সম্পর্কেও একদিন বিপরীত ধারণা বা অভিজ্ঞতা হয়, তবে কি ওকেও ছেড়ে দেবে?’ জানতে চেয়েছিলাম। ‘অবশ্যই’ স্পষ্ট জবাব ছিল মার্লিনার।
এ বিষয়টি নিয়ে যতই ভেবেছি, মনে হয়েছে দু’জন নারী-পুরম্নষের প্রেম ভালবাসা তো মূলত ভাল লাগার দায়ে আবদ্ধ, অন্য কোন দায় নেই এতে। ভাললাগার পরিমাণ কমে এলে, ভালবাসার পরিমাণ তো অননত্ম অসীম হয়ে উঠতে পারে না।
পৃথিবীর কোন কিছুই যদি অবিনশ্বর না হয়, তো নর-নারীর প্রেম সম্পর্ক অবিনশ্বর হবে কেন? প্রেম, নারী ও পুরম্নষের হৃদয়কে কিছুদিন একত্রে ধরে রাখতে পারে মাত্র। তবুও গভীর প্রেমে পড়ার পর একজন অন্যজনকে বলে, ‘তুমি আমার চিরদিনের, জন্ম-জন্মানত্মরের’ ধরনের সংলাপ। কেন বলে? বলে, সঠিক জ্ঞান এবং অভিজ্ঞতার অভাবে। বলে, ভয় থেকে। বলে, প্রেম সম্পর্ককে স্থায়ী করার অলিখিত চুক্তি আর নিশ্চয়তা হিসেবে। যখন সে এসব কথা বলছে, তখন সে বুঝতেও পারছে না, আজ যাকে এত ভাল লাগছে, পরিবর্তনের অনিরম্নদ্ধ স্রোতে মন বা হৃদয়ের চাহিদা বদলে গেলে, কাল তাকে আর ভাল লাগবে কি না। এক মুহূর্ত পরে কী ঘটবে তা জানার উপায় যেখানে মানুষের নেই, সেখানে, জন্ম-জন্মানত্মরের নিশ্চয়তা দেবার পরে যখন সম্পর্কের ভাঙ্গন শুরম্ন হয় এবং তা অনিবার্য হয়ে ওঠে তখন একজন অন্যজনকে কি বলে? ‘মিথ্যেবাদী’ ‘অবিশ্বাসী’ ‘ভ-’ ‘প্রতারক’সহ এ ধরনের যত শব্দ আছে সবই কী ব্যবহার করে না? অবশ্যই করে। ভেতরের সবটুকু ঘৃণা বের করে দিতে, বিক্ষত মনটাকে সুস্থ করে তুলতে এসব শব্দ টনিকের মতোই কাজ করে তখন।
‘নারী ও পুরম্নষ পরস্পরের প্রতি আকর্ষণ বোধ করবে এটা তাদের নিয়তি এবং আরও মমর্ানত্মিক নিয়তি হচ্ছে, তাদের আকর্ষণ দীর্ঘস্থায়ী হবে না’ লিখেছেন হুমায়ুন আজাদ। কিন্তু কেন তাদের আকর্ষণ দীর্ঘস্থায়ী হবে না তার বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যাও আছে। গবেষকদের মতে, মানুষের অন্য অনেক নেশার মতো, প্রেমও এক বিশেষ ধরনের নেশা। তবে এই নেশা অন্য নেশার তুলনায় অল্পায়ু। প্রেম হচ্ছে এ্যামিন, ইথাইল, ফিনাইলের জৈব রাসায়নিক নেশা। কারও প্রতি প্রেম আকর্ষণ অনুভবের সঙ্গে সঙ্গে, মাথা থেকে এই রাসায়নিক জোয়ার, স্নায়ুতন্ত্রের মাধ্যমে রক্তকে নির্ভর করে, সারা শরীরে পস্নবিত হয়। আর তা থেকেই বিভিন্ন রকম প্রেম উপসর্গ দেখা দেয়। কিছু সময় অতিক্রানত্ম হওয়ার পরে এই রসায়ন শরীরের ভেতরে একটা টলারেন্স তৈরি করে এবং তা ক্রমাগত বাড়তেই থাকে। এর সঙ্গে লড়ার মতো প্রেমের নেশা, শরীর আর তৈরি করতে পারে না। যার ফলে প্রেমানুভূতি তার তীব্রতা হারাতে শুরম্ন করে। টলারেন্স যত বাড়ে, তত কমে আসে প্রেম। কমতে কমতে শিথিল হয়ে যায় এই সম্পর্ক। প্রেম অভিলাসী মানুষেরা বিচলিত, বেদনাহত হয়ে পড়েন। তবুও জীবনত্ম করে তুলতে পারেন না এই নিষ্ক্রিয়তা, শিথিলতা।
প্রেম সম্পর্কের এক পর্যায়ে নর-নারী দেহ স্পর্শের যে সুখ পেতে চান, তার কারণও অঙ্েিটাসিন নামের এক জৈব রাসায়নিক, যা মানুষের রক্তে মাত্রাভেদে মিশ্রিত থাকে। অধিকাংশ প্রেম সম্পর্কের নির্ধারিত গনত্মব্য হচ্ছে দেহজ সুখ। প্রেম অনুভূতি দেহের বা যৌন সুখের মধ্যে তার গনত্মব্য খুঁজে না পেলেও একটা নির্দিষ্ট সময়ের পরে এই সম্পর্কের জোয়ারে ভাটা পড়তে থাকে। প্রতিটি প্রেমের সময় সীমা নির্দিষ্ট করে দিয়েছে প্রকৃতি। গড়ে প্রায় চার বছর। বিয়ে নামধেয় প্রথার বাঁধনও কোন শক্তিময় ভূমিকা রাখতে পারে না এ ব্যাপারে। বরং দ্বৈত জীবনকে, প্রেম সম্পর্ককে করে তোলে একঘেয়ে, ক্লানত্মিকর। সুদীর্ঘ সময় যৌথ জীবনযাপন করা মানেই প্রেমানুভূতির মাধুর্যে স্নাত জীবন নয়। অনেক রকম দায়-দায়িত্বের জটিল শেকলে আবদ্ধ হয়ে একত্রে থাকার অভ্যেস মাত্র। তার চেয়েও জরম্নরী সমাজকে সুখী করার ব্যাপারটি।
প্রেম ও যৌনতা নিয়ে ব্যাখ্যা বিশেস্নষণ লেখালেখি করা মানে সমাজের মানুষকে যৌন স্বেচ্ছাচারিতা, বা অবাধ যৌনতার দিকে এগিয়ে যাওয়ার জন্য প্ররোচিত করা নয়। বরং বিভিন্ন প্রচার মাধ্যমে এসব বিষয়ে সঠিক, বস্তুনিষ্ঠ সুন্দর আলোচনা থেকেই সম্ভব হবে, সমাজের মানুষকে বিকৃতির হাত থেকে বাঁচানো। প্রেম ও যৌনতাকে সঠিক এবং রম্নচিসি্নগ্ধ পথে পরিচালিত করা। সত্য, যৌক্তিক, সুন্দর ও সঠিক শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে, সেই শিক্ষাকে নিজের জীবনে যিনি প্রয়োগ করতে পারেন, মানুষ হিসেবে জীবনযাপন করার সনদপত্রটি তারই হাতে তুলে দেয় প্রকৃতি।
মানুষের প্রতিষ্ঠিত বিধানের কাঁচি, মানুষের হৃদয়ের ওপর চালানো যায়নি। যায়নি বলেই, প্রেমে পড়লে প্রতিটি মানুষ তার প্রেমিক, প্রেমিকার সঙ্গে আচরণ করেন তার নিজের স্বভাবমতো। তারপরও আমার ধারণা, পৃথিবীর বেশিরভাগ প্রেমিক-প্রেমিকা প্রবল আবেগায়িত অবস্থায় একে অন্যকে যেসব কথা বলেন, অধিকাংশ প্রেমের গানে, কবিতায়, সাহিত্যে যে প্রেমাবেগ প্রকাশ করেন তার ধরন অনেকটা একই রকম। ‘তুমি আমার’ ‘তোমাকে পেলে আমার আর কিছুই চাই না’ ‘তোমার চেয়ে বেশি সুন্দর আর কেউ নয়’ ‘আমি কোন দিন তোমাকে ছেড়ে যাব না’ ‘সারা জীবন তোমাকে ভালবাসব’ ‘আমি তোমাকে আমার জীবনের চেয়েও বেশি ভালবাসি’ ধরনের সংলাপ কী সব প্রেমিক-প্রেমিকাই কোন না কোন সময় বলেননি? হাজার হাজার বছর ধরে চলে আসা এ রকম সব কথা, আমার মতে অজ্ঞানে অসচেতনে করা প্রতারণা। কিভাবে? বলছি। এই যে প্রেমের সংলাপ লিখলাম, এ গুলোর সবই কি চূড়ানত্ম কথা বলে দেয়া নয়? কিন্তু আমরা তো জানি, প্রকৃতিতে এবসলুট বা চূড়ানত্ম বলে কিছু নেই। তাহলে এ রকম চূড়ানত্ম কথা বলা বা লেখার অধিকার আমাদের থাকে কী করে?
‘তোমাকে পেলে আমার আর কিছু চাই না’ বলার আগে নিজেকেই প্রশ্ন করা দরকার, সত্যিই কি তাই? তাকে পেলেই কি অন্ন, বস্ত্র, আশ্রয়, অর্থসহ অন্য সব অভাব মিটে যায়? যায় না। যায় না বলেই যদি এভাবে বলা যায়, ‘আমার জীবনের সুখকে সমৃদ্ধ করার জন্য তোমাকে চাই’ তাহলেই কি প্রেমের সংলাপ যুক্তিসঙ্গত হয়ে ওঠে না?
‘তোমার চেয়ে বেশি সুন্দর আর কেউ নয়’ তাকে খুশি করার জন্য এ রকম কথা না বলে যদি বলা হয়, ‘তোমাকে আমার কাছে ভারি সুন্দর লাগে’ তাহলেই কি তা সত্যতায় অনন্য হয়ে ওঠে না?
‘আমি কোনদিন তোমাকে ছেড়ে যাব না’ না বলে, যদি বলা হয় ‘যত দিন সম্ভব তোমার কাছেই থাকব’ তবে কী তা মিথ্যা বলা হবে?
‘সারাজীবন তোমাকে ভালবাসব’ বলার মতো নিশ্চয়তা বা গ্যারান্টি, কী কেউ কাউকে দিতে পারেন আসলে? পারেন না। কারণ মানুষের জীবনের সব কিছুই হচ্ছে রিলেটিভ। প্রায় সব কিছুই নির্ভর করে অন্য কিছুর ওপরে। যাকে মানুষ ভালবাসে, তার প্রতিমুহূর্তের আচরণের ওপর নির্ভর করে, তাকে কতটা ভালবাসা যায় এবং কতদিন। তাই, সঠিক হয়ে উঠবে সংলাপ, যদি বলা হয়, ‘এই মুহূর্তে তোমাকে আমি আমার সমসত্ম অনুভূতি দিয়ে ভালবাসি, এখন এটাই সত্যি।’
‘আমি তোমাকে আমার জীবনের চেয়েও বেশি ভালবাসি’ এ কথা কাউকে বলা মানেই হচ্ছে, অচেতনে মিথ্যেবাদী হওয়া। মনে রাখা ভাল, ৯৮ ভাগ মানুষ বেঁচে থাকে, মূলত তার নিজের প্রতি প্রবল প্রেমের ভিত্তিতে। তাই নিজের চেয়ে বেশি ভাল সে কাউকেই বাসতে পারে না। মা তার সনত্মানকে নিজের জীবনের চেয়ে বেশি ভালবাসেন বলে আমার মনে হয় না। যদি তাই হতো, তাহলে সনত্মানের মৃতু্যর পরও মা বেঁচে থাকতে পারতেন না। এ রকম কথা যারা বলেন, তাদেরকেই ভেবে দেখতে বলছি, এসব কথা সত্য এবং সঠিক কি না। যা মিথ্যে তা বিশ্বাস করলে কি ঠকতে হয় না? হবে না এক সময়?
ভালবাসা প্রকাশের ভাষা, সুচিনত্মিতভাবে সঠিক এবং যৌক্তিক করে তুলতে পারলে, এই সম্পর্ক সমৃদ্ধ এবং যথার্থ হয়ে উঠবে সততায়। এক সময়ে যে কোন কারণে প্রেম সম্পর্কের মৃতু্য হলেও একজনের প্রতি অন্যজনের শ্রদ্ধাবোধ হারিয়ে যাবে না। অসততা বা মিথ্যাচারের দায়ে অভিযুক্ত হতে হবে না কাউকেই। বন্ধুত্ব রূপানত্মরিত হবে না ভয়াবহ শত্রম্নতায়। প্রেম না থাকুক, পরিচয়ের স্বাভাবিক সম্পর্ক টিকিয়ে রাখা যাবে। আর সেটাই কী হওয়া উচিত নয়?
সংলাপ ছাড়াও আরও কিছু বিষয়ে মনোযোগী হলে প্রেম সম্পর্কের স্থায়িত্ব বাড়ানো যেতে পারে।
এক, তার কাছ থেকে সব ব্যাপারেই নিজের ইচ্ছে বা পছন্দমতো বেশি কিছু প্রত্যাশা না করে, তার সব ধরনের যোগ্যতা ও গুণাবলীর কথাও মনে রাখা। সে কতটা দিতে পারে তার পরিমাপ করে প্রত্যাশা করা, অথবা না করা।
দুই, তার কাছেই নয় কেবল, যে কারও চাটুকারিতা কে প্রশ্রয় না দেয়া এবং অপছন্দ করা।
তিন, দু’জনের মধ্যে বেশিরভাগ ব্যাপারেই নির্দিষ্ট দূরত্ব তৈরি করে, তা মেনে চলা।
চার, দু’জনের একানত্ম সময়ের প্রতি সম্মানিত থাকা, বৈচিত্র্য সৃষ্টি করে প্রতিটি দিনকে অন্যতম একটি দিন করে তোলা।
পাঁচ, তার ভাললাগা, মন্দলাগা, ব্যক্তিসত্তা, ব্যক্তিস্বাধীনতাকে মেনে নিয়ে, শ্রদ্ধা করে সম্পর্ক রক্ষা করা।
ছয়. ‘তার কাছে কি পেলাম’, কেবল এ কথা না ভেবে ‘তাকে কি দিলাম’ সেটা একটু বেশি ভাবতে চেষ্টা করা। সম্ভব হলে দিতেও চেষ্টা করা।
সাত. ভালবাসা, সম্মান, শ্রদ্ধা ও মনোযোগ পাবার জন্য সবচেয়ে জরম্নরী হচ্ছে এ ব্যাপারে সব রকম যোগ্যতা অর্জনের চেষ্টা করা। তাহলে, একমাত্র তাহলেই, এই সম্পর্কের আকর্ষণ এবং স্থায়িত্ব বাড়িয়ে তোলা, হয়ত অসম্ভব হবে না। আর তার ফলাফল, প্রায় সবটাই হবে পজেটিভ।
যারা আমার সঙ্গে একমত হতে পারছেন না, যারা এখনও ভাবছেন, সবটুকু হৃদয় মন যাকে দিয়েছি, যদি ভাবতেই না পারি, ‘সে আমার, চিরদিন সে আমার’ তাহলে কী করে এই সম্পর্ক তার ভিত্তি খুঁজে পাবে? কী করে ভালবাসা হবে তীব্র? তাদের জন্য বলছি, আজ আপনার যে চিনত্মা চেতনা, দশ বছর আগেও কী তা এমনই ছিল, সব ব্যাপারে? ছিল না, তাই না? তাহলে আজ যাকে আপনার ভাবছেন, কাল যদি তাকে আর সে রকম মনে না হয়, কী করবেন? বলবেন, ‘তুমি আমারই?’ হয়ত বলবেন না। বরং এক সময় যে বলতেন সে জন্যই হয়ত কষ্ট হবে, খারাপ লাগবে। বাগানের ফুল কি আমাদের? তাই বলে কি আমরা ফুলকে ভালবাসি না? মুগ্ধ কী হয়ে উঠি না তবুও?
সুখ, স্বল্পস্থায়ী হয় যদিও তবু তা সুখ।
সব ব্যাপারেই দু’একটি ব্যতিক্রম থাকে। তা আপনিও জানেন, আমিও জানি। ব্যতিক্রম বা বিচ্ছিন্ন কোন ঘটনা দিয়ে কী সার্বিক, বা ইনজেনারেল অবস্থার ব্যাখ্যা বা মূল্যায়ন করা যায়? না তাতে সত্যকে উদ্ধার এবং প্রচার করা সম্ভব হয়? আর সত্য যদি সঠিকভাবে উদ্ধারই না করা যায়, তাহলে কী সত্য বলা, বা লেখা সম্ভব?
অযৌক্তিক প্রথা থেকে মুক্ত এই দেশে, চার-পাঁচ বছরের একটি শিশু যদি মা-বাবাকে বলে, অমুকের সঙ্গে আমার প্রেম হয়েছে, আমি তাকে ভালবাসি। তাহলে মা-বাবা এ বিষয়ে জানতে চান। শিশুর প্রেমিক বা প্রেমিকাটির সম্পর্কে আগ্রহ দেখান। কখনও যদি শিশুটি তার প্রেমিক বা প্রেমিকার সঙ্গে ঝগড়া করে এসে বলে, ‘ওকে আমি আর ভালবাসি না, ওর সঙ্গে আমার ঝগড়া হয়েছে।’ তাহলে মা খুব আদুরে গলায় জানতে চাইতে পারেন, ‘কেন ঝগড়া হোল, এখন কী হবে, কাকে ভালবাসবে তুমি?’ কিছুদিন পরে শিশুটি যদি বলে, এখন আমি অন্য একজনকে ভালবাসি, তখনও মা-বাবা, দাদু-নানুরা একই রকমভাবে আগ্রহ দেখান এবং শিশু তাকে কিছু উপহার দিতে চাইলে, অবশ্যই তা কিনে দেন। এই প্রেম প্রেম খেলার ভেতর দিয়েই শিশুর বিকাশ ঘটতে থাকে, প্রেম উপলব্ধির। অন্যান্য শারীরিক এবং মানসিক বিকাশের মতোই।
চতুর্থ শ্রেণী থেকে শুরু হয় প্রেম ও সেঙ্ বিষয়ে স্কুলগত শিক্ষা। নির্দিষ্ট সব প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকেও এসব বিষয়ের ভালমন্দের ওপর সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা-বিশেস্নষণও দেওয়া হয়।
শিশু বয়স থেকে টিনএজ পর্যন্ত যে প্রেম, তার সময়সীমা দীর্ঘ হয় না মোটেও। কিছুদিন আগে যে বালক-বালিকাকে হাত ধরে হাঁটতে, চুমু খেতে দেখেছি তাদেরই যখন আবার একইভাবে অন্যজনের সঙ্গে দেখতাম, তখন মনে হতো এসব কি সত্যিই প্রেম? এ রকম বালক-বালিকা, কিশোর-কিশোরীদের সঙ্গে এ ব্যাপারে আলাপ করে যা বুঝেছি, তার স্বাভাবিকতা না মেনে উপায় ছিল না।
টিনএজ মার্লিনাকে একদিন প্রশ্ন করেছিলাম, ‘কিছু দিন আগে অলিভারের জন্য অস্থির থাকতে তুমি, আর এখন ভালবাস স্টিভেনকে, কি করে সম্ভব?’ ‘তখন ওটাই সত্যি ছিল, এখন এটাই সত্যি। অলিভারের ভেতরের দিকটা যখন জেনেছি, তখন আর ভাল লাগেনি ওকে’ বলেছিল মার্লিনা। ‘যদি স্টিভেনের সম্পর্কেও একদিন বিপরীত ধারণা বা অভিজ্ঞতা হয়, তবে কি ওকেও ছেড়ে দেবে?’ জানতে চেয়েছিলাম। ‘অবশ্যই’ স্পষ্ট জবাব ছিল মার্লিনার।
এ বিষয়টি নিয়ে যতই ভেবেছি, মনে হয়েছে দু’জন নারী-পুরম্নষের প্রেম ভালবাসা তো মূলত ভাল লাগার দায়ে আবদ্ধ, অন্য কোন দায় নেই এতে। ভাললাগার পরিমাণ কমে এলে, ভালবাসার পরিমাণ তো অননত্ম অসীম হয়ে উঠতে পারে না।
পৃথিবীর কোন কিছুই যদি অবিনশ্বর না হয়, তো নর-নারীর প্রেম সম্পর্ক অবিনশ্বর হবে কেন? প্রেম, নারী ও পুরম্নষের হৃদয়কে কিছুদিন একত্রে ধরে রাখতে পারে মাত্র। তবুও গভীর প্রেমে পড়ার পর একজন অন্যজনকে বলে, ‘তুমি আমার চিরদিনের, জন্ম-জন্মানত্মরের’ ধরনের সংলাপ। কেন বলে? বলে, সঠিক জ্ঞান এবং অভিজ্ঞতার অভাবে। বলে, ভয় থেকে। বলে, প্রেম সম্পর্ককে স্থায়ী করার অলিখিত চুক্তি আর নিশ্চয়তা হিসেবে। যখন সে এসব কথা বলছে, তখন সে বুঝতেও পারছে না, আজ যাকে এত ভাল লাগছে, পরিবর্তনের অনিরম্নদ্ধ স্রোতে মন বা হৃদয়ের চাহিদা বদলে গেলে, কাল তাকে আর ভাল লাগবে কি না। এক মুহূর্ত পরে কী ঘটবে তা জানার উপায় যেখানে মানুষের নেই, সেখানে, জন্ম-জন্মানত্মরের নিশ্চয়তা দেবার পরে যখন সম্পর্কের ভাঙ্গন শুরম্ন হয় এবং তা অনিবার্য হয়ে ওঠে তখন একজন অন্যজনকে কি বলে? ‘মিথ্যেবাদী’ ‘অবিশ্বাসী’ ‘ভ-’ ‘প্রতারক’সহ এ ধরনের যত শব্দ আছে সবই কী ব্যবহার করে না? অবশ্যই করে। ভেতরের সবটুকু ঘৃণা বের করে দিতে, বিক্ষত মনটাকে সুস্থ করে তুলতে এসব শব্দ টনিকের মতোই কাজ করে তখন।
‘নারী ও পুরম্নষ পরস্পরের প্রতি আকর্ষণ বোধ করবে এটা তাদের নিয়তি এবং আরও মমর্ানত্মিক নিয়তি হচ্ছে, তাদের আকর্ষণ দীর্ঘস্থায়ী হবে না’ লিখেছেন হুমায়ুন আজাদ। কিন্তু কেন তাদের আকর্ষণ দীর্ঘস্থায়ী হবে না তার বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যাও আছে। গবেষকদের মতে, মানুষের অন্য অনেক নেশার মতো, প্রেমও এক বিশেষ ধরনের নেশা। তবে এই নেশা অন্য নেশার তুলনায় অল্পায়ু। প্রেম হচ্ছে এ্যামিন, ইথাইল, ফিনাইলের জৈব রাসায়নিক নেশা। কারও প্রতি প্রেম আকর্ষণ অনুভবের সঙ্গে সঙ্গে, মাথা থেকে এই রাসায়নিক জোয়ার, স্নায়ুতন্ত্রের মাধ্যমে রক্তকে নির্ভর করে, সারা শরীরে পস্নবিত হয়। আর তা থেকেই বিভিন্ন রকম প্রেম উপসর্গ দেখা দেয়। কিছু সময় অতিক্রানত্ম হওয়ার পরে এই রসায়ন শরীরের ভেতরে একটা টলারেন্স তৈরি করে এবং তা ক্রমাগত বাড়তেই থাকে। এর সঙ্গে লড়ার মতো প্রেমের নেশা, শরীর আর তৈরি করতে পারে না। যার ফলে প্রেমানুভূতি তার তীব্রতা হারাতে শুরম্ন করে। টলারেন্স যত বাড়ে, তত কমে আসে প্রেম। কমতে কমতে শিথিল হয়ে যায় এই সম্পর্ক। প্রেম অভিলাসী মানুষেরা বিচলিত, বেদনাহত হয়ে পড়েন। তবুও জীবনত্ম করে তুলতে পারেন না এই নিষ্ক্রিয়তা, শিথিলতা।
প্রেম সম্পর্কের এক পর্যায়ে নর-নারী দেহ স্পর্শের যে সুখ পেতে চান, তার কারণও অঙ্েিটাসিন নামের এক জৈব রাসায়নিক, যা মানুষের রক্তে মাত্রাভেদে মিশ্রিত থাকে। অধিকাংশ প্রেম সম্পর্কের নির্ধারিত গনত্মব্য হচ্ছে দেহজ সুখ। প্রেম অনুভূতি দেহের বা যৌন সুখের মধ্যে তার গনত্মব্য খুঁজে না পেলেও একটা নির্দিষ্ট সময়ের পরে এই সম্পর্কের জোয়ারে ভাটা পড়তে থাকে। প্রতিটি প্রেমের সময় সীমা নির্দিষ্ট করে দিয়েছে প্রকৃতি। গড়ে প্রায় চার বছর। বিয়ে নামধেয় প্রথার বাঁধনও কোন শক্তিময় ভূমিকা রাখতে পারে না এ ব্যাপারে। বরং দ্বৈত জীবনকে, প্রেম সম্পর্ককে করে তোলে একঘেয়ে, ক্লানত্মিকর। সুদীর্ঘ সময় যৌথ জীবনযাপন করা মানেই প্রেমানুভূতির মাধুর্যে স্নাত জীবন নয়। অনেক রকম দায়-দায়িত্বের জটিল শেকলে আবদ্ধ হয়ে একত্রে থাকার অভ্যেস মাত্র। তার চেয়েও জরম্নরী সমাজকে সুখী করার ব্যাপারটি।
প্রেম ও যৌনতা নিয়ে ব্যাখ্যা বিশেস্নষণ লেখালেখি করা মানে সমাজের মানুষকে যৌন স্বেচ্ছাচারিতা, বা অবাধ যৌনতার দিকে এগিয়ে যাওয়ার জন্য প্ররোচিত করা নয়। বরং বিভিন্ন প্রচার মাধ্যমে এসব বিষয়ে সঠিক, বস্তুনিষ্ঠ সুন্দর আলোচনা থেকেই সম্ভব হবে, সমাজের মানুষকে বিকৃতির হাত থেকে বাঁচানো। প্রেম ও যৌনতাকে সঠিক এবং রম্নচিসি্নগ্ধ পথে পরিচালিত করা। সত্য, যৌক্তিক, সুন্দর ও সঠিক শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে, সেই শিক্ষাকে নিজের জীবনে যিনি প্রয়োগ করতে পারেন, মানুষ হিসেবে জীবনযাপন করার সনদপত্রটি তারই হাতে তুলে দেয় প্রকৃতি।
মানুষের প্রতিষ্ঠিত বিধানের কাঁচি, মানুষের হৃদয়ের ওপর চালানো যায়নি। যায়নি বলেই, প্রেমে পড়লে প্রতিটি মানুষ তার প্রেমিক, প্রেমিকার সঙ্গে আচরণ করেন তার নিজের স্বভাবমতো। তারপরও আমার ধারণা, পৃথিবীর বেশিরভাগ প্রেমিক-প্রেমিকা প্রবল আবেগায়িত অবস্থায় একে অন্যকে যেসব কথা বলেন, অধিকাংশ প্রেমের গানে, কবিতায়, সাহিত্যে যে প্রেমাবেগ প্রকাশ করেন তার ধরন অনেকটা একই রকম। ‘তুমি আমার’ ‘তোমাকে পেলে আমার আর কিছুই চাই না’ ‘তোমার চেয়ে বেশি সুন্দর আর কেউ নয়’ ‘আমি কোন দিন তোমাকে ছেড়ে যাব না’ ‘সারা জীবন তোমাকে ভালবাসব’ ‘আমি তোমাকে আমার জীবনের চেয়েও বেশি ভালবাসি’ ধরনের সংলাপ কী সব প্রেমিক-প্রেমিকাই কোন না কোন সময় বলেননি? হাজার হাজার বছর ধরে চলে আসা এ রকম সব কথা, আমার মতে অজ্ঞানে অসচেতনে করা প্রতারণা। কিভাবে? বলছি। এই যে প্রেমের সংলাপ লিখলাম, এ গুলোর সবই কি চূড়ানত্ম কথা বলে দেয়া নয়? কিন্তু আমরা তো জানি, প্রকৃতিতে এবসলুট বা চূড়ানত্ম বলে কিছু নেই। তাহলে এ রকম চূড়ানত্ম কথা বলা বা লেখার অধিকার আমাদের থাকে কী করে?
‘তোমাকে পেলে আমার আর কিছু চাই না’ বলার আগে নিজেকেই প্রশ্ন করা দরকার, সত্যিই কি তাই? তাকে পেলেই কি অন্ন, বস্ত্র, আশ্রয়, অর্থসহ অন্য সব অভাব মিটে যায়? যায় না। যায় না বলেই যদি এভাবে বলা যায়, ‘আমার জীবনের সুখকে সমৃদ্ধ করার জন্য তোমাকে চাই’ তাহলেই কি প্রেমের সংলাপ যুক্তিসঙ্গত হয়ে ওঠে না?
‘তোমার চেয়ে বেশি সুন্দর আর কেউ নয়’ তাকে খুশি করার জন্য এ রকম কথা না বলে যদি বলা হয়, ‘তোমাকে আমার কাছে ভারি সুন্দর লাগে’ তাহলেই কি তা সত্যতায় অনন্য হয়ে ওঠে না?
‘আমি কোনদিন তোমাকে ছেড়ে যাব না’ না বলে, যদি বলা হয় ‘যত দিন সম্ভব তোমার কাছেই থাকব’ তবে কী তা মিথ্যা বলা হবে?
‘সারাজীবন তোমাকে ভালবাসব’ বলার মতো নিশ্চয়তা বা গ্যারান্টি, কী কেউ কাউকে দিতে পারেন আসলে? পারেন না। কারণ মানুষের জীবনের সব কিছুই হচ্ছে রিলেটিভ। প্রায় সব কিছুই নির্ভর করে অন্য কিছুর ওপরে। যাকে মানুষ ভালবাসে, তার প্রতিমুহূর্তের আচরণের ওপর নির্ভর করে, তাকে কতটা ভালবাসা যায় এবং কতদিন। তাই, সঠিক হয়ে উঠবে সংলাপ, যদি বলা হয়, ‘এই মুহূর্তে তোমাকে আমি আমার সমসত্ম অনুভূতি দিয়ে ভালবাসি, এখন এটাই সত্যি।’
‘আমি তোমাকে আমার জীবনের চেয়েও বেশি ভালবাসি’ এ কথা কাউকে বলা মানেই হচ্ছে, অচেতনে মিথ্যেবাদী হওয়া। মনে রাখা ভাল, ৯৮ ভাগ মানুষ বেঁচে থাকে, মূলত তার নিজের প্রতি প্রবল প্রেমের ভিত্তিতে। তাই নিজের চেয়ে বেশি ভাল সে কাউকেই বাসতে পারে না। মা তার সনত্মানকে নিজের জীবনের চেয়ে বেশি ভালবাসেন বলে আমার মনে হয় না। যদি তাই হতো, তাহলে সনত্মানের মৃতু্যর পরও মা বেঁচে থাকতে পারতেন না। এ রকম কথা যারা বলেন, তাদেরকেই ভেবে দেখতে বলছি, এসব কথা সত্য এবং সঠিক কি না। যা মিথ্যে তা বিশ্বাস করলে কি ঠকতে হয় না? হবে না এক সময়?
ভালবাসা প্রকাশের ভাষা, সুচিনত্মিতভাবে সঠিক এবং যৌক্তিক করে তুলতে পারলে, এই সম্পর্ক সমৃদ্ধ এবং যথার্থ হয়ে উঠবে সততায়। এক সময়ে যে কোন কারণে প্রেম সম্পর্কের মৃতু্য হলেও একজনের প্রতি অন্যজনের শ্রদ্ধাবোধ হারিয়ে যাবে না। অসততা বা মিথ্যাচারের দায়ে অভিযুক্ত হতে হবে না কাউকেই। বন্ধুত্ব রূপানত্মরিত হবে না ভয়াবহ শত্রম্নতায়। প্রেম না থাকুক, পরিচয়ের স্বাভাবিক সম্পর্ক টিকিয়ে রাখা যাবে। আর সেটাই কী হওয়া উচিত নয়?
সংলাপ ছাড়াও আরও কিছু বিষয়ে মনোযোগী হলে প্রেম সম্পর্কের স্থায়িত্ব বাড়ানো যেতে পারে।
এক, তার কাছ থেকে সব ব্যাপারেই নিজের ইচ্ছে বা পছন্দমতো বেশি কিছু প্রত্যাশা না করে, তার সব ধরনের যোগ্যতা ও গুণাবলীর কথাও মনে রাখা। সে কতটা দিতে পারে তার পরিমাপ করে প্রত্যাশা করা, অথবা না করা।
দুই, তার কাছেই নয় কেবল, যে কারও চাটুকারিতা কে প্রশ্রয় না দেয়া এবং অপছন্দ করা।
তিন, দু’জনের মধ্যে বেশিরভাগ ব্যাপারেই নির্দিষ্ট দূরত্ব তৈরি করে, তা মেনে চলা।
চার, দু’জনের একানত্ম সময়ের প্রতি সম্মানিত থাকা, বৈচিত্র্য সৃষ্টি করে প্রতিটি দিনকে অন্যতম একটি দিন করে তোলা।
পাঁচ, তার ভাললাগা, মন্দলাগা, ব্যক্তিসত্তা, ব্যক্তিস্বাধীনতাকে মেনে নিয়ে, শ্রদ্ধা করে সম্পর্ক রক্ষা করা।
ছয়. ‘তার কাছে কি পেলাম’, কেবল এ কথা না ভেবে ‘তাকে কি দিলাম’ সেটা একটু বেশি ভাবতে চেষ্টা করা। সম্ভব হলে দিতেও চেষ্টা করা।
সাত. ভালবাসা, সম্মান, শ্রদ্ধা ও মনোযোগ পাবার জন্য সবচেয়ে জরম্নরী হচ্ছে এ ব্যাপারে সব রকম যোগ্যতা অর্জনের চেষ্টা করা। তাহলে, একমাত্র তাহলেই, এই সম্পর্কের আকর্ষণ এবং স্থায়িত্ব বাড়িয়ে তোলা, হয়ত অসম্ভব হবে না। আর তার ফলাফল, প্রায় সবটাই হবে পজেটিভ।
যারা আমার সঙ্গে একমত হতে পারছেন না, যারা এখনও ভাবছেন, সবটুকু হৃদয় মন যাকে দিয়েছি, যদি ভাবতেই না পারি, ‘সে আমার, চিরদিন সে আমার’ তাহলে কী করে এই সম্পর্ক তার ভিত্তি খুঁজে পাবে? কী করে ভালবাসা হবে তীব্র? তাদের জন্য বলছি, আজ আপনার যে চিনত্মা চেতনা, দশ বছর আগেও কী তা এমনই ছিল, সব ব্যাপারে? ছিল না, তাই না? তাহলে আজ যাকে আপনার ভাবছেন, কাল যদি তাকে আর সে রকম মনে না হয়, কী করবেন? বলবেন, ‘তুমি আমারই?’ হয়ত বলবেন না। বরং এক সময় যে বলতেন সে জন্যই হয়ত কষ্ট হবে, খারাপ লাগবে। বাগানের ফুল কি আমাদের? তাই বলে কি আমরা ফুলকে ভালবাসি না? মুগ্ধ কী হয়ে উঠি না তবুও?
সুখ, স্বল্পস্থায়ী হয় যদিও তবু তা সুখ।
সব ব্যাপারেই দু’একটি ব্যতিক্রম থাকে। তা আপনিও জানেন, আমিও জানি। ব্যতিক্রম বা বিচ্ছিন্ন কোন ঘটনা দিয়ে কী সার্বিক, বা ইনজেনারেল অবস্থার ব্যাখ্যা বা মূল্যায়ন করা যায়? না তাতে সত্যকে উদ্ধার এবং প্রচার করা সম্ভব হয়? আর সত্য যদি সঠিকভাবে উদ্ধারই না করা যায়, তাহলে কী সত্য বলা, বা লেখা সম্ভব?
আপনার চমৎকার পোস্ট এর জন্য ধন্যবাদ। এ রকম সুন্দর সুন্দর কবিতা/জোকস /গল্প /এস এম এস পেয়ে সত্যি আমরা উপকৃত।
ReplyDeleteআপনি যদি এই রকম সুন্দর সুন্দর কবিতা/জোকস /গল্প /এস এম এস সহ আরও অনেক কিছু পেতে চান?
তাহলে ভিজিট করুন আমাদের ওয়েবসাইট : socialbangla.com
শুধু তাই নয়???
socialbangla.com is latest and largest Bangladesh Database.You can find here available latest Bangla jokes, romantic jokes, kupakupi jokes, kobita, bangla kobita, kobider kobita, romantic kobita, History of bangladesh, kobitar khata, short story, Love story, etc. so you are welcome to socialbangla.com
জোকস
Bangla Sms
বাংলা ভালবাসার এস এম এস
Sad Sms
History of Bangladesh
ভালবাসার কবিতা
কবিদের কবিতা
বাংলা কবিতা
বাংলা ভালবাসার গল্প
Romantic গল্প
বাংলা বিখ্যাত কবিতা