৩০ বছর আগের কথা। বিয়ে করেছিলেন স্বামী-সন্তান নিয়ে সুখে জীবন কাটাবেন
ভেবে। কিন্তু সুখের সংসার ছিল ঠিকই। শুধু অপূর্ণতা ছিল একটি সন্তানের। এর
জন্য নিজের স্বামীকে করিয়েছেন আরেকটি বিয়ে। আর নিজে সরে এসেছেন তাদের জীবন
থেকে। এতে কমেনি ভালবাসা। তিনি বললেন, ভালবাসা মানে শুধু প্রাপ্তি নয়,
ভালবাসার মানে হলো- সেই মনের মানুষের জন্য ত্যাগ স্বীকার করা। এটি হচ্ছে
অনুভূতির বিষয়। এই অনুভূতি সারা জীবন মনের মধ্যে থাকে। আমি এখনও আমার
স্বামীকে অনেক বেশি ভালবাসি এবং সারা জীবন ভালবাসবো। আমি প্রতিটি মুহূর্ত
থাকে অনুভব করি। সে যেন আমার সঙ্গেই আছে। এখন আমার শুধু একটাই চাওয়া, আমি
মরে গেলে সে যেন আমার কবরে একটু মাটি দেয়। এই কথাগুলো ছিল এক বৃদ্ধার। যে
নিজের ভালবাসার মানুষকে নিজে দাঁড়িয়ে থেকে অন্যের সঙ্গে বিয়ে দিয়েছেন শুধু
একটি সন্তানের জন্য। তিনি বললেন, তিনি কখন থেকে তাকে ভালবাসেন তিনি নিজেও
জানেন না। পাশাপাশি বাসা ছিল তাদের। ছোটবেলা থেকেই খেলাধুলা করা, স্কুলে
যাওয়া সব একসঙ্গে। মনের অজান্তেই তখন তৈরি হয়ে গেছে ভালবাসা। একজনের জন্য
আরেকজনের টান ছিল প্রবল। সেই সময় থেকে শুরু হয় প্রেমের কাহিনী। শত
বাধা-বিপত্তির পরও এ কাহিনীর পরিণত হয় বিবাহবন্ধনে। সুখে চলতে থাকে তাদের
জীবন। তাতে যে কত ভালবাসা জড়ানো। প্রতিটি মুহূর্তে ছিল মনের মণিকোঠায়
জড়ানো। এখন এসব কেবলই স্মৃতি। তবে তিনি এখনও স্বপ্ন দেখেন সেই স্মৃতিগুলোর
বাস্তবতা নিয়ে। ৩০ বছরের সংসার সব দিক থেকেই সুখ ছিল শুধু একটি বিষয় ছাড়া।
সেটা হলো একটি সন্তান। যেটি গত ২৯ বছরের দিতে পারেননি তিনি। সেই স্মৃতিগুলো
আওড়াতে আওড়াতে তিনি বলেন, আমার ছোটবেলার খেলার সঙ্গী ছিল ওই মানুষটি।
সারাটা দিন আমাদের যেতো খেলা আর ঝগড়াঝাটির মধ্য দিয়ে। তবে কখন যে আমাদের এই
ভালবাসা সম্পর্কের শুরু- সেটা সঠিকভাবে আমি বলতে পারবো না। আমি যখন নবম
শ্রেণীতে পড়ি; তখন আমাদের সম্পর্ক আরও গাঢ় হতে থাকে। তখন যোগাযোগের মাধ্যম
ছিল চিঠি। আর তাকে যদি আমার দেখার ইচ্ছে হতো তাহলে বাসার বারান্দায়
দাঁড়াতাম, যখন সে বাসা থেকে বের হতো সেই সময়। আমাদের পরিবার খুব পর্দানশীন
হওয়ায় যখন চাইতাম বাসা থেকে বের হতে পারতাম না। তবুও সুযোগ পেলেই চেষ্টা
করতাম দেখা করার। আমাদের জন্য কোন একটি দিন শুধু ভালবাসা দিবস ছিল না।
আমাদের কাছে প্রতিটি দিনই ছিল ভালবাসা দিবস। এভাবে চলতে থাকে সম্পর্ক। তবে এ
সম্পর্কে পরিবারের কারও মত ছিল না। সবার আড়ালে গড়ে উঠেছিল আমাদের এ
সম্পর্ক। এইচএসসি পাস করার পর আমি আর পড়ালেখা করিনি। তখন আমি একটা চাকরি
করতে শুরু করি। এর কিছুদিন যাওয়ার পরই পরিবারের কাউকে না জানিয়ে আমরা বিয়ে
করে নতুন সংসার শুরু করি। সংসার জীবন খুব ভালই কাটছিল। বিয়ের পর অনেক
জায়গায় ঘুরতে যাই আমরা। দেশের এমন কোন জায়গা নেই যেখানে আমরা ঘুরতে যাইনি।
এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি যেতাম কক্সবাজারে। কাজের মধ্যে একটু ফাঁক পেলেই চলে
যেতাম সেখানে। এমনকি আমাকে নিয়ে হজও করেছেন তিনি। কখনও মা হতে পারবেন না- এ
জন্য তিনি অনেক চিকিৎসা করান, দেশের বাইরে যান কিন্তু সব জায়গা থেকেই এক
উত্তর, তিনি মা হতে পারবেন না; তা জেনে ধর্মপ্রাণা সেই রমণী স্বামীকে
অনুরোধ করতে শুরু করলেন আরেকটি বিয়ে করার জন্য। কিন্তু কিছুতেই রাজি করাতে
পারছিলেন না তার স্বামীকে। অনেক চেষ্টার পর তার স্বামী বলেন, ঠিক আছে আমি
বিয়ে করবো শুধু তোমার জন্য। তারপর বিয়ে করান স্বামীকে। তখন ভাবলেন, এভাবে
তাদের সঙ্গে থাকা ঠিক নয়। যদি তিনি থাকেন তাহলে তাদের সম্পর্ক ভাল হবে না।
যে মেয়েটি বউ হয়ে এসেছে, সে মেয়েটি এ ব্যাপারে তাকে দোষারোপ করবে। তাই তিনি
চলে যান সংসার থেকে। দূরে থেকেও যেন খুব কাছে। সর্বক্ষণ যোগাযোগ হচ্ছে
স্বামীর সঙ্গে। কখন কি করছেন, কখন কি খাচ্ছেন, সব খবর আদান-প্রদান হচ্ছে।
তাদের এখন একটি মেয়ে সন্তান আছে। বৃদ্ধা বলেন, আমার এখান থেকে চলে আসার
অনেক কারণ আছে। মেয়েটি একটু বড় হলে আমি আবার আমার সংসারে চলে যাবো। আর তার
থেকে দূরে থাকা মানে ভালবাসা কমে যাওয়া নয়। বরং এখন আমাদের ভালবাসার আরও
বেড়েছে- কথায় আছে না দূরত্বে প্রেম প্রগাঢ় হয়।
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment
আপনার মন্তব্য দিন