Pages

*আমি তো পুরুষ! আমার আবার পর্দা কিসের *

আমি তো পুরুষ! আমার আবার পর্দা
কিসের??? কিন্তু পর্দা পুরুষ ও নারী
উভয়ের জন্যই ফরজ!!!
আল্লাহ নারীদের মত করে পুরুষদের হিজাব করতে বলেনি
তার মানে এই নয় যে পুরুষদের হিজাব নেই।
নারীদের যেমন সৌন্দর্য ঢাকার জন্য পর্দা ব্যবহার করতে
বলা হয়েছে , ঠিক তেমনি পুরুষদেরকেও পর-নারীর সৌন্দর্য
দেখা থেকে নিজের চোখ ও অন্তরের পর্দা করতে বলা
হয়েছে।
সত্যি কথা বলতে পুরুষের জন্যই পর্দার আয়াত প্রথমে নাযিল
হয়েছে। পরবর্তীতে নারীর পর্দার আয়াত নাযিল হয়েছে।
সুরা নূরের ৩০ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ্ বলেছেন-"মুমিন
পুরুষদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টি নত রাখে এবং
লজ্জাস্থানের হেফাযত করে। এতে তাদের জন্য খুব
পবিত্রতা আছে।"
এর পরের আয়াত অর্থাৎ সুরা নূরের ৩১ নম্বর আয়াত মহান
আল্লাহ্ নাযিল করেছেন নারীদের পর্দার জন্য।
এখন কোন পুরুষের চোখ যদি কোন নারীর সৌন্দর্য দর্শন
করার অনুমতি পায়, তাহলে তাহল একমাত্র নিজের স্ত্রীর।
একজন পুরুষের জন্য নিজ স্ত্রী ব্যতীত অন্য কোন নারীর
চেহারার সৌন্দর্য দেখা বা অন্য কোন নারীর দেহ আকৃতি
অন্তরে অনুভব করা 'হারাম'।
এ সম্পর্কে হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
বলেছেন , "যদি কোন মহিলার দিকে হঠাৎ নজর পড়ে যায় ,
তাৎক্ষণিক দৃষ্টি সরিয়ে নেবে এবং তার দিকে আর
দ্বিতীয়বার তাকাবে না।"
আল্লাহ পবিত্র কুরানের সুরা আন-নুরের ৩০নং আয়াতে
নারীদের পর্দার ব্যাপারে নিষেধ করার আগে পুরুষের
চোখের পর্দা হেফাজত করার নির্দেশ দিয়েছেন।
কেউ যখন তা জেনেও এই নিষেধ মান্য করা থেকে নিজেকে
দূরে রাখলো না তখন সে যেন কুরআনে আল্লাহ প্রদত্ত
নির্দেশ কে অবজ্ঞা করল।
সর্বশক্তিমান আল্লাহ্ বলেছেনঃ "এতে কোন সন্দেহ নেই যে,
যারাই আমার আয়াত সমুহকে অবজ্ঞা করবে, আমি তাদেরকে
জাহান্নামের আগুনে নিক্ষেপ করব। তাদের চামড়াগুলো
যখন জ্বলে-পুড়ে যাবে, তখন আমি সেখানে নতুন চামড়া
দিব, যাতে তারা আযাব পূর্ণভাবে আস্বাদন করতে থাকে।
নিশ্চয়ই আল্লাহ মহাপরাক্রমশালী, মহাজ্ঞানী। (সুরা আন
নিসাঃ ৫৬)
ঠিক একইভাবে, হিজাব পরা মানে মানুষকে দেখানো নয় যে
আমি হিজাব পরছি। হিজাব পরা মানে আল্লাহ নির্দেশ
দিয়েছেন আমার শরীরের সৌন্দর্য পর-পুরুষ থেকে ঢেকে
রাখতে। যা দেখার অনুমতি বা প্রদর্শন করার অনুমতি
দিয়েছে একমাত্র আমার স্বামীর সামনে।
সুরা নূরের ৩১ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ্
বলেছেন-"ঈমানদার নারীদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের
দৃষ্টিকে অবনত রাখে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হেফাযত
করে ও নিজেদের দেহ-সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে, কেবল
সেসব অংশ ছাড়া যা আপনা আপনি প্রকাশিত হয়ে পড়ে; আর
যেন তারা তাদের মাথার কাপড় দিয়ে বুকের ওপরটা ঢেকে
রাখে এবং তারা যেন তাদের সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে
শুধুমাত্র তাদের স্বামী, পিতা, শ্বশুর, পুত্র, স্বামীর পুত্র,
ভাই, ভ্রাতুষ্পুত্র, ভগ্নিপুত্র,নিজ অধিকারভুক্ত বাঁদী,
যৌনকামনামুক্ত পুরুষ ও বালক যারা নারীদের গোপন অংগ
সম্পর্কে অজ্ঞ তারা ব্যতীত; আর তারা যেন তাদের গোপন
সাজ-সজ্জা প্রকাশ করার জন্য জোরে পদচারণা না করে। হে
মুমিন লোকেরা ! তোমরা সকলে মিলে আল্লাহর নিকট তওবা
কর, আশাকরা যায় তোমরা কল্যাণ লাভ করবে। " (সূরা আন-
নূরঃ ৩১)
আল্লাহ্ সুবানাহুতায়ালা আরো বলেছেনঃ "হে হুযুর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ! আপনি উম্মাহাতুল
মুমীনীন আলাহিন্নাস সালাম ও হযরত আহলু বাইত শরীফ
আলাইহিমুস সালাম এবং মুমিনদের স্ত্রীগণকে বলুন, তারা
যেন তাদের চাদরের কিয়দংশ নিজেদের ওপর টেনে নেয়।
এতে তাদেরকে চেনা সহজ হবে। ফলে তাদেরকে উত্যক্ত
করা হবে না।" (সুরা আহযাবঃ ৫৯)
অর্থাৎ মুসলিম নারীর বাইরে বের হওয়ারও অনুমতি
আছে, তবে তাকে হিযাব মেনে চলতে হবে।
অনেক মুসলিম আপুই অমুসলিম, কাফির, বেদ্বীন নারীদের
খোলা-মেলা পোশাক এবং অবাধ চাল-চলন দেখে আফসোস
করেন। কিন্তু তাদের মোটেও আফসোস করা উচিৎ নয়। আল্লাহ্
সুবানাহুতায়ালা বলেছেনঃ
"পার্থিব জীবনের উপর কাফেরদিগকে উম্মত্ত করে দেয়া
হয়েছে। আর তারা ঈমানদারদের প্রতি লক্ষ্য করে
হাসাহাসি করে। পক্ষান্তরে যারা পরহেযগার তারা সেই
কাফেরদের তুলনায় কেয়ামতের দিন অত্যন্ত উচ্চমর্যাদায়
থাকবে। আর আল্লাহ যাকে ইচ্ছা সীমাহীন রুযী দান
করেন।" (সুরা বাকারাঃ ২১২)আল্লাহ্ সুবানাহুতায়ালা আরো
বলেছেনঃদেশে-বিদেশে কাফেরদের অবাধচাল-চলন যেন
তোমাদিগকে মোহে না ফেলে দেয়। এটা হলো সামান্য
দিনের প্রাপ্তি। এরপর তাদের ঠিকানা হবে জাহান্নাম।
আর সেটি হলো অতি নিকৃষ্ট স্থান। (সুরা আলেইমরানঃ
১৯৬-১৯৭)
ঐ সমস্ত বেদ্বীন নারীদের দেখাদেখি অনেক মুসলিম বোন
স্টাইলিস্ট হওয়ার টাইট জামা ও জিন্সের প্যান্ট পরে
কোনরকম উড়না দিয়ে পেঁচিয়ে মাথাটা মোড়ানোকেই
হিজাব মনে করে। এভাবে সে নিজেকে আকর্ষণীয় করে
তোলে। কেউ যদি ভেবে থাকে টাইট জামা ও জিন্সের
প্যান্ট পরে কোনরকম উড়না দিয়ে পেঁচিয়ে মাথাটা
মোড়ানো থাকলেই হিজাব পরা বলা হয় , তাহলে বুঝতে হবে
তা নিছক ভণ্ডামি ছাড়া আর কিছুই নয়।
অনেকের মুখে কানা-ঘুষার মাধ্যমে শুনা যায়, "মেয়েটি
হিজাব করলে সুন্দর লাগে! হিজাবি মেয়েরা বেশী সুন্দর!"
শুনে রাখুন,,,কেউ যদি কারো হিজাবের প্রশংসা করে,
তাহলে বুঝতে হবে তার হিজাব প্রকৃত হিজাব নয়! কারন
হিজাবের মূল উদ্দেশ্যই হচ্ছে নিজের সৌন্দর্য্য কে ঢেকে
বের হওয়া ! আর প্রকৃত হিজাব হচ্ছে যেমন পোশাকে তেমনি
চালচলনেও এবং অপরের সাথে কথা বার্তায়ও!
একজন নারীর বেপর্দা ভাবে চলা-ফেরা করার পরিণতি খুব
ভয়াবহ।
একটি মেয়ে যে কতটা সহজে একজন পুরুষের জীবনকেব ধ্বংশ
করে দিতে পারে যা মেয়েটি কল্পনাও করতে পারেনা।
গুনাহের শুরুটা অনেক মিষ্টি, কিন্তু শেষটা অনেক তিক্ত।
ঘুড়ি যখন নাটাই থেকে ছুটে যায় তখন তাকে সামাল দেওয়া
অনেক কষ্টকর হয়ে যায়। একজন মেয়ের হাসি, কান্না,
চাহনী সব কিছুইরয়েছে পুরুষের জন্য আকর্ষণ। সেই আকর্ষণে
মূগ্ধ হয়ে কখন যে তা পুরুষের অন্তরে ভালবাসার আল্পনা
একেঁ দেয় তা হয়ত মেয়েটি কল্পনাও করতে পারেনা। আর
এভাবেই শুরু হয় দুটি নর নারীর গুনাহের পথে পথ চলা। আর
সে পথ চলা, হাসি কান্নায় কখন যে একজন পুরুষের ভবিষ্যত
কল্পনার সাগরে অন্ধকারে হারিয়ে যায়, আর তা বুঝে আসে
অনেক পরে। তাই বলি নারীর পর্দা শুধু তার অঙ্গ প্রতঙ্গকে
ঢাকার মাঝেই সিমাবদ্ধ থাকবে না। বরং একজন নারীর
জন্য আবশ্যক তার কন্ঠ, কথা,লেখা, পুরুষের মনে আকর্ষণ
তৈরী হয় এমন সব কিছু থেকে নিজেকে বিরতরাখা।যাতে
একজন নারীর দ্বারা কখনো কোন পুরুষের জীবন,তার
ভবিষ্যত গুনাহের সাগরে অন্ধকার হয়ে না যায়।
''বর্তমান যুগের লোকেদের অবস্থা হচ্ছে -একে তো তারা
পরকাল বিমুখী, আমল খুব একটা নেই বললেই চলে, টুকটাক
আমল যা-ই করে তাও আমার ভেজাল সমৃদ্ধ। খাঁটি আমলদার
পাওয়া মুশকিল। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে বুঝিয়ে বললেও লাভ হয়
না। নিজের খেয়াল-খুশি মত আমল করে। আল্লাহ্র খুশীর জন্য
আমল করে না। যে কেউ যে আমলই করুক না কেন, সে সেটার
পূর্ণতা দেয়া না। একারনেই যারা হিজাব পালন করে কিন্তু
সঠিক পদ্ধতিতে করে না। পুরুষের মধ্যে অনেকে হিজাব
পালন করে কিন্তু সে সুযোগ পেলেই এদিক-সেদিক তাকাতে
থাকে। পর-নারীর সৌন্দর্য্য উপভোগ করতে থাকে। অথচ
রাসুল [স:] বলেছেন , যদি কোন মহিলার দিকে হঠাৎ নজর
পড়ে যায় , তাৎক্ষণিক দৃষ্টি সরিয়ে নেবে এবং তার দিকে
আর দ্বিতীয়বার তাকাবে না।
আবার নারীদের মধ্যে যারা হিজাব পরিধান করে তারাও
সঠিকভাবে টা পালন করে না। হয় তার চুল বেরিয়ে থাকে
নয় সুগন্ধি মেখে চলা-ফেরা করে। অথচ রাসুল (সাঃ)
বলেছেন-“পুরুষেরা গন্ধ পাবে এমন উদ্দেশ্যে আতর বা
সুগন্ধি মেখে কোন মহিলা যদি পুরুষদের মাঝে চলাফেরা
করে তাহলে সে একজন যিনাকারী মহিলা হিসাবে গণ্য
হবে” (আহমাদ ৪/৪১৮, ছহীহুল জামে হাদীছ ১০৫)।
অনেক মহিলা তো এ ব্যাপারে একেবারেই উদাসীন, আর
অনেকেই তো এ বিষয়টিকে খুব হালকাভাবে গ্রহণ করে। যে
সমস্ত নারীরা সেজেগুজে বিভিন্ন ধরনের সুগন্ধি মেখে
ড্রাইভারের সাথে গাড়ীতে চলাফেরা করছে, দোকানে
যাচ্ছে, স্কুল-কলেজ ও ইউনিভার্সিটিতে যাচ্ছে, তারা
শরী’আতের নিষেধাজ্ঞার দিকে সামান্যতমও খেয়াল করে
না। মেয়েদের ঘরের বাইরে যাওয়ার ব্যাপারে ইসলামী
শরী‘আত এমন কঠোর বিধান আরোপ করেছে যে, বাড়ীর বাইরে
যাওয়ার সময় মেয়েরা সুগন্ধি মেখে থাকলে ঐ সুগন্ধিকে
নাপাকী মনে করে ফরয গোসলের ন্যায় ঐ মহিলাকে গোসল
করতে হবে। এ প্রসঙ্গে রাসুল (সাঃ) বলেছেন-অর্থঃ “যে
মহিলা গায়ে সুগন্ধি মেখে মাসজিদের দিকে বের হয় এ
জন্য যে, তার শরীরের সুবাস বা ঘ্রাণ পাওয়া যাবে,
তাহলে তার নামায ততক্ষণ পর্যন্ত গৃহীত হবে না যতক্ষণ
না সে নাপাকী দূর করার জন্য ফরয গোসলের ন্যায় গোসল
না করবে” (আহমাদ ২/৪৪৪, ছহীহুল জামে হাদীছ নং
২৭০৩)।
বর্তমান যুগের মানুষেরা যে কোন একটি আমল পূর্ণাঙ্গ রূপে
সঠিক পদ্ধতিতে করতে চায় না। তাদেরকে অবগত করলেও
মানতে চায় না। এভাবে কি আল্লাহ্র সন্তুষ্টি পাওয়া
যাবে। তাদের এই ধরা-বাধা আমল আল্লাহ্ নিকট কতটুকু
গ্রহন হবে আল্লাহ্ই ভাল জানেন। অথচ সাহাবারা (রাঃ)
যে কোন আমল এত ইখলাসের সাথে করেও এত বিনয় ও আদবের
সাথে করেও সব সময় ভয় করতেন আল্লাহ্ কবুল করেন কিনা?
আল্লাহ্ পাকড়াও করেন কি না? এত আমল করার পরেও সব সময়
আল্লাহ্র ভয়ে ভীত থাকতেন। আমারা ইসলামের অধিকাংশ
বিধানকেই পরিপূর্ণ ভাবে মেনে চলি না।
তাই তো আল্লাহ্ আমাদের ধিক্কার দিয়ে বলেছেনঃ "তবে কি
তোমরা এই কিতাবের অর্ধেক মানো আর বাকি অর্ধেক মানো
না? অতএব তোমাদের মধ্যে যারা এরূপ করো তাদের পার্থিব
জীবনে দূর্গতি ব্যাতিত আর কিছুই নেই, এবং কেয়ামত
দিবসে তারা কঠোর শাস্তির দিকে নিক্ষিপ্ত হবে, এবং
তোমরা যা করছো আল্লাহ তদ্বিষয়ে অমনোযোগী নন"। [সূরা
বাকারাহঃ আয়াত ৮৫]
মহান আল্লাহ্ আমাদের নির্দেশ দিচ্ছেনঃ"হে ঈমানদার
গন! তোমরা পরিপূর্ণভাবে ইসলামের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাও
এবং শয়তানের পদাংক অনুসরণ কর না। নিশ্চিত রূপে সে
তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু। (সুরা বাকারাঃ ২০৮)
তাই আমরা যদি কল্যাণ লাভ করতে চাই তবে আমাদের
উচিৎপরিপূর্ণ ভাবে ইসলামের বিধি-বিধান গুলো মেনে
চলা।হিজাবের নিয়ম-কানুন কোরআন ও সহীহ হাদীসের
আলোকে নিম্নে উল্লেখ করা হলঃ
১। পুরুষের নাভী থেকে হাঁটু পর্যন্ত ঢাকতে হবে। মেয়েদের
জন্য সমস্ত শরীর ঢাকতে হবে। (কিছু কিছু স্কলারদের মতে
মুখ খোলা থাকতে পারে। তবে মুখ ঢেকে বাইরে বের হওয়াই
হচ্ছে তাকওয়া)। কেননা মহানবী (সাঃ) বলেন, ‘মেয়ে
মানুষের সবটাই লজ্জাস্থান (গোপনীয়)। আর সে যখন বের
হয়, তখন শয়তান তাকে পুরুষের দৃষ্টিতে সুশোভন করে
তোলে।’ (তিরমিযী, মিশকাত ৩১০৯ নং)
অন্য নিয়ম গুলো পুরুষ ও মহিলার জন্য একই।
২। যে পোশাক পরিধান করবে, সেটাই যেন বিপরীত
লিঙ্গের প্রতি সৌন্দর্যময় ও দৃষ্টি-আকর্ষী না হয়। যেহেতু
মহান আল্লাহ্ বলেন,{ ﻭَﻻَ ﻳُﺒْﺪِﻳﻦَ ﺯِﻳﻨَﺘَﻬُﻦَّ ﺇِﻻَّ ﻣَﺎ ﻇَﻬَﺮَ
ায ঃতণরাধাস‘}ﻣِﻨْﻬَﺎ প্রকাশ হয়ে থাকে, তা ছাড়া তারা
যেন তাদের অন্যান্য সৌন্দর্য প্রকাশ না করে।’ (সূরা নূর
৩১ আয়াত)
সুতরাং এখানে এটাও বুঝে নিতে হবে যে- বোরকা যেন এমন
না হয় যাতে পর-পুরুষ আকৃষ্ট হয়।
৩। পোশাকটি যেন এমন পাতলা না হয়, যাতে কাপড়ের উপর
থেকেও ভিতরের চামড়া নজরে আসে। এটা ঢাকা থাকলেও
খোলার পর্যায়ভুক্ত।
[একদা হাফসা বিনতে আব্দুর রহমান পাতলা ওড়না পরে
আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা)-এর নিকট গেলে তিনি তাঁর
ওড়নাকে ছিঁড়ে ফেলে দিলেন এবং তাঁকে একটি মোটা ওড়না
পরতে দিলেন।](মুয়াত্তা মালেক, মিশকাত ৪৩৭৫ নং)
হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন- দুই
শ্রেণীর জাহান্নামী এখনও আমি দেখিনি। (কারণ তারা
এখন নেই, ভবিষ্যতে আত্মপ্রকাশ করবে) এক শ্রেণী হচ্ছে ঐ
সকল মানুষ, যাদের হাতে ষাঁড়ের লেজের মতো চাবুক থাকবে,
যা দিয়ে তারা মানুষকে প্রহার করবে।আর দ্বিতীয় শ্রেণী
হচ্ছে- ঐ সকল নারী, যারা হবে পোশাক পরিহিতা কিন্তু
তারপরেও তারা থাকবে নগ্ন, তারা পর পুরুষকে আকৃষ্ট করবে
এবং নিজেরাও আকৃষ্ট হবে; তাদের মাথা হবে উটের
হেলানো কুঁজের ন্যায়।এরা জান্নাতে প্রবেশ করবে না এবং
জান্নাতের সু-ঘ্রাণও পাবে না অথচ জান্নাতের সু-ঘ্রাণ তো
এত এত দূর থেকে পাওয়া যাবে। (মুসলিম ২/২০৫, হাদীস:
২১২৮)
আমি মনে করিঃ যে সমস্ত মেয়েরা নিজেদের সৌন্দর্য
প্রকাশ করে, আঁকা-বাঁকা ভঙ্গিতে, অর্ধনগ্ন অবস্থায় পুরুষের
সামনে দিয়ে চলা ফেরা করে তাদের মুল উদ্দেশ্য আল্লাহ্
রাসুল (সাঃ) ঐ বানী মোতাবেক অপর পুরুষকে আকৃষ্ট করা,
একারনেই ঐ সমস্ত নারীরা বিভিন্ন কসমেটিক দিয়ে ঘষে-
মেজে নিজেদেরকে পুরুষের কাছে আকর্ষণীয় করে তুলতে
চায়। তারা চায় পুরুষরা তাদের প্রতি আকর্ষিত হোক।
তাদের রূপের প্রশংসা করুক। এবং এভাবে এক পর্যায়ে
তাদের মাঝে প্রেম হয়। এটাই হচ্ছে হাদিসের দ্বিতীয়
অংশের বাস্তবতা যে তারাও আকৃষ্ট হবে। এই কার্যকলাপ
গুলো তারা তাদের জন্য জীবন সঙ্গী নির্বাচনের একতা
মাধ্যম হিসেবে ব্যাবহার করে থাকে।কিন্তু যে বিষয়টা
আমি বুঝি না, তা হল-যখন তারা জীবন সঙ্গিনী পেয়ে গেল
তখন তো আর নিজেদের সৌন্দর্য প্রকাশ করার, আঁকা-বাঁকা
ভঙ্গিতে, অর্ধনগ্ন অবস্থায় পুরুষের সামনে দিয়ে চলা
ফেরা করে অপর পুরুষের কাছে নিজেকে আকর্ষণীয় করার
প্রয়োজন নেই। তাহলে বিবাহিত নারীরাও কেন বিভিন্ন
কসমেটিক দিয়ে ঘষে-মেজে নিজেদেরকে অপর পুরুষের কাছে
নিজেকে আকর্ষণীয় করার তুলে।
উল্লেখ্য যে, নারীদের সুগন্ধি মেখে বাইরে বের হওয়া
হারাম।
মহানবী (সাঃ) বলেন, ‘সুগন্ধি ছড়ানোর উদ্দেশ্যে কোন
মহিলা যদি তা ব্যবহার করে পুরুষদের সামনে যায়, তবে
সে একটি বেশ্যা মেয়ে বলে পরিগণিত হবে।’ (আবূ দাঊদ,
তিরমিযী, মিশকাত নং ১০৬৫)
৪। পোশাক যেন এমন আঁট-সাঁট (টাইটফিট) না হয়, যাতে
দেহের উঁচু-নিচু গড়ন ব্যক্ত হয়। এটা পুরোপুরি নগ্নতার
চেয়ে আরো বেশি দৃষ্টি-আকর্ষী।
৫। পোশাকটি যেন কোন অবিশ্বাসী/কাফেরদের অনুকৃত না
হয়।
প্রিয় নবী (সাঃ) বলেন, ‘যে ব্যক্তি যে জাতির সাদৃশ্য অবন
(লেবাসে-পোশাকে, চাল-চলনে অনুকরণ) করবে, সে তাদেরই
দলভুক্ত।’ (আবূ দাঊদ, মিশকাত ৪৩৪৭)
৬। পোশাকটি তা যেন বিপরীত লিঙ্গের পোশাকের অনুরূপ না
হয়। মহানবী (সাঃ) সেই নারীদেরকে অভিশাপ দিয়েছেন,
যারা পুরুষদের বেশ ধারণ করে এবং সেই পুরুষদেরকেও
অভিশাপ দিয়েছেন, যারা নারীদের বেশ ধারণ করে।’ (আবূ
দাঊদ ৪০৯৭, ইবনে মাজাহ ১৯০৪ নং)
৭। পোশাকটি যেন জাঁকজমকপূর্ণ প্রসিদ্ধিজনক না হয়।
কারণ, বিরল ধরনের লেবাস পরলে সাধারণতঃ
পরিধানকারীর মনে গর্ব সৃষ্টি হয় এবং দর্শকের দৃষ্টি
আকর্ষণ করে। তাই মহানবী (সাঃ) বলেন, ‘যে ব্যক্তি
দুনিয়াতে প্রসিদ্ধিজনক লেবাস পরবে, আল্লাহ্ তাকে
কিয়ামতে লাঞ্ছনার লেবাস পরাবেন।’ (আহমাদ, আবূ দাঊদ,
ইবনে মাজাহ, মিশকাত ৪৩৪৬ নং)
অবশ্য পুরুষের জন্য সিল্কের পাঞ্জাবী ও স্বর্ণ হারাম।
উমার ইবুল খাত্তাব (রাঃ) থেকে বর্ণীত, রাসুল (সাঃ)
বলেছেন- তোমরা পুরুষেরা রেশমি কাপড় পরিধান করবে
না। কেননা যে ব্যক্তি এই পৃথিবীতে রেশমি কাপড় পরিধান
করবে সে আখিরাতে তা থেকে বঞ্চিত হবে। [সহিহ বুখারীঃ
৫৮২৮, মুসলিমঃ ২০৬৯]
আবু মুসা আশআরী (রাঃ) থেকে বর্ণীত, রাসুল (সাঃ) বলেছেন-
"রেশমের পোশাক ও স্বর্ণ" আমার উম্মতের পুরুষের জন্য
হারাম করা হয়েছে আর নারীদের জন্য বৈধ করা হয়েছে।
[তিরমিজিঃ ১৭২০, নাসায়ীঃ ৫১৪৮]
হিজাব বলতে শুধু পোশাক বোঝায় না। বরং মানুষের আচার-
আচরণ,ব্যবহার, দৃষ্টিভঙ্গি এমনকি অভিপ্রায়কেও বোঝায়।
পোশাকের পাশাপাশি চোখ, মন, চিন্তা এমনকি হৃদয়েরও
হিজাব থাকতে হবে।তাই আসুন আমরা নারী-পুরুষ প্রত্যেকে
হিজাব মেনে চলি এবং একটি সুন্দর সমাজ গড়ে তুলি।

★ ইসলামে পর্দার বিধান ★


বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম
.
সমস্ত প্রশংসা মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের জন্য
যিনি দুনিয়া ও আখেরাতের একমাত্র মালিক। দুরুদ ও সালাম
আখেরী  নবীদের শ্রেষ্ট নবী হযরত মুহাম্মদ (সঃ)-সহ সকল
পয়গম্বর,আহলে বাইত, সাহাবায়ে কেরামসহ ইসলামের সকল
অনুসারীদের উপড়। হেদায়েত তাদের নসীব
হইয়েছে যারা ইসলামে প্রবেশ করেছেন এবং কুরআন ওসুন্নাহর
সঠিক জ্ঞান অর্জন করেছেন, আর সেই অনুযায়ী আমলও করেছেন।
আমার এই লেখাটি বিশেষ
ভাবে নারীদেরকে উদ্দেশ্যে করে লিখা। কারণ নবী করীম (সঃ)
এরহাদীস অনুযায়ী উম্মতে মুহাম্মদীর বেশীর ভাগ
জাহান্নামী হবে নারী। আর এই জাহান্নামে যাওয়ার
যে দুইটি কারণ সবচেয়ে বেশী তা নিম্নে বর্নণা করা হলো।
তবে সমতা রক্ষার জন্য পুরুষদেরকেও একেবারে বাদ দেওয়া হয়
নাই এই আলোচনায়,আল্লাহর দেওয়া মহান নেয়ামত হইল ইসলাম।
সমস্থ মানব জাতীর দুনিয়া এবং পরকালের শান্তিপুর্ণ
ব্যাবস্থা এক মাত্র এই ইসলামেই আছে। প্রত্যেক মানুষ যেন
সুন্দরভাবে জীবন অতিবাহিত করতে পারে, সবাই যেন সবার
ন্যায্য অধিকার পাইতে পারে সেই ব্যবস্থাই ইসলাম করেছে।
যেদিক দিয়াই বিচার করা হউক না কেন ইসলামের বিকল্প আর
কিছুই নাই। তাই পৃথিবীর অনেক অ-মুসলীম মনীষিও স্বীকার
করতে বাধ্য হয়েছে যে, ইসলামই এক মাত্র মানব
জাতীকে শান্তি দিতে পারে।
পর্দাঃ পর্দা করা ফরজ। আর পর্দা কথা আসলেই
প্রথমে আসে চক্ষুর কথা। চক্ষু মানুষেরএকটি প্রধান ইন্দ্রিয়।
চক্ষু দ্বারা মানুষের দর্শন কার্য সমাধা হয়। আর সংসারের
অধিকাংশ পাপের মুলেই এই চক্ষু। কার চক্ষুই প্রথমে দর্শন
করেবস্তু সম্মন্ধে জ্ঞান আনয়ন করে এবং মনে বাসনার
সৃষ্টি করে আর বাসনা হতেই ভোগের উৎপত্তি হয়। আর ভোগ
শরিয়ত সম্মত না হলেই পাপ হয়। মানুষের মনে যত ভাল
কিংবা খারাপ বাসনার জন্ম হয় সবই এই চক্ষুর সৃষ্টি।
চক্ষুকে সংযত ও শাসন করে রাখতে না পারলে সে বহু পাপের খোজ
করে দেয়। কারণ চক্ষুই বাসনার গুপ্তচর। চক্ষুর এই অসংযত
আচরণে সংসারে বহু মানুষ পাপের দরিয়ায় ডুবেমরছে। তাই
আল্লাহ মানুষকে সর্তক করে পবিত্র কুরআনে আল্লাহ
তাআলা ইরশাদ করেছেন, “মুমিনপুরুষদেরকে বলুন,তারা যেন
তাদের দৃষ্টি নত রাখে এবং তাদের যৌনাঙ্গের হেফাযত করে,
এতে তাদের জন্য পবিত্রতা আছে, নিশ্চয় তারা যা করে আল্লাহ
তা অবহিত আছেন। (সুরা-আন নুর-৩০)। এই আয়াতে মুমিন
পুরুষদেরকে বলা হয়েছে তারা যেন তাদের দৃষ্টি নত রাখে। এই
আয়াত দ্বারা প্রমাণ হয় যে,পুরুষ নারীদের প্রতিকু-
দৃষ্টি দেওয়া হারাম,যেহেতু দৃষ্টি জিনার সংবাদ বাহক তাই
এখানে প্রথমে দৃষ্টি নিয়ন্ত্রন করার হুকুম প্রধান করা হয়েছে।
ইমাম আবু হানীফা (রঃ) বলেছেন,কোন স্ত্রী লোক অন্য পুরুষের
প্রতি এবং কোন পুরুষ অন্য মেয়ে লোকের প্রতি পুর্ন
দৃষ্টি দেওয়া জায়েয নেই। কেননা আল্লাহ তায়ালা বলেছেন,
নিশ্চয়কর্ন, চক্ষু এবং সমস্ত সন্তকরন কেয়ামতে জিজ্ঞাসিত
হবে তার কৃতকর্মের ব্যাপারে।
নবী (সঃ) বলিয়াছেন, যখন কোন বেগানা মহিলার উপর হঠাৎ
দৃষ্টি পরিয়া যায় তখন সাথে সাথে দৃষ্টি ফিরাইয়া নিবে,
দ্বিতীয় বার আর দৃষ্টি দিবেনা কারন প্রথম দৃষ্টি তোমার আর
দ্বিতীয় দৃষ্টি শয়তানের। হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ)
হইতে বর্নিত, নবী (সঃ) বলিয়াছেন,আদম সন্তানের উপর আংশিক
জেনা (ব্যভিচার) লিখিত হয়ে থাকে এবং নিশ্চয় তারা উহার
প্রতিফল ভোগ করিবে। যেমন-চক্ষুদ্বয়ের জেনা, পরস্ত্রীর
প্রতি কামভাবে দৃষ্টি করা। কর্নদ্বয়ের
জেনা,কামস্পৃহা হয়ে পরস্ত্রীর কন্ঠস্বর শ্রবন করা। রসনার
জেনা, পরস্ত্রীর প্রতি কামভাবে বাক্যালাপ করা। হস্তের
জেনা, কামভাবে পরস্ত্রীকে স্পর্শ করা। পায়ের জেনা,
পরস্ত্রীর দিকে কামভাবে অগ্রসর হওয়া। হৃদয়ের
জেনা,পরস্ত্রী সম্বন্ধেকুচিন্তা করা। আর লজ্জাস্থান এই সকলের
সত্য মিথ্যা প্রমাণ করে দেয়। (বোখারীও মুসলীম)।
হযরত আবু ইমামা হইতে বর্নিত,হুজুর (সঃ) বলেছেন, কোনও
ইমানদার ব্যক্তি পরস্ত্রীর সৌন্দর্যের প্রতি দৃষ্টি করে স্বীয়
চক্ষুদ্বয় নিম্নগামী করিলে। আল্লাহ তায়ালা তাকে একটি পুন্য
কার্য্যের প্রতিফল দান করেন,সে উহারমাধুর্য্য অন-রে অনুভব
করতে থাকিবে। (তেবরানী ও হাকেম)। নবী করিম(সঃ)
বলিয়াছেন, যে ব্যক্তি পরস্ত্রীর সৌন্দর্য্যের
প্রতি কামদৃষ্টি নিক্ষেপ করিবে কেয়ামতের দিন তার
চক্ষে গরম শিশা ঢালিয়া দেওয়া হবে (হেদায়া।)
যা হউক,উপরে বর্নিত আয়াত এবং হাদীস দ্বারা ইহাই
প্রতিয়মান হয় যে, কোনপুরুষ কোন বেগানা মহিলার
প্রতি দৃষ্টি দেওয়া জায়েজ নাই। যদিও
অসাবধানতা বশতদৃষ্টি পরিয়া যায় তা হইলে অবশ্যই
সাথে সাথে দৃষ্টি ফিরাইয়া নিতেহবে। ইচ্ছাকৃতভাবে কোন
পুরুষেরই বেগানা নারীর প্রতি দৃষ্টি দেওয়া জায়েজনাই।
ইরশাদ হচ্ছে,“ইমানদার নারীদেরকে বলুন,তারা যেন তাদের
দৃষ্টি নত রাখেএবং যৌনাঙ্গের হেফাযত করে। তারা যেন
যা সাধারণত প্রকাশমান তা ছাড়া তাদেরসৌন্দর্য প্রকাশ
না করে এবং তারা যেন তাদের মাথার
ওড়না বক্ষদেশে ফেলিয়ারাখে এবং তারা যেন তাদের স্বামী,
পিতা,শ্বশুর, নিজ পুত্র, স্বামীরপুত্র (অর্থাৎ সতীন পুত্র),
ভ্রাতা,ভ্রাতুষ্পুত্র, ভগ্নি পুত্র, অধিকার ভুক্তবাদীঁ, যৌন
কামনা মুক্ত পুরুষ ও বালক,যারা নারীদের গোপন অঙ্গ
সম্পর্কে অজ্ঞ, তাদের ব্যতিত কারো কাছে তাদের সৌন্দর্য
প্রকাশ করিবার জন্য জোরে পদচারানা না করে। মুমিনগন,
তোমরা সবাই আল্লাহর সামনে তওবা কর যাতে তোমরা সফলকাম
হও’। (সুরা-আন নুর-৩১)।
এখানে মুমিনা নারীদেরকে বলা হয়েছে তারা যেন তাদের
দৃষ্টি নত রাখে। এইআয়াত দ্বারা প্রমান হয় যে,নারী পুরুষদের
প্রতি দৃষ্টি দেওয়া হারাম,যেহেতুদৃষ্টি জিনার সংবাদ বাহক
তাই এখানে প্রথমে দৃষ্টি নিয়ন্ত্রন করার হুকুমপ্রধান
করা হয়েছে। তারপর বলা হয়েছে কিছু সংখ্যক আত্নীয়ের
সম্বন্ধে যাদের সামনে সাধারন কাপড় পড়া (অর্থাৎ পুর্ন
পরদা করা ব্যতিত) অবস্থায় যাওয়া যাইবে। এছাড়া পৃথিবীর
কাহারো নিকট পুর্ন পর্দা করা ব্যতিত যাওয়া যাইবেনা সে যত
বড় আত্নীয়ই হোক কিংবা যত পরিচিতই হোকনা কেন। তারা সবাই
বেগানাপুরুষ। তাদের সামনে যাওয়া হারাম। এথন জানা দরকার
বেগানা পুরুষ কাকে বলে। স্বামীর মৃত্যুর পর যেই সমস্ত পুরুষের
সাথে বিয়ে হালাল অর্থাৎ যেইসমস্ত পুরুষের
সাথে বিয়ে বসা শরিয়তে জায়েজ তাদেরকে বেগানা পুরুষ বলে।
যেমন-পিতা, শ্বশুর,নিজ পুত্র,স্বামীর পুত্র (অর্থাৎ সতীনপুত্র),
ভ্রাতা,ভ্রাতুষ্পুত্র,ভগ্নি পুত্র,আপন চাচা, আপন মামা,আপন
দাদা (উপরেযা যত আছে অর্থাৎ দাদার দাদা তার দাদা তার
দাদা ইত্যাদি),আপন নানা (ইহাওদাদার মতন উপরে যত আছে) দুধ
ভাই,দুধ ছেলে,এই সমস্ত লোক হইলো মহররম ব্যাক্তিঅর্থাৎ
স্বামী মৃত্যুর পরও এই সমস্ত লোকের সাথে কোন মহিলার
বিয়ে জায়েজনাই। এছাড়া পৃথিবীতে আর বাকী যত পুরুষ
আছে সবাই বেগানা পুরুষ সবার সাথে বিয়ে জায়েজ আছে।
বেগানা পুরুষের মাঝে কিছু লোক আছে যাদেরকে গায়রে মহররম
বলা হয়,অর্থাৎ তাদের সাথেও বিয়ে জায়েজ,তবে শর্ত অনুযায়ী।
যেমন আপন বোনের জামাই,যতক্ষন পর্যন্ত বোন ঐ স্বামীর ঘর
করে ততক্ষন পর্যন্ত বিয়ে জায়েজ নাই,কিন্তু বোন
মারা গেলে কিংবা তালাক দিলে তাকে বিয়ে করা জায়েজ
হয়েযায়,অর্থাৎ কোন পুরুষ একই সাথে দুই আপন
বোনকে বিয়ে করতে পারিবে না। তারপরে আপন খালু,ইহাও
ভগ্নি পতির মতনই,যদি খালা মারা যায় কিংবা তালাক
হয়ে যায়তা হইলে খালুর সাথেও বিয়ে বসা মহিলাদের জন্য
জায়েজ। তেমনি ভাবে ফুফাও। তারপরে মনে রাখা দরকার
পিতার আপন চাচাত ভাইয়ের সাথেও বিয়ে জায়েজ। হযরত
আলি (রাঃ) ছিল ফাতেমার চাচা অর্থাৎ নবী (সঃ) এর আপন
চাচাত ভাই। তাই তাদের সামনেও সবসময় পরদা করা প্রত্যেক
মহিলার জন্য ফরজ। অর্থাৎ মহররম পুরুষ ছাড়া পৃথিবীর সব
পুরুষের সাথেই মহিলাদের বিয়ে হালাল বা জায়েজ এবং তাদের
সামনে সবসময় প্রত্যেক মহিলার পরদা করে চলা ফরজ।
যারা আল্লাহকে ভয় করে আল্লাহর আযাবকে ভয় করে তারা অবশ্যই
আল্লাহর হুকুম মানিয়া চলিবে। মনে রাখা দরকার যেইসমস্ত
কারনে মহিলাদের জাহান্নামে যাইতে হবে,তার
ভিতরে মহিলাদেও বেপর্দায় থাকা একটি। পৃথিবীতে এমন অনেক
মহিলা আছে যারা বড় বড় ব্যাবসায়ী ছিল কিন্তু তারা কোনদিন
বিনা পর্দায় চলে নাই। এখন উপরে উল্লেখ্যিত আলোচনার
প্রেক্ষিতে সবাই নিজের অবস্থাটা একটু
চিন্তা করে নেওয়া দরকার যে কে কতটুকু আল্লাহর হুকুম পালন
করতেছি। জান্নাতে যাওয়া বড়ই কঠিন, শুধু নামায রোজা করলেই
জান্নাতে যাওয়া যাইবে না। এছাড়াও বহু কারণ আছে যার
কারণে জাহান্নামে যেতে হবে। এখন আসা যাক মুল
কথায়,আয়াতের প্রথমে বলা হয়েছে “ইমানদার নারীদেরকে বলুন
তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে নত রাখে এবং যৌনাঙ্গের হেফাযত
করে”। এখানে ঈমানদার নারী বলা হয়েছে এই
কারণে যে,যারা জান্নাতের আশা করে তারা যেন এই আদেশ
গুলো মান্য করে চলে। আর যারা জান্নাতের
আশা করে তারা অবশ্যই ইমানদার মহিলা অর্থাৎ মুসলমান
মহিলা। পুরুষরা যেমন কোন মহিলার
দিকে দৃষ্টিদেওয়া বা দেখা জায়েজ নাই তেমনি কোন নারীও
কোন পুরুষকে দেখা জায়েজ নাই। এরপক্ষে হাদীস হইলো,উম্মুল
মুমেনিন হযতর উম্মে সালামা (রাঃ) হইতে বর্নিত,তিনিবলেন,
একদিন আমি এবং মায়মুনা (রাঃ) উভয়েই হুজুরের (সঃ)
সাথে ছিলাম এমন সময় অন্ধ সাহাবী হযরত উম্মে মাকতুম (রাঃ)
সেইখানে আসিলেন, তখন নবী (সঃ) আমাদেরকে পরদা করিবার
জন্য নির্দেশ দিলেন। তখন আমি আরয করিলাম, ইয়ারাসুলুল্লাহ
(সঃ), উনিত অন্ধ উনিত আমাদেরকে দেখতে পাইবেনা। তখন
নবী(সঃ)বলিলেন,তোমরাওকি অন্ধ তোমরাও
কি তাকে দেখিতে পাওনা অর্থাৎ তোমরাতো তাকে দেখিতেছ!
(আবু দাউদ ও তিরমিঝি)।
উম্মুল মুমেনীনগন অর্থাৎ নবী করিম(সঃ) এরপুন্যবতী বিবিগন
উম্মতের জননী,কোন মুসলমানের পক্ষে হালাল নয়
উনাদেরকে বিয়েকরা। তথাপিও নবী করিম(সঃ) একজন অন্ধ
সাহাবী হতে স্ত্রীদেরকে পরদা করতেআদেশ করেছেন।
তাতে বুঝা গেল কোন নারীর জন্য জায়েজ নাই কোন
বেগানা পুরুষকেদেখা তাহলে তাদেরও নাম দাইউজের খাতায়
লেখা হবে আর দাইউজের জন্যজান্নাত হারাম করা হয়েছে।
অতএব এই বেপারে সাবধান হওয়া উচিত। আর কোন পুরুষেরওউচিত
হবেনা নিজ
স্ত্রীকে বিনা কারনে বাহিরে যাইতে দেওয়া,কিংবা কোন
বেগানাপুরুষের সামনে প্রেরণ করা। স্বামীর কারণে কোন
স্ত্রী দাইউজ হইলে সেইস্বামীও জাহন্নামী। এই কারণে হযরত
আলী(রাঃ) বলিতেন,তোমাদেরকি লজ্জা বলিতেকিছু নাই?
তোমাদের কি আত্মমর্যাদাবোধ নাই,তোমরা তোমাদের
স্ত্রীদেরকে মানুষেরমাঝে ছাড়িয়া দাও,আর
তারা বেগানা পুরুষদেরকে দেখে এবং বেগানা পুরুষরাওতাদেরকে দেখে (কিতাবুল
কাবায়ের—ইমাম আযযাহাবী (রঃ)। বলা হয়েছে “পুরুষদের
ভিতরে যারা স্ত্রীলোক সম্বন্ধে অনাসক্ত তাদের নিকটসৌন্দর্য
প্রকাশ করতে কোন দোশ নাই”। এই আয়াতের
তাফছিরে অনেকে অনেক কথাবলিয়াছেন,যেমন ইবনে আব্বাস
(রাঃ) বলিয়াছেন,বর্বর ওনির্বোধ। হাসান(রঃ)
বলিয়াছেন,স্ত্রী সহবাসে অক্ষম। কেহ বলিয়াছেন,নপুংষক
ইত্যাদি।
কিন্তু তাফছিরে কবির প্রণেতা বলিয়াছেন,খাসীকৃত ও কর্তিত
লিঙ্গ প্রভ্রতি প্রকারের ব্যক্তিরাও কখনো কখনো কামাসক্ত
হয়ে থাকে। তিনি আরো লিখেছেন যে,হযরত (সঃ) নপুংষক লোকের
সহিত দেখা দিতে নিষেধ করেছেন’। হেদায়া কিতাবে উল্যেখ
আছে,‘খাসী কৃত কর্তিত লিঙ্গ
এবং নপুংষককে দেখা দেয়া স্ত্রীলোকের পক্ষে জায়েজ নাই।
অতএব,আসক্তি বিহীন পুরুষ নিয়া বিভিন্ন মতবেদ আছে।
তাছাড়া সঠিক ভাবে জানাও সম্ভব নয় কার আসক্তি আছে আর কার
নাই এই অবস্থায় তাদের সাথে দেখা না দেয়াই উত্তম। তারপর
বলা হয়েছে যৌনাঙ্গের হেফাযত করার জন্য। পৃথিবীতে যত
জিনা হয় এবং এই জিনার বেপারে পুরুষদের
থেকে নারীরা বেশী অগ্রগামী। অর্থাৎ নারীদের কারনেই
বেশী জিনা হয়ে থাকে। কারণ নারীদের
দুর্বলতা না থাকিলে কোন পুরুষ জিনায় লিপ্ত হতে পারেনা। এর
প্রমাণ আল্লাহ পবিত্র কুরআন, কুরআনে যত জায়গায় বিভিন্ন
অন্যায়ের বিচারের রায় দিয়াছেন,যেমন চুরি করিলে হাত
কাটিতে হবে,মদখাইলে দোররা মারিতে হবে,কেউ
জিনা করিলে,যদি অবিবাহিত হয় তবে দোররা মারতে হবে আর
বিবাহিত হইলে পাথর ছুড়িয়া মেরে ফেলতে হবে ইত্যাদি। আর
কুরআন শরিফে যত যায়গায় এই সমস্ত রায় দেওয়া হয়েছে সেই
সমস্ত জায়গায়ই পুরুষের কথা আগে বলিয়াছেন। কিন্তু একমাত্র
জিনার বেপারে মহিলাদের কথা আগে বলা হয়েছে। কারণ
জিনা একটি ঘৃনিত কাজ আর এই কাজ পুরুষের চেয়ে নারীদের
কারনে বেশী সংঘঠিত হয় এই বেপারে নারীরাই অগ্রগামী।
আল্লাহ পবিত্র
কুরআনে ইরশাদকরেছেন,“ব্যভিচারিনী নারী ব্যভিচারী পুরুষ
তাদের প্রত্যেককে একশত করে বেত্রাঘাত কর। আল্লাহর আইন
কার্যকর করতে তাদের প্রতি যেন তোমাদের মনে দয়ার উদ্রেক
না হয়। যদি তোমরা আল্লাহর প্রতি এবং পরকালের
প্রতি বিশ্বাসী হও এবং মুসলমানের একটি দল যেন তাদের
শাস্তি প্রত্যক্ষ করে। (সুরা নুর-২)। এই
আয়াতে আরো বলা হয়েছে তাদেরকে মারতে তোমাদের মনে যেন
কোন দয়া না হয় এবং তাদেরকে যখন মারবে তখন
লোকদেরকে ডাকিয়া সমবেত করিবে এবং তাদের
সামনে তাদেরকে দোররা মারিবে। জিনা হয় গোপনে কিন্তু এর
বিচার হয় প্রকাশ্যে। এতে উপকার হয় এইযে,
যারা জিনা করে তারা লোকের কাছে লজ্জায় পতিত হয়
এবং যারা প্রত্যক্ষ করে তারাও সতর্ক হয়ে যায়।
একটা কথা স্মরন রাখা দরকার জিনার উৎপত্তিই হয়
বেপরদা হতে। কিতাবে আছে যখন কোন বেগানা পুরুষ
মহিলা একাকি মিলিত হয় অর্থাৎ কথাবলে তখন তাদের তৃতীয় জন
হয় শয়তান। আল্লাহ ইরশাদ করেন “নিশ্চয় শয়তান মানুষের
প্রকাশ্য শত্রু”(সুরা বাকারা-২০৮)। তারপর
বলা হয়েছে,“তারা যেন ওড়না মাথার উপর দিয়া বক্ষ অর্থাৎ
বুক সহ ডাকিয়া রাখে”। অর্থাৎ এমন ভাবে চাদর
দ্বারা শরীলকে ডাকিয়া রাখতে হবে যেন তাদের মুখ,বুক সহ
সমস্ত শরীল কোন অবস্থায়ই কোন বেগানা পুরুষ না দেখতে পারে।
শুধু মহররম ব্যক্তিগন (বাবা,ভাই,ছেলে ইত্যাদি) মূখ,হাতের
পাতা, পায়ের পাতা দেখতে পারবে তা থেকে বেশী নয়। তারপর
বলা হয়েছে মহিলারাও অন্য মহিলার
কাছহইতে পরদা করতে হবে। এক মহিলা অন্য মহিলার
স্বাভাবিক অঙ্গ গুলোই দেখতেপারবে গোপন অঙ্গ
দেখতে পারবেনা,এটা শুধু মুসলমান মহিলাদের জন্য কিন্তুকাফের
মহিলারা যেমন হিন্দু মহিলাদের নিকটও মুসলমান মহিলাদের
পুর্ন পর্দাকরতে হবে। তবে কোন চিকিৎসা করতে হলে কাফের
মহিলারাও মুসলমান মহিলাদের গোপন অঙ্গ দেখতে পারবে কোন
অসুবিধা নাই। রাসুল (সঃ) একবার হযরত ফাতেমা (রাঃ)-
কে জিজ্ঞেস করিলেন,বলোতো মা নারীর জন্যউত্তম কি?
উত্তরে ফাতেমা বলিলেন,কোন
নারী বেগানা পুরুষকে দেখবেনা এবং কোন বেগানা পুরুষও
তাকে দেখবেনা। নবী(সঃ) তখন তাকে বুকে জরাইয়া ধরিয়া আদর
করিলেন- (এহয়েউ উলুমিদ্দিন-ইমাম গাজ্জালী)।
হুজুর (সঃ) বলিয়াছেন নারীরা আল্লাহর অধিক নিকটে তখন
যায়,যখন সে তার কক্ষের অভ্যন্তরে থাকে। অনেকে বলে মনের
পরদাই বড় পরদা তারা হইল এক নাম্বার জাহেল। যদি মনের
পরদাই সব কিছু হইত তা হইলে আল্লাহ কুরআন শরিফে এত আদেশ
নিশেধ কেন দিয়াছেন, কেন সব জিনিসের
একটা সীমা টানিয়া দিয়াছেন,কেন শরিলেরপরদাকে ফরজ
করে দিয়াছেন। এইগুলো হইতেছে শয়তানি কথাবার্তা। অতএব এই
সমস্তকথা বলে আল্লাহর আদেশকে অমান্য করা ছাড়া আর কিছুই
না। এতে যে কত বড় পাপ হয়মানুষ চিন্তা করিলে কোন কুল
কিনারা পাইবেনা। তারাই অভিশপ্ত
যারা আল্লাহরআইনকে অমান্য করে,যারা হারাম কাজে লিপ্ত
থাকে। দোয়া করি আল্লাহ সবাইকেহেদায়েত নসীব করুন।
অন্য আয়াতে ইরশাদ করেছেন, “হে নবী! আপনি আপনার
পত্নীগনকে,কন্যাগনকে এবং মুমিনদের
স্ত্রীদেরকে বলুন,তারা যেন তাদের চাদরের কিয়দাংশ
নিজেদের উপরটানিয়া নেয়-(আল আহযাব-৫৯)। অতএব একটু
চিন্তা করে দেখি আমরা কি এই সব আল্লাহর আদেশ
গুলি সঠিকভাবে মানিয়া চলতেছি। এখন
অনেকে বলতে পারে বর্তমান জমানায় এত সব মানা সম্ভব নয়।
এইটা নিতান্ত মিথ্যা কথা ছাড়া আর কিছুই নয়। কারণ আল্লাহ
শুধু প্রথম যুগের নারীদের জন্যইপর্দার হুকুম জারি করেন নাই।
কেয়ামত পর্যন্ত এই আদেশ জারি থাকবে। যদি বর্তমানযুগের
নারীদের জন্য এই সমস্ত হুকুম মানা কঠিন হত তা হলে আল্লাহ এই
সব আদেশ নিষেধ নাযিল করতেন না। এ সমস্ত ওজর শুধু মাত্র
শয়তানী কাজ ছাড়া আর কিছুই নয়। বরং আগের দিনের
মহিলারা বর্তমান যুগের মহিলাদের চেয়ে আরো কষ্ট
করে দিনাতিপাত করতে হয়েছিল। বর্তমান যুগে সব কিছু হাতের
কাছে পাওয়া যায়। তখনকার যুগে এই সব কল্পনাও করা যাইতনা।
তখনকার যুগে স্বামী সন্তানরা থাকতো দিনের পর দিন
জেহাদে। মহিলাদেরই সব করতে হত,ফসল
বুনতে হতো,বাজারে যাইতে হত,কেনা বেচাও তাদেরই করতে হত
কিন্তু এমন কোন ইতিহাস নেই,এমন কোনপ্রমান নেই
তারা বিনা পর্দায় এতসব করেছেন কিংবা তাদের চেহারা কোন
বেগানা পুরুষ কোনদিন দেখেছেন। এমনও অনেক সাহাবী ছিল
যাদের দাস দাসী ছিলকাফের,ইহুদী কিংবা খ্রীষ্টান যারা সব
সময় পরিবারের সাথে উঠা বসা করতে হততারপরেও তাদের
পর্দার এতটুও কমতি হতনা। এর একটাই কারণ তাদের ঈমান মজবুত
ছিলএবং তাদের ভিতরে আল্লাহর ভয়,জাহান্নামের ভয়
সর্বদা বিরাজ করিত। হযরত আলী (রাঃ) বলেন,একবার আমি ও
ফাতেমা রাসুল (সঃ) এর সমীপে হাযির
হয়েদেখতে পাইলাম,তিনি অত্যন্ত ব্যকুল হয়ে কাঁদছেন।
আমি নিবেদন করিলাম,ইয়ারাসুলুল্লাহ! আপনার তরে আমার
মাতা পিতার জীবন উৎসর্গ হোক! আপনি কাঁদতেছেন কেন? রাসুল
(সঃ) বলিলেন,ওহে আলী! মেরাজের রাতে আমি আমার উম্মতের
মহিলাদের বিভিন্ন ধরনের শাস্তি পাইতে দেখিয়াছি,সেই
কঠিন শাস্তি কথা স্মরন করে কাঁদিতেছি। আমি দেখেছি,এক
মহিলাকে তার চুলের সাহায্যে লটকিয়ে রাখা হয়েছে। তার
মাথার মস্তক টগবগ করে ফুটতেছে। আর এক
মহিলাকে দেখিয়াছি,তারজিহবা টানিয়া প্রলম্বিত করে তার
সাহায্যে তাকে লটকাইয়া রাখা হয়েছে এবং তার গলার তপ্ত
পানি ঢালা হইতেছে। আর এক মহিলাকে দেখেছি. তার দু’পাদু-
স্তনের সাথে এবং উভয় হাত কপালের চুলের
সাথে বাঁধিয়া লটকাইয়া রাখা হয়েছে। আর এক
মহিলাকে দেখিয়াছি,তাকে স্তনে বাঁধিয়া লটকাইয়া রাখা হয়েছে।
আর এক মহিলাকে দেখিয়াছি, তার মাথা শূকুরের মাথার
ন্যায়,তার শরীর গাধার দেহের ন্যায় এবং তাকে সহস্র
প্রকারের আযাব দেয়া হচ্ছে। আর এক
মহিলাকে দেখেছি,সে কুকুরের মতন গঠন প্রাপ্ত হয়েছে,আগুন তার
মুখ দিয়া ঢুকিয়া গুহ্যদ্বার পথে বাহির হইতেছে। ফেরেস্তাগন
তার মাথায় লোহার মুগুর দিয়া পিটাইতেছে”। হযরত
ফাতেমা (রাঃ) বলিলেন,আমার পরম প্রিয় আব্বাজান
তারা এমনকিঅন্যায় করেছিল যে তাদেরকে এই ধরনের
শাস্তি দেওয়া হইতেছে? হুজুর(সঃ)বলিলেন,ওহে আমার কন্যা!
যাকে চুল দিয়ে বাঁধিয়া লটকায়া রাখা হয়েছে,সে নিজের
মাথার চুল বেগানা পুরুষের সামনে ঢেকে রাখতো না। যাকে তার
জিহবার সাহায্যে লটকাইয়া রাথা হয়েছে,সে তার
স্বামীকে তিক্ত কথা দিয়ে দুঃখ দিত।
যাকে স্তনে বাঁধিয়া লটকায়া রাখা হয়েছে,সে তার স্বামীর
বিছানায় অশ্লীলতায় রত হত। অর্থাৎসে ছিল ব্যভিচারিনী। আর
যার উভয় পা দুই স্তনের সাথে এবং উভয় হাত কপালের চুলের
সাথে বাঁধিয়া লটকাইয়া রাখা হয়েছে,সে যৌন মিলন ও স্রাব
জনিত নাপাকীহতে পাক হতো না এবং নামায নিয়া ঠাট্টা-
মস্কারা করতো। যার মাথা শূকুরের ন্যায় এবং শরীরের গঠন
গাধার মত,সে চোগলখোর ও অসত্যবাদী ছিল। আর কুকুরের
আকৃতি ধারন কারিনী, যার বাহ্যদ্বার পথে আগুন প্রবেশ
করতেছে,সে ছিল ঈর্ষাপরায়ণ ও দানের খোটা দান কারী। তাই
প্রত্যেক নারীরই উচিৎ এই সমস্ত নেক্কার জনক কাজ
হইতে নিজেকে দুরে রাখা এবং আল্লাহর আযাব
হতে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখা।
নারীর কন্ঠস্বরঃ আল্লাহ পবিত্র কুরআনে ইরশাদ
করেছেন,হে নবী পত্নীগন! তোমরা অন্য নারীদের মতন নয়।
যদি তোমরা আল্লাহকে ভয় কর তবে পর পুরুষের সাথে কোমল
সুরে বা নরমসুরে এবং আকর্ষণীয় ভঙ্গীতে কথা বলবে না।
যাতে সেই ব্যক্তি কু-বাসনা করতে নাপারে,যার
অন্তরে ব্যাধি রয়েছে। তোমরা সঙ্গত কথা বার্তা বলিবে।
(আলআহযাব-৩২)। এই আয়াতে যদিও শুধু নবী পত্নিগনকে উদ্দেশ্য
করে বলা হয়েছে কিন্তু এর নির্দেশ সমগ্র মুসলমান নারীদের
জন্য,কুরআন সমস্ত মানব জাতীর জন্যই জীবন বিধান। আর
নবী পত্নিগনই হল সকল নারীদের জন্য প্রকৃত আর্দশ
এবং উনাদেরকে যেই সব নারী অনুসরন করিবে তাদের জীবন ধন্য
হবে। তাদের জন্যইআল্লাহর জান্নাতের সুসংবাদ। এই আয়াত
থেকে পরিস্কারভাবে বুঝা যায় পর পুরুষের সাথে নরম ভাষায়
কথা বলা যাবেনা। কারণ মহিলাদের কন্ঠ স্বরও হলো ফেতনা।
নরমসুরে কথা বলিলে যেই সব পুরুষের সাথে শয়তান আছর
করে আছে তাদের মনে কুবাসনা জন্ম নিতে পারে এবং পাপ
কাজে জরাইয়া জাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। আর শয়তান মানুষের
প্রকাশ্য শত্রু। আরেকটা কথা মনে রাখা দরকার নরম সুরের
যে কথা নাবলতে বলা হয়েছে তাও পর্দার ভিতর হতে।
বিনা পর্দায়তো কোন অবস্থায়ই কথা বলা যাবেনা।
সুরা নুরে আরো ইরশাদ হয়েছে,“এবং তারা যেন তাদের গোপন
সৈন্দর্য প্রকাশ করার জন্য জোরে পদচারনা না করে- (সুরা নুর—
৩১)। নারীরা এমন ভাবে চলা উচিৎ নয় যার চলার শব্দ অন্য
পুরূষ শুনিয়া থাকে। বিষেশ করে,যারা পায়ের অলংকার পরে।
এমনকিহাতের চুরি বা যেই কোন অলংকার পরিয়া উহাদের
দ্বারা কোন শব্দ সৃষ্টি করা জায়েজ নাই। কারন নারীর
অলংকারের রিনিঝিনি আওয়াজও পুরূষের মনে আকর্ষনের
সৃষ্টি করে থাকে। এই জন্যই পবিত্র কুরআনে নারীগনকে অলংকার
বাজাইয়া পুরূষগনকে সজাগ করতে নিষেধ করা হয়েছে। এমন সব
আচরন হইতে নারী-পুরুষ উভয়কেইসাবধান হয়ে চলার নির্দেশ
উক্ত আয়াতে দেওয়া হয়েছে। অনেক আলেমগন বলিয়াছেন,
নারীদের কাপড়ও এমন স্থানে শুকাইতে দেওয়া উচিত নয়
যাতে অন্য পুরুষের চোখ পরে। সোজা কথা সব বিষয়েই তাকওয়া ও
পরহেজগারীর সহিত চলতে হবে। এখন চিন্তা করা উচিৎ
যে,যেখানে নারীর সামান্য গহনার আওয়াজও পর
পুরুষশুনা জায়েজ নাই সেখানে নারীর কন্ঠ কিভাবে অন্য
বেগানা পুরুষ শুনতেপারবে। যেই কারনে মহিলাদের আযান-
ইকামত নিষিদ্ধ এমনকি কোন মহিলার জন্য নামাযের ইমাম
হওয়াও জায়েজ নাই। বর্তমানে আমাদের আধুনিক
মেয়েরা কি করে বেরায় তা একটু দেখা যাক। তারা বিভিন্ন
সুরে গান করে পরপুরুষে মন রাঙ্গাইয়া থাকে। তারা গান
শিখে একজন পুরুষের নিকট আবার শুনায়ও অন্য পুরুষকে।
আজতো মিডিয়ার কারনে সমস্ত পৃথিবীর মানুষ এই সমস্ত গান
শুনে এবং মনতৃপ্তি লাভ করে। এমনকি তাদের চালচলনে বুঝাযায়
না তারা কোন মুসলমানের ঘরের সন্তান (নাউজু বিল্লাহ)।
ইহা আল্লাহ তায়ালার আদেশের সম্পুর্ন বিপরিত। আর যেই সমস্ত
অভিবাক বৃন্দ তাদের মেয়েদেরকে এই সবেনিয়া যাইতেছেন
তা ইসলামের পথ নয়া নিশ্চিত জাহান্নামের পথ। এই পথ
হইতে সবাইকে তওবা করে ফিরে আসতে হবে। যারা এইসব
পথে গিয়েছে তারা কেহ সুখীহতে পারেনাই, কারণ আল্লাহর
বিরুদ্ধাচরন করে সুখী হওয়া যায়না। তাই আমাদের আধুনিক ভাই
বোনদের অনুরোধ করতেছি,আপনারা নারীদের সঠিক ধর্মিয়
শিক্ষা দানকরে তাদেরকে পর্দায় রাখুন। ইহা শুধু আপনাদের
জন্য নিরাপদ ব্যবস্থাই নয়তৃপ্তিকরও বটে। আর ইহাতেই আল্লাহর
সন্তুষ্টি অর্জন করা সম্ভব হবে।
নারীর ঘরে অবস্থান এবং বাহীরে যাতায়াতঃ- স্ত্রীলোকদের
জন্য বিনা কারনে পুরুষের গতিবিধি স্থানে বাহির
হওয়াহারাম। ফেতনার নিশ্চিত আশংকার
স্থলে সুগন্ধি মাখাইয়া কিংবা সাজ-সজ্জা করে বাহির
হওয়া কবিরা গুনাহ। আল্লাহ পবিত্র কুরআনে আরো ইরশাদ
করেন,“তোমরা জিনাতো দুরের কথা জিনার ধারে কাছেও
যাইবে না। (বনী ঈসরাইল-৩২)। এখন জিনাতো বুঝা যায় কিন্তু
নিকটে যাওয়া কি জিনিস তা বুঝিতে হবে। এক
নাম্বারে আসে বিনা পরদায় থাকা। তারপর বেগানা পুরুষের
সাথে মেলামেশা,পর পুরুষের দিকে দৃষ্টিদেওয়া,খারাপ
ফটো দেখা,খারাপ কথা বার্তা বলা,টিবি-বিসিআর-
সিনেমা দেখা,গানশুনা ইত্যাদি। এই সমস্ত কারণগুলোর
কারণে মানুষ জিনার দিকে ধাবিত হয়। অতএব এইসমস্ত কাজ
হইতে আমাদের সবাইকে বাঁচিয়া থাকা জরুরী। হযরত
আয়শা ছিদ্দিকা (রাঃ)হইতে বর্নিত, রাসুলুল্লাহ(সঃ)
বলিয়াছেন,(মেরাজ রাতে) আমাকে জাহন্নাম দেখানোহয় আর
সেখানের অধিকাংশই দেখি নারী-(বোখারী)।
মহিলারা জাহান্নামে বেশী যাওয়ারকারন
হিসাবে বলা হয়েছে তারা আল্লাহ,রাসুল(সঃ) ও স্বামীর
বশ্যতা কম করেএবং “তাবাররুজ”করে। তাবাররুজ
হইতেছে নারী বাহিরে (জনসমক্ষে) চলাচলের
সময়সর্বাপেক্ষা সুন্দর পোশাক পরা,বেশী করে সাজগোজ
করা এবং রূপলাবন্য দেখাইয়ামানুষজনকে আকৃষ্ট করা। এক কথায়
পর্দাহীন অবস্থহায় বেহায়াপনার সাথে চলাচলকরাই
হচ্ছে তাবাররুজ। এই জন্য নবী (সঃ)
বলিয়াছেন,মহিলারা হইলো গুপ্তধন,সেযখন গৃহের বাহিরে যায়
শয়তান তখন তাকে প্রশংসাবাদ জানায়- (কিতাবুলকাবায়ের-
ইমাম আযযাহাবী(রঃ)। মহান আল্লাহর দৃষ্টিতে মহিলাগন
ততক্ষন পর্যন্তসর্বাপেক্ষা বেশী সম্মানীতা থাকেন,যতক্ষন
পর্যন্ত তারা ঘরে অবস্থানকরেন।
হাদিসে আরো বলা হয়েছে,“স্ত্রীলোক গৃহে থেকে এবাদত ও
স্বামীর অনুগতথাকার মাধ্যমে যতটা আল্লাহর পাকের
রেজামন্দি (সন্তুষ্টি) অর্জন
করতে পারেততটা অন্যকোনমতে পারেনা-(কিতাবুল কাবায়ের-
ইমাম আযযাহাবী(রঃ))। হযরতাআনাস(রাঃ) হইতে বর্নিত
যে,কতক স্ত্রীলোক হজরত(সঃ) এর নিকট আগমন করিলেন
এবংবলিলেন,হে আল্লাহর রাসুল(সঃ)! পুরুষগন আল্লাহর
পথে জেহাদ করে আমাদের চেয়েঅধিক নেকী ও সম্মান অর্জন
করেছেন। আমরা কি কাজ করিলে তাহদের সমকক্ষ হতেপারিব।
নবী(সঃ) বলিলেন,তোমাদের ঘরই তোমাদের জেহাদ অর্থাৎ
নিজের ঘরকে দেখাশুনা করা,সন্তানদেরকে ইসলামে রিতিমত
পালন করা এবং ইসলামের শিক্ষায় শিক্ষিতকরা।
পবিত্র ক্বোরআনে আরো ইরশাদ
হয়েছে,“তোমরা গৃহাভ্যন্তরে অবস্থানকরিবে। জাহিলিয়াত
যুগের নারীদের মতন ঠাক ঠমক
করে নিজেদেরকে প্রদর্শনকরিবেনা-(সুরা আহযাব-৩৩)।
নবী করীম(সঃ) এর আগের যুগকে জাহেলিয়াত যুগ বামুর্খ যুগ
বলা হয়। সেই যুগের মহিলারা বিনা পরদায় চলাফেরা করিতো,
জিনার মতনঘৃন্য কাজে লিপ্ত থাকিতো। তখন এমন
অবস্থা ছিল,তারা পিতার তালাক প্রাপ্তাস্ত্রী কিংবা পিতার
মৃত্যুর পর তার পরিতেক্তা স্ত্রীকে বিয়ে করতে কোনকুন্ঠা বোধ
করিত না অর্থাৎ সৎমাকে বিয়ে করিত। এছাড়াও অনেক
অপকর্মহত। কিন্তু এই সমস্ত কাজগুলো ছিল সমাজের
কাছে এবং আল্লাহর কাছে ঘৃনিত। তাইআল্লাহ মুসলমান
নারীদেরকে হুশিয়ার করে দিয়া বলিয়াছেন,তোমরাও
জাহেলিয়াত যুগের মহিলাদের মতন চলিওনা। কিন্তু বর্তমান
যুগের মহিলারাও জাহেলিয়াত যুগের মহিলাদের মতন সাজ
সজ্জা আরম্ভ করেছে বরং এক ধাপ বেশীই অগ্রসর হয়েগিয়াছেন।
বর্তমান নারী সমাজ র্নিজল্যভাবে বেপরদায় চলাফেরা আরম্ভ
করেছে। এমনকি জিনা-
ব্যভিচারে সারা দুনিয়া ভরিয়া গিয়াছে। সাজ
সজ্জা মহিলাদে রজন্য নাজায়েজ নয়। কিন্তু সেটা কি রকম
আল্লাহ পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেছেন,“নারীগন যেন তাদের
সৌন্দর্য তাদের স্বামীদের ব্যতিত অন্য কারো নিকট প্রকাশ
না করে-(সুরা-নুর)। মনে রাখতে হবে কোন
মহিলাকে যদি আল্লাহ সৌন্দর্য দিয়া থাকেন তা আল্লাহর
একটা বিরাট নেয়ামত। আর এই সৌন্দর্য আল্লাহ দান করেন শুধু
মাত্র তার স্বামীর জন্যই অন্য কারো জন্য নয়। কিন্তু
আমরা কিদেখি স্বামীর
সামনে সাজিয়া গুজিয়া না থাকিয়া বরং কেউ যদি কোথায়
বেরাইতে বাহির হয় তখন সাজার ধুম পরিয়া যায়। ভাল
করে না সাজিলে মনে হয় বেরানোর মজাই থাকেনা। অর্থাৎ
আল্লাহ যাহা আদেশ করেছেন আমরা তার
উল্টাটি করতে বেশী ভালবাসি, মনে রাখতে হবে এই সমস্ত কাজ
হারাম এবং বহুত বড় পাপহয়। জাহান্নাম যে মানুষের কত
নিকটে এই সমস্ত অবস্থা হইতেই বুঝা যায়। অতএব সব বেপারেই
আমাদের সাবধান হওয়া উচিত। আমাদের নারী সমাজে এমনও
দেখা যায় যে, অনেক মহিলা খুব একটা নিজে ঘর হইতে বাহির
হন না। কিন্তু অন্য পুরুষ ঘরের ভিতরে প্রবেশ করাইতেও
কৃপনতা করেন না। তারা অন্য পুরুষকে নিজের ঘরে স্থান
করে দিয়া আড্ডা জমায় আনন্দ ফূর্তি করে। এক সাথে গান
শুনে,টেলিভিশন দেখে,ভিডিও দেখে। এটা হচ্ছে চোখ
বুঝে অন্ধের অভিনয় করার মতন। মনে রাখতে হবে নিজে যেমন
বাহিরে গিয়ে পর পুরুষের সঙ্গে দেখা দেওয়া জায়েজ নাই
তেমনি ঘরের ভিতরও কোন পুরুষের সাথে দেখা দেওয়া জায়েজ
নাই। পাপ সর্বাবস্থায়ই সমান।
জরুরী অবস্থায় নারীর বাহিরে গমনঃ- পিতা-মাতার সহিত
সাক্ষাত করা,তাদের সেবা করতে স্ত্রীকে পর্দার সহিত
যাইতে দেওয়া স্বামীর জন্য বৈধ। কিন্তু বেগানা পুরুষের
সেবা করতে তাকে যাইতে অবশ্যই দিবেনা। বরং এইরূপ অবস্থায়
স্বামী অনুমতি দিলেও স্ত্রীর জন্য যাওয়াবৈধ নয়।
যদি স্বামী অনুমতি দেয় এবং স্ত্রী যায় তা হইলে উভয়ই
গুনাহগার হবে। স্ত্রীলোকদের সাধারন গোসল করার
স্থানে গোসল করতে যাইতে দেওয়া ঠিকনয়। স্বামীর
বিনা অনুমতিতে কিছু শিক্ষা করতে যাওয়াও স্ত্রীর জন্য
বৈধনয়। যদি স্ত্রীর এমন কোন শরিয়তের মাসলার প্রয়োজন হয়
যাহা না হইলে কাজ চলেনা। তা যদি স্বামীর
জানা থাকে তবে স্বামীর কাছ হইতে শিক্ষা গ্রহন করে নিবে।
আর যদি স্বামীর জানা না থাকে তবে স্বামী কোন আলেমের
নিকট হতে জানি য়াস্ত্রীকে বলে দিবে। আর যদি স্বামী ইহাও
না করতে পারে তাহলে স্ত্রী-স্বামীর অনুমতি নিয়া কোন
আলেমের নিকট হতে উক্ত মাসয়ালা জানিয়া আসতেপারবে।
বর্তমান জমানায় মেয়েলোকদের এমন কোন অসুবিধা পরিতে প্রায়
দেখা যায় নাযে তাকে বাহিরে গিয়ে কিংবা আলেম সাহেবের
বাড়ী গিয়ে মাসইয়ালা শিক্ষাগ্রহন করে আসিতে হবে। বর্তমান
যুগে নানা কিতাবাদি প্রকাশ হয়েছে,উহারসাহায্যে যে কোন
মাসলা ঘরে বসিয়া শিক্ষা করা যায়। তারপর নিজের মহররম
গনের মাধ্যমে আলেম সাহেবের নিকট
হতে মাসয়ালা জানা যায়। যদি একান্তই এই
সমস্তব্যবস্থা না থাকে তা হলে আলেম সাহেবের স্ত্রীর
মাধ্যমে প্রয়োজনীয় মাসয়ালা আলেম সাহেব
হতে জানিয়া লওয়া যাইতে পারে। নবী (সঃ) এর যুগেও
এইব্যবস্থা ছিল, মহিলারা উম্মুল মুমেনীনদের মাধ্যমে প্রশ্ন
করে সকল প্রয়োজনীয় মাসয়ালা জানিয়া নিতেন। তাইত
দেখা যায় মহিলা সম্পর্কীয় বেশীর ভাগ মাসয়ালাই হযরত
আয়শা (রাঃ) এর রেওয়াতে বর্নিত হয়েছে। অবশ্য যদি এই সমস্ত
কোনসুযোগ সুবিধা না থাকে তবে পরদার সহিত কোন আলেমের
নিকট হতে প্রয়োজনীয় মাসয়ালা শিক্ষা গ্রহণ করার মাঝে কোন
দোশ নাই। তারপরও যে যে স্থানে স্বামীর অনুমতি ব্যতিত
যাওয়া যায়, সেখানেও বিবেচনাকরতে হবে যে, স্বামীর নিষেধ
করার মাঝে কোন যুক্তি সংগত কারন আছে কিনা। বর্তমানে সঠিক
আলেম পাওয়া বরই মুশকিল। হয়তো ব্যক্তি বিশেষের চরিত্র
সম্বন্ধে সন্দেহের কারনে স্বামী তার নিকট যাইতে নিশেধ
করতেছেন। স্ত্রীর পক্ষে ইহা বিবেচনা করে কাজ করতে হবে।
মনে রাখতে হবে স্বামী অবশ্যইস্ত্রী অপেক্ষা বাহিরের খবর
বেশী রাখে। ঠিক তেমনি স্বামী যদি পিতা মাতার
বাড়িতে যাইতে শরিয়ত সম্মত ভাবে নিশেধ করে,
সে ক্ষেত্রে স্ত্রীর জেদ ধরা এবংঅধিকারের দোহাই
দেওয়া সঙ্গত হবেনা। মনে রাখতে হবে শরিয়ত সম্মত
ভাবেস্বামীর আনুগত্য করাও স্ত্রীর জন্য আবশ্যক।
বোরখা প্রথা ও অবাধ চলাফেরাঃ- বর্তমান যুগে এইরূপ
ফতোয়া প্রদান করা হইতেছে, মহিলারা বোরকা পরিধান
করে স্বাধীন ভাবে চলাফেরা করতে পারিবে এবং ইহাতে তার
পরদা হয়ে যায়। কিন্তু বোরকা পরিধান করেও মেয়েলোকের
অবাধ চলাফেরায় পর্দার উদ্দেশ্য যে র্ব্যথহয়ে যায় তা সহজেই
স্বীকার করতে হয়। স্ত্রীলোকদের অঙ্গ ঢাকিয়া রাখলেইপর্দার
সব কার্য সমাধা হয় না। বরং স্ত্রীলোকদের কন্ঠস্বর,শরীরের
গঠন, চলার ভঙ্গী ইত্যাদি সবই পর্দার আওতায় পরে এবং এই
সবকিছুরও পর্দা করা ফরজ। হযরত আয়শা (রাঃ)
হইতে বর্নিত,হেজাব বা পর্দার হুকুম নাজিল হবার পর উম্মুল
মুমেনীন হযরত সওদা (রাঃ) একদিন বাহির হলেন।
তিনি স্থুলুকার ছিলেন,লোক তাকে সহজেই চিনিতে পারতেন।
পথে হযরত ওমর (রাঃ) তাঁকে দেখিয়া বললেন,“হেসওদা,
আপনি আমার নিকট গোপন নহেন,
আচ্ছা দেখি আপনি কিভাবে বাহির হন”। হযরত সওদা (রাঃ) এই
কথা শুনে নিরুত্তরে ফিরিয়া আসলেন। হযরত (সঃ) তখন
ঘরে রাত্রিরখানা গ্রহণ করেছেন। তার হাতে একখানা হাড়
ছিল। এমন সময় হযরত সওদা (রাঃ) আসিয়া তাঁহার নিকট এই
ঘটনা বর্ননা করলেন। হযরত(সঃ) এর নিকট আল্লাহর
তরফহতে অহি আসিল। তিনি(সঃ) বলিলেন,হে সওদা! আল্লাহ
তোমাদিগকে অত্যাবশ্যক প্রয়োজনেই মাত্র বাহিরে যাওয়ার
হুকুম দিয়াছেন। শুধু শুধু বাহিরে ঘোরা পেরার জন্য নয়। এই
ঘটনা দ্বারা দৃঢ়ভাবে প্রতিয়মান হইতেছে যে,হযরত (সঃ) এর
পবিত্র স্ত্রীগনও বিনা কারনে পরদা করেও বাহিরে যাওয়ার
অনুমতি পায়নাই। সুতরাং বর্তমানে বোরখা পরিয়াও সর্বত্র
যাতায়াত করা কোন রকমেই জায়েজ হতে পারেনা। এই প্রসঙ্গেসু
বিখ্যাত আলেম হযরত আল্লামা আশরাফ আলী থানবী (রঃ) এর
উক্তি বর্ননা করতেছি,তিনি তাঁর
কিতাবে লিখেছেন,“শরীয়তে পরদার উদ্দেশ্য পুর্ন
পবিত্রতা রক্ষার ব্যবস্তা করা। সুতরাং যে সমস্ত কার্য্যে এই
পবিত্রতায় কোন দাগ লাগেউহাই শরীয়তে নিষেধ চাই
মহিলারা খোলাখুলি ভাবে চলুক বা বোরখা পরিধান করেচলূক।
স্ত্রীলোকেরা যদি বোরকা পরিধান করেও অবাধে পুরুষের
মধ্যে চলাফেরাকরে,কথাবার্তা বলে তবে তার অবস্থা অর্থাৎ
সে বৃদ্ধা কি যুবতি, সুন্দরী কিকুৎসিৎ তা পুরুষের পক্ষে অনুমান
করে লওয়া মোটেও কঠিন কার্য নই। অগত্যাযদি তা সম্ভব নাও
হয়,তবু বোরখার আচ্ছাদনে আবৃতা রমনীটি কেমন তা জানার জন্য
পুরুষের মধ্যে অবশ্যই কৌতুহল সৃষ্টি হবে। আর এই যদি অবস্থা হয়
তাহলে এখানে পুরুষের আন্তরিকতা নষ্ট হওয়ার কারন উপস্থিত
হবে।”
আবার যে স্ত্রীলোকটি বোরকা পরিধান করে পথে বাহির
হবে সে তার বোরকার ছিদ্র
দিয়া পুরুষকে স্বচ্ছন্দে দেখিয়া লইবে,কেননা নারীর মধ্যেও
কাম-ভাব বিরাজমান। সেও সুন্দর ও মন মতন পুরুষ দেখলে তার
মনে কুবাসনা সৃষ্টিহবে। সুতরাং দেখা যাইতেছে যে,নারী ও
পুরুষ উভয়ই যখন পরস্পর সম্বন্ধে বেশসজাগ,তখন
বোরকা কি কাজে আসতে পারে। এই জন্য বোরকা পরিধান করেও
মহিলাদেরপর পুরুষের সহিত
অবাধে চলাফেরা করতে দেওয়া পর্দার উদ্দেশ্যের বিপরিত।
এইজন্য শরীয়তে পুরুষগনকে বেগানা স্ত্রীলোকদের
প্রতি এবং স্ত্রীলোকদিগকে বেগানপুরুষদের
প্রতি দৃষ্টি করতে নিষেধ করেছে। তা ছাড়াও আরও দেখা যাই
যে,হযরত নবী করিম(সঃ),সাহাবায়ে কেরাম
কিংবা সলফে সালেহিনদের যুগে কেহইএইরূপ কোন নজির
রাখিয়া যান নাই
যে,তাঁহারা বোরকা পরাইয়া বিবিগনকে সঙ্গে নিয়ে পুরুষের
সমাজে শুধু শুধু বাহির হয়েছেন এবং বক্তৃতা দেওয়া দিয়েছেন
কিংবা বন্ধু বান্ধবের সহিত সাক্ষাত করেছেন।
বরং তারা বিবিগনকে কঠোর ভাবেপর্দা করতে আদেশ দিয়াছেন।
ইহা দ্বারা পরিস্কার ভাবে প্রমানিত
হইতেছে যে,বর্তমানে পর্দা যে অবস্থায়
আসিয়া দাড়াইয়াছে,এই সমন্ধে স্বয়ং নবী (সঃ),
সাহাবায়ে কেরাম,তাবেয়ী, মোজতাহেদ আলেমগন কেহই এই
বিষয়ে কোন দলিল প্রমাণ রেখে যান নাই।
বর্তমানে বোরকা পরিয়াপর্দার নাম করে যত্রতত্র যাতায়াত
কোন প্রকারেই পর্দার হুকুমের আওতায় পরেনা। অবশ্যই
তা পর্দার পরিস্কার খেলাফ। কাজেই বর্তমান পত্নীদের খেয়াল
ওআচরনকে শরীয়তী পরদা বলিয়া স্বীকার করে লওয়া চলেনা।
অপরের গৃহে প্রবেশঃ- আল্লাহ পবিত্র ক্বোরানে ইরশাদ
করেন,“হে মুমিনগন তোমরা নিজেদের ঘর ব্যাতিত অন্যের
ঘরে প্রবেশ করিওনা, যে পর্যন্ত না আলাপ পরিচয় হয় এবং গৃহ
বাসীদেরকে সালাম না কর। এইটাই তোমাদের জন্য উত্তম
যাতে তোমরা স্মরন রাখ। যদি তোমরা গৃহেকাউকে না পাও,
তবে অনুমতি না পাওয়া পর্যন্ত সেইখানে প্রবেশ করিওনা।
যদি তোমাদেরকে বলা হয় ফিরিয়া যাও তবে ফিরিয়া যাইবে।
এতে তোমাদের জন্য অনেক
পবিত্রতা রহিয়াছে এবং তোমরা যাহা কিছুই কর আল্লাহ তা ভাল
ভাবেই জানেন। –(সুরা নুর–২৭-২৮)। হযরত উম্মে আয়াস (রাঃ)
বলেন,আমরা চার জন মহিলা প্রায়ই হযরত আয়শা (রাঃ) এর
ঘরে যাইতাম। আমরা প্রথমে তাঁর কাছ হইতে অনুমতি নিতাম
এবং অনুমতি পাইলে তারপর ঘরে প্রবেশ করিতাম। -
(ইবনে কাসীর।) অন্য হাদীসে আছে,আতা ইবনে ইয়াসার (রাঃ)
হইতে বর্নিত,জনৈক ব্যক্তি রাসুল(সঃ)এর কাছে জিজ্ঞেস
করিলো,আমি আমার মাতার কাছে যাওয়ার সময়ওকি অনুমতিচাইব?
হুজুর (সঃ) বলিলেন হ্যাঁ,অনুমতি চাও। সে বলিল,ইয়া রাসুলুল্লাহ
আমিতো আমার মায়ের ঘরেই থাকি। রাসুল (সঃ) বলিলেন, তবু
অনুমতি না নিয়ে ঘরে প্রবেশ করিবে না। লোকটি আবার বলিল
ইয়া রাসুলুল্লাহ আমিতো সর্বদা আমার মায়ের কাছেই থাকি।
হুজুর (সঃ) বললেন,তবুও অনুমতি না নিয়ে ঘরে প্রবেশ করিবেনা।
তুমি কিতোমার মাকে উলঙ্গ অবস্থায় দেখিতে চাও?সে বলিল
না। হুজুর(সঃ) বলিলেন তাইঅনুমতি চাওয়া আবশ্যক। কেননা,
গৃহে কোন প্রয়োজনে তার অপ্রকাশযোগ্য কোন
অঙ্গখোলা থাকিতে পারে-(আল মুয়াত্তা ও মাযহারী।) কেই
যদি কারো ঘরে প্রবেশ করতে চায় তা হইলে প্রথমে দরজার
বাহির হইতেঅনুমতি নিতে হবে তিনবার।
যদি অনুমতি পাওয়া যায় তা হইলে ঘরে প্রবেশ করতে পারিবে,
না হয় ফিরিয়া যাইতে হবে। এইটা এই জন্য যে ঘরের
বাসিন্দারা যদি বেপরদায় থাকে তা হলে তারা যেন
পরদা করে নিতে পারেএবং এই আদেশ  শুধু পুরুষদের জন্য নয়
মহিলারাও কোন ঘরে প্রবেশ করিবার আগে অনুমতি নিতে হবে।
এখানে জানিয়া রাখা ভাল যে স্বামী ঘরে না থাকিলে কোন
বেগানা পুরুষকেঘরে প্রবেশ করার
অনুমতি দেওয়া যাইবেনা এবং অপরিচিত কাউকেও ঘরে প্রবেশের
অনুমতি দেওয়া ঠিক নয়। আর যদি ঘরের ভিতর হইতে কোন জবাব
না আসে কিংবা অনুমতিনা দেওয়া হয়
তা হইলে ফিরিয়া আসিতে হবে। ঘরে প্রবেশ করা যাইবেনা।
ঘরে প্রবেশ করিবার বা অনুমতি নেওয়ার সুন্নত ত্বরীকা হলো।
প্রথমে বাহির হতেসালাম করতে হবে,এরপর নিজের নাম
নিয়া বলিতে হবে অমুকে আপনার
সাথে সাক্ষাতবা দেখা করতে চায়, এই ভাবে তিন বার বলার পর
সারা না পাওয়া গেলে ফিরিয়াযাইতে হবে। হযরত আবু
উমামা (রাঃ) হইতে বর্নিত,হযরত (সঃ)
বলিয়াছেন,যে ব্যক্তি আমাকে আল্লাহর রাসুল বলিয়া স্বীকার
করে,সে যেন অপরের
গৃহে বিনা অনুমতিতে এবং বিনাসালামে প্রবেশ না করে।
যে ব্যক্তি অন্যের গৃহে দৃষ্টি নিক্ষেপ করিল, সে যেনগৃহেই
প্রবেশ করিল। –(তিবরানী।)
নবী (সঃ) বলেছেন, যদি কোন ব্যক্তি বিনা অনুমতিতে তোমার
গৃহের মধ্যে ঝুঁকিদিয়া দেখে,তবে তুমি প্রস্তর খন্ড দ্বারা তার
চক্ষু নষ্ট করিলে তোমার কোনগুনাহ হবে না। (বোখারী ও
মুসলীম)। আকাবা ইবনে আমের হইতে বর্নিত, হযরত (সঃ)
বলেছেন, “সাবধান! তোমরা পরস্ত্রীর সহিত সাক্ষাৎ করিও
না”। এক ব্যক্তি বলিলেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ! স্বামীর ভ্রাতাগন
সম্বন্ধে কি হুকুম? হযরত(সঃ) বলিলেন,“স্বামীর ভ্রাতাগন
অর্থাৎ দেবরগনতো হল মৃত্যু সমতুল্য”। –(বোখারী ও মুসলীম)।
হযরত জাবের (রাঃ) হইতে বর্নিত, রাসুল(সঃ) বলিয়াছেন,
যে স্ত্রী লোকের স্বামীবাড়ী নাই, তাদের নিকট যাইওনা।
কেননা শয়তান তোমাদের প্রত্যেকের শিরায় শিরায়রক্তের ন্যায়
চলাচল করে থাকে। আমরা আরজ করিলাম ইয়া রাসুলুল্লাহ
আপনারও কিতদ্রূপ? হযরত(সঃ) বলিলেন,হাঁ আমার মাঝেও ঐরূপ
শয়তান চলাচল করিত। কিন্তু আল্লাহ তায়ালা আমাকে সাহায্য
করেছেন, শয়তান আমার নিকট মুসলমান হয়েগিয়াছে। –
(তিরমিজি)। হুজুর (সঃ) বলিয়াছেন, যখন কোন ব্যক্তি কোন পর
নারীর সহিত নির্জনে সাক্ষাৎ করে,নিশ্চয় তাদের
মধ্যে শয়তান তৃতীয় ব্যক্তিরূপে উপসি’ত হয়।–(তিরমিজি)। হযরত
আবু ইমামা হইতে বর্নিত, রাসুল (সঃ) বলেছেনন, সাবধান!
তোমরা অন্য স্ত্রীলোকের সহিত নির্জনে একত্রিত হইওনা।
যাহার হাতে আমার প্রান,সেই আল্লাহর শপথ করে বলিতেছি,
যদি কোন ব্যক্তি ভিন্ন স্ত্রীলোকের সহিত নির্জন
স্থানে দেখা করে, সেখানে উভয়ের মধ্যে শয়তান প্রবেশ করে।–
(তিবরানী)। উপরে বর্নিত কুরআনের আয়াত এবং হাদীস
দ্বারা ইহাই প্রতিয়মান হয় যে,কোনব্যক্তিই কারো ঘরের
মধ্যে বিনা অনুমতিতে প্রবেশ করতে পারিবেনা। হোক
সেবেগানা কিংবা মহররম। এমনকি আপন সন্তানও মায়ের
ঘরে প্রবেশের সময় অনুমতি নেওয়াআবশ্যক। আর কোন
বেগানা মহিলার ঘরে কোন বেগানা পুরূষের প্রবেশ
করারতো কোন অনুমতিই নেই। বিশেষ করে যাদের
স্বামীরা বাড়ীতে থাকেনা। অতএব আমরা নিজেরাই
চিন্তা করে দেখি আমরা কতটুকু আল্লাহর
আইনকে মানিয়া চলিতেছি। বর্তমান যুগে অনুমতিতো দুরে থাকুক
বরং আমাদের সমাজে এমনো মহিলা আছে যারা নিজেই
বেগানা পুরুষকে নিমন্ত্রন করে আনিয়া বিভিন্ন গল্প গুজবে মত্ত
হয়ে পরে। আর পুরুষরাও আবেগে আট খানা হয়ে পর নারীর
ঘরে ঢুকিয়া যায় অনায়াসে। ইহা স্পষ্ট শরিয়তের পরিপসি’ ও
হারাম।
নারীর নামাযের জামাতঃ- মহিলারা নামাজের
জামাতে যোগদান করিবে কিনা এই নিয়া বর্তমানে অনেক কথাই
শুনাযাচ্ছে। তাই এই সম্বন্ধে কিছু আলোকপাত করা আমি প্রয়োজন
মনে করতেছি। নবী করিম (সঃ) এর যুগে মহিলারা নামাযের
জামাতে যোগদান করতেন। সেই সময় বর্তমান যুগের মতন এত
ফেতনা ছিল না। মহিলারা নামায পরে যতক্ষন ঘরে পৌছিতেন
ততক্ষন পর্যন্ত সাহাবায়ে কেরামগন মসজিদে বসে থাকতেন।
তারপরেও কিছু মুনাফিক নামাযে পিছনের
কাতারে দাড়াইয়া মহিলাদের দিকে উঁকি যুকিদিতেন। বর্তমান
যুগে সাহাবায়ে কেরামগনের মতন এই রকম ইমান কোন
মুসলমানের আছেকি না তা আমাদের জানা নাই।
বরং এইটা জানা আছে বর্তমানে ইমানদার থেকেমুনাফেকের
সংখ্যাই বেশী। নবী করিম (সঃ) বলিয়াছেন,“আমার যুগ র্সব
শ্রেষ্টযুগ”। তাইতো সেই যুগে মহিলারা জামাতে নামায
পড়তে কোন অসুবিধা হয় নাই। সেইযুগের নিরাপত্তার
সমিকরনটা ছিল একশতে একশ। কারো সাহস হয়নাই
পথে ঘাটে কোন মহিলাকে উত্যক্ত করতে এমনকি কোন মহিলার
দিকে চোখ তুলিয়া তাকাবে এমন বীর পুরুষও সে যুগে ছিলনা।
তারপরেও আমরা কি দেখিতে পাই,মহিলাদের জামাতে নামায
পড়া নিয়ে নবী করিম (সঃ) এর উক্তি, “একদিন একজন
মহিলা সাহাবীয়া এসে নবী (সঃ) এর কাছে আরজ করল
হে আল্লাহর রাসুল (সঃ) আমার ইচছা হয় আমি আপনার
মসজিদে এসেআপনার সাথে জামাতে নামায পড়ি। নবী করিম
(সঃ) বলেন হে মহিলা তুমি শুনেরাখ,আমার এই মসজিদে নামায
পড়া হইতে উত্তম হচ্ছে তুমি তোমার ঘড়ে নামায পড়। আরঘড়
হইতে উত্তম হচ্ছে তুমি ঘরের এক
কোনে আলাদা কুঠরিতে নিরিবিলি নামাযপরা”। এই হাদীস
দ্বারা ইহাই প্রমান হয়না যে,জামাতে নামায পড়ার
চেয়ে ঘরেনামায পড়াই অধিক সওয়াবের কাজ। অথচ কথা হচ্ছিল
মসজিদে নববী নিয়ে যেখানে নামাযপড়া মসজিদুল হারাম
ব্যতিত পৃথিবীর সকল মসজিদ হইতে এক হাজার গুন
বেশীসওয়াবের ছিল অথচ নবী (সঃ) বললেন, এই মসজিদ হইতেও
উত্তম তুমি তোমার ঘরে নামায কিন্তু কোন
নারী যদি মসজিদে নামায পড়তে চায় বা যায়
তবে তাকে বাঁধা দেয়াযাবেনা তবে পরিবেশ পরিস্থিতির
বিবেচনায়ই মেয়েদের মসজিদে গিয়ে নামায
আদায়করা উচিত,মনে রাখতে হবে মহিলাদের মসজিদে নামায
পড়া ফরজ বা ওয়াজীব না।
ছোট মেয়েদের পরদাঃ-ছোটবালিকাদের
অবস্থাভেদে পর্দা করা ওয়াজিব হয়ে যায়। অভিভাবকগন
সে বিষয়ে উদাসিনতা করলে এর পরিনাম খুবই খারাপ হয়।
বর্তমানে নাবালিকার উপরে যেসবপাশবিক কান্ড
ঘটিতেছে তা কি এই পরদাহীনতার পরিনাম নয়? যাহা রিতি মত
সংবাদপত্র পাঠ করেন তারা অবশ্যই এই সমস্ত খবর জানেন।
আমাদের দেশে এমনও ঘটনা ঘটছে যে, মাত্র পাঁচ বৎসরের
বালিকা সন্তান প্রসব করেছে। প্রতিনিয়ত অবুঝ
বালিকারা ধর্ষন হইতেছে। এই সব দেখিয়াও আমাদের সমাজের
হুস হইতেছে না। তাইআমাদের উচিত ছো্ট ছোট
মেয়েদেরকে অল্পবয়স হইতেই
পর্দা করা শিখানো এবং ইসলামী নিয়ম কানুন শিখানো। আর
তাতেই রয়েছে প্রকৃত কল্যান। যদি একেবারে শিশু হয়,তবে দর্শন
ও স্পর্শ করা জায়েজ হবে। যখন হইতে কিছু কিছু জ্ঞান বুদ্ধির
বিকাশ হয় এবং পৃথিবীর হালচাল কিছু কিছু বুঝিয়া উঠে,তখন
হতেই তাদেরকে সাবধান করতে হবে। তাদেরকে গায়রে মহররম
ব্যক্তি হতে দুরে সরাইয়া রাখতে হবে। ছেলে বন্ধুদের
সাথে খেলতে দেয়া যাইবেনা। তাদের সাথে আজে বাজে কৌতুক
করা যাইবে না। যেমন নানা দাদা কিংবা বিভিন্ন ধরনের
ভাইয়েরা যেইসমস্ত
বাজে ঠাট্রা মস্কারি করে তা করা যাইবে না। তাদেরকে শরম
শিখাইতেহবে। ছোট সময় প্রয়োজনীয়
শিক্ষা না পাইলে পরিনামে বেপরোয়া হয়ে উঠিবে।
মনে রাখবেন ছোট ছোট বালিকারা যদিও শরিয়তের হুকুমের
অন্তর্ভুক্ত নয় কিন্তুযারা তাদেরকে দেখতেছে তাদের
মাঝে অনেকেই বেগানা এবং শরিয়তের অন্তর্ভুক্ত। বর্তমান
ফেতনার জামানায় এই সব কিছুই বাঁচিয়া চলতে হবে। গান-
বাজনা,নাটক
সিনেমা ইত্যাদি হইতে তাদেরকে দুরে রাখতে হবে। দশম
বর্ষীয়বালককে প্রহার করে নামাজ পড়াইবার হুকুম আছে।
মেয়েদের পর্দার বেলায় ইহা আরো বেশী জরুরী মনে করা উচিত।
এবং বালিকা পুর্ন বয়স্কার কাছা কাছি পৌছিলেই তাকেপুর্ন
বয়স্কা মনে করিবে এবং সেই ভাবে চালাইবে।
নারী শিক্ষা:- নারীদেরজন্য যেমন পর্দার
ব্যবস্থা করতে হবে তেমনি তাদের সুশিক্ষায় শিক্ষায় শিক্ষিত
করেও তুলিতে হবে। হযরত নবী করিম (সঃ) বলিয়াছেন, প্রত্যেক
নর-নারীর উপড় বিদ্যা অর্জন করা ফরজ। তিনি (সঃ) শুধু মাত্র
ছেলেদের কথা বলেন নাই। বরং বলিয়াছেন
ছেলে মেয়ে উভয়কেই শিক্ষা নিতে হবে। কিন্তু দুনিয়াতে বহু
রকমেরবিদ্যা আছে এই সকল বিদ্যা একত্রে কোন মানুষের
পক্ষে অর্জন করা সম্ভবনয়, কিন্তু বিদ্যা অর্জন করা ফরজ।
তা হইলে বুঝতে হবে হযরত নবী করিম (সঃ) কোন বিদ্যার
প্রতি এত খানি গুরুত্ব আরপ করেছেন। এই কথা চিরন্তন সত্য
যে প্রথমে আমাদেরকে মুসলমান হতে হবে। ইসলামের
আদর্শশিক্ষা গ্রহন করতে হবে। ইহকাল ও পরকাল সম্পর্কে অবগত
হতে হবে। কুরআন ওহাদীসের আদেশ নিষেধ
গুলি মানিয়া চলতে হবে। যাহাকে এক কথায়
বলা হয়‘ইলমেদ্বীন’। ইলমে দ্বীন হইতেছে যথা-ইমান আনার পর
অর্থাৎ ইসলামে দাখেল হওয়ার পর,আল্লাহকে চেনা,নামায
পরা,রোজা থাকা,হজ্জ্ব করা,যাকাত দেওয়া,সত্য কথা বলাও
মিথ্যা পরিহার করা,হারাম হতে বাঁচিয়া থাকা,হালাল
অন্বেষন করা,নারীপুরুষ পরদায় থাকা,ব্যভিচার না করা,কোন
জুলুম না করা ইত্যাদি,অর্থাৎ মোটামোটি ভাবে আল্লাহ ও
রাসুলের আদেশ নিশেধ
গুলি মানিয়া চলা এবং তদঅনুযায়ী আমলকরতে যাহা শিক্ষা করা আবশ্যক
তাই হইল ফরজ ইলম। দুনিয়াতে আরো বৈধ ইলম
আছেযাহা শিক্ষা করা শরিয়তে অনুমোদন করে কিন্তু তা ফরজ
নয়। যেমন কেহ ব্যবসায়ী হলে তাকে ব্যবসা সম্পর্কীত
বিদ্যা অর্জন করা আবশ্যক তেমনি কেহ কোন
হালালচাকরী করিলে তাকে সেই বিষয়ে বিদ্যা অর্জন
করা আবশ্যক। সুতরাং দেখাযাইতেছে যে,শরিয়তের
শিক্ষা অর্থাৎ দ্বীনি বিদ্যা অর্জন করা ফরজ এবং অন্যান্য বৈধ
বিদ্যা আবশ্যক অনুযায়ী শিক্ষা অর্জন করতে হয়। এখন
স্ত্রীলোকের কথায় আসা যাক। মানব সৃষ্টির প্রথম ইতিহাসের
প্রতি দৃষ্টিদেয়া যাক। হযরত আদম (আঃ) কে সৃষ্টি করিবার পর
তিনি পরম সুখের বেহেস্তের মাঝেওনিঃসঙ্গ অবস্থায় আনন্দহীন
কাটাইতেছেন। আল্লাহ তায়ালা তাঁহাকে সুখি করার রজন্য আদম
(আঃ) এর বাম পাজরের অস্তি দ্বারা হযরত হাওয়া (আঃ)
কে সৃষ্টি করেতার শান্তির সহচরী বানাইলেন। আদম(আঃ) এর
নিঃসঙ্গতা দুর করিবার জন্য হাওয়া (আঃ) কে সৃষ্টি করে আদম
(আঃ) এর সঙ্গী বানাইলেন এবং একাকীত্বের অবসান ঘটাইলেন।
পবিত্র কুরআন মজীদেও আল্লাহ তায়ালা নারী সৃষ্টির রহস্য
ব্যক্তকরেছেন এই ভাবে,“আমার অস্থিত্ব সমুহের নিদর্শনের
মধ্যে ইহাও একটি নিদর্শনযে,আমি তোমাদের
জাতি হতে তোমাদের জন্য
স্ত্রীগনকে সৃষ্টি করেছি এবং তোমাদের মাঝে ভালবাসা ও
অনুগ্রহ ঢালিয়া দিয়াছি”-(আন-নিসা)। এই আয়াত দ্বারাআল্লাহ
তায়ালা নারীকে পুরুষের শান্তির আধার বলিয়া উল্লেখ
করেছেন। এখন দেখাযাক এই
শান্তি পরিবারে কিভাবে সৃষ্টি হতে পারে। নারী প্রকৃত
নিয়মেই পুরুষের অধীনা,পুরুষ চিরদিনই তার ভরন পোষন
যোগাইতেছে,তাকে আশ্রয় দিয়াছে। আর স্ত্রীলোকেরা গৃহ-কর্ম
রক্ষা করে চলিতেছে। সন্তান প্রতিপালন করে আসিতেছে।
তাকে বাহিরের কঠোর কর্মক্ষেত্রে যাইতে হয় না। কারন
আল্লাহ নারীকে কঠোর কর্মের জন্য সৃষ্টি করেন্নাই।
নারীরদৈহিক গঠন ও নানান প্রাকৃতিক অসুবিধার কারনেই সেই
সব হইতে সে মুক্তি পাইয়াছে। চাকুরি করা তার
পেশা নয়,অর্থোপার্জন করা তার কাজ নয়। সমাজে যদিওদুই
একটি ব্যতিত্রুম পাওয়া যায় তা দিয়ে সার্বিক
ভাবে বিবেচনা করা যায়না। তা শুধু বিভিন্ন অবস্থার
পরিপেক্ষিতেই হয়ে থাকে। সুতরাং নারীদেরজন্য
দ্বীনি শিক্ষা ও গৃহকর্মের প্রয়োজনীয় শিক্ষা ব্যতিত পুরুষের
ন্যায়বিভিন্ন অর্থকরী বিদ্যা অর্জন করার প্রয়োজন দেখা যায়
না। কারন তাদেরগারস্থ জীবনে উহার আবশ্যকতা নাই। সেই
জন্য নারীদেরকে অবশ্যই দ্বীনি শিক্ষাদেওয়ার
সাথে সাথে সাংসারিক জীবন সম্বন্ধেও জ্ঞান দেওয়া আবশ্যক।
কিন্তু অতিবদুঃখের বিষয় এই যে,আমাদের মুসলমান
সমাজে স্ত্রী শিক্ষার অবস্থা অতিবশোচনীয়। অধিকাংশ
পরিবারেই স্ত্রী শিক্ষার প্রতি গুরুত্ব নাই এবং তার ব্যবস্থাও
নাই। কিছু কিছু পরিবার আছে যারা শুধু মাত্র
মেয়েদেরকে কুরআন চলিত ভাবে পরানো পর্যন্ত সীমাবদ্ধ
থাকে,দ্বীনি শিক্ষার প্রতি তাদের কোনগুরুত্বই নাই। আর
বেশীর ভাগ পরিবারই মেয়েদের আধুনিক শিক্ষার
প্রতি ঝুকিয়া পরিয়াছে। উচ্চ শিক্ষার নাম করে যেই সব
মেয়ারা একাকী বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়িতে যায় তাদের
লাগামহীন চলা ফেরা এবং নানান অঘটনের জন্ম দেয়া কি ইহাই
প্রমাণ করেনা যে তার পরিনাম কত ভয়ানক। আর তাই ধর্মের
প্রতিতাদের অনিহা। ইসলামের আইন কানুন মানার ধার-
ধারেনা তারা। ইহা জাতীয় জীবনেরপক্ষে মারাত্বক অশুভ
লক্ষণ। তবে পরিবেশ অনুকুলে থাকিলে এবং সফরের দুরুত্বের
মাঝে থাকিলে মেয়েদের আধুনিকশিক্ষা বা উচ্চ
শিক্ষা নিতে কলেজ বা ইউনিভার্সিটিতে পড়িতে কোন
সমস্যা নাই। পরিশেষে বলিতে চাই আজ মুসলীম সমাজকে প্রকৃত
শিক্ষা অর্থাৎ দ্বীনি শিক্ষার প্রতি গুরুত্ব দিতে হবে। কারণ
শিক্ষা ব্যবস্থার দোশত্রুটির কারনে আমাদের সবার ধর্মময়
জীবন নষ্ট হইতেছে আর এই জন্য সর্বপ্রথমে পিতা-
মাতাকে আল্লাহর নিকট জবাবদিহি করতে হবে। যার
কপালে হেদায়েত আছে,যার ভিতরে আল্লাহ ও জাহান্নামের ভয়
আছে,তার জন্য কুরআনের একটা আয়াত কিংবা একটা হাদিসই
যথেষ্টহয়ে যায়। আর যার কপালে হেদায়েত নেই,তার জন্য
একটা বৃহত আকারের ইতিহাস রচনাকরে দিলেও কোন লাভ নাই।
আমাদের সবাইকে মনে রাখতে হবে,আমাদের
মৃত্যুহবে এবং কেয়ামতের দিন আল্লাহর দরবারে উঠতে হবে,তখন
সেখানে কাহারো কোনওজর চলবেনা। দোয়া করি আল্লাহ আমাদের
সবাইকে কুরআন-হাদীস পড়িবার ও বুঝিবারএবং সেই
অনুযায়ী আমল করিবার তৈফিক দিন। আল্লাহ আমাদের
সবাইকে হেফাজত ওহেদায়েত দান করুন -আমীন।

**মৃতের গোসল, কাফন, জানাযা ও দাফনের সচিত্র পদ্ধতি**


(মানুষ মারা গেলে তার প্রতি করণীয়, মৃতকে গোসল দেয়া, কাফন দেয়া, জানাযার সালাত  আদায় ও দাফনের পদ্ধতি)
ক) ভূমিকা: মৃত্যু অবধারিত সত্য। মৃত্যু থেকে পালাবার কোন পথ নেই। আল্লাহ্ তা’আলা এরশাদ করেন:
كُلُّ نَفْسٍ ذاَئِقَةُ الْمَوْتِ
“প্রত্যেক প্রাণকে মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতেই হবে।” (আল ইমরান- ১৮৫) তিনি আরো বলেন: “মৃত্যু যন্ত্রনা সত্যসত্যই আগমণ করবে, যা থেকে তুমি অব্যাহতি চাচ্ছিলে।” (ক্বাফ- ১৯)
আল্লাহ তায়ালা আরও বলনে: “কখনই নয়, যখন প্রাণ কন্ঠাগত হবে এবং বলা হবে কে তাকে (রক্ষা করার জন্য) ঝাড়-ফুঁক করবে। আর সে মনে করবে যে, বিদায়ের সময় এসে গেছে।” (ক্বিয়ামাহ্- ২৬-২৮)
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:
أكْثِرُواْ مِنْ ذِكْرِ هاَدِمِ اللَّذَّاتِ
“জীবনের স্বাদ বিনষ্টকারী (মৃত্যুর) কথা তোমরা বেশী বেশী স্মরণ কর।” (তিরমিযী, নাসাঈ, ইরউয়া- ৬৮২) তাই প্রতিটি মুসলমানের কর্তব্য হল অধিকহারে সৎআমল করা এবং মৃত্যুর জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করা।
খ) কোন মুসলিম মৃত্যু বরণ করলে উপস্থিত জীবিতদের উপর নিম্ন লিখিত কাজগুলো আবশ্যক হয়ে যায়:
১) মৃতের চোখ দুটি বন্ধ করে দিবে। যখন আবূ সালমা (রা:) মৃত্যু বরণ করেন, তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর চোখ দুটি বন্ধ করে দিয়ে বলেন:
إنَّ الرُّوحَ إذاَ قُبِضَ تَبِعَهُ الْبَصَرُ
“যখন জান কবজ করা হয়, তখন দৃষ্টি তার অনুসরণ করে।” (মুসলিম) ২) তার জোড় সমূহ নরম করে দিবে, যাতে করে তা শক্ত না হয়ে যায়। আর পেটের উপর ভারী কিছু রেখে দিবে যাতে করে তা ফুলে না যায়।
৩) বড় একটি কাপড় দিয়ে সমস্ত শরীর ঢেকে দিবে। আয়েশা (রা:) বলেন: রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর ওফাতের পর তাঁকে নকশা খচিত একটি কাপড় দিয়ে ঢেঁকে দেয়া হয়। (বুখারী ও মুসলিম)
৪) ছহীহ্ হাদীছের নির্দেশ মোতাবেক মৃত ব্যক্তিকে গোসল, জানাযা ছালাত এবং দাফনের ক্ষেত্রে দ্রুততা অবলম্বন করবে। (বুখারী ও মুসলিম)
৫) যে এলাকায় তার মৃত্যু হবে সেখানেই তাকে দাফন করা। কেননা ওহুদ যুদ্ধের শহীদদেরকে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সেখানেই দাফন করেছিলেন। (সুনান গ্রন্থ)
গ) মৃতকে গোসল দেয়ার পদ্ধতি:
১. মৃতের গোসল, কাফন, জানাযার ছালাত এবং দাফন করা ফরযে কেফায়া।
২. গোসল দেয়ার ক্ষেত্রে সর্বপ্রথম সেই ব্যক্তি হকদার, যার ব্যাপারে মৃত ব্যক্তি ওছিয়ত করে গিয়েছে। তারপর তার পিতা। তারপর অপরাপর নিকটাত্মীয়। আর মহিলার গোসলে প্রথম হকদার হল তার ওছিয়তকৃত মহিলা। তারপর তার মা। তারপর তার মেয়ে। তারপর অন্যান্য নিকটাত্মীয় মহিলাগণ।
৩. স্বামী-স্ত্রী পরষ্পরকে গোসল দিতে পারবে। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আয়েশা (রা:)কে বলেন: “তোমার কোন অসুবিধা নেই, তুমি যদি আমার আগে মৃত্যু বরণ কর, তবে আমি তোমার গোসল দিব।” (আহমাদ হাদীছ ছহীহ্) আর আবু বকর (রা:) ওছিয়ত করেছিলেন যে, তার স্ত্রী যেন তাঁকে গোসল দেয়। (মুসান্নাফ আব্দুর রাজ্জাক- হা/৬১৬৭)
৪. মৃত ব্যক্তি নারী হোক বা পুরুষ তার বয়স যদি সাত বছরের কম হয়, তবে যে কোন পুরুষ বা মহিলা তার গোসল দিতে পারবে।
৫. গোসলের জন্য পুরুষের ক্ষেত্রে পুরুষ আর নারীর ক্ষেত্রে নারী যদি না পাওয়া যায় তবে তার গোসল দিবে না। বরং তাকে তায়াম্মুম করিয়ে দিবে। এর পদ্ধতি হল, উপস্থিত লোকদের মধ্যে একজন তার হাত দুটি পাক মাটিতে মারবে। তারপর তা দ্বারা মৃতের মুখমন্ডল ও উভয় হাত কব্জি পর্যন্ত মাসেহ করে দিবে।
৬. কোন কাফেরকে গোসল দেয়া এবং দাফন করা মুসলমানের উপর হারাম। আল্লাহ্ বলেন:
ولاَ تُصَلِّ عَلىَ أحَدٍ مِنْهُمْ ماَتَ أبَداً
৭. “আপনি তাদের (কাফের ও মুনাফেকদের) কখনই জানাযা ছালাত আদায় করবেন না।” (তওবাহ্- ৪৮)
৮. গোসল দেয়ার সুন্নাত হল, প্রথমে তার লজ্জাস্থান ঢেঁকে দেবে, তারপর তার সমস্ত কাপড় খুলে নিবে। (যেমন দেখুন নিচের ছবিটি)
অত:পর তার মাথাটা বসার মত করে উপরের দিকে উঠাবে এবং আস্তে করে পেটে চাপ দিবে, যাতে করে পেটের ময়লা বেরিয়ে যায়। (যেমন দেখুন ছবিটি)

এরপর বেশী করে পানি ঢেলে তা পরিস্কার করে নিবে। তারপর হাতে কাপড় জড়িয়ে বা হাত মুজা পরে তা দিয়ে উভয় লজ্জা স্থানকে (নযর না দিয়ে) ধৌত করবে।
তারপর ‘বিসমিল্লাহ্’ বলবে এবং ছালাতের ন্যায় ওযু করাবে। তবে মুখে ও নাকে পানি প্রবেশ করাবে না। বরং ভিজা কাপড় আঙ্গুলে জড়িয়ে তা দিয়ে তার উভয় ঠোঁটের ভিতর অংশ ও দাঁত পরিস্কার করবে। একইভাবে নাকের ভিতরও পরিস্কার করবে।
৯. পানিতে কুল পাতা মিশিয়ে তা ফুটিয়ে গোসল দেয়া মুস্তাহাব।
বরই পাতা দিয়ে ফোটানো পানি দ্বারা মৃতের মাথা ও দাঁড়ি ধৌত করতে হবে।

প্রথমে শরীরের ডান পাশের সামনের দিক ধৌত করবে। (যেমন দেখুন নিচের ছবিটি) 
তারপর পিছন দিক তারপর বাম দিক ধৌত করবে। (দেখুন নিচের ছবিটি)
এভাবে তিনবার গোসল দিবে। প্রতিবার হালকা ভাবে পেটে হাত বুলাবে এবং ময়লা কিছু বের হলে পরিস্কার করে নিবে।
১০. গোসলের সময় সাবান ব্যবহার করতে পারে এবং প্রয়োজন মোতাবেক তিনবারের বেশী সাত বা ততোধিক গোসল দিতে পারে। শেষবার কর্পুর মিশ্রিত করে গোসল দেয়া সুন্নাত। কেননা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর কন্যা যায়নাবের (রা:) শেষ গোসলে কর্পুর মিশ্রিত করতে নির্দেশ দিয়েছিলেন। (বুখারী ও মুসলিম)
১১. মৃতের মোচ বা নখ যদি বেশী বড় থাকে তবে তা কেটে দেয়া মুস্তাহাব। তবে বগল বা নাভীর নীচের চুল কাটা যাবে না।
১২. সাত বার গোসল দেয়ার পরও যদি পেট থেকে ময়লা (পেশাব বা পায়খানা) বের হতেই থাকে তবে উক্ত স্থান ধুয়ে সেখানে তুলা বা কাপড় জড়িয়ে দিবে। তারপর তাকে ওযু করাবে।
১৩. কাফন পরানোর পরও যদি ময়লা বের হয়, তবে আর গোসল না দিয়ে সেভাবেই রেখে দিবে। কেননা তা অসুবিধার ব্যাপার।
১৪. মৃতের চুল আঁচড়ানোর দরকার নেই। তবে নারীর ক্ষেত্রে তার চুলগুলোতে তিনটি বেণী বেঁধে তা পিছনে ছড়িয়ে দিবে।
১৫. হজ্জ বা ওমরায় গিয়ে ইহরাম অবস্থায় যদি কেউ মারা যায়, তবে তাকে কুল পাতা মিশ্রিত পানি দিয়ে গোসল দিবে। কিন্তু কোন সুগন্ধি ব্যবহার করবে না এবং পুরুষ হলে কাফনের সময় তার মাথা ঢাঁকবে না। বিদায় হজ্জে জনৈক ব্যক্তি ইহরাম অবস্থায় মৃত্যু বরণ করলে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: “তাকে কোন সুগন্ধি লাগাবে না, এবং তার মাথা ঢাঁকবে না। কেননা সে ক্বিয়ামত দিবসে তালবিয়া পাঠ করতে করতে উত্থিত হবে।” (বুখারী ও মুসলিম)
১৬. ব্যক্তিকে গোসল দিবে না, এবং তাকে তার সাথে সংশ্লিষ্ট কাপড়েই দাফন করবে। কেননা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম “ওহুদের শহীদদের ব্যাপারে আদেশ দিয়েছিলেন যে, তাদেরকে গোসল ছাড়া তাদের পরিহিত কাপড়ে দাফন করা হবে।” (বুখারী) “এমনিভাবে তাদের ছালাতে জানাযাও পড়েন নি।” (বুখারী ও মুসলিম)
১৭. গর্ভস্থ  সন্তান যদি চার মাস অতিক্রম হওয়ার পর পড়ে যায়, তবে তার গোসল ও জানাযার ছালাত আদায় করবে। কেননা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: “মাতৃগর্ভে সন্তানের বয়স যখন চার মাস অতিক্রম করে তখন সেখানে একজন ফেরেস্তা প্রেরণ করা হয়। সে তাতে রূহ ফুঁকে দেয়।” (মুসলিম) আর তার বয়স যদি চার মাসের কম হয়, তবে তাতে প্রাণ না থাকার কারণে সাধারণ একটি মাংশের টুকরা গণ্য হবে। যা কোন গোসল বা জানাযা ছাড়াই যে কোন স্থানে মাটিতে গেড়ে দেয়া হবে।
১৮. মৃত ব্যক্তি আগুনে পুড়ে যাওয়ার কারণে, তার অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ খণ্ড-বিখণ্ড হওয়ার কারণে বা পানি না পাওয়ার কারণে যদি তাকে গোসল দেয়া সম্ভব না হয়, তবে পূর্ব নিয়মে তাকে তায়াম্মুম করিয়ে দিবে।
ঘ) কাফন দেয়ার পদ্ধতি:
১. মৃত ব্যক্তিকে কাফন পরানো ওয়াজিব। আর তা হবে তার পরিত্যাক্ত সম্পত্তি থেকে। যাবতীয় ঋণ, ওছিয়ত এবং মীরাছ বন্টনের আগে কাফনের খরচ তার সম্পত্তি থেকে গ্রহণ করতে হবে।
২. মৃতের সম্পত্তি থেকে যদি কাফনের খরচ না হয় তবে তার পিতা বা ছেলে বা দাদার উপর দায়িত্ব বর্তাবে। যদি এমন কাউকে না পাওয়া যায় তবে বায়তুল মাল থেকে প্রদান করবে। তাও যদি না পাওয়া যায় তবে যে কোন মুসলমান প্রদান করতে পারে।
৩. পুরুষকে তিনটি লেফাফা বা কাপড়ে কাফন পরানো মুস্তাহাব। কেননা নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে সুতী সাদা তিনটি কাপড়েই কাফন দেয়া হয়েছিল। (বুখারী ও মুসলিম) কাফনের কাপড়ে সুগন্ধি মিশ্রিত করা মুস্তাহাব। প্রথমে সাতটি ফিতা বিছিয়ে দিবে। তারপর (ফিতাগুলোর উপর) কাপড় তিনটি একটির উপর অন্যটি বিছাবে।

অত:পর মাইয়্যেতকে চিৎ করে শুইয়ে দিবে। এসময় তার লজ্জাস্থানের উপর একটি অতিরিক্ত কাপড় রেখে দিবে। (যেমন দেখুন নিচের ছবিটি)

তার নাক, কান, লজ্জাস্থান প্রভৃতি জায়গায় সুগন্ধি যুক্ত তুলা লাগিয়ে দেয়া মুস্তাহাব। সম্ভব হলে সমস্ত শরীরে সুগন্ধি লাগাবে। তারপর প্রথম কাপড়টির ডান দিক আগে উঠাবে, এরপর বাম দিকের কাপড়। এভাবে দ্বিতীয় ও তৃতীয় কাপড়ে করবে। (যেমন দেখুন নিচের ছবিটি)
তারপর অতিরিক্ত কাপড়টি টেনে নিবে এবং ফিতাগুলো দিয়ে গিরা দিবে। আর তা কবরে রাখার পর খুলে দিবে। ফিতার সংখ্যা সাতের কম হলেও অসুবিধা নেই। (যেমন দেখুন নিচের ছবিটি)

এভাবে মৃত ব্যক্তিকে ৭টি বাঁধন দিবে
৪. মহিলাকে পাঁচটি কাপড়ে কাফন দিবে। লুংগি যা নীচের দিকে থাকবে, খেমার বা ওড়না যা দিয়ে মাথা ঢাঁকবে, কামীছ (জামা) এবং দুটি বড় লেফাফা বা কাপড়। (অবশ্য তিন কাপড়েও তাকে কাফন দেয়া জায়েয)।
ঙ) জানাযার ছালাত আদায় করার পদ্ধতি:
১. জানাযার ছালাত আদায় করা ফরযে কেফায়া।
২. জানাযা পড়ার সময় সুন্নাত হল, ইমাম পুরুষের মাথা বরাবর দাঁড়াবে। (যেমন দেখুন নিচের ছবিটি)
আর মহিলার মধ্যবর্তী স্থান বরাবর দাঁড়াবে। (যেমন দেখুন নিচের ছবিটি)

৩. চার তাকবীরের সাথে জানাযা আদায় করতে হয়। অন্তরে নিয়্যত করে দাঁড়াবে। (আরবীতে বা বাংলায় মুখে নিয়ত বলা বা শিখিয়ে দেয়া বিদআত।)
৪. প্রথম তাকবীর দিয়ে আঊযুবিল্লাহ্… বিসমিল্লাহ্… পাঠ করে সূরা ফাতিহা তারপর ছোট কোন সূরা পাঠ করবে। (ছানা পাঠ করার কোন ছহীহ্ হাদীছ নেই) দ্বিতীয় তাকবীর দিয়ে দরূদে ইবরাহীম (যা ছালাতে পাঠ করতে হয়) পাঠ করবে। এরপর তৃতীয় তাকবীর দিয়ে জানাযার জন্য বর্ণিত যে কোন দুআ পাঠ করবে। এই দু’আটি পাঠ করা যেতে পারে:
اللهمَّ اغْفِرْ لِحَيِّناَ وَمَيِّتِنَا وَشاَهِدِناَ وَغَائِبِناَ ، وَصَغِيْرَناَ وَكَبِيْرِناَ، وَذَكَرِناَ وَأُنْثاَناَ، اللَّهُمَّ مَنْ أَحْيَيْتَهُ مِناَّ فَأَحْيِهِ عَلَى الإسْلاَمِ، وَمَنْ تَوَفَّيْتَهُ مِناَّ فَتَوَفَّهُ عَلىَ الإيْمَانِ، اللَّهُمَّ لاَتَحْرِمْناَ أجْرَهُ وَلاَتُضِلَّناَ بَعْدَهُ
“হে আল্লাহ্! আপনি আমাদের জীবিত-মৃত, উপস্থিত, অনুপস্থিত, ছোট ও বড় নর ও নারীদেরকে ক্ষমা করুন। হে আল্লাহ্! আমাদের মাঝে যাদের আপনি জীবিত রেখেছেন তাদেরকে ইসলামের উপরে জীবিত রাখুন, এবং যাদেরকে মৃত্যু দান করেন তাদেরকে ঈমানের সাথে মৃত্যু দান করুন। হে আল্লাহ্! আমাদেরকে তার ছওয়াব হতে বঞ্চিত করবেন না এবং তার মৃত্যুর পর আমাদেরকে পথ ভ্রষ্ট করবেন না।” (ইবনে মাজাহ্, আবূ দাঊদ)
এবং এই দু’আটিও পড়তে পারে:
اللَّهُمَّ اغْفِرْ لَهُ وَارْحَمْهُ، وَعاَفِهِ واَعْفُ عَنْهُ، وَأَكْرِمْ نُزُلَهُ، وَوَسِّعْ مُدْخَلَهُ، وَاغْسِلْهُ بِالْماَءِ وَالثَّلْجِ وَالْبَرْدِ، وَنَقِّهِ مِنْ الْخَطاَياَ كَمَا يُنَقَّىالثَّوْبُ الأبْيَضُ مِنْ الدَّنَسِ، وَأَبْدِلْهُ دَارًا خَيْرًا مِّنْ دَارِهِ، وَأَهْلاً خَيْراً مِّنْ أَهْلِهِ، وَزَوْجاً خَيْراً مِنْ زَوْجِهِ، وَأَدْخِلْهُ الْجَنَّةَ، وَأَعِذْهُ مِنْ عَذاَبِ الْقَبْرِ، وَعَذاَبِ النَّارِ
“হে আল্লাহ্! আপনি তাকে ক্ষমা করুন, তার প্রতি দয়া করুন, তাকে পূর্ণ নিরাপত্তায় রাখুন। তাকে মাফ করে দিন। তার আতিথেয়তা সম্মান জনক করুন। তার বাসস্থানকে প্রশস্থ করে দিন। আপনি তাকে ধৌত করুন পানি, বরফ ও শিশির দিয়ে। তাকে গুনাহ হতে এমন ভাবে পরিস্কার করুন যেমন করে সাদা কাপড়কে ময়লা হতে পরিস্কার করা হয়। তাকে তার (দুনিয়ার) ঘরের পরিবর্তে উত্তম ঘর দান করুন। তার (দুনিয়ার) পরিবার অপেক্ষা উত্তম পরিবার দান করুন। আরো তাকে দান করুন (দুনিয়ার) স্ত্রী অপেক্ষা উত্তম স্ত্রী। তাকে বেহেস্তে প্রবেশ করিয়ে দিন, আর কবরের আযাব ও জাহান্নামের আযাব হতে পরিত্রাণ দিন। (ছহীহ্ মুসলিম ২/৬৬৩)
৬. মৃত যদি চার মাস বা তার উর্ধের শিশু হয়, তাদের জন্য ১ম দু’আটি পাঠ করা যেতে পারে।
৭. এরপর চতুর্থ তাকবীর দিয়ে সামান্য একটু চুপ থেকে ডান দিকে সালাম ফিরাবে। বাম দিকেও সালাম ফেরাতে পারে।
৮. কারো যদি জানাযার কিছু অংশ ছুটে যায়, তবে সে ইমামের অনুসরণ করবে। আর ইমামের সালাম ফেরানোর পর লাশ উঠানোর আগে যদি সম্ভব হয় তবে বাকী তাকবীর কাযা আদায় করে নিবে। সম্ভব না হলে ইমামের সাথেই সালাম ফিরিয়ে দিবে।
৯. ‘কারো যদি জানাযা ছুটে যায় তবে তার এবং কিবলার মাঝে কবরকে রেখে পূর্ব নিয়মে কবরের উপর জানাযা আদায় করতে পারে।’ (বুখারী ও মুসলিম)
জানাযার নামায ছুটে যাওয়ায় কবরে গিয়ে জানাযা পড়া হচ্ছে
১০. গায়েবী জানাযা সেই ব্যক্তির জন্য পড়া যাবে যে অন্য কোন দেশে মৃত্যু বরণ করেছে এবং তার জানাযা আদায় করা হয়নি।
১১. ‘মসজিদের মধ্যেও জানাযার ছালাত আদায় করা জায়েয।’ (মুসলিম)
১২. জানাযার জন্য গোরস্থানের নিকটবর্তী কোন স্থানকে নির্ধারণ করা মুস্তাহাব।
১৩. আত্মহত্যাকারী, ডাকাত ইত্যাদির উপরও জানাযার ছালাত আদায় করবে। তবে দেশের আমীর এবং আলেম ব্যক্তি মানুষকে ভয় দেখানোর জন্য এবং শিক্ষা দেয়ার জন্য তা থেকে বিরত থাকবে।
চ) দাফনের পদ্ধতি:
১. মৃতের খাটিয়া কাঁধে রেখে বহণ করা মুস্তাহাব। হাদীছের নির্দেশ মোতাবেক ‘লাশ দ্রুত বহণ করা সুন্নাত’। সে সময় মানুষ লাশের সামনে, পিছনে, ডাইনে, বামে যে কোন দিক দিয়ে চলতে পারবে। (আহকামুল জানায়েয- আলবানী- পৃ:৭৩)
লাশ গোরস্থানে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে
২. যে ব্যক্তি লাশের সাথে চলবে তার জন্য খাটিয়া মাটিতে রাখার আগে বসা মাকরূহ।
৩. তিনটি সময়ে ছালাত আদায় করতে এবং মুরদা দাফন করতে হাদীছে নিষেধ করা হয়েছে। ১- সূর্য উদয়ের সময়, যে পর্যন্ত তা কিছু উপরে না উঠে যায়। ২- সূর্য মাথার উপর থাকার সময়, যে পর্যন্ত তা পশ্চিমাকাশে ঢলে না যায়। ৩- সূর্য অস্ত যাওয়ার সময়, যে পর্যন্ত তা পুরাপুরি ডুবে না যায়। (মুসলিম)
৪. রাতে বা দিনে যে কোন সময় লাশ দাফন করা যায়। মহিলার লাশ কবরে প্রবেশ করানোর সময় আলাদা কাপড় দিয়ে ঢেঁকে দিবে।
৫. সুন্নাত হল কবরের পায়ের দিক থেকে লাশকে কবরে নামানো।
পায়ের দিকে দিয়ে লাশ কররে রাখা হচ্ছে।
সম্ভব না হলে, ক্বিবলার দিক থেকে কবরে নামাবে।
কিবলার দিক থেকে লাশ কবরে রাখা হচ্ছে।
৬. লাহাদ তথা বুগলী কবর হল উত্তম। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: “লাহাদ (বুগলী কবর) হল আমাদের জন্য আর শাক্ব বা বাক্স কবর হল অন্যদের জন্য।” (আবূ দাঊদ)
লাহাদ বা বুগলী কবর
শাক্ব বা বক্স কবর৭. হিংস্র প্রাণী এবং লাশের দুর্গন্ধ বের হওয়া থেকে হেফাযত করার জন্য কবরকে বেশী গভীর করে খনন করা সুন্নাত।
৮. যারা লাশ কবরে নামাবে তাদের জন্য সুন্নাত হল, এই দু’আ পড়া: (بِسْمِ اللهِ وَعَلىَ سُنَّةِ رَسُوْلِ اللهِ) উচ্চারণ: বিসমিল্লাহি ওয়া ‘আলা সুন্নাতি রাসূলিল্লাহ। অর্থ: আল্লাহর নাম নিয়ে রাসূলের সুন্নাত এর উপর।
অথবা এটা পড়বে: (بِسْمِ اللهِ وَعَلىَ مِلَّةِ رَسُوْلِ اللهِ) উচ্চারণ: বিসমিল্লাহি ওয়া ‘আলা মিল্লাতি রাসূলিল্লাহ অর্থ: “আল্লাহর নাম নিয়ে রাসূলের তাঁর মিল্লাতের উপর।” (আবূ দাঊদ)
৯. লাশকে কবরের মধ্যে কিবলা মুখী করে ডান কাতের উপর করে রাখা সুন্নাত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: “জীবিত এবং মৃত সব অবস্থায় তোমাদের কিবলা হল কা’বা।” (বাইহাকী আহকামুল জানায়েয, আলবানী- ১৫২)
১০. লাশের মাথার নীচে কোন বালিশ বা ইট-পাথর রাখবে না এবং তার চেহারার কাপড়ও খুলবে না।
১১. তারপর কবরের মুখ ইট এবং মাটি দিয়ে বা বাঁশ/চাটাই ও মাটি দিয়ে পূর্ণ করে দিবে।
১২. উপস্থিত মুসলমানদের জন্য সুন্নাত হল, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর অনুসরণে প্রত্যেকে উক্ত কবরে তিন খাবল করে মাটি দিবে। (ইবনু মাজাহ্ আহকামুল জানায়েয আলবানী- ১৫৫)
১৩. সুন্নাত হল নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কবরের মত- কবরকে উটের চুঁড়ার মত মাত্র অর্ধ হাত পরিমাণ উঁচা করা। (বুখারী)
১৪. এরপর কবরের উপর কিছু পাথর কুচি ছড়িয়ে দিয়ে তার উপর পানি ছিটিয়ে দিবে। (আবূ দাঊদ, ইরউয়াউল গালীল ৩/২০৬) শেষে কবরের মাথার দিকে একটি পাথর রেখে দিবে যাতে করে তা চেনা যায় এবং তার অবমাননা না হয়। যেমনটি করেছিলেন রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঊছমান বিন মাযঊন (রা:) এর কবরে। (ছহীহ্ আবূ দাঊদ)
১৫. কবরকে পাকা করা, তার উপর ঘর উঠানো, তার নাম পরিচয় লিখা, তার উপর বসা, চলা, হেলান দিয়ে বসা সবই ছহীহ হাদীছ অনুযায়ী হারাম কাজ। (মুসলিম, আবূ দাঊদ প্রভৃতি)
১৬. অধিক প্রয়োজন ছাড়া এক কবরে একের অধিক ব্যক্তিকে দাফন করা মাকরূহ।
১৭. মৃতের পরিবারের জন্য খাদ্য তৈরী করে তাদের কাছে প্রেরণ করা মুস্তাহাব। হযরত জাফর বিন আবী তালেবের শাহাদাতের সংবাদে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছিলেন: “তোমরা জাফর পরিবারের জন্য খাদ্য তৈরী কর, কেননা তারা বিপদগ্রস্থ হয়েছে।” (ছহীহ্ আবূ দাঊদ)
১৮. মৃতের পরিবারের পক্ষ থেকে মানুষের জন্য খানা প্রস্তুত করা জায়েয নয়। ‘ছাহাবায়ে কেরাম (রা:) মানুষের জন্য খানা প্রস্তুত করা এবং শোক বাণী জানানোর জন্য মৃতের বাড়ীতে একত্রিত হওয়াকে নিষিদ্ধ নিয়াহা বা মৃতের জন্য বিলাপের মধ্যে গণ্য করতেন।’ (আহমাদ)
১৯. পুরুষদের জন্য শুধু মাত্র উপদেশ গ্রহণ এবং মৃতের জন্য দু’আ করার উদ্দেশ্যে কবর যিয়ারত করা সুন্নাত। এরশাদ হচ্ছে: “পূর্বে আমি তোমাদেরকে কবর যিয়ারত করতে নিষেধ করেছিলাম। এখন তোমরা তা যিয়ারত করতে পার। কেননা তা তোমাদেরকে আখেরাতের কথা স্মরণ করাবে।” (মুসলিম)
২০. তবে নারীরা অধিকহারে কবর যিয়ারত করবে না। কেননা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অধিক কবর যিয়ারতকারীনীদের লা’নত করেছেন। (সুনান গ্রন্থ)
২১. কবর যিয়ারতের সময় এই দু’আ পাঠ করবে:
السلام عليكم داَرَ قَوْمٍ مُّؤْمِنِيْنَ وإناَّ إنْ شاَءَ اللهُ بِكُمْ لَلاَحِقُوْنَ نَسْأَلُ اللهَ لَناَ وَلَكُمُ الْعاَفِيَةَ
উচ্চারণ: আসসালামু আলাইকুম দারা ক্বওমিম মু’মিনীন। ওয়া ইন্না ইনশাআল্লাহু বিকুম লাহিকূন। নাসআলুল্লাহা লানা ওয়া লাকুমুল আ’ফিয়াহ।
অর্থ: “হে কবরের অধিবাসী মু’মিনগণ! আপনাদের প্রতি শান্তি ধারা বর্ষিত হোক। নিশ্চয় আমরাও আপনাদের সাথে এসে মিলিত হব ইনশাআল্লাহ্। আমরা আমাদের জন্য ও আপনাদের জন্য আল্লাহ্র কাছে নিরাপত্তা প্রার্থনা করছি।’ (মুসলিম)
২২. মুসলিম ব্যক্তি কবর যিয়ারতে খুবই সতর্ক থাকবে। তা স্পর্শ করবে না, তাযীম করবে না, বরকত হাছিলের কারণ মনে করবে না, দু’আ চাইবে না। কেননা এগুলো শির্ক বা শির্কের মাধ্যম।
২৩. মৃতের পরিবারকে শোক বার্তা জানানোর সময় এই দু’আ করা সুন্নাত:
إنَّ ِللهِ ماَ أخَذَ وَلَهُ ماَ أعْطىَ وكُلُّ شَيْءٍ عِنْدَهُ بِأجَلٍ مُّسَمىَّ فاَصْبِرْ واَحْتَسِبْ
উচ্চারণ: ইন্না লিল্লাহি মা আখাযা ওয়া লাহু মা আ’ত্বা। ওয়া কুল্লু শাইয়িন ’ইনদাহু বি আজালিম মুসাম্মা। ফাসবির ওয়াহতাসিব।
অর্থ: “তিনি যা নেন এবং দান করেন তার অধিকারী একমাত্র আল্লাহ। তাঁর নিকট প্রতিটি বস্তুর একটি নির্দষ্ট সময় রয়েছে। তাই তুমি ধৈর্য ধারণ কর এবং আল্লাহর নিকট থেকে এর প্রতিদান প্রার্থনা কর।” (বুখারী ও মুসলিম)
২৪. মৃতের জন্য শুধু তিন দিন শোক পালন করা বৈধ। তবে মৃতের স্ত্রীর জন্য চার মাস দশ দিন শোক পালন করা ওয়াজিব, আর সে গর্ভবতী হলে সন্তান প্রসব পর্যন্ত শোক পালন করবে।
২৫. মৃতের জন্য উচ্চস্বরে ক্রন্দন করা, মাতম করা, কপোল চাপড়ানো, চুল, জামা-কাপড় ছেড়া ইত্যাদি সবই হারাম কাজ- যা থেকে বেঁচে থাকা প্রত্যেক মুসলমানের অবশ্য কর্তব্য।
পরিশেষে আল্লাহ তায়ালার বরগাহে দুয়া করি, হে আল্লাহ, মৃত্যু বরণ করার আগে তুমি আমাদেরকে পাথেয় সংগ্রহ করার তাওফীক দান কর। আমীন।
অনুবাদঃ
মুহাঃ আবদুল্লাহ্ আল্ কাফী
দাঈ, জুবাইল দাওয়া এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সঊদী আরব।

মধুর কিছু না জানা তথ্য !


modhu-onb24

৪টি উপায়ে চেনা যাবে খাঁটি মধু


মানব দেহে মধুর উপকারীতা সবারই কম বেশি জানা আছে। তাই নানা প্রয়োজনে একটুখানি খাঁটি মধুর খোঁজ অনেকেরই করতে হয়। সব মধুর চেহারা একই রকম হওয়ায় বোঝা দায় কোনটি আসল, কোনটি নকল। খাটি মধু চেনার উপায় জানতে হলে আপনার কিছু কৌশল জানা থাকলে, এক মিনিটেই চিনে নিতে পারবেন আসল মধুটি।
১. এক গ্লাস পানিতে এক চামচ পরিমাণ মধু দিন। তারপর আস্তে আস্তে গ্লাসটি নাড়া দিন। মধু পানির সঙ্গে মিশে গেলে নিশ্চিত হবেন সেটা ভেজাল মধু। আর মধু যদি ছোট পিণ্ডের মতো গ্লাসের পানিতে ছড়িয়ে যায়, তাহলে বুঝবেন সেটা খাঁটি মধু।
২. মধুর আসল-নকল নির্ধারণ করতে এক টুকরো কাগজে অল্প একটু মধু লাগিয়ে নিন। এবার যেখানে পিঁপড়া আছে সেখানে রেখে দিন। তারপর অপেক্ষা করতে থাকুন। মধুতে যদি পিঁপড়া ধরে তাহলে বুঝে নেবেন আপনার কেনা মধুতে ভেজাল আছে।
৩. পরিস্কার সাদা কাপড়ে অল্প একটু মধু লাগিয়ে শুকিয়ে নিন। একটু পর কাপড়টি ধুয়ে ফেলুন। কাপড়ে দাগ থেকে গেলে বুঝতে হবে এই মধু নকল। আর কাপড়ে দাগ না থাকলে সেটা খাঁটি মধু।
এছাড়াও একটু সময় নিয়ে যদি যাচাই করতে চান আপনার কেনা মধুটি আসল না নকল তাহলে,
৪. মধু ডিপ ফ্রিজে রেখে দিন। ভেজাল মধু হলে এটা জমে যাবে। আর না জমলেও ভেজাল মধুর নিচে জমাট তলানি পড়বে।
মধুর কিছু না জানা তথ্য !
মধু একটি খুব উপকারী খাদ্য, পথ্য ও ঔষধ। জন্মের পর নানা দাদীরা মখে মধু দেয় নাই এমন লোক খুঁজে পাওয়া কঠিন। প্রাচীনকাল থেকে মানুষ প্রাকৃতিক খাদ্য হিসেবে,মিষ্টি হিসেবে, চিকিৎসা ও সৌন্দর্যচর্চা সহ নানাভাবে মধুর ব্যবহার করে আসছে। শরীরের সুস্থতায় মধুর উপকারিতা অনেক। আল কোরআনে আছে- আপনার পালনকর্তা মৌমাছিকে আদেশ দিলেন: পর্বতে, গাছে ও উঁচু চালে বাড়ি তৈরী কর,এরপর সর্বপ্রকার ফল থেকে খাও এবং আপন পালনকর্তার উন্মুক্ত পথে চলো। তার পেট থেকে বিভিন্ন রঙের পানীয় নির্গত হয়। তাতে মানুষের জন্য রয়েছে রোগের প্রতিকার। নিশ্চই এতে চিন্তাশীল সম্প্রদায়ের জন্যে নিদর্শন রয়েছে। (সূরা নাহলের ৬৮ ও ৬৯ নম্বর আয়াত) এই আয়াত এটা স্পষ্ট যে মধু আমাদের জন্য কতখানি উপকারি। মধু কি? মধু হচ্ছে একটি তরল আঠালো মিষ্টি জাতীয় পদার্থ, যা মৌমাছিরা ফুল থেকে নেকটার বা পুষ্পরস হিসেবে সংগ্রহ করে মৌচাকে জমা রাখে। পরবর্তীতে জমাকৃত পুষ্পরস প্রাকৃতিক নিয়মেই মৌমাছি বিশেষ প্রক্রিয়ায় পূর্ণাঙ্গ মধুতে রূপান্তর এবং কোষবদ্ধ অবস্থায় মৌচাকে সংরক্ষণ করে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং খাদ্য ও কৃষি সংস্থার মতে মধু হচ্ছে এমন একটি অগাজানোশীল মিষ্টি জাতীয় পদার্থ যা মৌমাছিরা ফুলের নেকটার অথবা জীবন্ত গাছপালার নির্গত রস থেকে সংগ্রহ করে মধুতে রূপান্তর করে এবং সুনির্দিষ্ট কিছু উপাদান যোগ করে মৌচাকে সংরক্ষণ করে। মধুর ভৌত বৈশিষ্ট্যঃ বাংলাদেশের জাতীয় মধু বোর্ডের সংজ্ঞা অনুযায়ী “মধু হল একটি বিশুদ্ধ পদার্থ যাতে পানি বা অন্য কোন মিষ্টকারক পদার্থ মিশ্রিত করা হয় নাই।”মধু চিনিরচাইতে অনেক গুণ মিষ্টি। তরল মধু নষ্ট হয় না, কারণ এতে চিনির উচ্চ ঘনত্বের কারণে প্লাজমোলাইসিস প্রক্রিয়ায় ব্যাকটেরিয়া মারা যায়। প্রাকৃতিক বায়ুবাহিত ইস্ট মধুতে সক্রিয় হতে পারে না, কারণ মধুতে পানির পরিমাণ খুব অল্প। প্রাকৃতিক, অপ্রক্রিয়াজাত মধুতে মাত্র ১৪% হতে ১৮% আর্দ্রর্তা থাকে। আর্দ্রর্তার মাত্রা ১৮% এর নিচে যতক্ষণ থাকে, ততক্ষণ মধুতে কোন জীবাণু বংশবৃদ্ধি করতে পারে না। পাস্তুরাইয্‌ড মধুতে মধুর প্রাকৃতিক ঔষধি গুণাবলী হ্রাস পায়। মধুতে যা বিদ্যমানঃ মধুতে প্রায় ৪৫টি খাদ্য উপাদান থাকে। ফুলের পরাগের মধুতে থাকে ২৫-৩৭ শতাংশ গ্লুকোজ। ৩৪-৪৩ শতাংশ ফ্রুক্টোজ, ০.৫-৩.০ শতাংশ সুক্রোজ এবং ৫-১২ শতাংশ মন্টোজ। আরো থাকে ২২ শতাংশ অ্যামাইনো এসিড, ২৮ শতাংশ খনিজ লবণ এবং ১১ ভাগ এনকাইম। এতে চর্বি ও প্রোটিন নেই। ১০০ গ্রাম মধুতে থাকে ২৮৮ ক্যালরি। আছে যত ধরনের মধুঃ বিভিন্ন ফুল থেকে মধু হয় যেমন-সরিষা ফুল, লিচু, সুন্দর বন, কালজিরা থেকে আহরিত মধু। এ ছাড়া রয়েছে ধুনিয়া ফুল, গুজি তিল ও তৃষি থেকেও উৎপাদিত হয় মধু।প্রায় সব গুলুর গুনাগুন একই। সবচেয়ে সেরা মধুঃ নিউজিল্যাণ্ডের মানুকা হানি বাজারে প্রাপ্য সকল মধুর চেযে বেশী চেযে ঔষধিগুণ সম্পন্ন গণ্য করা হয়। মানুকা নামীয় একপ্রকার ঝোপ জাতীয় উদ্ভিদের ফুল থেকে উৎপন্ন মধু “মানুকা হানি” নামে পরিচিত। মধুর ব্যাবহারঃ আধুনিক চিকিত্সাবিদ্যার জনক নামে পরিচিত হিপ্পোক্রেটস শরীরের প্রদাহ ও সিফিলিস রোগের চিকিত্সায় মধু ব্যবহার করতেন বলে কথিত আছে। ২ হাজার বছর আগেও যখন চিকিত্সা বিজ্ঞান আজকের মতো এতটা উন্নত ছিল না, তখনও মানুষ জানত মধুর কী গুণ! গ্রিক অ্যাথলেটরা অলিম্পিকে অংশগ্রহণের আগে প্রচুর পরিমাণ মধু সেবন করত শক্তি বাড়ানোর জন্য। তাদের ধারণা ছিল, মধু খেলে তাদের পারফরমেন্সের উন্নতি হবে।কারণ মধুতে রয়েছে উচ্চমাত্রার ফ্রুক্টোজ ও গ্লুকোজ যা যকৃতে গ্রাইকোজেনের রিজার্ভ গড়ে তোলে। খাটি মধুর বৈশিষ্ট্যঃ খাটি মধুতে কখনো কটু গন্ধ থাকে না। মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকারক কোনো বিষাক্ত উপাদান প্রাকৃতিক গাছে থাকলেও তার প্রভাব মধুতে থাকে না। মধু সংরক্ষণে কোনো পৃজারভেটিভ ব্যবহৃত হয় না। কারণ মধু নিজেই পৃজারভেটিভ গুণাগুণ সম্পন্ন পুষ্টিতে ভরপুর খাদ্য। মধু উৎপাদন, প্রক্রিয়াজাত, নিষ্কাশন, সংরক্ষণ ও বোতলজাতকরণের সময় অন্য কোনো পদার্থের সংমিশ্রণ প্রয়োজন হয় না। খাটি মধু পানির গ্লাসে ড্রপ আকারে ছাড়লে তা সরাসরি ড্রপ অবস্থায়ই গ্লাসের নিচে চলে যায়। খাটি মধুতে যে মান থাকা আবশ্যকঃ পানি শতকরা ২১ ভাগের বেশি নয়। সুক্রোজ শতকরা ৫ ভাগের বেশি নয়। অ্যাশ শতকরা ১ ভাগের বেশি নয়। রিডিউসিং সুগার শতকরা ৬৫ ভাগের কম নয়। খাঁটি মধু চেনার কিছু উপায়ঃ বর্তমানে আমরা বাজার থেকে যে মধু কিনে আনি তা যে কতটুকু খাঁটি তা বলা মুশকিল । মধুর মধ্যে সাধারণত ভেজাল হিসেবে পানি, চিনি ও আরও অনেক কিছু মেশানো হয় । চলুন আমরা জেনে খাঁটি মধু চেনার কিছু উপায়, ফ্রিজিং পরীক্ষাঃ মধুকে ফ্র্রিজের মধ্যে রেখে দিন । খাঁটি মধু জমবে না । ভেজাল মধু পুরাপুরি না জমলেও জমাট তলানী পড়বে। পিঁপড়া পরীক্ষাঃ এক টুকরা কাগজের মধ্যে কয়েক ফোঁটা মধু নিন । তারপর যেখানে পিঁপড়া আছে সেখানে রেখে দিন । পিঁপড়া যদি মধুর ধারে কাছে না ঘেসে তবে তা খাঁটি মধু । আর পিঁপড়া যদি তা পছন্দ করে তবে মধুতে ভেজাল আছে। চক্ষু পরীক্ষাঃ খুব অল্প পরিমাণ মধু চোখের ভেতরে দিন । যদি মধু খাঁটি হয় তবে প্রথমে চোখ জ্বালাপোড়া করবে ও চোখ থেকে পানি বের হবে এবং খানিক পরে চোখে ঠান্ডা অনুভূতি হবে । (এই পরীক্ষায় অনুৎসাহিত করছি) দ্রাব্যতা পরীক্ষাঃ এক গ্লাস পানি নিয়ে এর মধ্যে এক টেবিল চামচ পরিমাণ মধু নিন । খুব ধীরে ধীরে গ্লাসটি শেক করুন । যদি মধু পানিতে পুরাপুরি দ্রবীভূত হয়ে যায় তবে তা ভেজাল মধু । আর মধু যদি পানিতে ছোট ছোট পিন্ডের আকারে থাকে তবে তা খাঁটি মধু । মেথিলেটেড স্পিরিট পরীক্ষাঃ সমান অনুপাতে মধু এবং মেথিলেটেড স্পিরিট মিশ্রিত করে নাড়াতে থাকুন। খাঁটি মধু দ্রবীভুত না হয়ে তলনীতে জমা হবে । আর ভেজাল মধু দ্রবীভূত হয়ে মেথিলেটেড স্পিরিটকে মিল্কি করবে । শিখা পরীক্ষাঃ একটি কটন উয়িক নিয়ে উহার এক প্রান্তকে মধুর মধ্যে ডুবিয়ে নেই । তারপর উঠিয়ে হালকা শেক করে নিই । একটি মোমবাতি জ্বালিয়ে বা লাইটার জ্বলিয়ে তা আগুনের শিখায় ধরি । যদি তা জ্বলতে থাকে তবে মধু খাঁটি আর যদি না জ্বলে তবে মধুতে পানি মেশানো আছে । যদি মধুতে অল্প পরিমাণ পানি মেশানো থাকে তবে কটন উয়িক জ্বলতে থাকবে কিন্তু ক্র্যাকলিং সাউন্ড শোনা যাবে । শোষণ পরীক্ষাঃ কয়েক ফোঁটা মধু একটি ব্লটিং পেপারে নিন ও পর্যবেক্ষণ করুন । খাঁটি মধু ব্লটিং পেপার কর্তৃক শোষিত হবে না । ভেজাল মধু ব্লটিং পেপারকে আর্দ্র করবে । কলংক পরীক্ষাঃ একটুকরা সাদা কাপড়ের উপর সামান্য পরিমাণ মধু নিন এবং এবং কিছুক্ষন পর কাপড়টি ধৌত করুন । ধোয়ার পর কাপড়টিতে যদি কোন দাগ থাকে তবে মধুতে ভেজাল আছে । আর যদি কোন দাগ না থাকে তবে মধু খাঁটি । হানি কম্ব পরীক্ষাঃ একটি কাঁচের বা সাদা রংয়ের বোলের মধ্যখানে দেড় থেকে দুই চা চামচ (প্লস্টিকের তৈরি) মধু নেই । তারপর বোলের চারদিক দিয়ে ধীরে ধীরে ঠান্ডা পানি ঢালতে থাকি । যখন পানি মধুকে ঢেকে ফেলবে তখন পানি ঢালা বন্ধ করি । তারপর বোলটিকে তুলে ধরে ঘড়ির কাঁটার বিপরীত দিকে দুই মিনিট ধরে ঘুরাতে থাকি । খাঁটি মধু এই মুভমেন্টের পরেও পানিতে দ্রবীভূত হবে না এবং হেক্সাগোনাল আকৃতি ধারণ করবে যা দেখতে প্রায় হানি কম্ব এর মত।নিচে হানি কম্ব এর একটি চিত্র দেওয়া হল। স্বচক্ষে দেখা পদ্ধতিঃ এই পরীক্ষগুলো না করেও খাঁটি মধু সম্পর্কে নিশ্চত হতে পারবেন যদি আপনি নিজে উপস্থিত থেকে মৌচাক থেকে মধু সংগ্রহ করে আনতে পারেন । মধুর উপকারিটাঃ মধুর উপকারিতার কথা লিখে শেষ করা যাবে না।মধুর নানাবিধ উপকারিতা নিম্নে প্রদত্ত হল, শক্তি প্রদায়ীঃ মধু ভালো শক্তি প্রদায়ী খাদ্য। মধু তাপ ও শক্তির ভালো উৎস। মধু দেহে তাপ ও শক্তি জুগিয়ে শরীরকে সুস্থ রাখে। হজমে সহায়তাঃ এতে যে শর্করা থাকে তা সহজেই হজম হয়। কারণ এতে যে ডেক্সট্রিন থাকে তা সরাসরি রক্তে প্রবেশ করে এবং তাৎক্ষণিকভাবে ক্রিয়া করে।পেটরোগা মানুষদের জন্য মধু বিশেষ উপকারি। কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করেঃ মধুতে রয়েছে ভিটামিন বি কমপ্লেক্স, ডায়রিয়া, কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। ১ চা চামচ খাঁটি মধু ভোরবেলা পান করলে কোষ্ঠবদ্ধতা এবং অম্লত্ব দূর হয়। রক্তশূন্যতায়ঃ মধু রক্তের হিমোগ্লোবিন গঠনে সহায়তা করে বলে এটি রক্তশূন্যতায় বেশ ফলদায়ক।কারণ এতে থাকে খুব বেশি পরিমাণে কপার, লৌহ ও ম্যাঙ্গানিজ। ফুসফুসের যাবতীয় রোগ ও শ্বাসকষ্ট নিরাময়েঃ বলা হয়, ফুসফুসের যাবতীয় রোগে মধু উপকারী। যদি একজন অ্যাজমা (শ্বাসকষ্ট) রোগীর নাকের কাছে ধরে শ্বাস টেনে নেয়া হয় তাহলে সে স্বাভাবিক এবং গভীরভাবে শ্বাস টেনে নিতে পারবেন। কেউ কেউ মনে করেন, এক বছরের পুরনো মধু শ্বাসকষ্টের রোগীদের জন্য বেশ ভালো। অনিদ্রায়ঃ মধু অনিদ্রার ভালো ওষুধ। রাতে শোয়ার আগে এক গ্লাস পানির সঙ্গে দুই চা চামচ মধু মিশিয়ে খেলে এটি গভীর ঘুম ও সম্মোহনের কাজ করে। যৌন দুর্বলতায়ঃ পুরুষদের মধ্যে যাদের যৌন দুর্বলতা রয়েছে তারা যদি প্রতিদিন মধু ও ছোলা মিশিয়ে খান তাহলে বেশ উপকার পাবেন। প্রশান্তিদায়ক পানীয়ঃ হালকা গরম দুধের সঙ্গে মিশ্রিত মধু একটি প্রশান্তিদায়ক পানীয়। মুখগহ্বরের স্বাস্থ্য রক্ষায়ঃ মুখগহ্বরের স্বাস্থ্য রক্ষায় মধু ব্যবহৃত হয়। এটা দাঁতের ওপর ব্যবহার করলে দাঁতের ক্ষয়রোধ করে। দাঁতে পাথর জমাট বাঁধা রোধ করে এবং দাঁত পড়ে যাওয়াকে বিলম্বিত করে।মধু রক্তনালিকে সম্প্রসারিত করে দাঁতের মাড়ির স্বাস্থ্য রক্ষা করে। যদি মুখের ঘায়ের জন্য গর্ত হয়। এটি সেই গর্ত ভরাট করতে সাহায্য করে এবং সেখানে পুঁজ জমতে দেয় না। মধু মিশ্রিত পানি দিয়ে গড়গড়া করলে মাড়ির প্রদাহ দূর হয়। পাকস্থলীর সুস্থতায়ঃ মধু পাকস্থলীর কাজকে জোরালো করে এবং হজমের গোলমাল দূর করে। এর ব্যবহার হাইড্রোক্রলিক এসিড ক্ষরণ কমিয়ে দেয় বলে অরুচি, বমিভাব, বুক জ্বালা এগুলো দূর করা সম্ভব হয়। দেহে তাপ উৎপাদনেঃ শীতের ঠান্ডায় এটি দেহকে গরম রাখে। এক অথবা দুই চা চামচ মধু এক কাপ ফুটানো পানির সঙ্গে খেলে শরীর ঝরঝরে ও তাজা থাকে। পানিশূন্যতায়ঃ ডায়রিয়া হলে এক লিটার পানিতে ৫০ মিলিলিটার মধু মিশিয়ে খেলে দেহে পানিশূন্যতা রোধ করা যায়। দৃষ্টিশক্তি বাড়াতেঃ চোখের জন্য ভালো।গাজরের রসের সাথে মধু মিশিয়ে খেলে দৃষ্টিশক্তি বাড়ে। রূপচর্চায়ঃ মেয়েদের রূপচর্চার ক্ষেত্রে মাস্ক হিসেবে মধুর ব্যবহার বেশ জনপ্রিয়। মুখের ত্বকের মসৃণতা বৃদ্ধির জন্যও মধু ব্যবহূত হয়। ওজন কমাতেঃ মধুতে নেই কোনো চর্বি। মধু পেট পরিষ্কার করে,মধু ফ্যাট কমায়, ফলে ওজন কমে। হজমে সহায়তাঃমধু প্রাকৃতিকভাবেই মিষ্টি। তাই মধু সহজে হজম হয় এবং হজমে সহায়তা করে। গলার স্বরঃ গলার স্বর সুন্দর ও মধুর করে। তারুণ্য বজায় রাখতেঃ তারুণ্য বজায় রাখতে মধুর ভূমিকা অপরিহার্য। মধু এন্টি অক্সিডেন্ট, যা ত্বকের রং ও ত্বক সুন্দর করে। ত্বকের ভাঁজ পড়া ও বুড়িয়ে যাওয়া রোধ করে।শরীরের সামগ্রিক শক্তি বাড়ায় ও তারুণ্য বাড়ায়। হাড় ও দাঁত গঠনেঃ মধুর গুরুত্বপূর্ণউপকরণ ক্যালসিয়াম। ক্যালসিয়াম দাঁত, হাড়, চুলের গোড়া শক্ত রাখে, নখের ঔজ্জ্বল্য বৃদ্ধি করে, ভঙ্গুরতা রোধ করে। রক্তশূন্যতা ও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতেঃ মধুতে রয়েছে ভিটামিন বি-কমপ্লেক্স, যা রক্তশূন্যতা,কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। আমাশয় এবং পেটের পীড়া নিরাময়েঃ পুরনো আমাশয় এবং পেটের পীড়া নিরাময়সহ নানাবিধ জটিল রোগের উপকার করে থাকে। হাঁপানি রোধেঃ আধা গ্রাম গুঁড়ো করা গোলমরিচের সাথে সমপরিমাণ মধু এবং আদা মেশান। দিনে অন্তত তিন বার এই মিশ্রণ খান। এটা হাঁপানি রোধে সহায়তা করে। উচ্চ রক্তচাপ কমায়ঃ দু চামচ মধুর সাথে এক চামচ রসুনের রস মেশান। সকাল-সন্ধ্যা দুবার এই মিশ্রণ খান। প্রতিনিয়ত এটার ব্যবহার উচ্চ রক্তচাপ কমায় ।প্রতিদিন সকালে খাবার এক ঘণ্টা আগে খাওয়া উচিত । রক্ত পরিষ্কারকঃ এক গ্লাস গরম পানির সাথে এক বা দুই চামচ মধু ও এক চামচ লেবুর রস মেশান। পেট খালি করার আগে প্রতিদিন এই মিশ্রন খান। এটা রক্ত পরিষ্কার করতে সাহায্য করে। তাছাড়া রক্তনালীগুলোও পরিষ্কার করে। রক্ত উৎপাদনে সহায়তাঃ রক্ত উৎপাদনকারী উপকরণ আয়রন রয়েছে মধুতে। আয়রন রক্তের উপাদানকে (আরবিসি, ডব্লিউবিসি, প্লাটিলেট) অধিক কার্যকর ও শক্তিশালী করে। হৃদরোগেঃ এক চামচ মৌরি গুঁড়োর সাথে এক বা দুই চামচ মধুর মিশ্রণ হৃদরোগের টনিক হিসেবে কাজ করে। এটা হৃদপেশিকে সবল করে এবং এর কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করে। রোগ প্রতিরোধশক্তি বাড়ায়ঃ মধু শরীরের রোগ প্রতিরোধশক্তি বাড়ায় এবং শরীরের ভেতরে এবং বাইরে যে কোনো ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণ প্রতিহত করার ক্ষমতাও যোগান দেয়।মধুতে আছে এক ধরনের ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধকারী উপাদান, যা অনাকাঙ্ক্ষিত সংক্রমণ থেকে দেহকে রক্ষা করে। ২০০৭ সালে সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গবেষণায় দেখা যায়, সুপারবাগ ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ প্রতিরোধে মধু অত্যন্ত কার্যকর।বিভিন্ন ভাইরাসের আক্রমণে বিভিন্ন রোগ প্রায়ই দেহকে দুর্বল করে দেয়। এসব ভাইরাস প্রতিরোধে মধু খুবই কার্যকর। জীবাণুর বিরুদ্ধে লড়াইঃ গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছেযে মধুতে রয়েছে উচ্চশক্তিসম্পন্ন অ্যান্টি মাইক্রোবিয়াল এজেন্ট। এই এজেন্ট শরীরের ক্ষতিকর রোগ জীবাণুর বিরুদ্ধে লড়াই করে। ব্যথা নিরাময়েঃ আপনার শরীরের জয়েন্টে জয়েন্টে ব্যথা? প্রচুর বাতের ওষুধ খেয়েও কোনো ফল পাননি? মধু খান। যে অবাঞ্ছিত রসের কারণে শরীরে বাতব্যামোর জন্ম, সে রস অপসারিত করবে মধু। আপনার বাত সেরে যাবে। গ্যাস্ট্রিক আলসার থেকে মুক্তিঃ হজম সমস্যার সমাধানেও কাজ করে মধু।একটি গবেষণায় বলা হয়েছে, গ্যাস্ট্রিক-আলসার থেকে মুক্তি পেতে একজন ব্যক্তি দিনে তিনবেলা দুই চামচ করে মধু খেতে পারে। মধু খেলে বুদ্ধি বাড়েঃ মধু যে শুধু কায়িক শক্তি বাড়ায়, তা নয়। আপনি প্রতিদিন রাতে শোয়ার আগে এক চামচ মধু খাবেন, ঘুমানোর আগে এক চামচ মধু মস্তিষ্কের কাজ সঠিকভাবে চালাতে সাহায্য করে ফলে আপনার মস্তিষ্কের শক্তি তথা বুদ্ধির জোর বেড়ে যাবে। যে কোনো কাজেকর্মে আপনার মগজ আগের চেয়ে বেশি খেলবে। যাদের মাথা খাটিয়ে কাজ করতে হয়, তাদের জন্য মধু এনে দেবে নতুন উদ্যম ও সৃষ্টিশীলতা। মনে রাখবেন, আপনি ঘুমিয়ে পড়লেও আপনার মস্তিষ্ক কিন্তু জেগে থাকে। সুতরাং তখনও তার শক্তি দরকার। আর এ শক্তির ভালোই যোগান দেয় মৌমাছির চাক ভেঙে পাওয়া এই প্রাকৃতিক মধু। আপনার লিভারে মধু থেকে পাওয়া ফলজ শর্করা বা ফ্রুকটোজ নামের পদার্থটিই মস্তিষ্কের জ্বালানি হিসেবেই কাজ করে থাকে।মানুষের লিভারে শক্তি সংরক্ষণ করে এবং রাতব্যাপি মস্তিষ্কে শক্তি সরবরাহ করে থাকে। ঠান্ডা দূর করে মধুঃমধু নিয়মিত খেলে অতিরিক্ত ঠান্ডা লাগার প্রবণতা দূর হবে। চা, কফি ও গরম দুধের সঙ্গে মধু মিশিয়ে খেলে হাঁচি, কাঁশি, জ্বর জ্বর ভাব, জ্বর, গলাব্যথায়,টনসিল, নাক দিয়ে পানি পড়া,জিহ্বার ঘা (ঠান্ডাজনিত) ভালো হয়। সমপরিমাণ আদারস এবং মধুর মিশ্রণ কাশির সাহায্যে শ্লেষ্মা বের করে ফেলার একটি সহায়ক ওষুধ হিসেবে কাজ করে। এটি ঠান্ডা, কাশি, কণ্ঠনালির ক্ষত, নাক দিয়ে পানি পড়া ইত্যাদি থেকে দ্রুত পরিত্রাণ দেয়। পেনসিলভানিয়া স্টেট কলেজ অব মেডিসিনের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, এক চামচ মধু বিভিন্ন সর্দির ওষুধ থেকেও অনেক বেশি কার্যকর।মধুর এই ঠাণ্ডাজনিত রোগনিরোধী গুণের কথা বলা হয়েছে এই গবেষণায়,যা কবিরাজি মতে আগে থেকেই প্রতিষ্ঠিত। শিশুদের বৃদ্ধি ও বিকাশেঃ শিশুদের ছয় মাস বয়সের পর থেকে অল্প করে (তিন-চার ফোঁটা) মধু নিয়মিত খাওয়ানো উচিত। এতে তাদের পুরো দেহের বৃদ্ধি, মানসিক বিকাশ ভালো হবে। তবে শিশুকে মধু নিয়মিত খাওয়াতে হবে ঠান্ডা ঋতুতে, গরমের সময় নয়।শিশুদের দুর্বলতা দূর করার জন্যমধুতে রয়েছে জিংক ও ফসফরাস।বড়দের তুলনায় বাড়ন্ত শিশুদের (বিশেষ করে যারা স্কুলে যায়) জন্য পরিমাণে মধু বেশি প্রয়োজন। আয়ু বৃদ্ধিঃ গবেষণায় আরও দেখা গেছে, নিয়মিত মধু ও সুষম খাবারে অভ্যস্ত ব্যক্তিরা তুলনামূলকভাবে বেশি কর্মক্ষম ও নিরোগ হয়েবেঁচে থাকে। ক্ষত সারাতে মধুঃ উপকারী।প্রাচীন কাল তেকে গ্রিস ও মিশরে ক্ষত সারাইয়ে মধু ব্যবহৃত হয়ে আসছে। ২০০৭-এ সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক পরীক্ষায় দেখা গেছে অধিকাংশ ক্ষত ও জখমের উপশমে মধু ডাক্তারী ড্রেসিং-এর চেয়েও বেশী কার্যকর। অগ্নিদগ্ধ ত্বকের জন্যও মধু খুব উপকারী। আজকাল ছোটখাটো কাটাছেঁড়া সারাতেও মধুর ব্যবহারের কথা বলছেন বিজ্ঞানীরা। ২০০৭ সালে অস্ট্রেলিয়ার সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ড. শোন ব্লেয়ার বলেছেন, ক্ষতে ইনফেকশন সৃষ্টি হওয়া প্রতিরোধ করতেও ড্রেসিংয়ের সময় মধু মেশানো উচিত। ধরুন, আপনার শরীরের কোন অংশ কেটে গেল হাতের কাছে এ্যান্টিবায়োটিক অয়েন্টমেন্ট নেই। এবার বিকল্প হিসাবে আপনার ঘরের মধুটি আপনার কাজে আসতে পারে। মধু ব্যাকটেরিয়ার আক্রামণকেও ঠেকায়। এভাবে মধু আপনার ক্ষতে ইনফেকশন হতে দেবে না এবং ক্ষতটি ও দ্রুত সারিয়ে তুলবে। মধুর এমন মধুরতম ব্যবহার আর কি হতে পারে? কিন্তু কিভাবে ব্যবহার করবেন? এটা এবার জেনে নিন। প্রথমে ক্ষত স্থনটি ভাল করে ধুয়ে নিন। তারপর আলতো করে সেখানে পাস্তুরিত মধু লাগিয়ে নিন। এবার ব্যান্ডেজ দিয়ে জায়গাটা বেঁধে নিন। ব্যস, এভাবে দিনে তিনবার। ক্ষত সেরে যাবে। তাছাড়া দেহের ক্ষত এবং ফোঁড়ার ওপর মধু এবং চিনি চমৎকার কাজ করে থাকে। এটি যে কোনো ব্যথাকে প্রশমিত করে এবং জীবাণুনাশকের কাজ করে। মধু বনাম চিনিঃ একজন মানুষের জন্য দৈনিক যত ক্যালরি খাদ্য দরকার, তার ২২ ক্যালরি পাওয়া যায় এক চা চামচ মধুতে। একই পরিমাণ চিনিতে পাওয়া যাবে ১৫ ক্যালরি। তবু এক কেজি চিনির চেয়ে এক কেজি মধুর দাম অনেক বেশি। কারণ, চিনি যতটা সহজলভ্য মধু ততটা নয়। অবশ্য মধু চিনির চেয়ে দুষ্প্রাপ্য বলেই যে এর দাম বেশি, তাও নয়। আসলে চিনির চেয়ে মধুর দ্রব্যগুণটা মানব শরীরে অনেক বেশি সক্রিয়। তাই প্রাকৃতিকভাবে তৈরি মধুর কাছে কারখানায় তৈরি চিনি তেমন পাত্তা পায় না। খাদ্যবিজ্ঞানীরা দেখেছেন, মধুতে রয়েছে প্রচুর গ্লুকোজ আর ফলজ শর্করা। এটি দিয়ে লিভারে সঞ্চিত হয় প্রচুর পরিমাণে গ্লাইকোজেন। আর এতে শরীরে পাওয়া যায় অমিত শক্তি ও প্রাণচাঞ্চল্য। মধুর দানাদার সমস্যাঃ অনেক মধু দানাদার আকার ধারণ করে। যদি কোনো মধুতে গ্লুকোজের পরিমাণ ফ্রুক্টোজের চেয়ে বেশি থাকে তখন সে মধু অতি দ্রুত দানাদার হয়। যেমন সরিষা ফুলের মধু। আবার মধুতে পর্যাপ্ত পোলেন, ধুলাবালি ও বুদবুদ থাকলে সে মধু সহজে দানাদার হয়। সাধারণত ১১ থেকে ১৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় মধু জমতে পারে। তবে ১৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা মধু অতি দ্রুত জমতে সহায়ক। পানির পরিমাণ বেশি থাকলে মধুকে দানাদার হতে ত্বরান্বিত করবে। তবে দানাদার মধু খেতে কোনো সমস্যা নেই। দানাদার মধুকে পরোক্ষ তাপ প্রয়োগের মাধ্যমে তরল করা যায় বা কৃম মধুতে রূপান্তর করা যায়। দানাদার মধু ছয় মাসের মধ্যে ব্যবহার করা উত্তম। সতর্কতাঃ মধু সব রোগের মহৌষধ হলেও একটি কথা থেকেই যায়, সেটি হলো ডায়াবেটিস রোগের ক্ষেত্রে মধু খুবই বিপজ্জনক। কারণ এটি রক্তে সরাসরি শোষিত হয় বলে সহজেই দেহের রক্ত শর্করাকে উচ্চস্তরে নিয়ে আসবে এতে কোনো সন্দেহ নেই। সুতরাং ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য মধু গ্রহণ নিষেধ। তাছাড়া মধু সবার শরীরে গরম তৈরি করে। যেকোনো বয়সের মানুষ অধিক পুষ্টির আশায় বেশিমধু খেলে ডায়রিয়া হয়ে যাবে।