Pages


বন্ধুরা, ১৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্ব ভালোবাসা দিবস। দিবসটিকে ঘিরে বিশ্বব্যাপি রয়েছে নানা আয়োজন। প্রযুক্তির অগ্রযাত্রায় সাথে ভালোবাসা বা ভালোবাসা দিবস সম্পৃক্ত থাকবে না সেটি কি হয়? কবুতর, ডাকপিয়নের স্থানে এখন ভালোবাসার সংবাদ বাহনে কাজ করে ইন্টারনেট ও ডিজিটাল ডিভাইস। মুহুর্তেই ভালোবাসার বার্তা পৌছে যায় প্রিয় মানুষটির কাছে। আসুন জেনে নিই ভালোবাসা প্রকাশে প্রযুক্তির নানা সুবিধার কথা….
সেলফোন, কম্পিউটার, ইন্টারনেট। আর ইন্টারনেটে সামাজিক যোগাযোগ সেবা ফেসবুক, গুগল প্লাস, মাইস্পেস, টুইটার ইত্যাদি। ভয়েস এবং ভিডিও কলের পাশাপাশি এসএমএস, এমএমএস, চ্যাটিং। দূরে থাকলেও ডিজিটাল আয়োজনে কাছে থাকে প্রিয়জন। যেন নির্মলেন্দু গুণের কবিতার মতো … হাত বাড়িয়ে ছুঁই না তোকে মন বাড়িয়ে ছুঁই…। হাজার মাইল দূর থেকেও প্রিয় মানুষকে ছুঁয়ে দেওয়ার অনুভূতি মেলে ভার্চুয়াল স্পর্শে।
মন বাড়িয়ে ছুঁই : প্রিয় মানুষটি সব সময় চোখের সামনে থাকবে সেটা তো সবসময় সম্ভব হয়ে ওঠে না! প্রয়োজনে-অপ্রয়োজনে প্রায়ই প্রিয়জন থেকে দূরে থাকার বিরহে পুড়তে হয়। তবে তাতে হা-পিত্যেশ করে মরার কিছু নেই। হাত বাড়িয়ে ছুঁয়ে দিতে না পারলে মন বাড়িয়ে ছুঁতে রয়েছে নানা রকম ভার্চুয়াল আয়োজন। সেলফোনের বোতাম কিংবা ইন্টারনেট সংযুক্ত মাউস-কিবোর্ডের স্পর্শে সহজেই প্রিয়জনের কাছে পৌছে দেওয়া যাচ্ছে মনের বার্তাটি। দূর থেকেও বিষন্ন, ক্লান্ত সময়গুলো প্রিয় মানুষের স্পর্শে খুঁজে পাচ্ছে আশ্রয়। মুহূর্তগুলো হয়ে উঠছে রঙিন। ভালোবাসা দিবসে বিনিসুতোয় হৃদ্যতার বাঁধন তৈরিতেও ভূমিকা রাখবে ডিজিটাল মাধ্যম। তাৎক্ষণিক বার্তা বিনিময়ে পাশে রয়েছে সামাজিক যোগাযোগ সেবা, ইনস্ট্যান্ট মেসেজিং [আইএম], মাইক্রোব্লগ এবং ছবি শেয়ারিংয়ের মতো সাইটগুলো। ফেসবুক, গুগল প্লাস, মাইস্পেস, টুইটার প্রিয়জনের সঙ্গে যোগাযোগে অসাধারণ মাধ্যম। তবে সবাইকে ছাপিয়ে ফেসবুক এখন শীর্ষ বাহন। যদি মনের কথাটি সত্যিই এতদিন বলা হয়ে না থাকে, তবে এবারই ফেসবুক মেসেজে বলে দেওয়া যেতে পারে আপন বার্তা। প্রায় সবাই জানি, সাইটটির মাধ্যমে প্রিয়জনের কাছে পছন্দের বার্তা পাঠানোর পাশাপাশি যে কোনো ছবি, ভিডিও এবং ওয়েবসাইটের ঠিকানা শেয়ার করা যাচ্ছে। শেয়ার করা ছবিতে ইচ্ছামতো মন্তব্যও করা যায়। ফেসবুকের সবচেয়ে মজার ফিচার হচ্ছে এর চ্যাটিং ও সম্প্রতি চালু হওয়া ভিডিও কলিং সুবিধা।
একদিন দেখা না হলেই যেন হাজার দিনের নিঃসঙ্গতা। তবে এখন আর নিঃসঙ্গ হতে হয় না। তবে এর জন্য প্রয়োজন ডিজিটাল মাধ্যম। হাজার মাইল দূরে থেকেও ভার্চুয়াল মাধ্যমে নিয়মিত দেখাদেখি যেন নির্জলা ঘটনা! ছবি আপলোডে রয়েছে ছবি শেয়ারিং সাইট পিকাসা এবং ফ্লিকার। মনের বার্তা তাৎক্ষণিক পৌছে দিতে ইয়াহু মেসেঞ্জার, মাইক্রোসফটের হটমেইল মেসেঞ্জার কিংবা গুগলের জিটক অতুলনীয়। এতে চ্যাটিংয়ের পাশাপাশি পাঠানো যায় আবেগ প্রকাশক চিহ্ন (ইমোটিকন), অ্যানিমেশন কার্টুন এবং অফলাইন বার্তা। ওয়েবক্যাম যুক্ত করে ভিডিও এবং মাইক্রোফোন যুক্ত করে ভয়েস চ্যাটিং সুবিধাও নেওয়া যায়। আর সেলফোনে তাৎক্ষণিক বার্তা আদান-প্রদানে জনপ্রিয় মাধ্যম হচ্ছে মিগ৩৩, নিমবাজ, ফ্রিং, এজিল মোবাইল, উইন্ডোজ লিভ ফর মোবাইল, ইনস্ট্যাংগো, ইবাডি ও ইয়ামি মেসেঞ্জার। কম্পিউটারে একসঙ্গে একাধিক চ্যাট ক্লায়েন্টের সঙ্গে চ্যাটিং করার জন্য রয়েছে পিজিন মেসেঞ্জার। এর মাধ্যমে এইম, গুগলটক, মাইস্পেস, ইয়াহু, এমএসএনসহ প্রায় সব চ্যাট ক্লায়েন্টের সঙ্গে নিয়মিত চ্যাটিং করার সুবিধা রয়েছে।
প্রিয়জনের জন্য উপহার : ভালোবাসা দিবসে প্রিয়জনকে শুভেচ্ছা এবং উপহার পাঠানো খুবই জরুরি। এজন্য ইন্টারনেটে রয়েছে অসংখ্য ওয়েবসাইট। ভালোবাসার কার্ড পাঠাতে ২০০০ গ্রিটিংস, রিগার্ডস, ১০০ ফ্রি-ইকার্ডস, ব্লুমাউন্টেইন, ফোর ফ্রেন্ডশিপ, ১২৩ গ্রিটিংস, দেশিলাভ, ভালেন্টাইনস ডে, ভালেন্টাইনস ডে-ইকার্ডস, ভ্যালেন্টাইনগিফট, এভরিথিংসভ্যালেন্টাইনডে, এসটি-ভ্যালেন্টাইসডে, ভ্যালেন্টাইনস ডে স্লাইড, প্যাশনআপসহ অগনিত ওয়েবসাইট থেকে বেছে নেওয়া যায় প্রিয়জনের মনে দাগ কাটে এমন ই-কার্ড। সাইটগুলো থেকে বিনামূল্যে ভালোবাসার ই-কার্ড পাঠানো যায়। এ জন্য উপহারের ক্যাটাগরি থেকে পছন্দের ভার্চুয়াল উপহারটি বেছে ‘সেন্ড দিস ই-কার্ড’ অপশনটিতে ক্লিক করে পাঠাতে হবে প্রিয়জনের ঠিকানায়। অধিকাংশ সাইটেই ই-কার্ড পাঠানোর নিয়ম একই রকম। তবে কিছু সাইটে ভিন্নভাবেও ই-কার্ড নির্বাচন এবং পাঠাতে হতে পারে। এছাড়া সামাজিক যোগাযোগসেবা ফেসবুকের মাধ্যমেও ফেসবুক বন্ধুদেরও যে কোনো ভার্চুয়াল উপহার পাঠানো যাবে। আর যারা ফটোশপ এবং সফটওয়্যারের কাজে দক্ষ তারা নিজেই তৈরি করে নিতে পারেন মনের মতো ই-কার্ড। কার্ড তৈরির কয়েকটি সফটওয়্যার স্মার্টড্র, কার্ভ এবং স্কিলসফট থেকে নামিয়ে নেওয়া যেতে পরে। ভ্যালেন্টাইন্স সম্পর্কিত মোবাইল সাইটও আছে প্রচুর। সাইটগুলো থেকে ভালোবাসা দিবসের ইতিহাস, ই-কার্ড, ভালোবাসার কবিতা, কোটেশন, ই-গিফট নানা বিষয়ে জানতে পারবেন। এছাড়া প্রিয়জনকে পাঠাতে পারবেন আকর্ষণীয় সব ইলেকট্রনিক কার্ড।

ভার্চুয়াল মাধ্যমে বাস্তবতার আমেজ : শুধু ভার্চুয়ালি নয় প্রিয় মানুষটির হাতে পৌঁছে দিতে সত্যিকারের উপহারের ব্যবস্থাও রয়েছে। এজন্য রয়েছে গিফট ভাউচার অথবা গিফট কার্ড। গিফট ভাউচারে টাকার অঙ্ক বসানো থাকবে। লেখা থাকবে ঠিকানা। গিফট কার্ডটি প্রি-পেইড কার্ডের মতো। নির্দিষ্ট মেয়াদ থাকে। এ কার্ড দিয়ে যে কোনো দোকান থেকে ব্যালান্স অনুযায়ী পছন্দের পণ্য কেনা যাবে। কার্ড পাওয়া যায় বিভিন্ন ব্যাংকে। এ ছাড়াও বড় বড় গিফট শপেরও নিজস্ব কিছু ভাউচার রয়েছে। যেমন আড়ং, প্রবর্তনা, বিবি প্রডাকশনস ইত্যাদি। প্রিয়জনের কাছে পছন্দের উপহার পাঠিয়ে দিতে কাজ করছে বেশ কয়েকটি ওয়েবসাইট। এর মধ্যে গিফ্টজহাট, বিডিগিফটজ, গিফটমেলা, দেশি গ্রিটিংস, দেশি মেগাশপ উল্লেখযোগ্য। ক্রেডিট কার্ডে টাকা পরিশোধ করলে সময় মতো উপহার পৌঁছে যাবে প্রিয়জনের ঠিকানায়। এভাবে ভার্চুয়াল আয়োজনে বিশ্ব ভালোবাসার দিনে প্রিয় মানুষটিকে কাছে রাখা যায়। প্রযুক্তির বাহন এখন আড়ম্বরপূর্ণ কোনো পণ্য নয়। ভ্যালেন্টাইন দিবসে প্রিয়জনকে পছন্দের বইও উপহার দিতে পারেন। ইন্টারনেটের মাধ্যমে বই বিক্রির সাইটগুলোতে অর্ডার করলেই তারা ঠিকানামতো পৌছে দেবে বই। এসব সাইটের মধ্যে উল্লেখযোগ্য বইমেলা, রকমারি ডটকম।


প্রযুক্তি আজ প্রাত্যহিক জীবনে প্রিয়জনের মাঝে ভালোবাসায় বেঁচে থাকার হাতিয়ার। এই হাতিয়ারই প্রিয় মানুষটিকে কাছে রাখছে সব সময়। ভালোবাসা দিবসে জয়তু ডিজিটাল ভ্যালেন্টাইন্স।
আশাকরি আপনাদের সবারই ভালোবাসা দিবস কাটুক আনন্দে, উচ্ছাসে আর অফুরন্ত ভালোবাসায়… <3
লেখায় কোনো ভুল বা অন্য কোনো সমস্যা থাকলে জানাবেন..