Pages

★ ইসলামে পর্দার বিধান ★


বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম
.
সমস্ত প্রশংসা মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের জন্য
যিনি দুনিয়া ও আখেরাতের একমাত্র মালিক। দুরুদ ও সালাম
আখেরী  নবীদের শ্রেষ্ট নবী হযরত মুহাম্মদ (সঃ)-সহ সকল
পয়গম্বর,আহলে বাইত, সাহাবায়ে কেরামসহ ইসলামের সকল
অনুসারীদের উপড়। হেদায়েত তাদের নসীব
হইয়েছে যারা ইসলামে প্রবেশ করেছেন এবং কুরআন ওসুন্নাহর
সঠিক জ্ঞান অর্জন করেছেন, আর সেই অনুযায়ী আমলও করেছেন।
আমার এই লেখাটি বিশেষ
ভাবে নারীদেরকে উদ্দেশ্যে করে লিখা। কারণ নবী করীম (সঃ)
এরহাদীস অনুযায়ী উম্মতে মুহাম্মদীর বেশীর ভাগ
জাহান্নামী হবে নারী। আর এই জাহান্নামে যাওয়ার
যে দুইটি কারণ সবচেয়ে বেশী তা নিম্নে বর্নণা করা হলো।
তবে সমতা রক্ষার জন্য পুরুষদেরকেও একেবারে বাদ দেওয়া হয়
নাই এই আলোচনায়,আল্লাহর দেওয়া মহান নেয়ামত হইল ইসলাম।
সমস্থ মানব জাতীর দুনিয়া এবং পরকালের শান্তিপুর্ণ
ব্যাবস্থা এক মাত্র এই ইসলামেই আছে। প্রত্যেক মানুষ যেন
সুন্দরভাবে জীবন অতিবাহিত করতে পারে, সবাই যেন সবার
ন্যায্য অধিকার পাইতে পারে সেই ব্যবস্থাই ইসলাম করেছে।
যেদিক দিয়াই বিচার করা হউক না কেন ইসলামের বিকল্প আর
কিছুই নাই। তাই পৃথিবীর অনেক অ-মুসলীম মনীষিও স্বীকার
করতে বাধ্য হয়েছে যে, ইসলামই এক মাত্র মানব
জাতীকে শান্তি দিতে পারে।
পর্দাঃ পর্দা করা ফরজ। আর পর্দা কথা আসলেই
প্রথমে আসে চক্ষুর কথা। চক্ষু মানুষেরএকটি প্রধান ইন্দ্রিয়।
চক্ষু দ্বারা মানুষের দর্শন কার্য সমাধা হয়। আর সংসারের
অধিকাংশ পাপের মুলেই এই চক্ষু। কার চক্ষুই প্রথমে দর্শন
করেবস্তু সম্মন্ধে জ্ঞান আনয়ন করে এবং মনে বাসনার
সৃষ্টি করে আর বাসনা হতেই ভোগের উৎপত্তি হয়। আর ভোগ
শরিয়ত সম্মত না হলেই পাপ হয়। মানুষের মনে যত ভাল
কিংবা খারাপ বাসনার জন্ম হয় সবই এই চক্ষুর সৃষ্টি।
চক্ষুকে সংযত ও শাসন করে রাখতে না পারলে সে বহু পাপের খোজ
করে দেয়। কারণ চক্ষুই বাসনার গুপ্তচর। চক্ষুর এই অসংযত
আচরণে সংসারে বহু মানুষ পাপের দরিয়ায় ডুবেমরছে। তাই
আল্লাহ মানুষকে সর্তক করে পবিত্র কুরআনে আল্লাহ
তাআলা ইরশাদ করেছেন, “মুমিনপুরুষদেরকে বলুন,তারা যেন
তাদের দৃষ্টি নত রাখে এবং তাদের যৌনাঙ্গের হেফাযত করে,
এতে তাদের জন্য পবিত্রতা আছে, নিশ্চয় তারা যা করে আল্লাহ
তা অবহিত আছেন। (সুরা-আন নুর-৩০)। এই আয়াতে মুমিন
পুরুষদেরকে বলা হয়েছে তারা যেন তাদের দৃষ্টি নত রাখে। এই
আয়াত দ্বারা প্রমাণ হয় যে,পুরুষ নারীদের প্রতিকু-
দৃষ্টি দেওয়া হারাম,যেহেতু দৃষ্টি জিনার সংবাদ বাহক তাই
এখানে প্রথমে দৃষ্টি নিয়ন্ত্রন করার হুকুম প্রধান করা হয়েছে।
ইমাম আবু হানীফা (রঃ) বলেছেন,কোন স্ত্রী লোক অন্য পুরুষের
প্রতি এবং কোন পুরুষ অন্য মেয়ে লোকের প্রতি পুর্ন
দৃষ্টি দেওয়া জায়েয নেই। কেননা আল্লাহ তায়ালা বলেছেন,
নিশ্চয়কর্ন, চক্ষু এবং সমস্ত সন্তকরন কেয়ামতে জিজ্ঞাসিত
হবে তার কৃতকর্মের ব্যাপারে।
নবী (সঃ) বলিয়াছেন, যখন কোন বেগানা মহিলার উপর হঠাৎ
দৃষ্টি পরিয়া যায় তখন সাথে সাথে দৃষ্টি ফিরাইয়া নিবে,
দ্বিতীয় বার আর দৃষ্টি দিবেনা কারন প্রথম দৃষ্টি তোমার আর
দ্বিতীয় দৃষ্টি শয়তানের। হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ)
হইতে বর্নিত, নবী (সঃ) বলিয়াছেন,আদম সন্তানের উপর আংশিক
জেনা (ব্যভিচার) লিখিত হয়ে থাকে এবং নিশ্চয় তারা উহার
প্রতিফল ভোগ করিবে। যেমন-চক্ষুদ্বয়ের জেনা, পরস্ত্রীর
প্রতি কামভাবে দৃষ্টি করা। কর্নদ্বয়ের
জেনা,কামস্পৃহা হয়ে পরস্ত্রীর কন্ঠস্বর শ্রবন করা। রসনার
জেনা, পরস্ত্রীর প্রতি কামভাবে বাক্যালাপ করা। হস্তের
জেনা, কামভাবে পরস্ত্রীকে স্পর্শ করা। পায়ের জেনা,
পরস্ত্রীর দিকে কামভাবে অগ্রসর হওয়া। হৃদয়ের
জেনা,পরস্ত্রী সম্বন্ধেকুচিন্তা করা। আর লজ্জাস্থান এই সকলের
সত্য মিথ্যা প্রমাণ করে দেয়। (বোখারীও মুসলীম)।
হযরত আবু ইমামা হইতে বর্নিত,হুজুর (সঃ) বলেছেন, কোনও
ইমানদার ব্যক্তি পরস্ত্রীর সৌন্দর্যের প্রতি দৃষ্টি করে স্বীয়
চক্ষুদ্বয় নিম্নগামী করিলে। আল্লাহ তায়ালা তাকে একটি পুন্য
কার্য্যের প্রতিফল দান করেন,সে উহারমাধুর্য্য অন-রে অনুভব
করতে থাকিবে। (তেবরানী ও হাকেম)। নবী করিম(সঃ)
বলিয়াছেন, যে ব্যক্তি পরস্ত্রীর সৌন্দর্য্যের
প্রতি কামদৃষ্টি নিক্ষেপ করিবে কেয়ামতের দিন তার
চক্ষে গরম শিশা ঢালিয়া দেওয়া হবে (হেদায়া।)
যা হউক,উপরে বর্নিত আয়াত এবং হাদীস দ্বারা ইহাই
প্রতিয়মান হয় যে, কোনপুরুষ কোন বেগানা মহিলার
প্রতি দৃষ্টি দেওয়া জায়েজ নাই। যদিও
অসাবধানতা বশতদৃষ্টি পরিয়া যায় তা হইলে অবশ্যই
সাথে সাথে দৃষ্টি ফিরাইয়া নিতেহবে। ইচ্ছাকৃতভাবে কোন
পুরুষেরই বেগানা নারীর প্রতি দৃষ্টি দেওয়া জায়েজনাই।
ইরশাদ হচ্ছে,“ইমানদার নারীদেরকে বলুন,তারা যেন তাদের
দৃষ্টি নত রাখেএবং যৌনাঙ্গের হেফাযত করে। তারা যেন
যা সাধারণত প্রকাশমান তা ছাড়া তাদেরসৌন্দর্য প্রকাশ
না করে এবং তারা যেন তাদের মাথার
ওড়না বক্ষদেশে ফেলিয়ারাখে এবং তারা যেন তাদের স্বামী,
পিতা,শ্বশুর, নিজ পুত্র, স্বামীরপুত্র (অর্থাৎ সতীন পুত্র),
ভ্রাতা,ভ্রাতুষ্পুত্র, ভগ্নি পুত্র, অধিকার ভুক্তবাদীঁ, যৌন
কামনা মুক্ত পুরুষ ও বালক,যারা নারীদের গোপন অঙ্গ
সম্পর্কে অজ্ঞ, তাদের ব্যতিত কারো কাছে তাদের সৌন্দর্য
প্রকাশ করিবার জন্য জোরে পদচারানা না করে। মুমিনগন,
তোমরা সবাই আল্লাহর সামনে তওবা কর যাতে তোমরা সফলকাম
হও’। (সুরা-আন নুর-৩১)।
এখানে মুমিনা নারীদেরকে বলা হয়েছে তারা যেন তাদের
দৃষ্টি নত রাখে। এইআয়াত দ্বারা প্রমান হয় যে,নারী পুরুষদের
প্রতি দৃষ্টি দেওয়া হারাম,যেহেতুদৃষ্টি জিনার সংবাদ বাহক
তাই এখানে প্রথমে দৃষ্টি নিয়ন্ত্রন করার হুকুমপ্রধান
করা হয়েছে। তারপর বলা হয়েছে কিছু সংখ্যক আত্নীয়ের
সম্বন্ধে যাদের সামনে সাধারন কাপড় পড়া (অর্থাৎ পুর্ন
পরদা করা ব্যতিত) অবস্থায় যাওয়া যাইবে। এছাড়া পৃথিবীর
কাহারো নিকট পুর্ন পর্দা করা ব্যতিত যাওয়া যাইবেনা সে যত
বড় আত্নীয়ই হোক কিংবা যত পরিচিতই হোকনা কেন। তারা সবাই
বেগানাপুরুষ। তাদের সামনে যাওয়া হারাম। এথন জানা দরকার
বেগানা পুরুষ কাকে বলে। স্বামীর মৃত্যুর পর যেই সমস্ত পুরুষের
সাথে বিয়ে হালাল অর্থাৎ যেইসমস্ত পুরুষের
সাথে বিয়ে বসা শরিয়তে জায়েজ তাদেরকে বেগানা পুরুষ বলে।
যেমন-পিতা, শ্বশুর,নিজ পুত্র,স্বামীর পুত্র (অর্থাৎ সতীনপুত্র),
ভ্রাতা,ভ্রাতুষ্পুত্র,ভগ্নি পুত্র,আপন চাচা, আপন মামা,আপন
দাদা (উপরেযা যত আছে অর্থাৎ দাদার দাদা তার দাদা তার
দাদা ইত্যাদি),আপন নানা (ইহাওদাদার মতন উপরে যত আছে) দুধ
ভাই,দুধ ছেলে,এই সমস্ত লোক হইলো মহররম ব্যাক্তিঅর্থাৎ
স্বামী মৃত্যুর পরও এই সমস্ত লোকের সাথে কোন মহিলার
বিয়ে জায়েজনাই। এছাড়া পৃথিবীতে আর বাকী যত পুরুষ
আছে সবাই বেগানা পুরুষ সবার সাথে বিয়ে জায়েজ আছে।
বেগানা পুরুষের মাঝে কিছু লোক আছে যাদেরকে গায়রে মহররম
বলা হয়,অর্থাৎ তাদের সাথেও বিয়ে জায়েজ,তবে শর্ত অনুযায়ী।
যেমন আপন বোনের জামাই,যতক্ষন পর্যন্ত বোন ঐ স্বামীর ঘর
করে ততক্ষন পর্যন্ত বিয়ে জায়েজ নাই,কিন্তু বোন
মারা গেলে কিংবা তালাক দিলে তাকে বিয়ে করা জায়েজ
হয়েযায়,অর্থাৎ কোন পুরুষ একই সাথে দুই আপন
বোনকে বিয়ে করতে পারিবে না। তারপরে আপন খালু,ইহাও
ভগ্নি পতির মতনই,যদি খালা মারা যায় কিংবা তালাক
হয়ে যায়তা হইলে খালুর সাথেও বিয়ে বসা মহিলাদের জন্য
জায়েজ। তেমনি ভাবে ফুফাও। তারপরে মনে রাখা দরকার
পিতার আপন চাচাত ভাইয়ের সাথেও বিয়ে জায়েজ। হযরত
আলি (রাঃ) ছিল ফাতেমার চাচা অর্থাৎ নবী (সঃ) এর আপন
চাচাত ভাই। তাই তাদের সামনেও সবসময় পরদা করা প্রত্যেক
মহিলার জন্য ফরজ। অর্থাৎ মহররম পুরুষ ছাড়া পৃথিবীর সব
পুরুষের সাথেই মহিলাদের বিয়ে হালাল বা জায়েজ এবং তাদের
সামনে সবসময় প্রত্যেক মহিলার পরদা করে চলা ফরজ।
যারা আল্লাহকে ভয় করে আল্লাহর আযাবকে ভয় করে তারা অবশ্যই
আল্লাহর হুকুম মানিয়া চলিবে। মনে রাখা দরকার যেইসমস্ত
কারনে মহিলাদের জাহান্নামে যাইতে হবে,তার
ভিতরে মহিলাদেও বেপর্দায় থাকা একটি। পৃথিবীতে এমন অনেক
মহিলা আছে যারা বড় বড় ব্যাবসায়ী ছিল কিন্তু তারা কোনদিন
বিনা পর্দায় চলে নাই। এখন উপরে উল্লেখ্যিত আলোচনার
প্রেক্ষিতে সবাই নিজের অবস্থাটা একটু
চিন্তা করে নেওয়া দরকার যে কে কতটুকু আল্লাহর হুকুম পালন
করতেছি। জান্নাতে যাওয়া বড়ই কঠিন, শুধু নামায রোজা করলেই
জান্নাতে যাওয়া যাইবে না। এছাড়াও বহু কারণ আছে যার
কারণে জাহান্নামে যেতে হবে। এখন আসা যাক মুল
কথায়,আয়াতের প্রথমে বলা হয়েছে “ইমানদার নারীদেরকে বলুন
তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে নত রাখে এবং যৌনাঙ্গের হেফাযত
করে”। এখানে ঈমানদার নারী বলা হয়েছে এই
কারণে যে,যারা জান্নাতের আশা করে তারা যেন এই আদেশ
গুলো মান্য করে চলে। আর যারা জান্নাতের
আশা করে তারা অবশ্যই ইমানদার মহিলা অর্থাৎ মুসলমান
মহিলা। পুরুষরা যেমন কোন মহিলার
দিকে দৃষ্টিদেওয়া বা দেখা জায়েজ নাই তেমনি কোন নারীও
কোন পুরুষকে দেখা জায়েজ নাই। এরপক্ষে হাদীস হইলো,উম্মুল
মুমেনিন হযতর উম্মে সালামা (রাঃ) হইতে বর্নিত,তিনিবলেন,
একদিন আমি এবং মায়মুনা (রাঃ) উভয়েই হুজুরের (সঃ)
সাথে ছিলাম এমন সময় অন্ধ সাহাবী হযরত উম্মে মাকতুম (রাঃ)
সেইখানে আসিলেন, তখন নবী (সঃ) আমাদেরকে পরদা করিবার
জন্য নির্দেশ দিলেন। তখন আমি আরয করিলাম, ইয়ারাসুলুল্লাহ
(সঃ), উনিত অন্ধ উনিত আমাদেরকে দেখতে পাইবেনা। তখন
নবী(সঃ)বলিলেন,তোমরাওকি অন্ধ তোমরাও
কি তাকে দেখিতে পাওনা অর্থাৎ তোমরাতো তাকে দেখিতেছ!
(আবু দাউদ ও তিরমিঝি)।
উম্মুল মুমেনীনগন অর্থাৎ নবী করিম(সঃ) এরপুন্যবতী বিবিগন
উম্মতের জননী,কোন মুসলমানের পক্ষে হালাল নয়
উনাদেরকে বিয়েকরা। তথাপিও নবী করিম(সঃ) একজন অন্ধ
সাহাবী হতে স্ত্রীদেরকে পরদা করতেআদেশ করেছেন।
তাতে বুঝা গেল কোন নারীর জন্য জায়েজ নাই কোন
বেগানা পুরুষকেদেখা তাহলে তাদেরও নাম দাইউজের খাতায়
লেখা হবে আর দাইউজের জন্যজান্নাত হারাম করা হয়েছে।
অতএব এই বেপারে সাবধান হওয়া উচিত। আর কোন পুরুষেরওউচিত
হবেনা নিজ
স্ত্রীকে বিনা কারনে বাহিরে যাইতে দেওয়া,কিংবা কোন
বেগানাপুরুষের সামনে প্রেরণ করা। স্বামীর কারণে কোন
স্ত্রী দাইউজ হইলে সেইস্বামীও জাহন্নামী। এই কারণে হযরত
আলী(রাঃ) বলিতেন,তোমাদেরকি লজ্জা বলিতেকিছু নাই?
তোমাদের কি আত্মমর্যাদাবোধ নাই,তোমরা তোমাদের
স্ত্রীদেরকে মানুষেরমাঝে ছাড়িয়া দাও,আর
তারা বেগানা পুরুষদেরকে দেখে এবং বেগানা পুরুষরাওতাদেরকে দেখে (কিতাবুল
কাবায়ের—ইমাম আযযাহাবী (রঃ)। বলা হয়েছে “পুরুষদের
ভিতরে যারা স্ত্রীলোক সম্বন্ধে অনাসক্ত তাদের নিকটসৌন্দর্য
প্রকাশ করতে কোন দোশ নাই”। এই আয়াতের
তাফছিরে অনেকে অনেক কথাবলিয়াছেন,যেমন ইবনে আব্বাস
(রাঃ) বলিয়াছেন,বর্বর ওনির্বোধ। হাসান(রঃ)
বলিয়াছেন,স্ত্রী সহবাসে অক্ষম। কেহ বলিয়াছেন,নপুংষক
ইত্যাদি।
কিন্তু তাফছিরে কবির প্রণেতা বলিয়াছেন,খাসীকৃত ও কর্তিত
লিঙ্গ প্রভ্রতি প্রকারের ব্যক্তিরাও কখনো কখনো কামাসক্ত
হয়ে থাকে। তিনি আরো লিখেছেন যে,হযরত (সঃ) নপুংষক লোকের
সহিত দেখা দিতে নিষেধ করেছেন’। হেদায়া কিতাবে উল্যেখ
আছে,‘খাসী কৃত কর্তিত লিঙ্গ
এবং নপুংষককে দেখা দেয়া স্ত্রীলোকের পক্ষে জায়েজ নাই।
অতএব,আসক্তি বিহীন পুরুষ নিয়া বিভিন্ন মতবেদ আছে।
তাছাড়া সঠিক ভাবে জানাও সম্ভব নয় কার আসক্তি আছে আর কার
নাই এই অবস্থায় তাদের সাথে দেখা না দেয়াই উত্তম। তারপর
বলা হয়েছে যৌনাঙ্গের হেফাযত করার জন্য। পৃথিবীতে যত
জিনা হয় এবং এই জিনার বেপারে পুরুষদের
থেকে নারীরা বেশী অগ্রগামী। অর্থাৎ নারীদের কারনেই
বেশী জিনা হয়ে থাকে। কারণ নারীদের
দুর্বলতা না থাকিলে কোন পুরুষ জিনায় লিপ্ত হতে পারেনা। এর
প্রমাণ আল্লাহ পবিত্র কুরআন, কুরআনে যত জায়গায় বিভিন্ন
অন্যায়ের বিচারের রায় দিয়াছেন,যেমন চুরি করিলে হাত
কাটিতে হবে,মদখাইলে দোররা মারিতে হবে,কেউ
জিনা করিলে,যদি অবিবাহিত হয় তবে দোররা মারতে হবে আর
বিবাহিত হইলে পাথর ছুড়িয়া মেরে ফেলতে হবে ইত্যাদি। আর
কুরআন শরিফে যত যায়গায় এই সমস্ত রায় দেওয়া হয়েছে সেই
সমস্ত জায়গায়ই পুরুষের কথা আগে বলিয়াছেন। কিন্তু একমাত্র
জিনার বেপারে মহিলাদের কথা আগে বলা হয়েছে। কারণ
জিনা একটি ঘৃনিত কাজ আর এই কাজ পুরুষের চেয়ে নারীদের
কারনে বেশী সংঘঠিত হয় এই বেপারে নারীরাই অগ্রগামী।
আল্লাহ পবিত্র
কুরআনে ইরশাদকরেছেন,“ব্যভিচারিনী নারী ব্যভিচারী পুরুষ
তাদের প্রত্যেককে একশত করে বেত্রাঘাত কর। আল্লাহর আইন
কার্যকর করতে তাদের প্রতি যেন তোমাদের মনে দয়ার উদ্রেক
না হয়। যদি তোমরা আল্লাহর প্রতি এবং পরকালের
প্রতি বিশ্বাসী হও এবং মুসলমানের একটি দল যেন তাদের
শাস্তি প্রত্যক্ষ করে। (সুরা নুর-২)। এই
আয়াতে আরো বলা হয়েছে তাদেরকে মারতে তোমাদের মনে যেন
কোন দয়া না হয় এবং তাদেরকে যখন মারবে তখন
লোকদেরকে ডাকিয়া সমবেত করিবে এবং তাদের
সামনে তাদেরকে দোররা মারিবে। জিনা হয় গোপনে কিন্তু এর
বিচার হয় প্রকাশ্যে। এতে উপকার হয় এইযে,
যারা জিনা করে তারা লোকের কাছে লজ্জায় পতিত হয়
এবং যারা প্রত্যক্ষ করে তারাও সতর্ক হয়ে যায়।
একটা কথা স্মরন রাখা দরকার জিনার উৎপত্তিই হয়
বেপরদা হতে। কিতাবে আছে যখন কোন বেগানা পুরুষ
মহিলা একাকি মিলিত হয় অর্থাৎ কথাবলে তখন তাদের তৃতীয় জন
হয় শয়তান। আল্লাহ ইরশাদ করেন “নিশ্চয় শয়তান মানুষের
প্রকাশ্য শত্রু”(সুরা বাকারা-২০৮)। তারপর
বলা হয়েছে,“তারা যেন ওড়না মাথার উপর দিয়া বক্ষ অর্থাৎ
বুক সহ ডাকিয়া রাখে”। অর্থাৎ এমন ভাবে চাদর
দ্বারা শরীলকে ডাকিয়া রাখতে হবে যেন তাদের মুখ,বুক সহ
সমস্ত শরীল কোন অবস্থায়ই কোন বেগানা পুরুষ না দেখতে পারে।
শুধু মহররম ব্যক্তিগন (বাবা,ভাই,ছেলে ইত্যাদি) মূখ,হাতের
পাতা, পায়ের পাতা দেখতে পারবে তা থেকে বেশী নয়। তারপর
বলা হয়েছে মহিলারাও অন্য মহিলার
কাছহইতে পরদা করতে হবে। এক মহিলা অন্য মহিলার
স্বাভাবিক অঙ্গ গুলোই দেখতেপারবে গোপন অঙ্গ
দেখতে পারবেনা,এটা শুধু মুসলমান মহিলাদের জন্য কিন্তুকাফের
মহিলারা যেমন হিন্দু মহিলাদের নিকটও মুসলমান মহিলাদের
পুর্ন পর্দাকরতে হবে। তবে কোন চিকিৎসা করতে হলে কাফের
মহিলারাও মুসলমান মহিলাদের গোপন অঙ্গ দেখতে পারবে কোন
অসুবিধা নাই। রাসুল (সঃ) একবার হযরত ফাতেমা (রাঃ)-
কে জিজ্ঞেস করিলেন,বলোতো মা নারীর জন্যউত্তম কি?
উত্তরে ফাতেমা বলিলেন,কোন
নারী বেগানা পুরুষকে দেখবেনা এবং কোন বেগানা পুরুষও
তাকে দেখবেনা। নবী(সঃ) তখন তাকে বুকে জরাইয়া ধরিয়া আদর
করিলেন- (এহয়েউ উলুমিদ্দিন-ইমাম গাজ্জালী)।
হুজুর (সঃ) বলিয়াছেন নারীরা আল্লাহর অধিক নিকটে তখন
যায়,যখন সে তার কক্ষের অভ্যন্তরে থাকে। অনেকে বলে মনের
পরদাই বড় পরদা তারা হইল এক নাম্বার জাহেল। যদি মনের
পরদাই সব কিছু হইত তা হইলে আল্লাহ কুরআন শরিফে এত আদেশ
নিশেধ কেন দিয়াছেন, কেন সব জিনিসের
একটা সীমা টানিয়া দিয়াছেন,কেন শরিলেরপরদাকে ফরজ
করে দিয়াছেন। এইগুলো হইতেছে শয়তানি কথাবার্তা। অতএব এই
সমস্তকথা বলে আল্লাহর আদেশকে অমান্য করা ছাড়া আর কিছুই
না। এতে যে কত বড় পাপ হয়মানুষ চিন্তা করিলে কোন কুল
কিনারা পাইবেনা। তারাই অভিশপ্ত
যারা আল্লাহরআইনকে অমান্য করে,যারা হারাম কাজে লিপ্ত
থাকে। দোয়া করি আল্লাহ সবাইকেহেদায়েত নসীব করুন।
অন্য আয়াতে ইরশাদ করেছেন, “হে নবী! আপনি আপনার
পত্নীগনকে,কন্যাগনকে এবং মুমিনদের
স্ত্রীদেরকে বলুন,তারা যেন তাদের চাদরের কিয়দাংশ
নিজেদের উপরটানিয়া নেয়-(আল আহযাব-৫৯)। অতএব একটু
চিন্তা করে দেখি আমরা কি এই সব আল্লাহর আদেশ
গুলি সঠিকভাবে মানিয়া চলতেছি। এখন
অনেকে বলতে পারে বর্তমান জমানায় এত সব মানা সম্ভব নয়।
এইটা নিতান্ত মিথ্যা কথা ছাড়া আর কিছুই নয়। কারণ আল্লাহ
শুধু প্রথম যুগের নারীদের জন্যইপর্দার হুকুম জারি করেন নাই।
কেয়ামত পর্যন্ত এই আদেশ জারি থাকবে। যদি বর্তমানযুগের
নারীদের জন্য এই সমস্ত হুকুম মানা কঠিন হত তা হলে আল্লাহ এই
সব আদেশ নিষেধ নাযিল করতেন না। এ সমস্ত ওজর শুধু মাত্র
শয়তানী কাজ ছাড়া আর কিছুই নয়। বরং আগের দিনের
মহিলারা বর্তমান যুগের মহিলাদের চেয়ে আরো কষ্ট
করে দিনাতিপাত করতে হয়েছিল। বর্তমান যুগে সব কিছু হাতের
কাছে পাওয়া যায়। তখনকার যুগে এই সব কল্পনাও করা যাইতনা।
তখনকার যুগে স্বামী সন্তানরা থাকতো দিনের পর দিন
জেহাদে। মহিলাদেরই সব করতে হত,ফসল
বুনতে হতো,বাজারে যাইতে হত,কেনা বেচাও তাদেরই করতে হত
কিন্তু এমন কোন ইতিহাস নেই,এমন কোনপ্রমান নেই
তারা বিনা পর্দায় এতসব করেছেন কিংবা তাদের চেহারা কোন
বেগানা পুরুষ কোনদিন দেখেছেন। এমনও অনেক সাহাবী ছিল
যাদের দাস দাসী ছিলকাফের,ইহুদী কিংবা খ্রীষ্টান যারা সব
সময় পরিবারের সাথে উঠা বসা করতে হততারপরেও তাদের
পর্দার এতটুও কমতি হতনা। এর একটাই কারণ তাদের ঈমান মজবুত
ছিলএবং তাদের ভিতরে আল্লাহর ভয়,জাহান্নামের ভয়
সর্বদা বিরাজ করিত। হযরত আলী (রাঃ) বলেন,একবার আমি ও
ফাতেমা রাসুল (সঃ) এর সমীপে হাযির
হয়েদেখতে পাইলাম,তিনি অত্যন্ত ব্যকুল হয়ে কাঁদছেন।
আমি নিবেদন করিলাম,ইয়ারাসুলুল্লাহ! আপনার তরে আমার
মাতা পিতার জীবন উৎসর্গ হোক! আপনি কাঁদতেছেন কেন? রাসুল
(সঃ) বলিলেন,ওহে আলী! মেরাজের রাতে আমি আমার উম্মতের
মহিলাদের বিভিন্ন ধরনের শাস্তি পাইতে দেখিয়াছি,সেই
কঠিন শাস্তি কথা স্মরন করে কাঁদিতেছি। আমি দেখেছি,এক
মহিলাকে তার চুলের সাহায্যে লটকিয়ে রাখা হয়েছে। তার
মাথার মস্তক টগবগ করে ফুটতেছে। আর এক
মহিলাকে দেখিয়াছি,তারজিহবা টানিয়া প্রলম্বিত করে তার
সাহায্যে তাকে লটকাইয়া রাখা হয়েছে এবং তার গলার তপ্ত
পানি ঢালা হইতেছে। আর এক মহিলাকে দেখেছি. তার দু’পাদু-
স্তনের সাথে এবং উভয় হাত কপালের চুলের
সাথে বাঁধিয়া লটকাইয়া রাখা হয়েছে। আর এক
মহিলাকে দেখিয়াছি,তাকে স্তনে বাঁধিয়া লটকাইয়া রাখা হয়েছে।
আর এক মহিলাকে দেখিয়াছি, তার মাথা শূকুরের মাথার
ন্যায়,তার শরীর গাধার দেহের ন্যায় এবং তাকে সহস্র
প্রকারের আযাব দেয়া হচ্ছে। আর এক
মহিলাকে দেখেছি,সে কুকুরের মতন গঠন প্রাপ্ত হয়েছে,আগুন তার
মুখ দিয়া ঢুকিয়া গুহ্যদ্বার পথে বাহির হইতেছে। ফেরেস্তাগন
তার মাথায় লোহার মুগুর দিয়া পিটাইতেছে”। হযরত
ফাতেমা (রাঃ) বলিলেন,আমার পরম প্রিয় আব্বাজান
তারা এমনকিঅন্যায় করেছিল যে তাদেরকে এই ধরনের
শাস্তি দেওয়া হইতেছে? হুজুর(সঃ)বলিলেন,ওহে আমার কন্যা!
যাকে চুল দিয়ে বাঁধিয়া লটকায়া রাখা হয়েছে,সে নিজের
মাথার চুল বেগানা পুরুষের সামনে ঢেকে রাখতো না। যাকে তার
জিহবার সাহায্যে লটকাইয়া রাথা হয়েছে,সে তার
স্বামীকে তিক্ত কথা দিয়ে দুঃখ দিত।
যাকে স্তনে বাঁধিয়া লটকায়া রাখা হয়েছে,সে তার স্বামীর
বিছানায় অশ্লীলতায় রত হত। অর্থাৎসে ছিল ব্যভিচারিনী। আর
যার উভয় পা দুই স্তনের সাথে এবং উভয় হাত কপালের চুলের
সাথে বাঁধিয়া লটকাইয়া রাখা হয়েছে,সে যৌন মিলন ও স্রাব
জনিত নাপাকীহতে পাক হতো না এবং নামায নিয়া ঠাট্টা-
মস্কারা করতো। যার মাথা শূকুরের ন্যায় এবং শরীরের গঠন
গাধার মত,সে চোগলখোর ও অসত্যবাদী ছিল। আর কুকুরের
আকৃতি ধারন কারিনী, যার বাহ্যদ্বার পথে আগুন প্রবেশ
করতেছে,সে ছিল ঈর্ষাপরায়ণ ও দানের খোটা দান কারী। তাই
প্রত্যেক নারীরই উচিৎ এই সমস্ত নেক্কার জনক কাজ
হইতে নিজেকে দুরে রাখা এবং আল্লাহর আযাব
হতে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখা।
নারীর কন্ঠস্বরঃ আল্লাহ পবিত্র কুরআনে ইরশাদ
করেছেন,হে নবী পত্নীগন! তোমরা অন্য নারীদের মতন নয়।
যদি তোমরা আল্লাহকে ভয় কর তবে পর পুরুষের সাথে কোমল
সুরে বা নরমসুরে এবং আকর্ষণীয় ভঙ্গীতে কথা বলবে না।
যাতে সেই ব্যক্তি কু-বাসনা করতে নাপারে,যার
অন্তরে ব্যাধি রয়েছে। তোমরা সঙ্গত কথা বার্তা বলিবে।
(আলআহযাব-৩২)। এই আয়াতে যদিও শুধু নবী পত্নিগনকে উদ্দেশ্য
করে বলা হয়েছে কিন্তু এর নির্দেশ সমগ্র মুসলমান নারীদের
জন্য,কুরআন সমস্ত মানব জাতীর জন্যই জীবন বিধান। আর
নবী পত্নিগনই হল সকল নারীদের জন্য প্রকৃত আর্দশ
এবং উনাদেরকে যেই সব নারী অনুসরন করিবে তাদের জীবন ধন্য
হবে। তাদের জন্যইআল্লাহর জান্নাতের সুসংবাদ। এই আয়াত
থেকে পরিস্কারভাবে বুঝা যায় পর পুরুষের সাথে নরম ভাষায়
কথা বলা যাবেনা। কারণ মহিলাদের কন্ঠ স্বরও হলো ফেতনা।
নরমসুরে কথা বলিলে যেই সব পুরুষের সাথে শয়তান আছর
করে আছে তাদের মনে কুবাসনা জন্ম নিতে পারে এবং পাপ
কাজে জরাইয়া জাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। আর শয়তান মানুষের
প্রকাশ্য শত্রু। আরেকটা কথা মনে রাখা দরকার নরম সুরের
যে কথা নাবলতে বলা হয়েছে তাও পর্দার ভিতর হতে।
বিনা পর্দায়তো কোন অবস্থায়ই কথা বলা যাবেনা।
সুরা নুরে আরো ইরশাদ হয়েছে,“এবং তারা যেন তাদের গোপন
সৈন্দর্য প্রকাশ করার জন্য জোরে পদচারনা না করে- (সুরা নুর—
৩১)। নারীরা এমন ভাবে চলা উচিৎ নয় যার চলার শব্দ অন্য
পুরূষ শুনিয়া থাকে। বিষেশ করে,যারা পায়ের অলংকার পরে।
এমনকিহাতের চুরি বা যেই কোন অলংকার পরিয়া উহাদের
দ্বারা কোন শব্দ সৃষ্টি করা জায়েজ নাই। কারন নারীর
অলংকারের রিনিঝিনি আওয়াজও পুরূষের মনে আকর্ষনের
সৃষ্টি করে থাকে। এই জন্যই পবিত্র কুরআনে নারীগনকে অলংকার
বাজাইয়া পুরূষগনকে সজাগ করতে নিষেধ করা হয়েছে। এমন সব
আচরন হইতে নারী-পুরুষ উভয়কেইসাবধান হয়ে চলার নির্দেশ
উক্ত আয়াতে দেওয়া হয়েছে। অনেক আলেমগন বলিয়াছেন,
নারীদের কাপড়ও এমন স্থানে শুকাইতে দেওয়া উচিত নয়
যাতে অন্য পুরুষের চোখ পরে। সোজা কথা সব বিষয়েই তাকওয়া ও
পরহেজগারীর সহিত চলতে হবে। এখন চিন্তা করা উচিৎ
যে,যেখানে নারীর সামান্য গহনার আওয়াজও পর
পুরুষশুনা জায়েজ নাই সেখানে নারীর কন্ঠ কিভাবে অন্য
বেগানা পুরুষ শুনতেপারবে। যেই কারনে মহিলাদের আযান-
ইকামত নিষিদ্ধ এমনকি কোন মহিলার জন্য নামাযের ইমাম
হওয়াও জায়েজ নাই। বর্তমানে আমাদের আধুনিক
মেয়েরা কি করে বেরায় তা একটু দেখা যাক। তারা বিভিন্ন
সুরে গান করে পরপুরুষে মন রাঙ্গাইয়া থাকে। তারা গান
শিখে একজন পুরুষের নিকট আবার শুনায়ও অন্য পুরুষকে।
আজতো মিডিয়ার কারনে সমস্ত পৃথিবীর মানুষ এই সমস্ত গান
শুনে এবং মনতৃপ্তি লাভ করে। এমনকি তাদের চালচলনে বুঝাযায়
না তারা কোন মুসলমানের ঘরের সন্তান (নাউজু বিল্লাহ)।
ইহা আল্লাহ তায়ালার আদেশের সম্পুর্ন বিপরিত। আর যেই সমস্ত
অভিবাক বৃন্দ তাদের মেয়েদেরকে এই সবেনিয়া যাইতেছেন
তা ইসলামের পথ নয়া নিশ্চিত জাহান্নামের পথ। এই পথ
হইতে সবাইকে তওবা করে ফিরে আসতে হবে। যারা এইসব
পথে গিয়েছে তারা কেহ সুখীহতে পারেনাই, কারণ আল্লাহর
বিরুদ্ধাচরন করে সুখী হওয়া যায়না। তাই আমাদের আধুনিক ভাই
বোনদের অনুরোধ করতেছি,আপনারা নারীদের সঠিক ধর্মিয়
শিক্ষা দানকরে তাদেরকে পর্দায় রাখুন। ইহা শুধু আপনাদের
জন্য নিরাপদ ব্যবস্থাই নয়তৃপ্তিকরও বটে। আর ইহাতেই আল্লাহর
সন্তুষ্টি অর্জন করা সম্ভব হবে।
নারীর ঘরে অবস্থান এবং বাহীরে যাতায়াতঃ- স্ত্রীলোকদের
জন্য বিনা কারনে পুরুষের গতিবিধি স্থানে বাহির
হওয়াহারাম। ফেতনার নিশ্চিত আশংকার
স্থলে সুগন্ধি মাখাইয়া কিংবা সাজ-সজ্জা করে বাহির
হওয়া কবিরা গুনাহ। আল্লাহ পবিত্র কুরআনে আরো ইরশাদ
করেন,“তোমরা জিনাতো দুরের কথা জিনার ধারে কাছেও
যাইবে না। (বনী ঈসরাইল-৩২)। এখন জিনাতো বুঝা যায় কিন্তু
নিকটে যাওয়া কি জিনিস তা বুঝিতে হবে। এক
নাম্বারে আসে বিনা পরদায় থাকা। তারপর বেগানা পুরুষের
সাথে মেলামেশা,পর পুরুষের দিকে দৃষ্টিদেওয়া,খারাপ
ফটো দেখা,খারাপ কথা বার্তা বলা,টিবি-বিসিআর-
সিনেমা দেখা,গানশুনা ইত্যাদি। এই সমস্ত কারণগুলোর
কারণে মানুষ জিনার দিকে ধাবিত হয়। অতএব এইসমস্ত কাজ
হইতে আমাদের সবাইকে বাঁচিয়া থাকা জরুরী। হযরত
আয়শা ছিদ্দিকা (রাঃ)হইতে বর্নিত, রাসুলুল্লাহ(সঃ)
বলিয়াছেন,(মেরাজ রাতে) আমাকে জাহন্নাম দেখানোহয় আর
সেখানের অধিকাংশই দেখি নারী-(বোখারী)।
মহিলারা জাহান্নামে বেশী যাওয়ারকারন
হিসাবে বলা হয়েছে তারা আল্লাহ,রাসুল(সঃ) ও স্বামীর
বশ্যতা কম করেএবং “তাবাররুজ”করে। তাবাররুজ
হইতেছে নারী বাহিরে (জনসমক্ষে) চলাচলের
সময়সর্বাপেক্ষা সুন্দর পোশাক পরা,বেশী করে সাজগোজ
করা এবং রূপলাবন্য দেখাইয়ামানুষজনকে আকৃষ্ট করা। এক কথায়
পর্দাহীন অবস্থহায় বেহায়াপনার সাথে চলাচলকরাই
হচ্ছে তাবাররুজ। এই জন্য নবী (সঃ)
বলিয়াছেন,মহিলারা হইলো গুপ্তধন,সেযখন গৃহের বাহিরে যায়
শয়তান তখন তাকে প্রশংসাবাদ জানায়- (কিতাবুলকাবায়ের-
ইমাম আযযাহাবী(রঃ)। মহান আল্লাহর দৃষ্টিতে মহিলাগন
ততক্ষন পর্যন্তসর্বাপেক্ষা বেশী সম্মানীতা থাকেন,যতক্ষন
পর্যন্ত তারা ঘরে অবস্থানকরেন।
হাদিসে আরো বলা হয়েছে,“স্ত্রীলোক গৃহে থেকে এবাদত ও
স্বামীর অনুগতথাকার মাধ্যমে যতটা আল্লাহর পাকের
রেজামন্দি (সন্তুষ্টি) অর্জন
করতে পারেততটা অন্যকোনমতে পারেনা-(কিতাবুল কাবায়ের-
ইমাম আযযাহাবী(রঃ))। হযরতাআনাস(রাঃ) হইতে বর্নিত
যে,কতক স্ত্রীলোক হজরত(সঃ) এর নিকট আগমন করিলেন
এবংবলিলেন,হে আল্লাহর রাসুল(সঃ)! পুরুষগন আল্লাহর
পথে জেহাদ করে আমাদের চেয়েঅধিক নেকী ও সম্মান অর্জন
করেছেন। আমরা কি কাজ করিলে তাহদের সমকক্ষ হতেপারিব।
নবী(সঃ) বলিলেন,তোমাদের ঘরই তোমাদের জেহাদ অর্থাৎ
নিজের ঘরকে দেখাশুনা করা,সন্তানদেরকে ইসলামে রিতিমত
পালন করা এবং ইসলামের শিক্ষায় শিক্ষিতকরা।
পবিত্র ক্বোরআনে আরো ইরশাদ
হয়েছে,“তোমরা গৃহাভ্যন্তরে অবস্থানকরিবে। জাহিলিয়াত
যুগের নারীদের মতন ঠাক ঠমক
করে নিজেদেরকে প্রদর্শনকরিবেনা-(সুরা আহযাব-৩৩)।
নবী করীম(সঃ) এর আগের যুগকে জাহেলিয়াত যুগ বামুর্খ যুগ
বলা হয়। সেই যুগের মহিলারা বিনা পরদায় চলাফেরা করিতো,
জিনার মতনঘৃন্য কাজে লিপ্ত থাকিতো। তখন এমন
অবস্থা ছিল,তারা পিতার তালাক প্রাপ্তাস্ত্রী কিংবা পিতার
মৃত্যুর পর তার পরিতেক্তা স্ত্রীকে বিয়ে করতে কোনকুন্ঠা বোধ
করিত না অর্থাৎ সৎমাকে বিয়ে করিত। এছাড়াও অনেক
অপকর্মহত। কিন্তু এই সমস্ত কাজগুলো ছিল সমাজের
কাছে এবং আল্লাহর কাছে ঘৃনিত। তাইআল্লাহ মুসলমান
নারীদেরকে হুশিয়ার করে দিয়া বলিয়াছেন,তোমরাও
জাহেলিয়াত যুগের মহিলাদের মতন চলিওনা। কিন্তু বর্তমান
যুগের মহিলারাও জাহেলিয়াত যুগের মহিলাদের মতন সাজ
সজ্জা আরম্ভ করেছে বরং এক ধাপ বেশীই অগ্রসর হয়েগিয়াছেন।
বর্তমান নারী সমাজ র্নিজল্যভাবে বেপরদায় চলাফেরা আরম্ভ
করেছে। এমনকি জিনা-
ব্যভিচারে সারা দুনিয়া ভরিয়া গিয়াছে। সাজ
সজ্জা মহিলাদে রজন্য নাজায়েজ নয়। কিন্তু সেটা কি রকম
আল্লাহ পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেছেন,“নারীগন যেন তাদের
সৌন্দর্য তাদের স্বামীদের ব্যতিত অন্য কারো নিকট প্রকাশ
না করে-(সুরা-নুর)। মনে রাখতে হবে কোন
মহিলাকে যদি আল্লাহ সৌন্দর্য দিয়া থাকেন তা আল্লাহর
একটা বিরাট নেয়ামত। আর এই সৌন্দর্য আল্লাহ দান করেন শুধু
মাত্র তার স্বামীর জন্যই অন্য কারো জন্য নয়। কিন্তু
আমরা কিদেখি স্বামীর
সামনে সাজিয়া গুজিয়া না থাকিয়া বরং কেউ যদি কোথায়
বেরাইতে বাহির হয় তখন সাজার ধুম পরিয়া যায়। ভাল
করে না সাজিলে মনে হয় বেরানোর মজাই থাকেনা। অর্থাৎ
আল্লাহ যাহা আদেশ করেছেন আমরা তার
উল্টাটি করতে বেশী ভালবাসি, মনে রাখতে হবে এই সমস্ত কাজ
হারাম এবং বহুত বড় পাপহয়। জাহান্নাম যে মানুষের কত
নিকটে এই সমস্ত অবস্থা হইতেই বুঝা যায়। অতএব সব বেপারেই
আমাদের সাবধান হওয়া উচিত। আমাদের নারী সমাজে এমনও
দেখা যায় যে, অনেক মহিলা খুব একটা নিজে ঘর হইতে বাহির
হন না। কিন্তু অন্য পুরুষ ঘরের ভিতরে প্রবেশ করাইতেও
কৃপনতা করেন না। তারা অন্য পুরুষকে নিজের ঘরে স্থান
করে দিয়া আড্ডা জমায় আনন্দ ফূর্তি করে। এক সাথে গান
শুনে,টেলিভিশন দেখে,ভিডিও দেখে। এটা হচ্ছে চোখ
বুঝে অন্ধের অভিনয় করার মতন। মনে রাখতে হবে নিজে যেমন
বাহিরে গিয়ে পর পুরুষের সঙ্গে দেখা দেওয়া জায়েজ নাই
তেমনি ঘরের ভিতরও কোন পুরুষের সাথে দেখা দেওয়া জায়েজ
নাই। পাপ সর্বাবস্থায়ই সমান।
জরুরী অবস্থায় নারীর বাহিরে গমনঃ- পিতা-মাতার সহিত
সাক্ষাত করা,তাদের সেবা করতে স্ত্রীকে পর্দার সহিত
যাইতে দেওয়া স্বামীর জন্য বৈধ। কিন্তু বেগানা পুরুষের
সেবা করতে তাকে যাইতে অবশ্যই দিবেনা। বরং এইরূপ অবস্থায়
স্বামী অনুমতি দিলেও স্ত্রীর জন্য যাওয়াবৈধ নয়।
যদি স্বামী অনুমতি দেয় এবং স্ত্রী যায় তা হইলে উভয়ই
গুনাহগার হবে। স্ত্রীলোকদের সাধারন গোসল করার
স্থানে গোসল করতে যাইতে দেওয়া ঠিকনয়। স্বামীর
বিনা অনুমতিতে কিছু শিক্ষা করতে যাওয়াও স্ত্রীর জন্য
বৈধনয়। যদি স্ত্রীর এমন কোন শরিয়তের মাসলার প্রয়োজন হয়
যাহা না হইলে কাজ চলেনা। তা যদি স্বামীর
জানা থাকে তবে স্বামীর কাছ হইতে শিক্ষা গ্রহন করে নিবে।
আর যদি স্বামীর জানা না থাকে তবে স্বামী কোন আলেমের
নিকট হতে জানি য়াস্ত্রীকে বলে দিবে। আর যদি স্বামী ইহাও
না করতে পারে তাহলে স্ত্রী-স্বামীর অনুমতি নিয়া কোন
আলেমের নিকট হতে উক্ত মাসয়ালা জানিয়া আসতেপারবে।
বর্তমান জমানায় মেয়েলোকদের এমন কোন অসুবিধা পরিতে প্রায়
দেখা যায় নাযে তাকে বাহিরে গিয়ে কিংবা আলেম সাহেবের
বাড়ী গিয়ে মাসইয়ালা শিক্ষাগ্রহন করে আসিতে হবে। বর্তমান
যুগে নানা কিতাবাদি প্রকাশ হয়েছে,উহারসাহায্যে যে কোন
মাসলা ঘরে বসিয়া শিক্ষা করা যায়। তারপর নিজের মহররম
গনের মাধ্যমে আলেম সাহেবের নিকট
হতে মাসয়ালা জানা যায়। যদি একান্তই এই
সমস্তব্যবস্থা না থাকে তা হলে আলেম সাহেবের স্ত্রীর
মাধ্যমে প্রয়োজনীয় মাসয়ালা আলেম সাহেব
হতে জানিয়া লওয়া যাইতে পারে। নবী (সঃ) এর যুগেও
এইব্যবস্থা ছিল, মহিলারা উম্মুল মুমেনীনদের মাধ্যমে প্রশ্ন
করে সকল প্রয়োজনীয় মাসয়ালা জানিয়া নিতেন। তাইত
দেখা যায় মহিলা সম্পর্কীয় বেশীর ভাগ মাসয়ালাই হযরত
আয়শা (রাঃ) এর রেওয়াতে বর্নিত হয়েছে। অবশ্য যদি এই সমস্ত
কোনসুযোগ সুবিধা না থাকে তবে পরদার সহিত কোন আলেমের
নিকট হতে প্রয়োজনীয় মাসয়ালা শিক্ষা গ্রহণ করার মাঝে কোন
দোশ নাই। তারপরও যে যে স্থানে স্বামীর অনুমতি ব্যতিত
যাওয়া যায়, সেখানেও বিবেচনাকরতে হবে যে, স্বামীর নিষেধ
করার মাঝে কোন যুক্তি সংগত কারন আছে কিনা। বর্তমানে সঠিক
আলেম পাওয়া বরই মুশকিল। হয়তো ব্যক্তি বিশেষের চরিত্র
সম্বন্ধে সন্দেহের কারনে স্বামী তার নিকট যাইতে নিশেধ
করতেছেন। স্ত্রীর পক্ষে ইহা বিবেচনা করে কাজ করতে হবে।
মনে রাখতে হবে স্বামী অবশ্যইস্ত্রী অপেক্ষা বাহিরের খবর
বেশী রাখে। ঠিক তেমনি স্বামী যদি পিতা মাতার
বাড়িতে যাইতে শরিয়ত সম্মত ভাবে নিশেধ করে,
সে ক্ষেত্রে স্ত্রীর জেদ ধরা এবংঅধিকারের দোহাই
দেওয়া সঙ্গত হবেনা। মনে রাখতে হবে শরিয়ত সম্মত
ভাবেস্বামীর আনুগত্য করাও স্ত্রীর জন্য আবশ্যক।
বোরখা প্রথা ও অবাধ চলাফেরাঃ- বর্তমান যুগে এইরূপ
ফতোয়া প্রদান করা হইতেছে, মহিলারা বোরকা পরিধান
করে স্বাধীন ভাবে চলাফেরা করতে পারিবে এবং ইহাতে তার
পরদা হয়ে যায়। কিন্তু বোরকা পরিধান করেও মেয়েলোকের
অবাধ চলাফেরায় পর্দার উদ্দেশ্য যে র্ব্যথহয়ে যায় তা সহজেই
স্বীকার করতে হয়। স্ত্রীলোকদের অঙ্গ ঢাকিয়া রাখলেইপর্দার
সব কার্য সমাধা হয় না। বরং স্ত্রীলোকদের কন্ঠস্বর,শরীরের
গঠন, চলার ভঙ্গী ইত্যাদি সবই পর্দার আওতায় পরে এবং এই
সবকিছুরও পর্দা করা ফরজ। হযরত আয়শা (রাঃ)
হইতে বর্নিত,হেজাব বা পর্দার হুকুম নাজিল হবার পর উম্মুল
মুমেনীন হযরত সওদা (রাঃ) একদিন বাহির হলেন।
তিনি স্থুলুকার ছিলেন,লোক তাকে সহজেই চিনিতে পারতেন।
পথে হযরত ওমর (রাঃ) তাঁকে দেখিয়া বললেন,“হেসওদা,
আপনি আমার নিকট গোপন নহেন,
আচ্ছা দেখি আপনি কিভাবে বাহির হন”। হযরত সওদা (রাঃ) এই
কথা শুনে নিরুত্তরে ফিরিয়া আসলেন। হযরত (সঃ) তখন
ঘরে রাত্রিরখানা গ্রহণ করেছেন। তার হাতে একখানা হাড়
ছিল। এমন সময় হযরত সওদা (রাঃ) আসিয়া তাঁহার নিকট এই
ঘটনা বর্ননা করলেন। হযরত(সঃ) এর নিকট আল্লাহর
তরফহতে অহি আসিল। তিনি(সঃ) বলিলেন,হে সওদা! আল্লাহ
তোমাদিগকে অত্যাবশ্যক প্রয়োজনেই মাত্র বাহিরে যাওয়ার
হুকুম দিয়াছেন। শুধু শুধু বাহিরে ঘোরা পেরার জন্য নয়। এই
ঘটনা দ্বারা দৃঢ়ভাবে প্রতিয়মান হইতেছে যে,হযরত (সঃ) এর
পবিত্র স্ত্রীগনও বিনা কারনে পরদা করেও বাহিরে যাওয়ার
অনুমতি পায়নাই। সুতরাং বর্তমানে বোরখা পরিয়াও সর্বত্র
যাতায়াত করা কোন রকমেই জায়েজ হতে পারেনা। এই প্রসঙ্গেসু
বিখ্যাত আলেম হযরত আল্লামা আশরাফ আলী থানবী (রঃ) এর
উক্তি বর্ননা করতেছি,তিনি তাঁর
কিতাবে লিখেছেন,“শরীয়তে পরদার উদ্দেশ্য পুর্ন
পবিত্রতা রক্ষার ব্যবস্তা করা। সুতরাং যে সমস্ত কার্য্যে এই
পবিত্রতায় কোন দাগ লাগেউহাই শরীয়তে নিষেধ চাই
মহিলারা খোলাখুলি ভাবে চলুক বা বোরখা পরিধান করেচলূক।
স্ত্রীলোকেরা যদি বোরকা পরিধান করেও অবাধে পুরুষের
মধ্যে চলাফেরাকরে,কথাবার্তা বলে তবে তার অবস্থা অর্থাৎ
সে বৃদ্ধা কি যুবতি, সুন্দরী কিকুৎসিৎ তা পুরুষের পক্ষে অনুমান
করে লওয়া মোটেও কঠিন কার্য নই। অগত্যাযদি তা সম্ভব নাও
হয়,তবু বোরখার আচ্ছাদনে আবৃতা রমনীটি কেমন তা জানার জন্য
পুরুষের মধ্যে অবশ্যই কৌতুহল সৃষ্টি হবে। আর এই যদি অবস্থা হয়
তাহলে এখানে পুরুষের আন্তরিকতা নষ্ট হওয়ার কারন উপস্থিত
হবে।”
আবার যে স্ত্রীলোকটি বোরকা পরিধান করে পথে বাহির
হবে সে তার বোরকার ছিদ্র
দিয়া পুরুষকে স্বচ্ছন্দে দেখিয়া লইবে,কেননা নারীর মধ্যেও
কাম-ভাব বিরাজমান। সেও সুন্দর ও মন মতন পুরুষ দেখলে তার
মনে কুবাসনা সৃষ্টিহবে। সুতরাং দেখা যাইতেছে যে,নারী ও
পুরুষ উভয়ই যখন পরস্পর সম্বন্ধে বেশসজাগ,তখন
বোরকা কি কাজে আসতে পারে। এই জন্য বোরকা পরিধান করেও
মহিলাদেরপর পুরুষের সহিত
অবাধে চলাফেরা করতে দেওয়া পর্দার উদ্দেশ্যের বিপরিত।
এইজন্য শরীয়তে পুরুষগনকে বেগানা স্ত্রীলোকদের
প্রতি এবং স্ত্রীলোকদিগকে বেগানপুরুষদের
প্রতি দৃষ্টি করতে নিষেধ করেছে। তা ছাড়াও আরও দেখা যাই
যে,হযরত নবী করিম(সঃ),সাহাবায়ে কেরাম
কিংবা সলফে সালেহিনদের যুগে কেহইএইরূপ কোন নজির
রাখিয়া যান নাই
যে,তাঁহারা বোরকা পরাইয়া বিবিগনকে সঙ্গে নিয়ে পুরুষের
সমাজে শুধু শুধু বাহির হয়েছেন এবং বক্তৃতা দেওয়া দিয়েছেন
কিংবা বন্ধু বান্ধবের সহিত সাক্ষাত করেছেন।
বরং তারা বিবিগনকে কঠোর ভাবেপর্দা করতে আদেশ দিয়াছেন।
ইহা দ্বারা পরিস্কার ভাবে প্রমানিত
হইতেছে যে,বর্তমানে পর্দা যে অবস্থায়
আসিয়া দাড়াইয়াছে,এই সমন্ধে স্বয়ং নবী (সঃ),
সাহাবায়ে কেরাম,তাবেয়ী, মোজতাহেদ আলেমগন কেহই এই
বিষয়ে কোন দলিল প্রমাণ রেখে যান নাই।
বর্তমানে বোরকা পরিয়াপর্দার নাম করে যত্রতত্র যাতায়াত
কোন প্রকারেই পর্দার হুকুমের আওতায় পরেনা। অবশ্যই
তা পর্দার পরিস্কার খেলাফ। কাজেই বর্তমান পত্নীদের খেয়াল
ওআচরনকে শরীয়তী পরদা বলিয়া স্বীকার করে লওয়া চলেনা।
অপরের গৃহে প্রবেশঃ- আল্লাহ পবিত্র ক্বোরানে ইরশাদ
করেন,“হে মুমিনগন তোমরা নিজেদের ঘর ব্যাতিত অন্যের
ঘরে প্রবেশ করিওনা, যে পর্যন্ত না আলাপ পরিচয় হয় এবং গৃহ
বাসীদেরকে সালাম না কর। এইটাই তোমাদের জন্য উত্তম
যাতে তোমরা স্মরন রাখ। যদি তোমরা গৃহেকাউকে না পাও,
তবে অনুমতি না পাওয়া পর্যন্ত সেইখানে প্রবেশ করিওনা।
যদি তোমাদেরকে বলা হয় ফিরিয়া যাও তবে ফিরিয়া যাইবে।
এতে তোমাদের জন্য অনেক
পবিত্রতা রহিয়াছে এবং তোমরা যাহা কিছুই কর আল্লাহ তা ভাল
ভাবেই জানেন। –(সুরা নুর–২৭-২৮)। হযরত উম্মে আয়াস (রাঃ)
বলেন,আমরা চার জন মহিলা প্রায়ই হযরত আয়শা (রাঃ) এর
ঘরে যাইতাম। আমরা প্রথমে তাঁর কাছ হইতে অনুমতি নিতাম
এবং অনুমতি পাইলে তারপর ঘরে প্রবেশ করিতাম। -
(ইবনে কাসীর।) অন্য হাদীসে আছে,আতা ইবনে ইয়াসার (রাঃ)
হইতে বর্নিত,জনৈক ব্যক্তি রাসুল(সঃ)এর কাছে জিজ্ঞেস
করিলো,আমি আমার মাতার কাছে যাওয়ার সময়ওকি অনুমতিচাইব?
হুজুর (সঃ) বলিলেন হ্যাঁ,অনুমতি চাও। সে বলিল,ইয়া রাসুলুল্লাহ
আমিতো আমার মায়ের ঘরেই থাকি। রাসুল (সঃ) বলিলেন, তবু
অনুমতি না নিয়ে ঘরে প্রবেশ করিবে না। লোকটি আবার বলিল
ইয়া রাসুলুল্লাহ আমিতো সর্বদা আমার মায়ের কাছেই থাকি।
হুজুর (সঃ) বললেন,তবুও অনুমতি না নিয়ে ঘরে প্রবেশ করিবেনা।
তুমি কিতোমার মাকে উলঙ্গ অবস্থায় দেখিতে চাও?সে বলিল
না। হুজুর(সঃ) বলিলেন তাইঅনুমতি চাওয়া আবশ্যক। কেননা,
গৃহে কোন প্রয়োজনে তার অপ্রকাশযোগ্য কোন
অঙ্গখোলা থাকিতে পারে-(আল মুয়াত্তা ও মাযহারী।) কেই
যদি কারো ঘরে প্রবেশ করতে চায় তা হইলে প্রথমে দরজার
বাহির হইতেঅনুমতি নিতে হবে তিনবার।
যদি অনুমতি পাওয়া যায় তা হইলে ঘরে প্রবেশ করতে পারিবে,
না হয় ফিরিয়া যাইতে হবে। এইটা এই জন্য যে ঘরের
বাসিন্দারা যদি বেপরদায় থাকে তা হলে তারা যেন
পরদা করে নিতে পারেএবং এই আদেশ  শুধু পুরুষদের জন্য নয়
মহিলারাও কোন ঘরে প্রবেশ করিবার আগে অনুমতি নিতে হবে।
এখানে জানিয়া রাখা ভাল যে স্বামী ঘরে না থাকিলে কোন
বেগানা পুরুষকেঘরে প্রবেশ করার
অনুমতি দেওয়া যাইবেনা এবং অপরিচিত কাউকেও ঘরে প্রবেশের
অনুমতি দেওয়া ঠিক নয়। আর যদি ঘরের ভিতর হইতে কোন জবাব
না আসে কিংবা অনুমতিনা দেওয়া হয়
তা হইলে ফিরিয়া আসিতে হবে। ঘরে প্রবেশ করা যাইবেনা।
ঘরে প্রবেশ করিবার বা অনুমতি নেওয়ার সুন্নত ত্বরীকা হলো।
প্রথমে বাহির হতেসালাম করতে হবে,এরপর নিজের নাম
নিয়া বলিতে হবে অমুকে আপনার
সাথে সাক্ষাতবা দেখা করতে চায়, এই ভাবে তিন বার বলার পর
সারা না পাওয়া গেলে ফিরিয়াযাইতে হবে। হযরত আবু
উমামা (রাঃ) হইতে বর্নিত,হযরত (সঃ)
বলিয়াছেন,যে ব্যক্তি আমাকে আল্লাহর রাসুল বলিয়া স্বীকার
করে,সে যেন অপরের
গৃহে বিনা অনুমতিতে এবং বিনাসালামে প্রবেশ না করে।
যে ব্যক্তি অন্যের গৃহে দৃষ্টি নিক্ষেপ করিল, সে যেনগৃহেই
প্রবেশ করিল। –(তিবরানী।)
নবী (সঃ) বলেছেন, যদি কোন ব্যক্তি বিনা অনুমতিতে তোমার
গৃহের মধ্যে ঝুঁকিদিয়া দেখে,তবে তুমি প্রস্তর খন্ড দ্বারা তার
চক্ষু নষ্ট করিলে তোমার কোনগুনাহ হবে না। (বোখারী ও
মুসলীম)। আকাবা ইবনে আমের হইতে বর্নিত, হযরত (সঃ)
বলেছেন, “সাবধান! তোমরা পরস্ত্রীর সহিত সাক্ষাৎ করিও
না”। এক ব্যক্তি বলিলেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ! স্বামীর ভ্রাতাগন
সম্বন্ধে কি হুকুম? হযরত(সঃ) বলিলেন,“স্বামীর ভ্রাতাগন
অর্থাৎ দেবরগনতো হল মৃত্যু সমতুল্য”। –(বোখারী ও মুসলীম)।
হযরত জাবের (রাঃ) হইতে বর্নিত, রাসুল(সঃ) বলিয়াছেন,
যে স্ত্রী লোকের স্বামীবাড়ী নাই, তাদের নিকট যাইওনা।
কেননা শয়তান তোমাদের প্রত্যেকের শিরায় শিরায়রক্তের ন্যায়
চলাচল করে থাকে। আমরা আরজ করিলাম ইয়া রাসুলুল্লাহ
আপনারও কিতদ্রূপ? হযরত(সঃ) বলিলেন,হাঁ আমার মাঝেও ঐরূপ
শয়তান চলাচল করিত। কিন্তু আল্লাহ তায়ালা আমাকে সাহায্য
করেছেন, শয়তান আমার নিকট মুসলমান হয়েগিয়াছে। –
(তিরমিজি)। হুজুর (সঃ) বলিয়াছেন, যখন কোন ব্যক্তি কোন পর
নারীর সহিত নির্জনে সাক্ষাৎ করে,নিশ্চয় তাদের
মধ্যে শয়তান তৃতীয় ব্যক্তিরূপে উপসি’ত হয়।–(তিরমিজি)। হযরত
আবু ইমামা হইতে বর্নিত, রাসুল (সঃ) বলেছেনন, সাবধান!
তোমরা অন্য স্ত্রীলোকের সহিত নির্জনে একত্রিত হইওনা।
যাহার হাতে আমার প্রান,সেই আল্লাহর শপথ করে বলিতেছি,
যদি কোন ব্যক্তি ভিন্ন স্ত্রীলোকের সহিত নির্জন
স্থানে দেখা করে, সেখানে উভয়ের মধ্যে শয়তান প্রবেশ করে।–
(তিবরানী)। উপরে বর্নিত কুরআনের আয়াত এবং হাদীস
দ্বারা ইহাই প্রতিয়মান হয় যে,কোনব্যক্তিই কারো ঘরের
মধ্যে বিনা অনুমতিতে প্রবেশ করতে পারিবেনা। হোক
সেবেগানা কিংবা মহররম। এমনকি আপন সন্তানও মায়ের
ঘরে প্রবেশের সময় অনুমতি নেওয়াআবশ্যক। আর কোন
বেগানা মহিলার ঘরে কোন বেগানা পুরূষের প্রবেশ
করারতো কোন অনুমতিই নেই। বিশেষ করে যাদের
স্বামীরা বাড়ীতে থাকেনা। অতএব আমরা নিজেরাই
চিন্তা করে দেখি আমরা কতটুকু আল্লাহর
আইনকে মানিয়া চলিতেছি। বর্তমান যুগে অনুমতিতো দুরে থাকুক
বরং আমাদের সমাজে এমনো মহিলা আছে যারা নিজেই
বেগানা পুরুষকে নিমন্ত্রন করে আনিয়া বিভিন্ন গল্প গুজবে মত্ত
হয়ে পরে। আর পুরুষরাও আবেগে আট খানা হয়ে পর নারীর
ঘরে ঢুকিয়া যায় অনায়াসে। ইহা স্পষ্ট শরিয়তের পরিপসি’ ও
হারাম।
নারীর নামাযের জামাতঃ- মহিলারা নামাজের
জামাতে যোগদান করিবে কিনা এই নিয়া বর্তমানে অনেক কথাই
শুনাযাচ্ছে। তাই এই সম্বন্ধে কিছু আলোকপাত করা আমি প্রয়োজন
মনে করতেছি। নবী করিম (সঃ) এর যুগে মহিলারা নামাযের
জামাতে যোগদান করতেন। সেই সময় বর্তমান যুগের মতন এত
ফেতনা ছিল না। মহিলারা নামায পরে যতক্ষন ঘরে পৌছিতেন
ততক্ষন পর্যন্ত সাহাবায়ে কেরামগন মসজিদে বসে থাকতেন।
তারপরেও কিছু মুনাফিক নামাযে পিছনের
কাতারে দাড়াইয়া মহিলাদের দিকে উঁকি যুকিদিতেন। বর্তমান
যুগে সাহাবায়ে কেরামগনের মতন এই রকম ইমান কোন
মুসলমানের আছেকি না তা আমাদের জানা নাই।
বরং এইটা জানা আছে বর্তমানে ইমানদার থেকেমুনাফেকের
সংখ্যাই বেশী। নবী করিম (সঃ) বলিয়াছেন,“আমার যুগ র্সব
শ্রেষ্টযুগ”। তাইতো সেই যুগে মহিলারা জামাতে নামায
পড়তে কোন অসুবিধা হয় নাই। সেইযুগের নিরাপত্তার
সমিকরনটা ছিল একশতে একশ। কারো সাহস হয়নাই
পথে ঘাটে কোন মহিলাকে উত্যক্ত করতে এমনকি কোন মহিলার
দিকে চোখ তুলিয়া তাকাবে এমন বীর পুরুষও সে যুগে ছিলনা।
তারপরেও আমরা কি দেখিতে পাই,মহিলাদের জামাতে নামায
পড়া নিয়ে নবী করিম (সঃ) এর উক্তি, “একদিন একজন
মহিলা সাহাবীয়া এসে নবী (সঃ) এর কাছে আরজ করল
হে আল্লাহর রাসুল (সঃ) আমার ইচছা হয় আমি আপনার
মসজিদে এসেআপনার সাথে জামাতে নামায পড়ি। নবী করিম
(সঃ) বলেন হে মহিলা তুমি শুনেরাখ,আমার এই মসজিদে নামায
পড়া হইতে উত্তম হচ্ছে তুমি তোমার ঘড়ে নামায পড়। আরঘড়
হইতে উত্তম হচ্ছে তুমি ঘরের এক
কোনে আলাদা কুঠরিতে নিরিবিলি নামাযপরা”। এই হাদীস
দ্বারা ইহাই প্রমান হয়না যে,জামাতে নামায পড়ার
চেয়ে ঘরেনামায পড়াই অধিক সওয়াবের কাজ। অথচ কথা হচ্ছিল
মসজিদে নববী নিয়ে যেখানে নামাযপড়া মসজিদুল হারাম
ব্যতিত পৃথিবীর সকল মসজিদ হইতে এক হাজার গুন
বেশীসওয়াবের ছিল অথচ নবী (সঃ) বললেন, এই মসজিদ হইতেও
উত্তম তুমি তোমার ঘরে নামায কিন্তু কোন
নারী যদি মসজিদে নামায পড়তে চায় বা যায়
তবে তাকে বাঁধা দেয়াযাবেনা তবে পরিবেশ পরিস্থিতির
বিবেচনায়ই মেয়েদের মসজিদে গিয়ে নামায
আদায়করা উচিত,মনে রাখতে হবে মহিলাদের মসজিদে নামায
পড়া ফরজ বা ওয়াজীব না।
ছোট মেয়েদের পরদাঃ-ছোটবালিকাদের
অবস্থাভেদে পর্দা করা ওয়াজিব হয়ে যায়। অভিভাবকগন
সে বিষয়ে উদাসিনতা করলে এর পরিনাম খুবই খারাপ হয়।
বর্তমানে নাবালিকার উপরে যেসবপাশবিক কান্ড
ঘটিতেছে তা কি এই পরদাহীনতার পরিনাম নয়? যাহা রিতি মত
সংবাদপত্র পাঠ করেন তারা অবশ্যই এই সমস্ত খবর জানেন।
আমাদের দেশে এমনও ঘটনা ঘটছে যে, মাত্র পাঁচ বৎসরের
বালিকা সন্তান প্রসব করেছে। প্রতিনিয়ত অবুঝ
বালিকারা ধর্ষন হইতেছে। এই সব দেখিয়াও আমাদের সমাজের
হুস হইতেছে না। তাইআমাদের উচিত ছো্ট ছোট
মেয়েদেরকে অল্পবয়স হইতেই
পর্দা করা শিখানো এবং ইসলামী নিয়ম কানুন শিখানো। আর
তাতেই রয়েছে প্রকৃত কল্যান। যদি একেবারে শিশু হয়,তবে দর্শন
ও স্পর্শ করা জায়েজ হবে। যখন হইতে কিছু কিছু জ্ঞান বুদ্ধির
বিকাশ হয় এবং পৃথিবীর হালচাল কিছু কিছু বুঝিয়া উঠে,তখন
হতেই তাদেরকে সাবধান করতে হবে। তাদেরকে গায়রে মহররম
ব্যক্তি হতে দুরে সরাইয়া রাখতে হবে। ছেলে বন্ধুদের
সাথে খেলতে দেয়া যাইবেনা। তাদের সাথে আজে বাজে কৌতুক
করা যাইবে না। যেমন নানা দাদা কিংবা বিভিন্ন ধরনের
ভাইয়েরা যেইসমস্ত
বাজে ঠাট্রা মস্কারি করে তা করা যাইবে না। তাদেরকে শরম
শিখাইতেহবে। ছোট সময় প্রয়োজনীয়
শিক্ষা না পাইলে পরিনামে বেপরোয়া হয়ে উঠিবে।
মনে রাখবেন ছোট ছোট বালিকারা যদিও শরিয়তের হুকুমের
অন্তর্ভুক্ত নয় কিন্তুযারা তাদেরকে দেখতেছে তাদের
মাঝে অনেকেই বেগানা এবং শরিয়তের অন্তর্ভুক্ত। বর্তমান
ফেতনার জামানায় এই সব কিছুই বাঁচিয়া চলতে হবে। গান-
বাজনা,নাটক
সিনেমা ইত্যাদি হইতে তাদেরকে দুরে রাখতে হবে। দশম
বর্ষীয়বালককে প্রহার করে নামাজ পড়াইবার হুকুম আছে।
মেয়েদের পর্দার বেলায় ইহা আরো বেশী জরুরী মনে করা উচিত।
এবং বালিকা পুর্ন বয়স্কার কাছা কাছি পৌছিলেই তাকেপুর্ন
বয়স্কা মনে করিবে এবং সেই ভাবে চালাইবে।
নারী শিক্ষা:- নারীদেরজন্য যেমন পর্দার
ব্যবস্থা করতে হবে তেমনি তাদের সুশিক্ষায় শিক্ষায় শিক্ষিত
করেও তুলিতে হবে। হযরত নবী করিম (সঃ) বলিয়াছেন, প্রত্যেক
নর-নারীর উপড় বিদ্যা অর্জন করা ফরজ। তিনি (সঃ) শুধু মাত্র
ছেলেদের কথা বলেন নাই। বরং বলিয়াছেন
ছেলে মেয়ে উভয়কেই শিক্ষা নিতে হবে। কিন্তু দুনিয়াতে বহু
রকমেরবিদ্যা আছে এই সকল বিদ্যা একত্রে কোন মানুষের
পক্ষে অর্জন করা সম্ভবনয়, কিন্তু বিদ্যা অর্জন করা ফরজ।
তা হইলে বুঝতে হবে হযরত নবী করিম (সঃ) কোন বিদ্যার
প্রতি এত খানি গুরুত্ব আরপ করেছেন। এই কথা চিরন্তন সত্য
যে প্রথমে আমাদেরকে মুসলমান হতে হবে। ইসলামের
আদর্শশিক্ষা গ্রহন করতে হবে। ইহকাল ও পরকাল সম্পর্কে অবগত
হতে হবে। কুরআন ওহাদীসের আদেশ নিষেধ
গুলি মানিয়া চলতে হবে। যাহাকে এক কথায়
বলা হয়‘ইলমেদ্বীন’। ইলমে দ্বীন হইতেছে যথা-ইমান আনার পর
অর্থাৎ ইসলামে দাখেল হওয়ার পর,আল্লাহকে চেনা,নামায
পরা,রোজা থাকা,হজ্জ্ব করা,যাকাত দেওয়া,সত্য কথা বলাও
মিথ্যা পরিহার করা,হারাম হতে বাঁচিয়া থাকা,হালাল
অন্বেষন করা,নারীপুরুষ পরদায় থাকা,ব্যভিচার না করা,কোন
জুলুম না করা ইত্যাদি,অর্থাৎ মোটামোটি ভাবে আল্লাহ ও
রাসুলের আদেশ নিশেধ
গুলি মানিয়া চলা এবং তদঅনুযায়ী আমলকরতে যাহা শিক্ষা করা আবশ্যক
তাই হইল ফরজ ইলম। দুনিয়াতে আরো বৈধ ইলম
আছেযাহা শিক্ষা করা শরিয়তে অনুমোদন করে কিন্তু তা ফরজ
নয়। যেমন কেহ ব্যবসায়ী হলে তাকে ব্যবসা সম্পর্কীত
বিদ্যা অর্জন করা আবশ্যক তেমনি কেহ কোন
হালালচাকরী করিলে তাকে সেই বিষয়ে বিদ্যা অর্জন
করা আবশ্যক। সুতরাং দেখাযাইতেছে যে,শরিয়তের
শিক্ষা অর্থাৎ দ্বীনি বিদ্যা অর্জন করা ফরজ এবং অন্যান্য বৈধ
বিদ্যা আবশ্যক অনুযায়ী শিক্ষা অর্জন করতে হয়। এখন
স্ত্রীলোকের কথায় আসা যাক। মানব সৃষ্টির প্রথম ইতিহাসের
প্রতি দৃষ্টিদেয়া যাক। হযরত আদম (আঃ) কে সৃষ্টি করিবার পর
তিনি পরম সুখের বেহেস্তের মাঝেওনিঃসঙ্গ অবস্থায় আনন্দহীন
কাটাইতেছেন। আল্লাহ তায়ালা তাঁহাকে সুখি করার রজন্য আদম
(আঃ) এর বাম পাজরের অস্তি দ্বারা হযরত হাওয়া (আঃ)
কে সৃষ্টি করেতার শান্তির সহচরী বানাইলেন। আদম(আঃ) এর
নিঃসঙ্গতা দুর করিবার জন্য হাওয়া (আঃ) কে সৃষ্টি করে আদম
(আঃ) এর সঙ্গী বানাইলেন এবং একাকীত্বের অবসান ঘটাইলেন।
পবিত্র কুরআন মজীদেও আল্লাহ তায়ালা নারী সৃষ্টির রহস্য
ব্যক্তকরেছেন এই ভাবে,“আমার অস্থিত্ব সমুহের নিদর্শনের
মধ্যে ইহাও একটি নিদর্শনযে,আমি তোমাদের
জাতি হতে তোমাদের জন্য
স্ত্রীগনকে সৃষ্টি করেছি এবং তোমাদের মাঝে ভালবাসা ও
অনুগ্রহ ঢালিয়া দিয়াছি”-(আন-নিসা)। এই আয়াত দ্বারাআল্লাহ
তায়ালা নারীকে পুরুষের শান্তির আধার বলিয়া উল্লেখ
করেছেন। এখন দেখাযাক এই
শান্তি পরিবারে কিভাবে সৃষ্টি হতে পারে। নারী প্রকৃত
নিয়মেই পুরুষের অধীনা,পুরুষ চিরদিনই তার ভরন পোষন
যোগাইতেছে,তাকে আশ্রয় দিয়াছে। আর স্ত্রীলোকেরা গৃহ-কর্ম
রক্ষা করে চলিতেছে। সন্তান প্রতিপালন করে আসিতেছে।
তাকে বাহিরের কঠোর কর্মক্ষেত্রে যাইতে হয় না। কারন
আল্লাহ নারীকে কঠোর কর্মের জন্য সৃষ্টি করেন্নাই।
নারীরদৈহিক গঠন ও নানান প্রাকৃতিক অসুবিধার কারনেই সেই
সব হইতে সে মুক্তি পাইয়াছে। চাকুরি করা তার
পেশা নয়,অর্থোপার্জন করা তার কাজ নয়। সমাজে যদিওদুই
একটি ব্যতিত্রুম পাওয়া যায় তা দিয়ে সার্বিক
ভাবে বিবেচনা করা যায়না। তা শুধু বিভিন্ন অবস্থার
পরিপেক্ষিতেই হয়ে থাকে। সুতরাং নারীদেরজন্য
দ্বীনি শিক্ষা ও গৃহকর্মের প্রয়োজনীয় শিক্ষা ব্যতিত পুরুষের
ন্যায়বিভিন্ন অর্থকরী বিদ্যা অর্জন করার প্রয়োজন দেখা যায়
না। কারন তাদেরগারস্থ জীবনে উহার আবশ্যকতা নাই। সেই
জন্য নারীদেরকে অবশ্যই দ্বীনি শিক্ষাদেওয়ার
সাথে সাথে সাংসারিক জীবন সম্বন্ধেও জ্ঞান দেওয়া আবশ্যক।
কিন্তু অতিবদুঃখের বিষয় এই যে,আমাদের মুসলমান
সমাজে স্ত্রী শিক্ষার অবস্থা অতিবশোচনীয়। অধিকাংশ
পরিবারেই স্ত্রী শিক্ষার প্রতি গুরুত্ব নাই এবং তার ব্যবস্থাও
নাই। কিছু কিছু পরিবার আছে যারা শুধু মাত্র
মেয়েদেরকে কুরআন চলিত ভাবে পরানো পর্যন্ত সীমাবদ্ধ
থাকে,দ্বীনি শিক্ষার প্রতি তাদের কোনগুরুত্বই নাই। আর
বেশীর ভাগ পরিবারই মেয়েদের আধুনিক শিক্ষার
প্রতি ঝুকিয়া পরিয়াছে। উচ্চ শিক্ষার নাম করে যেই সব
মেয়ারা একাকী বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়িতে যায় তাদের
লাগামহীন চলা ফেরা এবং নানান অঘটনের জন্ম দেয়া কি ইহাই
প্রমাণ করেনা যে তার পরিনাম কত ভয়ানক। আর তাই ধর্মের
প্রতিতাদের অনিহা। ইসলামের আইন কানুন মানার ধার-
ধারেনা তারা। ইহা জাতীয় জীবনেরপক্ষে মারাত্বক অশুভ
লক্ষণ। তবে পরিবেশ অনুকুলে থাকিলে এবং সফরের দুরুত্বের
মাঝে থাকিলে মেয়েদের আধুনিকশিক্ষা বা উচ্চ
শিক্ষা নিতে কলেজ বা ইউনিভার্সিটিতে পড়িতে কোন
সমস্যা নাই। পরিশেষে বলিতে চাই আজ মুসলীম সমাজকে প্রকৃত
শিক্ষা অর্থাৎ দ্বীনি শিক্ষার প্রতি গুরুত্ব দিতে হবে। কারণ
শিক্ষা ব্যবস্থার দোশত্রুটির কারনে আমাদের সবার ধর্মময়
জীবন নষ্ট হইতেছে আর এই জন্য সর্বপ্রথমে পিতা-
মাতাকে আল্লাহর নিকট জবাবদিহি করতে হবে। যার
কপালে হেদায়েত আছে,যার ভিতরে আল্লাহ ও জাহান্নামের ভয়
আছে,তার জন্য কুরআনের একটা আয়াত কিংবা একটা হাদিসই
যথেষ্টহয়ে যায়। আর যার কপালে হেদায়েত নেই,তার জন্য
একটা বৃহত আকারের ইতিহাস রচনাকরে দিলেও কোন লাভ নাই।
আমাদের সবাইকে মনে রাখতে হবে,আমাদের
মৃত্যুহবে এবং কেয়ামতের দিন আল্লাহর দরবারে উঠতে হবে,তখন
সেখানে কাহারো কোনওজর চলবেনা। দোয়া করি আল্লাহ আমাদের
সবাইকে কুরআন-হাদীস পড়িবার ও বুঝিবারএবং সেই
অনুযায়ী আমল করিবার তৈফিক দিন। আল্লাহ আমাদের
সবাইকে হেফাজত ওহেদায়েত দান করুন -আমীন।

No comments:

Post a Comment

আপনার মন্তব্য দিন