ঋতুরাজ বসন্তের আগমনী ধ্বনির পর দিনই ভালোবাসা দিবসে (ভ্যালেনটাইনস ডে)
বিশ্বব্যাপী তরুণ-তরুণীরা মেতে ওঠে ভালোবাসার চিরন্তন বানী নিয়ে। এক জন অপর
জনকে বলে ওঠে, আমি ওকে অনেক ভালোবাসি, ও যেন কখনো আমাকে ভুল না বোঝে।’
ভালোবাসা দিবসে প্রিয় মানুষটির উদ্দেশে এ কথা বলেন তরুণ-তরুণীরা। অপর জনও
বলে ‘সব সময় যেন আমি আমার চেয়ে ওকেই বেশি ভালোবাসি।’
ইদানিংকালে বাংলাদেশের তরুণ-তরুণীরাও ভালোবাসা দিবসে ভালোবাসার মানুষকে
নিয়ে ঘুরে বেড়ায়, নিজেদের পছন্দমত জিনিসপত্র কেনাকাটা করে থাকে।
পরিবার-পরিজনের বিষয়টি মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে ভালোবাসায় ভরিয়ে দিতে চায় একে
অপরের হৃদয়-মন-প্রাণ। দুই জনের পরিবার তাদের এই সম্পর্ককে ভালোভাবে মেনে
নিক বা না নিক, তারা একে অপরকে ভালোবাসে। প্রতি বছর ১৪ ফেব্রুয়ারি
ভ্যালেনটাইনস ডে বা বিশ্ব ভালোবাসা দিবসটি বিশ্বের সকল মানুষের কাছে
ভালোবাসার চিরন্তন বাণী নিয়ে হাজির হয়। দিনটিকে ঘিরে চলে উৎসব-আনন্দ আর
অনুষ্ঠানের নানা আয়োজনে। কিন্তু এই ভালোবাসা দিবসটির পটভূমি কি সে কথা
বেশির ভাগ প্রেমিক-প্রেমিকা জানেন না। তাদের উদ্দেশ্যে ডিজিটাল জার্নাল
অনলাইন থেকে দেয়া হলো এ দিবসের কয়েকটি মজার তথ্য।
প্রাচীন রোমের খ্রিস্টান সাধু সেন্ট ভালেন্টিনাস’র নামে উদ্্যাপিত হচ্ছে
ভ্যালেনটাইনস ডে’র। তিনি ব্যক্তিগত জীবনে খুব একটা আমুদে প্রকৃতির লোক
ছিলেন না। এখন পর্যন্ত নিশ্চিত তথ্য পাওয়া যায়নি যে খ্রিস্টান সাধু রোমের
ভ্যালেনটাইন ছিলেন, নাকি টার্নি শহরের ভ্যালেনটাইন ছিলেন। এমনকি তার প্রেম
দীর্ঘস্থায়ী ছিল না কি ক্ষণস্থায়ী ছিলো, এ ব্যাপারে বেশি কিছু জানা যায়নি।
শুধুমাত্র জানা গেছে, যখন রোমানরা তার শিরচ্ছেদ করেছিলেন তার আগে তিনি
প্রিয়তমাকে একটি চিঠি লিখেছিলেন। ঐ চিঠির শেষে তিনি ‘তোমার ভ্যালেনটাইন’
লিখেছিলেন।
এক ব্রিটিশ প্রকাশক ১৭৯৭ সালে তরুণ প্রেমিকদের জন্য একগুচ্ছ আবেগ মাখানো
পদ্য প্রকাশ করেছিলেন। যে সব তরুণরা নিজের আবেগ পদ্যের মাধমে প্রকাশ করতে
পারেন না সেসব তরুণদের সহায়তার উদ্দেশ্যেই এটি প্রকাশ করেছিলেন। এরই
ধারাবাহিকতায় বিশ্ব ভালোবাসা দিবসে গ্রেটিংস কার্ড বিনিময়ের চল শুরু
হয়েছিলো বলে ধারণা করা হয়।
ভালোবাসা দিবসে হৃদয় আকৃতির যে প্রতীক ব্যবহার করা হয়, তার ধারণা এসেছে
সিলফিয়াম নামের এক ধরণের ঔষধি গাছের বীজ থেকে। মজার ব্যাপার হলো, বহুকাল
আগে ধর্মীয়ভাবে আঁকা বিভিন্ন চিত্রপটে পাইনগাছের মোচার আকৃতিকে হূদয়াকৃতির
সাথে তুলনা করা হতো।
যুক্তরাষ্ট্রের শুভেচ্ছাকার্ড এ্যাসোসিয়েশনের দেয়া তথ্য মতে,
যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি বছর ভ্যালেনটাইনস ডেতে ১৯ কোটির মত প্রেমিক-প্রেমিকারা
ভালোবাসার শুভেচ্ছা কার্ড পেয়ে থাকেন। ফ্রান্সের প্রত্যেক ব্যক্তিকে তিনটি
করে কার্ড পাঠালে এ সংখ্যার সমান হবে।
এত কোটি কোটি কার্ড, ভালোবাসা দিবসের এত শুভেচ্ছাবাণী আদান-প্রদান করা হয়
এর শুরুটা হয়েছিলো ফ্রান্সের ডিউক ওরফে চার্লস নামের এক সৈনিকের কাছ থেকে।
ভালোবাসা দিবসের প্রথম চিরকুটটি পাঠিয়েছিলেন ফ্রান্সের ওরলিঁও শহরের ডিউক
নামের এই সৈনিক, তার ডাক নাম ছিল চার্লস। ১৪১৫ সালের যুদ্ধে পরাজয়ের পর
তাকে টাওয়ার অব লন্ডনে কারাবন্দী করে রাখা হয়েছিল। তিনিই প্রথম ভালোবাসা
দিবসে তার প্রিয়তমাকে একটি চিরকুট পাঠিয়েছিলেন।
অপরদিকে, ১৯২৮ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি বা ভ্যালেনটাইনস দিবসে সিফিলিস রোগের প্রচলিত চিকিৎসা পদ্ধতি আবিষ্কার হয়েছিল।
২০১০ সালের ভ্যালেনটাইনস দিবসে বিশ্বব্যাপী মোট এক কোটি ৫০ লাখ
ই-ভ্যালেনটাইনস কার্ড বিনিময় হয়েছিলো। কাগজের কার্ডের পাশাপাশি বর্তমান
ডিজিটাল যুগে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে ই-কার্ড, যা ইন্টারনেটের মাধ্যমে পাঠানো
হয়।
ভালোবাসা দিবসের উপহার হিসেবে ২০ শতকের মাঝামাঝি সময় থেকে কার্ড, গোলাপ
ফুল, লাল সাটিন কাপড়ে মোড়ানো চকলেট, হৃদয় আকৃতির বাক্সসহ নানা ধরণের
বিনিময়ের চল শুরু হয়। ১৯৮০ সাল থেকে নতুন মাত্রা যুক্ত করতে হীরাশিল্পের
সাথে জড়িত ব্যক্তিরা এই দিনটিতে প্রিয়জনকে হীরার তৈরি অলঙ্কার উপহার দেয়ার
বিষয়ে মানুষকে উৎসাহিত করতে শুরু করেন।
২০১৪ সালের ভ্যালেনটাইনস ডে উপলক্ষে যুক্তরাষ্ট্রের ম্যানহাটনের একটি
রেস্তোঁরা ক্রেতাদের অভিনব কায়দায় এক ডিনারের প্যাকেজ অফার করেছে। অফারটির
নাম রাখা হয়েছে, ‘জীবনে একবারই ৩০ হাজার ডলারের ভ্যালেনটাইনস দিবসের
ডিনার’। এই প্যাকেজের মধ্যে নানা ধরণের খাবারের সাথে রাখা হয়েছে এক আউন্স
পরিমাণ বিশেষ ধরণের মাছের ডিম, চকলেটের লাভা কেক, শেল্টার দ্বীপের অজস্র
ঝিনুক ও ২৪-ক্যারেট সোনার পাতা।
No comments:
Post a Comment
আপনার মন্তব্য দিন