ভালোবেসে যাঁরা ঘর বেঁধেছেন, তাঁরা সবাই মনে করেন—প্রতিটা দিনই ভালোবাসার
দিন। তার পরও সারা বিশ্বে ১৪ ফেব্রুয়ারিকে ‘বিশ্ব ভালোবাসা’ দিবস হিসেবে
গ্রহণ করেছে সবাই। আমাদের সাংস্কৃতিক অঙ্গনের পাঁচ তারকা-দম্পতির মুখোমুখি
হয়েছিল আনন্দ। জেনে নিন ভালোবাসার ছোট্ট বাসায় কেমন আছেন তাঁরা!
তিশা-ফারুকী প্রেমের বয়স পাঁচ বছর, বিয়ের বয়স সাত মাস। প্রতিদিন সকালে দুজন
চলে যান নিজ নিজ কাজে। সারা দিন মুঠোফোনে কথা আর রাতের বেলা একসঙ্গে বসে
খাওয়া, রাত জেগে টিভি দেখা—এই তাঁদের রুটিন। এর মধ্যেই রয়েছে খুনসুটি আর
ভালোবাসা। তিশার মন্দ দিক কী? প্রশ্ন শুনেই ফারুকী তিশার কোর্টে পাঠালেন
প্রশ্নটা, ‘এই, তোমার মন্দ দিক কী?’ তিশা বললেন, ‘তুমি বলো। আমিও শুনি।’
এবার ফারুকী বিপদে। একটু ভেবে বললেন, ‘একটা খারাপ দিক আছে। সকালবেলা ঘুম
থেকে ওঠার পর আমার অভ্যাস হচ্ছে খবরের কাগজে চোখ বোলানো। তিশার এটা একদম
অপছন্দ। ওই সময়টা তিশা কাজে লাগাতে চায়, চায় সারা দিনের কর্মব্যস্ততা
জানাতে। আর একটা খারাপ দিক, টেলিভিশনের রিমোটটা থাকে ওর দখলে। ওর পছন্দের
চ্যানেল দেখতে হয়।’ প্রশ্ন করলাম, সংসার কি তিশা-শাসিত? ফারুকীর মুখে একগাল
হাসি, ‘পুুরোপুরি। ও যা বলে আমি এই সংসারে তা-ই পালন করি। এমনকি আমার
প্রতিদিনের পকেট-খরচটাও তিশা হিসাব করে দেয়। ওই টাকাতেই সারাটা দিন চলতে
হয়।’ তিশা অবশ্য ফারুকীর কথায় সম্মতি দিয়ে এর একটা ব্যাখ্যাও দিলেন। ‘আসলে,
সংসার করতে তো একটা ঘর লাগে। আর ঘরের আগে প্রয়োজন হয় একটা পিলারের। ফারুকী
হচ্ছে আমার সংসারের পিলার। ফারুকী মানিব্যাগ হারিয়ে ফেলে। এ জন্য আমি
নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা এক জায়গায় রেখে দিই। ও ওখান থেকে টাকা নেয়। তা ছাড়া
ফারুকী নিজেকে একজন নির্যাতিত স্বামী বলে পরিচয় দিতে মজা পায়। আমি ওকে খুশি
রাখতেই টাকা-পয়সা নিয়ন্ত্রণ করি।’ বলছিলেন তিশা। কে বেশি ঝগড়াটে? ফারকী
বললেন, ‘এই সাত মাসে সে রকম ঝগড়াঝাটি হয়েছে বলে মনে হয় না। যতটুকুই খুনসুটি
হয়েছে, সেই বিচারে তিশা একটু বেশি নম্বর পাবে।’ তিশা বললেন, ‘ফারুকীর একটা
ব্যাপারে আমি খুবই ভয় পাই। অত্যন্ত বাজেভাবে রেগে যায় ও। আমি তখন চুপ মেরে
যাই। আবার আমি যখন রেগে যাই,..।’ ফারুকী কথা কেড়ে নিয়ে বলেন, ‘তিশা রেগে
গেলে আমি সঙ্গে সঙ্গে স্যরি বলি। তবে সরাসরি বলি না। ওর চারপাশে ঘুরঘুর
করতে থাকি। বিভিন্ন বিষয়ে প্রশ্ন করি। জানতে চাই ওর কাজের খবর। পরিবারের
খবর। তিশা তখন বুঝতে পারে যে আমি স্যরি বলার জন্যই এমনটা করছি। ও হেসে
দেয়।’ সংসারজীবনে দুজনই দুজনকে চমক দেওয়ার জন্য তৈরি থাকেন। যেমন, ফারুকী
দেশের বাইরে গেছেন। ফেরার দিন হয়তো ফারুকী তিশাকে ফোন করে জানতে চাইলেন,
‘এই, তুমি কোথায়?’ তিশা জানালেন শ্রীপুরে। ফারুকী দেশে এসে আবার ফোন করলেন
তিশাকে। ‘তুমি কোথায়?’ তিশা বললেন, ‘ও, ফারুকী! তুমি চলে আসছ! স্যরি, আমি
না এখনো কাজ শেষ করতে পারিনি। তুমি বাসায় যাও, আমি আসছি। এখানে অনেক বৃষ্টি
হচ্ছে। রাগ কোরো না।’ সরয়ার ফারুকী বাসায় ঢুকে দেখেন ঘরের মধ্যে একটা ভূত
বসে আছে। ‘এই ভূতটাই হচ্ছে তিশা। ও আমাকে এভাবেই চমকে দেয় বলে আমি ওকে ভূত
বলে ডাকি।’ বলছিলেন ফারকী। ফারুকীও তিশাকে অনেক কিছু দিয়ে চমকে দিতে চান।
কিন্তু উৎসাহ এতটাই থাকে যে চমক দেওয়ার আগেই সব বলে দেন। তিশার শুটিং।
ফারুকীর ফোন, ‘তিশা, তুমি কোথায়?’ তিশার উত্তর, ‘উত্তরায় শুটিংয়ে।’ ফারুকী
বললেন, ‘তিশা, তুমি থাকো, আমি আসছি, তোমাকে চমক দেব। চমক আর দেওয়া হয় না।
এটাই বোধহয় ভালোবাসা।’ আসছে ভালোবাসা দিবসে কী করছেন তিশা-ফারুকী? তিশা
বললেন, ‘ফারুকী ব্যাংককে থাকবে আর আমি শুটিংয়ে। ফারুকী দেশের বাইরে না গেলে
দুজন মিলে একটা পরিকল্পনা তো করবই। বিয়ের পরে আমরা প্রথম ভালোবাসা দিবস
পাচ্ছি। অবশ্য প্রতিটি দিনই আমাদের ভালোবাসার দিন। ’ সাগর মৈত্রী
চাঁদনী-বাপ্পা ‘তুমি চোখে রাখো চোখ/ চোখে চোখে কথা হোক’ চাঁদনীর পানে চেয়ে
বাপ্পা বোধহয় এটাই বোঝাতে চাইছিলেন। কারণটা কি জানেন, রাত নয়টা থেকে
দলছুটের সরদারটা নিজের স্টুডিওতে বসে ছিলেন চাঁদনীর অপেক্ষায়। ‘শ্যাওলাটাকে
আঁকড়ে ধরে নদীর খাঁজে শুতে রাজি’ গাওয়া বাপ্পা মজুমদার মনে মনে যতই বলুন
না কেন, ‘তাড়াতাড়ি আসো, চাদনী’, কিন্তু পথের পায়ে তো বাঁধা যানজটের শিকল আর
নৃত্যশিল্পী চাঁদনীর পায়ে বাঁধা নাচের ঘুঙুর। ঢাকা শহরে যেহেতু তাঁরা দুজন
একসঙ্গে বাসা বেঁধেছেন তাই এক-আধটু নাগরিক জ্বালা তো পোহাতেই হবে। সেটা
জেনেই বোধহয় বাপ্পাও তাঁর মুগ্ধ করা হাসিটা হেসে চাঁদনীকে একঝলক দেখে
গেলেন। এরপর স্টুডিওতে ঢুকে কাজের ছলে চাঁদনীকে একটু বুঝিয়ে দিলেন, ‘মন
ছুঁয়েছ মন দিয়েছি/ আছে কিছু দেনা/ তাই বলে কি ভাবছ নাকি—মনটা তোমার কেনা?’
মিষ্টি অভিমানের ছোট্ট পালার ক্ষণটা পোক্ত হওয়ার আগেই বাপ্পা ও চাঁদনী
হাসিমুখে বসে পড়লেন আনন্দের মুখোমুখি। সুরদরিয়ার নাবিক বাপ্পা আর নৃত্যতনয়া
চাঁদনীর সম্পর্ক অনেক দিনের। দুজনের প্রশংসায় পঞ্চমুখ তাঁরা। চাঁদনী যদি
বলেন, ‘বাপ্পা কাজের প্রতি খুবই সিরিয়াস’, বাপ্পাও সঙ্গে সঙ্গে শুনিয়ে দেন,
‘আমার প্রতিটা কাজেই চাঁদনীর সাপোর্ট সবচেয়ে বেশি’। বাপ্পা বলেন, ‘আমরা
দুজনই সারা দিন গান, শুটিং, নাচ নিয়ে ব্যস্ত থাকি। তাই প্রায়ই দিনের বেলা
দেখা হয় না আমাদের।’ এ কারণেই রাতের প্রহর কয়টি সিনেমা দেখে, গল্প করে আর
পারসিয়া ও পুটলিকে (তাঁদের পোষা কুকুর) আদর করতে করতেই কাটিয়ে দেন বলে
জানালেন চাঁদনী। তার পরও যান্ত্রিক জীবনের শত ব্যস্ততার মধ্যেও বাপ্পা
চাঁদনীকে আইসক্রিম খাওয়াতে নিয়ে যান, রাতে বাইরে খেতে নিয়ে যান, দুজন
একসঙ্গে ঘুরতে বেরিয়ে পড়েন। চাঁদনীও তাই বাপ্পার জন্মদিনে, বাপ্পার বাবা
বারীণ মজুমদার ও বাপ্পার মায়ের জন্মদিনে ছায়ার মতো লেগে থাকেন বাপ্পার
সঙ্গে। চাঁদনীর বিশেষ দিনগুলোতে হাতে কোনো কাজ রাখেন না বাপ্পা। যেমন,
চাঁদনীর শেষ জন্মদিনে বাপ্পা ও চাঁদনী দুজন মিলেই ব্যাংককে গিয়েছিলেন। এ
ছাড়া কাজপাগল বাপ্পা কিন্তু সময় করে ভালোবাসার উপহার দিতে ভোলেন না, সে
কথাও মনে করিয়ে দিলেন চাঁদনী। গেল বছর ভালোবাসা দিবসে বাপ্পা মজুমদার
চাঁদনীকে তাঁর প্রিয় পোষা কুকুর পুটলিকে উপহার দিয়েছিলেন। মজুমদার পরিবারের
কর্তা-গিন্নি দুজনই প্রাণীপ্রিয়। তবে একটাতেই বাপ্পা-চাঁদনীর অমিল। গাল
ফুলিয়ে সে কথাই জানালেন বাপ্পার স্ত্রী চাঁদনী, ‘আমি কফি পছন্দ করি, আর
বাপ্পার পছন্দ চা।’ আলী আসিফ তিনা-রিয়াজ তিন বছর হলো বিয়ে হয়েছে তাঁদের।
গলফ হাইটসের বিশাল বাসার মধ্যে ঢুকে দেখা গেল বেশ শান্ত পরিবেশ। কথাটি
বলতেই তিনা বললেন, ‘মোটেও না। সারাক্ষণ আমরা দুজন যা করি, তাতে তো মনে হয় এ
বাসায় অনেক মানুষ থাকে। এই যেমন ধরুন, আমরা ছোঁয়াছুঁয়ি খেলি। ও তো টিভির
রিমোটটা নিজের নিয়ন্ত্রণে রেখে সারাক্ষণ এইচবিও চ্যানেলে অ্যাকশন ছবি দেখে।
ওর সঙ্গে থাকতে থাকতে আমিও এখন এইচবিও দেখি।’ বলছিলেন তিনা। সংসারে কার
বেশি অবদান? রিয়াজ বললেন, ‘অবশ্যই তিনার।’ তিনা বললেন, ‘দুজনেরই। আসলে,
আমরা দুজনই এক মন, এক প্রাণ। জানা গেল, দুজনের মধ্যে মাঝেমধ্যেই খুনসুটি
হয়, মান-অভিমান হয়। আর সবকিছুতেই দ্রুত সন্ধি করেন রিয়াজ। একটি ঘটনা: তিনার
জন্মদিন। রিয়াজ এমন একটা ভাব দেখালেন যে, তাঁর সে কথা মনেই নেই। তিনা রাগ
করে বাবার বাড়ি চলে গেলেন। রিয়াজ এই সুযোগে কাঁটাবনে গিয়ে লাভ বার্ড আর
নানা রকম পাখি এনে নিজেদের ঘরে রাখলেন।
No comments:
Post a Comment
আপনার মন্তব্য দিন