![]() |
RAFIQ SIR |
“…তরল গরল
কন্ঠে ঢালি’ তুমি বল, ‘অমৃতে কি ফল?
জ্বালা নাই, নেশা নাই. নাই উন্মাদনা,-
রে দুর্বল, অমরার অমৃত-সাধনা
এ দুঃখের পৃথিবীতে তোর ব্রত নহে,
তুই নাগ, জন্ম তোর বেদনার দহে।”
কবির চোখে দুঃখ হয়ত অপার অসীম, কিন্তু কুর’আনে আল্লাহ সাফ বলে দিলেন-
সবকিছুই সৃষ্টি করা হয়েছে শুধু একটা “নির্দিষ্ট সময়ের” জন্য। এটা শুনলে
একটা ব্যাপার মাথায় আসা উচিতঃ আমার দুঃখ-কষ্ট-বেদনা-বিরহও সীমিত সময়ের
জন্যই।জন্ম ও মৃত্যু শুধু প্রাণীরই হয় না,
দুঃখ-কষ্টেরও হয়। কষ্টের সময় মনে হয় এই কষ্ট থেকে আর বুঝি মুক্তি আসবে
না। এই দুঃখের মুহূর্তে আমাদের ভালবাসার প্রভু একটা কথা বললেন-
আপাতদৃষ্টিতে সাধারণ, অথচ এর তাৎপর্য গভীরঃকন্ঠে ঢালি’ তুমি বল, ‘অমৃতে কি ফল?
জ্বালা নাই, নেশা নাই. নাই উন্মাদনা,-
রে দুর্বল, অমরার অমৃত-সাধনা
এ দুঃখের পৃথিবীতে তোর ব্রত নহে,
তুই নাগ, জন্ম তোর বেদনার দহে।”
“তুমি তোমার প্রভুর সিদ্ধান্ত আসা পর্যন্ত ধৈর্যধারণ কর। নিশ্চয়ই তুমি আমার চোখের সামনে আছো। আর তোমার প্রভুর গুণকীর্তন কর যখন তুমি জাগ্রত হও, আর রাতের বেলায়ও তার প্রশংসা কর- তারাগুলো ঝিমিয়ে যাবার সময়ও।” [১]
কত কিছু শেখার আছে এখান থেকে!
১. তোমার প্রভু তোমার অবস্থা দেখছেন, তাই ধৈর্য ধরো। সব কিছুরই শেষ আছে, এই কষ্টেরও; আর একমাত্র আল্লাহর হাতেই শেষ পর্যন্ত আছে এই অবস্থা পালটানোর ক্ষমতা।
২. “নিশ্চয়ই তুমি আমার চোখের সামনে আছো” – এই সীমিত সময়ের কষ্টেও আমরা আল্লাহর করুণার নাগালে আছি। এই সময়টাতেও তাই আমাদের আল্লাহর ভালবাসার কথা ভুললে চলবে না। সত্যি করে বলুন তো- আল্লাহ সম্পর্কে আমাদের ধারণাটা ঠিক কেমন? আল্লাহ হচ্ছেন সেই প্রভু- আমরা তার দিকে ধীর কদমে হাঁটতে থাকলে তিনি আমাদের জন্য অধীর হয়ে দ্রুতবেগে এগিয়ে আসেন। আল্লাহর রাসূল আল্লাহর ভালবাসাকে চিনিয়েছেন এভাবেঃ মা তার সন্তানকে যতখানি ভালবাসেন, আল্লাহ তার সৃষ্টিকে তার চেয়েও বেশি ভালবাসেন। তিনি হলেন আল-ওয়াদুদ- প্রেমময়।
৩. ধৈর্য ধরে থাকা কিন্তু সহজ নয়। তাই আল-ওয়াদুদ আমাদের শুধু ধৈর্য ধরতে বলেন নি, তিনি আমাদের জানিয়ে রেখেছেন যে তাঁর হাতেই সব ক্ষমতা, তাঁর চোখের সামনেই আমরা আছি। প্রত্যেকটি মুহূর্তে আমরা আছি তাঁর প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে। আমাদের ওপর ঝড়-ঝাপটা যাই আসুক, তিনি আসতে দিয়েছেন বলেই তারা এসেছে, কাজেই আখেরে এ সবের ফল ভালই হবে। ভেবে দেখুনঃ এই প্রচণ্ডে কষ্টেও ধৈর্য ধরে রাখার ক্ষমতাটাও কিন্তু তাঁরই অনুগ্রহ!
৪. “আর তোমার প্রভুর গুণকীর্তন কর”- আমাদের প্রভু যেহেতু আমাদের দেখে রেখেছেন, তাই তিনি একটা শর্ত জুড়ে দিলেন- যে যখনই আল্লাহর নাম নেব, আমরা তাঁকে স্মরণ করব কৃতজ্ঞতাভরে। এ কষ্টের সময় আল্লাহর অসংখ্য অনুগ্রহের কথা আমরা ভুলে যাই। তাই তিনি মনে করিয়ে দিলেন- তাঁর নাম প্রশংসার সাথে নিতে।
জীবনটা শেষ পর্যন্ত কষ্টের, মানলাম। কিন্তু কষ্টের বলেই কী হাল ছেড়ে দিতে হবে- বিশেষত যখন প্রভু, আমাদের ভালোবাসার প্রভু, নিজেই এতরকমভাবে সান্ত্বনা দিয়ে চলেছেন?
No comments:
Post a Comment
আপনার মন্তব্য দিন