নতুন সম্পর্কে বিশ্বাসী আমরা, পুরনোকে ভুলে যাই। তাই মাঝে মাঝে নতুন
সম্পর্কের ভিড়ে কেন জানি সেই পুরনো সম্পর্কগুলো হারিয়ে যায়... সম্পর্ক
মানেই কিছু আবেগ, অনুভূতি আর অদৃশ্যময় বন্ধনের আবদ্ধতা। আমরা কেউই সে
আবদ্ধতার বাইরে নই। জীবনের প্রয়োজনে কিছু আধো ছেঁড়া সম্পর্কও তাই আমাদের
মেনে নিতে হয়। মেনে নিতে হয় সম্পর্কের লাঞ্ছনা-বঞ্চনাসহ আরও কত কী! তাই তো
অবস্থানভেদে সম্পর্কের সংজ্ঞাও অনেক হয়। কখনও কখনও সম্পর্ক একপ্রকার মায়া।
সে মায়া আমরা কখনোই কাটিয়ে উঠতে পারি না। পারি না সে অদৃশ্য বন্ধনের অদৃশ্য
সব গিঁট খুলে দিতে। এতদসত্ত্বেও সম্পর্কের কিছু টান বেশিদিন টিকে থাকে না।
আবার একেবারে ছিঁড়েও যায় না। তবুও দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা সম্পর্কে কিছু
পরিবর্তন আসে। সেই সঙ্গে নতুন নতুন সম্পর্কের বিষয়ে টান আসে। নতুন
সম্পর্কের আড়ালে এক সময় পুরনো সম্পর্ক আকাশের গাঢ় মেঘের আড়ালে লুকিয়ে রয়।
নতুনের ডাকে আমাদের মাঝে পুরনো সম্পর্কের অদৃশ্য দেয়াল তৈরি হয়। এদের কেউ
হারাতে হারাতে একবারে অভিমান নিয়ে হারিয়ে যায়। নয়তো বদলায়। নিজের
জীবনশৈলীকে পাল্টায়। এত সম্পর্কতেও পরিবর্তন আসেতে পারে। স্থায়ীভাবে জোড়া
লেগে যেতে পারে ধূসর হাওয়ার সম্পর্কগুলো। আমাদের চারপাশের যত সম্পর্ক রয়েছে
সবগুলোকে দু'ভাগে ভাগ করা যায়। এর প্রথমটি পারিবারিক সম্পর্ক আর দ্বিতীয়টি
সামাজিক সম্পর্ক। পারিপাশর্ি্বক বিবেচনায় বেঁচে থাকতে এ দুটি সম্পর্কের
প্রতিই আমাদের শ্রদ্ধাশীল হতে হবে বলে মনে করেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব
মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ও হাসপাতালের মনোরোগ বিশেষজ্ঞ (এমবিবিএস,
এমডি-সাইকিঅ্যাটরি) ডা. ওয়াসিমা রহমান। তিনি বলেন, আমাদের মাঝে কিছু
সম্পর্ক রয়েছে যা ভেঙে ফেলাই ভালো। যেমন পরিবার বা বন্ধুদের মধ্যে কেউ যদি
নেশাগ্রস্ত হয়, সে ক্ষেত্রে সম্পর্ক ভেঙে ফেলাই ভালো। তবে সম্পর্কটি ভাঙার
আগে তাকে সুস্থ পথে ফেরানোর চেষ্টা করা উচিত। সম্পর্ক আড়াল যদি আমার থেকেই
হয়, তবে তার সব দায় আমারই_ এটা স্বাভাবিক। তাই প্রথমেই আমাকে যে বিষয়টা
খেয়াল রাখতে হবে তা হলো, পরিবার বা সামাজিক কোনো সম্পর্কের গুরুত্বটা আমার
কাছে বেশি। ওই মুহূর্তে যে সম্পর্কটা মেনে চলা উচিত, তখন আমাকে সেদিকেই আগে
যেতে হবে। আমাদের সমাজে বিয়ের মাধ্যমে বাবা-মায়ের সঙ্গে সম্পর্কের আড়াল
বেশি সৃষ্টি হয়। তাই এক্ষেত্রে প্রয়োজনটার গুরুত্ব বেশি দিতে হবে।
ব্যস্ততার মাঝেও নিজেকে সময় দিতে হবে। বাবা-মা, ছেলেমেয়ে এমনকি স্ত্রীকেও
সময় দিতে হবে। পারিবারিক সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে এই নিয়মের বাইরে কখনোই কিছু
নয়। তবে সম্পর্কের বাইরের আত্মীয়-স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশীকে যতটুকু সম্ভব সময়
দিতে হবে। মনে রাখতে হবে আমাদের চারপাশের সব সম্পর্ক আমাদের নতুন করে
বেঁচে থাকার একেকটি উপাদান। সম্পর্ক বিষয়টি দ্বৈত। এর এক পাশ আড়াল হবে তো
অন্য পাশ জেগে উঠবে। তাই কখনো যদি মনে হয়, 'আমাকে কেউ আড়াল করতে চাইছে' তখন
নিজেরও কিছু করার থাকতে পারে। প্রথমেই বুঝতে হবে যার দ্বারা সম্পর্ক আড়াল
হচ্ছে সে কী আদৌ তা ইচ্ছা করে করছে, নাকি আপনার প্রতি তার মাঝে কোনো ভুল
ধারণা জন্ম নিয়েছে? এমন কিছু প্রশ্ন যদি আপনার মনে জাগে সে ক্ষেত্রে আপনি
তাকে সরাসরি জিজ্ঞাসা করতে পারেন কেন সে এমনটি করছে। সে যদি ব্যস্ততার
প্রসঙ্গ তোলে তাহলে তা নিয়ে আপনাকেই ভাবতে হবে। তার ব্যস্ততায় আপনাকেই
সম্পর্কের হাল টেনে ধরতে হবে। আপনাকে নিয়ে তার মধ্যে কোনো বিরূপ ধারণা
জন্মালে আপনার দ্বারাই সে মুখোশ উন্মোচন করতে পারেন। এতে সম্পর্ক থাক বা না
থাক আপনার প্রতি অন্তত তার ভুল ধারণার অবসান ঘটবে। মনে রাখবেন, সম্পর্কের
টান যদি দু'দিক থেকেই ছিঁড়ে যায় তবে তা জোড়া লাগানো বেশ কঠিন হয়ে দাঁড়াবে।
No comments:
Post a Comment
আপনার মন্তব্য দিন