ভালোবাসা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না, শুধুমাত্র অনুভূতি দিয়ে প্রকাশ করতে
হয়। এটি একটি মানবিক অনুভূতি ও আবেগকেন্দ্রিক অভিজ্ঞতা। এর রং-রূপ-গন্ধ
কিছুই নেই আছে শুধু অনুভূতি। বিশেষ কোন মানুষের জন্য ভালোবাসা স্নেহের
শক্তিশালী বহিঃপ্রকাশ। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হয়তো এমন মুহূর্তকেই
স্মরণ করে লিখেছিলেন, ‘দোহাই তোদের, এতটুকু চুপ কর/ভালোবাসিবারে, দে মোরে
অবসর।’ জীবজগতের মধ্যে আন্তঃসম্পর্ক হল ভালোবাসা। যার শক্তিতে পৃথিবীর এক
প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত জয় করা যায়। পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি উচ্চরিত
শব্দগুলোর মধ্যে একটি হলো ‘ভালোবাসা’। একে বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে একে ভাগ
করা যায়। যেমন: ধর্মীয় ভালোবাসা, বন্ধুদের প্রতি ভালোবাসা প্রভৃতি।
পৃথিবীর প্রত্যেকটি প্রাণীর মধ্যে ভালোবাসা বিদ্যমান। ভালোবাসায় যৌনকামনা
বা শারীরিক লিপ্সা একটা গৌণ বিষয়। এখানে মানবিক আবেগটাই বেশি গুরুত্ব বহন
করে। আরো সঠিকভাবে বলতে গেলে কোনো ব্যক্তি বা বস্তুর প্রতি অতিরিক্ত স্নেহ
প্রায় সময়ই খুব আনন্দদায়ক হতে পারে এমনকি কোন কাজ বা খাদ্যের প্রতিও। আর
এই অতি আনন্দদায়ক অনুভূতিই হলো ভালোবাসা। ভালোবাসা শুধুই প্রেমিক আর
প্রেমিকার জন্য নয়। মা-বাবা, স্বামী-স্ত্রী, ভাইবোন, প্রিয় সন্তান,
পরিবার, সমাজ এমনকি দেশের জন্যও ভালোবাসা। তবে আবেগধর্মী ভালোবাসা সাধারণত
গভীর হয়, বিশেষ কারো সাথে নিজের সকল অনুভূতি ভাগ করা, এমনকি শরীরের
ব্যাপারটাও এই ভালোবাসা থেকে পৃথক করা যায় না। সেন্ট ভ্যালেন্টাইন স ডে বা
বিশ্ব ভালোবাসা দিবস (সংক্ষেপে ভ্যালেন্টাইন’স ডে নামে পরিচিত) একটি
বার্ষিক উৎসবের দিন যা ১৪ ফেব্রুয়ারি; প্রেম ও অনুরাগের মধ্যে উদযাপিত করা
হয়। দিবসটিকে ঘিরে বিশ্বব্যাপি রয়েছে নানা আয়োজন। এ দিনে প্রিয়জন তার
ভালোবাসার মানুষকে ফুল, চিঠি, কার্ড, গহনা প্রভৃতি উপহার প্রদান করার
মাধ্যমে দিনটি উদ্ যাপন করে থাকে। খ্রিস্টানজগতে পাদ্রী-সাধু-সন্তদের
কাজের স্মরণে কিছু জনপ্রিয় দিবস রয়েছে। যেমন: ১৭ মার্চ- সেন্ট প যাট্রিক
ডে, ২৩ এপ্রিল- সেন্ট জজ ডে, ২৪ আগস্ট- সেন্ট বার্থোলোমিজম ডে, ১ নভেম্বর-
আল সেইন্টম ডে, ১১ নভেম্বর- সেন্ট মার্টিন ডে, ৩০ নভেম্বর- সেন্ট এন্ড্রু
ডে প্রভৃতি। পরবর্তীতে খ্রিস্টিয় এই ভ্যালেন্টাইন দিবসের চেতনা বিনষ্ট
হওয়ায় ১৭৭৬ সালে ফ্রান্স সরকার কর্তৃক ভ্যালেইটাইন উৎসব নিষিদ্ধ হয়। এক
সময় ইংল্যান্ডে ক্ষমতাসীন পিউরিটানরাও প্রশাসনিকভাবে এ দিবস উদযাপন করা
থেকে বিরত থাকার জন্যে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। এছাড়া হাঙ্গেরি, অস্ট্রিয়া ও
জার্মানিতে বিভিন্ন সময় এ দিবস নিয়ে বির্তক সৃষ্টি হয়। দেশে দেশে
ভালোবাসা দিবস এ উৎসব বর্তমানে সারাবিশ্বে মহাসমারোহে উদযাপন করা হয়।
ইউরোপের সব দেশেই এ দিবস পালন করা হয়ে থাকে। মার্কিনিদের মধ্যে
ভ্যালেন্টাইন ডে পালনের হার বেশি। জরিপে দেখা গেছে, চার মার্কিনির মধ্যে
তিনজনই দিবসটি পালন করে। আমেরিকায় এ দিনে ১৬ কোটি কার্ড, ১৩ কোটি গোলাপ
বিনিময় হয়। যুক্তরাজ্যে আনুমানিক মোট জনসংখ্যার অর্ধেক প্রায় ১০০ কোটি
পাউন্ড ব্যয় করে এই দিবসের জন্য কার্ড, ফুল, চকোলেট এবং অন্যান্য
উপহারসামগ্রী ও শুভেচ্ছা কার্ড ক্রয় করে; এছাড়া প্রায় ২.৫ কোটি শুভেচ্ছা
কার্ড আদান-প্রদান করা হয়। উনিশ শতকেই উত্তর আমেরিকায় ভ্যালেন্টাইন’স ডে
পালন শুরু হয় ব্রিটিশ অভিবাসীদের মাধ্যমে। ব্যাপক হারে ভ্যালেন্টাইন
কার্ড বিনিময় শুরু ১৮৪৭ সালে ম্যাসাসুয়েটসের অরকেস্টারে। চীনে ভালোবাসা
প্রকাশের সমৃদ্ধ ইতিহাস রয়েছে। ভ্যালেন্টাইন ডে পালনের আগে তারা বছরের দুই
দিন পালন করতো ভালোবাসা দিবস। এখন চীনে ব্যাপক হারে দিবসটি পালিত হয়।
পশ্চিমা ধাঁচে ১৪ ফেব্রুয়ারিই তারা ভালোবাসা দিবস পালন করে। ভারতেও
তরুণ-তরুণীরা এ দিবস পালন করে উৎসবের আমেজে। আমাদের দেশে বছরের অন্যান্য
অসংখ্য দিবসের মত বিশ্ব ভালোবাসা দিবস বা ভ্যালেন্টাইন’স ডে পালন হচ্ছে
বিগত কয়েক বছর ধরে। ইন্টারনেটের এই যুগে পোস্ট কার্ডের পরিবর্তে ই-কার্ডের
ব্যবহার আর এসএমএস/এমএসএস বা ই-মেইল। ভালোবাসা দিবসকে সামনে রেখে বিভিন্ন
ওয়েব সাইট ভালবেসে ভালোভাবে সাজানো হয়। এসব সাইট থেকে যেমন ই-কার্ড
পাঠানো যায় তেমনি ভালোবাসার এসএমএস, কবিতা ইত্যাদি সংগ্রহ করা যায়। ১৪
ফেব্রুয়ারি সারা দিন মুঠোফোন, ফেইসবুক ও টুইটারে শুভেচ্ছা বিনিময় চলবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা, চারুকলা, রবীন্দ্রসরোবর, সংসদ ভবন চত্বর,
সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, রমনা বটমূল, চন্দ্রিমা উদ্যান মুখর থাকবে সারা দিন।
আশা করি সবারই ভালোবাসা দিবস কাটবে আনন্দ-উচ্ছ্বাস আর অফুরন্ত ভালোবাসায় ।
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment
আপনার মন্তব্য দিন