এক তরুণের কথা না বললেই নয়। তিনি ন্যাট বাগলে, মার্কিন তরুণ। ভালোবাসার গল্প শুনতে শুনতে তিতে হয়েছে উঠেছে তার মন। তবে এক পর্যায়ে স্ক্যান্ডাল ও ডিভোর্স এবং অপার্থিব রূপকথার গল্পে আগ্রহ বাড়ে তার। এক ছেলেমানুষি করে বসলেন তিনি। যে চাকরিটা করতেন তা ছেড়ে দিলেন। আর কিছু সঞ্চয় নিয়ে বেরিয়ে পড়লেন। লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য একটিই- নানা প্রান্তে ঘুরে ভালোবাসার গল্পগুলো খুঁজে বের করা। এ সফরে আমেরিকার আনাচে-কানাচ থেকে তিনি অসংখ্য জুটির সাক্ষাৎকার নিয়েছেন এবং বের করে এনেছেন প্রায় ১০০টি সত্যিকার ভালোবাসার অসামান্য গল্প।
বাগলে নিজেই জানিয়েছেন- আমি সমকামী জুটি, স্বাভাবিক, বিশাল ধনী, হতদরিদ্র- এমন বহু জুটিদের গল্প শুনেছি। আবার ধর্মভীরু ও নাস্তিকদের জুটিও রয়েছে। খুব কম সময়ের জন্য ভালোবাসার সঙ্গী হয়েছেন বা এমন ভালোবাসার জুটির সন্ধানও পেয়েছেন যারা সত্তর বছর পরও একে-অপরকে অনেক ভালোবাসেন। পালিয়ে বিয়ে করেছেন বা পরিবারের মত নিয়ে ঢাকঢোল পিটিয়ে বিয়ে হয়েছে এমন কপোত-কপোতীসহ বহুগামী প্রেমিক-প্রেমিকার অভিজ্ঞতা তার ঝুলিতে রয়েছে।
ভালোবাসার সত্যিকার গল্পের এই বিশাল সংগ্রহ নিয়ে একটি ডকুমেন্টরি বানানোর পরিকল্পনা রয়েছে তার। আজকের এই লেখাটিতে তিনি এই সফরে ভালোবাসার সম্পর্ক নিয়ে যে বিশেষ অভিজ্ঞতা বা পরামর্শগুলো পেয়েছেন তা জানিয়েছেন।
সম্পর্কের সফল পরিণতির চাবিকাঠি
ন্যাট বাগলে বললেন, এই সফর আমাকে সবচেয়ে আশ্চর্যজনক অভিজ্ঞতা দিয়েছে। আমি বেশ কিছু মৌলিক শিক্ষা পেয়েছি। ভালোবাসার সফল পরিণতির জন্য মূল ব্যাপারগুলো হচ্ছে-
নিজেকে ভালোবাসা : সবচেয়ে সফল জুটিরা সুস্থ আবেগসম্পন্ন হয়ে থাকেন এবং স্বাধীনভাবে সুখী হন প্রত্যেকে। তারা নিজেকে যেভাবে ভালোবাসেন, ঠিক সেভাবেই সঙ্গী বা সঙ্গিনীকেও দেখেন। অন্তত পুরোপুরি না হলেও চেষ্টার কমতি থাকে না। সুস্থ আবেগ হলো ক্ষমা করতে শেখা, যেকোনো তর্ক বা বিতণ্ডায় নিজের ভুল বুঝতে পারা এবং নিজের ভুলের দায়িত্ব নেওয়া।
কথা দিয়ে কথা রাখা : সুস্থ আবেগের চর্চা ভালোবাসার জুটিদের কথা দিয়ে কথা রাখতে শেখায়। এক্ষেত্রে প্রত্যেকে ভালো করেই জানেন, যতো কিছুই বিগড়ে যাক না কেনো, একের অপরকে দেওয়া কথার কোনো নড়চড় হবে না। আর এ অংশটিই সবকিছুর থেকে অনেক বেশি শক্তিশালী।
বিশ্বাস : সুখী দম্পতি বা জুটিরা একে অপরকে বিশ্বাস করেন। কারণ তারা একজন অপরজনের বিশ্বাস অর্জন করে নিয়েছেন। অন্যের প্ররোচনায় তাদের কারো যে কোনো ক্ষতি হবে না তা দুজনই বোঝেন। তারা ইতিমধ্যে প্রমাণ পেয়েছেন যে, একজন অপরজনের সবচেয়ে বিশ্বস্ত সহচর।
একে-অপরের কাছে নিজেকে প্রকাশ করতে ইচ্ছা : এ বিষয়টি হলো একটি কেকের ওপর ছড়িয়ে দেওয়া সুস্বাদু ক্রিমের মতো। মজার কেকটিকে আরো মুখরোচক করে দেয়। এর প্রকাশ অনেকভাবে হতে পারে। বৃষ্টির মধ্যে দিয়ে একজোড়া প্রেমিক-প্রেমিকা কষ্ট নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন- এমন জুটির সঙ্গে বৃষ্টির হাত থেকে বাঁচতে হাত ধরে পাশের গাছের নিচে দৌড়ে আশ্রয় নিলেন- এমন জুটির অনেক পার্থক্য রয়েছে। তেমনি বিদায় মুহূর্তে দুজন-দুজনকে জড়িয়ে রেখে দশ সেকেন্ড ধরে চুমু খাওয়া আর স্রেফ টাটা দিয়ে বিদায় দেওয়ার মধ্যে পার্থক্য আছে। ভালোবাসার মানুষরা যেকোনো সংকটে একজন আরেক জনকে ব্যক্তিগতভাবে বুদ্ধি-পরামর্শ বা সহযোগিতার হাত বাড়ান। এভাবেই তারা প্রতিক্ষণ কোনো না কোনো কাজে আরেক জনের দিকে এগিয়ে যান।
সবচেয়ে ভালো পরামর্শ
এ সফরে এক নারীর উপদেশই আমার সবচেয়ে ভালো লেগেছে, জানালেন ন্যাট। ওই নারী জর্জিয়া এখন বৃদ্ধা। তারা এক সুখী দম্পতি একে অপরকে ৬০ বছর ধরে ভালোবেসে আসছেন। জর্জিয়া পরামর্শ দিতে গিয়ে বললেন, ‘সবচেয়ে বেশি ভালোবাসা বিলিয়ে দেওয়ার মতো একজন হতে কখনো ভয় পাওয়া চলবে না।’
বিতর্ক সমাধানের সবচেয়ে কার্যকর উপায়
সম্পর্কের টানাপড়েন থাকবেই। এসব সমাধানের সবচেয়ে কার্যকর উপায়গুলো হলো-
জেতার জন্য যু্দ্ধ করবেন না : অসংখ্য জুটির মধ্যের অসংখ্য বিষয়ের অমিল নিয়ে বৈচিত্র্যময় ঝামেলা তৈরি হয়েছে। যেকোনো সমস্যায় প্রত্যেকের তর্ক করা উচিত একটি লক্ষ্য নিয়ে। তা হলো, সমাধানের পথে যাওয়া। সততা না থাকলে জেতার পরও নিজেকে দোষী মনে হবে।
বোঝাপড়ার চেষ্টা : কঠিন সময়ে অপরকে বোঝার কাজটাই ভালো ফল এনে দেবে। প্রথমেই জানতে হবে, আরেক জন কেনো হতাশ। চরম ঝগড়ার সময় দুজনই সাধারণত ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠেন। কঠোর মন্তব্য বা প্রশ্নের ঝড় বইতে থাকে। ফলে দুজন-দুজনের যুক্তি-তর্ক থেকে আরো দূরে সরে যান। তাই উল্টোটা করতে হবে। একজনকে আরে কজনের কথা শুনতে হবে এবং বোঝার চেষ্টা করতে হবে।
ভদ্র শব্দ ব্যবহার : যতো ঝগড়াই চলুক, এখানে গালমন্দ করাটা খুবই বাজে বিষয়। একের অন্যের প্রতি সম্মনবোধ থাকলে এ কাজটি ত্যাগ করতে হবে।
সফরে সবচেয়ে সুন্দর ভালোবাসার কথা
বাগলের সফরে অসংখ্য ভালোবাসার কথার মধ্যে তার সবচেয়ে ভালো যে কথাটি লেগেছে সেটি হলো-
‘আমাদের জীবন শেষ হওয়ার মুহূর্তে আমার যেনো ওকে বলার সামর্থ্য থাকে যে, তুমিই আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ আর্শীবাদ। আর এ জন্যই আমি এতো ভালো আছি। কারণ তোমার ভালোবাসা। জীবনের প্রতিটি দিনে আমার ইচ্ছা ছিলো তোমাকে আরো বেশি ভালোবাসার।’
No comments:
Post a Comment
আপনার মন্তব্য দিন