Pages

*অপ্রকাশিত ভালবাসা*


আমি জীবনে যে ভালবাসিনি এমন না, আমিও একদিন ভালবেসেছিলাম । অনেক ছোট থাকতে। তখন আমি ক্লাস নাইনে পড়ি । মোটামুটি দুষ্টুও ছিলাম বটে। দুষ্টামি করার সকল উপায় ভালভাবেই জানা ছিল আমার।
স্কুল জুড়ে দুষ্টামিতে আমার নাম ছিল হিটলিস্টে। ক্লাস ফাকি আর স্কুল পালানো ছিল আমার খুব পছন্দের। তবে মেয়েদের ব্যাপারে ছিলাম খুবই ভদ্র। এই ধরনের দুষ্টামিতে যখন হচ্ছিলোনা, তখন বন্ধুরা বলল একটা প্রেম কর। তারপর তারা একটা মেয়েও পছন্দ করে দিল। দেখলাম মেয়েটা সত্তিই অনেক সুন্দর।বেশ লম্বা। মেয়েটাকে আমি আগেও অনেকবার দেখেছি, কিন্তু এভাবে কোনদিন ভাবিনি। সেদিন অনেক আনন্দ নিয়ে বাসায় ফিরেছিলাম। দেখলাম সারাদিন শুধু মেয়েটাকে নিয়ে ভাবছি। তখন থেকেই বুঝতে শুরু করলাম ভালবাসা কি। সেদিন রাতে ঘুম একদমই হচ্ছিলনা। পরদিন স্কুলে গেলাম, আর তাকে দেখলাম নতুন করে। মনে হল শুধু এই স্কুলে না, সে যেন পৃথীবিতে সবার চেয়ে সুন্দর। সত্তিই ভালবেসে ফেললাম তাকে। স্কুলে সবসময় তাকিয়ে থাকতাম তার দিকে। তাকে দেখলে আমার বুকে অন্যরকম একটা অনুভুতির সৃষ্টি হতো। নিজের অজান্তেই আমার মুখের কোনে অদ্ভুত একটা হাসি খেলে যেত। খুব ইচ্ছা হতো তাকে আলতো করে একটু ছুঁয়ে দিতে। কিন্তু তার মুখোমুখি হলে তার চোখের দিকে তাকাতে পারতাম না, মাথা নিচু করে ফেলতাম। আমার মনে আছে সেদিন থেকে আমি আর একদিনও স্কুল কামাই করিনি। তখন মনে হতো শুক্রবারেও ক্লাস হলে খুব ভাল হতো।
দুষ্টামি একেবারেই ছেড়েদিয়েলাম। দুষ্টামিতে হিটলিস্টে থাকা ছেলেটি হটাৎ এত ভদ্র হয়ে গেলো এটা নজর এড়ালনা কারোরই, এড়ালনা তারও। ভালবাসার কথা সরাসরি বলতে পারলাম না তাকে, অবশ্য আমার অবস্তা দেখে তার একবিন্দুও বুঝতে বাকি ছিলনা, সে বাপারে আমি ছিলাম নিশ্চিত। ব্যাপারটা বললাম ওর এক বান্ধবীর কাছে, যে আমাদের এলাকাই থাকে। ও শুনে হাসল আর বলল সাকিলা সব জানে। সেদিন খুব লজ্জা পেয়েছিলাম আমি। ও দুঃখিত, মেয়েটার নাম সাকিলা। যেহেতু তখন মোবাইলের এত প্রচলন ছিলনা সেহেতু আমাদের ভেতর কথা আদান-প্রদান করে দিত তার ওই বান্ধবী। এভাবে কেটে গেল কিছুদিন, হঠাৎ দেখলাম সে একদিন স্কুলে আসতে দেরি করছে,, ভাবলাম ওতো দেরি করে স্কুলে আসেনা। ওর বাসাটা ছিল স্কুলের পাশেই, চলে গেলাম ওদের বাসার পাশে। ওখানে দেখা হল আমার এক বন্ধুর সাথে, জিজ্ঞেস করলাম শাকিলা দের বাসা কোনটা রে। যে বাসার পাশে দাড়িয়ে ছিলাম আমি জানতাম না ওটাই সাকিলাদের বাসা। সাকিলা জানালা দিয়ে বলল দাড়াও আমি আজ স্যারের সাথে সব বলে দেব। আমি খুব ভয় পেয়ে গেলাম কারন আমার আব্বুই স্কুলের হেডমাস্টার । ও যখন স্কুলে আসলো তখন তো ভয়ে আমার অবস্তা খারাপ। আমার অবস্থা দেখে ও হেসে ফেলেছিল সেদিন। কিন্তু ও কিছুই বলল না । আমাদের ব্যপারটা স্কুলে তখনও আমার বন্ধুদের ভেতরই সীমাবদ্ধ ছিল। কিন্তু জীবনের প্রথম প্রেম তাই নিজেকে আমি আর বেশিদিন কন্ট্রোল রাখতে পারলাম না, সবাইরে বলে বেড়াতাম। কেন জানি খুব আনন্দ লাগত সবাইকে বলতে। কেউ যদি ওর প্রশংসা করত, ওকে সুন্দর বলতো, তাহলে আমার খুব আনন্দ লাগত। অল্প কিছুদিনের মধ্যে জেনে গেল স্কুলের সমস্ত স্যার ম্যাডাম আর ছাত্ররা। আমার ছোট বোনও ওকে খুব পছন্দ করত, একদিন ভাবি বলেও ডেকেছিল।
অনেক ভালবাসতাম তাকে, শুধুই বাসতাম না এখনও ভালবাসি আগের মত অনেক অনেক ভালবাসি। ওকে নিয়ে কবিতা লিখতে যেয়ে আব্বুর হাতে ধরাপড়ে মার খেয়েছি একদিন। একটা মজার ব্যাপার হচ্ছে আমার সাথে ওর সরাসরি এর মধ্যে একটা কথাও বলা হয়নি। দেওয়া হয়নি ১৪ ফেব্রুয়ারিতে একটা ভালবাসার লাল গোলাপ। কখনো সামনে দাড়িয়ে চোখে চোখ রেখে বলতে পারিনি সাকিলা আমি তোমাকে আমার জীবনের চাইতেও বেশি ভালবাসি। আমার জীবনের একমাত্র স্বপ্ন এখন তোমাকে নিয়ে ঘর বাধা। তবু জানতাম ও আমাকে ভালবাসে। এভাবে ওকে ভালবেসে আমার প্রতিটা দিন সপ্নের মতই সুন্দর কাটছিল। কিন্তু ভালবাসা সবার জন্য না এই সত্যটা প্রমানিত করার জন্য বাস্তবতা আমার এতদিনের সাজানো সপ্নকে এক রাত্রেই ভেঙ্গে দিল। আমাকে করে দিল খুব একা ।
প্রতি বৃহস্পতিবারের মত কোন এক বৃহস্পতিবার স্কুল থেকে ফেরার সময় হলো মন খারাপ যে তাকে একটা দিন দেখতে পারবনা। শনিবার স্কুলে গেলে কিছু মেয়ে আমাকে শুনিয়ে শুনিয়ে বললো সাকিলা বিয়ে করলো আমাদের একটু জানালও না। আমি শুনে অস্তির হয়ে গেলাম। কি করব ভাবতে পারলাম না। পরে যখন জানতে পারলাম এটা সত্যি !!!!!!! তখন মনে হল আমি অনেক চেষ্টা করেও কথা বলতে পারছিনা। ঠিক ঐদিনই খেয়েছিলাম জীবনের প্রথম সিগারেট। তারপর এমনও সময় গেছে একটানা ৪-৫ দিন সূর্যের আলো দেখিনি। একাকী একটা ঘরে তাকে নিয়ে আমার লিখা কবিতা গুলো পড়তাম। কারও সাথে মিশতাম না, সবসময় একা থাকতাম। অবশ্য এর জন্য তার কোন দোষ নেই। ওইদিন তার ফুফুকে দেখতে এসে তাকে পছন্দ করে ফেলে বরপক্ষ। ঘটনাক্রমে তার আব্বুও রাজি হয়ে যাই। শুনেছি সে নাকি অনেক কেঁদেছিল ওইদিন, কিন্তু কেও শোনেনি তার ওই কান্না। অবশ্য প্রতিবেশীরা অনেক বুঝিয়েছিল তার আব্বুকে। কিন্তু তাতে কোন কাজ হয়নি। শুনেছিলাম ছেলেটা খুব ভাল পরিবারের এবং ভাল একটা চাকরী করে। তায়ই হয়তো সুযোগটা হাতছাড়া করেনি। তবে ও ঠিকই ভালবেসেছিল আমাকে। ওর বিয়ের তিনদিন পর আমাকে অবাক করেদিয়ে ও স্কুলে এসে আমাকে ডেকে পাঠাল একটা ক্লাস রুমে, আমি যেয়ে দেখি শুধু ও আর ওর বান্ধবী। আমরা তিনজনই চুপকরে আছি, হঠাৎ ও বলল আমি একেবারে চলেএসেছি আমাকে বিয়ে করতে পারবে??? আমি এই কথাটার কোন সঠিক উত্তর খুজে পেলাম না। নিজের অজান্তেই বলে ফেললাম না। নিজের কণ্ঠস্বর শুনে নিজেই চমকে উঠেছিলাম সেদিন।
যাকে এত ভালবাসি তাকে এভাবে ফিরিয়ে দিলাম!!!!!!!! না কথাটা বলেই মাথাটা নিচু করে নিয়েছিলাম। একদিকে আমার চোখের জল যেন না দেখতে পায়, আর তার সামনে মাথা উঁচু করার মত সাহস সেদিন আমার ছিলনা, তাই সেদিন আমার না শুনে তার মুখের অবস্থা কেমন হয়েছিলো সেটা দেখতে পারিনি। জানিনা সেদিন সে আমাকে ভুলবুঝেছিল কিনা???? তবে তাকে সেদিন না বলার কারন, তার আগে এক যাইগায় বিয়ে হওয়াটা না। তখন আমি সবেমাত্র নাইনে পড়তাম, তখন আমি যদি তার কথায় রাজি হয়ে তাকে কথা দিতাম, আর যদি সে আমার দেওয়া কথাতে বুক বেধে আমার জন্য অপেক্ষা করত, তখন ওটা আরও খারাপ হতো। হয়তো আমার ছোটবেলাই না বুঝে দেওয়া কথাটার কোন মূল্য দিতনা এই সমাজ, আমার পরিবার। তারপর সে আর ফিরে যায়না তার স্বামীর কাছে। আমাদের স্কুলেই আবার পড়ালেখা করতে থাকে। দেখতে দেখতে কেটেযাই আরও অনেকদিন। প্রচণ্ড ইচ্ছা থাকা সত্তেও লজ্জায় আর আগের মতোকরে তাকাতে পারিনি তার ওই সুন্দর মুখটির দিকে। যে মুখের দিকে তাকালে একদিন আমার হৃদয় ভরে যেত। তারপর থেকে লুকিয়ে সেই মুখের দিকে তাকালে কষ্টে হৃদয়টা বের হয়ে আসতো, অদ্ভুত হাসির বদলে লাল হয়ে যেত দুই চোখ। বিষয়টা এখানেই থেমে থাকেনি।
যেহেতু আমার আব্বু ছিল হেডমাস্টার সেহেতু আমার জন্যই তাকে স্কুলটা ছেড়ে পাশের একটা স্কুলে ভর্তি হতে হয়। তারপর থেকে আর কোন মেয়ের এমনকি কোন ছেলের সাথে আর বন্ধুত্ব করিনি। একা থাকতে পছন্দ করতাম একা একা ঘুরতাম। কারো সাথে মিশতাম না। অধিকাংশ সময় একা বিছানাই শুয়ে তারে নিয়ে লিখা কবিতা গুলো পড়তাম। আমার রুমে আর কাওকে ঢুকতে দিতাম না। মাধ্যমিক পাশ করে একটা কলেজে ভর্তি হলাম। সেখানে শিরিন নামের একটা মেয়েকে ভাললাগলো, কিন্তু ভালবাসতে ভয় পেতাম। অল্পকিছুদিনের মধ্যে মেয়েটা বুঝেগেল ব্যপারটা। হলো বন্ধুত্ত তারপর ভালবাসা। কিন্তু সাকিলার জাইগাটা অন্যকেও দখল করবে এটা মেনেনিতে পারিনি আমি। অবশ্য শিরিন আমাদের ভালবাসাটা গড়াতে গড়াতে অনেকদূর নিয়ে গিয়েছিল। কিন্তু আমি কোনদিনই তাকে সাকিলার যাইগায় বসাতে পারিনি। নিজের হাতে নষ্ট করেছি আরেকটি ভালবাসা। এখন অবশ্য নিজেকে অনেকটা কন্ট্রোল করতে শিখেছি। নতুন করে কষ্ট পাওয়ার ভয়ে আর কোনদিন কাওকে ভালবাসতে পারিনি। তবুও এখন চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে করে আমাকে ভুল বুঝে ভুলে যেওনা সাকিলা, আমি এখনও তোমাকে আগের মত ভালবাসি। পাঁচবছর পর হটৎ দুইমাস আগে দেখা হয়ে গিয়েছিল ওর সাথে, কথাও হয়েছিল কয়েকটা। বুঝলাম এখনও ভালবাসে আমায়। কিন্তু কতটা সেটা বুঝার মত ক্ষমতা আমার মত অপরাধীর নেই। নিজেকে খুব অপরাধী মনে হলো তখন।
আমি সত্যিই অপরাধী, তা নাহলে এমন একটা নিস্পাপ ভালবাসা থাকতে অন্যকোথাও সম্পর্ক করি কিভাবে। আমাকে ক্ষমা করে দিও সাকিলা। ভাল থেকো।।। আর জেনে রেখ আমি এখনও তোমাকে সেই নাইনে পড়া তাসিন এর মতই ভালবাসি।...............

ভালবাসা কারে কয়


১) -অই তুই আমার পিছ পিছ আসতেসিস ক্যান?
-আমি তোর পিছ পিছ যাইতেসিনা, তুই আমার সামনে সামনে হাঠতেসিস।
জুতাটা খুলে বাড়ি দেয়ার ভঙ্গিতে বললাম,
-যা ভাগ আরো হাজার রাস্তা আছে ওদিক দিয়া যা, আমার পিছনে আসা যাবোনা।
-অই এটা তোর বাপের রাস্তা! আমার যেদিক দিয়ে মুনচায় আমি সেদিক দিয়া যামু
-আচ্ছা!তাইলে দাঁড়ায় রইলি ক্যান আয় না দেখি আয় কত্ত সাহস হইসে তোর?
-ওহ আল্লাহ একি দজ্জালের পাল্লায় তুমি আমারে ফালায়স! অই জুতা ফালা শালী মাইনসে কি কইবো!
-কি কইবো! কইবো এক বখাইটা পোলা পিছনে লাগছিল ওইটারে সাইজ বানাইতেসে!
-অই আমি বখাইটা! তাইলে সারাদিন আমার সাথে থাকস ক্যা! তাইলে তুইও বখাইটা মাইয়া!
-আর কোনদিন যদি থাকছি তারপর কইস, যাইতে দে আমারে।
-কই যাস!? আমি কাল রাত থেকে কিছুই খাইনাই খুব খুধা লাগছে, চলনা খায়া আসি তারপর আমারে সাইজ বানাইস।
-খুধা লাগছে তো ক্যান্টিনে যাইয়া যা ইচ্ছা খা না আমার মাথা খাইতেসিস ক্যান!
-ওই জানোসনা আমি একা খাইতে পারিনা!
-তো তোরে খাওয়ায় দিমু এখন!আয় জুতার বাড়ি খায়া যা!
-খাওয়ায় দিতে কইনাই, সামনে বইসা থাকলেই হইবো আর আমি জানি তুইও খাস নাই,চলনা প্লিজ।
হাটা পথে ইউটার্ন নিতে নিতে বললাম,
-বজ্জাত পোলা
-দজ্জাল মাইয়া
-চুপ!
-তুই চুপ!
-যামুনা কিন্তু
-না না চল তুই ভাল।
দুপুরের ঠাটা পড়া রোদ মাথায় নিয়ে হাঠছি আমি আর পাশে সায়ান। আচ্ছা এই পাগলাটা কি বোঝেনা আমি ওকে কত বেশি ভালবাসি! ওকে দেখে ওর ব্যাবহারে কিচ্ছু বোঝার উপায় নেই,তাইতো মাঝে মঝে সাইজ় বানাতে হয় আর ওকে সাইজ় বানাতে গিয়ে আমিই সাইজ হয়ে যাই যেমন ওর সাথেই রাগ করি আবার ওর সাথে সাথেই যাই।
২) -হ্যালো কে নোশীন?
-নোশীনরে ফোন দিসিস তো নোশীনই ধোরবো তাইনা!
-চুপ!কই তুই ফাজিল অন্যদিন সারাদিন ফেসবুকে টাঙ্কি মারোস আর আজকে আমার দরকার অথচ তোর খোজ নাই!
-আমারে খুজতেসিস ক্যান! পাত্তা দিতাসেনা কেঊ?
-কথা কম!ফেবুতে ঢোক আমি একটা ছবি দিসি দেখতো, কুইক!
-কিসের ছবি?
-তুই আগে যা তো সব বলতেসি।
ফেবুতে লগইন করলাম অনেকগুলো মেসেজ এসছে দেখলাম,মেয়েদের আইডিতে যা হয়। সব মেসেজ উপেক্ষা করে আমি সায়ানের পাঠানো মেসেজে ঢুকলাম, একটা মেয়ের ছবি, ছেলে হলে আমি মেয়েটির প্রেমে পড়ে যেতাম তাও বিশ ত্রিশতলা ঊপর থেকে মাস্ট! হঠাতই অজানা ভয়ে আমার বুকটা কেপে উঠল।
-দেখলাম ছবি।এখন বল ঘটনা কি?
-কেমনরে মেয়েটা?
-কেমন তা তো জানিনা বাট মাইয়া অত্যন্ত সুন্দরী
-হুম আত্বায় কাপন তোলা সুন্দরী তাইনা!আমি যতবার ছবি দেখি ততবার একবার কইরা কাপুনি খাই আর জ্বর জ্বর লাগে
আমার মেজাজটা গরম হয়ে গেল এবং আমি ঘ্যাচাং স্টাইলে কথা শু্রু করলাম,
-তো প্যারাসিটামল খা! আমারে জ্বালাইতাসস ক্যান! কালকে ক্লাসটেস্ট পড়তে গেলাম
-শোননা এমুন করস ক্যান! আমার মরন থিকাও ক্লাসটেস্ট বড় নাকি!
-তুই মরতেসিস নাকি! জলদি মর প্লিজ!
-মরতেসিনা বাট এই মাইয়ারে না পাইলে মাস্ট মইরা যামু।
কথাটা শোনা মাত্রই ফেবুতে অফলাইন হয়ে গেলাম।ফোনটাও বন্ধ করে দিলাম যাতে ফোন না দিতে পারে। আমার বুকের ভেতরে ফাকাফাকা লাগা শুরু হল। রাত্রে আর কোন কাজই আমি করতে পারলামনা, পড়াশোনা, খাওয়াদাওয়া,বান্ধবীদের সাথে আড্ডা, ঘুম সব থেকেই অফলাইন হয়ে গেলাম।লাইট বন্ধ করে ঘুমাতে গিয়ে বুঝলাম চোখের পানির লাইন অনলাইন হয়ে গেছে। আমার আবার আরেক সমস্যা একটু কাদলেই চোখ ফুলে চাইনিজ হয়ে যাই, নিজেকে অনেক স্টপ স্টপ বলেও শেষ রক্ষা হলনা। সকালে ফোলা চোখ নিয়ে পরীক্ষা দিতে গেলাম।
-ওই তুই রাতে না কিছু না কইয়া অফলাইন হয়া গেলি ক্যান?
-কারেন্ট চলে গেছিল
-ফোন অফ ছিল ক্যান?
-একটুও চার্জ ছিলনা রে ফোনে
-ও আচ্ছা! শোননা আমার তো প্রেম হয়া গেল
-আচ্ছা?
-হু, মাইয়ার সাথে ম্যালাদিন ধইরা চ্যাট, ফোনে মাঝে মঝে কথা হইত কবে কবে যে প্রেমে পইড়া গেছি বুঝিই নাই।আমি তোরে না জিগায়া কোনদিন কিছু করসি! কালকে ওই ব্যাপারেই তোর সাথে কথা কইতে চাইসিলাম, তা তো তুই সুন্দরী কইয়াই ঊধাউ হয়া গেলি। তুই যাওয়ার পর প্রোপজ মারলাম, মাইয়া কিছুক্ষন গাইগুই করার পর রাজি। জানোস আমি সারারাত ঘুমাইতে পারিনাই খাইও নাই সবসময় ওই মাইয়াই মাথার ভিতর ঘুরতাসে।
স্যার ক্লাসে এলেন, প্রশ্ন দিলেন খাতাও দিলেন। প্রশ্নের উত্তরে আমি খাতা ভর্তি করে লিখলাম “সবই আমার কপাল”সবাই খাতা জমা দিল আমি দিলাম না ব্যাগে ঢুকিয়ে রাখলাম।
কোন কথা আমি পেটে রাখতে পারিনা। কিভাবে যেন সায়ানকে আমি একান্তই নিজের ভেবে নিয়েছিলাম তাই ওকে কখনোই ভালবাসার কথা মুখ ফুটে বলা হয়নি। কিন্তু আমি আর পারছিলাম না,যা বলতে চাই না বলতে পারলে কথা গুলো আমার বেচে থাকা দায় করে দেবে। তাই ডাক দিলাম সায়ানকে
-আই শোন তো এদিকে
-কিরে কেমন দিলি পরীক্ষা?
-খাতা জমা দেইনাই
-ক্যান?
-আমার ইচ্ছা। আচ্ছা শোন তুই কি মেয়েটারে সত্যিকারের ভালোবাসিস?
-সত্যিকারের মানে কি?
-মানে কখনো ওকে ছাড়বিনা তো!
-আরে না ছাড়তে যামু ক্যান?
-গুড ছাড়া যাবোনা। এখন শোন, না আচ্ছা দেখ আমার চোখ ফোলা লাগতেসে না?
-হ ফোলা ফোলাই তো লাগতেসে
-শোন কাল আমিও রাতে ঘুমাইতে পারিনাই, খাইতেও পারিনাই, সারারাত কানসি কারন ওই মাইয়া কাল থিকা আমার মাথায়াও ঘুরতাসে বাট তোর সাথে।
-তাতে কান্দার কি হইলো?
-কান্দার কারন হইল গাধা আমি তোরে ভালবাসি! এখন হা কইরা তাকায় থাকবিনা, আমি তোরে কইনাই আমারে ভালবাসতে। তুই জানোস মনে কথা জমায় রাখলে আমার অস্থির লাগে তাই তরে কইয়া এখন হালকা হইলাম।
-মানে কি!
-এক থাপ্পর দিমু!মানে আবার কি!যা প্রেম কর ওই মাইয়ার সাথে, তুই কিন্তু কইসস ওরে ছাড়বিনা।
৩) আমি বিনা কারনেই মনের মধ্যে অভিমান,রাগ পুষতে লাগলাম, এড়িয়ে চলতে লাগলাম দুজন দুজনকে। যদিও মন থেকে কখনই ওকে এড়াতে পারিনি।কথাও হত ওর সাথে তখন আমি খুব নরমাল বিহেভ করতাম যেমনটা আগে ছিল। মাঝে মাঝে সায়ানের প্রেমের কাহিনী বন্ধুরা বলত, আমি শ্বাষ বন্ধ করে শুনে যেতাম। আড়চোখে প্রতিদিন খেয়াল করতাম এলোমেলো সায়ানটা অনেকটাই গোছানো হয়ে গেছে, দেখে মাঝে মাঝে চোখ ভিজে ঊঠত তবে সায়ান কখনই তা খেয়াল করেনি, কখনই খেয়াল করেনি আমি মাঝে মাঝেই চোখ ফুলিয়ে ক্লাসে যাই কখনই খেয়াল করেনি টিপটপ নোশীনটা কতটা এলোমেলো হয়ে গেছে! আমি চাইতামও না ও খেয়াল করুক। মাঝে একদিন এসেছিল ওর গার্লফ্রেন্ড কে নিয়ে ক্যাম্পাসে নাম সাদিয়া, সেদিন চোখটা খুব জ্বালা করছিল সারাদিন পানি পড়ল চোখ দিয়ে। আমি শুধু ভাবলাম কবে কবে আমি এত হিংসুটে হয়ে গেলাম, একটা মেয়েকে সহ্য না করতে পারে আমি কেদে বুক ভাসাচ্ছি!
সেমিস্টার এক্সামের প্রস্তুতি ব্রেক চলছে এর মাঝে শুনলাম সায়ান খুব অসুস্থ রাতে এত জ্বর আসে যে তখন অজ্ঞানের মত পড়ে থাকে দিনেও যে খুব একটা ভালো তাও না। আমি সব শুনে হিসেব কষতে বসলাম, কিন্তু মন কিছুতেই হিসেবের কোন ধার ধারলোনা। হেরে গিয়ে মনকে আমি বোঝালাম একসময় ফ্রেন্ড ছিলাম তাই দেখতে যাচ্ছি, কিন্তু আমি আর আমার মন দুটোই জানে আমি কিসের টানে ছুটে যাচ্ছি।
৪) মেসে ঢুকে দেখি ও মরার মত পড়ে আছে। আগোছালো রুম, পড়ার টেবিলটাও এলোমেলো সিগারেটের ছাই পড়ে আছে, অ্যাশট্রেতে একগাদা সিগারেটের ফিল্টার। এগুলো দেখে কেন যেন আমার মন বারবার বলছিল সায়ান ভালো নেই আর সব দোষ আমার, কেন আমি সায়ানের থেকে দূরে সরে গেলাম ফ্রেন্ড হয়ে তো থাকতেই পারতাম, রাত বিরাতে ফোন করে বলতে পারতাম সিগারেট খাবিনা আমার পাশে আসলে যদি একটুও গন্ধ পাই তাহলে খবর আছে! ও আমার কথা ফেলতে পারতোনা, সিগারেট ছুয়েও দেখতোনা আর।
হালকা স্বরে ডাক দিলাম,
-সায়ান
-হুহ।
-আমি নোশীন
-হু
-খুব খারাপ লাগছে?
-উহু
-তো চোখটা খোলনা!
-পারিনা
কপালে হাত দিয়ে দেখি জ্বরে গা পুড়ে যাচ্ছে, আমার চোখ দয়ে অনবরত পানি পড়তে শুরু করল এই চোখ নিয়ে হয়েছে আরেক জ্বালা! আলনায় দেখলাম গামছাটা মুড়ে রাখা, গামছাটা কিভবে রাখতে হয় তাও জানেনা! ভিজিয়ে এনে সায়ানের কপালে রাখলাম মনে হল ওটা দিয়ে ধোয়া উঠতে শুরু করবে। কিছুক্ষন পরই চোখ মেলে তাকাল, শুকনো হাসলো একটু।
-একি অবস্থা করেছিস নিজের?
আবার একটা শুকনো হাসি ফেরত দিল।
-কথা বলিস না ক্যান! শক্তি নাই? খুধা লাগসে? খাবি কিছু?
পলক ফেলে জানান দিলো সে খাবেনা কিছুই। এরকমই করত আগেও রাতে খাওয়ার নাম নেই আমি ধামকি দিয়ে খাওয়াতাম তুই খাবিনা তো আমিও খাবোনা, আমাকে ফোনে বকতে বকতেই প্লেট নিয়ে বসে যেত। কিন্তু এবার যে ধমকে কাজ হবেনা আমি তা বুঝতে পারছিলাম। সামান্য কিছু কথা বলেই সেদিন ফিরে এলাম।
পরদিন সকালে সাথে কয়েক ফ্রেন্ডকে নিয়ে আবার হাজির হলাম, ওদের দায়িত্ব দিলাম সায়ানকে তুলে নিয়ে গোছল করানোর। গোছলের সাথে সাথেই মনে হল যেন এখন একটু তাজা তাজা লাগছে।সাথে হরলিক্স পাউরুটি নিয়ে গিয়েছিলাম সবাই মিলে জোড় করে ধরে খাওয়ালাম।
পরদিন দেখলাম বেশ কিছুটা সুস্থ তবে জ্বরটা যাচ্ছিলনা। টুকটাক ভালোই কথা বলে তখন ও। খেয়াল করলাম কিভাবে যেন তাকায় আমার দিকে কিছু একটা খোজে ওর চোখ। আমিই জিজ্ঞেস করলাম সাদিয়ার কথা,
-তোর যে এই অবস্থা সাদিয়াকে বলছিস?
-না
-আজব! জানাস নাই ক্যান? কস্ট পাবেতো পরে শুনলে! এক্ষুনি জানা!
-কস্ট পাবেনা।
আমার আর বুঝতে দেরী হলনা আমি আবার একটা ভুল সময়ে সায়ানের জীবনে চলে এসেছি। সাদিয়ার সাথে সায়ানের রিলেশন নেই অনেক আগেই ভেঙ্গে গেছে। এই মুহুর্তে সায়ানের এতটা কাছে থাকা মানে ওকে দুর্বল করে দেয়া যেটা হতে দেয়া যাবেনা, আমাকে পালাতে হবে, পালাতে হবে ওর জীবন থেকে।
৫) সম্পুর্নই এড়িয়ে চলি সায়ানের থেকে, পরীক্ষা হলে ১০মিনিট দেরীতে ঢুকি বের হই ১৫ মিনিট আগে যাতে ওর সাথে কথা না বলতে হয়। ওর দিকে তাকাইও না, একবার তাকালে আমি আর পরীক্ষা দিতে পারবোনা। সেদিন আমার সাথে সাথে ১৫ মিনিট আগেই খাতা নিয়ে উঠে দাড়ালো। হল থেকে বের হয়েই সামনে পথ আগলে দাড়াল,
-তুই আমার সাথে কথা বলিস না ক্যান?
-কই কথা বলিনা! এইযে বললাম।
-ত্যানা প্যাচাবিনা! জানিস আজ ২৩দিন তুই আমার সাথে কোন কথাই বলিস নাই।
-তাই নাকি! খেয়াল করিনাই তো!
-আমি করসি! হলে দেরী করে ঢুকস বের হস তাড়াতাড়ি যাতে আমি ধরতে না পারি, একবারও তাকাস না আমার দিকে।
-ধুর কি যে বলিস! পড়তে পড়তে দেরী হয়া যায় তাই দারীতে ঢুকি হলে,প্রশ্নে দেখি কিছুই পারিনা তাই জলদি বের হয়ে যাই। আর তুই সেই গাধা গাধাই রয়া গেলি।
-ঠিক তো?
-আরে বাবা হু ঠিক। পরীক্ষা কেমন হচ্ছে?
-ভালো না রে। তোর?
-সেম, জঘন্য পরীক্ষা দিতেসি।
-চল চা খাইতে ইচ্ছে করতেসে, কতদিন তোর সাথে বসে খাওয়া হয়না।
চা খেতে খেতে জানাল পরীক্ষাটা হয়ে গেলেই এম বি এ করার জন্য ঢাকা চলে যাবে, কথাটা বলেই তাকিয়ে রইল আমার দিকে অনেক্ষন, আমি কিছু একটা বলব হয়তো সে অপেক্ষায়। আমি ওকে নানা ভাবে ব্যাক্ষ্যা দিয়ে বোঝালাম সে ঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কিভাবে দেখতে দেখতেই চারটা বছর কেটে গেল।কিছুক্ষন চুপচাপ বসে থেকে চলে এলাম।
৬) তুই সাথে ছিলি তো সময়টা কত জলদি কেটে গেল, অথচ এখনো এক বছরও পুরোপুরি কাটেনি মনে হয় যেন আমার একজনম কেটে যাচ্ছে, তুই চলে যাবার পর থেকেই আমার ঘড়ির কাটা যেন স্থির হয়ে গেল। সায়ানের সাথে আমার কোন প্রকার যোগাযোগ নেই, তবে নীল সাদা দুনিয়াতে জানতে পারতাম ভালই আছে। ফেবু থেকে কেও কাউকে আনফ্রেন্ড করতে পারিনি, কেও কারো সাথে কথা বলারও চেস্টা করিনি। আমার অভিমান কেন যাবার আগে একটি বারও আমার সাথে দেখা করে গেলনা, হয়ত তারও অভিমান কেন আমিও গেলাম না দেখা করতে।
৭) শীতের সকালে ঘুম থেকে উঠেই ব্যাগটা গুছিয়ে শালটা গায়ে জড়িয়ে হল থেকে বের হলাম ক্লাস করতে। হলগেট পেড়িয়ে রাস্তায় পা রাখতেই দেখি সায়ান দাঁড়িয়ে আছে এই হাড় কাপানো শীতের মধ্যে পাতলা একটা শার্ট শুধু গায়ে, ওকে দেখা মাত্রই আমার নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে এল আমি পাথরের মত দাড়িয়ে রইলাম। আমাকে দেখে এগিয়ে এসে বলল, “অবশেষে বের হলি তাহলে”
আমি চমকে উঠলাম কথাটা শুনে, মাত্র দু বছর আগেও প্রতিদিন সকালে আমার একথাটা শুনতে হত।
-তুই এখানে কেন!?
-দুই বছর আগে প্রতিদিন এখানে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতাম তোর জন্যে একত্রে ক্লাসে যাব বলে। আজও অপেক্ষা করছিলাম।
-কখন এলি?
-দাঁড়িয়ে রইলি কেন! তোর ক্লাস আছে না আটটায়, চল হাঠতে হাঠতে কথা বলি।
কি কথা বলব আমি কিছুই বুঝতে পারছিলাম না, বারবার পাশে থাকা সায়ানকে দেখছিলাম। চারপাশে তখন কেমন এক নিরবতা মাঝে শুধু গাছের শুকনো পাতা মাড়িয়ে হেটে চলার শব্দ,
-কখন এলি তুই?
-কাল রাতে আসছি, রাফিদের মেসে ছিলাম।
-হঠাত কি মনে করে! ডিপার্টমেন্টের কোন কাজে?
-ডিপার্টমেন্টের কাজ হলে এখানে দাঁড়িয়ে থাকতাম না। তোর কাছে কাজ।
-আমার কাছে! কি কাজ রে?
-আছে, যা আগে ক্লাসটা করে আয়।
আমি ভাবতে ভাবতে ক্লাসে চলে এলাম আমার কাছে আবার কি কাজ! সায়ানটা অনেক পালটে গেছে, কেমন যেন গম্ভির হয়ে গেছে, আগের মত মুখে সরলতা নেই একটা রুক্ষ ভাব যেন হঠাত করে অনেক বড় হয়ে গেছে। ক্লাসে মন বসাতে পারছিলাম না অগত্যা দাঁড়িয়ে স্যারকে অসুস্থতার কথা বলে ক্লাস থেকে বেরিয়ে এলাম, হনহন করে বারান্দা পেড়িয়েই দেখলাম সায়ান সিড়িতে বসে আছে।
-কি রে চলে এলি যে?
-বাদ দে, উঠ এখন,চল।
হাটতে হাটতে মাঠটা পেড়িয়ে লেকের পাশে চলে এলাম,কুয়াশায় এখনো সব আবছা, মনে হচ্ছে যেন মেঘের ভেতরে ঢুকে গেছি। নিঃশব্দে কুয়াশায় ভিজে থাকা বেঞ্চটায় বসলাম,
-এখন বল কি মনে করে উদয় হলি?
-তুই আমার সাথে এমন কেন করলি?
-আমি কি করলাম!
-সেদিন তুই কেন আমাকে বলতে গেলি আমাকে ভালোবাসিস! তুই জানিসনা তবে আমার আর সাদিয়ার রিলেশন ভাঙ্গার জন্য তুইই দায়ী।
-আমি কথটা তোকে বলেছিলাম সাদিয়াকে না,আর কেন বলেছিলাম তাও তুই জানিস! আমি কিভাবে দায়ী হলাম সত্যি বুঝতে পারছিনা!
-কেন আমার সাথে তুই ওভাবে মিশতে গেলি, আমি সাদিয়ার মধ্যে তো্কেই কেন খুজতে লাগলাম, কেন চাইতে লাগলাম সাদিয়া ঠিক সেভাবে আমার খেয়াল রাখুক যেভাবে তুই রাখতি, আমি খেলাম কিনা, লুকিয়ে সিগারেট ধরালাম কিনা, রাত জেগে ফ্রেন্ডদের সাথে গেম খেলছি কিনা, রাতে মশারি না টানিয়েই ঘুমাচ্ছি না তো। ভুল করলে সাদিয়া তোর মত আমাকে সবার সামনে বকা দিতনা, ভাজা পোড়া খেলে কান টেনে বলত না “এগুল খেলে একদিন পেটের গ্যাস নিয়ে আকাশে উড়ে যেতে হবে”, খাবার সময় আমাকে কখনোও ডিস্টার্ব করতোনা, চায়ের কাপে পানি ঢেলে দিতনা, সারারাত জাগিয়ে তোর মত ফেবুতে যুদ্ধও করতোনা আমার সাথে,তবুও দেখনা আমি ওকে ভালবাসতেই পারলাম না! দেখ এখন একদম চোখের পানি ফেলবিনা! এ আরেক বাহানা ক্লাসে রোজ রোজ চোখ ফুলিয়ে আসতি তা দেখে আমি কিভাবে ভালো থাকতাম! আমাকে যখন এড়িয়ে চলতি বুঝতিনা আমার কতটা কস্ট হত,তুই জানতিনা তোকে ছাড়া আমি অচল? তোকে ছাড়া এককদমও আমি একা চলিনি, সেই তুই আমার পাশে ছিলিনা যখন তোকে আমার খুব প্রয়োজন ছিল। যখন আর পারছিলাম না তোকে সামনে রেখেও একা থাকতে তখনই তো পালাতে চাইলাম, আর তুইও বাধা দিলিনা আমাকে। ভেবেছিলাম তোর থেকে দূরে গেলে হয়তো এতটা তোকে অনুভব করবোনা, কিন্তু বুঝতে দেরী হলনা মানুষ কখনো তার ছায়া বাদ দিয়ে চলতে পারেনা, তুই কেন আমার ছায়া হয়ে উঠলি?কেন আমার লাইফটা তুই এমন করে দিলি?
অনবরত কেদে চলছি তখন, ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাদতে কাদতে বললাম,
-সায়ান সত্যি আমি এগুলো কিচ্ছু বুঝে শুনে করিনি, আমি একটুও বুঝতে পারিনি আমার ভালবাসার কথা শুনে তোর জীবনে এত কিছু ঘটে যাবে। আমাকে মাফ করে দে!
-মাফ করে দেব, কোন শাস্তি না দিয়েই!
-বল তুই কি করতে হবে তুই যদি বলিস তাহলে আমি সাদিয়ার কাছেও মাফ চেয়ে নেব।
-উহু এই সামান্য শাস্তি! আমার দেয়া শাস্তি তোর সারাজীবন ভোগ করতে হবে।
-হু বল কিভাবে?
-আমাকে বিয়ে করতে হবে!
-মানে কি!
-মানে সকালে যখন মটকা মাইরা বিছানায় পইড়া থাকমু তখন টাইনা আমারে তুলতে হব, সকালের নাস্তা রেডি কইরা আমারে জোড় কইরা খাওয়াইতে হব,দুপুরে খাবার বক্স নিয়া অফিসে যাবি আবার ফেরত আসবি, রাতে যে পর্যন্ত অফিস থিকা না আস্মু সে পর্যন্ত ওয়েট করবি,মাঝ রাইতে উইঠা গান গাইতে কইলে গান ধরবি, আমি সারারাত জাগায় জ্যোসনা দেখতে চাইলে আকাশে হা কইরা তাকায় থাকবি।
আমি মুখটা আরোও করুন বানিয়ে বললাম,
-এটা পসিবল না, আব্বা আম্মা আমার বিয়ে ঠিক করে ফেলসে। (ডাহা একটা মিথ্যা কথা মারলাম)
-কি!অসম্ভব আমি ছাড়া আর কারও সাথে তোর বিয়া হইতে পারবোনা!
-উহু আমার এইনগেজমেন্ট ও হয়া গেছে এখন আর কোন ঊপায় নাই। ছেলেটাও অনেক ভাল আমার সব কথায় রাজী সে।
-আমিও তোর সব কথায় রাজি,বল কি করতে হব!
-অনেক কঠিন কাজ কিন্তু!
-তুই বল শুধু
আমি সিরিয়াস ভঙ্গিতে বলা শুরু করলাম, আর সে আমার থেকেও সিরিয়াস ভঙ্গিতে শোনার প্রস্তুতি নিল,
-ধোয়া ওঠা কফির মগ নিয়ে আমার ঘুম ভাঙ্গাতে হবে, সকালের নাস্তা হিসেবে আমার একটা চুমু খেয়েই অফিসে বেরিয়ে যেতে হবে,দুপুরে অফিস কামাই দিয়ে আমার সাথে লাঞ্চে যেতে হবে, সন্ধ্যায় জলদি জলদি লাল গোলাপ নিয়ে বাসায় ফিরতে হবে, মাঝরাতে ক্যাদবেরির বায়না ধরলে সাথে সাথে তার ব্যাবস্থা করতে হবে, অলওয়েজ আমাকে বুকে জড়িয়ে নিয়ে ঘুমোতে হবে আর আমাকে অন্নেক বেশি ভালবাসতে হবে সারাজীবন। কি রাজী? ভালবাসতে পারবি সারাজীবন?
-হুম রাজী দেখিস অনেক ভালোবাসমু তোরে অনেক,সত্যি।
-প্রমিজ?
-হুম প্রমিজ
-তাইলে আই লাভ ইউ রে গাধা……
বলেই জাপটে ধরলাম আমার পাগলাকে, কুয়াশা আরোও গভীর হয়ে জড়িয়ে নিল দুজনকে। পাগলাটা তখনো আকষ্মিক হারানো তাল সামলাচ্ছে।

*অসাধারন একটি ভালবাসার গল্প*


,মেয়ে – তোমাকে বিয়ের কথা
বললেই ভয়
পাও কেন ?
ছেলে – আমি যে ভালো চাকরি করি
না।
মেয়ে – তাতে কি ?
ছেলে – তোমাকে যে দামী গাড়ি
করে
ঘুরাতে পারবো না।
যেটাতে তুমি অভ্যস্ত।
মেয়ে – রিক্সায় করে ঘুরাতে
পারবে ?
ছেলে – তাতো পারবোই।
মেয়ে – নয়তো পায়ে হেঁটেই দুজন
সারাটা শহর ঘুরবো।
ছেলে – তোমাকে যে আমি চাইনিজ
খাওয়াতে পারবো না।
মেয়ে – ফুচকা খাওয়াতে পারবে ?
ছেলে – হুমম।
মেয়ে – এতেই চলবে নয়তো ঝালমুড়িই
খাবো।
ছেলে – তোমার জন্মদিনে যে পার্টি
দিতে পারবো না।
মেয়ে – তাতে কি ? আমার কপালে চুমু
দিয়ে বলতে পারবেনা „হ্যাপি বার্থ
ডে
লক্ষী বউ“
ছেলে – আমিতো সেটাই চাই কিন্তুু
যদি
দূরে থাকি ?
মেয়ে – তোমার ছোট্ট একটা
এসএমএস’ই যথেষ্ট।
ছেলে – তোমাকে যে বিশাল
আলিশানে রাখতে পারবো না।
মেয়ে – তাতে কি ? ছোট খাট আর
ছোট ঘর
হবে ?
ছেলে – হুম।
মেয়ে – নয়তো কুঁড়ে ঘরেও চলবে।
উঁকি দিয়ে বেড়া ফাঁকে চাঁদের
আলো
দেখবো দুজন মিলে।
ছেলে – ভালো খাবারের ব্যবস্থা যে
করতে পারবো না।
মেয়ে – তাতে কি ? ডাল আর ভাত
হবে
তো ?
ছেলে – তাও যদি না হয় ?
মেয়ে – দুজন না খেয়ে থাকবো।
ছেলে – বোকা মেয়ে !
ভালোবাসার মানুষটিকে না খাইয়ে
রাখতে পারবো ? .
মেয়ে – লক্ষী সোনা আমার।
ছেলে -বিশ্বাস কর আমি সত্যিই
পারবো না।
মেয়ে – কি আমার সাথে পায়ে
হাঁটতে ?
ছেলে – না।
মেয়ে – ঝাঁলমুড়ি খাওয়াতে ?
ছেলে – না।
মেয়ে – কুঁড়ে ঘরে রাখতে ?
ছেলে – না।
মেয়ে – তবে কি ??

তোমাকে ছেড়ে একটি মুহুর্ত কাটাতে
……………
-------সত্যি কারের ভালোবাসা,
বাড়ি, গাড়ি,
টাকা, কিছুই দেখে না !!! দেখে সুন্দুর
একটা
মন যে মনে তার জন্য অসিম
ভালোবাসা
আছে !!!!!