মানব হৃদয়ে ফাল্গুনের আবির-উচ্ছ্বাস কাটেনি। একদিন পরই আরেক সুখের লগন।
ভালবাসায় সিক্ত হওয়ার দিন। ১৪ই ফেব্রুয়ারি। ভ্যালেন্টাইন ডে বা ভালবাসা
দিবস। ঋতুরাজ বসন্তের দ্বিতীয় দিনে ভালবাসা দিবসে বাঙালি মনের ভালবাসাও আজ
হয় পবিত্র। ফুলে রাঙা আর বাসন্তী মোহে মুগ্ধ। এ জন্যই বোধ হয় কবিতায় বলা
হয়, হৃদয়ে লিখেছিনু তোমায়; বসন্তে তুমি আরও স্নিগ্ধ, আহা আরও উচ্ছল তুমি-
ভালবাসা। বসন্তের আগুনরাঙা শিমুল-পলাশ ভালবাসাকে সত্যিই রাঙিয়ে দেবে।
যুগলদের মনের উচ্ছ্বাসকে বাড়িয়ে দেবে সহস্র গুণ। সুললিত করবে প্রেমের বাণী
বন্দনাগুলোকে। গাছ থেকে ফুল ঝরার মতো যুগলদের মনের কোণে ঝরবে কথকতা। কত
গান। প্রেমের কত কবিতা। বলবে সবাই, ভালবাসা ক্ষণিকের নয়। ভালবাসা চিরন্তন,
বিশ্বাসে। ভালবাসি তোমায়। আজকের ভালবাসা শুধু প্রেমিক-প্রেমিকার নয়- শুধু
স্বামী-স্ত্রীর মধ্যেই নয়, তা প্রসারিত হবে বন্ধু-বান্ধব, পরিচিতজনসহ সবার
মাঝে। এই ভালবাসা বয়সের ফ্রেমে বাঁধা নয়। কিংবা শুধু তরুণ মনেই এর
সীমাবদ্ধতা নয়। আজকের দিনে সব বয়সের, সব সংস্কারে বিশ্বাসী মানুষের মনে
নতুন দোলা জাগবে। যারা ভালবাসায় পড়েছেন অথবা যারা ভাল বাসেননি এখনও কাউকে,
সবাই আজকে নতুন করে জাগবেন। পুরাতনকে পেছনে ফেলে মনের সব যাতনা, কালিমা
ভুলে ভালবাসায় সিক্ত হবেন সবাই। ভালবাসায় মাতোয়ারা হবেন সব মানুষ। আজকের
দিনে এসে সবাই খোঁজেন প্রিয় মানুষটির সাহচর্য। একটু ছোঁয়া। বছরের অন্য অনেক
দিন দূরে দূরে থাকলে কিংবা কাছে আসার সব বাধা পেরোনো সাধ্যে না কুলালেও এ
দিনটিতে মন চায় প্রিয় মানুষটির কাছে আসতে। একটু স্পর্শ করতে। একটু ভেতরের
মানুষটাকে নতুন করে দেখতে। বসন্তরাজের আগমনের একদিন পর এমন দুঃসাহস দেখাতেই
পারেন অনেকে। বলতেই পারেন, একজনমে নয়, জনম জনম ভালবাসা ফুরাবার নয়। যা
নিয়ে লেখা হয়েছে অসংখ্য কালজয়ী কবিতা, গান, উপন্যাস, গল্প, নাটক, সিনেমা।
কিন্তু তার আবেদন ফুরায়নি। এখনও যেন কোথায় রয়ে গেছে অপূর্ণতা, এটি পাওয়া না
পাওয়ার মাঝে। যারা প্রিয় মানুষটিকে পেয়েও হারিয়েছেন, তারা আজ সেই
অপূর্ণতাকে ভুলবার চেষ্টা করবেন। বেদনার নীল রঙে খুঁজবেন হৃদয়ের গভীরে
তোলপাড় করা পবিত্র অনুভূতির সেই আবিরতাকে। আগেকার সময়ে সাক্ষাতে ফুল বিনিময়
এবং পরে টেলিফোনে শুভেচ্ছা বিনিময় হতো শুধু ভালবাসার মানুষটির সঙ্গে। তবে
মোবাইল ফোনের কল্যাণে আজকের দিনটিতে সবাই এসএমএস’র মাধ্যমে সবার সঙ্গে
ভালবাসার শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন। ফেইসবুকের মারফতে দেশ দেশান্তরে পৌঁছে
দেবেন ভালবাসা নিয়ে নিজের অনুভূতিগুলোকে। দিবসটিকে সার্থক করতে
তরুণ-তরুণীদের মাঝেই উচ্ছ্বাস দেখা যাবে বেশি। নতুন পোশাক পরে বিভিন্ন
দর্শনীয় ও পরিচিত স্থানে ঘুরে বেড়াবেন। করবেন ফুল বিনিময়। কেউ রিকশায়
ঘুরবেন সারা শহর। কেউবা নিজের গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়বেন অজানায়। এর কোন ফাঁকে
ঢুঁ মারবেন কোনও ফুড স্টোরে। ফুলের দোকানগুলোতে থাকবে ভিড়। চ্যানেলগুলো
ভালবাসা দিবস উপলক্ষে আয়োজন করেছে অনুষ্ঠানমালার। বিভিন্ন স্থানে একাধিক
সংগঠনের ব্যানারে বের হবে ভালবাসার শোভাযাত্রা, র্যালি। থাকবে ডিজে
পার্টিও। এভাবে ভালবাসা দিবসে সবাই ভালবাসায় সিক্ত হবেন- এটাই স্বাভাবিক।
তবে সেই সঙ্গে মনে রাখতে হবে আমাদের সংস্কৃতি, আমাদের ঐতিহ্যকে। ভালবাসার
নামে যেন এমন কিছু দেখানো না হয় যা নিজেদের চিন্তা-চেতনা আর ধ্যান-ধারণাকে
সমর্থন করে না, প্রতিনিধিত্বও করে না। ভালবাসায় সিক্ত হওয়ার দিনে এটিও সবার
প্রত্যাশা।
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment
আপনার মন্তব্য দিন