ভালোবাসা, প্রকৃতির দান, নাকি স্রষ্টার সৃষ্টি। ত্যাগস্বীকার, যতœ,
সহভাগিতা যদি ভালোবাসা হয়, তবে আমি ভালোবাসতে পেরেছি। আর যদি দেহের তৃপ্তি
হয়, তবে আমি ভালোবাসতে পারি নি সময়টা ২০০৬, নটরডেম কলেজে ভর্তি হলাম।
পড়াশুনার পাশাপাশি নটরডেম ইংলিশ কোর্সে কাজ করি। তখন পরিচয় স্মৃতির সাথে।
সেই আমাকে ভালোবাসার কথা প্রথম বলেছিলো। অনেক দ্বিধা-দ্বন্দ্বের পর
ভালোবাসার ডাকে সাড়াও দেই। জানি না, তার মনে কি ছিলো। তবে এইটুকু বলবো,
আমিই ওকে ভালোবেসেছি। ও তখন এসএসসি পরীক্ষা দেবে, প্রস্তুতি নিচ্ছে।
প্রতিদিন ফোন করে ঘুম থেকে জাগাতে হত। পরীক্ষার ফরম ফিলাপের টাকা, যাবতীয়
খরচ সবই দিতে হত। আমার তেমন সম্বল ছিলো না। কাজের বিনিময়ে পড়াশুনা চালাতাম,
আর দু’টো টিউশনি করে হাত খরচ। ও হোস্টেলে থেকে পড়তো। জানি না, ওর বাবা-মা
ওকে টাকা-পয়সা দিতো কিনা। বিভিন্ন সময়ে টাকা থেকে শুরু করে যাই চাইতো সবই
দিতে হতো আমাকে। মাঝে মাঝে বলতো আমি ওর জীবনের সব। ও আমাকে দৈহিক ক্ষুধার
কথাও বলতো, কিন্তু আমার ভালোবাসার মূল্যবোধ আমাকে তা হতে দেয় নি। ও পাশ
করলো। কেমন করে যেন ও আমার সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দিলো। অনেক খুঁজে ছিলাম।
দেখা হয় নি। বুঝতে পারছিলাম না, কোন কারণে ও চলে গেল। ২০০৭ এর ভালোবাসা
দিবসে আমি বাংলা একাডেমি বইমেলায় বন্ধুদের সাথে যাই। তখন প্রায় এক বছর পর
স্মৃতিকে দেখি। খুব ঘনিষ্টভাবে আমারই এক বন্ধুর সাথে। বলতে পারবো না
সেদিনের অনুভূতি। আরেক বন্ধু বললো, রায়হানের সাথে ওই মেয়েটিকে নিয়ে রায়হান
প্রায়ই আমার খালি বাসায় মজা করতে আসে। মেয়েটিকে মনে হয় তোর সাথে দেখেছিলাম।
ওকে জিজ্ঞেসও করেছিলাম তোকে চিনে কিনা। বললো, চিনে না। এরপর আমার আর কিইবা
বাকি থাকে। আমিও ওদের কাউকে কিছু বলি নি।আমি চাই নি আমার ভালোবাসা ছোট
হোক। আমিতো সত্যি সত্যি ওকে ভালোবেসেছি। দু’বছর পর আবার দেখা হয়েছিলো,
রবীন্দ্রসরোবরে স্মৃতির সাথে। আমাকে দেখে একটা ভয় চলে এসেছিলো মনে হয় ওর
চোখে-মুখে। ও চোখের বাইরে পালিয়ে যায়। কয়েকদিন পর রায়হানের বিয়ের কার্ড
পাই। খুলে কিছুটা অবাক হলাম, কনের জায়গায় স্মৃতির বদলে অন্যের নাম। স্মৃতির
জন্য কেন যেন মায়া হলো। ঠিক তার একদিন পর একটি এসএমএস এলো আমার ফোনে।
‘আমাকে ক্ষমা করে দিও।’ আমি বুঝতে পেরেছিলাম কে। অনেক দ্বিধা সত্ত্বেও ফোন
দেই। কিন্তু ফোন বন্ধ পাই। পরদিন সৈকত এসে খবর দিলো, স্মৃতি আর নেই। কেন
যেন ওইদিন খুব কাঁদতে ইচ্ছে হচ্ছিলো। ওই দিনটি ছিলো সেই একই দিন ১৪
ফেব্রুয়ারি। মনে পড়ে আজো সেই ১৪ ফেব্রুয়ারি। দিনটি ভালোবাসার দিন, আর আমার
কি সত্যিই সেদিন ভালোবাসার দিন ছিলো! অনেকদিন বাদে আমিই নিজেকে নিজে উত্তর
দেই, আমিই ভালোবাসতে পেরেছি। কারণ সেদিনের ভালবাসা দিবসে আমি ওকে ঘৃণা নয়
ক্ষমা করেছিলাম।
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment
আপনার মন্তব্য দিন