Pages

একটি সত্যি ভালোবাসার গল্প (যা সিনেমার কাহিনীকেও হার মানায়)

সপ্না আর নিলয় ছোট বেলা থেকেই একসাথে বড় হয়। সপ্নার বাবা ট্যাক্সি চালায়, আর নিলয়ের বাবা একজন হোমিওপ্যাথি ডাক্তার। দুই ফ্যামিলির মধ্যে সম্পর্কটা মন্দ নয়।

সপ্না নিলয়কে মনে মনে ভালোবাসতো। কিন্তু কখনো বলতে পারে নি। তারা একত্রে অনার্স পাশ করে। নিলয়ের সরকারী চাকরি হয়। বাসা থেকে ধুমধাম করে বিয়ে দিয়ে দেয়। সপ্না বেচারি ঘরে বসে একা কাঁদে। কিছু করার থাকে না তার।


সপ্নার অবস্থা দেখে তার মা সপ্নাকে চেপে ধরে। জিজ্ঞেস করে সমস্যা কি। কান্নাবিজরিত গলায় সপ্না জানায় তার লুকানো প্রেমের কথা। তার একপেশে ভালোবাসার কথা।


সপ্নার পরিবারে দুঃখ নেমে আসে। সপ্নার বাবা জানতে পেরে মেয়েকে জলদি বিয়ে দেয়ার বেবস্থা করতে চান। কিন্তু সপ্নার এক কথা, তার মনের কোঠায় গভীরে সে নিলয়কেই বসিয়েছে। এখন কোনও অবস্থাতেই তার পক্ষে বিয়ে করা সম্ভব নয়। সে এমনকি এই বলে হুমকি দেয় যে বাড়াবাড়ি করলে সে আত্মহত্যা করবে। সপ্নার পরিবারের সবাই ভয় পেয়ে যায়। সাথে সাথে কষ্টও পায়। কিন্তু কিছু করার থাকে না। একমাত্র মেয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে শুধু দীর্ঘশ্বাস ফেলা ছাড়া।


বছর পাঁচেক পরের ঘটনা। সপ্না এখন ঢাকাতে একটি বেসরকারি স্কুলে শিক্ষিকা। গ্রামে ইধানিং যায় না সে। বাবা মার সাথে ফোনে কথা হয়। এক পুজার ছুটিতে ৫ দিনের জন্য গ্রামে গেলো সে। সে কি তখনো জ্যান্ত এইবারের গ্রামে ফেরা তার জীবনটা আমূল পাল্টে দিবে?


সপ্না বাসায় ফিরে দেখে বাসার সবার মাঝেই একটা কষ্ট উপলব্ধি করতে পারে। সপ্না মাকে জিজ্ঞেস করে কি হয়েছে? সপ্নার মা প্রথমে সপ্নাকে কিছুই বলে না। মেয়ের চাপাচাপিতে তিনি সব খুলে বলেন।


নিলয় গ্রামে এসেছে। তার একটা ফুটফুটে বাবু হয়েছে। বাবুটার বয়স মাত্র ২ বছর। বাবুটাকে জন্ম দিতে গিয়ে তার মা মারা যায়। নিলয় গ্রামে এসে সপ্নার মা বাবার সাথে দেখা করতে আসে। ছেলেটার মনে এক অদ্ভুত ক্ষোভ দেখতে পান তারা। এক চাপা কষ্ট।


সপ্না ঘটনা শুনে থ হয়ে যায়। জীবনটা কোনও সিনেমা নয় যে সে নিলয়ের বাচ্চাকে বড় করবে। তাকে নিজের মেয়ের মতো করে পালবে। কিন্তু সপ্নার খুব ইচ্ছে করে। আরও একবার সপ্না নিজের কাছে হেরে যায়। মুখ ফুটে বলতে পারে না তার গোপন ইচ্ছের কথা।


পুজার ছুটি শেষ। আজ বিকেলে সপ্না ঢাকায় ফিরে যাবে। ব্যাগ গুছুচ্ছে এসময় সপ্নার মা দৌড়ে এসে খবর দিলেন নিলয় এসেছে।


সপ্না চমকে যায়। সে চাচ্ছিল যেনও নিলয়ের সাথে তার দেখা না হয়। কি লাভ কষ্টের বুঝা বাড়িয়ে?


মায়ের কথায় অবশেষে নিলয়ের সাথে দেখা হয় তার। দুজনেই চুপচাপ। হটাত নিলয় বলে উঠে, “ঢাকায় থাকো শুনলাম? আমিও ঢাকায় থাকি। পরিবাগে। তুমি?”


“ধানমণ্ডিতে। আমরা ২জন ফ্রেন্ড একত্রে থাকি। ও আমার সাথে একই স্কুলে পড়ায়। আমাদের পাশের গ্রামেরই মেয়ে।”


আরও কিছু কথা বলে তারা একে অপরকে বিদায় জানায়। “ভালো থেকো” বলে ঘুরে নিজের রুমের দিকে হাঁটতে থাকে সপ্না। অজানা কষ্টে বুকটা ধুমরে মুচড়ে যাচ্ছে। নিজের মনের উপর অসম্ভব জোর খাটিয়ে ফিরে চলে সে রুমের পথে।

ঘাড় ঘুরিয়ে শেষবারের মতো ফিরে তাকায় সে। দেখল নিলর দাঁড়িয়ে আছে তার কুলে একটা ফুটফুটে বাচ্চা নিয়ে। নিলয়ের চোখটা ভেজা। দূর থেকেও দেখা যাচ্ছে অশ্রুকণাগুলো। কেন যেনও বাচ্চাটাকে দেখার পর নিজেকে আটকে রাখতে পারে না সপ্না।

নিলয় এবং সপ্নার বিয়ে হয় তাদের উভয় পরিবারের অনুমতি নিয়ে। ঢাকার পরিবাগেই এখন আছি আমরা। আমিই সেই মেয়ে। আর আমার বাবা মা আমার নাম কি রেখেছেন জানেন? “আলো”। বাবা-মার কাছ থেকে পুরো ঘটনাটি শুনি আমি তাদের ১৪তম বিবাহবার্ষিকীতে
। এরপরেই লিখে ফেলি। আর আজ জানিয়ে দিলাম পৃথিবীকে।

সবাই দোয়া করবেন আমার পরিবারের জন্য। আমি ক্লাস টেনে পড়ি এখন। আমি আমার মাকে হারিয়েছি, কিন্তু পেয়েছি তার চেয়েও একজন শ্রেষ্ঠ মমতাময়ী নারীকে। তোমাদের দুজনকেই অনেক অনেক ভালোবাসি মা-বাবা। সংগ্রহঃ রফিক স্যার ।

# তুমি ছিলে আমার #

আমি ছিলাম হিন্দু আর অরিক খ্রিস্টান ...তবু আমরা ছিলাম কলেজের সেরা জুটি ।উচ্ছলতা আর চঞ্চলতায় মেতে থাকতাম আমরা ।
প্রচন্ড ভালোবাসতো অরিক আমায় ।আর আমি তো আমিই, তাইনা ??

বাবা জেনে গেলেন আমাদের কথা ....আমার রাগী বাবা আমার বিয়ের জন্য উঠে পড়ে লাগলেন । আমি শিউরে উঠলাম ....চোখ বন্ধ করে যে মানুষটিকে দেখতে পেতাম,প্রতিটি নিঃশ্বাসে যাকে অনুভব করতাম ,তাকে হারিয়ে ফেলার ভয়ে আমার অন্তরাত্মা কেঁপে উঠল ।

আর কোন উপায় ছিল না আমার হাতে ।পরম বিশ্বাসে আমি হ

াত ধরলাম অরিকের ।
আমরা বিয়ে করলাম ।হ্যা !পালিয়ে বিয়ে করলাম আমরা ।
ছোটবেলা থেকে আমার স্বপ্ন ছিল ...লাল শাড়ি , হাত ভর্তি চুড়ি ,কপাল রাঙানো সিঁদুর ,পায়ে আলতা দিয়ে শ্বশুরবাড়ি যাবো ।
স্বপ্নকে বিসর্জন দিলাম ভালোবাসার পায়ে .....
অরিকের হাত ধরে শেষবারের মত বাসায় গেলাম । বাবা আমার গালে চড় মারলেন ।মা মুখের উপর দরজা লাগিয়ে দিলেন ....আমি আমার কাছের মানুষগুলোকে চিরদিনের জন্য হারালাম ...হলাম সমাজচ্যুত ...
আমার তীব্র একটা কষ্ট হচ্ছিল বাবার জন্য ..আমার রাগী বাবা বজ্রাহতের মত বসে আছেন ...আদরের মেয়ের কাছে এটা তিনি আশা করেন নি। জানি বাবা তুমি কষ্ট পেয়েছিলে ।
কি করতে পারতাম আমি বলো বাবা ?অরিককে যে বড্ড ভালোবাসি বাবা।
মা মুখে আঁচল চাপা দিয়ে কাঁদছিলেন ।আমার কোন উপায় ছিল না মা।অরিককে আমি ভালোবাসি।

শুরু হলো আমাদের পথচলা।আমাদের ছোট্ট সংসার।অরিকের তো কোন পিছুটান ছিল না..আর আমারও অরিক ছাড়া আর কোন আশ্রয় ছিলো না..বাবা মার স্নেহশীতল আশ্রয়..সে তো নিজেই ছেড়ে এসেছি..।

আমরা একটা ছোট্ট টোনাটুনির ঘর গড়ে তুললাম।অরিক একটা চাকরি জোগাড় করলো আর আমি বাচ্চাদের পড়াতে লাগলাম।অর্থের হয়তো অভাব ছিল..হয়তো অনেক দিনই আমরা না খেয়ে থেকেছি।তবু আমাদের ছোট্ট নীড়ে সুখের অভাব ছিল না।

দেখতে দেখতে একটা বছর পেরিয়ে গেল ..একটা বছর !দারিদ্রতাকে জয় করে ভালবাসাকে আকাশচুম্বী করার বছর।

অনেককিছু বদলে গেছে একবছরে। অরিকের প্রমোশন..আমার একটা কোম্পানিতে চাকরি..বেড়েছে আমাদের ব্যস্ততা..আমরা একজন আরেকজনকে আগের মত সময় দিতে পারিনা।
তাতে কি?আমাদের ভালোবাসা তো বদলায় নি।আমি তো বদলাই নি।

সেদিন অফিসে রূপা এসেছিল।ও আমার কলেজ ফ্রেন্ড।আসার পর একথা সেকথা বলার পর হঠাত্‍ করে বলে বসলো...কিছু মনে করিস না পুজা....একটা কথা বলবো?

আমি অবাক হয়ে তাকালাম-অনুমতি নেওয়ার কি আছে।যা ইচ্ছা বল ।
রূপা ইতস্তত করতে লাগলো । তারপর গলাটা নামিয়ে আস্তে করে বলল , অরিককে সেদিন রাস্তায় একটা মেয়ের সাথে দেখলাম । তোদের কোন রিলেটিভ ?
আমি উত্তর দিলাম, কই নাতো ।হয়তো ওর কোন কলিগ ।অফিসিয়াল কোন কাজে হয়তো ...

রূপা আর কিছু বললো না ।শুধু যাবার সময় আমার হাতটা ধরে বললো ,সাবধানে থাকিস ।যুগটা ভালো না ।

আমি হাসলাম ।বুকের কাছে খুব সূক্ষ্ম একটা কাঁটা বিঁধে রইলো ।

অরিক মাঝে মাঝে খুব খারাপ ব্যবহার করছিল আমার সাথে । ও তো এমন ছিল না । একটা বছর আমরা এক ছাদের নিচে কাটিয়েছে ....অভাবের গন্ডি পেরিয়ে এই সুখের দিনগুলোতে ওর আচরণ অসামান্জস্য লাগছিল আমার কাছে ।

দূরত্ব বাড়তে লাগলো আমাদের । দিনের পর দিন অরিকের ব্যবহার আরো খারাপ হতে লাগলো ।সেদিন ছোট্ট একটা ব্যাপার নিয়ে ও আমার গায়ে হাত তুললো ।বাবা মা তুলে গালি দিল । আমি নিস্তব্ধ হয়ে গেলাম ।এই সেই অরিক ?যাকে আমি নিজের চেয়েও বেশি ভালোবেসেছিলাম ?
তবু সব সয়ে গেলাম ।আমি তো অরিককে ভালোবাসি , তাইনা ??

এরই মাঝে টের পেলাম আমার মাঝে আরেক আমির স্বত্তা । ছোট্ট একটা নরম তুলতুলে শরীরের স্বপ্নে বিভোর হয়ে রইলাম আমি ।

অরিককে জানালাম । অরিকের নির্লিপ্ততা আমায় অবাক করলো ।
তার চেয়েও বেশি নির্বাক করলো ওর বিরক্তিসূচক উত্তর , এখন এসব ঝামেলার মানে আছে ??

সেদিন অরিকের জন্মদিন ছিল।ওকে সারপ্রাইজ দিব বলে ওকে না জানিয়ে কেকের অর্ডার দিলাম। সন্ধ্যায় কেকটা আনতে গেলাম ।শরীর যথেষ্ঠ খারাপ ।তবু গেলাম । আমার ভালবাসার মানুষটার জন্মদিনে তো আমাকেই সারপ্রাইজ দিতে হবে ,তাইনা?

কেকটা নিয়ে বের হচ্ছিলাম ।হঠাত্‍ চোখ আটকে গেল ।আমি কি ভুল দেখছি । এতো অরিক ।কিন্তু মেয়েটা কে ?একটা তীব্র আশঙ্খা আর ভয়ের শিরশিরে অনুভূতিতে শরীরটা কেঁপে উঠলো । নিজের অজান্তেই অনুসরণ করলাম ওদের ।
একটা রেস্টুরেন্টে বসলো ওরা । অরিক মেয়েটাকে খাইয়ে দিচ্ছিলো ।ঠিক যেমনভাবে একদিন আমাকে খাইয়ে দিত।
আর পারলাম না আমি । ওদের সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম আমি।অরিককে বললাম ,অরিক..যা দেখছি সেটা কি আমার বিশ্বাস করা উচিত?
অরিক কিছু বলার আগেই মেয়েটা আমায় জিঞ্জাসা করলো, কে আপনি ?
আমি বললাম ,আমি অরিকের স্ত্রী ।

সেদিন রাতে ওর সাথে আমার চরম ঝগড়া বাধলো। কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে ও আমায় ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিল।ঞ্জান হারানোর আগ মুহূর্তে মনে হলো রক্তের মাঝে যেন তলিয়ে যাচ্ছি আমি।


আমার স্বপ্নটা হারিয়ে গেল।বেঁচে রইলাম এক অসম্ভব শূণ্যতা নিয়ে ।



আবার ফিরে এলাম অরিকের সংসারে । এ কদিনে একবারো ও আমার খোঁজ নেয়নি । দুদিন কেটে গেল । একটু সুস্থ হলাম ....

আমি অরিকের জন্য রান্না করবো । নিজ হাতে রান্না করবো । ওর পছন্দের খাবার রান্না করলাম আমি ।সাথে মিশিয়ে দিলাম একটুখানি সায়ানাইড .....কেমন একটা তীব্র অনুভূতি হতে লাগলো আমার ....আমার সন্তানকে যে নিজ হাতে শেষ করেছে , আমার ভালোবাসাকে যে পায়ে পিষে চলে গিয়েছে ...আমার বিশ্বাসকে যে এভাবে শতছিন্ন করেছে ...তাকে এর চেয়ে বেশি আমি আর কি দিতে পারি !!!

শেষকথা :মানসিক ভারসাম্যহীন অবস্থায় পুজা নামের একটি মেয়েকে হাসপাতালে পাঠানো হয় । স্বামীকে বিষ প্রয়োগে হত্যা করায় এই মেয়েটিকে পুলিশ গ্রেফতার করে ।


পুজারা হারিয়ে যায় ।হারিয়ে যায় তাদের স্বপ্ন ।যে ভালোবাসার জন্য একটা মানুষ পৃথিবীতে সবচেয়ে সুখী হয় ...সে ভালোবাসাই হয়তো কাউকে নিয়ে যায় ধ্বংসের মুখোমুখি ......

হৃদয় স্পর্শে

সায়াহ্নঃ- হ্যালো.......!!!
 মৃদুলাঃ- কেমন আছেন? সায়াহ্নঃ- জি ভাল। কে বলছেন?
 মৃদুলাঃ- নাম বললে চিনবেন না। আমি আপনার কোচিং এর স্টুডেন্ট। এই মুহূর্তে আমার একজন গাইড দরকার। আমি যদি মাঝে মাঝে আপনাকে ফোন করি তবে কি খুব বিরক্ত হবেন?
 সায়াহ্নঃ- তুমি কোন ব্যাচ এর ছাত্রী? মৃদুলাঃ- জি ভাইয়া, আপনি আর আমাদের ব্যাচ এর ক্লাস নেন না।
 সায়াহ্নঃ- আর কিছু বলবে? মৃদুলাঃ- আপনি কি বাইরে? সায়াহ্নঃ- হ্যাঁ।
 মৃদুলাঃ- বাইরে তো খুব বৃষ্টি। আচ্ছা ঠিক আছে আমি রাখি।

-মৃদুলার সাথে সায়াহ্ন এর প্রথম কথা বলা। পর দিন আবার ফোন দেই মৃদুলা। আর এভাবেই শুরু হয় দুজন এর কথা বলা।

 যেদিন সায়াহ্ন মৃদুলাদের প্রথম ক্লাস নেয়, ঠিক সেদিন থেকেই মৃদুলার ভাল লাগা শুরু। ধীরে ধীরে ভাল লাগা বাড়তে থাকে। সায়াহ্ন কি মৃদুলার প্রতি দুর্বল কিনা তা বোঝার আগেই অন্য একটি মেয়ের সাথে রিলেশন এর কথা জানতে পায় মৃদুলা। সায়াহ্ন নিজেই বলে মৃদুলা কে। ধীরে ধীরে দূরে সরে যেতে থাকে মৃদুলা। ফোন দেয়া বন্ধ করে দেয়। কিন্তু কয়েক মাস পর সায়াহ্ন নিজেই আবার মৃদুলা কে ফোন দিয়ে বলে তার ব্রেক আপ হয়ে যাওয়ার কথা। আবার শুরু হয় তাদের মাঝে কথা বলা। মৃদুলার স্বভাব ছিল কথায় কথায় ওকে পচানো। সায়াহ্ন ও তার পাগলামি তে হাসত।
 গুছিয়ে নেওয়া মৃদুলা নিজের অজান্তেই ধিরে ধিরে আবার সায়াহ্ন এর মায়ায় জড়িয়ে পড়ে। মলিন হওয়া স্বপ্ন গুলা আবার নতুন রঙে সাজে। এবার আর হারাতে দিবে না সায়াহ্ন কে। প্রতি রাতেই ভাবে আজ ওর লুকিয়ে রাখা সব কথা বলে দিবে ওকে। বলে দিবে কতটা ভালবাসে। সেই বলি বলি করে না বলা কথাটা আর বলা হয়না। ইচ্ছে কোটরেই থেকে যায় অজানা এক ভয়ে।
 লুকিয়ে থাকা ভালবাসাটা হয়ত এমনি হয়। পাওয়া না পাওয়ার হিসাব গুনতে গিয়ে দুকুল এর মাঝখানে বসে থাকে হৃদয়। ফেরা হয়না ভোলা পথে আপন ঠিকানায়। ফেলা হয়া নোঙ্গর নতুন ঠিকানায়। পেয়েও না হারাই আবার অজানা একটা ভয়। উথাল পাথাল করে দেয় এই অনিশ্চয়তার ভাবনা গুলো।
 এভাবেই কেটে গেল বেশ কিছু দিন। মৃদুলা হঠাৎ একদিন ঠিক করে আজ বলে দিবে সব কথা। পাওয়া না পাওয়ার মাঝে ঝুলে থাকারচে হারিয়ে ফেলার কষ্টটা হয়ত কম। কিছু সময় পরেই সায়াহ্ন এর ফোন আসলো। বেশ হাসি খুশি লাগছে ওকে। মৃদুলা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে এক গোছা সাহস সঞ্চার করল বুকে। কিন্তু বিধাতার সেই পুরনো নিয়ম হাত ছানি দিল আবার। সবটুকু স্বপ্ন গড়া হয়ে গেলে ঘুম ভাঙ্গার সময় হয় আসে।

মৃদুলার ভালবাসায় স্বপ্নে বিভোর ঘুম ভাঙ্গাল সায়াহ্ন। তানিশা নামের এক সুন্দরীর নিবেদিত প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে ও। মৃদুলার না বলা হাজারো কথা নিমেষেই কোথায় যেন হাড়িয়ে গেল। কান্না মাখা হাসি কণ্ঠে উইশ করল সায়াহ্ন কে। এলোমেলো হয়ে গেল আবার সব কিছু। কেও দেখি নি, কেও জানেনি, কেও হয়ত জানবেও না দু চোখে অঝর বৃষ্টি নিয়ে আকাশ সমান ভালোবাসা ছোট্ট হৃদয় চাপা রয়ে গেল ঠিক যেন আধারে মিশে যাওয়া জোনাকির শেষ আলোটুকুর মত।

 এরপর সায়াহ্ন এর অতি আগ্রহ ছাড়া খুব একটা যোগাযোগ হয়না ওদের মাঝে। একদিন ফোন এ সায়াহ্ন তার ভালবাসার মানুষ টির কথা এমন ভাবে বলা শুরু করল মৃদুলার নিজের প্রতি কন্ট্রোল হারিয়ে ফেলল। কোনও কথা না বলে একনাগারে সে “ভাল ভাল” বলছিল। সায়াহ্ন জানত মৃদুলা একজন কে পছন্দ করে ৩ বছর ধরে কিন্তু সে এখনো বলতে পারে নি।
 সায়াহ্ন ওকে বলল, “মৃদুলা, তুমি আজই তাকে বলে দাও তোমার কথাগুলো। তোমার মতো মেয়ে কে কেউ ফিরিয়ে দিতে পারবে না।
 মৃদুলা কোন কথা না বলে ফোনটা কেটে দিয়ে একটা মেসেজ পাঠাল সায়াহ্ন কে-
 “যাকে আমি গত ৩ বছর ধরে আমার প্রতিটা স্বপ্নে একে রেখেছি, সে আপনি। কিন্তু আমি জানি আপনি আমাকে ফিরিয়ে দিবেন, দুর্ভাগ্য আমার। আমি ভেবেছিলাম এই ৩ বছর ধরে আপনার প্রতি আমার ভাল লাগাটা একটু হলেও ধরতে পারবেন। কি বোকা আমি তাই না।?
 ভাল থাকুন, আপনার ভালবাসার মানুষ টির সাথে। আশা করি, ঐ মেয়ে টির মতো ও আপনাকে ছেড়ে যাবে না।

“ এরপর কেটে গেছে ৩ টি মাস। কিন্তু সায়াহ্ন আর মৃদুলা কে ফোন দেয় নি। মৃদুলা হয়ত সায়াহ্ন কে এখনো ভালবাসে। আগের মতই হয়ত এখনও ভাঙ্গা গড়ার স্বপ্ন আকে। ওর আকাশেই হয়তো সকাল সন্ধ্যা সাদা গাংচিল হয়ে নীড়ের ঠিকানা খোজে আজও।


পাওয়া না পাওয়ার হিসাব ভুলে হয়ত এভাবেই খুজবে জীবন খাতায় রোয়ে যাওয়া বাকি দিন গুলতে। আর হৃদয় স্পর্শে বলবে ভালবাসি......ভালবাসি এখনো।

অসম ভালবাসা’

দেয়ালে হেলান দিয়ে একমনে রাস্তার দিকে তাকিয়ে কি যেন দেখছে একটি ছেলে।পরনে একটি ময়লা হাফপ্যান্ট, ছেড়া শার্ট, চুলগুলো উসকো খুসকো।তার
বয়স আনুমানিক ১৪-১৫ হবে। অনেকক্ষণ ধরেই এভাবে ঠায় দাড়িয়ে রয়েছে সে। তার দৃষ্টি রাস্তার উপর, কর্মব্যস্ত শত শত মানুষ রাস্তার উপর দিয়ে হেটে যাচ্ছে, শুধু সেই স্থির দাড়িয়ে আছে।
 ‘আইজ অনেক গরম পড়ছে, তাই না রে?’

মাসুদের কথা শুনে যেন সম্বিত ফিরে পেল জামাল, ঘাড় ঘুরিয়ে তার দিকে এক পলক তাকিয়ে আবার রাস্তার দিয়ে চোখ ফিরিয়ে উত্তর দিল, ‘ হ অনেক গরম।’


‘কামে যাবি না?’

 ‘নাহ, আইজ ভালা লাগতাসে না রে। তুই যা। ‘ চোখ না সরিয়েই কথাগুলো বলল জামাল।
 ‘তোর হইসে টা কি আমারে ক তো? গত এক সপ্তাহ ধইরা কামে জাস না, মাহাজন কিন্তু তোর উপর বেবাক খেপছে।

‘ হটাত কি যেন মনে পড়ল জামালের। সে তার ঝোলা থেকে একটা পুরানো রংচটা ঘড়ি বের করল। কিছুদিন আগে এক ডাস্টবিন থেকে সে কুড়িয়ে পেয়েছিল এই ঘড়িটা।পরে অনেক চেষ্টা করে মেরামত করেছিল। ১০টা বাজতে আর ৫ মিনিট বাকি।


‘ওই, কি হইল? কথা কস না কেন?’ মাসুদেরকথায় ঝাঁজ।


‘আমার একটু কাম আছে,যাই’ বলেই হাটা শুরু করল জামাল।


পিছন থেকে মাসুদ জোরে জোরে চিৎকার করে কি যেন বলছে, তা আর কানে ঢুকল না জামালের। রাস্তার উপর একটি সুদৃশ্য বাড়ি। বাড়ি না বলে প্রাসাদ বলাই ভালো। বিশাল বড় গেট। গত এক সপ্তাহ ধরে জামাল নিয়মিত এই বাড়ির সামনে এসে দাড়ায়। কয়েকবার বাড়ির সামনে দিয়ে হাঁটাহাঁটি করল।নাহ, আজকে মনেহয় বের হবে না। যখনই সে হাল ছেড়ে দিচ্ছিল ঠিক তখনি গেট খুলে গেল। সাথে সাথে হৃদস্পন্দন থেমে গেল জামালের। হ্যাঁ, এই তো সেই মেয়েটি, যাকে দেখার জন্য তার প্রতিটা সময় কাটে পরম ব্যাকুলতায়। সে গত কয়েকদিন ধরে অতি সাবধানে এই মেয়েটিকে ফলো করছে। মেয়েটিকে যতই দেখে ততই মুগ্ধ হয় জামাল। তাকে সে প্রথম দেখেছিল যখন মেয়েটি তার বাবার সাথে এসেছিল তাদের বস্তিতে, শীতবস্ত্র বিতরণের জন্য। অইদিন নিজ হাতে বস্তির সবার হাতে গরম কাপর তুলে দিয়ে যাচ্ছিল মেয়েটি। সে সময় তার চোখ মুখে যে আনন্দ খেলা করছিল তা আজও ভুলতে পারেনি জামাল। প্রথম দেখাতেই ভালো লেগে যায় মেয়েটিকে। এরপর অনেক খুঁজে খুঁজে তাদের বাড়িটা খুঁজে বের করেছে।

মাঝে মাঝে মেয়েটির সাথে কথা বলতে ইচ্ছা করে তার। পরক্ষনেই নিজেকে শাসিয়ে নেয় সে। জামালের বাবা মা নেই, অনাথ। শহরের কাছেই একটি বস্তিতে তার চাচার সাথে থাকে সে। সংসারের অভাব অনটন তাকে ভিক্ষাবৃত্তিকে পেশা হিসেবে নিতে বাধ্য করেছে। বস্তির আর ৮/১০ টা ছেলের মত সেও ভিক্ষা করে। সে জানে, যে চিন্তাভাবনা সে এই মুহূর্তে মেয়েটি কে নিয়ে করছে টা পুরাপুরি অবাস্তব এবং অসম্ভব। তাদের মধ্যে পার্থক্যটা অনেক বেশি। অনেকবার চেষ্টা করেছিল মেয়েটির চেহারা ভুলে যেতে, কিন্তু পারেনি। নিজেকে মনে মনে অসংখ্যবার মানা করেছে সে, অনেকবার পণ করেছে যে আর আসবেনা এই বাড়ির সামনে। কাজ হয়নি, নিজেকে আটকাতে পারেনি জামাল।
 মেয়েটা রাস্তার more এ অনেকক্ষণ ধরে দাড়িয়ে আছে রিক্সার জন্য। মুখে রাজ্যের বিরক্তি নিয়ে রিক্সা খুজছে মেয়েটি। মেয়েটিকে এখন আরও সুন্দর লাগছে দেখতে। আনমনে হেসে ওঠে জামাল। তার জীবনের যে কোন কিছুর বিনিময়েও সে এই মুখ বারবার দেখতে চাইবে।
 মেয়েটা ব্যাগ থেকে তার মোবাইল ফোন টা বের করল, হয়ত ফোন এসেছে। হাত পা নাড়িয়ে কাকে যেন একটানা নালিশ করেই যাচ্ছে মেয়েটি। একমনে সেই দিকে তাকিয়ে আছে জামাল। আহ, একবার যদি কথা বলতে পারত তার সাথে, মেয়েটি যদি একবার তাকাত তার দিকে!

এমন সময় জামাল খেয়াল করল, তার বিপরিত দিক থেকে মাসুদ মেয়েটির দিকে ধীরে ধীরে এগিয়ে যাচ্ছে। মাসুদের দৃষ্টি মেয়েটির উপর। চমকে উঠে জামাল। সে জানে মাসুদ কি করতে যাচ্ছে। ভিক্ষার পাশাপাশি তারা মাঝে মাঝে আশেপাশের এলাকায় ছোটখাটো চুরি, ছিনতাইও করে। মাসুদ মেয়েটির একদম কাছাকাছি চলে এসেছে। দম বন্ধ হয়ে আসতে চায় জামালের। জামাল কি করবে বুঝতে পারে না। মুহূর্তের মধ্যে মাসুদ একটা হ্যাঁচকা টান মেরে মেয়েটির মোবাইল কেড়ে নিয়ে দৌড় দেয়। জামাল চিৎকার করে মাসুদ কে ডাকে, ‘মাসুদ!’ মাসুদ জামালকে দেখতে পেয়ে তার দিকে দৌড়াতে শুরু করে।


মাসুদ এখন তার দিকেই এগিয়ে আসছে। তার পিছনে মানুষের ঢল। জামালের কাছে এসে তার হাতে মেয়েটির মোবাইল ফোনটি ধরিয়ে দেয়, ‘দৌড়া ব্যাটা, তুই ওই গলিতে ঢুইকা পড়, আমি এইটাতে ঢুকলাম।‘ এই কথা বলেই মাসুদ একটা গলিতে ধুকে হারায় গেল। সামনে তাকিয়ে দেখল জামাল। বিশাল জনসমুদ্র তার দিকে ‘চোর’ ‘চোর’ বলতে বলতে ধেয়ে আসছে। জামাল নড়ল না। স্থির দাঁড়িয়ে থাকল। সবাই এসে চোর ভেবে জামালকে এলপাতারি পেটাতে শুরু করল। অসহ্য ব্যথায় কেপে উঠলো জামালের পুরো শরীর। এক সময় তার সকল অনুভূতি ভোতা হয়ে আসলো, শুধুমাত্র দৃষ্টিশক্তি ছাড়া। তাকে সবাই আঘাত করছে, কিন্তু তার ব্যথা লাগছে না। জামাল বুঝতে পারল যে, সে মারা যাচ্ছে। এমন সময় সে দেখল ভিড় ঠেলে একজোড়া ভীত চোখ তার দিকে এগিয়ে আসছে।

 এই তো জামালের সেই ডানাকাটা পরীটা। যাক!!! একবার হলেও তো তার দিকে তাকিয়েছে মেয়েটি। জামালের স্বপ্ন পুরন হয়েছে। যদিও মেয়েটির চোখে সে অন্য কিছু দেখবে আশা করেছিল, তার পরিবর্তে সেখানে ভয় আর ঘৃণা খেলা করছিল, তবুও জামালের একটা সান্ত্বনা- সে অন্তত তার সবচেয়ে প্রিয় মুখ টা দেখতে দেখতে মরতে তো পারছে। মুখে একটা সুক্ষ হাসির রেখা নিয়েই শেষবারের মত চোখ বন্ধ করে সে।

 শেষকথা ঃ আমাদের চারপাশের জামালদের মত এমন অনেক ছেলেরই প্রেমকাহিনী অসমাপ্ত থেকে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত। অনেকের ভালবাসাই থেকে যাচ্ছে অব্যক্ত। জামালের মত গরিবদের হয়ত ভালবাসার অধিকার নেই, নেই স্বপ্ন দেখার অধিকার। এটা আমাদের সমাজ ব্যাবস্থা তাদের দিতে পারেনি। ধিক্কার এই সমাজকে!ধিক্কার!ধিক্কার!

একটি অপূর্ণ ভালবাসার গল্প

বিশেষ দ্রষ্টব্য : এই সিরিজ পোষ্টটি অনেকেই পড়বেন তা জানি। আমি সব সত্য ঘটনা এবং আসল নাম
RAFIQ SIR
ব্যবহার করেই লিখবো। হয়তো যে মেয়েকে আমি ভালবেসেছিলাম তাকে অনেকেই চিনবেন বা আনাদের কারো নিজেদের কেউ হলেও হতে পারে। তবে হ্যা আমি এখানে এমন কিছুই লিখবো না বা মিথ্যা কিচুই মেয়ার করবো না যেটা আপনাদের চোখে খারাপ লাগবে। আর যাদের সাথে হয়তো এই মেয়ের পারিবারিক সম্পর্ক আছে তারা দয়া করে আমাকে বা তাকে নিয়ে খারাপ ধারনা নিবেন না। কারন, প্রেম ভালবাসা মানুষই করে। কারও পরিচিত এর মধ্যে হয়ে কারও অপরিচিত।

বয়স চলছে ২২। ২১ টি ভালবাসা দিবস, ২১টি পহেলা বৈশাখ পার হয়ে গেছে। আরো কত কি যে পার হইছে তা না-ই বা বললাম। নিজের মনের মধ্যে এই ২২ বছরে অনেক কিছুরই পূর্নতা আসছে। কিন্তু অপূর্ণতাও আছে তার চাইতে অনেক বেশি। আসলে আমি আমার বন্ধ সার্কেলের মধ্যে অনেকটা আলাদা প্রকৃতির ছিলাম। এখন অবশ্যই নিজের মাঝে অনেক পরিবর্তন আনতে বাধ্য হইছে সময়ের প্রয়োজনেই। আলাদা প্রকৃতির হবার কারনে অনেকের অনেক কটু কথাও হজম করতে হয়েছে। বন্ধুরা একের পর এক প্রেম করে আর ছ্যাকা দেয়/খায় । আমি মোটামুটি মজাই নিতাম ওদের সেইসব কার্যকলাপ থেকে। কিন্তু প্রকাশ করতাম না যে, আমি যে ভরা যৌবন উতলায় পড়তেছে। আমারো যে, দরকার প্রেম-ভালবাসা করার দরকার। কিন্তু, আমি মেয়েদের প্রতি একদমই ইন্টারেষ্টেড ছিলাম না। এমনটা কেন ছিলাম জানি না।

তবে হ্যা, আমার একটি ভ্রমন পিপাসু মন আছে। যেকোন জায়গায় দূরে হোক আর কাছে আমার যাওয়া চাই। প্রতি বছরের ন্যায় গত বছর(২০১০) এর বন্ধুরা মিলে ঠিক করলাম সিলেট ট্যুর এর। যেই কথা সেই কাজ। রওনা দিলাম সবাই মিলে, নানান ঝড় ঝাপটা উপেক্ষা করে শেষে পৌছাইলাম সিলেট এ। ৫ দিনের সফর অনেক আনন্দের সাখে শেষ করে ফিরলাম রংপুর(আমার বাড়ি)। পুরো একদিন বিশ্রাম নেয়ার পর যথারীতি আমার কার্যক্রম শুরু করলাম। পিসিতে বসলাম, ফেইসবুক অন করে সবার সাথে অনেক মজা করলাম, ট্যুরের অনেক ছবি আপলোড করলাম। এভাবেই কেটে যাচ্ছিল আমার স্বাভাবিক জীবনযাপন। তবে কে জানতো যে, এরই মাঝে আমার না চাওয়া ভালবাসা আমার সাথে দেখা করবে অপ্রত্যাশিত ভাবে ….
শুরু যেখানে ..
আমি কতটা ইন্টারনেট এবং ফেইসবুক আসক্ত তা লিখে বুঝাতে পারবো না। প্রতি দিনের মত ঠিক সেদিনও(তারিখ মানে নাই) ফেইসবুক ওপেন রেখে কাজ করচিলাম। সময়টা মে বি বিকেল ৪.৩০ মিনিট হবে। হঠাত একটি মেয়ে আমাকে ফেইসবুকে নক করে। যদিও আমি ফেসবুকে আগে থেকেই মেয়েদের সাথে তেমন একটা ইন্টারেক্ট করতাম না। স্বাভাবিকভাবে এই মেয়েকেও ইন্টারেক্ট করি নাই। কিন্তু সেই মেয়ে আমার সাখে অনবরত কথা বলতেছিল। বাধ্য হয়ে আমি কাজ অফ করে বলতেছিলাম। কথা বার্তার এক পর্যায়ে জানতে পারলাম সে আমার শহরের্ই(রংপুর) মেয়ে। এবং আমারে থেকে কিছু দূরেই থাকে। কিন্তু কোথায় থাকে তা জানতে চাইলে বলে নাই। আসলে মেয়েরা স্বভাবতই এমন। কিছু বলতে চায় না সহজে। যাকগে, এভাবে প্রায় প্রতিদিনই কথা হত। এমন মোটামুটি একটা ভাল সম্পর্ক তৈরী হল।
কিছু দিন পর জানতে পারলাম ঐ মেয়ে আমার বেষ্ট ফ্রেন্ড এর ভাগনি হয়। বলে রাখা ভাল আমার বেষ্ট ফ্রেন্ড আমার চাইতে বয়সে অনেক সিনিয়র মেয়ে এবং তিনি ঢাকায় থাকেন, তার সম্পর্কে বিস্তারিত বলাটা এখানে সম্ভব না। তাতে কি, বন্ধুত্ব তো বয়স বা ছেলে-মেয়ে মানে না। আমার এই বেষ্ট ফ্রেন্ড এমন একজন মানুষ যে কি না আমার লাইফের অনেক গুরুপ্তপূর্ণ একটি মানুষ। এভাবে আরো অনেক কিছুই জানলাম সেই মেয়ের ব্যাপারে, যেমন: কি করে, ফ্যামিলিতে কে কে আছে ইত্যাদি। রীতিমত কথা হত আমাদের। ও আমাকে আপনি বলে সম্বোধন করতো আমি তুমি করে। সময় গড়ানোর সাথে সাথে ওর সাথে আমার ভালই বন্ধুত্ব হয়েছিল। আমি কখনও ভাবতে পারি নাই যে, দ্বিতীয় কোন মেয়ের সাথে আমার এতটা ভাল বন্ধুত্ব হবে।
আরো সময় গড়ানোর সাথে সাথে আমার মনে কেমন যেন একটা অস্বাভাবিকত্ব কাজ করতে শুরু করলো। ওর সাথে কথা না বলতে পারলে আমার রাতের ঘুমটাও হারাম হয়ে যেত। আসলে তখনও বুঝতে পারি নাই যে, আমি ওকে ভালবেসে ফেলছি। কি করবো বুঝতে পারতাম না। শুধু ওকে নিয়েই ভাবতাম সারাক্ষন। আসলেই যে এসব ভালবাসার সিমটম তা বুঝলাম কযেক মাস পড়েই। একের পর এক প্রতিদিন আমাদের কথা হত ফেসবুকে, ইয়াহু মেসেন্জারে। বেশির ভাগ দিন গেছে রাত ২টা-৩টা পর্যন্ত চ্যাটিং করছি। আসলে শুধু যে ওর সাখেই কথা বলতাম তা নয়। ওর রংপুরস্থ খালা যে কি না ওদের সাথেই থাকতো উনার সাথেও কথা হত।
এভাবে প্রায় তিন-চার মাস পার হল। কোন কিছুই যে আর আমার ভাল লাগতেছিল না। ওর সাথে এর আগে দেখাও হয় নাই। দেখা হবার ঘটনাতো আরো পরে আসছে। ভাবতে লাগলাম ওর সাথে দেখা করলে কেমন হয়। কিন্ত না পরে ডিসিশন পরিবর্তন করলাম। এভাবে দেখা করা আমাদের জন্যও খারাপ হতে পারে। তাই চুপ মেরে গেলাম। শুধু ভেবেই চলছি ওর কথা।
হঠাত একদিন, ওর ফেইসবুক প্রোফাইল এর ছবি পরিবর্তন দেখলাম। ব্যাপারটি প্রথমে এতটা গভীরভাবে দেখি নাই প্রথমে। কিন্তু ২/১ দিন পরেই বুঝতে পারলাম আমার কাম ফিনিস করছে এই ছবি। এইবার বুঝতে পারলাম তবে হ্যা, প্রেম আমাকে পেয়ে বসেছে ভাল ভাবেই। ওর সেই ছবির চাহনি দেখলে যে কেউ !! আমি না হয়েও পাড়লাম না। তখন আসলেই এই কথাটির স্বার্থকতা বুঝলাম যে, “নারীরা আসলেই অনেক মায়াবী হয়”।

কখনই ভালোবাসনি……

426564_428042170558778_100000589972775_1376885_270656093_n
আজ ফাগুনের প্রথম দিন। ৩১ দিন পর নিরার কাছ যাচ্ছি। তাই খুব ভালো লাগছে। গত কয়েকটা দিন খুব বাস্ত্য ছিলাম। নতুন চাকুরি নতুন আবাসস্থল সব সামলাতে গিয়ে বেশ বেগ পেতে হয়েছে। তারপর ঢাকার বায়তুল মোকারম মার্কেট থেকে অনেক ঘুরে কিনলাম হিরার আংটি। লতার মত সরু পেচানো রিংয়ের উপর হিরার পাথর। আমার খুবেই পছন্দ হয়েছে আশা করছি ওর ও খুব পছন্দ হবে।
নিরা আমার বাল্য বন্ধু। আর এখন সে আমার ভালোবাসার মানুষ, আর ভবিৎষতে ও হবে আমার মায়াবী লক্ষি বউ।
নিরার পরিবার বেশ ধনী। ওর কোন ভাই নেই ওরা দুই বোন। তাই ওর বাবার ইচ্ছে নিরার বর কে ঘর জামাই করবেন। নিরার ও তেমনী স্বপ্ন। ও আমাকে সে ইচ্ছের কথা বলেছে আমি অবশ্য সেই কথা হেসে উড়িয়ে দিয়েছি। বলেছি ওসব আমাকে দিয়ে হবেনা। বাবুই আর চড়–ই পাখির কবিতাটা শুনিয়ে দিয়েছি প্রতিবার। নিরা রেগে গিয়ে বলেছে তুমি জানো আমার জন্য হাসান জীবন দিতে পারে, আর রকিব তো ঘড় জামাই হবার জন্য একপায়ে দাড়ানো!
আমি ওর ছেলেমানুষী কথা শুনে হেসেছি কেবল। তারপর বলি – নিরা স্বাধীনতা এত মামুলি কোন ব্যপার নয়। পৃথিবীর সব কিছু বির্সজন দেওয়া যায় কিন্তুু স্বাধীনতা নয়। অন্যর ঘড়ে অতিথি হয়ে থাকার মত মন মানুসিকতা আমার নেই।
ও রাগ করে চলে যায়। ফোন দিলে ধরতে চায়না। তারপর কয়েকদিন পর আবার সব কিছু ঠিক হয়ে যায়। ভালোবাসা আসলে এমনী।
এর মধ্যে হুট করেই আমার একটি এনজিও তে চাকুরি হয়ে গেল। কর্মস্থল মাদারীপুর শহরে। ঢাকা ছেড়ে কখনো এতো দুরে আমি থাকিনি তাই কিছুটা দ্বিধা ছিল কিন্ত পদ পদবী এবং ভালো বেতন থাকায় আমি সিদ্ধান্ত নিলাম যে চাকুরি টা করবো। সব শুনে নিরা বললো তুমি একা একটা মানুষ তোমার কি এমন হলো যে তোমাকে একটা চাকুরির জন্য ঢাকা ছেড়ে যেতে হবে? কিন্তু ও কোন উৎসাহই দেখালো না।
আমি ব্যথিত স্বরে বললাম, নিরা আমি ছোট বেলায় বাবা মাকে হারিয়েছি খালার বাসায় থেকে অনেক কষ্টে লেখাপড়া করেছি। আমি বলবো না তারা আমাকে কষ্ট দিয়েছে, ওখানে থাকতে গিয়েই বুঝেছি অন্যর সংসারে অনাহূত হওয়াটা একজন মানুষের জন্য কতটা গ্লানিকর। পরাধীনতার শৃঙ্খলে বাধা জীবনের কত যন্তনার! ডানা ভাংগা পাখির মত ছটফট করে কত রাত যে আমি পাড় করেছি তার শেষ নেই। জানি এসব ঠিক তুমি বুঝবেনা। কিন্তু আমি জানি স্বাধীনতার সুখ কত মধুর! আমি চাই স্বাধীনতা; তুমি আমাকে ভুল বুঝনা।আমি তোমাকে অনেক বেশি ভালোবাসি।
নিরা কোন কথা না বলে আমার দিকে তাকিয়ে থাকে।
নিরবতা ভেংগে আমি বলি আগামীকাল আমি মাদারীপুর যাচ্ছি আসবো মাস খানেক পরে, প্লিজ আমাকে তুমি ভুল বুঝনা। আসছে ফাগুনের প্রথম দিন আমি তোমার কাছে আসবো। ওর অভিমানী চোখে জ্বল নামে।
নতুন কর্মস্থলে এসে প্রচন্ড ব্যস্ত হয়ে পড়ি। তবে সুযোগ পেলেই ওরে ফোন দেই। তবে সর্বশেষ দশ বারো দিন যাবত ওর ফোন সেট বন্ধ পাচ্ছি। ও এমনি কারনে অকারনে রাগ করে মোবাইল ফোন বন্ধ রাখে। তাই ভাবছি ওরে আজ সারপ্রাইজ দিব।
কলিং বেল বাজানোর পর কাজের মেয়েটা দরজা খুলে দিলো। বললাম নিরাকে বল আমি এসেছি। ডোয়িং রুমে নিরা আমার সামনের সোফায় বসলো। তার চোখে প্রত্যাশিত উচ্ছাসের বদলে দেখি শিতলতা। হেসে বলি কেমন আছো?
-ভালো। দায়সারা উত্তর দেয় ও। আমি রাগ ভাঙ্গানোর উদ্দেশ্যে পকেটে হাত দেই, আংটি বের করার জন্য। এমন সময় একজন পুরুষ এসে দাড়ায় ওর পাশে। নিরা পরিচয় করিয়ে দেয় বলে ও হচ্ছে শফিক। আমাদের বিয়ে হয়েছে পাচ দিন হলো। ও আমাদের বাসায় থাকবে। শফিক সাহেব হাত বাড়িয়ে দেয়।
আমি অবাক হয়ে ওর চোখের দিকে তাকিয়ে থাকি। নিরার চোখে কোন অপরাধবোধ নেই, কোন অনুশোচনা নেই। ওর চেহারাটা স্বৈরশাসকদের মত মনে হয়।
গেট পেড়িয়ে বের হয়ে ভাবি নিরা হয়ত আমাকে কখনোই ভালোবাসেনি, ও চেয়েছিল কেবল আমার স্বাধীনতা হরন করতে। স্বাধীনতা হারানোর চেয়ে প্রেমিকা হারানো নিশ্চয় গৌরবের!RAFIQ SIR

ভালোবাসা আর প্রতারনার গল্প ….

581997_320516618035206_634205197_n
কখনো ভাবতে পারিনী আবার আমাদের দেখা হয়ে যাবে। শেষবার যখন তার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে ছিলাম, তখন কথা দিয়েছিলাম আর কখনো তার সামনে গিয়ে দাড়াবো না।
তারপর দশবছর কেটে গেছে। সময়ও বদলে গেছে অনেক। আমিও বদলে গিয়েছি। আজ হঠাৎ করেই আবার দেখা হয়ে গেল দুজনার। অফিস ছুটির পর ফুটপাত ধরে হাটতে ছিলাম। হঠাৎ করেই এক নারী আমার সামনে এসে দাড়িয়ে বলে
– তুমি! কোথায় যাচ্ছ?
আমি তার দিকে তাকিয়ে খুব অবাক হই। সোফিয়ার শ্যামলা মুখে মিষ্টি হাসির রেখা। বয়স ওর যৌবনে ছাপ ফেলতে পারেনি। তেমনি রয়ে গেছে যেমনটা দেখেছিলাম দশ বছর আগে। চোখে দুষ্টামীর হাসি। দ্রুত চোখ ফিরিয়ে নিই। আমার বুকের ভেতর যে লুকায়িত অশ্রুর সমুদ্র আছে, সেখানে প্রলয় উঠল যেন। মনে হল চারপাশের ব্যস্ত নগরের সকল কোলাহল থেমে গিয়েছে। নিশ্চুব দাড়িয়ে রইলাম। সোফিয়া খানিকটা ঝুকে এসে বললো কি হল আমাকে তুমি চিনতে পারো নাই?
ফ্যাকাসে হেসে বললাম ঃ চিনবো না কেন? তুমি ভাল আছ?
সে ম্লান হেসে দীর্ঘশ্বাস চেপে বললো, হ্যা ভাল আছি।
সোফিয়াকে আমি অনেক ভালবেসে ছিলাম। যতটা ভাল পৃথিবীর কেউ কোনদিন বাসেনি। আমার শরীরের প্রতিটি রক্ত কনিকায় ও মিশে গিয়েছিল। আমার সমস্ত হৃদয় জুড়ে ছিল কেবল সোফিয়া আর সোফিয়া। আকাশেও তত তারা নেই যতবার তাকে আমি ভালবাসি বলেছি। অথচ ও একদিন বিনা নোটিশেই আমার জীবন থেকে সরে গেল। কি অভিযোগ ছিল ওরে হাজার বার জিজ্ঞাসা করেও তার উত্তর পাইনি। বুঝতে পারিনি কি ভুল ছিল আমার।
ওর এমন রহস্যময়ী আচরন আমার সাজানো পৃথিবীটাকে নরক বানিয়ে ফেলে ছিল। নিষেদ সত্বেও ওর জন্য রাস্তায় দাড়িয়ে থাকতাম। বেহায়ার মত ওদের বাড়িতে অকারন গিয়ে উপস্থিত হতাম। ও আমার দিকে ফিরেও তাকাতো না। চারপাশের সব মানুষ আর প্রকৃতি তেমনি ছিল। শুধু ও একাই বদলে গিয়েছিল। অপমানের যন্ত্রনায় নীল হয়ে গিয়ে ছিলাম। ঋতুর পরিবর্তনে পুরানো পাতারা যেমন করে গাছ হতে ঝরে পড়ে তেমনি করে আমি ওর জীবন থেকে নিঃশব্দে ঝরে পড়েছিলাম।
সোফিয়ার হাসির শব্দে চমকে উঠি। ও বলে তুমিতো এখনও তেমনি আছ, ভাবুক। কবিতা- টবিতা লিখো নিশ্চয়?
আমি উত্তর না দিয়ে ম্লান হাসি। আমার খুব অভিমান হয়। ইচ্ছে হয় দৌড়ে চলে যাই। ওর সাথে কথা বলতে ভারি ক্লান্তি লাগে। ১০ বছর ধরে অভিমানের যে পাহাড় বুকের ভেতর লুকিয়ে রেখেছি তা আজ আর প্রকাশ করার ইচ্ছে আমার নেই।
প্রকৃতি সব সময় শূন্যস্থান পুরন করে নেয় বলে শুনেছি। কিন্তু ওর বিরহে আমার মনের ভেতর যে গভির ক্ষতের সৃষ্টি হয়েছে তা তেমনি রয়ে গেছে। শুনে ছিলাম নারীরা নাকি মায়াবতী হয়। কিন্তু কি আশ্চর্য ও যখন হটাৎ করেই বলে দিল অনেক হয়েছে আর নয়। তখন ওর মুখের দিকে তাকিয়ে মনে হয়েছিল ও যেন শক্ত পাথরের প্রতিকৃতি। আমি বোধহয় তখন পাগল হয়ে গিয়ে ছিলাম। বারবার মনে হত বেচে থেকে কি লাভ? আমি পারিনি, কিছুই করতে পারিনি। শূন্য পকেট। ধুসর বাস্তবতা আর হতাশার কুয়াসায় ঢেকে গিয়ে ছিল আমার পৃথিবী।
সোফিয়া হটাৎ করেই আমার হাত ধরে । যেন আমাদের মাঝে কোন দেয়াল নেই। যেন কিছুই হয়নি। কিন্তু ওর হাতের ছোয়া আগের মত আমাকে আর পুলকিত করলো না। সাপের মত শিতল মনে হল। ও বলে, কি করছো? ব্যবসা নাকি জব?
– চাকুরী করছি। ঐযে নীল ভবনটা দেখছো ওর ছয় তলায় আমার অফিস।
ও আমার হাত অনুসরন করে তাকায়। ‘তুমি ঢাকায় কী করছো?’ পাল্টা প্রশ্ন করি। ও অন্যমনস্ক হয়ে যায়। হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে কপালের ঘাম মুছে। দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছাড়ে। হতাশা আড়ালের বৃর্থা চেষ্টা করে। মৃদ্য হেসে বলে, গৃহবধু ছিলাম তিন বছর। তারপর সেপারেশন হয়ে গেল। বড় আপার উৎসাহে চাকুরি করছি। এনজিও কোম্পানি। বদলীর চাকুরী। সারা দেশ ঘুরেছি। এখন মাস দুই হল ঢাকায় আছি।
সোফিয়ার মুখে ক্লান্তি আর বিষণœতার ছায়া দেখি।
– চল সামনের রেষ্টুরেন্টে বসি।
ও মাথা দুলিয়ে বলে চল।
কি খাবে? প্রশ্ন করি। ও হেসে বলে, তোমার যা খেতে ভাল লাগে তার অর্ডার দাও। ওর কথা শুনে বলি, এই প্রথম আমার যা পছন্দ তাতে তুমি সম্মতি দিলে।
কেন অর্যথা লজ্জা দিচ্ছ?
সরি‌্য। থাকছো কোথায়?
ফার্মগেট কর্মজীবী মহিলা হোস্টেলে।
হটাৎ করেই আমার মোবাইলে রিং বেজে উঠে। বন্ধু আনিস আর আমি একই ফ্লাটে থাকি। ও বলে, কি হল আমিতো নিউ মার্কেটে দাড়িয়ে আছি। তুমি কোথায়?
কেন বলতো?
তোমাকে না বললাম আজ একটা প্যান্ট কিনবো। ভুলে গিয়াছো নাকি?
ঠিক আছে ত্রিশ মিনিট অপেক্ষা কর আমি আসছি।
ফোন রেখে ওর দিকে তাকাতেই সোফিয়া প্রশ্ন করে, কে ফোন দিল তোমার বউ নিশ্চয়।
Ñ আরে না আমিতো বিয়েই করিনি!
শুনে ও খুব অবাক হয় যেন। বলে, কেন বিয়ে করনি। বয়স তো কম হয়নি।
আমি অন্যদিকে তাকাই এসব নিয়ে ওর সাথে কথা বলতে আমার ভাললাগেনা। অস্বস্থি হয়। ও নাছোড় বান্দা সেজে নানান প্রশ্ন করে যায়। শেষে এক সময় বলি, সোফিয়া আমি কখনো কারো শরীর পেতে চাইনি, মন পেতে চেয়ে ছিলাম। পাইনি। আমার জীবনে যে মরুভুমি তুমি সৃষ্টি করেছো তার থেকে সবুজ ভুমি সৃষ্টি আর সম্ভব নয়। তাই আমি কাউকে ঠকাতে চাইনি।
নিশ্চুব প্রহর কেটে যায়।
সোফিয়া চোখের জ্বল মুছে। তার লালচোখে দেখি অপরাধবোধ। আমার ইচ্ছে হয় জিজ্ঞাসা করি, কেন সে আমার সাথে ওমন করে ছিল। কি দোষ ছিল আমার? কিন্তু শেষ পযন্ত নিজেকে সংযত করি। আর নিচে নামতে ইচ্ছে করে না। রেষ্টুরেন্ট হতে বাইরে দাড়াই।
ও বলে, তোমার খুব তাড়া আছে তাই না?
কেন?
তুমি আমার সাথে একটু হাটবে। বেশি না আমার হোষ্টেল পযন্ত।
সরি‌্য, এখন আমার হাতে সময় নেই। বন্ধু আনিস আমার জন্য অপেক্ষা করছে।
ওর আহত হওয়া দেখেও আমার খারাপ লাগে না। দু’জন দুই দিকে চলে যাই।
২.
আনিস কে ফোন দিয়ে বললাম, কিছু মনে করনা শরীরটা বড় বেশি ক্লান্ত লাগছে। আমি বাসায় ফিরছি।
বাসায় ফিরে খুব নিঃসঙ্গ লাগলো। ঘরের বাতি জ্বালাতে ইচ্ছে করলো না। বারান্দার চেয়ারে বসে রইলাম। রাস্তায় গাড়ি চলছে দ্রুত। হর্নের শব্দ। রিকসার টুংটাং শব্দ। কিছুই ভাল লাগছে না আজ। পাশের তিনতলা ভবনের এর ছাদে গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান চলছে। উচ্চশব্দে গান বাজিয়ে নেচে চলছে উচ্ছল তরুণ তরুণীরা। যৌবনের উচ্ছাস দেখেও ভাল লাগছে না। এত কোলাহলের ভেতরও নির্জীব পড়ে রইলাম চেয়ারে। কোন কিছুই আজ স্পর্শ করছেনা আমাকে।
সোফিয়া কি এখনও আমায় ভালবাসে? সে কি সত্যি আমাকে কোনদিন ভালবেসে ছিল, নাকি সবি ছিল তার খেলা! নারী হৃদয় বড়বেশি বৈচিত্রময়। নারীদের মুখের কথার সাথে তাদের মনের কথার কোন মিল নেই।
হটাৎ করেই ঝড়ো হাওয়া বইতে শুরু করলো। তির্ব বাতাসের শো-শো শব্দে চারদিক অন্ধকার হয়ে গেল। ছাদের উপরের গান বাজনা বন্ধ হয়ে গেল। বাতাসে প্যান্ডেলের কাপড় গুলি উড়ছে। বৃষ্টির ফোটা পড়তে শুরু করলো। সব শব্দ পেড়িয়ে এখন শুধু রিমঝিম বৃষ্টির শব্দ।
সোফিয়া অংক খুব ভাল বুঝতো। আমাদের ক্লাসে ও ছিল ফাষ্ট র্গাল। আমি তেমন ভাল ছাত্র ছিলাম না। তাই ওর সাহায্য সহযোগীতার প্রয়োজন হত। ও আমার প্রতিবেশি হবার সুবাদে ওদের বাড়িতে আমার অবাধ বিচরন ছিল। ওরা অনেক ধনী পরিবার ছিল কিন্তু আমাদের দু’পরিবারের মধ্যেই ভাল সর্ম্পক ছিল। ওর মা আমাকে খুব ভাল জানতো। সন্ধার পর মাঝে-মধ্যে ওদের বাড়িতে চলে যেতাম। পড়তাম গল্প করতাম। রাতে একসাথে খেয়ে রাত ১০টার দিকে বাড়িতে ফিরতাম। গ্রামে রাত দশটা অনেক রাত মনে হত। ঝিঝি পোকার ঝিঝি শব্দের ডাক। কখনো বা বাদুরের পাখা ঝাপটিয়ে হুট-হাট উড়ে যাওয়া। ডাহুকের ডাকে চমকে উঠা! একপাল শেয়ালের একসাথে কেঁদে উঠা। সব কিছু যেন স্মৃতির পাতায় ভেসে উঠছে আজ। ধীরে ধীরে বড় হচ্ছিলাম দু’জন। খেয়াল করলাম ওর হাত ধরে থাকতে ভাললাগে। ওর মুখের দিক তাকালে বুকের ভেতর কেমন যেন করে। সারাক্ষণ ওরে ভাবতে ভাল লাগে। তখনও বুঝতে পারিনি যে আমি ওর প্রেমে পড়েছি।
তারপর স্কুল জীবন শেষ করে কলেজে উঠলাম।
সেদিনটা আমি কখনই ভুলতে পারবো না। ১১টার মত বাজে। আমাদের বরহামগঞ্জ কলেজের সামনে যে সারি-সারি দেবদারু গাছ ছিল, সেখান থেকে ও আমাকে ধরে নিয়ে গেল মাঠের শেষ কোণায়। ওর হাত পা কাপঁতে ছিল। কথা বলছিল হাপিয়ে হাপিয়ে। আমি অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করলাম কি হয়েছে? ও বললো, আচ্ছা ফয়সাল তুই কি কখনো রাতে আমাকে স্বপ্ন দেখিস? আমি মাথা দুলিয়ে বললাম হ্যা দেখি, তো?
– তোর কি সব সময় আমাকে দেখতে ইচ্ছে করে?
হ্যা। তুই এবার যখন তোর মামাবাড়ি গিয়ে পনেরো দিন থাকলি তখন আমি শুধু রাস্তার দিকে তাকিয়ে থাকতাম। ও তখন স্বস্তির হাসি হাসলো। আমি কিছুটা বিব্রত হয়ে হয়ে ওর দিকে তাকিয়ে রইলাম। ও আমার হাত ধরে বললো, বোকা আমরা দু’জন প্রেমে পড়েছি!
আমি বিস্মিত হয়ে বললাম, সর্বনাশ! মা জানলে খবর আছে।
ড্যামকেয়ার ভাবে ও বললো, বাচ্চাদের মত কথা বলবি না। আমি তোর প্রেমিকা। মনে থাকে যেন।
তারপর নিলর্জ্জের মত বললো, আই লাভ ইউ মাই ডিয়ার ফয়সাল!
জীবনের সেই দুরন্ত প্রথম প্রেম আজ বাদল দিনে রঙ্গিন পর্দার মত চাখের সামনে ভেসে উঠলো।
হটাৎ করে মোবাইলে রিংটোন বেজে উঠায় এক ঝটকায় বাস্তবে ফিরে এলাম। বৃষ্টি এখনও নামছে অঝর ধারায়। ডিসপ্লেতে অচেনা নাম্বার। ধরতে ইচ্ছে হলনা। রুমে এসে বাতি অন করলাম। ফ্যান অফ করলাম শীত শীত লাগছে। টিভি চালিয়ে দেখি ডিস সংযোগ নেই। ঝড়ে ক্যাবল কানেকশন ছিড়ে গিয়েছে হয়ত। কি করবো? ভাল লাগছে না। আবার একই নাম্বার থেকে কল এল। রিসিভ করতেই সোফিয়ার কন্ঠ। কি করছো?
– কিছুনা। বসে আছি।
– তাহলে ফোন ধরলেনা কেন?
– খেয়াল করিনি।
– তোমাদের ওখানে খুব বৃষ্টি হচ্ছে না?
– হুম, মুষলধারে বৃষ্টিপাত হচ্ছে।
– কি ভাবছো?
সোফিয়া নিরর্থক হেসে উঠে। দুরে কোথাও বাজ পড়ার শব্দ হয়। আজ সারা রাত ধরে হয়ত এই বর্ষণ চলতে থাকবে। নামুক বৃষ্টি, ভাসিয়ে দিক শুকনো বুকের শহরটাকে। পবিত্র পানির র্স্পশে পবিত্র হোক সব। ও প্রান্ত থেকে সোফিয়া অধের্য্য হয়ে বলে, কি হলো তুমি কথা বলছো না কেন?
এখন আর কথা বলতে ইচ্ছে করছে না। তোমাকে পরে আমি ফোন দিচ্ছি।
ও দীর্ঘ নি:শ্বাস ছাড়ে। তারপর হতাশা ভরা কন্ঠে বলে, তুমি কিন্তু একবারও জানতে চাইলে না কেন সেদিন তোমাকে আমি আমার জীবন থেকে সরে যেতে বলে ছিলাম। আসলে সব কিছু জানলে তুমি…..
আমি ওরে থামিয়ে বলি, বাদ দাও বিশ্বাস কর আমার তাতে কোন কৌতুহল নেই। ওসব শুনে আর কি হবে বলো?
ঃ তা ঠিক এখন আর আমার কিছুই যে অবশিষ্ট নেই। ও ভারী কণ্ঠে নিজের বিষণœতা আড়াল করে।
আমার কানে বাজে ওর কথা। সত্যিই তো আজ আর কিছুই যেন অবশিষ্ট নেই। বুকের ভেতরে জমে থাকা ভালবাসা গুলি কাঁন্না হয়ে বালিশে শুকিয়ে গিয়েছে যেন। আমি ভুলে গিয়াছি আমার প্রথম ও একমাত্র ভালবাসা কে। এ হৃদয় যেন সাহারা মরুভুমি!
দরজায় ক্রমাগত কড়া নড়ার শব্দে বিছানা ছেড়ে দরজা খুলতেই কাক ভেজা হয়ে হুড়মুড় করে ভেতরে ঢুকে আনিস। আমি মুচকি হেসে বলি, কি বৃষ্টি বিলাসে মেতে ছিলে বুঝি? আনিস কপট রাগের ভাব নিয়ে বলে ভাইরে এই দু:সময়ে সাহিত্য করোনা! শীতে কাঁপছি। জ্বর না এলেই হয়।
কিছুক্ষণ পর ও দুই মগ চা নিয়ে আমার রুমে প্রবেশ করে। চেয়ারে বসে আমার দিকে তাকিয়ে বলে, ফয়সাল তুমি কি জানো মেয়েরা আসলে কি চায়?
কেন?
আমার বউয়ের কথা ধর, তারে আমি কত ভালোবেসে ছিলাম। কত কিছু দিয়ে ছিলাম। চলে যাবার পূর্ব মুহূর্ত পযন্ত সে হাসি খুশি ছিল। সে যে আমাকে নিয়ে অসুখি একবারও তা বুঝতে দেয়নি। প্রতারক!
– বৃষ্টির রাতে এসব দু:খের কথা মনে করে বিষণœ হবার কি দরকার? ডিভিডি তে কালকের আনা ছবিটা চালাও। ভাল সিনেমা মন ভাল করে দেয়।
সিনেমা চলছে ফর্ম প্যারিস উইথ লাভ। গল্পে দেখা যায় নায়ক পুলিশ অফিসার আর তার নিজের স্ত্রীই তার চরম শত্রুর এজেন্ট। ছবি থেকে মন সরে যায়। আসলে চোখ ঘোরানো সহজ মনকে ঘোরানো সহজ নয়।
ভাবতে থাকি সোফিয়ার কথা। আনিসও হয়ত ভাবছে ওর চলে যাওয়া অবিশ্বস্থ বউয়ের কথা। আনিসের বউ বিয়ের ছয় মাসের মাথায় তার পুরনো প্রেমিকের হাত ধরে পালিয়ে যায়। ও প্রতিজ্ঞা করেছে বাকি জীবন আর বিয়ে করবেনা। আর আমি কী করবো তা আমার জানা নেই। সোফিয়া কি বলবে? ওকি ফিরিয়ে দিতে পারবে আমার জীবনের যন্ত্রণাময় দশটা বছর? রাতের পর রাত ওর জন্য নির্ঘুম কাটানো আর বুকের পাজরে লুকানো নীল যন্ত্রণার সমুদ্র!
মোবাইলের ডিসপ্লেতে ওর এসএমএস ভেসে উঠে। ও লিখেছে, চলতি পথে আবার দু’জনার দেখা হল, এ নিশ্চয় সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছে। বাকিটা পথ চল এক সাথে পাড়ি দেই।
উত্তরে আমি লিখি, শুকিয়ে যাওয়া নদীতে নৌকা চলেনা। মরুভুমি হয়ে গেছে আমার হৃদয় নহর। সেখানে আর তোমার জন্য কোন ভালবাসা নেই। তোমাকে ভুলে গিয়েছি আমি। তোমার সাথে কথা বলারও ইচ্ছে নেই আমার। ভুলে গিয়েছিলে ভুলেই থাক বাকিটা জীবন…।
বারান্দায় কান্নার শব্দ। হাউমাউ করে বাচ্চাদের মত করে কাঁদছে আনিস। ও এমন করে প্রায় কাঁদে। হায় ভালবাসা তুমি কত নিষ্ঠুর!
সোফিয়াকে কঠিন কথা গুলো শুনাতে পেরে মনটা হালকা লাগছে। পরাজয়ের যন্ত্রণা কিছুটা কমেছে। আমি অন্ধকারে তাকিয়ে ভাবছি কে বেশি কালো অন্ধকার নাকি সোফিয়াদের হৃদয়?

একটি নির্ঘুম রাত আর রহস্যময় ফোন।

MOBU1
গভীর রাত। সেজুতি শুয়ে আছে। তার চোখে ঘুম নেই। ইদানিং প্রায়ই তার এমন হয়। ঘুম আসেনা। বিছনায় মরার মত শুয়ে থাকতে ভারী কষ্ট হয় তার। রুমে আর তিনটা মেয়ে ভোস ভোস করে ঘুমায়। ওদের দিকে তাকিয়ে সেজুতির খুব মন খারাপ হয়। শুধু ওরা নয়, হোস্টেলের সবাই ঘুমায়। দারোয়ান টাও লাঠিতে ভর দিয়ে ঘুমায় ।
জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে দেখে সেজুতি। পুরো রাস্তা ফাকা। কোথাও কেউ নেই। লাইট পোষ্টের নিচে দুটো বেওয়ারিশ কুকুর ঘুমিয়ে আছে। আহ ঘুমুতে পারা কত শান্তির! সে যদি এভাবে ঘুমুতে পারতো?
ঘুম না আসা রোগটা তার খুব পুরাতন। স্কুলে দশম শ্রেনিতে পড়ার সময় তার বাবা মতিন সাহেব তার জন্য প্রাইভেট শিক্ষক নিয়োগ দেন। অর্নাস শেষ করে রেজাল্টের অপেক্ষায় থাকা ফজলু কে। ফজলু ছিল সেজুতিদের চাচার বাড়ির ভাড়াটিয়া। চিলে কোঠায় ফজলু আর তার দুই বন্ধু ভাড়া থাকতো। সে ছিল খুবই নিরহ গোবেচারা টাইপের ছেলে। পড়াশোনা ছাড়া অন্য কিছুতে তার তেমন আগ্রহ ছিলনা। পড়ানোর সময় কখনোই তার দিকে তাকাতো না। কথা বলতো দেয়ালের দিকে তাকিয়ে। সেজুতির খুব ইচ্ছে হত ফজলু তার দিকে তাকিয়ে থাকুক। একটু আধটু এডাল্ট কথা বলুক।
ফজলুর চেহারা সুরুত তেমন ভাল ছিলনা। গায়ের রং ছিল কালো। ডান চোখ সামান্য ট্যারা। শরীরটাও খুব পাতলা গড়নের। পড়ার বাইরে সে কখনোই গল্প করতো না। রোবটের মত মুখ মলিন করে বসে থাকতো।
সেজুতি তার জন্য অনেক সেজে গুজে থাকতো। অকারনেই ফজলুর মুখের দিকে তাকিয়ে থাকাটাও তার অভ্যাস হয়ে গিয়েছিল। কখনো কখনো মুখস্ত পড়াও ভুলে যেত। ইচ্ছে করতো ফজলুর হাতটা ধরে থাকতে। কিশোরী মনে তারে নিয়ে কত স্বপ্ন যে দেখতো সে। টিভিতে রোমান্টিক নাটক দেখার সময় সেজুতির ইচ্ছে হত ফজলু স্যার তার হাত ধরে বলুক“এই মেয়ে তুমি এত সুন্দর করে তাকাও কেন? আমি যে তোমার প্রেমে পড়ে যাবো!”
একবার সেজুতি তার অংকের খাতায় লিখে রাখলো, ভালবাসি ভালবাসি ভালবাসি। কি আর্শ্চয্য ফজলু তা খেয়াল করলো না। তারপর সেজুতি আরেকটু সাহসী হল। সে ঠোটে লিপিষ্টিক লাগিয়ে একটা সাদা কাগজে অনেক বার চুমু খেল। সাদা কাগজে সেজুতির পুরু ঠোটের ছবি ভেসে উঠলো। লজ্বা লাগলো দেখে সেজুতি বুকের জামার ভিতর লুকিয়ে রাখলো সেই কাগজ খানি সারা দিন। বিকেলে ইংরেজি বইয়ের ভেতর কাগজটা রেখে দিল। ফজলু স্যার ইংরেজি বই ধরতেই সেজুতি পানি খাবার কথা বলে অন্য ঘরে চলে গেল।তার বুকের ভেতর ধরফর করে উঠল। রক্তচাপ বেড়ে যাচ্ছিল। গলা শুকিয়ে যাচ্ছিল। বেশ কিছুক্ষন পর ফিরে এসে দেখলো ফজলু স্যার মুখ কালো করে বসে আছে। তাকে খুব বিধস্ত দেখাচ্ছিল। ফজলুর শুকনো মুখ দেখে সেজুতির খুব কষ্ট হয়। তার ইচ্ছে করে ফজলুর হাত ধরে বলতে , এই ছেলে কি হয়েছে তোমার? কেন এত দুঃখি তুমি? আমার হাতটা ধর দেখ তোমার পৃথিবীটা কেমন বদলে দেই আমি!
পরের দিন সারাটা প্রহর তার কাটলো আতংঙ্কে। বিকেলে ফজলু স্যার আসবেতো?
সেজুতি ঠিক করলো, নাহ, স্যারকে আর বিব্রত করবে না।
ঠিকই যথা সময়ে ফজলু স্যার পড়াতে এসেছিল। তবে সেদিনই ছিল তার শেষ পড়ানো। তাকে খুব অসুস্থ লাগতে ছিল। সেজুতি খেয়াল করলো ঠোটের ডান পাশে কেটে গিয়েছে। গালটাও ফুলাফুলা। ফজলু স্যারকে দেখে তার বুকের ভেতর কিযে কষ্ট হয়। ভালবাসার মানুষের জন্য এত মায়া লাগে তা সেজুতি সেদিনই প্রথম বুঝতে পারে।
সেজুতি বলে, আপনার কি হয়েছে স্যার?
ফজলু স্যার বলে, গতকাল গ্রাম থেকে খবর এসেছে আমার মায়ের শরীর খারাপ। কালকে সেজন্য খুব আপসেট ছিলাম। হয়ত ভুল করেই তোমার ইংরেজি বইটা নিয়ে যাচ্ছিলাম…।
ভুল করে কেন নিবেন স্যার? আমিইতো বললাম প্রশ্ন দাগিয়ে দিতে।
ও আচ্ছা।
তারপর?
যাবার সময় তোমার বড় ভাই আনিসের সাথে দেখা হল গেটের কাছে। সে আমার সাথে সৌজন্য মূলক কথা বলার এক পর্যায় বইটা হাতে নিয়ে খুলতেই একটা সাদা কাগজ রাস্তায় পড়লো। সেখানে .. .! যাইহোক । তোমার ভাই তখন কিছু না বললেও রাতে আমাকে বাসায় গিয়ে খুব বকা-ঝকা দিয়েছে। সামান্য গায়েও হাত দিয়েছে। তাতে আমার দুঃখ নেই। তুমি হয়ত ইচ্ছে করে বইর মধ্যে ওটা রাখনি। কিন্তু আজ সকালে তোমার চাচা বলছে আমি যেন আজকে দিনের মধ্যে বাসা ছেড়ে দেই। এখন কোথায় যাব আমি?
আজকে পড়াতে আসিনি আমি, তুমি খুব ভাল মেয়ে। তোমার মেধা খুব ভাল। তোমার বাবা মায়ের ইচ্ছে তোমাকে ডাক্তার বানাবে, তুমি ভাল করে পড়াশোন করিও।
ফজলু স্যার চলে গেল। সেজুতির বুকের ভেতর কি যে কষ্ট হতে থাকে তা বোঝানো যাবে না। গলার কাছে কান্না জমাট বেধে থাকে। সে কাদতে পারেনা। ফজলু স্যার সন্ধার আগেই চিলে কোঠার বাসা ছেড়ে দিয়ে ছিল। ফজলু স্যারের সঙ্গে তারপর আর দেখা হয়নি সেজুতির।
তখন অনেক দিন সেজুতির রাতে ঘুম হত না। জেগে থাকতো। কেদে বুক ভাসাতো। অনুশোচনা হত। তখনি প্রতিজ্ঞা করে ছিল আর কোনদিন কাউকে ভালবাসবে না সে। ভালবাসলে শুধু কষ্ট পেতে হয়। ফজলু স্যারের কথা ভুলতে বসে ছিল সেজুতি। কতগুলো বছর কেটে গেছে। স্মৃতির খাতায় আরো অনেক ঘটনা জমা পড়েছে। জীবনতো বহমান নদীর মত। শুধু বয়ে চলে। রাত শেষ হয় দিন শুরু হয়, আবার.. । প্রতিটি দিন যায় নতুন ঘটনা ঘটে জীবনে। সেজুতি দীর্ঘঃশ্বাস ফেলে জানালা থেকে সরে আসে।
না, সেজুতি ডাক্তার হতে পারেনি। সরকারী কোন মেডিকাল কলেজে সে চাঞ্জ পায়নি। তার বাবার চাকুরী শেষে যে টাকা জমানো ছিল ব্ড় ভাই তা নিয়ে ব্যবসা করতে গিয়ে লস খেয়ে সব শেষ। পুরাতন বাড়ি ভাড়ার টাকা আর পেনশন দিয়ে চলছে সংসার। সেজুতির মাষ্টাস ফাইনাল পরীক্ষা সামনে। হোস্টেলে থাকে সে। জীবন কোথায় কারে নিয়ে যায় তার ঠিক নেই।
মোবাইল ফোনটা কেপে উঠে হঠাৎ করেই। ডিসপ্লেতে আননোন নাম্বার। রিসিভ করতেই সেই পরিচিত কণ্ঠ। কেমন আছেন?
কে বলছেন?
কেন না চেনার ভান করছেন।
দেখুন আমি ভনিতা করতে জানি না। আর সেই বয়সটাও এখন আমার নেই। আমি স্কুলে পড়া কিশোরী নই অথবা কলেজের প্রথম বর্ষের কোন তরুনী।
ওপাশ থেকে হাসির শব্দ ভেসে আসে। সেই হাসির শব্দে সেজুতির মেজাজ আরো খারাপ হয়ে যায়। তার ইচ্ছে করে ফোনটাকে জানালা দিয়ে ছুড়ে ফেলতে। কেন যে ফোনটা রিসিভ করতে গিয়ে ছিল সে? নিজেকে অভিসাপ দেয় সেজুতি। এই অচেনা মানুষটা বিভিন্ন নাম্বার থেকে তারে ফোন দিয়ে অতিষ্ঠ করে ফেলছে।
লোকটার সাহস দেখে অবাক হয়ে যায় সেজুতি। ঠিক সাত দিন আগে তারে ফোন দিয়ে ছিল রহস্যময় মানুষটা। বলেছিল, শোনেন সেজুতি, আমি আপনার সব খবর রাখি। আপনি আজ পড়েছেন আকাশি রংয়ের সেলোয়ার কমিজ। আপনার সামনে পড়ে আছে হুমায়ূন আহমেদের জোছনা ও জননীর গল্প বইটা। কি ঠিক বলেছি না? সেজুতি বিস্ময়ে থ হয়ে যায়। নিজেকে সামলে নিয়ে বলে, হয়নি। একমাস পরে আমার পরীক্ষা। আমার টেবিলে কেন গল্প উপ্যনাসের বই থাকবে?
ফোনের ওপাস থেকে হাসির শব্দ ভেসে আসে। সেই হাসি যেন বলে সেজুতি তুমি এত মিথ্যে কথা বলতে পারো!
ঠিক আছে আপনার মিথ্যেকে সত্য ধরে নিলাম। এবার আপনাকে একটা সিরিয়াস কথা বলি। আমি আপনাকে বিয়ে করতে চাই। কি বলেন?
বলে কি লোকটা? বিয়ে? মাথা ঠিক আছেতো? নাহ এই সব ফালতু লোকের সাথে কথা বাড়িয়ে লাভ নেই। কি জানি কোন টাউট-বাটপার হতে পারে।আজকাল মোবাইল ফোনে অনেক ক্রাইম হচ্ছে। সহজ সরল মেয়েদের সুন্দর সুন্দর কথা বলে ভৃুলিয়ে- ভালিয়ে নানা অঘটন ঘটিয়ে ফেলে।
সেজুতি শীতল গলায় বলে, শোনেন আপনি বিভিন্ন সময়ে আমাকে কল দিয়ে বিরক্ত করেন। আমি নিছক ভদ্র মেয়ে বলেই এতদিন কিছু বলিনি। আপনার সাহষ দেখে আমি বিস্মিত। আপনী দয়া করে আর ফোন দিবেন না।
ঠিক আছে ফোন দিবনা। তবে আপনাকে সাত দিন পরে একবারের জন্য ফোন করবো। আমি জানতে চাইব কাউকে আপনি কি কাউকে ভালোবাসেন? আপনার হৃদয়ের ভেতর এমন কেউ কি আছে যারে আপনি ভুলতে পারেন নি?
আজ আমার দেওয়া সাত দিনের আলটিমেটাম শেষ। এবার বলুনতো আপনি কি ভাবলেন?
না। আমার হৃদয়ে এমন কেউ নেই। শীতল গলায় উত্তর দেয় সেজুতি।
তাহলে রাতে আপনি ঘুমুতে পারেন নি কেন?
ওহ ফোন বাজার সাথে সাথে ধরেছি বলে ভাবছেন আমি রাতে আপনার জন্য ঘুমুতে পারিনি? শ্লেস ভরা কণ্ঠে জবাব দেয় সেজুতি।
না। আমি লক্ষ করছি আপনি বারান্দা দিয়ে হাটাহাটি করেন। জানালার পাশে আপনার ছায়া দেখা যায়।
কি যা তা বলছেন?
ঠিক আছে আমি আর ফোন দিবনা। আপনি খুশি?
হ্যা আমি খুশি।
লাইন কেটে যায়। সেজুতির খুব অস্থির লাগে। কে এই মানুষটা?
নাহ আজ আর ঘুম আসবেনা হয়ত। সেজুতি বাথরুমে গিয়ে হাত মুখ ধুয়ে বিছনায় গা এলিয়ে দেয়। রাত শেষ হতে আর বেশি বাকি নেই।

ভালোবাসি কিন্তু বলতে পারিনি!

14403
RAFIQ SIR

মেয়েটি দাড়িয়ে আছে আমার পাশে। সে পড়েছে সাদা রংয়ের সেলোয়ার কামিজ। তার ফর্শা মুখে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমেছে। লিপিষ্টিকহীন পাতলা ঠোট, লম্বা নাক আর মায়াভরা দু’চোখ সব মিলিয়ে এক কথায় তাকে অর্পূব লাগছে।
এমন অপরুপ সুন্দরী কাউকে ২৭ বছরের এ জীবনে দেখিনী। আড় চোখে তাকে বার বার দেখছি আর মুগ্ধ হচ্ছি।
দাড়িয়ে আছি শনির আখড়া বাস কাউন্টারে। টিকিট কেটেছি ৩৫ মিনিট হল অথচ বাস আসার কোন লক্ষনই দেখছি না। কাউন্টারে বসে থাকা লোকটাকে তৃতীয় বারের মত জিজ্ঞাসা করলাম,ব্যাপার কি? গাড়ি কৈ..?
তিনি অন্যদিকে তাকিয়ে আমাকে অগ্রাহ্য করে বললেন
- মন্ত্রী সাহেব আসবেন তাই রাস্তা ফাকা করে রাখা হয়েছে। গাড়ি আসতে দেরী হবে। সময় না থাকলে টিকিট ফেরত দিয়ে দেন।
এরপর আর কি বলার থাকে?
হাতে সময়ও নেই এক ঘন্টার মধ্যে আমাকে অফিসে গিয়ে রির্পোট জমা দিতে হবে। ইতিমধ্যে যাত্রীদের লাইন মানব বন্ধনের মত রাস্তার ফুটপাত দিয়ে সাপের মত একে- বেঁকে বেড়েই চলছে।
না …হ , শেষ পযন্ত টিকিট ফেরত দিয়ে সামনের দিকে হাটা দিলাম। হটাৎ পেছন থেকে
- “ এই যে শুনছেন..”
নারী কন্ঠ শুনে দাড়িয়ে পিছনে তাকালাম। দেখি আমার পাশে দাড়িয়ে থাকা সেই তরুণী আমার দিকে এগিয়ে আসছে।
আমার পাশে এসে বললো আপনাকে দেখে আমিও টিকিট ফেরত দিলাম, কিভাবে যাবেন?
: দেখি সিএনজি পাই কিনা আমিতো বাংলামটর যাব, আপনি কোথায় যাবেন?
: আমি শাহবাগ যাব।
ও আচ্ছা। তাহলে আপত্তি না থাকলে চলেন একসাথে যাই।
তরুনী হেসে মাথা নাড়ালো। দুজন পাশাপাশি হাটছি।
কিছুদুর যাবার পর একটা সিএনজি পেলাম তবে ভাড়া চাইলো দ্বিগুন। কি আর করার রাজি হয়ে উঠলাম।
তরুণীর শরীর থেকে মিষ্টি একটা গন্ধ পাচ্ছিলাম। বুঝতে পারছিনা সুন্দর এই গন্ধটা কি কোন দামী পাফিউমের?
সে খুব আনমনা কি যেন ভাবছে। এমন সুন্দরী তরুণীর সাথে ভ্রমন করতে পেরে ভাল লাগছে। ভাগ্যবান মনে হচ্ছে। তার সাথে কথা বলতে ইচ্ছে করছে। অনেক দ্বিধা মনের ভেতর। ভেবে পাচ্ছিনা কি বলবো।
হটাৎ করে তার চোখে চোখ পড়লো। সে হাসলো তার হাসি আমাকে ভীষণ মুগ্ধ করলো। প্রতিত্তরে আমিও হাসলাম। বললাম
: কি নাম আপনার?
- আমি শিমুল, আপনি ?
: আমি ওয়াহিদ।
-কি করছেন ? সে প্রশ্ন করে।
তার চোখে আমার প্রতি আগ্রহ দেখে আমি পুলকিত হই।
: আমি বাংলা মটর যাচ্ছি, ওখানে আমি একটি বেসরকারী ব্যাংকে মাকেটিং অফিসার পদে কাজ করছি।
: ও আচ্ছা।
সে বাইরে তাকায়। ততক্ষনে আমরা সায়দাবাদ এসে পড়েছি। আমদের সামনে বিশাল জ্যাম। খুব গরম লাগছে। বাতাশে আগুনের তাপ বয়ে আসছে যেন। থেমে থাকা গাড়ির জ্বালানী পোড়া কার্বন যুক্ত বিসাক্ত ধোয়া, আর তার সাথে মিশে যাওয়া ধুলো-বালি এক হয়ে শরীরে কাটার মত লাগছে। নিচু হবার কারনে সিএনজি অটোরিক্স গুলোতে রাস্তার এই ধুলো-বালি বেশি লাগে। তাই খুব বেশি বিপদে না পড়লে আমি এর যাত্রী হইনা। মেয়েরা জন্ম সূত্রে গরম সহ্য করার মত অসিম শক্তি নিয়ে জন্মেছে। আমার ছোটবোন টাকে দেখি গরমের দিনে বিদুৎ না থাকলেও দিব্বি ঘুমুচ্ছে!
তবে শিমুল ঘামছে। শিশির কনার মত সেই ঘাম টিস্যু পেপার দিয়ে মুছলো সে। তার দিকে তাকিয়ে থাকতে আমার খুব ভাল লাগছে। কোন নারীকে এতটা আগ্রহ নিয়ে কখনো দেখিনি। এতটা ভালও কাউকে লাগেনী। ওর সব কিছুতেই আমি মুগ্ধ হচ্ছি। এই ভাললাগার মানে কি? এতটুকু দেখেই কি সারা জীবনের দেখা মেয়ে গুলির চেয়ে তাকে বেশি ভাল লাগাটা ঠিক হচ্ছে? ব্যপারটা কেমন সিনেমার গল্পর মত নাটকীয় মনে হচ্ছে না? সে কি ভাবছে? কি জানি !
শিমুলের মোবাইলে রিং বেজে উঠল। সে ফোন রিসিভ করলো। হটাৎ করেই তার মুখটা ফ্যাকাসে হয়ে গেল। চিৎকার করে বললো “ কখন… !”
এরপর জ্ঞান হারিয়ে আমার উপর ঢলে পড়ল শিমুল। এত দ্রুত ব্যাপারটা ঘটল যে কিছুই বুঝতে পারলাম না। ওর মোবাইলটা হাত থেকে ছিটকে পড়লো।
ড্রাইভারকে বললাম রাস্তার একপাশে নাও।
হকারের কাছ থেকে পানি নিয়ে ওর চোখে মুখে ছিটালাম। কিন্তু জ্ঞান ফিরছেনা। কি করি? আমি কিংর্কতব্যবিমুঢ় হয়ে গেলাম।
এমন বিব্রতকর অবস্থায় কখনো পড়িনি। ড্রাইভার এগিয়ে এসে বললো ভাবীকে কোলের উপর শোয়ান, জ্যাম ছাড়ছে তাকে সামনের কোন হাসপাতালে নিতে হবে।
সিএনজি চলছে।
শিমুলের সর্বশেষ ডায়াল কলে ফোন দিলাম। রিং হচ্ছে কিন্তু কেউ ফোন ধরছে না। এবার ফোন বুক হতে বড় আপা নামের নাম্বারে ডায়াল করলাম। বেশ কয়েক বার রিং বাজার পর কেউ একজন ফোন রিসিভ করে বললো তুই তারাতারি হাসপাতালে আয়। লাইন কেটে গেল।
হচ্ছে টা কি?
টেনশনে আমার অবস্থা খারাপ। পকেটে বেশ কিছু টাকা থাকায় হটাৎ করেই মনে হল অজ্ঞান বা মলম পার্টির কবলে পড়ছি নাতো!
শুনেছি ঐ পাটির লোকেরা নাকি আওমীলীগ, বিএনপি বা জাতীয় পার্টির চেয়েও শক্তিশালী! টেনশনে গলা শুকিয়ে যাচ্ছে। তাই রুপসী তরুণীকে এক হাতে শরিরের সাথে জড়িয়ে ধরে রাখলেও কোন আলাদা ফিলিংস হচ্ছিল না।
এবার আমার মোবাইলে রিং বাজলো , রিসিভ করতেই আমার ম্যানেজার স্যার গম্ভীর গলায় বললো কি – ব্যাপার ওয়াহিদ সাহেব আপনি কৈ? এত দেরী করছেন কেন? দুই ঘন্টা যাবত রশিদ সাহেব আপনার জন্য অপেক্ষা করছে। তারাতারী অফিসে পৌছান।
রাগে দু:খে নিজের চুল নিজে ছিড়তে ইচ্ছা হল। কেন যে এমন হয়!
অফিসের এই বসটা ভয়ানক বাজে। কথায় কথায় ভুল ধরা ছাড়া তার যেন আর কোন কাজ নেই। কক্ষনই আমার ভাল কাজের প্রসংসা করতে তাকে শুনিনী। সে আমার পিছনে সর্বদা লেগে থাকে। অফিসে গেলে তার রামঝাড়ি যে মিস নেই তা বুঝতে পারছি।
শিমুলের দিকে তাকালাম ওমা ওরতো দেখি জ্ঞান ফিরেছে। ও আমার দিকে তাকিয়ে আছে। চোখে চোখ পড়তেই দেখি ও শূন্য দৃষ্টিতে চেয়ে আছে।
ও উঠে বসলো। ওড়না দিয়ে মুখে জমে থাকা পানি মুছলো। তাকে বিধস্ত আর ক্লান্ত লাগতে ছিল।
আমি বললাম কি হলো আপনার? হটাৎ করে এভাবে জ্ঞান হারালেন আমিতো ভয় পেয়ে গিয়ে ছিলাম। আপনার কি শরীর খারাপ লাগছে?
সে বেশ কিছুক্ষন নিরুত্তর রইল। তারপর আবার কেদে উঠল। চোখ থেকে অশ্রূ গড়িয়ে পড়ল।একসময় ও বলে
: কিছুকক্ষন আগে পিজি হাসপাতালে আমার বাবা মারা গিয়েছে। বাবা আমাকে এত ভালবাসতো অথচ তার মৃত্যুর সময় আমি তার পাশে থাকতে পারলামনা! সে আমাকে দেখতে চেয়েছিল …!
কান্নায় ভেঙ্গে পড়ল শিমুল।
তাকে সান্ত¦না দেবার চেষ্টা করলাম না। এতবড় শোকের কোন সান্তনা পৃথিবীতে নেই। মৃত্যুর শিতল পরশ শুধু লাশ নয় তার প্রিয়জনদের হৃদয়কেও শিতল করে দেয়।
সিএনজি চলছে। পাশাপাশি দুজন চুপচাপ বসে আছি। অচেনা অজানা মেয়েটার বাবার মৃত্যু শোকে আমার বুকের ভেতর কেমন যেন করছে। খারাপ লাগছে। আমার চোখ থেকে কয়েক ফোটা অশ্রু গড়িয়ে পড়ল। শিমুল দেখার আগেই আমি দ্রুত চোখ মুছলাম।
শিমুল আমার দিকে তাকিয়ে ধরা গলায় বললো
- আমাকে কি আপনি একটু হাসপাতালে বাবার ওর্য়াড পযন্ত পৌছে দিবেন? কেন যেন মনে হচ্ছে আমার শরিরে একবিন্দু শক্তি নেই। বুকের ভেতর শূন্য শূন্য লাগছে। গলা শুকিয়ে আসছে।
আমি ওর হাত ধরে বললাম চিন্তা করবেন না আমি আছি।
হাসপাতালে ওর বাবার কক্ষে যখন পৌছালাম দেখি চারদিকে স্বজনেরা সবাই কান্না-কাটি করছে। আমি কিছুকক্ষন দাড়িয়ে রইলাম। বুঝতে পারলাম না আমার এখন কি করা উচিৎ! এদিকে ম্যানেজার স্যারের ফোন আসছে বার বার। শিমুলের পাশে গিয়ে দাড়ালাম। ওর কোন হুস আছে বলে মনে হরন, ও পাগলের মত বাবার শিয়রে বসে কাদছে। বাবার মত এমন বট বৃক্ষর চলে যাবার শোক যে কতটা ভারি তা কেবল যার যায় অনুভব করতে পারে।
আমি নিরবে লিফট দিয়ে নেমে পিজি হাসপাতাল হতে হেটে হেটে আমার অফিসে চলে আসলাম।
অফিসে এসে রশিদ সাহেবের সাথে কথা শেষে আরো কিছু প্রয়োজনীয় কাজ করলাম। কিন্তু কোন কিছুই ভাল লাগতে ছিল না। বারবার শিমুলের কথা মনে হচ্ছিল। তার মুখটা মনের ভেতর ভেসে উঠছে বার বার। হটাৎ করেই মনে হল হায় আমিতো ওর ঠিকানা বা মোবাইল নাম্বার কিছ্্্্্্্্্্্ইু জানিনা! ভীষণ মন খারাব হল। কাজ বন্ধ করে দ্রুত পিজি হাসপাতালে ছুটলাম।
তিন তলার সেই কক্ষ দুই ঘন্টার ব্যাধানে অনেক বদলে গেছে। শুনশান নিরবতা। ওয়ার্ড বয়কে ওদের কথা জ্ঞিগাসা করতেই বললো তারা চলে গেছে আধাঘন্টা আগে।
ভংগ্ন মন নিয়ে বাসায় ফিরলাম। নিজের বোকামীর জন্য ভাগ্যকে বার বার দোষারোপ করলাম।
কোন কিছুই ভাল লাগছেনা। বারবার শিমুলের কথা মনে পড়ছে। কেন এমন হচ্ছে?
ভালবাসার অপেক্ষায় থাকা আমার স্বচ্ছ হৃদয়টাকে ভাগ্য বিড়ম্বনার দরুন আহত হতে হল। কি পোড়া কপাল আমার ২৭ বছরের এই জীবনে প্রথম যারে ভাল লাগলো তাকে ভালবাসি বলার সুযোগ পেলাম না!
লাইট বন্ধ করে শূন্য ঘরে একাকি বসে রইলাম।

প্রথম লাভ লেটার (বাঁশি)


বৃষ্টি,

আমি খুব অস্থিরতার মধ্যে আছি তোমাকে একটা সত্য কোনো ভাবেই বোঝাতে না পেরে। একটা মানুষ আর কতো কদর্য ভাবে বলতে পারে আমি জানি না। আমি তোমাকে ভালোভাবে বলেছি, আবার অনেক কদর্যভাবেও বলেছি। কোনোভাবে বলেই যখন কাজ হচ্ছে না তখন আমি সত্যিই দিশেহারা। তুমি প্রতিদিন কষ্ট পাচ্ছ, আমার কারণে, আমার ব্যবহারে। অথচ আমি এটা চাই না। এভাবে কষ্ট পাওয়া তোমাকে মানায় না। আজকাল তোমার কথা ভাবতে গেলেই বারবার সেই বিখ্যাত আমেরিকান গল্পটা মনে পড়ে। গল্পটা শোনো। তোমার জন্যে খুব প্রযোজ্য। এক বালকের খুব বাঁশি বাজানোর শখ। সে স্কুল যাবার সময় পথে একদিন এক বংশীবাদককে বাঁশি বাজাতে দেখে। সেই বাঁশি ওয়ালা হয়তো অতো চমৎকার বাঁশি বাজায় নি; কিন্তু জীবনে প্রথম শোনা সেই বাঁশির মিষ্টি সুর ভীষণ মুগ্ধ করে তাকে। হঠাৎ করেই বাঁশির প্রতি এক দুর্নিবার টান অনুভব করে সে। তারপরেই সে সিদ্ধান্ত নেয় যে সেও বাঁশি বাজানো শিখবে।


সেদিন বাসা ফিরেই সে তার বাবাকে সেই বঁশিওয়ালার কথা বললো। তারপরেই চেয়ে বসলো তার নিজের জন্যে একটা বাঁশি। বললো, সেও সেই রকম সুন্দর করে বাঁশি বাজানো শিখবে। বাবা তার কথা শুনলেন। হাসলেন। কিন্তু ছেলের পড়াশুনার ক্ষতি হবে বা এসব ঠুনকো আবেগকে পাত্তা দেয়া উচিৎ নয় ভেবে বা অন্য যে কোনো কারণেই হোক বাঁশি কিনে দিতে রাজি হলেন না।


কয়েক সপ্তাহ ধরে চেয়ে চেয়ে বাবার কাছ থেকে বাঁশি কিনে না পেয়ে মনের দূ:খে সে সিদ্ধান- নিলো যে সে নিজেই একটা বাঁশি কিনবে। স্কুলে টিফিন খাবার জন্যে প্রতিদিনই মা তাকে কিছু পয়সা কড়িদিতেন। সে টিফিন খাওয়া বন্ধ করেদিয়ে সেইটাকা জমাতে লাগলো বাঁশি কিনবে বলে। এদিকে বাঁশি কেনার দুশ্চিন্তায় তার দিন কাটেনা,রাত কাটে না। কখন তার টাকা জমবে, আর কখন সে বাঁশি কিনবে! মহা অস্থিরতা মনে মনে। প্রতিদিনই সে টাকা গুনে দেখে আর টাকা বেশি করে জমছে না দেখে মন খারাপ করে বসে থাকে। বাঁশির দাম সে জানে না, কিন্তু যে বাঁশিতে এতো সুন্দর প্রাণ উতলা করা সুর ওঠে সে বাঁশির দাম নিশ্চয়ই কম নয়- এমনই তার ধারণা।


মাস দুয়েক পর একদিন সকালে সে স্কুল ফাঁকি দিয়েবাঁশি কিনতে বেরিয়ে পড়লো। সংগে দুই মাসে জমানো সমস্ত টাকা। কিছুদিন আগে সে তার এক বন্ধুর সংগে গিয়ে শহরের মাঝামাঝিতে অবস্থিত একটা বাঁশির দোকান চিনে এসেছিলো। এখন ছুটলো সোজা সেই দোকানে। একটা কালো লম্বা সরু বাঁশি তার পছন্দ হলো। এরকমই একটা বাঁশি সে সেই বাঁশিওয়ালাকে বাঁজাতে দেখেছিলো। সেই মোহনীয় সুর তুলতে হলে তাকেও এই বাঁশিই কিনতে হবে।


বালক বাঁশিটি হাতে নিয়ে দোকানীর সামনে গেলো। তারপর তার প্যান্টের পকেট উল্টে সবগুলো টাকা আর কয়েন ঢেলে দিলো মেঝেতে। তারপর বললো, আমি এই বাঁশিটা কিনবো। দেখুন তো এই টাকার হয় কিনা।


দোকানী দেখলো অনেকগুলো খুচরো কয়েন। বললো, আমি গুণে দেখি, তুমি ততোক্ষণে অন্য বাঁশিগুলোও দেখতে পারো।


দোকানীর কথামতো সে গ্যালারীর সামনে এসে অন্য বাঁশি গুলো দেখতে লাগলো। কিন্তু আর বাঁশি দেখে কি হবে? সে তো স্থির করেই ফেলেছে যে হাতের কালো বাঁশিটিই সে কিনবে, অন্য বাঁশি নয়। তাতে দাম যতোই লাগুক।


দোকানী গুণে দেখলো যে প্রায় পঞ্চাশ টাকা। কিন্তু সেই বাঁশির দাম তো মাত্র পাঁচ টাকা। দোকানীর সন্দেহ হলো। এতো টাকা এই বাচ্চা ছেলে পেলো কোথায়? নিশ্চয়ই তার বাবা মা তাকে বাঁশি কেনার জন্যে এতো টাকা দেয় নি? তাদের তো মোটামুটি দাম জানা থাকার কথা। তাহলে কি এই বালক বাসা থেকে টাকা চুরি করে এনেছে?


এ কথাই জিজ্ঞেস করার জন্যে দোকানী ডাকলো বালটিকে, “এই যে বাবু, এদিকে এসো।” বালকটি ভাবলো, বোধায় টাকা কম আছে। দামে হচ্ছে না। কিন্তু আমার কাছে তো আর কোনো টাকা নেই। কিন্তু এ বাঁশি তো আমার কিনতেই হবে। আজ এবং এক্ষুণি। সে তৎক্ষনাৎ ঠিক করে ফেললো যে সে আর দোকানীকে কোনো টাকাও দেবে না, দোকানীর কোনো কথাও শুনবে না। যেই ভাবা সেই কাজ। দোকানীর দিকে না গিয়ে সে বাঁশি নিয়ে দিলো দৌড়। দোকানী প্রথমে থতোমতো খেয়ে গেলো। একি! ছেলেটা কি পয়সা ফেরত নেবে না?


পর মুহূর্তে দোকানীও দৌড়ে এলো। কিন্তু ততোক্ষণে দেরি হয়ে গেছে। বালকটি দৌড়ে দিয়ে সোজা রাস্তায় না গিয়ে একটা গলিতে ঢুকে পড়েছে। দোকানী আর দেখতে পেলো না তাকে।


সেদিন বালকটি আর স্কুলে গেলো না। স্কুল ছেড়ে দূরের এক মাঠে গিয়ে মনের আনন্দে ইচ্ছে মতো বাঁশি বাজালো। বাঁশি বাজানো হচ্ছে না, সুর উঠছে না, তবু খুশিতে সে আত্মহারা। মনে মনে স্বপ্ন দেখছে সেও একদিন সেই বংশীবাদকের মতো মধুর সুর তুলবে বাঁশিতে। দুপুর পার করে বিকেল পর্যন্ত সে সেই নির্জন মাঠে বাঁশি বাজালো। না খেয়ে কোনো খাবার, না পিয়ে কোনো পানীয়। ক্ষুধা তৃষ্ণার সব উপলব্ধি যেনো নিঃশেষ হয়ে গেছে বাঁশি পেয়ে।


স্কুল ব্যাগে বাঁশিটি ভরে নিয়ে ব্যাগ কাঁধে প্রতিদিনের মতো যথাসময়ে বাড়ি ফিরলো সে। প্রথমে ভেবেছিলো যে বাবা মাকে বাঁশি কেনার কথাটা বলবে না। কিন্তু পরে ভাবলো, সে তো আর টাকা চুরি করে বাঁশি কিনে নি, বরং টিফিন খাওয়ার নিজের পয়সা বাঁচিয়ে কিনেছে। এটা তো তার গর্বেরই বিষয়। এই গর্বে সে আর কথা চেপে রাখতে পারলো না। রাতে খাবার পরে সে তার বাবা মাকে বাঁশিটি দেখিয়ে বললো, এই যে দেখো, আমার বাঁশি; আমি নিজেই কিনেছি।


বাবা মা আঁৎকে উঠলেন, সে কী! টাকা পেলে কোথায়?


“হূঁহ্‌হু! হেহহে!” বেশ আত্মতৃপ্তির ভাব করলো সে। তারপর বললো,


“গত দুমাসে তোমরা টিফিন খেতে যতো টাকা দিয়েছিলে তার সব টাকা জমিয়ে আমি এটা কিনেছি।”


“কী বলছো? দুমাসের সব টাকা?”


“ইয়েস পাপা, ইয়েস ম্যাম। সব টাকা।”


তার মা হিসেব করলেন যে দুমাসের সব টাকা জমালে সেটা পঞ্চাশ টাকার কাছাকাছি হবে। কিন্তু এ বাঁশির দাম তো আট দশ টাকার বেশি হবে না। এবার মা তার মাথায় হাত দিয়ে আদর করে বললেন,


“আচ্ছা বাবা, সত্যি করে বলো তুমি কি সব টাকা দোকানীকে দিয়ে এসেছো।”


“হ্যাঁ মম, সব দিয়ে দিয়েছি।”


বলেই সে বাঁশি কেনার সব গল্প শুনিয়ে দিলো।


এবার তার বাবা বললেন, “তুমি তো মহা বোকার মতো কাজ করেছো। এ বাঁশির দাম তো দশ টাকার বেশি নয়।”


শুনে বালকটির সমস- আনন্দ মুহূর্তের মধ্যে কোথায় যেনো উধাও হয়ে গেলো। সে কান্না জুড়ে দিলো। হায় সে কী করেছে! সে তো আরো ছটি বাঁশি কিংবা অন্য খেলনাও অনেকগুলো কিনতে পারতো। এক বাঁশি কিনতে গিয়ে সে তার সব টাকা ফুরিয়ে দিয়েছে!

 

বৃষ্টি, তোমার খারাপ লাগলেও আমি বলবো তুমিও সেই বালকের মতো ঠকে যাওয়া এক বোকা বালক। বাঁশি চিনতে ভুল করার মতো তুমি এখনো মানুষ চিনতে ভুল করে যাচ্ছ! ভুল করে বারবার কষ্ট পাচ্ছো। প্রথম জীবনে তুমি বোকামি করে অথবা আবেগের কাছে ধরাশয়ী হয়ে একটা ভুল করেছিলে, যা তোমাকে অনেকদিন ভুগিয়েছে। এখন তুমি আমাকে ভালোবেসে, আমাকে চেয়ে, আরেকটা ভুল করছো। তুমি আমাকে মনেপ্রাণে চেয়ে আসলে বেশি দামে শস্তা বাঁশি কিনতে চাইছো। আমি যদিও নিজেই সেই রঙিন চকচকে অথচ শস্তা বাঁশি, তবুও আমি তোমাকে বাঁচাতে চাচ্ছি যাতে তুমি আমাকে চেয়ে আমাকে পেয়ে কখনো না ঠকো। তোমার মতো সুন্দরী চমৎকার একটা মেয়ের আসলে অনেক সুখী শানিত্মময় জীবন প্রাপ্য, যা তুমি কখনোই আমার কাছে এসে পাবে না। সত্যি কথা কি, তুমি দেখো না, আমি কীভাবে তোমার সাথে কথা বলি? যতোটা কদর্যভাবে এবং কাঠখোট্টা সুরে আমি তোমার সাথে কথা বলি, আমার ভেতরটা তারচেয়েও কদর্য। আমার মনটা যে সংকীর্ন, অনুদার, এটা আমি জানি। এতে আমার বেশি কষ্ট নেই। পৃথিবীতে অনেক মানুষেরই মন খুব ছোটো। আমার সমস্যা হলো এই ছোট্টো মনটা আবার নানা কুটিলতা আর জটিলতায় ভরা। আমার মনের এই চরিত্রের কথা আমি কাউকে বলি না। তোমাকে বললাম, কারণ তোমার কোনো ক্ষতি আমি চাই না। তোমার মতো প্রকৃতি প্রেমী নরম মনের একটা মানুষ আমার মনের ক্ষুদ্র প্রকোষ্ঠে আটকা পড়ুক এটা আমি মেনে নিতে পারি না।


বৃষ্টি, আমার অনুরোধ, তুমি ফিরে যাও। দয়া করে ফিরে যাও। মনে রেখো, পৃথিবীটা কিন্তু আমার মতো এতোটা খারাপ, এতোটা নিষ্ঠুর হয়ে যায় নি। আমার কাছ থেকে একটু মুখ ফিরিয়ে দেখো। পৃথিবী তোমার জন্যে ভালোবাসার দুহাত বাড়িয়ে অপেক্ষা করছে। তুমি ফিরে যাও। আমি তোমাকে বললাম, তুমি দেখো, আমাকে না পেলেও অন্য অনেক ভাবে তুমি এতো ভালোবাসা, এতো আদর আর সুখ পাবে যে, ভুলেও আমার কথা তোমার আর মনে পড়বে না। কারণ, তুমি এ রকমই। কখনো আধো আধো ভালোবাসা বাসতে জানো না। ভালোবাসলে সবটুকু দিয়েই ভালোবাসো। আজ আমাকে ভালোবাসো বলে মনে হচ্ছে আমাকে ছাড়া তোমার চলবে না। আসলে এটা তোমার আবেগ। আমাকে ছাড়াই তোমার বিগত বছরগুলো কী দিব্যি চলে গেছে না, বলো? ভবিষ্যতটাও চলে যাবে। এবং আমি আশা করবো বেশ আনন্দেই যাবে।


বৃষ্টি, আমি নিশ্চিত আমার এই চিঠি পড়ে তোমার খারাপ লাগছে। কিন্তু আমি ততোধিক নিশ্চিত যে একদিন তুমি আমার উপর খুশি হবে এই ভেবে যে, আমি তোমাকে একটা ভুলের হাত থেকে বাঁচিয়েছি। যখন একদিন কোনো এক রোদপোড়া অলস দুপুরে অথবা এক বৃষ্টিস্নাত সন্ধ্যায় অথবা আকাশ ভরা তারার মোহ ধরা অস্পষ্ট আলোয় মধ্যরাতে অথবা পূর্ণিমার ভরা চাঁদের জোসনায় ভেসে যাওয়া রাতের শেষ প্রহরে কোনো এক ভালোবাসাময় সুপুরুষ পরম মমতা আর আদরে তোমাকে বুকে টেনে নেবে সেদিন তুমি ঠিক বুঝবে আমার মতো রোবোট তোমার জন্যে কখনোই উপযুক্ত ছিলো না।

 
ইতি-রফিক স্যার

অসাধারণ একটি ভালবাসার গল্প


রোজ নামে একটি মেয়ে ছিল যে গোলাপ ফুল খুব পছন্দ করত।।

তার স্বামী তাকে প্রতিটি ভ্যালেন্টাইন্স ডে তে গোলাপের তোড়া পাঠাতো আর সাথে থাকতো একটি করে কার্ড,যেখানে লেখা থাকতো সে তাকে কতোটা ভালবাসে।
...
কিন্তু হঠাত্‍ একদিন রোজের স্বামী মারা যায় ।কিন্তু রোজের স্বামী মারা যাওয়ার এক বছর পরের ভ্যালেন্টাইন্স ডে তেও রোজ একি ভাবে কার্ড সহ গোলাপের তোড়া পেল, কার্ডে লেখা ছিল“আমি গত বছরের এই দিনে তোমাকে যতটুকু ভালবাসতাম, এখন তার থেকে আরও বেশি ভালবাসি। প্রতিটি বছর পার হয়ে যাওয়ার সাথে সাথে তোমার জন্যে আমার এই ভালবাসা আরো বাড়বে”।

রোজ ভাবল, তার স্বামী হয়ত মারা যাওয়ার অনেক আগেই তার জন্যে গোলাপের অর্ডার দিয়ে রেখেছিল আজকের দিনটির জন্যে। সে মন খারাপ করে ভাবলো এটাই তার শেষ ভ্যালেন্টাইন্স ডে তে স্বামীর কাছ থেকে পাওয়া গোলাপের তোড়া। সে ফুলগুলিকে সুন্দর করে সাজিয়ে রাখল আর তার স্বামীর ছবি দেখেই দিনটি কাটিয়ে দিল।

এভাবে দেখতে দেখতে এক বছর কেটে গেল। এই এক বছর ভালবাসার মানুষটিকে ছাড়া একা একা থাকা রোজের জন্য ছিল খুবই কষ্টের।

ভ্যালেন্টাইন্স ডে এর দিন সকালে তার বাসায় কে জানি বেল বাজালো। সে দরজা খুলে দেখতে পেল দরজার সামনে কার্ডসহ গোলাপের তোড়া রাখা। সে অবাক হয়ে কার্ডটিপড়ে দেখল এটা তার স্বামী পাঠিয়েছে। এবার সে রেগে গেল কেউ তার সাথে মজা করছে ভেবে। সে ফুলের দোকানে সাথেসাথে ফোন করে জানতে চাইলো এই কাজ কে করেছে। দোকানদার তাকে যা বলল তা হল “আমি জানি আপনার স্বামী এক বছর আগে মারা গেছেন, আমি এও জানি আপনি আজকে আমাকে ফোন করে সব জানতে চাইবেন। আপনারস্বামী আগে থেকেই সব পরিকল্পনা করে রাখতেন। তিনি অনেক আগেই আমাকে বলে রেখেছিলেন আপনাকে যেন প্রতি ভ্যালেন্টাইন্স ডে তে আমার দোকান থেকে গোলাপ ফুল পাঠানো হয়।তিনি আগাম টাকা পরিশোধ করে গেছেন। আরওএকটি জিনিষ আছে, যা আপনার জানা দরকার। আপনার স্বামী আমার কাছে আপনার জন্যে একটিবিশেষ কার্ড লিখে রেখে গেছেন, তিনি বলেছিলেন যদি আমি কখনো জানতে পারি যে তিনি মারা গেছেন, শুধু তাহলেই যেন কার্ডটি আপনাকে দেয়া হয়। আমি আপনাকে কার্ডটি পাঠিয়ে দিব”।

রোজ যখন কার্ডটি হাতে পেল তখন সে কাঁপা কাঁপা হাতে কার্ডটি খুলে দেখতে পেল, সেখানে তার স্বামী তার জন্যে কিছু লিখে গেছে। সেখানে লিখা ছিল “আমি জানি আমার চলে যাওয়ার এক বছর পূর্ণ হয়েছে, এই এক বছরে তোমার অনেক কষ্ট হয়েছে। কিন্তু মনে রেখ আমি তোমাকে সব সময় সুখী দেখতে চেয়েছি, তোমার চোখের পানি নয়। তাই প্রতি বছর তুমি আমার কাছ থেকে ফুল পাবে।
যখনই তুমি ফুলগুলো পাবে, তখন ফুলগুলোকে দেখে আমাদের ভালবাসার কথা মনে করবে, মনেকরবে আমাদের একসাথে কাটানো সুন্দর মুহূর্তগুলোকে। সবসময় হাসিখুশি থাকতে চেষ্টা করবে, আমি জানি এটা অনেক কঠিন হবে তবুও আমি আশাকরি তুমি পারবে। প্রতি বছর তোমাকে গোলাপ পাঠানো হবে একবার করে। তুমি যদি ফুলগুলোকে কোন একদিন না নাও, তাহলে দোকানী সেদিন তোমার বাসায় পাঁচবার যাবে দেখার জন্যে যে তুমি বাইরে গেছো কিনা। শেষবার দোকানী অবশ্যি জানবে তুমি কোথায়। সে তখন ফুলগুলোকে সেখানে পৌছে দিয়ে আসবে যেখানে আর তুমি আবার একবারের মত একসাথে হব চিরদিনের জন্যে। তুমি সবসময় মনে রাখবে আমি তোমাকে অনেক অনেক ভালবাসি।প্রতিবিম্বে প্রতিবিম্বে শুধুই তুমি।”

***আপনার জীবনে কখনো না কখনো এমন একজন আসে যে আপনার জীবন কে পুরো বদলে দেয় আপনার জীবনের একটা অংশ হয়ে। যে আপনাকে উপলব্ধি করতে শেখায় যে পৃথিবীটা অনেক সুন্দর।।***

গল্পটি আপনার হৃদয়কে স্পর্শ করলে এবং ভাল লাগলে লাইক দিন এবং শেয়ার করুন RAFIQ SIR

একটি হৃদয়স্পর্শী ভালোবাসার গল্প

RAFIQ SIR

একটি ছেলে তার প্রেমিকার "আমি তোমাকে ভালবাসি, তোমাকে মিস করি" এই টাইপ মেসেজ পেতে পেতে বিরক্ত হয়ে যেত !

এক রাতে প্রেমিকার কাছ হালকা কথা কাটাকাটির পর সে মোবাইল সাইলেন্ট করে দিলো, অনেকগুলো ফোন আসলো, একটি মেসেজ আসলো, কিন্তু সে সেটি না পড়ে ঘুমিয়ে গেল।

...
পরদিন ভোর বেলায় মেয়ের মা'র ফোনে তার ঘুম ভাঙ্গল। মা বললেন, তার মেয়ে গতকাল রাতে এক্সিডেন্টে মারা গিয়েছে।

বাকরুদ্ধ ছেলেটি তখন মেসেজটি চেক করলো। লেখা ছিল --


" প্লিজ, তুমি বাসার সামনে বের হও, তোমাকে দেখতে অনেক ইচ্ছে করছিল, তাই কাউকে না জানিয়ে এত রাতে বের হয়েছিলাম, আমি এক্সিডেন্ট করেছি, আমার অবস্থা খুবই খারাপ, একবার তোমাকে দেখবো, আই এম সরি....:("


জীবনে কখনই কোন কিছু Ignore করবেন না।

ভালবাসা ডাক দিয়ে যায়

 আস্তে আস্তে চোখ খুলছে শাহানা। দৃষ্টি ঝাপসা লাগছে। কিছুক্ষণ বন্ধ রেখে আবার খুলে চোখের পাতা। আবার। আবার। দৃষ্টি কিছুটা পরিষ্কার হয়ে আসে। মাথা ঘুরিয়ে দেখে চারপাশ। ঘরটা পরিচিত লাগছে। এখানে সে আরও একবার এসেছিল। ঢাকা মেডিক্যালের ৪০৩ নাম্বার কেবিনে শাহানা।
এ নিয়ে দু’বার হল। আত্মহত্যা করতে গিয়ে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে তাকে। খুব ভীতু শাহানা। তাই গলায় ফাঁস নেয়ার সাহস পায়না। অনেকবার চেষ্টা করে দেখেছে। খুব কষ্ট হয়। তাই দুইবারই বিষ খেয়েছে সে। কিন্তু মরার মরন দেখা দিল না। এইবারও তাকে বাঁচিয়ে তোলা হয়েছে।
খুব রাগ লাগছে শাহানার। কেন? কেন মানুষের স্বাধীনতা বলে কিছু থাকবেনা? মানুষ যদি স্বাধীনভাবে বেঁচে থাকার জন্য আন্দোলন করতে পারে তবে কেন মানুষকে স্বাধীনভাবে মরতে দেয়া হবে না? শাহানা মনে মনে সিদ্ধান্ত নিল এবার বাড়ি ফিরে সে এই আন্দোলনটা করবে।
‘মরার জন্য স্বাধীনতা’ শিরোনামের ব্যানার পোস্টার নিয়ে শাহবাগে অবস্থান নিবে। শাহবাগ এখন আন্দোলনের জন্য উর্বর ভূমি। গণজাগরণ মঞ্চের কল্যাণে কেউ পাঁদ মারলেও তার বিরুদ্ধে আন্দোলনের স্থান এখন শাহবাগ। বাঙ্গালির গোড়ায় সমস্যা। কোন কিছু সম্মান করতে জানার স্বভাবে নেই।
শাহানার বিশ্বাস বেশ কিছু সমর্থক পেয়ে যাবে সে। বেশ কিছু না, অসংখ্য কিছু। কারণ দুনিয়াতে প্রেমে ব্যর্থ মানুষের সংখাই বেশি। এই দেশেও প্রেমে ব্যর্থ প্রেমিক-প্রেমিকার অভাব নেই। যাদের সাহস শাহানার মত তেলাপোকা টাইপের নয় তাদের অনেকেই অবশ্য ফাঁস নিয়ে মরে ভালবাসাকে অমর করছে অহরহ।
প্রতিদিনই খবরের পাতায় শাহানা অনেক আত্মহত্যার খব দেখে। যেসব আত্মহত্যার বেশিরভাগ কারণ প্রেম। তবে সবাই তো আর সাহসী হয় না। নিশ্চয় এমন অনেকেই আছে যারা মরতে গিয়েও তাদের বোকা পরিবারের সদস্যদের জন্য মরতে পারছে না। তারাও তো শাহানার মত মৃত্যুর স্বাধীমতা চায়।
শাহানা নিজেকে বিপ্লবী ভাবতে থাকে। ভীতু বিপ্লবী। তাই বিষ খায়। কিন্তু আফসোস মরন হয় না তার। নাছোড়বান্দা মানুষগুলো বারবার তাকে বাঁচিয়ে তুলে। ওরা কেন বুঝে না, অমিকে ছাড়া তার পক্ষে বেঁচে থাকা অসম্ভব। না, এইবার একটা কঠিন ব্যবস্থা নিতেই হবে। মরতে তাকে হবেই হবে।
****
ঘরে একজন নার্স ঢুকল। তার হাতে কিছু জিনিসপত্র। মনে হচ্ছে ওষুধ। এই মহীলাকেও সে আগেরবার দেখেছে। শাহানার চোখের দিকে তাকিয়ে চমতকার এক হাসি দিল নার্স মহীলা। হাসির ভাব এমন যেন তিনি রাজ্য জয় করে কোন সুন্দরী রাজকন্যাকে বিয়ে করতে যাচ্ছেন।

মহীলার প্রতি ভীষন রাগ লাগছে শাহানার। ইচ্ছে করছে মাথার টুপিটা খুলে চুল্গুলো টেনে চিড়ে ফেলতে। এই হারামাজাদীইতো গতবার তার চিকৎসা করেছিল। নিশ্চয় এবারও করেছে। হারামাজাদী। মনে মনে গালি দিল শাহানা।
নার্স এসে শাহানার পাশে বসল। হাত রাখল শাহানার মাথায়। তার মুখে এখনও মিষ্টি হাসি।
-ওয়েলকাম শাহানা।
-কোথায়? অবাক হয়ে নার্সের ওয়েলকামের স্থান জানতে চাইল শাহানা।
-পৃথিবীতে। আমরা ভাবিনি এবার তোমাকে বাঁচানো যাবে। আমার মনে হয় তোমার বাবার দোয়াতেই আল্লাহ তোমাকে ফিরিয়ে দিয়েছে। নার্সের মুখে হাসি।

মুখভর্তি থু থু আসছে শাহানার। ইচ্ছে করছে নার্সের মুখেই ছুঁড়ে মারতে। কিন্তু পারছে না এই জন্য, কোন হাস্যোজ্জল মানুষকে অপমান করা যায় না। যে কারণে অমিকেও অপমান করতে পারেনি সে। নার্স শাহানার হাত ধরল। তার হাতে কি যেন গুঁজে দিল মহীলা।
-তোমার আব্বা দিয়ে গেছেন।
-কী এটা? জানতে চাইল শাহানা।
-আমি তো জানি না। আমাকে বললেন তোমার জ্ঞান ফিরলে কাউকে যেন ঢুকতে না দেই। আর এই বাক্সটা তোমাকে দিতে বললেন। তোমার জন্য তোমার আব্বার উপহার। এটা দেখার পর তুমি যখন ডাকবে তখন সবাই তোমাকে দেখতে আসবে।

-আব্বা কই? -সে তো জানি না। তবে উনি ওয়েটিং রুমে নেই।
-ওখানে কারা আছে?
- তোমার ভাই, ভাবি, তার ছেলে মেয়েরা, আরও কয়েকজন। আমি চিনি না। নাও, এই তোমার বাক্স। খুলে দেখ এখানে কী। আমি বাইরে আছি। দশ মিনিট পর ফিরছি। বেরিয়ে গেলেন নার্স। শাহানা বাক্সটা খুলল খুব অবাক হয়ে।

সে আন্দাজ করতে পারছে না, আত্মহত্যা করতে যাওয়া মৃত্যুপথযাত্রী মেয়েকে বাবা বাক্সে করে কী উপহার দিতে পারে! একটা কাঠের বাক্স। খুব সুন্দর কাজ করা। দেখে মনে হয় পানের কৌঠা। শাহানা মুখটা খুলতেই সাদা কাগজে মোড়ানো ছোট্ট একটা কি যেন গড়িয়ে পড়ল। একটা সাদা কাগজও দেখা যাচ্ছে। মনে হচ্ছে চিঠি। আব্বার হাতে লেখা।
চিঠি পড়ছে শাহানা।
মা রে...
জীবনে মানুষের অনেক রকম পরাজয় থাকে। কিছু পরাজয় একেবারে অস্থিত্ব নিয়ে লড়াই করে। তোর আত্মহত্যা করতে যাওয়া আমার জন্য তেমনই পরাজয়।

বিগত ২৭ দিনে তুই দুইবার বিষ খেয়েছিস একটা ছেলের জন্য। এটা কোন ভাল কথা হতে পারে না। তোর মা নেই আজ ছয় বছর। কই একদিনও তো বললি না-আব্বা মায়ের জন্য কষ্ট হচ্ছে। আমি এক চিমটি লবন খাব।
অথচ একটা ছেলের জন্য তুই দুইবার দুই বোতল বিষ খেয়েছিস। তোর মায়ের চাইতে ওই ছেলেটা বেশি কাছের মানুষ হয়ে গেল রে মা? এমন কোন কষ্ট নেই যা তোর মা তোর জন্য করেনি। তুইতো ডাক্তারি পড়ছিস, জানার কথা। সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে একজন মা ৭২ বার মৃত্যুর মুখোমুখী হয়। তোর ভালবাসার ছেলেটা তোর জন্য কয়বার মরতে চেয়েছে? কত রাত গিয়েছে তোর মায়ের চোখের পাতা এক হয়নি।
কত দিন গিয়েছে তোর মায়ের সময়ের খাওয়া সময় হয়নি। তোর জন্য। মারে ওই ছেলেটা কয়দিন তোর জন্য না খেয়ে পার করেছে? কয়দিন নির্ঘুম থেকেছে রে? তোর মা যখন মারা যায় তখন তুই দশম শ্রেণীর ছাত্রী। স্মৃতি নষ্ট হবার কথা নয়। একবার মনে করে দেখ মায়ের ভালবাসাটা কত মিস করছিস।
তোর ভাইয়ের কথা বলি। আজ সে আমার হাত ধরে কাঁদছিল আর বলছিল-আব্বা তুমি এবার হজ করতে যাবে। ক্বাবা শরীফ স্পর্শ করে আল্লাহর কাছে দোয়া করবে আমাদের শাহানাকে যেন ভাল করে দেয়। তোর ভাবি, পরের মেয়ে। কাল তাহাজ্জুদের নামাজ পড়েছে তুই যেন ফিরে আসিস। সোমা, রাইমা-ছোট ছোট বাচ্চাগুলো বারবার বলছে-ফুপ্পির কাছে যাব, ফুপ্পির কাছে যাব।
আর তুই কোথায় যেতে চাইছিস রে মা? কোথায় যাবি তুই? তিন বছর ধরে একটা ছেলেকে ভালবাসিস তুই? সে তোকে প্রত্যাখ্যান করেছে। তাই বলে মরে যেতে হবে! তুই মরে গেলে সেকি তোর সঙ্গে যাবে? তার জীবন কী আটকে থাকবে? মানুষের জীবনে ভালবাসা খুব প্রয়োজনীয় বিষয়, কিন্তু একমাত্র প্রয়োজনীয় না। তবুও চাইলে যা।
মানুষকে আটকে রাখা যায় না। তুই মরতে চাইলে তোকে বাঁচিয়ে রাখা কীভাবে সম্ভব! বাক্সের মধ্যে একটা বিষের শিশি দিয়ে দিলাম। ভাল বিষ। যদি পারিস এতগুলো মানুষের ভালবাসা পায়ে ঠেলতে তবে ওটা খেয়ে নিস। কেউ দেখবে না। নিশ্চিন্তে মরতে পারবি। সত্যি বলছি আমি আর তোর দেখা চাই না। আমি আমার শাহানাকে চাই। আমার ডাক্তারি পড়ুয়া শাহানাকে চাই।
যার হাত ধরে জোছনা দেখি আমি সেই শাহানাকে চাই। যাকে আমি আজ ২৬টা বছর মা বলে ডাকছি। প্রেমে অন্ধ মেয়ের সাথে আমার পরিচয় নেই। আমি আর ওই মুখ দেখতে চাই না। তার জন্য কাঁদতেও চাই না। ভাল থাকিস। তুই ফিরে এলে দেখা হবে রে মা...
ইতি শাহানার অসহায় ছেলে
চোখের পানিতে ভাসছে শাহানার গায়ে ছড়িয়ে দেয়া সাদা চাদর। এত বোকা সে। একজন মানুষের ভালবাসার জন্য এতগুলো মানুষকে অপমান করতে চায়? শাহানার খুব ইচ্ছে করছে আব্বাকে দেখতে। সে নার্সকে ডাকতে যায়। গলায় আওয়াজ নেই। বিড়বিড় করে তবু বেরিয়ে আসে...কেউ শুনছেন, আমি আব্বার কাছে যাব...আমি আমার ছেলের কাছে যাব...প্লীজ কেউ শুনছেন???

ভালবাসা এত কষ্ট কেন?

বিষণ্ণতা এক অদ্ভুত রোগ, যখন পেয়ে বসে, মানুষের মনটা কেমন স্যাঁতস্যাঁতে হয়ে যায়, কিছুই ভাল লাগে না, কিংবা ভাল লাগার অনুভূতি গুলো
RAFIQ SIR
সাময়িকভাবে বিশ্রাম নিতে শুরু করে। কোন কারণ নেই, কোন ব্যাখ্যা নেই, তবুও এক ভূতা অনুভূতি কেমন করে চারপাশের সবকিছুকে কেমন বিরক্ত এবং অসহনীয় করে তুলে তা বলে বা লিখে বুঝনো কঠিন। মানুষ প্রাণিটি খুব জটিল, মস্তিষ্ক নামক এক স্লট মেশিন কয়েন ছাড়াও অবিরাম খেলে যায়। বসে থাকার মতো ক্লান্তি নেই, দরকারের অদরকারের সব চিন্তা সে করতেই থাকে। আধুনিক বিজ্ঞান বলে মন বলে আলাদা কিছু নেই, মস্তিষ্কেরই একটা অংশ কিন্তু আমরা মনকে আলাদাভাবেই ভাবতে পছন্দ করি। মনটা বড়ো বর্ণচোরা। নানা রকম বর্ণ ধারণ করতে পটু। এই রঙ হলুদ,নীল বেগুনী কিংবা আকাশী নয়, অদৃশ্য হাজার রকম রঙের খেলা করে মনে। আনন্দ মনকে বাসিয়ে তুলে হাজার রঙের সমুদ্রে। দুঃখবোধ কেমন করে সেই সমুদ্রকে ছোট করে করে নিয়ে আসে পুকুরের কাছে। বিষণ্ণতা আরো কঠিন অবস্থা। পুকুরের পানি একদম নীরব, ঢেউ খেলে না। বিষণ্ণতা ভাঙাতে কারো ঢিল ছোড়া চাই। কিন্তু এমন সব পরিস্থিতে ঢিল নিয়ে কেও বসে থাকে না বলেই এই সময় কেমন করে জানি ক্লাসিক্যাল পদার্থবিদ্যার সমস্ত সূত্রকে ভুল প্রমাণিত করে দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হতে থাকে। প্রতিটি মুহূর্তকে আলাদা আলাদা করে চেনা যায়। কোয়ান্টাম মেকানিকস এ এমন একটা ব্যপার আছে, পানির ধারাকে সরু করতে করতে এমন এক সময় আসে যখন তা আর ধারা থাকে না, ফোটায় পরিণত হয়, আলোর ব্যাপারটাও এমন, উৎস থেকে প্রবাহ সরু সরু করতে করতে এমন অবস্থায় আসে যখন আলোকে আর প্রবাহের ছকে ফেলা যায় না, তখন কণায় পরিণত হয়,যাকে ফোটন বলে এবং তখন এদেরকে গণা হয়, একটা আলো, দুইটা আলো এভাবে। বিষণ্ণতায় সময় গুলোকে এভাবে আলাদা আলাদা ভাবে গণা যায়। প্রতিটি সময়ের একক গুলোর বিস্তৃতি এতো এতো বিশাল যে প্রত্যেকটির মাঝে আরও অদ্ভুত সব ব্যাপার থাকে। প্রতিটি মুহূর্তেই অদ্ভুত সব চিন্তা রাজি তোমাকে হুল ফুটিয়ে যাবে, তুমি হয়তবা চিৎকার করবে মনে মনে, কিন্তু তোমার এই চিৎকার কেও বুঝতে পারবে না। তুমি হয়তবা আশা করবে, কেও তোমার সেই ছোট্ট পুকুরে ঢিল ছুড়ে প্রবাহের সৃষ্টি করবে, কিন্তু তা কখনোই হবে না, আরো কঠিন হতাশা সৃষ্টি হতে থাকবে। এ এক অদ্ভুত ব্যাপার। অথচ আনন্দের ব্যপার গুলোতে এই ব্যপার গুলো থাকে না। আইনস্টাইন ভর করে বসে আনন্দময় সময়গুলোর ঘাড়ে, বিশাল সময়ে বিস্তৃত সমুদ্রে তোমার নৌকা মুহূর্তেই অচিন্তনীয় দ্রুততার সাথে পার করিয়ে নিয়ে যায়, ঠিক বুঝেই উঠা যায় না, সময়ের প্রসারণ তখন উল্টে থাকে, অনেক বিশাল সময় কেমন করে এতো ছোট হয়ে যায় সেটাই আশ্চর্য।  এ এক কঠিন ধাঁধাঁ।
মাঝে মাঝে মনে হয়, এই আমি, আমার অস্তিত্ব, অনর্থক। আমি বসে আছি, অযথা। তবে অস্তিত্ব এবং অনস্তিত্ব নিয়ে দ্বিধা থেকে জন্ম নেয় নতুন এক ধারণা। আমাদের এই অস্তিত্বের সমান্তরালে হয়তবা আছে আরও সব অস্তিত্ব। অস্তিত্ব সরলরেখার মতো এগিয়ে চলে অনস্তিত্বের সন্ধানে। এজন্য আমি আমার আমিকে কখনো দেখতে পাই না। নিজেকে বড়ো দেখতে ইচ্ছে করে। আমি হয়তবা বসে বসে গভীর বিষণ্ণ হয়ে অদ্ভুত সব ভাবছি, আর আমার দ্বিতীয় অস্তিত্ব হয়তবা আমার এই অবস্থা কিছুক্ষণ আগেই পার করে এসেছে, সুতরাং সে আগে থেকেই জানে, কিভাবে সময়ের অদ্ভুত প্রসারণ থামিয়ে দেওয়া যায়। তার কাছ থেকে জেনে নিয়ে আমিও থামিয়ে দেবো আমার প্রসারণ। কিন্তু আবার ভয়ও আছে, দুটি অস্তিত্ব সামনা সামনি দেখা হলে হয়তো নতুন অস্তিত্বের প্রবাহে সৃষ্টি হবে। নতুন অস্তিত্বে হয়তো, এই আমি নূতন হয়ে যাবো, আমার আমি তখন নতুন মাত্রা পাবে, কিন্তু আগের আমিটাকে খুব মিস করতে শুরু করবো। তখন শুরু হবে আবার নতুন সময়ের প্রসারণ। আবার সেই হুল ফুটানো আত্নচিৎকার। এই অদ্ভুত লোপ আরো কঠিন সময়ের মধ্যে নিয়ে আমাকে ফেলে দিতে পারে।
না, আর হচ্ছে না, অস্তিত্বের অন্তর্ঘাত খুবই অসহনীয়।
বিষণ্নতার কবিতা লিখতে ইচ্ছে করে -
নিস্তব্ধতার আধার আর জেগে থাকার সারশূণ্যতায়
আমাকে ঘিরে ক্রমেই বেড়ে উঠছে এক বুক হতাশা।
বেচে থাকার অবিচ্ছেদ্য অঙ্গগুলো ক্রমশ নির্জীব ধাবিত,
জাগতি আলোময় কোলাহল গুলো কেমন দূর থেকে
দূরে বহু দূরে যেতে যতে নিঃশেষ হতেছে প্রায়।
মাঝে মাঝে বেদনার হুলফুটানো আত্নচিৎকার ভেসে যায় দেহের প্রতিটি শিরা উপশিরায়।
আর ঘনকোয়াশার রঙহীন আকাশ মনের অজান্তেই
ফেলে আসা দিনের স্মৃতির মতো বাররার ঘিরে রাখে কোন অজানায়।
অলস ভাবনা গুলোর ক্লান্তিতে যেন বেঁচে থাকায় দায়।

একটা স্বপ্ন ছিল

আজ সত্যিই আমি অপরিচিত নিজের কাছে
হারিয়ে ফেলেছি আমি, আমার আমি কে
ছোট্ট কিছু স্বপ্ন ছিল বাস্ততা স্বপ্ন গুলো কে বদলে দিল
আজ কষ্ট হচ্ছে না , দুঃখও নেই আমার ,
না হয় হেরে গেলাম জীবনের কাছে এই তো ??
একদিন আমিও তোমার কাছে স্মৃতি হয়ে যাবো
ভুল করেও হয়তো মনে পরবে না ,
ভাববে না কোন একজন ছিল
যে তোমায় তার পৃথিবী ভাবতো ,
হয়তো কিছু পুরনো স্মৃতি ভেবে
হাজারো নতুন স্মৃতির চাঁদরে ডেকে দেবে আমাকে
কষ্ট নেই তুমি ভুলে যাবে আমায়
হয়তো বাস্তবতা তোমায় বদলে দিয়েছে
তুমি নতুন করে স্বপ্ন দেখতে শিখে গেছ ।
সত্যিই তোমার তুলনা তুমি
খেলেছ আমার আবেগ গুলো নিয়ে
বদলে দিয়েছ কষ্টের রং দিয়ে আমার সোনালি স্বপ্ন গুলো ।
তবুও তুমি ভালো থেকো
যতটা ভালো থাকলে আর আমায় মনে পরবে না
image

বেশ্যা

“ঘর ছাড়িলে নারী হয় বেশ্যা, পুরুষ হয় বাদশা”- এইটা পুরান কথা হইলেও, এখনো এর সত্যতার প্রমাণ কম-বেশি আমরা পাই।
তবে বাদশা হওয়া যতো কঠিন, বেশ্যা হয়া ততই সহজ। এছাড়া বর্তমানে মেয়েদের বেশ্যা হতে আর ঘর ছাড়ার প্রয়োজন হয়না। ঘরে বসে বসেই বেশ্যামী চর্চা করার যতো উপাদান-সরঞ্জাম প্রয়োজন তার সবটাই হাতের নাগালেই থাকে….. খুঁজলে এখন ঘরে ঘরে বাদশা পাওয়া না গেলেও বেশ্যা পাওয়া যাবে ঠিকই। সমাজ যেমন আধুনিক, বেশ্যারাও আধুনিক। দামি গিফট, কর্মক্ষেত্রে প্রমোশন, বেতন-ভাতা বৃদ্ধি ইত্যাদি হল আধুনিক বেশ্যাদের পেমেন্টের কয়েকটা উদাহরন।
আবার অনেকে শুধুমাত্র নিজকে পরিচিত করার জন্যে বেশ্যার খাতায় নাম লেখায়। এমনো দেখেছি- মর্যাদা সম্পন্ন কর্মস্থল ছেড়ে, শরীর দেখিয়ে পোজ দিয়ে তোলা ছবি ফেসবুকে পোস্ট করে বলে “ইট’স মি।”
এখন গবেষণার বিষয় হয়ে দাড়িয়েছে যে, মেয়েরা কেন অধিকারে বেশ্যানুসারী হয়ে বেশ্যাবৃত্তির পথে হাটছে।

অসহ্য

হইছে কি আমার. . .
এরকম ক্ষাপা মাইন্ডের হলাম কবে থেকে?
সবার সাথে খালি ঝগড়াই লাগে ।।নাকি মানুষগুলা অন্যকিছু বোঝাতে চায় ।।চাইলে বলতে পারে ।।কিছুই মনে করবো না ।সম্পর্কগুলোতে আজ ঘুনে ধরেছে যা সামান্য হাত পাখার বাতাসেই নড়বড় করে ।। আসলে সত্যিই আমি একটা গাধা ।বড় ধরনের গাধা ।জানি মরীচিকা তবু তারই পিছনে ছুটছি ।। তবে আজ আমি বড় ক্লান্ত ।।ছোটার জন্য যে শক্তির প্রয়োজন তা ফুরিয়ে যাচ্ছে ।।তাই হয়ত আর ছুটতে পাবনা ।।যা কখনো আমার ছিলানা তা না পাওয়াই থাক না ।।উপর ওয়ালার সাথে তো আর যুদ্ধ ঘোষনা করতে পারিনা ।। হয়ত এটা ওনারই ইচ্ছা ।।ওনি আমাকে যা দেননি বা দিবেন না বৃথা তা পাওয়ার আশা করা কেমনজানি।।যাও সবাইকে মুক্তি দিলাম ।।আজ থেকে সবাই মুক্ত ।তবে এ মুক্তি আমি কোনোদিন চাইনি ।

আচ্ছা ভালবাসা এত কষ্ট কেন

এই পৃথিবীর বেশীরভাগ ভালবাসাই অপাত্রে পরে। একতরফা ভালবাসা যে কি কষ্টের এটা যে ভালবাসছে শুধু সেই জানে। ধরেন একটা ছেলে একটা মেয়ে কে খুব ভালবাসে। কিন্তু মেয়েটা ঐ ছেলেটার থেকে দেখতে খুব NICE, মেয়েটার আর্থিক অবস্থাও ঐ ছেলের থেকে অনেক অনেক ভালো।
বা ছেলেটা থাকে বাংলাদেশে আর মেয়েটা প্রবাসী। তাইলে এই ভালবাসা কি কখনো সার্থক হবে ? না হবে না। ছেলেটা হয়ত ঐ মেয়েটার পিছে ঘুরতে ঘুরতে তার স্যান্ডেলের ফিতা ছিড়ে ফিলবে কিন্তু মাগার কামের কাজ কিছুই হবে না। শুধু জনম জনম তরে কাদিবো। তাইলে এই যে ছেলেটার হৃদয়ে ঐ মেয়েটার প্রতি এত তীব্র ভালবাসা তাইলে এই ভালবাসার কি হবে ? শক্তির নাকি কোন ধ্বংস নাই তাইলে এই তীব্র ভালবাসার কি ধবংস আছে ? নাকি এই গভীর ভালবাসা ইথারে ভেসে যাবে। আমার খুব জানতে ইচ্ছা করে এটা।
আকলিমা,আমার জীবনে প্রতিটা সকাল আসে শুধু তোমাকে ভালবাসার জন্য। আচ্ছা ভালবাসা এত কষ্ট কেন ? এত তীব্র যন্ত্রণা যদি ভালবাসায় থাকে তাইলে এই তীব্র ভালবাসার অনুভূতি মানুষকে কেন দেয়া হল ? তেরি ঈশকে মে মার যাওয়াঙ্গা তেরী ঈশকে মে ফানা হয়ে যাওয়াঙ্গা।
আকলিমা! তোমার দু চোখ যেন নেশার কূপ! যেখানে আমি হারিয়ে যাবো দীর্ঘ সময়ের জন্য গতির ঘূর্ণনের মত আমি ঘুরবো তোমার দু চোখের নেশার জগতে।
 আকলিমা! আমার ভিতর এক বোধ কাজ করে ,আমি তারে পারি না এড়াতে ,আমি চলি সাথে সাথে সেও চলে ,আছাড় মারিতে চাই শুণ্যে মাথার ভিতর ঘুরে।
আকলিমা! তুমি হচ্ছ আমার জীবনের সেই বোধ। আর তুমি ছিলে; আর তোমার মুখের রুপ আমি কত শত শতাব্দি খুজি না দেখি না। কোথায় রয়েছ জানি, তবুও তোমারে ফেলেছি হারিয়ে; পথ চলি ঠেউ ভেজা পায়ে।
আকলিমা! আমার সারা শরীর যেন তোমার ভালবাসায় টুকরো টুকরো হয়ে যাচ্ছে।
আকলিমা! আমি ছিলাম সৌখিন আসবাবপত্র; তোমার বিরহে আমি যেন বিবর্ণ শুস্ক হলুদ তৃণলতা !
আকলিমা! কোথায় রয়েছ জানি তবুও তোমারে ফেলেছি হারিয়ে।
আকলিমা! আমার  দৈহিক অবস্থান আমার ঘরে কিন্তু আমার আত্মিক অবস্থান এখন পুরাটাই  শুধু তোমার বাড়ির আঙ্গিনা জুড়ে।
ইস আকলিমা! আমি যদি এই পৃথিবীতে মানুষ না হয়ে তোমার পোষা বিড়াল ছানা হয়ে জন্ম নিতাম তাইলে সারাদিন তোমার হাতের ছোয়া পেতাম। শয়নে স্বপনে অধ্যয়নে জাগরনে নাম শুধু নাম তাঁর নাম।
আকলিমা ঐ দ্বীপে কেউ নাই কিছু নাই আছে শুধু আকাশ পাতাল ব্যাপী তোমার সৌন্দর্য্যের ঠেউ মেঘ নয় বৃষ্টি নয় চাই শুধু তোমার সেই স্নিগ্ধ আদ্রতা।
আকলিমা! আমার যদি ক্ষমতা থাকতো তাইলে আমি সারাদিন স্থাপত্য হয়ে তোমার বাসার সামনে দাঁড়িয়ে থাকতাম।
আকলিমা! তুমি শুধু একবার তোমার ঘরের পাশের বারান্ন্দায় খোলা চুলে দাড়াও আর আমি তোমাকে শুধু এক বার দেখেই চলে আসবো।
আকলিমা! নয়ন তোমারে পায় না দেখিতে তবুও রয়েছ নয়নে নয়নে!
আকলিমা! আমার কোন যোগ্যতা নাই আমার শুধু একটাই যোগ্যতা যে My Life is Devoted For You.

গতকালের চেয়ে অনেক বেশি ভালোবাসি আজ,
কাল ভালবাসবো অনেক বেশি আরও ।
ভুলে যেতে বলেছিলে তোমায়, হুম্মম…এ
জীবনে তো আর সম্ভব না, আর একবার জন্ম
নিলে চেষ্টা করে দেখতে পারি । যদি প্রশ্ন
করো কেন এতোটা ভালোবাসি !!! যা প্রকাশ করার
ভাষা ,পরিমাপ করার স্কেল অথবা কোন কারন
আজো পাইনি ।

উত্তর একটাই …”ভালবাসতে ভালোবাসি….

মানুষ নই

একটা সময় মানুষ বলে গণ্য হতাম;
হাসতে পেরে মনের কোণে রং ছড়াতাম,
কাঁদতে গিয়ে ঠোঁটখানি আর গাল ফোলাতাম,
চলতে গিয়ে পথের মাঝে হোঁচট খেতাম,
ঘুমের ভেতর স্বপ্নবাড়ি ঘুরতে যেতাম,
বৃষ্টি এলে কয়েক ফোঁটা বৃষ্টি ছুঁতাম।
আজকে আমি মানুষ নই আর;
দুঃখের ভীড়ে নেই অবসর একটু হাসার,
অভিমানে শুকিয়ে গেছে কান্না আমার,
স্বপ্নদেরও ইচ্ছে এখন মৌন থাকার,
এমন করেই সব কারণের মৃত্যু হল
এই আমাকে মানুষ ভাবার।

বিদায়!

untitled

আমি তো ভালোই ছিলাম রাতের নীরবতায় নিজেকে লুকীয়ে রেখে
ছিল আমার এলোমেলো একটা জীবন
ছন্নছাড়া এই জীবন নিয়ে
আমি তো বেশ আছি
তবুও উড় মনে আজ হাজারো ভাবনা তোমাকে ঘিরে
আমার আমি কে নতুন করে সাজানোর
এক ইচ্ছার ডিঙ্গি নায়ে আমি কেন সাগর পাড়ি দিচ্ছি ??
কেন আমি আজ বাস্তবিক চিন্তা থেকে নিজেকে
এত দূরে রেখেছি ??
হয়তো আমি তোমায় এত ভালোবাসি বলেই ??
মনের জমানো আবেগ গুলো তো আমি সেই কবেই শ্বাসরোধ করে মেরে ফেলেছি
তবে কেন আজ ওরা আবার পুনর্জীবিত ??
তবে কি আমি আজও তোমায় ভালোবাসি ??
মাঝে মাঝেই কিছু প্রশ্নের বিষাক্ত তীর
এ মনের আবেগ গুলো কে ছিন্নভিন্ন করে দেয় ,
ভাবনার অজান্তেই এ মনের আকাশ টা ঢেকে যায় হারিয়ে যাবে তুমি নামক এক
বিশাল কালো ঘুটঘুটে চাঁদরে ।
এই অন্ধকার আজ আমায় কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছে
তবুও এ অবাধ্য ভাবনা শুধু তোমাকেই ভাবে
কারণ আমি যে সত্যিই আজও তোমায় ভালোবাসি

আমাকে দাও
দাওনা আরও ক’টা দিন , আস্ত রাত্রি ;
একদিন দশ দিনের মত করে ।
একটু উল্টে-পাল্টে , আরও একটু খুঁড়ে দেখি
হাজারো অজানা দিক-বিদিক ।
অসহ্য এ ভারাক্রান্ততা ,
অসহ্য এত্ত এত্ত না জানা ভালোলাগা ভালোবাসা
বাঁধাহীন অসহ্য যন্ত্রণা ।

ভাল থেকো সারাটা জীবন

প্রিয়

***** কেমন আছ জানিনা জানার ইচ্ছে হলে ও জানতে পারিনা, একটা সময়ই ছিল তোমাকে না দেখে থাকতে পারতাম না , তা ওই সময়ই একটা ব্যাপার ভাল ছিল তোমাকে না ভেবে থাকতে পারতাম।
এখন তোমাকে না দেখে থাকতে পারি কিন্ত না ভেবে থাকতে পারি না কিন্তু কেন ?
জানি না আর কখনো জানার চেষ্টা ও করি না কেন করবো কার জন্য করবো যাকে একা রেখে চলে গেছ অনেক দূর, কি ভেবেছিলে আমি ভেঙ্গে যাব ভেঙ্গে দিবে আমার সব কিছু কি ছিল তোমার ইচ্ছা কষ্ট দিয়ে আমাকে শেষ করে দিবে কিন্তু তমি কি করে ভুলে গেলে আমি জন্মের পর থেকেই জ্বলছি তুমি আর নতুন করে কি জ্বালাবে ।
আমার লেখা গোলা তুমি পড়বে জানি হয়ত কোন একদিন  তুমি পড়বে কিন্তু কিছু বলবে না কারণ তোমার বলার কিছু নেই থাকবেই বা কি করে যা বলার ছিল টা তো বলেই দিয়েছ আজ একটা গান অনেক মনে পরে
জীবন মানে পদ্মা নদী
থেমে সে তো থাকে না
তোমাকে ছাড়া আমি কষ্টে আছি
এমন কখনো ভেবনা
তুমি যদি ভাল থাক আমাকে ছাড়া
আমি কেন পারব না
তোমার কি কখনো মনে পরে এই গানটা শুনি বলে তুমি অনেক রাগ করতে ,
আর আমি তোমাকে বলতাম যে কি করবো তুমি যদি আমাকে ছেড়ে কখনো চলে যাও সেই সময়ই গানটা গাইব তাই শিখে রাখি, তুমি আমার মুখ চেপে ধরে বলেছিলে এক মাত্র মরন ছাড়া তোমাকে আমাকে আলাদা করতে পারবে না ।
সেই তুমি আজ আমাকে চেন না দেখে না দেখার মত করে চলে যাও কিন্তু কেন ?
আমি কি তোমার কোন ক্ষতি করছিলাম ??
তোমাকে তো শুধু ভালবেসেছিলাম
চেয়েছিলাম সারাটা জীবন তোমার বুকে মাথা রেখে কাটাতে, চেয়ে ছিলাম তোমার হাতে হাত রেখে জীবন পার করে দিতে কিন্তু কিছুই হল না আর হবে ও না।
আমার লেখা হইত এখানেই শেষ কিন্তু জীবন এর শেষ কোথাই ??
যানিনা তবে সেই অপেক্ষাই আছি যাবার আগে এক নজর তোমাকে দেখার আসাই
একবার চখের দেখা দেখব বলে হইত বেছে আছি
দরদিয়া তুমি দাওনা দেখা থাকলে কাছা কাছি
ভাল থেকো সারাটা জীবন দোয়া করি, তোমার উপর আমার কোন অভিমান কেই নেই কোন রাগ তোমাকে ভালবাসার আগে এমন কোন সর্ত তো ছিল না যে তুমি আমার হবে, সারা জীবন আমার পাশে থাকবে তবে কেন তোমার ওপর অভিমান করবো বল,
ভুলে গেছি তোমার দেয়া সব কষ্ট
ভুলতে পারিনি তোমাকে
ভুলে গেছি তোমার সব কথা
ভুলতে পারিনি তোমার প্রেম —-ইতি আমার আমি
রাস্তার পাশের ডাস্টবিন দেখেছ কখনো?
খুব দুর্গন্ধ না?
কী বিশ্রি দেখতে,ঘৃণা চলে আসে।
কিন্তু এখন আর ঘৃণা লাগেনা তেমন ।
কারন-তোমাকে দেখলে আরো বেশি ঘৃণা চলে আসে।

কাল পানির ড্রেনে গোসল করা কাক দেখেছ?
খুব খারাপ না?
কী নোংরা দেখতে,ঘৃণা চলে আসে।
কিন্তু তাকে আর তেমন ঘৃণা লাগেনা আজকাল।
কারন-তোমার কথা মনে হলে আমার আরো বেশি ঘৃণা লাগে।
নর্দমায় মরে থাকা কুকুর দেখেছ?
খুব পচা না?
কী বীভতস দেখতে,ঘৃণা চলে আসে।
কিন্তু তার প্রতিও আমার ঘৃণা কমে যাচ্ছে এখন।
কারন-তোমার কথা ভাবলে আমার আরো বেশি ঘৃণা লাগে ।
কিছু কিছু শব্দ আছে জানিনা শুনেছ কিনা।
গালাগালির চেয়েও ভয়ংকর।
শুনলে কানে হাত দিয়ে চেপে ধরতে হয়,বমি চলে আসে।
কিন্তু আজকাল সেগুলো শুনলেও তেমন কোন ভাবান্তর হয় না ।
কারন-তোমার মিথ্যা কথাগুলো মনে পড়লে আমার ঘৃণা আরো বেড়ে যায় ।
বুড়িগঙ্গার দূষিত পানি
বস্তির পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা
হোটেলের খাবারে দেয়া শিয়ালের মাংশ
ভুতুরে সিনেমায় গলে যাওয়া মানুষে লাশ
যত কিছুই দেখে ঘৃনা আসুক না কেন,
আমার কিছুই হয় না একটুও।
তোমার কাছে সব ঘৃনাই তুচ্ছ।
তবে আজকাল এটা বুঝতে পারি যে,
তোমাকে ঘৃণা করতেও আমার খুব বেশি ঘৃণা হয়।

হয়ত অন্য কেউ

misty

এই তীব্র স্থিতির মাঝে গতিটাকেই কেমন বেখাপ্পা লাগে।
ভেবে দ্যাখো, আমার শব্দগুলোও কি বেখাপ্পা আর অদ্ভুত?
আমার শত-সহস্র বাক্যগুলো, অনুভূতিদের ছড়িয়ে থাকা কত!
তবু আমার গভীরতম কথা নাকি প্রকাশিত হয় না।

আমার আবেগের গহীনতম শব্দগুলো নাকি অর্থ বয়ে নেয় না।
ছোট্ট এই জীবনের যেখানেই হাত বাড়াই, আমি হেরে যাই।
এই তো কতবার বদলেছি দেখার বাতায়ন, বদলেছি দৃশ্যপট,
অথচ কেন বারবার লজ্জায় নুয়ে পড়তে বাধ্য হই অসহায় হয়ে?
অদৃশ্য পিঞ্জরের এপাশে আমার একলা বসবাস অহর্নিশ।
জানি এই ফেলে যাওয়া দুপুর আর কোনদিন আসবে না।
জানি এই কার্তিকের সন্ধ্যার বিষাদের কবর এখানেই।
জীবন খুবই ক্ষুদ্র, যে যায়, যারা যায়; চিরতরেই যায়।
হাজারবার ভেবেছি জীবনে এই তো শেষ, এই তো!
এই মহাকাব্যের যেন শেষ নেই। প্রতিটি শব্দ বয়ে যায়
তপ্ত অশ্রুধারা আর বক্ষপিঞ্জরের ভেতরে অগ্ন্যুৎপাতের পর।
এ আমার অনুভূতিমালা, আমার নিঃশব্দ বচন, নিশ্চুপ কোলাহল।
বলো তো, বছরের পর বছর ধরে বলা আমার শব্দগুলো
কেমন করে এতটা অর্থহীন বোধ হতে পারে?
কী গভীর যন্ত্রণা সে প্রতিটি শৃঙ্খলাবদ্ধ আবেগের প্রকাশে
তার হিসেব হবে কোন খাতায়? কবে, কোথায়, কেমন করে?
শূণ্য দিয়ে পূর্ণ করি আমার রিক্ততার ডালা।
অঘ্রাণে সেই মেঠো পথের গন্ধে আমার জীবনটা,
পরাবাস্তব জগতের স্বপ্নগুলো, তিক্ত আর কটু স্বাদ;
অনবরত মুচড়ে ওঠা বুক, হেসে ভুলে যাওয়া।
এমনি করে ভুলে যেতে যেতে ক্লান্ত হই, তবু উন্মত্ত হতে পারিনা।
হাসিমুখ পথ চলি, কিছুমিছু জোগাড় করার ন্যুনতম প্রচেষ্টা।
আমি রিক্ত ছিলাম, আছি, থাকবো হয়ত। আমার রিক্ততা
আমাকে করেছে পড়ে থাকা মেরুদন্ডহীন কেঁচোর মতন।
হয়ত একদিন মানুষ হবো, একজন সত্যিকার মানুষ।
ক্ষতবিক্ষত দেহ-প্রাণের আমি নই, সেই শৈশবের আমি।
মেঠোপথে ভেজা শিশিরে পা গলিয়ে ধনেপাতার ক্ষেতে পাশে
নানীর আঙ্গুল ধরে আনন্দে কেঁদে ফেলা সেই আমার মতন কেউ…
হয়ত সে কেবলই স্মৃতি, অথবা বিভ্রম?
অথবা আমি নই! সে হয়ত অন্য কেউ…

ছেলেদের ব্রেকআপের নান দিক

ব্রেকআপ
১ম পর্যায়, “আমার মন মানে না…”:
এই পর্যায়টা ব্রেক আপের সবচেয়ে ইমোশনাল পর্যায়। একই সাথে গুরুত্বপূর্ণও – কেননা এই সময়ে নেয়া যে কোন সিদ্ধান্ত আলটিমেটলি জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারে।
ব্রেক আপের এ পর্যায়ে কারো ভেতর থেকে যে ইমোশনগুলো বেরিয়ে আসে তা একদমই Raw ইমোশন। অধিকাংশের ক্ষেত্রেই ইমোশনটা বেরোয় বুক ফাটা কান্না বা তীব্র মানসিক বেদনার রূপে। তবে ব্যতিক্রমী কারো কারো ক্ষেত্রে ব্রেকআপ স্বাভাবিকভাবে মেনে নেয়ার প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। তবে যেটাই হোক না কেন, তা স্বাভাবিকের বাইরে, এর সবই আবেগের বশে।
যাদের জন্য ব্রেকআপটা কষ্টের তাদের মন মানেনা… “কেন আমিই এতো দুর্ভাগা” – এই প্রশ্ন বারবার ফিরে আসে মনে।
ব্রেক ঠিক পরপর এই তাৎক্ষণিক পর্যায়টিতে অধিকাংশ মানুষ ৩টি কাজের একটি করে:
ক. নিজের ক্ষতি করে (আত্মহত্যা, ড্রাগস ইত্যাদি)
খ. যে মেয়ের সাথে রিলেশন ছিলো তার ক্ষতির চেষ্টা করে (ফেইসবুক/ইমেইল হ্যাক, নেটে বাজে ছবি ছাড়া, মোবাইল নাম্বার ম্যানিপুলেশন)
গ. যার কারণে এই ব্রেক আপ (অন্য আরেক ছেলে হতে পারে) তার ক্ষতির চেষ্টা করে। এবং আরেকটি টাইপ আছে যারা এই ৩টির একটিও করে না – They just let it go. এরা আবার ৩ প্রকার:
ক. মন খারাপ করে থাকার দল
খ. ‌’এই বেশ ভালো আছি’ বেশ ধরা দল
গ. ঘন্টায় ঘন্টায় নতুন রিলেশন আর ব্রেকআপের কারণে এদের মনে ব্রেকআপ আর নতুন করে কোন অনুভূতির জন্ম দেয় না – সেই দল (সঙ্গতঃ কারণেই এই পোস্টে তাদের কথা আলোচনা করা হয়নি)
উপর্সগ:
১. শুধু ওকে ফোন দিতে ইচ্ছে করে/দেখা করতে ইচ্ছে করে/মনে হয় এখনই গিয়ে দেখা করি – যদি জানা আছে তাতে সিদ্ধান্ত বদলাবে না।
২. নিজে থেকেই নিজের দোষ/ত্রুটি বের করে ব্রেকআপের পিছনে নিজের দোষগুলো খুঁজে বের করা – যদিও হয়তো আদতে নিজের কোন দোষই নেই।
৩. ওর রেখে যাওয়া স্মৃতি চিহ্নগুলো হাতে নিয়ে নেড়েচেড়ে দেখা… মন আরও খারাপ করা। কেউ কেউ অবশ্য এগুলো নষ্ট করে ফেলে।
কমন ডায়ালগ:
১. “আমার তো কোন দোষ ছিলো না… তাহলে কেন….?
২. “সব মেয়ে এক…” (এটা একটা বিশেষ টাইপের ছেলেরা বলে)
৩. “আমি আর কখনও রিলেশন করতে পারবো না…”
অত্যন্ত ইমোশনাল এ পর্যায়টাকে ঠিক শব্দে প্রকাশ সম্ভব নয়। যতো কম বলে শেষ করা যায় ততোই ভালো। তাই পরের পর্যায়ে চলে যাচ্ছি।
২য় পর্যায়, সান্ত্বনা:
আপনার ফ্রেন্ডকূল এবং পরিচিতরা যারা আপনার রিলেশনের ব্যাপারে জানতো তারা এ পর্যায়ে ঝাঁপিয়ে পড়বে আপনাকে সান্ত্বনা দিতে। বিশ্বাস করুন আর নাই করুন, মনে মনে আপনার বেশির ভাগ বন্ধুই (স্পেশালি যাদের রিলেশন আছে) কিন্তুই খুশি। খুশি এ জন্য যে – “যে এটলিস্ট তারা আপনার মতো এতো দুর্ভাগা না…”। এটা মানুষের আদি ধর্ম। অপরের বিপদের কথা চিন্তা করলে সচেতন বা অবচেতনভাবে আমাদের মন আনন্দ পায়।
“জাস্ট ঐ কষ্টকর পরিস্থিতিতে সে নেই” – এই চিন্তাটাই মনে আনন্দের খোরাক জোগানোর জন্য যথেষ্ট। এটা খারাপ কিছু নয়। এটা মানুষের ধর্ম। ইনফ্যাক্ট এটার কিছু ভালো দিক আছে। যেমন ধরুন, যেদিন আপনার ব্রেকআপের কথা আপনার ফ্রেন্ডরা শুনলো, পরের বার তাদের গার্লফ্রেন্ড/বয়ফ্রেন্ডের সাথে আলোচনায় এ প্রসঙ্গটা একবার হলেও অন্ততঃ উঠবে। তখন তারা একে অপরকে প্রমিস করবে – তারা কখনও এভাবে বিচ্ছেদ ঘটাবে না। রিলেশন যে পর্যায়েই থাকুক না কেন – তারা আবারও নতুন করে অনুধাবন করবে, একে অপরকে পেয়ে তারা কতোটা লাকি। নিজেদের রিলেশনের অবস্থা নিয়ে শঙ্কিত ছিলো, এমন কাপলদের নিজেদের সমস্যা আর কিছু বলে মনেই হবে না। প্রিয় বন্ধুর ব্রেকআপের পর এ সময়টায় গার্লফ্রেন্ড/বয়ফ্রেন্ড হঠাৎ করেই একটু বেশিই সুইট হয়ে যেতে পারে – তবে এটা টেম্পোরারি। এর কোন স্থায়ী প্রভাব নেই।
যাই হোক এ পর্যায়ে ফ্রেন্ডকূল ও পরিচিতদের সান্ত্বনা আর উপদেশ বাণীতে সিক্ত হবেন আপনি -
১. “যা হয়েছে ভালো জন্য হয়েছে…” (হ তোরে কইসে!)
২. “জীবন কারো জন্য থেমে থাকে না…”
৩. “এটা ক্যারিয়ার গড়ার সময়…” (নরমালি এটা বন্ধুরা না, স্বজনেরা বলে)
৪. “নিশ্চয়ই তোমার কপালে জন্য এর চাইতেও ভালো কিছু অপেক্ষা করছে…”
৫. “থাক দোস্ত… বাদ দে…”
৬. “ফ্রেন্ডদের সাথে সময় কাটাও…”
৭. “ব্যাপার না… সব ঠিক হয়ে যাবে…”
৮. “চল বাইরে চল…”
আপনার রিলেশন সম্পর্কে আপনার ফ্রেন্ডদের আগে না বলা কিছু তথ্যও উঠে আসতে পারে এ পর্যায়ে -
১. “এমনিতেও এই রিলেশন নিয়ে তোর পরে সমস্যা হইতো…”
২. “ওর চাইতে হাজার গুণ বেটার মেয়ে তুই পাবি…” (৫ মাস আগেও “তোদের দেখে ঈর্ষা হয় বলার পর”)
৩. “এমনিতেও ওর অনেক সমস্যা ছিলো…”
৪. “আমার কেন জানি আগে থেকেই মনে হচ্ছিলো রিলেশনটা টিকবে না…”
৩য় পর্যায়, নিজেরে বুঝাই:
ব্রেক আপের এই পর্যায়টা একান্তই নিজের। নিজের জীবন, ক্যারিয়ার সব কিছুই নতুন করে শুরু করার একটা প্রত্যয় এই স্টেজে জন্মায়। এ পর্যায়ে একটা ছেলে এমন অনেক কিছুই করবে, যা সে সাধারণ অবস্থায় কখনোই করতো না। এমন অনেক কাজ সে করবে যা এইতো ক’দিন আগেও তার কাছে ছ্যাবলামি মনে হতো। এমন অনেক মানুষ যাদের সাথে দীর্ঘদিন কোন যোগাযোগ ছিলো না/ বা অনেকটা ইচ্ছে করেই এড়িয়ে গিয়েছে তাদের সাথে যোগাযোগ বাড়তে পারে। পুরো ব্যাপারটাই আসে জীবনে সামগ্রিক পরিবর্তনের একটা চিন্তা থেকে।
৪র্থ পর্যায়, বন্ধুদের সাথে সময় কাটানো:
এ পর্যায়ে সুযোগ পেলেই বন্ধুদের সাথে সময় কাটানোর একটা প্রবণতা দেখা যায়। বাসার বিভিন্ন কাজে এবং ফ্যামিলি মেম্বারদের সাথে অন্তরঙ্গতা বাড়ে। পুরো দুনিয়া কেমন একটা ‌’মায়ার চশমা’ দিয়ে ফিল্টার হয়ে চোখে এসে ধরা দেয়। মানুষের উপকার করতে ইচ্ছে করে। মানুষের সাথে একটু বেশিই নরমভাবে কথা বলার প্রবণতাও দেখা যায়।
উপসর্গ:
১. বন্ধুবান্ধবদের সাথে বের হয়ে তাদের বয়ফ্রেন্ড/গার্লফ্রেন্ডেদের মধ্যে রিলেশনের অন্তরঙ্গতা দেখে খুব প্রচন্ড ঈর্ষা ও অস্বস্তি।
২. কথায় কথায় বন্ধুদের কাছে – “ইশ ও এইটা করতো…”, “আই উইশ ও এইটা দেখতো…” বা “আমি আর ও প্রায়ই এটা করতাম…” – টাইপের কতাবার্তা।
৩. সুযোগ পেলেই মানুষকে নিজের ব্রেকআপের কথা জানানো, সহানুভূতির আশায় নয় – এটার মধ্যে কোথায় যেন ক্রেডিট নেয়ার মতো বিষয় আছে।
৪. “জীবনে অনেক কিছু দেখে ফেলেছি…” টাইপের মানসিকতা।
৫. ফেইসবুকে নিজের জীবনদর্শন তুলে ধরে স্ট্যাটাস দেয়া। কারো কারো স্ট্যাটাস দেখলে মনে হবে আর কিছুক্ষণের মধ্যেই সে আত্মহত্যা করতে যাচ্ছে।
৬. দাড়ি রাখা।
৫ম পর্যায়, আমি যেন কার আশায আশায় থাকি:
এতোদিনে আপনার ব্রেকআপের ঠিক পরপর টাটকা ক্ষত অনেকটাই শুকিয়ে গেছে। তবে পরিচিত যায়গা, পরিচিত মানুষ দেখলে বুক ফাঁকা ফাঁকা লাগে। পরিচিত জায়গা দিয়ে কোথাও যাওয়ার সময় আগের কথা মনে পড়ে। সাথে একটা ভয় কাজ করে যদি দেখা হয়ে যায় – তাহলে কি হবে? আবার মনে মনে ঠিকও করে ফেলেন দেখা হলে কি করবেন। যদিও ভয় পাচ্ছেন দেখা হওয়ার বিষয়টা চিন্তা করে, আবার কাইন্ড অফ যেন চাচ্ছেনও দেখা হোক।
৬ষ্ঠ পর্যায়, নতুন করে আবারও:
ব্রেকআপের স্মৃতি মনে আর অবশিষ্ট নেই তেমন একটা -শুধু খুব অকেশনালি মনে পড়ে। মনে মনে আপনি ঠিক করে ফেলেছেন ওর সাথে সামনে কখনও দেখা হলে (তা নতুন বয়ফ্রেন্ড সহই হোক না কেন) আপনি ওকে ওর নতুন লাইফের জন্য কনগ্র্যাচুলেট করবেন – যেন এতোটুকু মানসিক শক্তি আপনি অর্জন করেছেন।
আপনার মধ্যে মেয়ে দেখলেই আগ্রহ জন্মাচ্ছে। বন্ধুকূলকেও জানিয়ে দিয়েছেন আপনি রেডি – হয়তো খুঁজতেও বলে দিয়েছেন।
উপসর্গ:
১. অনলাইনে/ফেইসবুকে বা ফ্রেন্ডের মাধ্যমে নতুন মেয়েদের সাথে পরিচয় হওয়া মাত্র তাৎক্ষণিকভাবে রিলেশনের জন্য মনস্থির করা। (যদিও আপনি নিজেও জানেন ৯৯% চান্স যে সেটা কাজে আসবে না)
২. ডার্টি জোকস/গালি প্রিয়তা – যদিও আপনি এসবের জন্য মোটেও বিখ্যাত নন।
৩. নিজের মধ্যে সাময়িক লুইচ্চামি গ্রো করা।
৪. হঠাৎ করে আপনার মনে হচ্ছে রিলেশনে থাকা অবস্থায় জগৎটা অনেক সহজ ছিলো, সবকিছু খুব নিশ্চিৎ ছিলো – হাত বাড়ালেই আরেকটা হাতের ছোঁয়া, চাইলেই একটা কাঁধে মাথা রাখা। কিন্তু এখন রিলেশন ভেঙে যাওয়াতে জগৎটাকে অনেক কঠিন মনে হচ্ছে। আবারও নতুন করে রিলেশন, আবারও নতুন করে শুরু আদৌ হবে কিনা – ধারণাটাকে অলরেডি আপনি প্রশ্নবিদ্ধ করতে শুরু করেছেন। ঠিক প্রথম

ভালোবাসার কষ্ট কারে কই !

পৃথিবীতে কাউকে আপন ভাবতে নেই…
হয়তো এই টাই ঠিক যে –
“নিজের সন্তানই আপনার না”… আর কিছুর কথা নাই বা বলি!!
পরকে আপন ভাবতে যাওয়া আরো বেশী ঠিক না…
কথায় বলে বল বল নিজের বল ,
সেই “গ্রন্থগত বিদ্যা আর পর হস্তে ধনের ন্যায়”……
নিজের প্রয়োজনে নিকট কারো সাহায্য আশা করা মোটেও ঠিক না ……।।
তাতে সাহায্য পাবার সম্ভাবনা খুব কম… বরং সম্পর্ক নষ্ট হয় !!!
সবাই তার নিকট জনকে ভালবাসার খুব সুন্দর অভিনয় করে ……… এটা ছলনার এক নামান্তর মাত্র……
তোমার সুসময়ে তুমি যদি কারো বাসায় যাও – “তার কাছে টাকা না থাকলে সে ঋণ করে এনে তোমাকে উপাদেয় খাবার পরিবেশন করবে !”
তোমার দুঃসময়ে তুমি যদি কারো বাসায় যাও – “তার কাছে যতই টাকা থাক, সে তোমাকে দূর করে দিবে !”
জীবনকে ভাগ্যের হাতে ছেড়ে দিয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়াই একমাত্র লক্ষ্য। সময় ও সম্ভাবনা নিয়তির সূতায় বাঁধা, এ বাঁধনে নিজেকে বন্দি করেই বাঁচতে হয়। জগতে কোন কিছুই আপনার নয়! এমনকি নিজের প্রাণটাও না। প্রাণ হলো তোমার নিকট বিধাতার দান। মিথ্যে মরীচিকার পিছে ছুটে শুধুই আমরা ক্লান্ত হই। পাপের বোঝা বাড়াই।
ভালোবাসার ক্ষুধা আর পেটের ক্ষুধার মাঝে পার্থক্য হলো… প্রথমটা ছাড়া জীবন সঙ্গিন আর দ্বিত্বয়টা ছাড়া জীবন অচল !! হয়তো দুজনার যূদ্ধে ক্ষুধারই জয় হয়। তবু প্রথমটিকে না পাবার দুঃখে মানুষ অধিক ব্যাকুল হয়। ক্ষুধার কষ্ট যে কোনও খাবারে নিবৃত করা যায়, কিন্ত ভালোবাসার ক্ষুধা যে কাউকে দিয়ে মেটে না।
তবে কাউকে ভালোবেসে কষ্ট পাবার চেয়ে কাউকে না ভালবাসতে পারাই হয়তো শ্রেয়। ভুল মানুষকে কখনো নিজের মনে বসাতে হয় না।
সেই ভুল মানুষটির সাথে সম্পর্ক যাই হোক না কেন। যে তোমার মনকে বোঝে না………তার সাথে মিছে বন্ধনে না জড়ানই উত্তম!
কখনো কারো কাছে মুখ ফুটে কিছু চাইতে নেই। তাতে অপমান আর লাঞ্ছনা বাড়ে। তার চেয়ে ভেবে নেয়া ভালো… “যা কোনদিন তোমার হবার, তা একদিন তোমার হবেই!” প্রাণ হারানো হয়তো মান হারানোর চাইতে ভালো। নিজের সাথে কখনো আপোষ করো না…।

কিছু আক্ষেপ! কিছু কষ্ট !

যে মেয়েটাকে আপনি একটু আগে কুৎসিত বলে সম্বোধন করলেন সে হয়তো এখন রুপচর্চা নিয়ে ব্যাস্ত,যাতে অন্তত গুটিকয়েক মানুষ হলেও তাকে সুশ্রী বলে এই আশায় ।
যে মেয়েটাকে আপনি একটু
আগে মোটা বললেন, সে হয়তো খাওয়া-দাওয়া কমিয়ে ডায়েট
করা শুরু করে দিয়েছে ।
যে ছেলেটা আপনার কাছে ২টা টাকা সাহায্য চাইতে এসে আপনার
গালি খেয়ে ফিরে গেল, তার ঘরে হয়তো আজ খাওয়ার মত কিছুই নেই।
কম বয়সী বাচ্চা কোলে নিয়ে বসে থাকা যে মেয়েটিকে দেখে আপনি কিংবা আপনারা মেয়েটিকে পতিতা বলে আখ্যায়িত করলেন, সে হয়তো ধর্ষনের শিকার হয়ে ওই গ্লানি বয়ে বেড়াচ্ছে
ক্রন্দনরত যে ছেলেটাকে দেখিয়ে আপনি কিংবা আপনারা মজা কুড়াচ্ছেন, তার মা হয়তো আজ মৃত্যুপথযাত্রী
আমরা প্রত্যেকেই নানা রকম কষ্ট বয়ে বেড়াচ্ছি ।
এখন হয়তো কলিযুগ চলছে । এখানে একজনের কষ্ট আরেকজনের কাছে তামাশার মত। অন্যের কষ্ট নিয়ে মজা করার আগে নিজের কষ্টের কথা ভেবে দেখুন। আজ আপনি একজনের কষ্ট নিয়ে তামাশা করবেন, কাল আপনার কষ্টও আরেকজনের কাছে তামাশা লাগবে ।
কষ্টের কথা কাউকে বুঝালেই কি হাসির খোঁড়াক হয়ে যেতে হবে আমাকে?
এটা কেমন নিষ্ঠুরতা?
যদি এতটাই হাস্যকর হয়ে থাকে তবে যে কষ্টে আছে তার অলক্ষ্যে গিয়ে হাসলে সমস্যা কোথায়?
সান্ত্বনার দরকার নাই, করুনার দরকার নাই,উপদেশেরও দরকার নেই।
কষ্টের উপর নতুন করে কষ্টের প্রলেপ মাখানোর আবশিকতা কোথায়?

শেষ অনুরোধ

আমার দেয়া ফুলগুলো সব জানি শুকিয়ে গেছে
সব ফুলগুলো যেন ফেলে দেওয়া হয়
আমাকে ঘিরে সব স্মৃতিগুলোতে ধুলি জমে গেছে
সব স্মৃতিগুলো যেন মুছে ফেলা হয়
একসাথে ভালো থাকার মেয়াদ কখনই দীর্ঘ ছিল না আমাদের
দূরে দূরে থেকেই যেন ভালো থাকা হয়
পূর্ণিমার যে রাত এক মুঠো সুখ হয়ে জমেছিল আমাদের বুকে
সেই একই চাঁদে এখনও পূর্ণিমা হয়
দুই হৃদয়ের একটি মাত্র ঝরণা ছিল
এখন সেই নদীর দুই পারে দুটি জীবনের দুটি পথ হয়

YouTube Preview Image

মনে পরে তোমায়..ভুলতে পারিনা

তুমি আমায় ভালবাস..আর নাই বাস
আমি তোমায়..ভাল বেসে যাব
কসম আমার ভালবাসার..ভুলবোনা তোমায় এ জীবণে
তবুও জানি আমি..তুমি ভুলে গেছ আমাকে
মনে কি পরে তোমার..হারানো দিনগুলি
মনে কি পরে..কি হাড়িয়েছ
তুমিতো কথা রাখোনি..রখোনি আমায় মনে
তবুও কেন জানি..মনে পরে তোমকে
ভুলে যেতে চাই..কেন যে পারিনা
মনে পরে তোমায়..ভুলতে পারিনা
দুচোখের জল..বেদনার মোহনা
তবুও ছিল সব..মিথ্যা সান্তনা।।

ভয়কে করুন জয় : জনসম্মুখে কথা বলার জড়তা কাটিয়ে উঠার ৫ টি টিপস

আমাদের অনেকেই পাবলিক স্টেজে কথা বলতে ভয় পাই। ফরমালি বা ইনফরমালি কোন পাবলিক প্লেসে (কনফারেন্স/সভা/মিটিং বা এমন কিছু স্থানে) কথা বলতে গিয়ে আমরা চিন্তা করি আমি যদি গুলিয়ে ফেলি/ আমার কথা শুনে কেউ যদি হাততালি না দেয়/ কেউ যদি এমন কোন প্রশ্ন করে যার উত্তর আমি জানি না/ অথবা আরো কোন অনাকাঙ্ক্ষিত অবস্থার সৃষ্টি হতে পারে। এইসব চিন্তা করে কারো জ্বরও আসতে পারে। :P
কিন্তু সঠিক প্রস্তুতিতে জনসম্মুখে কথা বলার বিষয়টি হতে পারে একটি উপভোগ্য অভিজ্ঞতা। এটি হতে পারে নিজেকে উপস্থাপনের বা আপনার পণ্য/ব্র্যান্ড পরিচিতির জন্য ভালো সুযোগ। আপনার নতুন কোম্পানির জন্য নিজেদের এক্সপারটিস বাইরের দুনিয়াতে সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে পাবলিক স্পিকিংএর বিকল্প নেই। ইন্টারনেট দুনিয়া ঘেঁটে এখানে আমি পাঁচটি বিষয়ের বা ধাপের কথা বলবো যেগুলো আপনি স্টেজে উঠার আগে অবশ্যই পালন করবেন যাতে করে বক্তৃতা দেওয়ার সময় আপনি আপনার অডিয়েন্সের সাথে সুন্দরভাবে কমিউনিকেট করতে পারবেন, নির্দিষ্ট সময়ে সফলভাবে নিজের বক্তব্য সম্পন্ন করতে পারবেন।
আসুন দেখি পাঁচটি বিষয় কী কী? (ক্রমধারা অনুযায়ী লেখা হয়নি) -

১) প্র্যাকটিস, প্র্যাকটিস, প্র্যাকটিস

নিজে নিজে করুন অভ্যাস করুন
এই কথাটা শুনতে শুনতে আপনি হয়তো ক্লান্ত। কিন্তু এই কথাটা অমূল্য। আপনি যদি আপনার বাবা-মা অথবা দাদু-নানু কিংবা বন্ধুদের সামনে আপনার বক্তৃতার বিষয়বস্তু নিয়ে কথা বলা প্র্যাকটিস করেন তাহলে আপনার নার্ভাসনেস অনেক কমে যাবে, আত্মবিশ্বাস তৈরি হবে। এই অভিজ্ঞতা পাবলিক স্টেজে আপনাকে স্বাচ্ছন্দ্যে কথা বলতে সাহায্য করবে। তবে বন্ধুদের সামনে বলার আগে আপনি নিজে কয়েকবার আয়নার সামনে প্র্যাকটিস করে নিতে পারেন।
এছাড়াও আপনি প্রথমবার স্পীচ দেওয়ার পর পরের বার স্পীচ দেওয়ার সময় প্রথমবারের ভুলগুলো শুধরে নিতে পারবেন। প্র্যাকটিস করার সময়ই আপনার এই উন্নতি হচ্ছে। এই ধারা স্টেজে উঠা পর্যন্ত অব্যাহত থাকলে আপনি নিশ্চিতভাবে ভালো বক্তা হয়ে উঠতে পারবেন। আরো ব্যাপার হলো আপনি আপনজনের সাথে ভালো আই-কন্টাক্ট (চোখাচোখি) করতে পারবেন। তারা আপনার ভুলগুলো সহজে ধরিয়ে দিতে পারেন। সবচেয়ে ভালো হয় যদি আপনি পাবলিক স্টেজে আপনার অডিয়েন্সকে আপনজন মনে করেন।

২) খেয়াল রাখুন কোথায় বক্তৃতা দিচ্ছেন

কোথায় কথা বলবেন সেটি মাথায় রাখুন
আপনি জেনে নিন আপনি কোথায় বক্তৃতা দিচ্ছেন। কারণ একেক পরিবেশে আপনি একেক রকমভাবে বক্তব্য উপস্থাপন করবেন। কোন কনফারেন্সে আপনি যেভাবে কথা বলবেন, পাবলিক স্থানে নিশ্চয় তেমনিভাবে কথা বলবেন না। তাছাড়া জেনে নিন আপনি মাইক্রোফোন ব্যবহার করে বক্তব্য দিচ্ছেন কি না? স্টেজে কোথায় দাঁড়িয়ে কথা বলছেন? সবার সাথে চোখাচোখি হচ্ছে কি না? মানে সবাই আপনাকে দেখছে কি না? বা আপনি সবাইকে দেখছেন কি না?

৩) আপনার দর্শক-শ্রোতাদের সম্পর্কে জানুন

দর্শক সম্পর্কে অভিজ্ঞতা নিন
আপনি বিভিন্ন উপায়ে যোগাযোগের চেষ্টা করে আপনার অডিয়েন্সকে বোঝার চেষ্টা করুন। আপনার শ্রোতাদের মধ্যে একেক মানসিকতার মানুষ থাকবে। তাঁদের সকলের সম্পর্কে ধারণা নিতে চেষ্টা করুন। খুবই অল্প সময়ের মধ্যে আপনাকে এই কাজটি করতে হবে, তাই বিচক্ষণতার পরিচয় দিন। সফল হতে না পারলেও অন্তত চেষ্টা করুন। অডিয়েন্সকে আপন লোকজন ভাবুন। তাঁদের কীভাবে সম্বোধন করবেন সেটিও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ধরুন, কোন হলরুমে মধ্যবয়স্ক অডিয়েন্স অথবা কলেজ স্টুডেন্টে পূর্ণ। এই দুই ধরণের নাগরিকের সামনে আপনার কথাবলার ধরণ, সম্বোধন অবশ্যই ভিন্ন হবে। আরো খেয়াল রাখুন আপনার বক্তব্য টিভিতে বা ইন্টারনেটে লাইভ দেখাচ্ছে কিনা? সেখানে আপনাকে কথা বলার ক্ষেত্রে আরো সতর্ক থাকতে হবে। এমন অবস্থায় প্রথম দুটি টিপস মেনে চলুন।

৪) আপনার ব্যালান্স বজায় রাখতে (প্রিপারেশন নিন)

ব্যালেন্স প্রস্তুতি
আপনি যখন কোন একটি বিষয়ে বক্তব্য রাখবেন তখন সেই বিষয়ে ভালো করে জেনে নিন। কোন বিষয়ে ভালো না জেনে কথা বলা উচিত নয়। জেনে রাখুন, আপনার অডিয়েন্সের মধ্যে এমন কেউ থাকতে পারে যিনি ওই বিষয়ে ভালো জ্ঞান রাখেন। তাই আপনার সাবধান হওয়া উচিত। আপনি যখন বক্তব্য দিচ্ছেন তখন আপনি আপনার বক্তব্যের মাঝে ডুবে থাকুন। একাগ্রচিত্তে আপনার বিষয়ের প্রতি মনোনিবেশ করুন।
বক্তৃতার বিষয় মনে রাখার সুবিধার জন্য কোন কাগজে/ব্যানারে লিখে রাখুন। যেমন, কোন আলোচনাসভা হলে ব্যানারে সভার বিষয়বস্তু, আয়োজকের নাম ইত্যাদি; কোম্পানির পণ্য/ব্র্যান্ড পরিচিতি অনুষ্ঠানে স্লাইডে কোম্পানির নাম, ওয়েবসাইট, পণ্যের মটো ইত্যাদি লিখে রাখতে পারেন।
অন্য একটি বিষয় হলো- আপনার কণ্ঠস্বর যেনো স্বাভাবিক থাকে- গলাফাটা চিৎকারও নয়, আবার নিচুস্বরও নয়, এমন টোনে কথা বলুন। মনে রাখুন, সাহিত্যসভায় আপনার ভয়েস ন্যাচারাল থাকলেই চলবে, কিন্তু প্রতিবাদসভায় আপনার ভয়েস হতে হবে জোরালো। কন্ঠধ্বনি বা স্বরের উত্থান-পতন সমুদ্রের ঢেউয়ের মতো হবে। মাঝে মাঝে খানিকক্ষণের থামুন। দম নিন। আবার বলতে শুরু করুন। আত্মবিশ্বাসী কন্ঠে কথা বলুন।
সবশেষের বিষয় হচ্ছে- বক্তব্য শেষে শ্রোতাদের সাথে প্রশ্নের খাতিরে বা শুভেচ্ছা বিনিময়ের খাতিরে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে আপনি কেমন বক্তা তা জানতে পারবেন।

৫) স্বাভাবিকভাবে শ্বাস নিন

লম্বা একটা শ্বাস নিন
আপনি বক্তৃতা দেওয়ার সময় শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক রাখুন। ধীরে ধীরে শ্বাস নিন। ভালো হয় বক্তৃতা শুরু করার আগে কয়েকবার গভীরভাবে ৫/৭ সেকেন্ডব্যাপী শ্বাস (মুখ ব্যবহার করুন) নিয়ে নিন। তাতে পরবর্তী সময়টা শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করবে।

অনুপ্রেরনীয় ঘটনা

বিখ্যাত জানু বক্তা-ব্যক্তিগণের অনেকেই প্রথম প্রথম নানান অসুবিধায় পড়েছিলেন বক্তৃতা প্রদানের ক্ষেত্রে। পরে তাঁরা সেইসব সমস্যা অতিক্রম করে সফল বক্তায় পরিণত হয়েছিলেন। শুনুন কয়েকজনের কথা-
আমেরিকার খ্যাতনামা বক্তা উইলিয়াম জেনিং ব্লায়ান (১৮৬০-১৯২৫) প্রথম দিন বক্তৃতা করার চেষ্টা করলে কম্পনের ফলে তাঁর হাঁটুদ্বয় জোড়া লেগে গিয়েছিলো।
হাস্যরসমূলক লেখালেখির জন্য বিশ্বখ্যাত মার্ক টোয়েন (প্রকৃত নাম স্যামুয়েল ক্লিমেন্স) প্রথম দিন বক্তৃতা করতে উঠলে এমন অনুভব করেন- তাঁর মুখগহ্বর তুলা দিয়ে পরিপূর্ণ এবং তাঁর নাড়ীর স্পন্দন অস্বাভাবিকরূপে বেড়ে চলেছে।
জার্মানির পুনর্গঠনের অন্যতম নেতা ও এর স্থপতি অটোফন বিসমার্ক স্বীকার করতেন তিনি যখন জনসমক্ষে বক্তৃতা করার সময় অত্যন্ত বেকায়দায় পড়ে যেতেন। বার বার চেষ্টার ফলে তিনি এই অবস্থার থেকে পরিত্রাণ পান।
ফ্রান্সের রাজনৈতিক বক্তা জীন জুরিস ডেপুটিদের চেম্বারে একটি বছর বোবার মতো বসে কাটিয়েছেন শুধুমাত্র নিজেকে তৈরি করতে।
 
ভার্সাই চুক্তির অন্যতম নায়ক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড লয়েড জর্জ প্রথম প্রথম বক্তৃতা দেওয়ার সময় মুখ শুকিয়ে যেতো, জিহ্বা মুখগহ্বরের সাথে লেপ্টে যেতো। তারপরেও তিনি দমে যেতেন না।

নিচের বিষয়গুলোর প্রতি নজর রাখুন (সারাংশ)


১) আপনার বক্তব্যের বিষয় সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে নিন। বক্তব্যকে তথ্যবহুল করুন।
২) বক্তব্যের বিষয় অনুযায়ী একটি ভালো স্ক্রিপ্ট তৈরি করুন।
৩) সেই স্ক্রিপ্ট স্মরণ করা কয়েকবার আয়নার সামনে/বন্ধুদের সামনে প্র্যাকটিস করুন।
৪) সময়ের দিকে খেয়াল রাখুন। পারলে স্টপওয়াচ ব্যবহার করুন।
৫) স্বাভাবিকভাবে শ্বাসপ্রশ্বাস নিন। বক্তৃতার মাঝে মাঝে দম নিয়ে নিন।
৬) বক্তৃতার শুরুতেই শ্রোতাদের সাথে শুভেচ্ছা বিনিময় করে নিতে পারেন।
৭) আপনার বক্তৃতা প্রদানের পরিবেশ চিনে নিন।
৮) স্বাভাবিকভাবে আসা নার্ভাসনেসকে রিলাক্সেশানে পরিণত করে নিন।
৯) আপনার ভয়েস টোনের প্রতি খেয়াল রাখুন।
১০) বক্তব্য প্রদানের সময় আনন্দদায়ক ও মজার কথা বলুন।
১১) শ্রোতার দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য মাঝে মাঝে প্রশ্ন করতে পারেন।
১২) পোশাক পরিধানের প্রতি ভালোভাবে নজর দিন।
১৩) আপনার বডি ল্যাঙ্গুয়েজের দিকে খেয়াল রাখুন।
১৪) বক্তব্য উপস্থাপনের সময় মোবাইল ফোন ব্যবহার করবেন না।
১৫) নিজের নার্ভাসনেসের জন্য অ্যাপোলজি জানানোর দরকার নেই। আপনার শ্রোতারা হয়তো সেটি লক্ষ্যই করেনি।
১৬) পাবলিকলি বক্তব্য প্রদানের সময় হঠাৎ মনে আসা কোন পয়েন্ট/কোট নিয়ে কথা বলবেন না।
১৭) সবার শেষে আপনার বক্তব্যের সারাংশ দিন।
১৮) প্রতিবার বক্তব্যদানের পর কিছু অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করুন ভবিষ্যতের সাফল্যের জন্য।

এক অসাধারণ জীবনকথা যা জেনে রাখা উচিত

আমি আজ একটা লেখা শেয়ার করবো সবার সাথে। এই লেখাটি একটি বক্তব্যের লেখ্যরূপ যে বক্তব্যটি উপস্থাপিত হয়েছিলো বিশ্বসেরা বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে পরিচিত স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটির ছাত্রদের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে। বক্তব্যটি বেশ পুরোনো। তবে আমার জীবনে শোনা সবচাইতে মুগ্ধকর আর উৎসাহমূলক বক্তব্য। তাই সবার সাথে শেয়ার করে নিতে চাইছি। এই বক্তব্য দিয়েছিলেন স্টিভ জবস। যিনি অ্যাপল এবং পিক্সার অ্যানিমেশন নামক দুইটি সেরা প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা এবং সিইও। বক্তব্য রেখেছিলেন ২০০৫ সালের ১২ জুন। লেখাটির ইংরেজি রূপ স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট থেকে নেয়া।
বক্তার জীবনের মতন এত রকম কঠিন সময়, কষ্টকর সময় আর বৈচিত্র্য আমাদের সবার জীবনে থাকেনা। কিন্তু আমাদের জীবনে থাকে অনেক রকম ঘাত-প্রতিঘাত আর সফলতার আকাঙ্ক্ষা। আর তাই সবারই এই লেখাটা পড়া প্রয়োজন বলে আমি মনে করি, ভালো লাগবে আর অনুপ্রাণিত হবেন সেই নিশ্চয়তা দিচ্ছি
প্রথমেই একটা সত্য কথা বলে নিই
আমি কখনোই বিশ্ববিদ্যালয় পাস করিনি। তাই সমাবর্তন জিনিসটাতেও আমার কখনো কোনো দিন উপস্থিত হওয়ার প্রয়োজন পড়েনি। এর চেয়ে বড় সত্য কথা হলো, আজকেই কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠান সবচেয়ে কাছে থেকে দেখছি আমি। তাই বিশ্বের অন্যতম সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই সমাবর্তন অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে পেরে নিজেকে অত্যন্ত সম্মানিত বোধ করছি। কোনো কথার ফুলঝুরি নয় আজ, স্রেফ তিনটা গল্প বলব আমি তোমাদের। এর বাইরে কিছু নয়।
আমার প্রথম গল্পটি কিছু বিচ্ছিন্ন বিন্দুকে এক সুতায় বেঁধে ফেলার গল্প
steve-jobs-ceo-apple-next
স্টিভ জবস– অ্যাপেল কম্পিউটারের প্রতিষ্ঠাতা
ভর্তি হওয়ার ছয় মাসের মাথাতেই রিড কলেজে পড়ালেখায় ক্ষ্যান্ত দিই আমি। যদিও এর পরও সেখানে আমি প্রায় দেড় বছর ছিলাম, কিন্তু সেটাকে পড়ালেখা নিয়ে থাকা বলে না। আচ্ছা, কেন আমি বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়লাম?
এর শুরু আসলে আমার জন্মেরও আগে। আমার আসল মা ছিলেন একজন অবিবাহিত তরুণী। তিনি তখন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছেন। আমার ভরণ-পোষণের দায়িত্ব নেওয়া তাঁর পক্ষে সম্ভব নয়। তিনি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, আমাকে এমন কারও কাছে দত্তক দেবেন, যাঁদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি আছে। সিদ্ধান্ত হলো এক আইনজীবী ও তাঁর স্ত্রী আমাকে দত্তক নেবেন। কিন্তু একদম শেষ মুহূর্তে দেখা গেল, ওই দম্পতির কারোরই বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি নেই, বিশেষ করে আইনজীবী ভদ্রলোক কখনো হাইস্কুলের গণ্ডিই পেরোতে পারেননি। আমার মা তো আর কাগজপত্রে সই করতে রাজি হন না। অনেক ঘটনার পর ওই দম্পতি প্রতিজ্ঞা করলেন, তাঁরা আমাকে অবশ্যই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াবেন, তখন মায়ের মন একটু গললো। তিনি কাগজে সই করে আমাকে তাঁদের হাতে তুলে দিলেন।
এর ১৭ বছর পরের ঘটনা। তাঁরা আমাকে সত্যি সত্যিই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করিয়েছিলেন। কিন্তু আমি বোকার মতো বেছে নিয়েছিলাম এমন এক বিশ্ববিদ্যালয়, যার পড়ালেখার খরচ প্রায় তোমাদের এই স্ট্যানফোর্ডের সমান। আমার দরিদ্র মা-বাবার সব জমানো টাকা আমার পড়ালেখার পেছনে চলে যাচ্ছিল। ছয় মাসের মাথাতেই আমি বুঝলাম, এর কোনো মানে হয় না। জীবনে কী করতে চাই, সে ব্যাপারে আমার কোনো ধারণা নেই এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ালেখা এ ব্যাপারে কীভাবে সাহায্য করবে, সেটাও বুঝতে পারছিলাম না। অথচ মা-বাবার সারা জীবনের জমানো সব টাকা এই অর্থহীন পড়ালেখার পেছনে আমি ব্যয় করছিলাম। তাই আমি বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিলাম এবং মনে হলো যে এবার সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে।
সিদ্ধান্তটা ভয়াবহ মনে হলেও এখন আমি যখন পেছন ফিরে তাকাই, তখন মনে হয়, এটা আমার জীবনের অন্যতম সেরা সিদ্ধান্ত ছিল। বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই আমি ডিগ্রির জন্য দরকারী কিন্তু আমার অপছন্দের কোর্সগুলো নেওয়া বন্ধ করে দিতে পারলাম, কোনো বাধ্যবাধকতা থাকল না, আমি আমার আগ্রহের বিষয়গুলো খুঁজে নিতে লাগলাম।
পুরো ব্যাপারটিকে কোনোভাবেই রোমান্টিক বলা যাবে না। কারণ তখন আমার কোনো রুম ছিল না, বন্ধুদের রুমের ফ্লোরে ঘুমোতাম। ব্যবহৃত কোকের বোতল ফেরত দিয়ে আমি পাঁচ সেন্ট করে কামাই করতাম, যেটা দিয়ে খাবার কিনতাম। প্রতি রোববার রাতে আমি সাত মাইল হেঁটে হরেকৃষ্ণ মন্দিরে যেতাম শুধু একবেলা ভালো খাবার খাওয়ার জন্য। এটা আমার খুবই ভালো লাগত। এই ভালো লাগাটাই ছিল গুরুত্বপূর্ণ।
রিড কলেজে সম্ভবত দেশে সেরা ক্যালিগ্রাফি শেখানো হতো সে সময়। ক্যাম্পাসে সাঁটা পোস্টারসহ সবকিছুই করা হতো চমৎকার হাতের লেখা দিয়ে। আমি যেহেতু আর স্বাভাবিক পড়ালেখার মাঝে ছিলাম না, তাই যে কোনো কোর্সই চাইলে নিতে পারতাম। আমি ক্যালিগ্রাফি কোর্সে ভর্তি হয়ে গেলাম। সেরিফ ও স্যান সেরিফের বিভিন্ন অক্ষরের মধ্যে স্পেস কমানো-বাড়ানো শিখলাম, ভালো টাইপোগ্রাফি কীভাবে করতে হয়, সেটা শিখলাম। ব্যাপারটা ছিল সত্যিই দারুণ সুন্দর, ঐতিহাসিক, বিজ্ঞানের ধরাছোঁয়ার বাইরের একটা আর্ট। আমি এর মধ্যেই মজা খুঁজে পেলাম।
এ ক্যালিগ্রাফি জিনিসটা কোনো দিন বাস্তবজীবনে আমার কাজে আসবে—এটা কখনো ভাবিনি। কিন্তু ১০ বছর পর আমরা যখন আমাদের প্রথম ম্যাকিনটশ কম্পিউটার (আমরা যাকে ম্যাক বলে চিনি) ডিজাইন করি, তখন এর পুরো ব্যাপারটাই আমার কাজে লাগল। ওটাই ছিল প্রথম কম্পিউটার, যেটায় চমৎকার টাইপোগ্রাফির ব্যবহার ছিল। আমি যদি সেই ক্যালিগ্রাফি কোর্সটা না নিতাম, তাহলে ম্যাক কম্পিউটারে কখনো নানা রকম অক্ষর (টাইপফেইস) এবং আনুপাতিক দূরত্বের অক্ষর থাকত না। আর যেহেতু উইন্ডোজ ম্যাকের এই ফন্ট সরাসরি নকল করেছে, তাই বলা যায়, কোনো কম্পিউটারেই এ ধরনের ফন্ট থাকত না। আমি যদি বিশ্ববিদ্যালয় না ছাড়তাম, তাহলে আমি কখনোই ওই ক্যালিগ্রাফি কোর্সে ভর্তি হতাম না এবং কম্পিউটারে হয়তো কখনো এত সুন্দর ফন্ট থাকত না। অবশ্য বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকা অবস্থায় এসব বিচ্ছিন্ন ঘটনাকে এক সুতায় বাঁধা অসম্ভব ছিল, কিন্তু ১০ বছর পর পেছনে তাকালে এটা ছিল খুবই পরিষ্কার একটা বিষয়।
আবার তুমি কখনোই অনেকগুলো বিচ্ছিন্ন বিন্দুর সামনের দিকে তাকিয়ে তাদের একটা লাইন হিসেবে আঁকতে পারবে না। এটা কেবল পেছনে তাকিয়েই সম্ভব। অতএব, তোমাকে বিশ্বাস করতেই হবে, বিচ্ছিন্ন ঘটনাগুলো একসময় ভবিষ্যতে গিয়ে একটা অর্থবহ জিনিসে পরিণত হবেই। তোমার ভাগ্য, জীবন, কর্ম, কিছু না কিছু একটার ওপর তোমাকে বিশ্বাস রাখতেই হবে। এটা কখনোই আমাকে ব্যর্থ করেনি, বরং উল্টোটা করেছে।
আমার দ্বিতীয় গল্পটি ভালোবাসা আর হারানোর গল্প
আমি খুব ভাগ্যবান ছিলাম। কারণ, জীবনের শুরুতেই আমি যা করতে ভালোবাসি, তা খুঁজে পেয়েছিলাম।
আমার বয়স যখন ২০, তখন আমি আর ওজ দুজনে মিলে আমাদের বাড়ির গ্যারেজে অ্যাপল কোম্পানি শুরু করেছিলাম। আমরা পরিশ্রম করেছিলাম ফাটাফাটি, তাই তো দুজনের সেই কোম্পানি ১০ বছরের মাথায় চার হাজার কর্মচারীর দুই বিলিয়ন ডলারের কোম্পানিতে পরিণত হয়। আমার বয়স যখন ৩০, তখন আমরা আমাদের সেরা কম্পিউটার ম্যাকিন্টোস বাজারে ছেড়েছি। এর ঠিক এক বছর পরের ঘটনা। আমি অ্যাপল থেকে চাকরিচ্যুত হই। যে কোম্পানির মালিক তুমি নিজে, সেই কোম্পানি থেকে কীভাবে তোমার চাকরি চলে যায়? মজার হলেও আমার ক্ষেত্রে সেটা ঘটেছিল। প্রতিষ্ঠান হিসেবে অ্যাপল যখন বড় হতে লাগল, তখন কোম্পানিটি ভালোভাবে চালানোর জন্য এমন একজনকে নিয়োগ দিলাম, যে আমার সঙ্গে কাজ করবে। এক বছর ঠিকঠাকমতো কাটলেও এর পর থেকে তার সঙ্গে আমার মতের অমিল হতে শুরু করল। প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদ তার পক্ষ নিলে আমি অ্যাপল থেকে বহিষ্কৃত হলাম। এবং সেটা ছিল খুব ঢাকঢোল পিটিয়েই। তোমরা বুঝতেই পারছ, ঘটনাটা আমার জন্য কেমন হতাশাজনক ছিল। আমি সারা জীবন যে জিনিসটার পেছনে খেটেছি, সেটাই আর আমার রইল না।
সত্যিই এর পরের কয়েক মাস আমি প্রচন্ড দিশেহারা অবস্থায় ছিলাম। আমি ডেভিড প্যাকার্ড ও বব নয়েসের সঙ্গে দেখা করে পুরো ব্যাপারটার জন্য ক্ষমা চাইলাম। আমাকে তখন সবাই চিনত, তাই এই চাপ আমি আর নিতে পারছিলাম না। মনে হতো, ভ্যালি ছেড়ে পালিয়ে যাই। কিন্তু সেই সঙ্গে আরেকটা জিনিস আমি বুঝতে পারলাম, আমি যা করছিলাম, সেটাই আমি সবচেয়ে বেশি ভালোবাসি। চাকরিচ্যুতির কারণে কাজের প্রতি আমার ভালোবাসা এক বিন্দুও কমেনি। তাই আমি আবার একেবারে গোড়া থেকে শুরু করার সিদ্ধান্ত নিলাম।
প্রথমে মনে না হলেও পরে আবিষ্কার করলাম, অ্যাপল থেকে চাকরিচ্যুতিটা ছিল আমার জীবনের সবচেয়ে ভালো ঘটনা। আমি অনেকটা নির্ভার হয়ে গেলাম, কোনো চাপ নেই, সফল হওয়ার জন্য বাড়াবাড়ি রকমের কৌশল নিয়ে ভাবার অবকাশ নেই। আমি প্রবেশ করলাম আমার জীবনের সবচেয়ে সৃজনশীল অংশে।
পরবর্তী পাঁচ বছরে নেক্সট ও পিক্সার নামের দুটো কোম্পানি শুরু করি আমি, আর প্রেমে পড়ি এক অসাধারণ মেয়ের, যাকে পরে বিয়ে করি। পিক্সার থেকে আমরা পৃথিবীর প্রথম কম্পিউটার অ্যানিমেশন ছবি টয় স্টোরি তৈরি করি। আর এখন তো পিক্সারকে সবাই চেনে। পৃথিবীর সবচেয়ে সফল অ্যানিমেশন স্টুডিও। এরপর ঘটে কিছু চমকপ্রদ ঘটনা। অ্যাপল নেক্সটকে কিনে নেয় এবং আমি অ্যাপলে ফিরে আসি। আর লরেনের সঙ্গে চলতে থাকে আমার চমত্কার সংসার জীবন।
আমি মোটামুটি নিশ্চিত, এগুলোর কিছুই ঘটত না, যদি না অ্যাপল থেকে আমি চাকরিচ্যুত হতাম।
এটা আমার জন্য খুব বাজে আর তেতো হলেও দরকারি একটা ওষুধ ছিল। কখনো কখনো জীবন তোমাকে ইটপাটকেল মারবে, কিন্তু বিশ্বাস হারিয়ো না। আমি নিশ্চিত, যে জিনিসটা আমাকে সামনে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছিল সেটা হচ্ছে, আমি যে কাজটি করছিলাম, সেটাকে আমি অনেক ভালোবাসতাম।
তোমাকে অবশ্যই তোমার ভালোবাসার কাজটি খুঁজে পেতে হবে, ঠিক যেভাবে তুমি তোমার ভালোবাসার মানুষটিকে খুঁজে বের করো। তোমার জীবনের একটা বিরাট অংশজুড়ে থাকবে তোমার কাজ, তাই জীবন নিয়ে সত্যিকারের সন্তুষ্ট হওয়ার একমাত্র উপায় হচ্ছে এমন কাজ করা, যে কাজ সম্পর্কে তোমার ধারণা, এটা একটা অসাধারণ কাজ। আর কোনো কাজ তখনই অসাধারণ মনে হবে, যখন তুমি তোমার কাজটিকে ভালোবাসবে। যদি এখনো তোমার ভালোবাসার কাজ খুঁজে না পাও, তাহলে খুঁজতে থাকো। অন্য কোথাও স্থায়ী হয়ে যেয়ো না। তোমার মনই তোমাকে বলে দেবে, যখন তুমি তোমার ভালোবাসার কাজটি খুঁজে পাবে। যেকোনো ভালো সম্পর্কের মতোই, তোমার কাজটি যতই তুমি করতে থাকবে, সময় যাবে, ততই ভালো লাগবে। সুতরাং খুঁজতে থাকো, যতক্ষণ না ভালোবাসার কাজটি পাচ্ছ। অন্য কোনোখানে নিজেকে স্থায়ী করে ফেলো না।
আমার তৃতীয় ও শেষ গল্পটির বিষয় মৃত্যু
আমার বয়স যখন ১৭ ছিল, তখন আমি একটা উদ্ধৃতি পড়েছিলাম—‘তুমি যদি প্রতিটি দিনকেই তোমার জীবনের শেষ দিন ভাব, তাহলে একদিন তুমি সত্যি সত্যিই সঠিক হবে।’ এ কথাটা আমার মনে গভীরভাবে রেখাপাত করেছিল এবং সেই থেকে গত ৩৩ বছর আমি প্রতিদিন সকালে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে জিজ্ঞেস করি—আজ যদি আমার জীবনের শেষ দিন হতো, তাহলে আমি কি যা যা করতে যাচ্ছি, আজ তা-ই করতাম, নাকি অন্য কিছু করতাম? যখনই এ প্রশ্নের উত্তর একসঙ্গে কয়েক দিন ‘না’ হতো, আমি বুঝতাম, আমার কিছু একটা পরিবর্তন করতে হবে।
পৃথিবী ছেড়ে আমাকে একদিন চলে যেতে হবে, এ জিনিসটা মাথায় রাখার ব্যাপারটাই জীবনে আমাকে বড় বড় সব সিদ্ধান্ত নিতে সবচেয়ে বেশি সাহায্য করেছে। কারণ, প্রায় সবকিছুই যেমন, সব অতি প্রত্যাশা, সব গর্ব, সব লাজলজ্জা আর ব্যর্থতার গ্লানি—মৃত্যুর মুখে হঠাৎ করে সব নেই হয়ে যায়, টিকে থাকে শুধু সেটাই, যা সত্যিই গুরুত্বপূর্ণ। তোমার কিছু হারানোর আছে—আমার জানা মতে, এ চিন্তা দূর করার সবচেয়ে সহজ উপায় হচ্ছে, সব সময় মনে রাখা যে একদিন তুমি মরে যাবে। তুমি খোলা বইয়ের মতো উন্মুক্ত হয়েই আছ। তাহলে কেন তুমি সেই পথে যাবে না, যে পথে তোমার মন যেতে বলছে তোমাকে?
প্রায় এক বছর আগের এক সকালে আমার ক্যানসার ধরা পড়ে। ডাক্তারদের ভাষ্যমতে, এর থেকে মুক্তির কোনো উপায় নেই আমার। প্রায় নিশ্চিতভাবে অনারোগ্য এই ক্যানসারের কারণে তাঁরা আমার আয়ু বেঁধে দিলেন তিন থেকে ছয় মাস। উপদেশ দিলেন বাসায় ফিরে যেতে। যেটার সোজাসাপটা মানে দাঁড়ায়, বাসায় গিয়ে মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত হও। এমনভাবে জিনিসটাকে ম্যানেজ করো, যাতে পরিবারের সবার জন্য বিষয়টা যথাসম্ভব কম বেদনাদায়ক হয়।
সারা দিন পর সন্ধ্যায় আমার একটা বায়োপসি হলো। তাঁরা আমার গলার ভেতর দিয়ে একটা এন্ডোস্কোপ নামিয়ে দিয়ে পেটের ভেতর দিয়ে গিয়ে টিউমার থেকে সুঁই দিয়ে কিছু কোষ নিয়ে এলেন। আমাকে অজ্ঞান করে রেখেছিলেন, তাই কিছুই দেখিনি। কিন্তু আমার স্ত্রী পরে আমাকে বলেছিল, চিকিৎসকেরা যখন এন্ডোস্কোপি থেকে পাওয়া কোষগুলো মাইক্রোস্কোপের নিচে রেখে পরীক্ষা করা শুরু করলেন, তখন তাঁরা কাঁদতে শুরু করেছিলেন। কারণ, আমার ক্যানসার এখন যে অবস্থায় আছে, তা সার্জারির মাধ্যমে চিকিৎসা সম্ভব। আমার সেই সার্জারি হয়েছিল এবং দেখতেই পাচ্ছ, এখন আমি সুস্থ।
কেউই মরতে চায় না। এমনকি যারা স্বর্গে যেতে চায়, তারাও সেখানে যাওয়ার জন্য তাড়াতাড়ি মরতে চায় না। কিন্তু মৃত্যুই আমাদের গন্তব্য। এখনো পর্যন্ত কেউ এটা থেকে বাঁচতে পারেনি। এমনই তো হওয়ার কথা। কারণ, মৃত্যুই সম্ভবত জীবনের অন্যতম প্রধান আবিষ্কার। এটা জীবনের পরিবর্তনের এজেন্ট। মৃত্যু পুরোনোকে ঝেড়ে ফেলে ‘এসেছে নতুন শিশু’র জন্য জায়গা করে দেয়। এই মুহূর্তে তোমরা হচ্ছ নতুন, কিন্তু খুব বেশি দিন দূরে নয়, যেদিন তোমরা পুরোনো হয়ে যাবে এবং তোমাদের ঝেড়ে ফেলে দেওয়া হবে। আমার অতি নাটুকেপনার জন্য দুঃখিত, কিন্তু এটাই আসল সত্য।
তোমাদের সময় সীমিত। কাজেই কোনো মতবাদের ফাঁদে পড়ে, অর্থাৎ অন্য কারও চিন্তাভাবনার ফাঁদে পড়ে অন্য কারও জীবনযাপন করে নিজের সময় নষ্ট করো না। যাদের মতবাদে তুমি নিজের জীবন চালাতে চাচ্ছ, তারা কিন্তু অন্যের মতবাদে চলেনি, নিজের মতবাদেই চলেছে। তোমার নিজের ভেতরের কণ্ঠকে অন্যদের শেকলে শৃঙ্খলিত করো না। আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কথা হলো, নিজের মন আর ইনটুইশনের মাধ্যমে নিজেকে চালানোর সাহস রাখবে। ওরা যেভাবেই হোক, এরই মধ্যে জেনে ফেলেছে, তুমি আসলে কী হতে চাও। এ ছাড়া আর যা বাকি থাকে, সবই খুব গৌণ ব্যাপার।
আমি যখন তরুণ ছিলাম, তখন দি হোল আর্থ ক্যাটালগ নামের অসাধারণ একটা পত্রিকা প্রকাশিত হতো; যেটা কিনা ছিল আমাদের প্রজন্মের বাইবেল। এটা বের করতেন স্টুয়ার্ড ব্র্যান্ড নামের এক ভদ্রলোক। তিনি তাঁর কবিত্ব দিয়ে পত্রিকাটিকে জীবন্ত করে তুলেছিলেন।
স্টুয়ার্ট ও তাঁর টিম পত্রিকাটির অনেক সংখ্যা বের করেছিল। সত্তরের দশকের মাঝামাঝি সময়ে, আমার বয়স যখন ঠিক তোমাদের বয়সের কাছাকাছি, তখন পত্রিকাটির শেষ সংখ্যা প্রকাশিত হয়। বিদায়ী সেই সংখ্যার শেষ পাতায় ছিল একটা ভোরের ছবি। তার নিচে লেখা ছিল— ক্ষুধার্ত থেকো, বোকা থেকো । এটা ছিল তাদের বিদায়কালের বার্তা– “ক্ষুধার্ত থেকো, বোকা থেকো”।
আমি নিজেও সব সময় এটা মেনে চলার চেষ্টা করেছি। আজ তোমরা যখন বিশ্ববিদ্যালয়ের গণ্ডি ছেড়ে আরও বড়, নতুন একটা জীবনে প্রবেশ করতে যাচ্ছ, আমি তোমাদেরও এটা মেনে চলার আহ্বান জানাচ্ছি।
Stay Hungry. Stay Foolish.
ক্ষুধার্ত থেকো, বোকা থেকো
তোমাদের সবাইকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।

ছিন্নভিন্ন স্মৃতি


জী
বন কি কেবল স্মৃতি মাত্র?
তবে কেন স্মৃতিরা শত-সহস্র তরঙ্গের আদলে
আছড়ে পড়ে হৃদয়ের বালুবেলায়…

প্রতিদিন দেখা হয় কত মানুষের সাথে,
কত নাম, কতকিছুর ঘটনা।
অথচ সব ভুলে তবু মনে থাকে
ডান হাতের অনামিকায় একটি আংটির কথা।
চোখ পানে চেয়ে অজস্র লোকের সাথে
কথা হয়, তাদের সবই তো ভুলে যাই।
ভুলিনা শুধু উজ্জ্বল দু’টি বাদামী চোখ,
চোখের ওপরের পাতায় ছোট্ট একটা তিল।
কত-শত সুরের মূর্ছনা শুনে চলি প্রতিদিন,
কত বিদগ্ধ সংগীত। সন্ধ্যায়ই যেন
বিস্মৃত হয়ে যাই সব।
শুধু কানের মাঝে নিরন্তর ভেসে চলে
সেই সুরেলা কণ্ঠের অনুরণন-–
“আমার কিছু ভালো লাগে না, জানো?”
Sritite tumi
জীবনটা কি তবে স্মৃতি নয়?
কেন তবে হৃদয়ের অতল গভীরে গেঁথে থাকা
অজস্র আর্তিগুলো অস্ফূট ভেসে আসে সময়ে সময়ে।
সময়ে অসময়ে ভর করে কিছু প্রিয় মূহুর্তগুলো……
ফিরে ফিরে আসে অনুভূতির গহীন অরণ্যে,
হৃদয়ে একটু সুখের স্পর্শ, আর না পাওয়ার
নিদারুণ ক্ষরণ দিয়ে যাওয়া…
তার নাম তো স্মৃতিই বটে!
সুদূর হতে সেই বিস্মৃত স্মৃতিরাই ঘাড় মটকাতে আসে……
“আজ আমার খুব ভালোবাসতে ইচ্ছে করছে, জানো?”

আমি বড় একা


আমি বড় একা। আমার আপন বলতে এ পৃথিবীতে কেউ নাই। কিভাবে এই পৃথিবীতে বাঁচবো আমি জানিনা। প্রতি মূহুর্ত মনে হয় মৃত্যুকে আলিঙ্গন করি। ছেড়ে চলে যাই এই পৃথিবীর সমস্ত মায়া। দূরে অনেক দূরে চলে যাই এই পৃথিবীকে ছেড়ে। কত কষ্ট, কত কষ্টে বেঁচে আছি আমি। এই বেঁচে থাকার কোন মূল্য নাই। পেলাম না বাবা-মা’র স্নেহ, মায়া মমতা। পেলাম না ভাই-বোন কারো আত্মিক বন্ধন। যেখানে যাই সামান্য একটু আশ্রয়ের খোঁজে সবাই দূর দূর করে তাড়িয়ে দেয়। পৃথিবীটা এত নিষ্ঠুর কেন???? কেন খোদাতায়ালা আমাকে এত কষ্ট দেয়। কেন কোথাও খুঁজে পাই না একটু আশ্রয়, একটু পরম মায়া-মমতা??? এগুলো সবই আমার ভাগ্যের নির্মম পরিহাস। আবজাব লেখা। এগুলো লিখে কি হবে?? আমার ভাগ্যের নির্মমতা তো আর বন্ধ হবে না। এই পৃথিবীতে যার কেউ নাই, তার মনোবেদনা যে কত কষ্টের তা তো কাউকে মুখে বলে বা কাউকে লিখে বুঝানো যাবে না। বুঝাতে চাইও না। এই কষ্টের মধ্যে খোদা যেন কাউকে আর না ফালান সেই দোয়াই করতে পারি। সবাইও আমার জন্য একটু দোয়া করবেন যাতে দ্রুত এই পৃথিবী ছেড়ে চলে যেতে পারি, দু:স্বপ্নের সিড়ি বেয়ে অন্য কোন পৃথিবীতে। যেখানে কোন দু:খ কষ্ট, যন্ত্রনা, নির্মমতা নাই।

ইংরেজি সম্পর্কে মজার কিছু তথ্যঃ শুধু মজার নয় জানারও


০১. Lollipop হলো সবচেয়ে বড় ইংরেজি শব্দ, যা কিবোর্ডে লিখতে শুধু ডান হাত ব্যবহৃতহয়।
০২. Dreamt একমাত্র ইংরেজি শব্দ, যার শেষে mt আছে।
০৩. queue একমাত্র ইংরেজি শব্দ, যার শেষের ৪ অক্ষর বাদ দিলেও একই উচ্চারণ হয়।
০৪. যেসব শব্দের প্রথম অক্ষর Q, তার সব শব্দে Q -এর পরে u আছে।
০৫. Typewriter সবচেয়ে বড় ইংরেজি শব্দ, যা কিবোর্ডে লিখতে শুধু ওপরের সারি ব্যবহৃত হয়।
০৬. Stewardesses হলো সবচেয়ে বড় ইংরেজি শব্দ, যা কিবোর্ডে লিখতে শুধু বাম হাত ব্যবহৃত হয়।
০৭. ইংরেজীতে vowel যুক্ত সবচেয়ে ছোট শব্দ হলো A (একটি) ও I (আমি)।
০৮. Abstemious, Facetious শব্দে সবগুলো vowel আছে। মজার ব্যাপারহলো শব্দের vowel
সবগুলো ক্রমানুসারে (a- e-i-o-u) আছে।
০৯. Uncomplimentary শব্দে সবগুলো vowel আছে। মজার ব্যাপার হলো শব্দের vowel
গুলো উল্টো ক্রমানুসারে (u- o-i-e-a) আছে।
১০. ইংরেজি madam, reviver শব্দ দুটিকে উল্টো করে পড়লেও অর্থ একই হবে।
১১. a quick brown fox jumps over the lazy dog বাক্যটিতেইংরেজি ২৬টি অক্ষর আছে।
১২. ৮০কে letter marks বলা হয়। কারণ
L=12,
E=5,
T=20,
T=20,
E=5,
R=18
(অক্ষরের অবস্থানগত সংখ্যা)
সুতরাং ১২+৫+২০+২০+৫+১৮=৮০।
১৩. I am সবচেয়ে ছোট ইংরেজি বাক্য।
১৪. Executive, Future এমন দুটি শব্দ যাদের এক অক্ষর পর পর vowel আছে।
১৫. studz, hijak, nope, deft শব্দগুলোর প্রথম ৩টি অক্ষর ক্রমানুসারে আছে।
১৬. Almost সবচেয়ে বড় ইংরেজিশব্দ, যার বর্ণগুলো ক্রমানুসারে আছে।

মনের কি দোষ বলো

paintings-of-dravidian-women
মন ভাল নেই, মন ভাল নেই
মনের কি দোষ বলো?
আশে-পাশে দেখছি যতো
সবই এলো-মেলো।
মন আছে যার সেই মরেছে
মনের কি দোষ বলো?
মনের মানুষ না বুঝিলে
মনের মরন হলো।
মন থাকিলে যন্ত্রণা হয়
ভোগ করিতে হবে
শান্তি কোথায় মনের বলো
জগত আঁধার কালো।
মনের পেছন ছুটছি তবু
মন বুঝেনা তাও
মনটাকে তাই সান্তনা দেই
সবই ভুলে যাও।
মন শোনেনা আমার কথা
কি করি তাই বলো
দিন-রাত তাই মনের ব্যাথায়
চোখ যে ছলো ছলো।

ছোটবেলার বেশ কিছু হাস্যকর ধারনা!মিল

ছোটবেলার বেশ কিছু হাস্যকর ধারনা!মিলিয়ে নিন! ১) পৃথিবীতে দুইটা দেশ আছে বাংলাদেশ আর বিদেশ। ২) বিয়ে করলে বাচ্চা হয় না করলে হয় না। ৩) সাড়ে বারোটার পর বাজে সাড়ে একটা, সাড়ে একটার পর সাড়ে দুইটা। দেড়টা-আড়াইটা বলে কিছু নাই। ৪) কারো মাথার সাথে যদি নিজের মাথা একটা গুঁতা খায় তাহলে শিং ওঠে, সাথে সাথে আরেকটা গুঁতা খেলে আর ওঠে না। ৫) কোন ফলের বিচি খেয়ে ফেললে পেটের মধ্যে সেই ফলের গাছ হয়। ৬) সিনেমার মধ্যে নায়ক নায়িকারা নিজের গলায় গান গায়। ৭) “আই লাভ ইউ” খুব খারাপ একটা কথা, একেবারে অশ্লীল। ৮) যে যত ভালো ছাত্র তার রোল তত কম, আর যত খারাপ তত বেশি এইটা কেমন সিস্টেম?

১০) সিনেমার গানের মধ্যে নায়ক নায়িকা এত তাড়াতাড়ি ড্রেস চেঞ্জ করে কিভাবে? নিশ্চয়ই একটার উপর আরেকটা পরে থাকে,হুট করে উপরেরটা খুলে ফেলে দেয়। : ১১)নিউজপ্রেজেন্টাররা নিশ্চয়ই সংবাদ মুখস্থ করে। ১২)বাচ্চা দোকান থেকে কিনে আনে… ১৩)টিভিতে আমরা লিলিপুট সাইজের মানুষদের দেখি! ১৪)ছোটোবেলায় একবার রেডিও ভেঙে ভিতরে দেখি ছোট ছোট ক্যাপসুলের মতো অনেকগুলো বস্তু। সেগুলো দেখে আমি বুঝতে পেরেছিলাম যে, আসলে রেডিও বাজার সময় ওগুলোই গান গায়, কথা বলে…. ১৫)টিভিতে মানুষ টিভির পিছন দিক দিয়া ঢুকে! ১৬)পিপড়ে পেটে গেলে সাঁতার শেখা যায়। ১৭)লাল পিপঁড়া হিন্দু, কাল পিপড়া মুসলমান ৷ ১৮)আমার ধারণা ছিল বিয়ে করলেই মানুষ মরে যায় পরপর কয়েকটা সিনেমায় বিয়ের আসরে নায়ক-নায়িকার মৃত্যু দেখে এই ধারণা হয়েছিল ১৯)দাঁত ইঁদুরের গর্তে ফেললে ইঁদুরের মত শক্ত দাঁত হয় ২০)বালিশের উপর বসলে পশ্চাৎদেশ আকারে বড় হয়ে যায় ২১) টিভি দেখার সময় কেউ মারা গেলে ভাবতাম সত্যি বুঝি তাদের মৃত্যু হয়েছে।

যখন নিজেকে খুব একা লাগবে

যখন নিজেকে খুব একা লাগবে ,
সন্ধ্যার বাতাসে নিজেকে খুব হতাশ লাগবে ,
দুঃসহ স্মৃতিগুলো কষ্ট দিবে ,
একা একা বিষন্ন মনে বেলকনিতে বসে থাকবে ,
যখন কিছুই ভাল লাগবেনা
তখন আমায় ডেকো একটিবার ।
আমি সব কিছু ফেলে চলে আসবো
তোমার কাছে….. তবে
চিন্তা করোনা কোন
কিছু চাইবনা তোমার কাছে ।
শুধু নিস্বার্থ ভাবে ভালবেসে যাবো ।

জানবেনা কোনদিন

জানবেনা কেউ কোনদিন
তোমারে ভাবিয়া কোন এক রাতে,
নির্ঘুম কাটিয়েছি রজনী
তারাদের সাথে কথা বলে
আর রাতজাগা পাখিদের গান শুনে।
জানবে না কেউ কোন কালে-
হৃদয়ের প্রান্তরে তোমার জন্য
বুনেছি স্বপ্নের বীজ
যা অংকুরিত হবার আগেইবন্দি হলো
দুঃস্বপ্নের বেরাজালে।
বুঝবে না কেউ কোনদিন
কতোটা কষ্ট জমা এ হৃদয়ে
শুধুই তোমার বিরহে
এক নিবির দহন চেপে বুকে
থাকি আমি সদা হাসিমুখে।

পৃথিবীতে সব কিছুই আছে। অবাস্তব বলে কিছু নেই। খুঁজে নেওয়ার মতো চোখ থাকা চাই।

পৃথিবীতে সব কিছুই আছে । অবাস্তব বলে কিছু নেই । খুঁজে নেওয়ার মতো চোখ থাকা চাই । আমার মতো সব মানুষেরই চোখ আছে । ঠিক ঠিক জিনিস খুঁজে নিতে পারি না কেন ? তাহলে কি সব মানুষের চোখ আলাদা ? হ্যাঁ সব মানুষের চোখ আলাদা । চোখ যেমন দেখে মুখ তেমন কথা বলে।
ভূত কংকাল নয়। ভূত রক্ত মাংস শরীর নয়। ভূত হলো অদৃশ্য শক্তি। গল্পে ভূতের কথা যেভাবে বলা হয়, বাস্তব ভূত তেমন নয়। সত্যকারের ভূত কেমন ? মানুষ এখনো তার ব্যাখ্যা দিতে পারে নি। যার চোখ যেমন দেখেছে, সে তেমন কথাই বলেছে। সামনে ভূত আছে , চোখে দেখতে পাচ্ছি। এতে ভয়ের কিছু নেই। সামনে ভূত আছে , চোখে দেখতে পাচ্ছি না তাহলে ভয়ের কিছু আছে।
আমরা সবাই ভয় পাই। চোখে দেখলে ভয়ের কিছু নেই। চোখে না দেখাটাই ভয়। চোখে দেখলে তার সাথে লড়াই করা যায়।
চোখে না দেখলে তার সাথে লড়াই করা যায় না। আর এটাই ভয় ।
mon

থানায় সাধারণ ডায়েরি কেন করবেন, কিভাবে করবেন?

ভয়-ভীতি বা হুমকি দিলেই যে শুধুমাত্র জিডি করতে হয়-এমন কিন্তু নয়, নানা প্রয়োজনেই আপনাকে জিডি করতে হতে পারে। যেকোনো ধরনের অপরাধের ক্ষেত্রে প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি থানায় জিডি করতে পারেন। কারো যদি কোনো প্রয়োজনীয় কাগজপত্র যেমন-জাতীয় পরিচয়পত্র, শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ, পাসপোর্টসহ অন্যান্য গুর“ত্বপূর্ণ প্রয়োজনীয় নথি হারিয়ে যায়, সেক্ষেত্রে জিডি করাটা জর“রি। এ ছাড়া হুমকি, ছিনতাই, এমনকি পরিবারের কেউ যদি হারিয়েও যায় সেক্ষেত্রে জিডি করতে হবে। যেকোনো সমস্যা হলেই সাথে সাথে থানায় জিডি করে ফেলুন। পরে যদি আপনার কোনো ক্ষতি হয়েই যায়, তা হলে আইনি সহায়তা নিতে অনেক সহায়ক হবে ওই জিডি।
কোথায় করবেনঃ
সাধারণত অনেকে বুঝ তেই পারেন না, কোন থানায় জিডি করবেন। নিয়মমতে আপনার যাত্রা শুরু যেখান থেকে বা যে এলাকায় আপনার জিনিস হারিয়েছে বা খোয়া গেছে, সে এলাকার থানাকে প্রাধান্য দিতে পারেন। তবে, আপনার ছিনতাই হলো এক থানার অধীনে আর আপনি জিডি করতে যাবেন অন্য থানায়, এমনটি ঠিক নয়। তাই, সবসময় ঘটনা¯’লকে বিবেচনায় নিতে হবে। অন্য সব ক্ষেত্রে নিজের থানায় জিডি করা যাবে।
যা থাকবে দরখাস্তেঃ
জিডি সাধারণত অন্যান্য দরখাস্তের মতোই। বিষয়টি নিয়ে ঘাবড়ানোর কোনো কিছু নেই। থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি)-র বরাবর দরখাস্ত লিখতে হয়। তার নিচে থানার ঠিকানা। এরপর লিখতে হবে বিষয়। আপনি কী কারণে জিডি করছেন, সে বিষয়ে উল্লেখ করতে হবে। বিবরণ অংশে আপনার জিডির বিস্তারিত বিবরণ এবং প্রয়োজনে ঠিকানা (বর্তমান ও স্থায়ী) তুলে দিতে হবে। একেবারে নিচে আপনার নাম, যোগাযোগের ঠিকানা, ফোন নম্বর দিতে হবে।
অনলাইন সুবিধাঃ
নগরবাসীর জন্য জিডির প্রক্রিয়া সহজ করতে ঢাকা মহানগর পুলিশ অনলাইন পদ্ধতি চালু করেছে। আপনি চাইলে ঘরে বসেই অনলাইনে জিডি করতে পারেন। এর বাইরেও অনলাইনে যে সুবিধা আছে, তা হলো এক সঙ্গে যদি আপনার অনেক জিনিস হারিয়ে যায়, তা তুলতে গেলে আপনার কাছে জিডির মূল কপি চাইতে পারে। কিন্তু মূল কপিতো থাকবে একটাই। সেক্ষেত্রে আপনি যদি অনলাইনে করে থাকেন তখন, শুধু জিডির নাম্বারটা ব্যবহার করলেই যথেষ্ট। তবে সতর্কবাণী হয়েছে অনেকেই ঘটনার তারিখ, সময় এবং স্থান উল্লেখ করতে ভুল করেন। ঘটনার তারিখ, স্থান, সময় তিনটি বিষয়ই অনেক গুরুত্বপূর্ণ। তা খেয়াল রাখতে হবে। 
জিডি করার পরঃ
থানার কর্তব্যরত কর্মকর্তা ডিজি-টি পরে সংশ্লিষ্ট থানার ওসির কাছে পাঠান। তিনি জিডি-টি পড়ে প্রয়োজনে কোনো উপপরিদর্শক বা সহকারী উপপরিদর্শকের কাছে তদন্তের দায়িত্ব দিয়ে থাকেন। তদন্তে ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা এফআইআর দায়ের করেন।
কিছু জরুরি তথ্যঃ
জিডি করতে কোনো টাকা-পয়সা লাগে না। এমনকি আপনি যদি না-ও লিখতে পারেন, সেবা প্রদান কর্মকর্তা প্রয়োজনে তা লিখে দিবেন, আপনি শুধু নিচে স্বাক্ষর করবেন। এর জন্য ওই কর্মকর্তাকে কোনো ফি দিতে হবে না। জিডি লিখে তা জমা দিতে হবে থানার কর্তব্যরত কর্মকর্তার দপ্তরে। তিনি তা গ্রহণ করে জিডির নাম্বার ও তারিখ বসাবেন এবং তা নির্ধারিত রেজিস্টারে তালিকাভুক্ত করবেন। এবং আপনার কপিতে তা লিখে দিবেন। যারা অনলাইনে জিডি করবেন, তারা চাইলে সংশ্লিষ্ট থানায় গিয়ে জিডির নাম্বারসহ তার একটি কপি সংগ্রহ করতে পারেন।Gpnews24.com , online 

গর্ভপাত – ভ্রূণ না হত্যা ??? মানুষ খুনের একটি সত্য ঘটনা ।

বুধবার বাহিরে ঝিমঝিম বৃষ্টি হচ্ছে । আমার পড়ার টেবিলটা ঠিক জানালার পাশে,তাই খুব সহজেই বৃষ্টি ছুতে পারি । হাত বাড়ালেই বৃষ্টির পানি আমার হাতে এসে পড়ে। গত বছরের শুরুর দিকের কথা,আমি তখন আমি ক্লাস টেনের ছাত্রি,ঢাকা শহরের মেয়েদের সবচেয়ে ভাল ও নামকরা বিদ্যাপীঠের ছাত্রী হিসেবে পরিবারে আমার শুনামের অভাব নেই,ভালো ছাত্রী শুনামে ভালই যাচ্ছিলো জীবন। হটাত করেই “রবি” নামের এক মুঠোফোন কোম্পানি একটি সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম খুলে circle । আমি তখন একটা আইডি খুলি sHuShmitTa নামে । খুলে ভালই চলছিল , নতুন নতুন মানুষের সাথে পরিচয় হচ্ছিল । ফেবুতে অপরিচিতদের সাথে কথা না বলার কারনে অপরিচিত সবসময়ই অপরিচিত রয়ে গিয়েছিল । মানুষকে জানার একটা ভালো মাধ্যম হয়ে দাঁড়ায় এটি । আমার বহু ছেলে এবং মেয়ের সাথে পরিচয় হয় । নানা মানুষের নানা রুপ দেখে আমি অভিভুত হয়ে পড়ি । একটা ছেলের সাথে পরিচয় হয় । circle এ Rajprodip নামে লিখত । তার পাঠানো প্রথম poke এর কথা আমার আজও মনে আছে । “Bristy hosse,khichuri kheyeso?” আস্তে আস্তে ছেলেটার সাথে আমার কথা হয়, নাম জানতে পারি, চলে পোক এর পর পোক । ছেলেটার সাথে কথা বলতে বলতে এতটাই পছন্দ করে ফেলি যে ফেবু পড়ালিখা সব বাদ দিয়ে তার সাথে পোকাপুকি করতাম । ছেলেটা আমার ফোন নাম্বার নেয়, ওহ,লিখতে ভুলে গেছি ছেলেটার নাম “পলাশ ” । রবি ফ্রি circle সুবিধা বাতিল করে দিলে আমরা ফোনে কথা বলা শুরু করি,রবি সিম পালটিয়ে বাংলালিংক ব্যবহার শুরু করি,৫ টাকাতে ৫০০ এস এম এস কিনে মেসেজিং শুরু হয়,কত রাত, কত সময়, কত নিরঘুম কাল কেটেছে কে জানে ?? বন্ধু থেকে তাই ভালবাসার মানুষ হতে বেশী সময় লাগে নি, ওর সাথে পরিচয় হবার পর থেকেই ফেবু ওফ করে দেয়, পলাশ নিষেধ করেছিল,আর ভালবাসার কাছে সব কিছু তুচ্ছ ছিল বলে কিছুই গায়ে লাগেনি, পরিচয়ের পর প্রায় ৬ মাস পর আমি পলাশের সাথে দেখা করি গুলশানে, এক সাথে খাই ওয়েস্টিনে, ভালবাসার মানুষের হাতের প্রথম স্পর্শ আমার আজও মনে আছে, আমার গায়ের প্রতিটি লোম দাড়িয়ে গিয়েছিল, পলাশের আলতো স্পর্শ আমার জীবনে যে ঘূর্ণিঝড় তুলেছিল তার প্রলয়লীলা আজও রয়েছে আমার শরীরে । তারপর আমরা বার বার দেখা করি, নভেম্বর মাসে ৩ বার, ডিসেম্বরে ৫ বার । এবার আমরা দেখা করি উত্তারাতে, আব্দুল্লাহপুর থেকে ১০ টাকা ভাড়া দিয়ে সুইচ গেত,তারপর আরও ৩০ টাকা রিক্সা ভাড়া দিয়ে পলাশের বন্ধুর বাসা । আর ভালবাসার কাছে সব কিছু তুচ্ছ ছিল বলে কিছুই গায়ে লাগেনি,নিজেকে বিছানায় সপে দিতে তাই দ্বিতীয়বার ভাবিনি, আমি তখন ভাবতাম আমিতো আমার স্বামীর জন্যেয়, তার সম্পদ তাকেই তো তুলে দিচ্ছি । আমি নিজে থেকেই কখনো তার কথাতে বারবার গিয়েছি নাম না জানা পলাশের বন্ধুর বাড়ি । এর মধ্যে আমার এস এস সি এক্সাম শুরু হয়, এক্সাম শেষে আমি দেখা করি আবারও । আমাদের সব শেষ দেখা হয় মার্চ মাসের ১৬ তারিখে, উত্তরায়, সাদা রঙের বিছানার চাদরের উপরে। ভাগ্যের পরিহাস বোঝা বড় দায় । মেডিসিন নেবার পরেও আমার menses ওফ হয়ে যায় । দোষ আমার ভাগ্যের না ওষুধের ছিল আমি জানিনা। নির্দিষ্ট সময়ের পর প্রায় ১৫ দিন আমি menses এর অপেক্ষা করি , তারপর আমি পলাশকে কথাটা বলি । “আচ্ছা আমি ব্যাপারটা দেখসি” কথাটি বলে পলাশের ফোন অফ হয়ে যায়, ৪টি সিম সব গুলো ওফ । তখন আমি বুঝতে পারি আমি পলাশ সম্পর্কে কিছুই জানিনা। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞানের ছাত্র, থাকে সাভারের একটি মেসে । আর ৪টি ফোন নাম্বার । আর কিছুই না । আর ভালবাসার কাছে সব কিছু তুচ্ছ ছিল বলে হয়তো কিছুই গায়ে লাগেনি । তারপর দিন যেতে থাকে, আমি নিজেকে গুটাতে থাকি আর নাম্বার গুলতে ফোন দিতে চেষ্টা করি, ফোন আর কখনো ধুকেনি । মাঝে মাঝে ভাবতাম আবির সামিয়ে নামের আমাদের ২টি ছেলে মেয়ের নাম কেন ঠিক করেছিল পলাশ ??? সব শেষে আমি আমার এক খালাত ভাই এর বন্ধু “রিশাদের” যে ঢাকা মেডিকেলের কলেজের ছাত্র, তার কাছে সব কিছু খুলে বলি, তার সাহায্য চাই, আমার কথা শুনে তিনি আমাকে বলেছিলেন -তোমার সব সমস্যার সমাধ্যান আমি করে দিব , বিনিময়ে আমি কি পাব ?? তার চোখের দিকে আমি তাকিয়েছিলাম, ছেলেটির চোখের ভাষা ছিলো আমার পরিচিত । কত বার আমি দেখেছি এ ভাষা পলাশের চোখে । শেষ বার চাদরের রঙ ছিল সাদা, সে দিনের চাদরে ছিল হাল্কা হলুদের মাঝে লাল লাল কিছু ছোপ । নাহ,আমি রাগ করিনি, ৫০০০ টাকা সে আমার পিছে খরচ করেছে, আমি তো মাত্র ৫ মিনিট। আমি আসলেই রাগ করিনি “রিশাদের” উপরে। উপকারের বিনিময়ে কিছু নেয়া কি দোষের ?? ৯ তারিখ আমার রেজাল্ট দিয়েছিল,আমি গোল্ডেন এ+ পেয়েছি, আমি এখন বুঝি আমার শরীরে যে জীবন ছিল সে আর নেই, আমি তাকে খুন করেছি, নিজের প্রতি ঘ্রিনা আর ধিক্কার নিয়ে বেচে আছি গত ১মাস থেকে, মাঝে মাঝে মনে চাই গায়ের চাম্রা গুলো ছিড়ে ফেলতে, বুক হতে সারা শরিরের চামরা ছিলে ফেলতে । জীবনে বেচে থাকতে হলে নিজের প্রতি ভালবাসা থাকতে হয়, আর নিজের শরীরকে এবং জীবনকে ঘ্রিনা করে বাচা যায় না । আমি আমার পরিনিতির দিকে এগুচ্ছি, আমার মৃত সন্তানের কাছে । পৃষ্ঠা ১৩৮ ডাইরি এখানেই শেষ । মুখবন্ধ – আমি সাহিত্তের দাস,ইতিহাসের নহে। কয়েক দিন আগে আমার এক পরিচিত মানুষের জিএফ প্রেগ্নেন্ট হয়ে পড়লে হাজার খানেক টাকা খরচ করে পেট পরিষ্কার করেছে মেয়েটা আর ছেলেটা মিলে, সত্যি বলছি খুব কস্ট পেয়েছি, এত সহজে মানুষ খুন করা যায়। আমি ছেলেটির সাথে সব ধরনের সম্পর্ক ছিন্ন করেছি, এ ধরনের ছেলেরা বেশ্যা *** পারে,কিন্তু বাপ হতে লজ্জা পাই, বাপ মায়ের বেজন্মা সন্তান । আমার এক চাচা আমাকে বলেছিল, সন্তান কখনো অসুস্থ হয় না, অসুস্থ হয় তার বাপ-মা । আসুন আমরা জাগি, নতুবা আগামিকাল আপনার মেয়ে অথবা আপনার বোন ।

অনেক দিন ধরে অনেক খোঁজাখুঁজি করে কয়েকটি বানী সংগ্রহ করলাম। বাণীগুলো আপনাদের জানা থাকতে পারে। তারপরেও দিলাম। বানী গুলো অন্য কোন সাইট বা ব্লগে পেতে পারেন। কারন আমি তো আর গুণীজন নই যে নতুন নতুন বানী উদ্ভাবন করব আর শেয়ার করব? যাই হোক আসল কথায় আসি। আর কথাই বা কি বানীগুলো হলঃ

১)বারবার একই ব্যাক্তির প্রেমে পড়া সার্থক প্রেমের নিদর্শন। (ব্রোটন)

২)প্রেম হল মানসিক ব্যাধি।(প্লুটো)

৩)প্রেম হল ধীর প্রশান্ত ও চিরন্তন। (কাজী নজরুল ইসলাম) ৪)সবকিছুর শুরু, মধ্য এবং অন্তই হচ্ছে প্রেম। (নফডেয়ার)
৫)যৌবনে যার প্রেম এলোনা তার জীবন বৃথা। (শংকর)
কইয়া যাইবেন, কার জীবন বৃথা।
৬)একমাত্র প্রেমেই বিয়েকে পবিত্র করতে পারে। আর একমাত্র অকৃত্রিম বিয়ে হচ্ছে সেটাই, যেটা প্রেমের দ্বারা পবিত্রকৃত। (লিও টলষ্টল)
৭)ভালবাসার কোন অর্থ বা পরিমাণ নেই। (কাজী নজরুল ইসলাম)
৮)ভালবাসা দিয়েই কেবল ভালবাসার ঋণ পরিশোধ করা যাই। (আলেকজেন্ডার ব্রাকেন)
৯)অন্ধভাবে কাউকে ভালবাসলে তার ফল শুভ হতে পারেনা। (কারলাইন)
১০)যে ভালবাসে কিন্তু প্রকাশ করে কম সে ভালবাসার ক্ষেত্রে প্রকৃত। (জর্জ ডেবিটসন)
১১)গভীর ভালবাসার কোন ছিদ্রপথ নেই। (জর্জ হেইড)
১২)ভালবাসার নদীতে জোয়ার ভাটা আছে। (জন হে)
১৩)ভালবাসা হচ্ছে জীবনের বন্ধু। (জেমস হাওয়েল)
১৪)ভালবাসা হৃদয়ের দরজা মুহুর্তেই খুলে দেয়। (টমাস মিল্টন)
১৫)ভালবাসা দিয়ে মরুভুমিতে ফুল ফোটানো যায়। (ডেভিসবস)
১৬)ভালবাসা এমন একটি প্লাটফরম যেখানে সব মানুষ দাড়াতে পারে। (টমাস মিল্টন)
১৭)মানুষের জীবন হলো একটি ফুল, আর ভালবাস হলো মধুস্বরুপ।(ভিক্টর হোগো)
১৮)পাখিরা বাসা বাধে লতা পাতা দিয়ে,
আর মানুষ বাধে ভালবাসা দিয়ে। (মুঃ ইসহাক কোরেশী)
১৯)একমাত্র ভালবাসা সারাতে পারে সব রোগ। (গতিয়ে)
২০)যাকে ভালবাস তাকে চোখের আড়াল করোনা। (বঙ্কিম চন্দ্র)
২১)ভালবাসতে শেখ, ভালবাসা দিতে শেখ।তাহলে তোমার জীবনে ভালবাসার অভার হবেনা। (টমাস কুলার)
২২)ভালবাসার প্রতিদানেই ভালবাসা পাওয়া যায়।
২৩)তুমি অপরকে ভালনা বাসলে,
অপরের ভালবাসা পেতে পারনা।

২৪) একমাত্র প্রেমেই বিয়েকে পবিত্র করতে পারে। আর একমাত্র অকৃত্রিম বিয়ে হচ্ছে সেটাই, যেটা প্রেমের দ্বারা পবিত্রকৃত। (লিও টলষ্টল)

একটি বিবাহ

দীপার মেজাজ এখন তিরিক্ষি হয়ে আছে। সে বর্তমানে বসে আছে তার বাসর ঘরে এবং বধু বেশে। এক হাত লম্বা ঘোমটা দেয়া মাথায়, গরমে আগে থেকেই ঘামছিল, এখন রাগের কারণে আরো বেশি ঘেমে গেছে। রাগার কারণ আর কিছুই না- হাতের চিঠিটা। লিখেছে তার হবু বর শ্রাবণ।
“ প্রিয় দীপা,
কলেজ থেকেই, থুক্কু স্কুল থেকেই তুমি জানো আমি তোমাকে কত বেশি ভালোবাসি এবং তার থেকেও বেশি ভয় পাই। তোমার মত মোহাম্মদ আলী টাইপের মত মেয়েকে কেমন করে আমার মত ছেলে ভালবাসল – তা আমার কাছে এখন পর্যন্ত দূর্বোধ্য একটা বিষয়! তোমার মত বিরাট ঘরের মেয়ের আমার মত বেকার ছেলেকে বিয়ে করার কোনো কারণ খুঁজে পাচ্ছিলাম না। অবশেষে যখন জানতে পারলাম আসলে তোমার বাবা আমাকে ঘর জামাই বানাতে চান- তখন আমি ভয় পেয়ে গেলাম। ‘ঘর জামাই’ শব্দটার মানে হল সারা জীবন আমাকে তোমার বাবার বিশাল প্রাসাদে বন্দী হয়ে থকতে হবে! তাহলেই হয়েছে! আমি সব ত্যাগ করতে পারি তোমার জন্য, মাগার স্বাধীনতাটা ছাড়া।
ডার্লিং, আমার কথাটার অর্থ তুমি উলটা বুঝো না। আমি আসলে ছারপোকা টাইপের মানুষ তো, মেসের রূমই আমার জন্য স্বর্গ। এই স্বর্গ ত্যাগ করে তোমার বাবার রাজ বাড়িতে আমাকে যেতে বোলো না! একে বারে ককরোচের মত মরে যাবো!
তার চেয়ে এক কাজ করো, তুমি আমাকে বিয়ে কোরো না, তাহলে আমি বেঁচে যাই। তুমিও আমার মত ছারপোকার বউ হওয়া থেকে বেঁচে যাও।
-ইতি
শ্রাবণ”
চিঠিটা দীপা এক ঘন্টা আগেই পেয়েছে। তার বাড়িতে যখন বিয়ের উৎসব ধুমধামে চলছিল তখন একটা ছেলে এসে তাকে এই চিঠিটা দিয়ে গেছে। চিঠিটা দেখে তার বাবা মারাত্নক ক্ষেপেছেন। চেঁচিয়ে বলেছেন, “আমার মেয়ের জীবন নিয়ে মশকরা! মামদোবাজী!! ঐ চামচিকার গায়ে এত তেল হয়েছে!!! ঐ হারামজাদার হাড্ডি ভেঙ্গে আমি নেহারী পাঁকাবো! ঐ নেহারী দিয়ে আমি কাল দুপুরের ভাত খাবো, হুঁ!”
বিয়ের সব আয়োজন ভেস্তে গেল মাত্র পাঁচ মিনিটেই। কন্যা পক্ষের সবাই মেয়ের জন্য খানিক আহা উঁহু করে এবং বর নামের তেলাপোকাটাকে আচ্ছা মত গাল দিয়ে যার যার বাড়ি চলে গেল।
দীপা তার ঘরে বসেই সব জানতে পারলো। কিন্তু কিছু বললো না। কেবল শ্রাবণের ওপর রাগে গা টা কাঁপছে তার। সে কি করবে ভেবে পাচ্ছে না। এক বার ভাবল বিষ খাবে, পক্ষরণেই বিষ খাবার চিন্তাটা বদলে দিল। ঘরে ইদুর মারার বিষ ছাড়া ভাল বিষ নেই। চাইলে ইদুরেরটাই খানিকটা খেয়ে দেখতে পারতো, তাতে লাভ নেই। কারণ ইদুরই ঠিক মত মরে না, আর সে তো আস্ত মানুষ! তারওপর বিষে ফ্যাট আছে কিনা জানে না। সে আবার স্বাস্থের ব্যপারে খুব সচেতন। দিনে এক বেলা খায়। রাতে খায় না। ইদুরের বিষের বোতলের গায়ের কাগজটা ছুটে গেছে। ফ্যাট আছে কিনা দেখার জন্য কাগজটা খুঁজে দেখল- পেলো না।
এখন সে কি করবে তাই ভাবছে। শ্রাবণ গাধাটাকে সে স্কুল থেকে ভালবাসে। অথচ এখন গাধাটা বলছে নাকি তাকে বিয়ে করতে পারবে না! পেয়েছে কি!
বিছানা থেকে নামল দীপা। ড্রেসিং টেবিল থেকে এক গাদা ঘুমের টেবলেট নিলো। মুখে দিতে গিয়েও থেমে গেল- ওষুধে কাজ না করে যদি? না মরে যদি ঘুমিয়ে থাকে কেবল,তাহলে তো চোখ মুখ বেশি ফুলে যাবে। বেশি ঘুমালে মানুষ নাকি মোটা হয়!  আর সে এভাবেই বা মরবে কেন? দোষ করেছে আরেকজন, তার জন্য সে মরবে কেন? মরা তো উচিত ঐ গাধাটার!
তাই ট্যাবলেট গুলো ফেলে দিল। মোবাইল বের করে শ্রাবণকে কল করল। অনেক্ষণ ধরল না ফোন শ্রাবণ। তারপর ধরল এক সময়, “হ্যালো?” ঘুম জড়ানো কন্ঠ শ্রাবণের।
“আমি দীপা।” ঠান্ডা গলায় বলল দীপা।
“ও…… ভাল আছো?” কথা খুঁজে পেল না শ্রাবণ।
“খুউব! তোমার মত ইডিয়েটকে বিয়ে করার হাত থেকে বেঁচে গেলাম।”
“কংগ্রাচুলেশন!”
“ফাজলেমি রাখো!” ধমক দিল দীপা, “আছো কোথায়?”
“মেসের রূমে।”
“ঘুমাচ্ছিলে?”
“হ্যা।”
“আমাকে বাসর ঘরে বসিয়ে রেখে তুমি মেসে আছো? লজ্জা করল না? বিয়েতে এলে না কেন?”
“এমন ভাবে বললে যেন বিয়েতে আমার দাওয়াত ছিল, খেতে গেলাম না কেন জানতে চাইছো!” মিনমিন করে বলল শ্রাবণ।
“যেটা জিজ্ঞেস করেছি সেটার উত্তর দাও!”
“তোমাকে বিয়ে করলে এক্কেবারে ফেঁসে যেতাম তো, তাই।”
“তাহলে কি জীবনেও বিয়ে করবে না?” দীপা ধমক দিয়ে জিজ্ঞেস করল।
“মনে হয় না। ভাবছি তোমার শোকেই বাকি জীবনটা কাটিয়ে দেবো।”
“আমার শোকে মানে! আমি কি করলাম আবার?” দীপা অবাক হয়ে বলল।
“মানে, তুমি তো কিছুই করনি।কিন্তু একদিন নিশ্চয়ই কাউকে বিয়ে করবে। সংসার হবে। ছেলে পুলে হবে- ওদের নিয়ে থাকবে। সেখানে আমি নেই। তাই ‘তোমার শোক’এর কথাটা বললাম।
“তোমার কথার আগা মাথা আমি কিছুই বুঝতে পারছি না।”
“আমিও তোমাকে বোঝাতে পারছি না।” শান্ত ভাবে শ্রাবণ বলল।
দীপা খানিক দম নিয়ে বলল, “আমি এই মুহূর্তে তোমার মেসে আসছি।”
“কেন?”
“আত্নহত্যা করবো বলে। তোমার তিন তলা মেসের ছাদ থেকে লাফ দিবো। সেখানে মরে পরে থাকবো। চিঠি লিখে যাবো- ‘আমার মৃত্যুর জন্য দ্বায়ি শ্রাবণ মানের একটা গাধা’।”
“সত্যিই আসছো নাকি?” বেশ খুশি খুশি গলায় বলল শ্রাবণ।
“হ্যা।” বরফ শীতল গলায় বলল দীপা, “একেবারে লাল বেনারসী পরে আসবো, মরার জন্য।”
বলেই লাইন কেটে দিল দীপা। রাগে গা জ্বলছে ওর। এভাবে আত্নহত্যা করবে বলায় পরেও শ্রাবণের নির্বিকত্ত্ব ওকে আরো রাগিয়ে দিয়েছে। বাড়ির কাউকে না জানিয়ে সে রাত সাড়ে এগারোটায় ট্যাক্সি ক্যাবে করে শ্রাবণের তিন তলা মেসের সামনে এসে নামল। সারা মেসের একটা ঘরেও বাতি জ্বলছে না, সবাই গভীর ঘুমে।
দীপা শ্রাবণকে কোথাও দেখতে পেল না। ভেতরে ভেতরে ওর মন বলছিল হয়তো শ্রাবণ ওকে থামাতে আসবে।
বলবে ‘প্লিজ দীপা তুমি মরতে যেও না। আমি তোমাকে বিয়ে করব!’
কিন্তু ইহ তল্লাটেও শ্রাবণের চেহারা দেখা গেল না। তাতে তার রাগ আরো বেরে গেল। মেসের সিঁড়ি বেয়ে দুপদাপ পা ফেলে ছাদে উঠে এল। সারা ছাদ ফাঁকা। ওপরে তারা জ্বলা আকাশ। চারপাশে সুনসান নীরবতা। মৃদু মন্দ হাওয়া বইছে। অদ্ভূত সুন্দর একটা মুহূর্ত- কিন্তু দীপার এসব দেখার সময় নেই। সে ছাদের কিনারে গিয়ে দাঁড়াল। এক নজর চারপাশ দেখে শ্রাবণের উপর গভীর অভিমান নিয়ে লাফ দিল।
০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল। ১০৩ নং কেবিন। দীপা ভেতরে, বেডে। তবে শুয়ে নয়, বসে আছে। বেডে যে শুয়ে আছে ওর না শ্রাবণ। বেচারার সারা শরীর ব্যান্ডেজের পোটলা হয়ে গেছে। উঁ উঁ করে কোঁকাচ্ছে খানিক পর পরই।
দীপা বিরক্ত হয়ে বলল, “এখন এত চেঁচাচ্ছো কেনো?”
বান্ডিলের ভেতর থেকে চিঁ চিঁ করে শ্রাবণ বলল, “বাবারে! এক্কে বারে চ্যাপ্টা হইয়্যা গেছিরে! মাইয়্যার বডি এত স্লিম, এর পরও আলগাইবার পারলাম না!!”
ঝাঁঝিয়ে উঠল দীপা, “তোমাকে বলেছে কে আলগাতে?”
পাশেই ওদের বন্ধু বদি বসে ছিল। সে বিরক্ত কন্ঠে বলল, “তখনি শালারে নিষেধ করছিলাম বিয়া নিয়া তামাশা না করতে! শালার বলদা কোনহানকার!”
শ্রাবণ কোঁ কোঁ করতে করতে বলল, “আমি কি করলাম?”
“আমি যদি বিষ খেয়ে মরতাম মেসে না এসে? তখন?” ধমকে উঠল দীপা।
“ওইটা যে তুমি করবা না ভাল করেই জানি। যে মেয়ে ফ্যাটের ভয়ে আইসক্রিম পর্যন্ত খায় না- সে খাবে বিষ! তহলেই হয়েছে!” কোঁকাতে কোঁকাতে বলল।
দীপা আর বদি দুজনেই চোখ পাকালো ওর দিকে তাকিয়ে।
“আমার দোষ কই?” মিনমিন করে বলল শ্রাবণ, “ আমি তো মেসের রুমে ঠিক মত বাসর সাজিয়েই রেখেছিলাম। খালি…..”
“হ-হ, সব তো রেডিই করছিলি, খালি হাসপাতালে আওনের ব্যাপারডা বাদে।”
তিক্ত কন্ঠে নিজেকেই বলল বদি, “হালারে ভূতে পাইছে! কয় মেসে বাসর করবো! তাই দীপারে ভুল চিডি পাঠাইল। তারপর নিজে বাসর সাজাইল মেসের রূমে। দীপা গেল ছাদে লাফ দিবার। শ্রাবইণ্যা হালায় নিজেরে বাংলা সিনামার নায়ক পাইছে! যেন চাইলেই নায়িকারে ক্যাচ ধরবার পারবো! গাধা কোনহানকার! এক্কেবারে বাংলাদেশি ক্রিকেটার! ধরবার তো পারলোই না, উল্ডা ঘাড় মটকাইয়া, হাত পা ভাইংগা এইহানে!”
দীপা চোখ পাকিয়ে শ্রাবণের দিকে তাকাল। শ্রাবণ পাংশু মুখে বলল, “এ জন্যই তোমাকে বিয়ে করতে চাই না আমি……. তুমি আর আজরাইল একই জিনিস!”
“আর এখন আমাকে বিয়ে না করলে তোমাকে আমি এই বিল্ডিংয়ের ছাদ থেকে ফেলে দেবো, বুঝেছো!” হুংকার দিলো দীপা, “ রাজী কি না?”
সাথে সাথে ভদ্র ছেলের মত শ্রাবণ বলল, “ না কৈ বললাম? এই বদি, আমি কি না বলেছি? মোটেও না!”

অর্থহীন বদলে দেয়া

তোমার জন্য সব খারাপ অভ্যাসই তো ছেড়ে দিচ্ছিলাম। আমার তো একটাই খারাপ অভ্যাস ছিলো। সিগারেট টানা। যদিও ততো বেশী পরিমানে না। আর তুমি, সিগারেট টানাটা আরো বাড়িয়ে দিলে।
আমার একটা বদঅভ্যাস হয়তো ছিলো। একটু বেশী ঘুমানো। তাও দিনে। রাত জাগতাম। দিনে ঘুমাতাম। আর তুমি, আমার ঘুমটাই কেড়ে নিলে।
তোমার জন্য তো নিজেকেই বদলে ফেলছিলাম। আর তুমি, আমার জগৎটাকেই বদলে দিলে।
জানি না কি অপরাধ ছিলো আমার। যে আমাকে এভাবে কষ্ট দিলে। তুমি চাইলেই সব বদলে যেতে পারতো। আমি বদলাতে পারতাম। জগৎটা বদলাতে পারতো, আমাদের (যদিও জানি না আমাদের না শুধু আমার) স্বপ্ন গুলো ও সত্যি হতো। কিন্তু। হলো না।
আমি তোমাকে দোষারোপ করবো না। আমি একটা খারাপ ছেলে। থাকি না, খারাপ হয়েই থাকি। আমি খারাপ থাকলেই বা কার কি আসে যায়।

গ্রাম্য ভুত


ভ্রষ্ট নহি; নষ্ট নহি,
যদিও কষ্ট মনে
এত কষ্টেও রেখেছি বন্ধন- বন্ধু তোমার সনে।
সারসংক্ষেপে করব বর্ণন জানুক সর্ব লোকে-
ক্লান্ত পথিক ক্ষান্ত মিশন, পাথর অধিক শোকে!
তুমি হলে হাই সোসাইটির আমি গ্রাম্য ভুত
এত কিছুর পরেও মোদের মিল ছিল অদ্ভূত।
একই বর্ষে একই বিষয় করতাম লেখা-পড়া
লক্ষ্য ছিল দুটি মনের সুন্দর জীবন গড়া। সর্ব বিষয়; সব কিছুতেই ছিল ঐক্যমত
মাঝখান এসে তোমার বাবা- সাজল ঐরাবত!
ঐরাবতটা বলল হেসে- বেকার ছেলে জামাই(!)
কত টাকা গ্রাম্য ভুতের মাসের শেষে কামাই ?
চাকরীর খোঁজে দিশেহারা ভীত আমার মন
চাকরী পাওয়ার পূর্বেই তার সঙ্গী নির্বাচন!
বললাম তারে- এমন করে হঠাৎ বদলে গেলে??
আমার যায়গায় সঙ্গী করলে উঁচু তলার ছেলে?!
তোমার আমার মাঝে ছিল লক্ষ-যোজন ফাঁক
জানলাম তা অনেক পরে হলাম হতবাক!!!

ঠিক খুঁজে নেব আমি

মস্তিস্কের মাঝে সব জট পাকিয়ে যাচ্ছে ইদানিং
আবোল তাবোল সব ভাবনাগুলো একে একে মনের মাঝে উঁকি দিয়ে যায়
তোমায় নিয়েই যত ভাবনাগুলো
ভাবায় আমায় রাতদুপুরে অতি সংগোপনে।
সকাল বেলায় সূর্যলোকের কিরণ দিয়ে দিনের শুরু
তবু যেন মনের মাঝে মেঘের ডাক গুরু গুরু
ডাকছ আমায় কোথা থেকে কোন সুদুরে বসে থেকে
ওলোট পালট সকাল থেকেই কাজের দিনে হলো শুরু
ঘর থেকে যে বাহির হলাম, চৌকাঠেতে হোচট খেলাম
মা বললেন একটু বসে যা বাছা,
কোথায় জানি তোর লাগি কার মন পুড়ছে কোথা
কে জানি মনে করছে তোর কথা
আমি জানি কোথায় বসে ভাবছ তুমি
শুধুই আজ আমার কথা। খাঁ খাঁ রোদ মাথার ওপর তবু পথে হেটে চলি
ছাতিম গাছ আর কোথাও নেই ভালো করেই সেটা জানি
তবু জানি কোথায় বসে শাড়ির আঁচল পেতে
মাথার ওপর ধরে আছ একটু ছায়া দিতে
রোদকে আমার বড় যে ভয়
ভালো করেই জানতে তুমি।
মধ্যাহ্নের অলস বেলায় তোমার কথা মনে পড়ে যায়
খাবার হাতে বসে থাকি তোমার কথা ভাবি
হঠাত করেই বিষম খেলে খুশিতে ভরে মন
কোথাও বসে ভাবছ তুমি আমার কথাই এখন
পানির গ্লাসটি এগিয়ে ধরে বলছ যেন আমায় তুমি
লক্ষ্মী ছেলে এক ঢোকেতে খালি কর গ্লাসের পানি।
বিকেল বেলায় বৃষ্টি নামে ঝুমঝুমিয়ে নুপুর পায়ে
ভিজতে মনে স্বাদ যে জাগে তোমার পাশে গুনগুনিয়ে
মনে মনে হাতটি বাড়াই যেন তোমার স্পর্শ যে পাই
দুজন মিলে বৃষ্টিবিলাশ দুজন মিলেই সন্ধ্যে হারাই
বর্ষা পাগল ছিলে তুমি বৃষ্টি পাগল ছিলেম আমি
বর্ষাদিনে কদম তলায় মধুর সুরে ডাকতে স্বামী।
কালের ফেরে ভাগ্য দোষে আজ আমারা ছিটকে গেছি
দুই ভুবনে দুজন বসে তবু আমরা ভালোবাসি
দুজন আছি দুই ভুবনে তবুও আছি মনের কোনে
যেন কাছে আছি দুজন মিলে মিশে মনে মনে
ভাগ্যকে দোষারূপ কোর না কিন্তু আর
একটুও মন খারাপ কর না যেন
সব সময়ই আছ তুমি আমার সাথে মিলেমিশে
আমার বুকের মধ্যখানে
হয়তো আবার আমাদের দেখা হবে অন্য ভুবনে অন্য বেশে
সেদিন দেখো, তোমাকে ঠিক খুঁজে নেব আমি
হারাতে দেবনা আর কোন ছলনাতে।


চলে গেছো সেই কবে

কিসের প্রতীক্ষা আমার,
তুমি চলে গেছো সেই কবে,
ফিরবে না আর কোনোদিন,
তবুও কিসের প্রতীক্ষা আমার ?
দিনগুলো পার হয়ে যায় একেলা, আশাহীন ।
তোমাকে ভুলে থাকতে চাই বলে নিজেকে ব্যস্ত রাখি কাজের মাঝে, বিশ্রাম হীন ।
তুমি হীন জীবনের কষ্ট ভুলে থাকার জন্য,
নিজের উপর চাপিয়ে দিয়েছি কর্মব্যস্ততার পাহাড় সমান বোঝা ।
তারপরেও কি ভুলতে পেরেছি তোমাকে ?
কেন জীবনটাকে এখনো অর্থহীন মনে হয় ?
কেন তোমার স্মৃতি কাদায় আমাকে প্রতিটি মুহূর্ত ?
কেন তোমার উপর অভিমান করে
আজো আমি বয়ে চলেছি কষ্টকর এক জীবনের বোঝা ?
গভীর রাতে ফিরে আসি শূন্য ঘরে, কাটিয়ে দেই নির্ঘুম রাত ।
নিকষ কালো রাতের নিঃসঙ্গতা আমার উপর হামলে পরে হিংস্র এক জন্তুর মতো ।
তার ধারালো থাবায় ক্ষতবিক্ষত হতে থাকি আমি ।
যন্ত্রণায় আর্তনাদ করে উঠি, কেউ শুনতে পায়না আমার সেই চীৎকার ।
নিজের ভেতরেই যন্ত্রণায় কুঁকড়ে যাই আমি, কেউ দেখতে পায় না ।
তবুও প্রতীক্ষা করি রাত পোহাবার, প্রতীক্ষা করি নতুন এক ভোরের ।
যদিও সেই ভোর আমার জন্য নতুন কোন স্বপ্ন বা আশার বারতা বয়ে আনে না ।
শুরু করি আরেকটি হতাশা পূর্ণ নিরানন্দ দিন ।
তবুও প্রতীক্ষা করি দিনের শেষে নিঃসঙ্গ রাতের সেই হিংস্র দানবের ধারালো নখরের নিচে নিজেকে সপে দেয়ার জন্য ।
তবুও ভুলতে পারিনা তোমাকে, কারণ তোমার চলে যাওয়ার কষ্ট যে এর চেয়েও হাজার গুন বেশী ।
আরো দেখুন

ভালোবেসে সুখি হয় কেই আবার কেউ হয় না।

কষ্ট কি কেউ দেখেছ? আমি দেখেছি। খুব কাছ থেকে। গভীর ভাবে। তিলে তিলে উপলব্ধি করেছি। রাত ছাড়া যেমন দিন বুঝা যায় না, তেমনি কষ্ট ছাড়াও ভালোবাসা বুঝা যায় না।
তাই যত বেশী কষ্ট পেয়েছি,
ভালোবেসেছি তত গভীরভাবে
কেউ কোন দিন বুঝতে পারেনি, কেউ কনদিন বুঝতে চায়ও নি।
সবাই কষ্টকে ভয় পায়, আর আমি কষ্টকে ভালোবাসি।
কারণ…….তোমাকে ভালোবেসে আমি ক্ষত বিক্ষত, তবুও তোমাকেই ভালোবাসি……..ভালোবেসে যাব ……   

আপু!

Image
তোর মনে আছে কিনা জানিনা,
বেশ কয়েকবছর আগে সম্ভবত থার্টি ফার্স্ট নাইট পালন করতে গিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে এক মেয়ে শ্লীলতাহানীর শিকার হয়। রাতের ১২ টা বাজে অর্থাৎ মধ্যরাতে তখন হাজার হাজার যুবক যুবতী যৌবনের আবেগে গা ডলাডলি করে মিলিত হয়েছিল নতুন বছরকে বরণ করে নিতে। সেই নারী পুরুষের অবাধ মিলনমেলার আধুনিকতার বলি হয় সেই মেয়েটি। তার জীবনের সবচে মূল্যবান সম্পদে একটা পশুর ঘন কেশযুক্ত কালো হাতের স্পর্শ লাগে। আমি শতভাগ নিশ্চিত, কয়েক মুহূর্তের সেই দুঃস্বপ্নটি আজো ঘুমাতে দেয়না মেয়েটিকে।
আপু দ্যাখ! সময় বয়ে যায়, মুছে যায় স্মৃতি। সেই দিনের ঘটনা সারা দেশে আলোড়ন তুলেছিল। সোচ্চার হয়েছিল সবাই। কিন্তু ঐ যে, সময় বয়ে গেছে? আমরাও ভুলে গেছি সে দিনের ঘটনা। ভুলে গেছে আমাদের হাজার হাজার লাখ লাখ বোন, যারা আগামী ৩১ তারিখ আবার মিলিত হবে সেই আদিম মিলনমেলায়। ছেলে মেয়ের সীমান্তের কাঁটাতার সেদিন উঠে যাবে। গায়ে গা লাগিয়ে, জড়াজড়ি করে, নেচে গেয়ে আবার নারী পুরুষ একে অন্যতে বিলীন হবে। তারপর ফিরে আসবে সেই কেশযুক্ত কালো হাত। খুঁজে বেড়াবে আমাদেরই কারো বোনের সবচে মূল্যবান সম্পদ। অতঃপর ঘুমাতে দেবেনা তাকে আমৃত্যু।
আপু! তুই আমার কল্পনার বোন। আমার কোন বোন নেই। থাকলে আমি সত্যি তাকে হাত জোড় করে বলতাম, আপু! তুই এইসব থেকে শত হাত দূরে থাকিস। আমি পুরুষ। আমি জানি আল্লাহ আমাদের কিভাবে সৃষ্টি করেছেন। কিন্তু তুই জানিস না। বিশ্বাস কর! একটুও জানিস না! পুরুষ যখন হাতের কাছে তার সবচে কামনীয় বিষয় পেয়ে যায়, তখন সে হায়েনার চাইতেও হিংস্র হয়ে ওঠে। তুই বলবি সব পুরুষই তো এমন না। হ্যাঁ আপু। সব পুরুষ এমন না। যারা এমন পশু না, তারা কখনই এমন কোথায় যাবেনা, যেখানে নারী পুরুষের কোন ব্যবধান থাকেনা। তারা এমন কোথাও থাকবেনা, যেখানে কোন মেয়ের সাথে তাদের ছোঁয়া লেগে যায়। তারা এমন কোথাও যাবেনা, যেখানে মেয়েরা বেপর্দা হয়ে তাদের গায়ের পাশে নেচে নেচে নিজেকে “এভেইলেভেল” প্রমাণ করে। তুই তাদের একটাকেও এসব জায়গায় পাবিনা আপু! একটাকেও না! তারা আল্লাহকে ভয় করবে। তারা আল্লাহকে সিজদা করবে, নিজের কামনাকে না। যারা মনের দিক থেকে পশু, যাদের কামনা পাশবিক, তাদের তুই এইসব যায়গায় লাখে লাখে পাবি। তারা তোকে হাত দিয়ে না পারলেও চোখ দিয়ে খুবলে খুবলে খাবে। বিশ্বাস কর আপু! তোর সাথে তারা সাধু ব্যক্তি হয়ে কথা বলবে ঠিক! কিন্তু তোর আড়ালে তারা তোকে নিয়ে কি ভাবছে যদি শুনতে পেতি, তুই মরে যেতি বোন। তুই মরে যেতি।
আপু! তুই প্লিজ এইসব থেকে শতহাত দূরে থাকিস !
আপু! তুই আল্লাহকে ভয় করিস।