Pages

যৌবন ধরে রাখার ছোট্ট ‘গোপন ফর্মুলা’!

30-yeas-090
বয়স ৩০ বা ৩৫? পার্লার যাওয়ার সময় পান না?সারাদিনে খুব কাজের চাপ?
কি করা যায় তাই ভাবছেন তো?
না, সময় না পেলে বাইরে গিয়ে রূপচর্চা করতে হবে না। আবার নামি দামি ক্রিম কিনে অর্থ ব্যয় এর প্রয়োজন নেই। আপনার রান্নাঘরের অতি পরিচিত সামান্য কিছু উপাদান দিয়েই নিজেকে সুন্দর করে রাখতে পারবেন। ত্বকের জেল্লাকে ধরে রাখতে এই উপাদানটি বেশ কার্যকারী। এটি একটি ফেস প্যাক তৈরির সিক্রেট ফর্মুলা। নিয়মিত এই ফেস প্যাক ব্যবহারে দীর্ঘদিন অটুট থাকবে আপনার চেহারার যৌবন।
অ্যান্টি-এইজিং ফেস প্যাকের উপাদানঃ
২ টেবিল চামচ মিহি চালের গুঁড়ো (চাইলে ময়দা ব্যবহার করতে পারেন)
১ চা চামচের ৩ ভাগের ১ ভাগ তাজা হলুদ গুঁড়ো বা বাটা
৫ চা চামচ কাঁচা দুধ
গোলাপ জল ১ চা চামচ
শসার রস ১ চা চামচ
মধু ১ চা চামচ
মিশ্রণটি বানানোর পদ্ধতিঃ
প্রথমে একটি বাটিতে চালের গুঁড়ো বা ময়দা এবং হলুদ গুঁড়ো ভালো করে মিশিয়ে নিন।
এরপর এতে শসার রস ও দুধ দিয়ে পেস্টের মত তৈরি করুন।
মুখ ভালো করে ধুয়ে নিন। এরপর এই মিশ্রণটি ভেজা মুখে আলতো ঘষে লাগান।
পুরোপুরি লাগানো হয়ে গেলে ১০ মিনিট রেখে দিন।
১০ মিনিট পর আঙুলের মাথা দিয়ে হালকা ঘষে তুলে নিন। এরপর মুখে মধু মাখিয়ে রাখুন।
১০ মিনিট পর হাল্কা গরম জল দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন। মুখ মুছে নিয়ে প্রাকৃতিক গোলাপ জল লাগিয়ে নিন আলতো করে।
সপ্তাহে ৩/৪ বার এই ফেস প্যাকটি ব্যবহার করুন।

প্রেম-ভালোবাসার অজানা ৫টি তথ্য


প্রেম-ভালোবাসার_48382
 প্রেম-ভালোবাসার নিবেদন সব সময়ই প্রাণপ্রাচুর্যে ভরপুর। আর এনিয়ে গবেষনারও কোন শেষ নেই। এমনই এক গবেষণা জানা গেল কিছুদিন আগেই যেখানে গবেষকরা মোট ৫টি বিষয়ের অবতারণা করেছেন।
গবেষকদের দাবি, প্রেম-ভালোবাসা সম্পর্কে এই ৫টি বিষয়ে কেউই অবগত নন। কাজেই অজানা তথ্যগুলো মানুষকে অবগত করাতেই তাদের এই গবেষনা।
এখন জেনে নিন সেই ৫ টি বিষয়:
১. ভালোবাসা কোনো ব্যক্তিগত আবেগ নয়
প্রেমের আবেগতাড়িত অনুভূতিকে কোনো ব্যক্তির ব্যক্তিগত ভাব বলে মনে করা উচিত নয়। গবেষণায় দেখা গেছে, যখন কারো প্রতি আপনি প্রেমের অনুভূতি অনুভব করেন, তখন একের কাছে অপরের প্রতিবিম্ব ফুটে ওঠে। দুজনের প্রতি দুজনের চোখাচোখি, প্রাণরসায়নের টানাপড়েন এমনকি স্নায়ুর মধ্যে মূর্ত হয়ে ওঠা আগুনের স্ফূলিঙ্গ এ প্রতিবিম্ব ফুটিয়ে তোলে। কাজেই ভালোবাসা হচ্ছে পারস্পরিক জৈবিক ঢেউ যা একযোগে দুজনের দেহ-মনে-প্রাণে বয়ে যায়।
২. মস্তিষ্ক এবং হৃদযন্ত্রের যোগাযোগকে নিরাপদ করে ভালোবাসা
অনেকে প্রায়ই বলেন, যে মানুষরা সামাজিক এবং সামাজিকতার নানা বিষয় দারুণ বোঝেন, তারা নাকি দীর্ঘজীবী হয়ে থাকেন। এমনটি কেনো হয় তা এখনো অজানা। নতুন গবেষণায় দেখা গেছে, এক দল মানুষকে যখন তাদের প্রতিদিনের জীবনে যার যার ভালোবাসার মুহুর্তগুলোকে অনুভব করতে বলা হয়, তখন দেখা গেছে তাদের ক্র্যানিয়াল নার্ভের জীবনকাল বেড়ে যায়। এই ক্র্যানিয়াল নার্ভ বা ভাগুস নার্ভ মস্তিষ্ক এবং হৃদযন্ত্রের মধ্যে সংযোগের মূল চাবিকাঠি।
৩. ভালোবাসার অনুভূতি নেতিবাচক কিছুর অবদমন নয়
যদি ভেবে থাকেন ভালোবাসা হচ্ছে দুজনের মধ্যে শুধুমাত্র সুখানুভূতির লেনদেন, তবে ভুল করছেন। দুজনের যন্ত্রণাকাতর অনুভব থেকেও ভালোবাসা বিচ্ছুরিত হয়। নেতিবাচক কোনো আবেগ দমিয়ে রাখাই প্রেম বা ভালোবাসার অনুভব নয়। বস্তুত, দুজনের গোটা মনমানসিকতাপ্রসূত নির্যাসের প্রতি পরস্পরের সহানুভূতি বা পরদুঃখকাতরতাই ভালোবাসার নামান্তর। একের প্রতি অপরের উদারতা এবং পারস্পরিক অনুভূতির সমন্বয়ে কাঠিন্যের বিগলনই ভালোবাসা।
৪. ভালোবাসা কখনোই বাধাগ্রস্ত নয়
আপনার বন্ধুমহল বা পরিবার বা অন্য কারো প্রতি ভালোবাসা জন্মালে তা মনের অতলে কখনোই বাধাগ্রস্ত হয় না। আপনার মনে যে ভালোবাসার অস্তিত্ব রয়েছে, তার আকার বৃদ্ধিতে আপনি মনের গভীর থেকে কখনোই বাধা পাবেন না। আপনার এ অনুভূতি বাধাহীনভাবে দেহ-মনে ছড়িয়ে পড়বে এবং তার গঠন সচল থাকবে যতক্ষণ পর্যন্ত আপনি নিরাপদ বোধ করবেন।
৫. ভালোবাসার প্রতি চিন্তাধারার পরিবর্তনে ধারণক্ষমতার পরিবর্তন ঘটবে
নিজের ব্যক্তিগত বা পেশাদার জীবনের নানা বিষয় নিয়ে যদি একান্তে কিছুক্ষণ চিন্তামগ্ন হতে পারেন, তবে দেখবেন অনেক বিষয়েই আপনার ধ্যান-ধারণার আকস্মিক পরিবর্তন আসতে পারে। ভালোবাসার মানুষের প্রতি প্রতিদিনই যদি কিছু সময় ব্যয় করেন, দেখবেন বহু জটিল ক্ষেত্রগুলো আচমকা নতুন সম্ভাবনার পথে ঘুরে যাবে। তখন ভালোবাসার সংজ্ঞা আপনার কাছে নতুন করে ধরা দেবে। কাজেই যাদের মনে জটিলতা রয়েছে, তারা আজই এ কাজের চর্চা শুরু করে দেন।

ঈদ ফ্যাশন ও রূপসজ্জা (প্রথম পর্ব-ঈদ পূর্ববর্তী রূপচর্চা)

এখন চলছে গরমকাল, গরমকালে আমাদের দেশে অনেক গরম পড়ে।( এজ ইফ অন্য দেশে শীত কালে গরম পরে থাকে) তাই এই সময়ে ত্বক আর চুলের প্রতি বিশেষ যত্ন নেয়া প্রয়োজন। আসুন জেনে নেই কিছু সহজ (!!!) টিপস যা আপনাকে এই গরমেও লাবণ্যময় থাকতে সাহায্য করবে।
প্রথমেই আসি ত্বকের যত্ন প্রসঙ্গে। আপনার ত্বক যদি তৈলাক্ত হয় তবে বাইরে থেকে এসে ঝটপট একটা মূলা (গরমের দিনে মূলা!!) বেটে রস মুখে লাগিয়ে রাখুন বিশ মিনিট। (বাইরে থেকে ক্লান্ত হয়ে ফিরে মূলা বাটার ধৈর্য না থাকলে আপনি সুন্দ্রী হবার যোগ্যতা রাখেন না)
আপনার ত্বক যদি শুষ্ক হয় তাহলে দুই চামচ আধা ভাঙ্গা চালের গুঁড়া, এক চামচ চিনি, চারটে লবঙ্গ, তিনটে এলাচ, দুটো দার চিনি, একটা তেজপাতা, আধা চামচ গোলাপ জল, এক চামচ বাদাম বাটা, এক কাপ দুধ আর খানিকটা কেওড়ার জল মিশিয়ে মুখে লাগান।
আপনার ত্বক যদি মিশ্র হয় তবে মুখের এক পাশে মূলার রস আর আরেক পাশে এই প্যাকটি লাগান। বিশ মিনিট পর পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন ( কোনও অবস্থাতেই কেরোসিন কিংবা তরকারির ঝোল দিয়ে মুখ ধুবেন না)।
চুল হল নারীর সৌন্দর্যের মূল নিয়ামক (মাথার চুলের কথা বলছি)
গরমে চুল পড়ে যাওয়া একটা কমন সমস্যা। এথেকে পরিত্রাণ পেতে দুই চামচ রসমালাই এর সাথে এক চামচ চা-পাতা আর গরমে খুব সহজলভ্য কাঁঠালের আঠা মিশিয়ে চুলের গোড়ায় গোড়ায় লাগান। এভাবে তিন ঘন্টা রাখুন চুল পড়া জীবনের তরে বন্ধ হবে।
মুখের ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে একটি ডাবের খোসা ছাড়িয়ে নিন। এর সাথে ডিটারজেন্ট পাউডার আর লেবুর রস মাখিয়ে আয়নার উপর ঘসুন সপ্তাহে দুইদিন। আরো ভাল ফলাফল পেতে আয়নার উপরে একটি এনার্জি সেভিং বাল্ব লাগান। এবার সেই আয়নায় দিনে চব্বিশবার করে মুখ দেখুন।
গরমে রোদে পোড়া দাগ থেকে রক্ষা পেতে ছাতা ব্যাবহার করুন। ছাতা একটি রূপচর্চার অত্যন্ত সাশ্রয়ী পদ্ধতি। কারন আপনি চাইলে যে ছাতাটি রোদের জন্য ব্যাবহার করবেন সেটি বৃষ্টির দিনেও ব্যাবহার করতে পারেন।
অফিসে বা কলেজে যেতে কি পোষাক পড়ছেন তাঁর উপর নির্ভর করবে আপনার সৌন্দর্য ও আরামের ব্যাপারটি। গরমে আপনি আপনার ইচ্ছামত শাড়ি, সালোয়ার কামিজ, ফতুয়া কিংবা গেঞ্জি- শার্ট- প্যান্ট পড়ে অফিসে যেতে পারেন। তবে কোনও অবস্থায়ই পর্দা কিংবা বালিশের কভার পরে আসবেন না। কাপড়ের ম্যাটেরিয়াল হতে পারে সুতি, সিল্ক, সিনথেটিক, জর্জেট, তসর কিংবা টিস্যু। নাইলন কিংবা রট আয়রনের কাপড় পড়া থেকে বিরত থাকুন।
এই গরমে আপনি এই টিপস গুলো মেনে চললে ছবিতে দেখানো মডেলের মত সুন্দরী হয়ে উঠবেন। তা আপনি এখন দেখতে যা ই হন না কেন।

ইসলামী ব্যাংকের ফাঁদ এবং আমাদের বোকা বনে যাওয়া


ইসলামে সুদকে হারাম ও ব্যবসাকে হালাল করা হয়েছে। খুব সহজ ভাষায় এবং সাদা-সিধে ভাবে ‘সুদ’ আর ‘ব্যবসা’ কে সংজ্ঞায়িত করা যাক।
সুদ হচ্ছে অলস টাকা নিজে সরাসরি কোনপ্রকার উৎপাদন বা ব্যবসায় বিনিয়োগ না করে অন্য কাউকে টাকা লগ্নির বিনিময়ে নির্দিষ্ট হারে মূল লগ্নির উপর যে অতিরিক্ত অংশ নেয়া হয়। আর ব্যবসা হচ্ছে মুনাফা অর্জনের লক্ষ্যে সরাসরি পন্যদ্রব্য ক্রয়-বিক্রয় বা উৎপাদন এ অর্থ বিনিয়োগ ও ঝুঁকি গ্রহণ করা।
প্রাক-ইসলাম সময়ে মহাজনী ব্যবসা সমাজে উৎপাদনহীনতা এবং আর্থ-সামাজিক বৈষম্য সৃষ্টিতে বড় ভূমিকা রাখতো। ধনীরা তাদের জমানো অর্থ কোনপ্রকার উৎপাদন বা ব্যবসায় বিনিয়োগের ঝামেলায় না গিয়ে তুলনামূলক দরিদ্র লোকদের মাঝে চড়া সুদে অর্থ লগ্নি করতো। সুদের হার এতই বেশি থাকত যে কয়েক মাসের মধ্যেই সুদে-আসলে লগ্নিকৃত অর্থ দ্বিগুণ-তিনগুণ হয়ে যেত। আর এই অর্থ ফেরৎ না দিতে পারলে ঋনগ্রহীতা এবং তার পরিবারের উপর নেমে আসতো অমানবিক নির্যাতন ও অত্যাচার।
ঠিক এই পরিস্থিতিতে ব্যবসাকে ভাবা হয়েছে উত্তম। কোন মহাজন যদি সুদের বিনিময়ে অর্থ লগ্নি না করে সরাসরি ব্যবসায় বিনিয়োগ করতো তা হলে অর্থনীতিতে সরাসরি এর অবদান থাকতো অনেক ইতিবাচক। নতুন নতুন পন্যউৎপাদন জীবনযাত্রার মানকে উন্নত করে ও কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয় ফলে সমাজ আর্থ-সামাজিক ভাবে উন্নততর হয়। যার ফলে অলস অর্থ সুদের বিনিময়ে লগ্নি না করে ব্যবসায় বিনিয়োগের জন্য ইসলামে বলা হয়েছে। ব্যবসায়কে করা হয়েছে হালাল আর সুদকে হারাম।
সেই অর্থে ‘সুদ’ নয় বরং ব্যাকিং (ইসলামীক এবং কনভেনশনাল উভয়ই) প্রথাটাই হারাম!! কিন্তু আসলেই কী তাই?
খুব গভীরে ভেবে দেখলে দেখা যায় এই আধুনিক বিশ্বে, সভ্যতা এখন অনেক চড়াই উতরাই পেরিয়ে যুৎসই অর্থনৈতিক সিস্টেমএ ভেতরে এসে দাঁড়িয়েছে। ব্যাংকঋণ বাদে বড় কোন ব্যবসায়ই এখন অসম্ভব ।
ইসলামী ব্যাংক কি আসলে ব্যবসা করে?
‘ব্যবসা’ বলতে সরাসরি কোন পন্যসমাগ্রী ক্রয়ের মাধ্যমে আর্থিক ঝুকি গ্রহণ করা এবং সেই পন্যসমগ্রী বিক্রয় (লাভ অথবা ক্ষতিতে) করাকে বুঝায়। কিন্তু ইসলামী ব্যাংকি সিস্টেমএ এই প্যাচটা অদ্ভুৎ। বলা হয় গ্রাহক অর্থাৎ যিনি ব্যবসা করেন তাকে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে ব্যবসায় পরিচালনার সাপেক্ষে অর্থপ্রদানই হচ্ছে বিনিয়োগ (কনভেনশনাল ব্যাংকিংয়ে যাকে বলা হয় ঋন)। খুব স্বাভাবিক একটা ব্যাপার হচ্ছে কোন ব্যবসার পূর্বনির্ধরিত কোন লাভের হার থাকতে পারেনা কারন ব্যবসায়ীক পণ্যের চাহিদা ও যোগান, বাজার পরিস্থিতি, আর্ন্তজাতিক মুদ্রা বিনিময় হার ইত্যাদির উপর নির্ভর করে ব্যবসায়র বেশি বা কম মুনাফা অর্জিত হয়, এমন কি লাভের জায়গায় ক্ষতিও হতে পারে। কিন্তু অদ্ভুতভাবে ইসলামী ব্যাংকিংএ এই মুনাফার হার পূর্বনির্ধারিত হয়ে থাকে এবং লাভের হার ( আমার জানা মতে ইসলামী ব্যাংকগুলোর সাধারণ ব্যবসায়ীক বিনিয়োগে পূর্বনির্ধারিত মুনাফার হার ১৫-১৮ শতাংশ) থাকলেও কোনপ্রকার ক্ষতির হার নির্ধারিত আছে বলে আমার জানা নেই!! অর্থাৎ ব্যাপারটা দাঁড়ায় ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে কেউ বিনিয়োগ করলে তার ব্যবাসায় কোনদিন কোন ক্ষতি হবে না, শতভাগ মুনাফা নিশ্চিত!! ।
এখানে খুব সহজ একটা প্রশ্ন মনের ভেতর জাগতে পারে যে ইসলামী ব্যাংকেও তো আর দশটা কনভেনশনাল ব্যাংকের মত দৈনন্দিন লেনদেন চলে তাহলে তারা ব্যবসাটা করে কখন ও কিভাবে! ব্যাংক কি সরাসরি তার বিনিয়োগ গ্রহীতা ( না কি ব্যবসায়ীক অংশীদার!) এর কোন ব্যাবসায়ীক ক্রয়কার্যে অংশগ্রহণ করে! তা না হলে আর্থিক ঝুঁকি (ব্যবসার অন্যতম উপাদান) গ্রহণ করে কিভাবে?
উত্তরগুলোও অদ্ভুত! না, ইসলামী ব্যাংকের কর্মচারী-কর্মকর্তা কেউই তাদের বিনিয়োগকৃত (ঋণগ্রহিতার) প্রতিষ্ঠানে সরাসরি উপস্থিত থেকে ব্যবসা করেন না (তাইলে ব্যাংকিং করবে কে?)। বিনিয়োগ গ্রহীতা যার কাছ থেকে পন্যসামগ্রী ক্রয় করেন অর্থৎ বিক্রেতাকে ব্যাংক সরাসরি মূল্যপরিশোধ করে। উদাহরণ হিসেবে ধরা যাক-মিঃ কাজল ঢাকার একজন ধান ব্যসায়ী। তিনি দূর-দূরান্তের বিভিন্ন জেলা যেমন-খুলনা, সাতক্ষীরা, যশোর এর প্রত্যন্ত গ্রামগঞ্জের হাটবাজার ও মোকাম থেকে ধান ক্রয় করে চাউল তৈরি করে বিক্রি করেন। তিনি যদি তার ব্যবসার প্রয়োজনে ইসলামী ব্যাংক থেকে বিনিয়োগ (ঋন) গ্রহন করতে চান তাহলে ইসলামী ব্যাংক তাকে একটা পূর্বনির্ধারিত মুনাফার হার বেঁধে দিবে। ধরা যাক ইসলামী ব্যাংকের বিনিয়োগ গ্রহণ পূর্ব্বক মিঃ কাজল খুলনার পাইকগাছা উপজেলার লস্কর ইউনিয়নের আলমতলা গ্রামের হাটে কৃষক রফিকের কাছ থেকে বিশ মণ ধান ক্রয় করলেন। হিসেবমতে ইসলামী ব্যাংক পাইকগাছা শাখা আলমতলার সেই প্রত্যন্ত গ্রামের প্রান্তিক চাষী রফিক মিয়াকে মূল্য পরিশোধ করার কথা। এখন প্রশ্ন-চাষী রফিক মিয়া কি ঢাকার ইসলামী ব্যাংকে যাবে তার বিক্রিত ধানের দাম আনতে নাকি ইসলামী ব্যাংক খুলনার পাইকগাছা উপজেলার লস্কর ইউনিয়নের আলমতলা গ্রামে যাবে ধানের দাম দিতে? বাস্তবে কোনটাই হয় না। মিঃ কাজলকে তার পরিচিত ইসলামী ব্যাংকে হিসাব আছে এমন কাউকে ক্রেতা সাজিয়ে অথবা নকল ভাউচার বানিয়ে ব্যাংক থেকে বিনিয়োগরে অর্থ উত্তোলন করতে হয়! ব্যাপারটা কী ব্যবসা হলো নাকি জালিয়াতী আর মিথ্যাচার?? আর পূর্ব নির্ধারিত লাভের হার এর ব্যাপারটা তো থাকছেই যার সাথে কনভেনশনাল ব্যাংকের সুদ এর কোন মৌলিক পার্থক্য নেই।
ইসলামী ব্যাংকিং এ কিছু গুরত্বপূর্ণ বিষয় লক্ষ্যনীয়-
১) মুনাফার হার সুদের হারের মতই পূর্বনিধারিত এবং এই হার প্রথাগত বা কনভেনশনাল ব্যাংকের সুদের হারের সাথে কম্পিটেটিভ রেঞ্জে নির্ধারিত হয়। যেমন- কনভেনশনাল ব্যাংকগুলোতে সুদের হার গড়ে ১৫% থেকে ১৮% এর মধ্যে। ইসলামী ব্যাংকিংএও মুনাফার হার ১৫% থেকে ১৮% এর মধ্যে!!
২) ইসলামী ব্যাংক দাবী করে যে তারা ব্যবসার ভিত্তিতে বিনিয়োগ করে কিন্তু প্রকৃতপক্ষে বিনিয়োগগ্রহীতা নিজেনিজেই ব্যবসা করেন, তার ক্রয়-বিক্রয়, উৎপাদন বা ব্যবসা পরিচালনার সাথে ব্যাংকের কেউ থাকেন না। বরং বিক্রেতাকে মূল্য পরিশোধের সময় অধিকাংশ ক্ষেত্রেই মিথ্যাচার ও জালিয়াতির আশ্রয় নিতে হয়।
৩) ব্যবসায় এর মৌলিক একটা শর্ত হচ্ছে ব্যবসায়ীক ক্ষতির ঝুঁকি গ্রহণ। এক্ষেত্রে ব্যাংক বিন্দুমাত্র ঝুঁকি গ্রহণ করে না বরং মুনাফার হার পূর্বেই বেঁধে দেয়। এমনকী বিনিয়োগ গ্রহীতা যদি ব্যবসায় ক্ষতির সম্মুখিন হয়ে গ্রহিত অর্থ ফেরৎ না দেন বা বিলম্ব করেন ব্যাংক তার কাছে গচ্ছিত বন্ধকী সম্পত্তি নিলামে বিক্রয় করে তার ব্যাবসায়ীক পার্টনারকে আরো ক্ষতির মুখে ছুড়ে ফেলে!
৪) যে কোন ব্যাংকের চাইতে ইসলামী ব্যাংকে আমানতের হার সব চাইতে কম। অন্য দশটা ব্যাকং আপনাকে ফিক্সড ডিপোজিটো উপর যদি ১২-১৩ শতাংশ ইন্টারেস্ট দেয় ইসলামী ব্যাংক দিবে মাত্র ৭-৮ শতাংশ কারন তারা জানে সাধারন মুসলিমগন সুদ থেকে ১০০হাত দূরে থাকার জন্য এবং বেহেস্তের টিকিট লাভের আশায় শুধু তাদের কাছেই অর্থ গচ্ছিত রাখবে, এক লক্ষটাকায় এক কোটি টাকা সুদ দিলেও কনভেনশনাল ব্যাংকে যাবে না। ফলে অন্য ব্যাকের স্প্রেড (ঋন ও আমানতের সুদের হারের পার্থক্য) যদি ৫ হয় ইসলামী ব্যাংকে সেটা হয় ৮-১০ শতাংশ। এর সম্মিলিত ফল হচ্ছে ২০১২ সালে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড এর বার্ষিক পরিচালন মুনাফা ১,৮০০ কোটি টাকা ( নিকটতম প্রতিদন্দ্বি প্রাইম ব্যাংক- মাত্র ১,০০০ কোটি টাকা!)।
অথচ আমরা সাধারন মুসলমানরা কখনো এ বিষয়গুলো ভেবে দেখিনা বরং মনে তাদের উপর অন্ধ বিশ্বাস রাখি যে তারা আমাদের জন্য বেহেস্তের টিকিট বিতরণের কন্ট্রাকটরি নিয়েছে। ইসলামী ব্যাংক সাধারন মুসলামানদের ধর্মীয় অনুভূতিকে পুজিঁ করে ব্যবসার নামে মিথ্যাচার আর জালিয়াতি করে গড়ে তুলেছে এক বিশাল অর্থের উৎস। আর আমরা অতি সাধারণ বিশ্বাসী মুসলামানরা প্রতিনিয়ত বোকা হচ্ছি আর আমাদের অজান্তেই পরিপুষ্ট করছি এ সকল ভন্ড ইসলামের নাম ভাজ্ঞানো প্রতারকদের।
দয়াকরে একটি বার বিষয়টিকে গভীর ভাবে ভেবে দেখুন।

প্রিয়তমা কেমন আছো-গো তুমি…? ভালো লাগা কিছু কথার একটি চিঠি!!

প্রিয়তমা কেমন আছো-গো তুমি?
কতদিন হলো দেখিনি তোমায়
কতদিন চিঠি লেখনি আমায়
তোমারি বিরহে, নিরবে বিজনে
স্মৃতি দ্বীপজ্বালি আমি।।
তুমি কি এখনো আগের মতই
হাসো আর গান গাও?
মনের নদীতে এখনো কি বাও
মূয়ুর কন্ঠী নাও।।
তোমায় ভেবে কাটে-যে আমার
কত রাত রজনী,
তুমি যে আমার কতই আপন
তুমি তা বোঝ-নি।।
প্রিয়তমা প্রিতি নিও-চিঠি লেখ
ইতি তোমার আমি।।  

ক্ষমা করে দিও

    
“আকাশ তোমার সময় হলে একটু ভেব
আমার কিছু প্রশ্নের জবাব দিয়ে যেও…।”

অর্থহীনের এই জনপ্রিয় গানটি শুনতে শুনতে যাচ্ছি।। মাগুরা থেকে খুলনা । বাস এ ঊঠার পর থেকেই এই গানটি শুধু শুনতে ইচ্ছে করছে । অনেক স্মৃতি বিজড়িত মাগুরা শহর কে ছেড়ে  যেতে হচ্ছে।  যেতে ইচ্ছে করছেনা কিন্তু দুইদিন পর থেকে খুলনা ইউনিভার্সিটি এর ক্লাস শুরু হবে । আস্তে আস্তে  মেঠ পথ ধরে এগিয়ে যাচ্ছে বাসটি। চলে যাবার সময়ে মনে হতে লাগলো মাগুরায় ফেলে আসা দিন গুলো। আমি যেন ফিরে গেলাম আমার হারানো আমিতে।
আমি তখন এস,এস,সি পাশ করে  মাগুরার সরকারি কলেজে ভর্তি হলাম। নিজেকে খুব স্বাধীন মনে হত। সারাদিন হই হুল্লর করে দিন কাটতো। কিন্তু আস্তে আস্তে জীবনটা কেমন একঘেয়েমি মনে হতে লাগলো। ধরা বাধা জীবনটা কে আর ভালো লাগছিল না।
তখনি আমার জীবনে আবির্ভাবতার। খুবিই অল্প সময়েই তার আবির্ভাব ।
কলেজ লাইফের প্রথমদিনেই আমি নিলাকে দেখি…। কিন্তু কখনো কথা বলা হয়নি। শুধু জানতাম মেয়েটা  পড়ালেখায় অনেক ভালো ছিল।
একা একা সময় কাটতো না।। রুম মেট দের দেখাদেখি  মিগে একটা আইডি খুললাম .। প্রথম দিনেই “মাগুরা কলেজ”নামে একটা চ্যাটরুমে ঢুকি। ঐ খানে আমার কলেজের সব বন্ধুদের খুজে পাই।। আর পাই নিলাকে।। এতদিন একসাথে পড়ে ছি কিন্তু কোন দিন ও কথা বলি নি আমরা…  মিগ থেকেই  আমাদের কথা বলা শুরু।
এদিকে টেস্ট পরিক্ষা চলে এসেছে … পড়ালেখায় আমি  ব্যস্ত.। মাঝে মাঝে নিলা আমাকে পড়ালেখায় হেল্প করতো।
ওর সাথে আমার  মোটামোটি একটা বন্ধুত্ব ছিল। সেটাকে ভালো বন্ধুত্তে নিয়ে যেতে চাই আমি।
আর সে জন্য  নতুন একটা সিম দিয়ে ও কে এসএমএস পাঠাইলাম।। ও রেস্পন্স দিল ভালভাবেই যা আমি আশা করিনি।। পরে জানতে পেরেছি ঐ দিন ওর মন অনেক খারাপ ছিল তাই আমাকে ঐ ভাবে গ্রহন করছে। এভাবে আমি অর সাথে অনেক সুন্দর বন্ধুত্ব করি… কিন্তু জানত না যে এসএমএস এর ছেলেটিই ওরই ক্লাসমেট ।

এর মাঝে আমাদের মধ্যে খুবি ভালো বোঝাপড়া হয়েগেল। আমি ওকে প্রায় রাতে ফোন  করে গান শুনাতাম । ও আমার গলার স্বর বুঝতে পারত না। অনেক কথা বলতাম… অনেক মজা করতাম।। কিন্তু একটি বার এর জন্য ও আমাকে চিনতে পারেনি…।

একদিন মনে হল আমরা অনেক গভিরে চলে  যাচ্ছি। আস্তে আস্তে আমারা পরনির্ভরশীল হয়ে যাচ্ছি। মনে হলে নিলাকে  এখনি জানান ভালো।
ওকে সবকিছু বললাম। এসএমএস এর ছেলেটি যে ওর ক্লাস ফ্রেন্ড এইটা ভেবে ও অনেক লজ্জা পেয়েছিল সেদিন। কিন্তু আমাকে ভুল বঝেনি। ও হয়তো এসএমএস এর ছেলেটিকে  পছন্দ করে ফেলছিল, েই জন্য ও আমাকে হয়তো ভুল বুঝিনি।

আমাদের বন্ধুত্ব যেন  আর বারতে লাগলো। জীবনের অনেকটি অংশ জুড়ে ছিল ও। কল্পনায় ওকে ভাবতাম আমি। একাকি নিঃসঙ্গ সময় গুলো  অপলকে কেটে যেত ওকে ভেবে। ওকে স্বপ্ন সাথি করে কল্পলকের ধ্রুবতারা ভেসে বেরাতাম আমি। আস্তে
আস্তে ওকে হৃদয়ের  গভীরে অনুভব করতাম। কিন্তু ওকে বলতে ভয় হত!!
সব ভয়কে জয় করে একদিন বলে ফেললাম আমি…। জানিনা ও কতটা অবাক হয়েছিল। কিছুক্ষণ  পরই ওর এসএমএস পেলাম। জানতে পারলাম ও আমাকে ভালবাসে।।

এভাবেই আমাদের কাছে আসা। এরপরের  সময়টা স্বপ্নের মত। এদিকে ওদিকে ঘুরা ঘুরি। ক্লাস,ব্যাচ ফাকি দিয়ে  বিভিন্ন কফিশপে। দেখা করা।ওকে রিকশাতে তুলে দেয়া, ওর  ভাললাগার গান শোনান, অপলকে তাকিয়ে থাকা ওর দিকে। আর কত কি…!!!
আমদের বিচরনে মুখরিত হয়ে উঠত চারপাশ। অনেক ভালবাসতাম ওকে।

এইচ এস সি এর পর ঢাকায় আসলাম  কোচিং এ। তখনও  ঘুরে বেরাতাম একসাথে।
কিন্তু হটাত কি  যেন হল। বাসা থেকে যেনে গেল। আপুর কাছে ধরা খেলাম। অনেক বকা দিল আমায়। মাগুরাতে আমার বাসায়  ফোনে জানান হল। আমাকে সবায় মিলে অনেক উত্যক্ত করতে লাগলো।
অনেক কেঁদেছিলাম…। সমস্ত রাগ গিয়ে নিলার উপরে ঝারলাম। বেচারি আমাকে অনেক  ভালোবাসতো। আমার আচমকা আক্রমণে ও অবাক হয়েছিল। ওর প্রতিটি অশ্রু জলের সাক্ষী আমি ছিলাম, আমি কিন্তু ওর সাথে শেয়ার করে সব কিছু  আগের মত করে  নিতে পারতাম। কিন্তু থার্ড পারসন রুপে একজন এসে আবার এলমেল করে দিল আমায়। আমাকে নিলা থেকে দূরে ঠেলে দিল।
আর বাবা মাকে অনেক ভয় পেতাম, ভাই বোন দের কেও… । আমার এই কথা গুল কাউ কে বলতে পারতাম না। নিলার সাথে কথা বলার চেস্টা করেও পারতাম না। পারিনি আমি, ভালবাসার সেই কাঙ্ক্ষিত  প্রতিশ্রুতি রাখতে। ও এদিন অনেক কেঁদেছিল। কিন্তু কই করবো আমি। আমার সাথে থাকলে যে আর কাদতে হত ওকে। তাই নিজেকে ওর থেকে সরিয়ে নিলাম কাপুরুষের মতই।

সেদিনের পর থেকে আর আমাদের ভালবাসা টেকেনি। আমি বারবার ফিরে আসতে চেয়েছি, কিন্তু পারিনি। আবার নিলাকে ভুলতেও পারিনি। ও আমাকে  অনেকটা ভালবাসত। কিন্তু আমি কিছুই করতে  পারিনি।

এই ছিল আমার জীবনের নিলা অধ্যায়। এখনে মাঝে মাঝে ওর সাথে দেখা হয়। কিন্তু ও নিজেকে অনেকটা গুছিয়ে নিয়েছে বলে আর কস্ট দিতে ইচ্ছে হয় না।

ক্ষমা করে দিয় আমাকে তুমি। কেও বুঝেনি আমাকে, জানিনা তুমি বুঝেছ কিনা,
                                   

খাটি প্রেমিক চিনে নিন

আই লাভ ইউ বা আমি তোমাকে ভালোবাসি এই

বাক্যটি উচ্চারণ করলেই যে ভালোবাসা হয়
এমনটা অনেকেই
বিশ্বাস করেন না। একাকিত্ব জীবনের অবসান
ঘটিয়ে যাকে নিয়ে জীবনের বাকি সময় কাটাবেন তার
সম্পর্কে আগেভাগেই একটা পরিষ্কার
ধারণা রাখা উচিৎ।
অর্থাৎ যার সাথে প্রেমের বন্ধনে বন্দি হবেন
সে মানুষটা আসলেই মানসিক বিকারগ্রস্ত
কী না এটা চিনে নেওয়া আপনার
জন্যে অতি প্রয়োজন।
নয়তো তার জন্য জীবনের সুন্দর দিনগুলো সুন্দর
না-ও
হয়ে ওঠতে পারে।
খাটি প্রেমিক চিনে নিতে টাইমস অব
ইন্ডিয়া চারটি লক্ষণের কথা জানিয়েছে।
কারো প্রেমে পড়ার
আগে লক্ষণগুলো মিলিয়ে নিতে পারেন।

১. সহমর্মিতার অভাব: আপনার সুখে-
দুঃখে যদি প্রতিনিয়তই
সমানভাবে আপনার প্রেমিক একাত্ম হতে না পারেন
এবং সব
সময় নিজেকে নিয়েই ব্যস্ত থাকেন, তাহলে বুঝবেন
আপনি একজন আত্মকেন্দ্রিক বিকারগ্রস্ত
মানুষের সঙ্গে প্রেম
করছেন। বিষয়টি বোঝা মাত্রই আপনাকে সতর্ক
হতে হবে।
২. বিবেকবর্জিত মানসিকতা: ধরুন,
আপনাকে কথা দিয়ে আপনার প্রেমিক
তা রাখতে পারেননি।
কিন্তু এর জন্য তার মধ্যে কোনো অনুশোচনা নেই।
আপনি কষ্ট
পেয়েছেন কী না, তা নিয়ে তাঁর মাথাব্যথাও নেই;
তিনি তার মতোই আছেন। তাহলে বুঝবেন আপনার
ব্যাপারে তিনি খুব একটা মনোযোগী নন।
৩. নির্মম রসিকতায় আসক্তি: সতর্কভাবে খেয়াল
করুন, অন্য
সবার বিরক্তির উদ্রেক করে কিংবা অন্যকে আহত
করে, এমন
কোনো নির্মম রসিকতা আপনার প্রেমিক করছেন
কি না।
যদি দেখেন, স্রেফ মজা করে আপনার প্রেমিক
কোনো নিরীহ
কাউকে পিটিয়ে কিংবা অবলা জীবজন্তুকে হত্যা বা মারধর
করে পৈশাচিক আনন্দ উপভোগ করছেন,
তাহলে নিশ্চিত
জানবেন আপনার প্রেমিক একজন বিকারগ্রস্ত
মানুষ।
৪. কারণে-অকারণে মিথ্যে বলা: আপনার প্রেমিক
বা হবু
প্রেমিক কারণে-অকারণে অবলীলায়
মিথ্যা বলে যাচ্ছেন,
তখনই ধরে নেবেন এই ছেলের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত
নিতে ভেবেচিন্তে দেখার বিষয় আছে। মনে রাখবেন,
নিয়মিত মিথ্যা বলা একজন
খ্যাপাটে বা বিকারগ্রস্ত
মানুষেরই লক্ষণ। আর আপনার
সঙ্গে মিথ্যে বলা মানে সম্পর্কের
সঙ্গে প্রতারণা করা।রফিক স্যার।

অবৈধ শারীরিক সম্পর্ক,কোন মানব,,,

--জুয়েল ও জেরিন
একি ভার্সিটিতে পড়ে ৷
সেই সুবাদে দুজনের পরিচয়, তার পর
ফোন নম্বর আদান প্রদান ৷ নিওমিত
কথা বলা চলছিলো তাদের ৷
তার পর ঘনিষ্ঠতা এক জন
আরেকজনকে প্রোপোজ ৷ তার পর
চুটিয়ে প্রেম করা ৷
--এই ভাবেই চলছিলো তাদের প্রেম,
কিন্তু এটা সবারই যানা যে বেশির
ভাগ ক্ষেত্রে , প্রেম ভালোবাসার
মধ্যে এটা সিমাবদ্ধ থাকে না ৷
★★অবৈধ শারীরিক সম্পর্ক,কোন মানব
জাতীর,
কোন ধর্মের
মধ্যে পড়ে বলতে পারেন ?★★
গল্প আকারেই শুরু করি .........
--জুয়েল ও জেরিন
একি ভার্সিটিতে পড়ে ৷
সেই সুবাদে দুজনের পরিচয়, তার পর
ফোন নম্বর আদান প্রদান ৷ নিওমিত
কথা বলা চলছিলো তাদের ৷
তার পর ঘনিষ্ঠতা এক জন
আরেকজনকে প্রোপোজ ৷ তার পর
চুটিয়ে প্রেম করা ৷
--এই ভাবেই চলছিলো তাদের প্রেম,
কিন্তু এটা সবারই যানা যে বেশির
ভাগ ক্ষেত্রে , প্রেম ভালোবাসার
মধ্যে এটা সিমাবদ্ধ থাকে না ৷
কারো না কারো মনে অবৈধ
আকাঙ্খা থেকেই যায় ৷ জুয়েল
বা জেরিন কেও না কেও তাদের
অবৈধ আকাঙ্খার কথা বলে ৷
হয়তো রাজি না হয়েও শেষ পর্যন্ত
রাজি হয়ে যায় ৷
--তার পর ফোন করে কোনো হোটেল
বুকিং দেয়া ৷
পরে হোটেলে গিয়ে দুজনে জড়িয়ে পড়া অবৈধ
উন্মত্ত খেলায় ৷
কিছুদিন পর জানা যায় জেরিন
প্রেগনেন্ট ৷
--লোকলজ্জার ভয়ে এ্যাবরশন
করাতে পারে না যেনে যাবে বলে ৷
তার পর বাচ্চা হবার পর সেই
বাচ্চাটির ঠায় হয়
কোনো ডাস্টবিন বা পচা,
ডোবা নালার মধ্যে৷
--কথা গুলো ভাবলেই শিউরে উঠতে হয়

কি ভয়ানক ?
১০ মিনিটের উত্তেজনাকর অবৈধ
খেলার পরিনতি কি?
১ টি শিশুর জীবন ? মানুষের জীবন
কি এতই সস্তা?
--হ্যা এই কাজটিই বাংলাদেশে এখন
অহরহ ঘটে চলেছে ৷ যে কাজটি এখন
আমাদের দেশে একধরনের
ব্যাধি হয়ে গ্যাছে ৷
প্রতিদিনের পেপার
পত্রিকা পড়লেই,
চোখের পানি বাঁধ, মানে না ৷
--কেও বা ফেলছে জীবন্ত কেও
বা ফেলছে মৃত ৷
একবার ভাবুন তো ৷
জীবন্ত হোক বা মৃত
একটা শিশুকে কুকুরে মুখে করে নিয়ে যাচ্ছে,
দৃশ্যটি যদি আপনার
সামনে ঘটে কেমন
লাগবে ? ভাবলেই শরীরের লোম
গুলো দাড়িয়ে যায় ৷
--যে দেশের মা বাবা তার
শন্তানকে অতি যত্নে লালন পালন
করেন
৷ সে দেশের ই মানুষ জীবন্ত
শিশুকে ডাস্টবনে ফেলে দিয়ে যাচ্ছে ৷
--আরে তুই ও তো কোনো বাবা মা এর
সন্তান ৷ একবার ভেবে দেখ ৷ তোর
বাবা মা যদি তোকে কোনো ডাস্টবিনে ফেলে যেতো,
তাহলে তুই আজ কোথায় থাকতি? আজ
সেই তুই ই নিজের
সন্তানকে ডাস্টবিনের
ময়লা আবর্জনার
মধ্যে ফেলে দিচ্ছিস ৷
তোদের তো জাহান্নামের সর্বনিম্ন
স্তরেও ঠায় হবে না৷
--এমন প্রেম
ভালবাসা যদি একটি জীবনের ধ্বংশ
হয়, তাহলে কি দরকার ভাই এমন
প্রেম
ভালোবাসার ?
--আজ
ফিলিস্তিনিতে ছোটো ছোটো নিষ্পাপ
শিশুর মৃত মুখ
দেখে আমরা কতটা না কষ্ট
পাচ্ছি ৷
ফিলিস্তিনিতে গিয়ে আমরা তাদের
বাঁচাতে পারবোনা ৷
কিন্তু নিজেদের দেশে কত শত শত
শিশুর
মৃত দেহ ডাস্টবিনে পাওয়া যাচ্ছে ৷
আমাদের কি এদের জন্য একটুও কষ্ট
হয় না?
আমরা কি এদের বাঁচানোর
চেষ্টা করতে পারিনা?
--আমরা যুব সমাজটায়
পারি দেশটাকে বদলাতে ৷
আসলে আমরা এতটাই খারাপ যে ,
যে জীনিসটা আমাদের
পক্ষে কোনোদিনও করা সম্ভব নয়
সেটার পিছনেই ছোটা ছুটি করি,
কিন্তু চোখের সামনের কাজটা সম্ভব
হওয়া সত্তেও
আমরা সেটা এড়িয়ে যায়?
★আজো নয়া দিগন্ত পত্রিকায় পড়লাম

চাঁদপুরে একটি আম গাছের নিচ
থেকে ২ মাস
বয়সি ফুটফুটে কন্যা শিশু
উদ্ধার ★
সেই মা বাবাক আমার শত ধিক্কার
--আসুন প্রতিজ্ঞা করি এমন অনৈতিক
কাজ
আর হতে দেবো না ৷ আমরা সবাই
যদি সচেতন হয় তাহলেই এমন
পরিস্থিতির মোকাবেলা করা সম্ভব

**দেশটাকে মায়া মমতার দেশ
হিসেবে গড়ে তুলি ৷
নিজ নিজ স্থান হতে নিষ্পাপ
শিশুদের
বাঁচানোর চেষ্টা করি ৷
লেখক: রিয়াজ। ♥♥♥
পর্ব ২
বিয়ের আগে প্রেম
ইসলামে নিষিদ্ধ ? কেন
নিষিদ্ধ? কি বা তার প্রমান?
চলুন এই প্রশ্নের উত্তর
পেতে ইসলামের
আলো থেকে ঘুরে আসি।
একটা ছেলের
প্রতি একটা মেয়ের আকর্ষণ
থাকবে অথবা একটা মেয়ের
প্রতি একটা ছেলের আকর্ষণ
থাকবেই,এটাই স্বাভাবিক ।
যদি করো মাঝে এই feel
না থাকে তবে সে ছেলে,মেয়ে
কোনটিই না।
কাউকে ভালো লাগলে তার
প্রতি আকর্ষণ জন্মায়।আর এই
আকর্ষণকে অধিকারে রুপান্তরের
নামই
ভালবাসা। এই অধিকারটা বিয়ের
আগে বা পরে যেকোনো সময়
ঘটতে পারে। আসুন
আমরা আলোচনা করি, বিয়ের
আগের
অবস্থা নিয়ে। আগেই
বলে রাখি,যেহেতু এটা হারাম,তাই
শয়তানের প্ররচনা থাকবেই।এখন
ভাবি,বিয়ের আগে এই
অধিকারটা জন্মাল দুটি মনেই।
তারা পরস্পর মাঝে এই অধিকার
স্বীকৃত
করল। সাথে সাথে শয়তানের
প্ররচনা বেড়ে গেল। এরপর
তারা তাদের
অধিকার
বাড়াতে বাড়াতে ভাবলো আমাদের
এই
অধিকার, কথা বলার
মধ্যে না রেখে,এই
অধিকার বিছানা পর্যন্ত নিয়ে যাই।
ইসলামে যেটা যিনা নামে পরিচিত।

বেপারে আল্লাহ্ বলেছেনঃ
“বেভিচারি পুরুষ
কেবলবেভিচারিনী নারী অথবা মুশরিক
নারীকে বিয়ে করে এবং বেভি
চারিনীকে কেবল
বেভাচারি অথবা মুশরিক পুরুষ
বিয়ে করে এবং এদের কে মুমিন
দের
জন্য হারাম করা হয়েছে ।
(সুরা আননুর-৩৩)”
আর যারা এটা like করে ,তাদের
বেপারে বলা হয়েছেঃ
“যারা পছন্দ করে যে ঈমানদার দের
মধ্যে বেভিচার প্রসার
লাভকরুক,তাদের
জন্য ইহকাল ও
পরকালে যন্ত্রনা দায়কশাস্তি রয়েছে,
আল্লাহ্ জানেন ,তোমরা জাননা।
(সুরা আন নুর-১৯)”
আপনি নিশ্চই ওই মেয়ের
বাবা বা ভাই
হয়ে ,যেনা করাটা মেনে নেবেন
না।
আমার ছোটো বড়ো ভাই ও বন্ধু
যারা ভাবেন যেঃ আমরা প্রেম
করলেও
দুজনে ওই
কাজটা মানে যিনা করবো না।
আমরা পর্দা মানি। ৫ বার নামাজ
পড়ি।তাদের জন্য আক্তি আদর্শ
হাদিসঃ
“একজন বড়পাদ্রি ছিল ।সে অনেক
ধার্মিক ছিল। কোনো এক যুদ্ধ এ দুজন
বড়
ভাই ওই পাদ্রীর কাছে এসে বলল
দেখুন
আমরা যুদ্ধে যাচ্ছি,আমাদের
বোনকে দেখার কেউ নাই।
পাদ্রী এতে অসম্মতি জানায়।এমন
সময়
শয়তান
পাদ্রিকে কে বলে একটা মেয়ে বিপদে
পড়ছে তুমি তাকে সাহায্য করবা না,
এটা কিছু হইলো ।অতঃপর
পাদ্রী রাজি হল। সে বলল আপনাদের
বোনকে দুরের ওই ঘরে রেখে যান।
এরপর
পাদ্রী প্রতিদিন ওই ঘরে খাবার
দিয়ে,কথা না বলে , চলে আসতো ।
আবার শয়তান আবারো এসে বলল
মেয়েটা একা থাকে,তুমি তার
সাথে একটু কথা বললেই পার।অতঃপর
পাদ্রী কথা বলতে শুরু করলো।
আস্তে আস্তে পাদ্রী মেয়েটির খুব
কাছা কাছি চলে গেল। এক সময়
মেয়েটির পেটে বাচ্চা আসলো।
শয়তান
এবার বলল তুমি এটা কি করলে,এখন
সবচেয়ে ভাল উপায় হল
মেয়েটিকে মেরে ফেলা ।
পাদ্রী তাই
করল।মেরে ওই ঘরেই কবর দিল।
যখনমেয়ে টির দুই ভাই
যুদ্ধো থেকে ফিরে আসলো তখন
পাদ্রী বলল
মেয়েটি অসুখে মারা গেছে।
রাত্রে শায়তান মেয়েটির
ভাইকে সপ্নে দেখাল
মেয়েটিকে যে ঘরে রেখে গিয়েছিল
সেই ঘরেই মারা হয়েছে । কবর
খুড়ে সেই সত্ততা পাওয়া গেলো।
এবার
পাদ্রীকে ধরা হলো এবং তার
death sentence দেয়া হল।এবার শয়তান
এসে বলল
আমি তো তোমাকে বিপদে ফেলেছি,
আমার কাছে সাহায্য চাও ।
পাদ্রি আবার ও শয়তানের
কাছে সাহায্য চাইলো। এবার
শয়তান
হাসতে হাসতে বলল,অবশেষে আমি
তোমাকে কাফির
বানাতে পেরেছি।“
আরও বলা হল ;ভাইয়া আমি এমন
অনেককে দেখেছি যারা প্রেম
করা সত্তেও যিনা করে নি। এই
প্রশ্নের
উত্তর অনেক সহজ …শুধু
একটা পরিসংখ্যান
ঘাটিঃমনে করলাম ঃ যারা প্রেমকরে,
কিন্তু যিনা করে নি ,তাদের
সংখ্যা ৭০%।এদের মধ্যে ১০% বিয়ের
পীড়িতে বসেছে।এবার ,এই ১০% এর
মধ্যে ৮% ওই পর্দার খেলাফ
করেছে এবং হাত ধরা চুমু
খওয়া ,যা কিনা এক প্রকার
যিনা,সেটা তারা করেছে বিয়ের
আগে।বাকী ২%
মেয়ে ছেলে আছে (এইব্যাপারে সন্দেহ
আছে ,এই
২%আসলে পৃথিবীতে আছে কিনা ,
আমার জানা নাই)যারা শুধু
মনে মনে একজন
কে ভালবাসে ,অতঃপর
কার মাধ্যমে প্রস্তাব
দিয়ে বিয়া হয়েছে।অর্থাৎ ২%
আজকাল
কার দিনের প্রেমের সংজ্ঞায়
পরে না। তাহলে বিয়ে করার সময়
একজন
আরেক জনকে না দেখেই
বিয়ে করবে?
ইসলামের আলোকে সুন্দর
ব্যাক্ষাটা দেয়ার
চেস্টা করিঃ আপনি যাকে বিয়ে করবেন
তার সম্পর্কে আপনি জানবেন। এই
অনুমতি ইসলাম দিয়েছে। আপনি ওই
মেয়ে বা ছেলেকে জানার জন্য
ঘন্টার
পর ঘন্টা কথা বলতে পারেন কিন্তু
একজন (ত্রিতিয় ব্যাক্তি)
যাকে বিবাহ
করা হারাম তাকে রাখতে হবে।
কারন
আপনি এতে উগ্র কথা বলতে পারবেন
না।তাহলে আমরা কিভাবে চলবো…
ইসলাম এর সমাধান দিয়েছে। ১-১তম
বেপারটা হল পর্দা।
এটা অনেকে জানে ,তাই আলচনার
পরিধি বাড়াবো না।
২-আল্লাহ রাসুল(সাঃ)
বলেছেনঃ“যার
সাথে বিবাহ হারাম নয় এই রকম কোন
নারির সাথে একাকী অবস্থান
নিষেধ,অনুরুপ বিবাহ হারাম নয় এই রকম
পুরুষের সাথে একাকি অবস্থানও
নিষেধ ,কেননা সেখানে শয়তান
third
person হিসেবে থাকে।“(সাহীহ
মুসলিম)
আমার
কথাঃ আমি যাকে ভালবাসি,তার
সাথে বিয়ের আগে প্রেম
করে ইসলামের
দৃষ্টিতে তাকে বিপদে ফেলা ,এটা
ভালবাসা হতে পারে না।লেখায়
ভুল
ত্রুটি হলে মাফ করবেন।

♥আই লাভ ইউ বা আমি তোমাকে ভালবাসি♥

►যখন তুমি কাউকে খুব বেশি ভালবাসবে, তখন ই
সে তোমার ভালবাসার পরীক্ষা নিতে শুরু করবে,
না না ভাবে তোমাকে কষ্ট দিবে, অপমান করবে।
কারণ মেয়েটা দেখতে চাইবে এত অপমান,
ঘৃণা করার পর ও তুমি তাকে ভালোবাসো কিনা।
কিন্তু মেয়েদের এরকম করাটা হয় মহা ভুল, কারণ
ছেলেরা কারো অবহেলা পছন্দ করে না। আরে আপু
যাকে ভালবাসবে তাকে এত পরীক্ষা কর কেন? কেন
তাকে অকারণে কষ্ট দাও? পরে যখন
ছেলেটা তোমার অবহেলা পেয়ে চলে যায়, তখন
তুমি তাকে ভালবাসতে শুরু কর। বড়ই অদ্ভুত
মেয়েদের চিন্তা-ভাবনা।
ছেলেদের বলছি যে তোমাকে অবহেলা করে, অপমান
করে তাকে বার বার ভালবাসি কথাটা বলার দরকার
নেই, কারণ যে ভালবাসার সে তোমাকে এমনিতেই
ভালবাসবে, তুমি যেমন আছো, যে অবস্থায়
আছো সেভাবেই তোমাকে ভালবাসবো,
তাকে ইমপ্রেস করার জন্য রোমিও সাজার দরকার
নেই। ভালবাসতে কোন কারণ লাগে না, কোন
পজিশন লাগে না, লাগে শুধু একটা পবিত্র মন
যে মনে তোমার ভালবাসার মানুষটির জন্য অফুরন্ত
ভালবাসা থাকবে।
একটা কথা মনে রেখ বন্ধু, নিষ্ঠুর এই
পৃথিবীতে সবাই স্বার্থ খুঁজে, স্বার্থ ছাড়া মানুষ
কোন কাজ করে না (একমাত্র বাবা-মা ছাড়া)
কিছু মানুষ আছে যারা তোমার
জীবনে আসবে স্বার্থ হাসিল করার জন্য, তারপর
জীবনটাকে নতুনভাবে সাজিয়ে/জীবনের মূল্য
বুঝিয়ে, নিঃশব্দে চলে যাবে, আর রেখে যাবে কিছু
অদ্ভুত স্মৃতি যা তুমি কখনই ভুলতে পারবে না।
যদি এসব থেকে মুক্তি পেতে চাও,
তাহলে তোমাকেও স্বার্থপর হতে হবে।
জীবনেও চলার পথে হাজারটা মেয়ে তোমার
জীবনে আসবে যাবে। মেয়েরা বাসের মত,
একটি চলে যায় আরেকটি আসে, কিন্ত ঐ সব
গুলো বাসের মধ্যে একটি বাস এমন
যে তোমাকে তোমার বাড়ি পোঁছায়।
আর সেই বাসটিকে কখনও মিস করতে নেই............
.....
♦সেই কাঙ্ক্ষিত বাসটি সঠিক সময়ে তোমার
জীবনে আসবে, তার আগে অনেক গুলো ভুল বাস
এসে, ভুল গন্তব্যে নামিয়ে তোমার জীবনটা তছনছ
করে দিতে পারে, এক্ষেত্রে অনেক ছেলেরাই
ভেঙ্গে পরে, কিন্তু বন্ধুরা ভেঙ্গে গেলে চলবে না।
পবিত্র মনে সঠিক মানুষটির জন্য অপেক্ষা কর,
সেই মানুষটি সঠিক সময়ে তোমার
জীবনে এসে অগোছালো জীবনটাকে গুছিয়ে তুলবে।
অনেক মেয়েরাই বলে যে "সব ছেলেরাই প্রতারক"
আসলেই সব ছেলেরাই কি প্রতারক??
কোন মেয়ে কি তার বুকে হাত
রেখে বলতে পারবে যে "সব মেয়েরা ভালো"
একটি খারাপ ছেলের জন্য আপনি কেন
বাকিদেরকে দোষ দিবেন??
ছেলেরাও দিল ফাটিয়ে ভালবাসতে জানে, শুধু সেই
ভালোবাসা দেখার মত চোখ থাকতে হয়।
কোন শর্ত বা অঙ্গীকার
দিয়ে ভালোবাসা টিকে থাকে না,
ভালোবাসা টিকে থাকে পবিত্র বিশ্বাসের ওপর।
ভালোবাসা পেতে ও দিতে প্রয়োজন সুন্দর
একটা পবিত্র মন। বিশ্বাস হল ভালবাসার প্রধান
সূত্র ও ভালবাসার মূল বস্তু।
♦পরিশেষে ছেলে-
মেয়ে সবাইকে বলছি কাউকে ভালবাসার
আগে নিজেকে ভালোবাসো, তাহলে অপরের
ভালবাসার মর্যাদা বুঝতে পারবে ।
►বিঃদ্রঃ সব মেয়েরা/ছেলেরা সমান নয়,
পোস্টটি সবার উদ্দেশ্য করে লেখা হয়নি, কিছু
টাইপের মানুষ আছে যারা এমন করে, আর
ভালো ছেলে/মেয়ে আছে বলেই
আজো পৃথিবীতে সত্যিকারের
ভালোবাসা টিকে আছে।
পোস্টে একতরফা ভাবে মেয়েদের কথায় বলেছি,
এবং যারা ওরকম শুধুমাত্র তাদের কথায় বলা হয়েছে,
বাকি যারা ভাল তারা রাগ করবেন না।
রফিক স্যার।

ভালোবাসার সম্মানে ভালোবাসা বিসর্জন


প্রায় পাঁচ বছর হতে চলছে, হ্যাঁ পাঁচ বছর। কিন্তু রনি আজও ভুলতে পারেনি মেয়েটিকে, আর হয়তো পারবেও না। মানুষ প্রেমে পরে, আঘাত পায়, ধোঁকা খায়, যোগ্যতার অভাবে বঞ্চিত হয়- আর এক পর্যায়ে সব ভুলেও যায়। যে ইচ্ছে করে আঘাত দেয়, তাকে ভুলে যাওয়া সহজ, কিন্তু ওকে তো কেউ আঘাত দেয়নি! তাহলে ও নিজেকে বুঝাবে কী করে?
লোপা, হ্যাঁ, সেই মেয়ের নাম লোপা। দেখতে কেমন রনি জানে না, লোপার রূপ দেখার সৌভাগ্য ওর কোনোদিন হয়নি, তবে ও লোপার চোখ দেখেছে, মায়া আর স্নিগ্ধতায় ভরা, সদাবনত দুটি চোখ। একটা মানুষের হৃদয়কে আকৃষ্ট করতে যা দরকার তার সবকিছুই ছিলো চোখ দুটিতে। রনি সেই চোখ দেখেই ওর প্রেমে পরেছিলো, আজও পরেই আছে, মুক্তি মেলেনি।
ওরা তখন এস এস সি পরীক্ষার্থী, সজীব স্যার’র বাসায় ব্যাচে পড়তে যেত। রনি, আর ওর স্কুলের কয়েকটা বন্ধু সাথে অন্য স্কুল থেকে আসা কয়েকটা মেয়ে, লোপা তাদের একজন।
ব্যাচ শুরু হওয়ার কিছুদিনের মাঝেই লোপা আর রনি টিচারের কাছে বিশেষ কদর পেতে শুরু করলো; লোপা ছিলো অঙ্কে সবথেকে ভালো আর রনি ইংরেজিতে। স্বভাবতই তখন দুজনের প্রতি দুজনের সামান্য আগ্রহ জন্মে। আর ছেলে-মেয়ে মুখোমুখি বসার সুবাদে তাই চোখাচোখি হতো প্রায়-ই। এভাবেই শুরু হয় রনির দুর্ভাগ্যের।
প্রতিদিন মুখোমুখি বসে চোখাচোখি, টিচারের কাছে, বন্ধুদের কাছে লোপার প্রশংসা শুনতে শুনতেই রনি লোপার প্রেমে পরে যায়। অল্পবয়সের আবেগী প্রেম, যেখানে যুক্তি থাকে অনুপস্থিত, ভালোলাগার কারণও থাকে অজানা; কিন্তু আবেগ হয় তীব্র।
বেশকিছুদিন এভাবেই চলতে থাকে আর রনির অস্থিরতা বাড়তে থাকে, কীভাবে সে লোপাকে বলবে, কীভাবে তার ভালোবাসার প্রকাশ ঘটাবে। মনের কথাগুলো একটা চিঠিতে লিখে ও লোপাকে দেয়ার জন্য সাথে নিয়ে ঘুরে, কিন্তু সাহসে কুলোতে পারে না, তাই চিঠিটা থেকে যায় মানিব্যাগের ভাজে।
শেষে একদিন বন্ধু আসিফের পরামর্শে ঈদ শুভেচ্ছা কার্ডের ভিতরে চিঠিটা রেখে ও লোপাকে দেয়, যে চিঠিতে ছিলো ওর ভালোবাসার আর মনের গভীরের অনেক কথা। নিজের মনের একান্ত কথা গুলো লোপাকে বলে ওর আসলে অস্থিরতা কমেনি, বরং জবাব পাওয়ার অপেক্ষায় সেটা ক্রমেই বাড়তে লাগলো।
মনের মাঝের চঞ্চলতা নিয়েই ওর ঈদ কেটে যায়, সবসময় একটা অস্থিরতা ভর করে থাকে ওর উপর। ও ধারণা করছে, লোপা হয়তো ওকে ফেরাবে না, আবার এক-ই সাথে ভয়ও হয়, যদি ফিরিয়ে দেয়? যদি শুনে ও অন্য কাউকে পছন্দ করে? বা, যদি ওকে পছন্দ না করে? এভাবেই দিন কাটে, প্রাইভেট ছুটির কারণে দেখা নাই আর কোন ফোন নাম্বারও রনি জানে না। ও যে লোপাকে পছন্দ করে, সেটা ওর বন্ধুরা বা লোপার বান্ধবীরা সবাই অনেক আগে থেকেই জানলেও ও কারো কাছে লোপার বাসার কারো নাম্বার চাইতে লজ্জা পাচ্ছিলো।
বেশ কয়েকদিন পর রনির এক বন্ধু ফোন করে প্রাইভেট ক্লাস শুরু হওয়ার তারিখ জানায়, আর সাথে একটা খবর দেয়- লোপার বড় বোন নাকি এক্সিডেন্টে মারা গেছেন।
রনি লোপার সাথে একটু কথা বলার জন্য খুব অস্থির হয়ে যায়। একটু কথা বলবে, ওকে একটু সান্তনা দিবে। কিন্তু সুযোগ আর হয় না, ও জানতে পারে লোপার সেই বোনের নাকি তিনটা ছোট ছোট বাচ্চা আছে, এখন বাচ্চাদের কী করা যায় তাই নিয়ে ওদের বাসায় ঝামেলা হচ্ছে। আর যার কারণে লোপা পড়তে আসছে না।
শেষে রনি লোপার বান্ধবী রুমানাকে খুব অনুরোধ করে লোপার সাথে একটু যোগাযোগ করিয়ে দেয়ার জন্য। কয়েকদিন পর রুমানা রনিকে জানায় লোপা নিজেও ওর সাথে দেখা করতে চায়। তাই পরেরদিন ও যেন গলির মুখে অপেক্ষা করে।
রনি-ই শুধু জানে সেই দিনটা ওর কেমন কেটেছিলো, সারাটা রাত ও ছটফট করছিলো, ওকে লোপা কী উত্তর দেবে? মেনে নিবে নাকি ফিরিয়ে দেবে? লোপা কি ওর সাথে খুব খারাপ ব্যবহার করবে? নাকি হাসিমুখে কথা বলবে? এভাবেই ছটফট করতে করতেই দিনটা কাটে। শেষে বিকেল হয়।
ও গলির মুখে অপেক্ষা করতে করতে একসময় লোপা আসে, খুব সাধারণ ভাবে, বোরকা পরা, পিঠে ব্যাগ; যেমনটা ও দেখে অভ্যস্ত। এই প্রথম ওরা দুজন একাকী কথা বলার সুযোগ পাচ্ছে, তাই স্বাভাবিকভাবেই রনি ঘামতে থাকে, কিছুটা নার্ভাস হয়ে যায়।
সাধারণ কুশল বিনিময় হয় খুব স্বাভাবিক ভাবেই। এর পর বেশ কিছুক্ষণ দুজন-ই চুপ। বেশ কিছু সময় পরেই লোপা আচমকা বলে উঠে- আপনি আমাকে ভুলে যান। রনি প্রথমে ওর কথা বুঝতে পারে না, বলে- বুঝলাম না।
তখন লোপা বলে- বুঝিয়ে দিচ্ছি, তার আগে বলেন আপনার হাতে কি কিছু সময় হবে কথা শুনার জন্য? আসলে আমি আপনাকে সহজে বলতে পারছি না, হয়তো একটু বেশি-ই কথা বলে ফেলতে পারি।
রনি বললো- তোমার কথা শুনতেই তো এখানে এলাম, আর তুমি যদি অল্প কথা বলেই চলে যাও, তাহলে সেটাই হয়তো আমার কাছে বেশি খারাপ লাগবে। তোমার যা বলার ইচ্ছা- বলো, কথা দিচ্ছি, মনোযোগ দিয়ে শুনবো।
এরপর লোপা যা বলতে থাকে তাতে রনি প্রথমে অবাক হয়, পরে রেগে যায় আর তার পরে ভেঙ্গে পরে...
লোপা বলে- জানেন তো আমার বড় বোন মারা গেছে, তার তিনটা বাচ্চা, খুব-ই ছোট। আপু মারা যাওয়াতে এখন বাচ্চা গুলোকে সামলানো দুলাভাইয়ের পক্ষে অসম্ভব। এখন বাচ্চাদের প্রয়োজনেই দুলাভাইকে আবার বিয়ে করতে হবে। বাসায় এটা নিয়ে অনেক কথা হয়েছে কিন্তু কেউ ভালো কোন সমাধান দিতে পারছে না, কারণ, দুলাভাই এমন স্ত্রী কোথায় পাবে যে বাচ্চাগুলোকে নিজের সন্তানের মত মানুষ করবে? শেষে গতকাল সে একটা প্রস্তাব করে- আমি যদি তাকে বিয়ে করি, তাহলে বাচ্চাগুলোর জন্য ভালো হবে আর আমাদের দুই পরিবারের মাঝেও কোন ঝামেলা থাকবে না। এখন তার প্রস্তাবে ঘরের সবাই মোটামুটি রাজি আর আমিও এর কোন বিকল্প দেখছি না। কারণ, বাচ্চাগুলোকে আমি অসম্ভব ভালোবাসি আর ওরাও তেমনি। তাই আমি মনে করি, ওদের দিকে তাকিয়েই আমার এটা করা উচিৎ।
একটানা কথা গুলো বলে লোপা থামে, তার চোখ দেখেই রনি বুঝতে পারে সে যেটা বলেছে, চিন্তা করেই বলেছে আর সে এটা করবেই।
তখন রনি বলে- তোমার নিজের কথা ভাববে না? নিজের জীবন বলতেও তো একটা ব্যাপার আছে। আর আমি-ই বা কী করবো? তুমি জানো আমি তোমাকে কত্ত ভালোবাসি? আমি সারাদিন তোমাকে ভাবি, ঘুমাতে পারি না, পড়তে পারি না- সারাদিন তোমাকে চোখের সামনে দেখি। আমি কল্পনাও করতে পারি না যে তোমাকে আমি পাবো না। তুমি বিশ্বাস করো, আমি থাকতে পারবো না। আমার কথা একটু ভাবো, প্লিজ।
বলতে বলতেই কেঁদে ফেলে ও, ভেজা চোখে লোপার দিকে তাকায় কিছু শোনার জন্য। বেশ কিছুক্ষণ চুপচাপ কেটে যায়, কেউ কোন কথা বলে না। কিছুক্ষণ পর লোপা প্রথম কথা বলে উঠে-
-ভালোবাসা হারানোর কষ্টের কথা বলছেন? কষ্ট কি শুধু আপনার একার হবে? আমার কি কিছুই হবে না?
-মানে?
-মানে হলো, আমিও আপনাকে ভালোবাসি, তবে জানি না সেটা কতটুকু যৌক্তিক, কিন্তু বাসি। যখন থেকে আমি জানতে পারি আপনি আমায় পছন্দ করেন, তখন থেকেই আমিও আপনাকে ভালোবেসে ফেলি। আমি জানি না তার কারণ কী, তবে ভালোবেসে ফেলেছি এটা সত্য। আপনি যেমন ঘুমাতে পারেননি, আমিও পারিনি, অনেকদিন ধরে আমি শান্তিতে ঘুমাইনি। শুধু আপনার মুখ থেকে ভালোবাসার কথা শোনার অপেক্ষায়। বিশ্বাস করবেন কিনা জানি না, তবুও আপনাকে কিছু দেখাতে চাই।
এ কথা বলে লোপা কাধের ব্যাগ থেকে একটা কাগজের প্যাকেট বের করে, যার ভিতরে ছিলো অনেকগুলো খোলা কাগজ আর একটা ডায়েরি। রনি কিছুই বুঝতে পারে না, ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে।
লোপা আবার বলে- এখানে কতগুলো কবিতা আছে, যা আমি লিখেছি, শুধুই নিজের মনের ভালোবাসা থেকে আর ভালোবাসার মানুষের জন্য। আশা ছিলো, যেদিন তার পাশে থাকবো, উপহার হিসেবে এগুলো তাকে দেবো, কিন্তু সেই সুযোগ আর হলো না। আর আমার সেই ভালোবাসার মানুষটি আপনি-ই, অন্য কেউ নয়।
এরপর সব লেখাগুলোকে ও রাস্তায় ছোট্ট করে সাজিয়ে নেয়, তারপর ব্যাগ থেকে একটা দেশলাই বের করে তাতে আগুন জ্বালিয়ে দেয়। রনি বোকার মত তাকিয়ে থাকে, কিছুই করে না, কিছুই বলে না। শুধু দেখে কাগজগুলো পুড়ে যাচ্ছে আর তার পাশে ওর ভালোবাসার মানুষটি বসে আছে, সেই মায়াময় চোখ নিয়ে তাকিয়ে আগুন দেখছে, আর চোখের পানি ঝরছে, যে পানি ওই আগুন নেভাতে যথেষ্ট নয়, যথেষ্ট নয় রনির মনের কষ্টটা ধুয়ে দিতেও। কিছুক্ষণ পর আগুন নিভে যায়, লোপা উঠে দাড়ায়। নিজেকে ও শক্ত করে নিয়েছে। স্বাভাবিক গলায় ও কয়েকটি কথা বলে-
-দেখুন, আমি আপনাকে ভালবেসেছি বা আপনি আমাকে, মানুষ কিন্তু আমরা দুজন। আপনি আর আমি। তারপরের কথা হলো, আমি বা আপনি যে একজন আর একজনকে পাবোই- এমন কিন্তু কোন নিশ্চয়তা নেই। অনেক কিছুই ঘটে যেতে পারে। আর ওদিকে তিনটা শিশু; তিনটা প্রান। আমি একা পারি ওদের তিনজনকে সুখ দিতে, সাথে বাকিদেরকেও, কারণ, ওদের সুখ-ই যাদের কাছে বড়, এমন মানুষ কিন্তু আমাদের দুই পরিবারে কম নেই। আমি নিজে না হয় সুখ একটু কম-ই পেলাম, কিন্তু এতগুলো মানুষকে সুখ দেয়াটা কি কম? আর আপনি যখন আমাকে ভালোবেসেছেন, আমার কথা নিশ্চয়-ই আপনি রাখবেন, তাই না? তাই আমি শুধু এতটুকুই বলবো, নিজের দিকে খেয়াল রাখবেন, আমার জন্য আর আমার তিন সন্তানের জন্য দোয়া করবেন। আর হয়তো দেখা নাও হতে পারে। আসি।
লোপা চলে যায়, অনেক কিছুই বলতে চায় রনি, কিন্তু কিছুই ও বলতে পারে না। পা ছড়িয়ে রাস্তায় বসে থাকে, আর দৃষ্টি থাকে লোপার পথের দিকে।
কিছুক্ষণ পর চোখ মুছে ও উঠে দাড়ায়, হঠাৎ ও দেখতে পায়, ছাই হয়ে যাওয়া কবিতা গুলোর কাছেই একটা প্রায় অক্ষত কাগজ। বাতাসে উড়ে পাশে চলে যাওয়ায় হয়তো পুড়েনি। ছোট্ট একটা কবিতা লেখা তাতে- তারিখটা দেখা যায় না, পুড়ে গেছে.........
আপন হবো
সূর্য হয়ে আলো দেবো, পাখির মত গান-
পরী হয়ে করবো রঙিন তোমার সারাক্ষণ,
মেঘ জমিয়ে নামাবো আঁধার, হবো সবুজ বন-
আসবো হয়ে তোমার কাছে নদীর কলতান।
আঁধার রাতে জোছনা হবো, গন্ধরাজের ঘ্রাণ,
শ্রাবন মাসের বৃষ্টি হয়ে করিয়ে দেবো স্নান।
শীতের ভোরে রৌদ্র হবো, শীতল জলের বান,
চৈত্র দিনের ভর দুপুরে জুড়িয়ে দেবো প্রাণ।
চলার পথের সঙ্গী হবো- তোমার আপনজন,
দুঃখ নামের জীবন বাঁধার করবো অবসান।
সুখের না’য়ের বৈঠা হবো, বৈরী সুরের টান,
বধু হয়ে করবো শীতল, তোমার শরীর-মন...।
রনি কথা রেখেছে, নিজের যত্ন নিয়েছে, তবে আরও বেশি করে যত্ন নিয়েছে ওর মনের ভালোবাসার। এখনো ও ঘুমের মাঝে স্বপ্নে দেখে সেই চোখ জোড়া, যেই চোখে ওর জন্য ভালোবাসা ছিলো, যেই চোখ ওকে নিয়ে স্বপ্ন দেখেছিলো। ভালবাসাগুলো হয়তো ওকে দিয়ে যেতে পারেনি, কিন্তু সেই ভালোবাসার সৃষ্টি তো হয়েছিলো ওর জন্যই। তাই ও কিছুই ভুলেনি, ভুলতে পারবেও না হয়তো কোনোদিন। আর দরকার-ই বা কী ভুলে যাওয়ার? কচি বয়সের কচি প্রেম, থাকুক না চিরঞ্জীব হয়ে। রফিক স্যার

যে প্রেমের পরিণতি বিয়ে- সেটা কি হারাম?


প্রথমত, একজন নারী ও একজন পুরুষের মধ্যে গড়ে ওঠা সম্পর্ক, যাকে লোকে “প্রেম” বলে থাকে সেটা কতগুলো হারাম জিনিসের সংমিশ্রণমাত্র যা শারীয়াহ এর সাথে সাংঘর্ষিক।

কোন বিবেকসম্পন্ন লোকেরই সন্দেহ থাকতে পারে না যে বিষয়টি হারাম কেননা এতে একজন পুরুষকে তার মাহরাম নন এমন মহিলার সাথে একাকী কাটানো, তার দিকে তাকানো, স্পর্শ করা, চুমো খাওয়া কিংবা প্রেমালাপ ইত্যাদি করতে হয় যাতে প্রবৃত্তি জড়িত থাকে।

এ ধরনের সম্পর্ক এর চাইতেও মারাত্নক দিকে গড়াতে পারে, যেমনটি বর্তমানে ঘটছে।

দ্বিতীয়ত,
গবেষনায় দেখা গেছে, একজন পুরুষ ও একজন মহিলার মধ্যকার বিবাহপূর্ব প্রেমের উপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠা  বৈবাহিক সম্পর্ক ব্যর্থ হয়, অন্য দিকে যে সকল বিয়ে এ ধরনের হারাম সম্পর্কের ওপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠে নি যেগুলোকে লোকেরা “প্রথাগত বিয়ে” বলে থাকেন সেগুলো বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সফল হয়।

একজন ফ্রেঞ্চ সমাজবিজ্ঞানী কর্তৃক মাঠপর্যায়ে চালানো এক গবেষনায় উঠে এসেছে,
“যখন দুই পক্ষ বিবাহ পূর্ব প্রেমের সম্পর্কে লিপ্ত হয় না তখন সে বিয়ের সফলতার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়”

প্রফেসর ইসমাঈল আবদ’ আল বারি’ কর্তৃক প্রায় ১৫০০ পরিবারের ওপর চালানো অন্য এক জরিপের ফলাফল ছিল এমন যে শতকরা ৭৫ ভাগ “ভালবেসে বিয়ে” এর পরিণতি ছিল ডিভোর্স যেখানে “প্রথাগত বিয়ে” এর ক্ষেত্রে শতকরা ৫ ভাগেরও কম।

এধরনের পরিণতির পেছনে কারন হিসেবে উল্লেখ করা যেতে পারে,

১- আবেগ একজন মানুষকে অপরের ভুলগুলো সম্পর্কে অন্ধ করে তুলতে পারে; যেমনটি বলা হয়ে থাকে,”ভালবাসা অন্ধ।“ একপক্ষ বা উভয়পক্ষেরই সমস্যা থাকতে পারে যেটা তাদেরকে বিপরীত পক্ষের জন্য অযোগ্য করে তুলতে পারে, কিন্তু এই ত্রুটিগুলো ঠিক বিয়ের পরেই স্পষ্ট হয়ে ওঠে।

২- প্রেমিক-প্রেমিকারা ভেবে থাকতে পারেন যে, এই জীবন শুধুই ভালবাসার পথে অন্তহীন একযাত্রা, তাই দেখা যায় তাদের মাঝে কেবল ভালবাসার গল্প আর স্বপ্নের জাল বোনা ইত্যাদি। তারা বাস্তব জীবনের সমস্যা এবং সেগুলোর সমাধান নিয়ে সে সময়ে খুব একটা মাথা ঘামায় না। এই প্রবণতাটি বিয়ের পর কেটে যায়, যখন তারা নানা দ্বায়িত্ববোধ ও সমস্যার মুখোমুখি হয়।

৩- প্রেমিক-প্রেমিকা যুগল তিক্ত আলোচনা কিংবা তর্কে কম অভ্যস্ত হয় কেননা বেশিরভাগ সময়ই একে অপরকে খুশি করবার জন্য ত্যাগ ও মেনে নেয়ার প্রবণতা থাকে। তাদের মধ্যে বরং প্রায়ই কথা কাটাকাটি হয় কারন অপর পক্ষ ত্যাগ স্বীকার করে তাকে খুশি করতে চায়। বিয়ের পর ঠিক উলটোটি ঘটে এবং তাদের বিবাদগুলো সমস্যায় রূপ নিতে থাকে কারন পূর্বে তারা দেখে এসেছে বিনা বাক্য ব্যয়ে অপর পক্ষকে তার কথাটি মেনে নিতে।

৪- কোন পক্ষই অপর পক্ষের সত্যিকার রূপটা বুঝে উঠতে পারে না। কারন উভয় পক্ষই অন্যের কাছে নিজেকে শান্ত, ভদ্র হিসেবে তুলে ধরতে ও তাকে সন্তুষ্ট করতে চেষ্টা করে। নিজেকে এভাবে উপস্থাপনের ঘটনাটা ঘটে থাকে তথাকথিত“ভালবাসার” পর্যায়ে, কিন্তু কেউই সারা জীবন এই প্রবণতাকে ধরে রাখতে পারে না। ফলে সত্যিকার চিত্র ফুটে ওঠে বিয়ের পরে এবং সমস্যার জন্ম দেয়।

 ৫- ভালবাসার সময়টা থাকে স্বপ্ন ও বিলাসিতার যা বিবাহ পরবর্তি বাস্তবতার সাথে সাংঘর্ষিক বলে প্রতীয়মান হয়। প্রেমিক মনে করতে পারে যে সে তার প্রেমিকাকে একখন্ড চাঁদ হাতে তুলে এনে দেবে এবং সে তার প্রেমিকাকে পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মানুষ হিসেবে না দেখতে পেলে নিজে সুখী হতে পারবে না।

এবং বিনিময়ে প্রেমিকা তার সাথে একই ছাদের নিচে থাকবে এবং তার অন্য কোন আবদার থাকবে না, অনুরোধ থাকবে না যতক্ষণ প্রেমিক তার মন দখল করে রাখবে। যেমন একজন বলেছিল, “আমাদের জন্য একটা ছোট্ট কুটিরই যথেষ্ট” এবং “দু-একমুঠো ভাতই আমাদের জন্য যথেষ্ট হবে” কিংবা “তুমি আমাকে একটুকরো অমুক অমুক খাবার এনে দিলেই আমি খুশি থাকবো”  এগুলো নিতান্তই বাস্তবতা বিবর্জিত কল্পনাপ্রসূত কথাবার্তা এবং বিয়ের পর উভয়পক্ষই এগুলো ভুলে যায়। স্ত্রী তার স্বামীর আর্থিক দুরাবস্থার অভিযোগ করে এবং স্বামী স্ত্রীর চাহিদা পূরণে ব্যর্থ হয়। তখন স্বামীও পালটা অভিযোগ আনে স্ত্রীর বেশি বেশি চাওয়া নিয়ে।


এগুলো এবং আরো বেশ কিছু কারনে যখন উভয় পক্ষ বলে যে আমরা প্রতারিত হয়েছি এবং বেশি তাড়াহুড়ো করে ফেলেছি সেটা শুনে আমরা অবাক হই না। স্বামী আক্ষেপ করে কেন বাবা-মায়ের পছন্দের অমুক অমুককে বিয়ে করলো না কিংবা স্ত্রী আক্ষেপ করে কেন অমুককে বিয়ে করলো না অথচ প্রকৃতপক্ষে তারা নিজেরাই সেটা করে নি নিজেদের আকাঙ্ক্ষার কারনে। ফলে মানুষ যেটাকে ভাবে পৃথিবীর জন্য একটা উদাহরণ হয়ে থাকবে তাদের “ভালবেসে বিয়ে” টি সেখানে কিছুদিন পর সে বিয়েটি ভেঙ্গে যায়।

তৃতীয়ত,
এখানে যে কারনগুলো বর্ণনা করা হয়েছে সেগুলো বাস্তবত এবং সত্যিকার অর্থেই এগুলো ঘটছে মানুষের জীবনে। কিন্তু আমাদেরকে এই ব্যর্থতার পেছনে আসল কারনটিকে ভুলে গেলে চলবে না, সেটি হচ্ছে আল্লাহ তা’আলার অবাধ্যতা। ইসলাম কখনই এ ধরনের ঘৃণিত সম্পর্ককে অনুমোদন দেয় না, এমনকি যদিও উদ্দেশ্য বিয়ে করা হয় থাকে। ফলে তারা কোনভাবেই আল্লাহতা’আলার নির্ধারিত শাস্তি থেকে রেহাই পায় না। আল্লাহ বলছেন,

এবং যে আমার স্মরণ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে, তার জীবিকা সংকীর্ণ হবে.. (সুরা ত্বা-হা ১২৪)

আল্লাহর আদেশ অমান্য করার কারনে এবং কুরআন থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবার কারনে এই রকম হয়।

এছাড়া আল্লাহতা’আলা বলছেন,
আর যদি সে জনপদের অধিবাসীরা ঈমান আনত এবং পরহেযগারী অবলম্বন করত, তবে আমি তাদের প্রতি আসমানী ও পার্থিব নেয়ামত সমূহ উম্মুক্ত করে দিতাম। কিন্তু তারা মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছে। সুতরাং আমি তাদেরকে পাকড়াও করেছি তাদের কৃতকর্মের বদলাতে। (সুরা আরাফ ৯৬)

আল্লাহর পক্ষ থেকে অনুগ্রহ হচ্ছে সৎকর্মপরায়ণতা ও বিশ্বাসের পুরষ্কার স্বরুপ, আর যদি সৎকর্মপরায়ণতা কিংবা ঈমান না থাকে অথবা কম থাকে তবে পুরষ্কারও কমিয়ে দেয়া হবে কিংবা দেয়াই হবে না।

আল্লাহ তা'আলা বলেন,
যে সৎকর্ম সম্পাদন করে এবং সে ঈমাণদার, পুরুষ হোক কিংবা নারী আমি তাকে পবিত্র জীবন দান করব এবং প্রতিদানে তাদেরকে তাদের উত্তম কাজের কারণে প্রাপ্য পুরষ্কার দেব যা তারা করত। (সুরা আন-নাহল ৯৭)

উত্তম জীবন হল বিশ্বাস ও সৎকর্মের ফসল।

আল্লাহ যথার্থই বলেছেন,
"যে ব্যক্তি তার ঘরের ভিত্তি স্থাপন করেছে আল্লাহর ভয় ও আল্লাহর সন্তুষ্টির উপর সে ব্যক্তি উত্তম , না যে ব্যক্তি তার ঘরের ভিত্তি দাঁড় করিয়েছে পতনোন্মুখ একটি গর্তের কিনারায় যা তাকে সহ (অচিরেই) জাহান্নামের আগুনে গিয়ে পড়বে , আল্লাহ তায়ালা কখনো যালেম সম্প্রদায়কে হেদায়েত দান করেন না" (সুরা আত-তওবাহ ১০৯)

যে ব্যক্তির বিয়ে এধরনের হারামের ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে তার উচিত দ্রুত তওবাহ করা এবং আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা এবং সৎকর্মময় জীবনের কামনা করা যার ভিত্তি হবে ঈমান, পরহেযগারী ও সৎকর্ম।

আরো বিস্তারিত তথ্যের জন্য এই ফতোয়াটি (ইংরেজি) দেখতে পারেন।

আল্লাহতালা  আমাদের সবাইকে তাঁর নিকট পছন্দনীয় কাজগুলো করবার জন্য সাহায্য করুন।

এবং আল্লাহতা'আলাই ভাল জানেন।

বিয়ে কোন বয়সে করা ভালো?


একটা কথা শুনেছিলাম সেদিন। পশ্চিমা এক দেশে একবার একটি কুকুর একটি বাচ্চাকে আক্রমন করে। চারিদিকে লোকজন দাঁড়িয়ে দেখছিলো। কেউ এগিয়ে আসছিলো না তাকে সাহায্য করতে। একজন মানুষ সাহস করে এগিয়ে গিয়ে কুকুরটিকে মেরে বাচ্চাটিকে বাচায়। চারিদিকে খবর ছড়িয়ে পড়ে তার এই সাহসি ভুমিকার। লোকজন তার প্রশংসায় পঞ্চমুখ। সাংবাদিকরা এলো তার সাক্ষাতকার নিতে। জিজ্ঞাসা করলো আপনার নাম কী? সে বললো, মুহাম্মাদ। বিস্তারিত সাক্ষাতকার সবাই নিয়ে গেলো ঠিকই। কিন্তু পরের দিন পত্রিকায় এলো

‘মুসলমান সন্ত্রাসীর হাতে নিরীহ কুকুর নিহত’

ইসলাম ও ইসলাম্পন্থীদের বিরুদ্ধাচারিতার ক্ষেত্রে বিধর্মী ও সেক্যুলাররা কখনো কোনো নীতি-নৈতিকতা ও সততার তোয়াক্কা করে না। সব সময়ই ডার্টি গেইম প্লে করে। এমনকি আল্লাহর নবী নূহ আ. থেকে নিয়ে মুহাম্মাদ সা.—কাউকেই এরা ছাড় দেয়নি। কারণ, এদের নৈতিকতার কোনো বালাই নেই। সেটা হোক বন্ধুত্ব কিংবা শত্রুতা। সকল ক্ষেত্রেই।

সমাজের যা কিছু খারাপ কিংবা যা কিছুকে তারা ‘খারাপ সাজাতে’ চায় সব কিছুকে তারা ইসলামের সাথে ট্যাগ করে দেয়। এতে তাদের ফায়দা হলো, অসচেতন মানুষের মধ্যে একটা অবচেতন ইসলামবিদ্বেষী মনোভাব তৈরি হয়।

কিছু দিন আগে একটা নিউজ পড়েছিলাম। এক ছেলেকে তার এক বন্ধু তার বাবার রেখে যাওয়া ১৪ লাখ টাকা ফু দিয়ে দিগুন করার লোভ দেখায়। সে জানায়, তার পরিচিত এক পীর/ফকীর আছে, সে নাকি ফু দিলেই টাকা দ্বিগুণ হয়ে যায়। টাকা দ্বিগুণ করতে বন্ধুকে নিয়ে রওয়ানা হয় ফকীরের বাড়ি। সে আর ফিরে আসেনি টাকা নিয়ে। ফিরেছে তার লাশ। এই সংবাদের কমেন্টে দেখলাম একজন লিখেছে, ‘ধর্মীয় কুসংস্কার মানুষকে কতো অন্ধ বানিয়ে দিতে পারে!’।

ডার্টি গেইমের এটাই হলো তাদের লাভ। ঘটনাটি ঘটার পেছনে যেখানে একমাত্র কারণই হলো ধর্মীয় মুল্যবোধের অনুপস্থিতি; সেখানে গোটা দায়ভারটাই চাপানো হলো ধর্মের ঘাড়ে।

এমন আরো কতো নিউজ দেখবেন। ‘প্রেমের কারণে যুবতীকে ৮০ দোররা’, ইত্যাদি। খবর নিয়ে হয়তো দেখা যাবে ঘটনা শুধু প্রেমেই নয়, প্রেম হয়তো শরীরেও গড়িয়েছিলো। এরপর গ্রামের মাতব্বররা হয়তো এই কাজ করেছে। পিটুনি দেওয়াটাকে বলা হবে দোররা। আর কয়টি পিটুনি হয়েছিলো সেটা কে-ইবা জানে। বলা হবে ৮০ দোররা। কারণ শরিয়াহ আইনে ৮০ দোররার একটা ব্যাপার আছে। ঘৃণা জন্মানো হবে ৮০ দোররার প্রতি। সহানুভূতি জন্মানো হবে অবৈধ প্রেমের প্রতি। চেপে যাওয়া হবে তাদের শরীর তত্ত্বের আসল ঘটনা। যদিও এখানে মাতব্বররা যা করেছে, যেভাবে করেছে, তার সাথে হয়তো ইসলামী আইনের দূরতম কোনো সম্পর্কও নেই।

খবরে দেখা যাবে, ‘বিধবাকে জোর করে হিল্লা বিয়ে দেওয়া হয়েছে’। খবরটা এমনভাবে পরিবেশন করা হবে, যেন হিল্লা বিবাহ ইসলামী বিধানের একটি অংশ। অথচ ইসলামের ব্যাপারে ন্যুনতম জ্ঞান রাখলেও জানার কথা যে, এর সাথে ইসলামের দূরতম কোনো সম্পর্ক নেই।


এমনই তথ্য সন্ত্রাসের শিকার একটি বিষয় হলো রাষ্ট্রের নির্ধারিত বয়স হওয়ার আগে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া। যাকে নাম দেওয়া হয়েছে ‘বাল্য বিবাহ’। শব্দটা দিয়েই একটা অপরাধের আবহ তৈরি করা হয়েছে। এরপর নানা রকম শ্লোগান তৈরি করা হয়েছে। কুড়িতে বুড়ি নয়, বিশের আগে বিয়ে নয়। আরো কতো কী। এর তথাকথিত ক্ষতিকারক দিক নিয়ে নানা তত্ত্ব আবিষ্কার করা হয়েছে। অল্প বয়সে বিয়ে কী কী শারীরিক জটিলতা তৈরি করে তার ফর্দ বানানো হয়েছে। অথচ দেরিতে বিয়ের কারণে যে শারীরিক, মানসিক, সামাজিক অর্থনৈতিক, পারিবারিক সমস্যায় জর্জরিত হয়ে আছে মানুষ তা নিয়ে কিন্তু এরা কখনো কিছু বলবে না। কারণ এটা বললে তাদের নোংরা এজেণ্ডা বাস্তবায়ন করা যাবে না।

অল্প বয়সে বিয়েকে মাতৃ-মৃত্যুর প্রধান কারণ হিসেবে দেখানো হচ্ছে। অথচ একটি মেয়ে প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার সাথে সাথে যে বায়োলজিক্যালী সে গর্ভধারণের জন্য সম্পুর্ণ উপযুক্ত—এটা সায়েন্টিফিকভাবে প্রমাণিত। মাতৃ-মৃত্যু যদি হয়ে থাকে সেটা অবশ্যই অন্য কোনো কারণে। হতে পারে সেটা অযত্ন অবহেলা, পুষ্টিহীনতা যথাযথ চিকিৎসা না পাওয়া ইত্যাদি। এসবের কারণে তো খোদ বিয়েকে দায়ি করার কোনো যৌক্তিকতা নেই! এ ধরণের বায়াস কাজ অনেকেই করে। যেমন তামাকমুক্ত সমাজ গড়া নিয়ে যারা কাজ করে তারা সিগারেটের কারণে মৃত্যুর হারকে এমনভাবে দেখায়, যা সত্যিই আশংকাজনক। অথচ রিসার্চ করলে হয়তো দেখা যাবে, তাদের দেখানো মৃত মানুষগুলো সিগারেট হয়তো খেতো ঠিকই, কিন্তু সিগারেটের কারণেই যে তারা মারা গেছে তা কিছুতেই প্রমাণিত নয়।

এরা অল্প বয়সে বিয়েকে একটা জঘণ্য নোংরা কাজ হিসেবে উপস্থাপন করে। এরপর এর দায়ভার ইসলামের উপর চাপায়। এটাকে প্রমান করার জন্য আমাদের প্রিয় নবী মুহাম্মাদ (সা.) এর সাথে আয়েশা (রা.) এর বিয়ের ব্যাপারটিকে উদ্দ্যেশ্যপ্রণোদিতভাবে বিকৃতভাবে উপস্থাপন করে।

আমাদের মনে রাখতে হবে যে বিয়ে, এই বিংশ শতাব্দিতে আবিস্কৃত কোনো রীতি নয়। পৃথিবীর প্রথম মানবজুটি থেকে নিয়ে হাজার হাজার বছর ধরে এ রীতি চালু আছে। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে। আর সৃষ্টিগত ও চাওয়া-পাওয়ার দিক থেকে মৌলিকভাবে মানুষের মধ্যে কোনো পরিবর্তন সাধিত হয়নি। পৃথিবীর প্রথম মানুষের শারীরিক গঠন যেমন ছিলো, এখনো মানুষের গঠন তেমনই আছে। মৌলিকভাবে চাওয়া-পাওয়া, হাসি-কান্না, দুঃখ-বেদনার কারণ ও কার্যকারণও একই রকম আছে। কোনো পরিবর্তন সাধিত হয়নি। অতএব বিয়ে এমন কোনো বিষয় নয়, যাকে আমাদের নতুনভাবে মুল্যায়নের কিছু আছে। আদম (আ.) এর সন্তান-সন্তুতিরা হাওয়া (আ.) এর গর্ভে যেভাবে এসেছিলো আপনি আমিও সেভাবেই এসেছি। আমাদের সন্তানরাও সেভাবেই আসে।

ঐতিহাসিকভাবেই বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার বয়সের ব্যাপারটি স্থানীয় রীতি-নীতি ও সামাজিক কালচার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হতো। উইকিপিডিয়ার দেওয়া তথ্যমতে প্রাচীন রোমান সমাজেও বিয়ের কোনো নির্ধারিত বয়স ছিলো না। সাধারণতঃ বয়প্রাপ্ত হওয়া বা পিরিয়ড শুরু হওয়ার সাথে সাথেই মেয়েদের বিয়ে হয়ে যেতো এবং তারা সে বয়সেই বাচ্চা জন্ম দিতো।

বর্তমান আধুনিক ইউরোপের সবগুলো দেশেই বিয়ের উপযুক্ততার ক্ষেত্রে ছেলেদের বয়স হলো আঠারো; স্কটল্যাণ্ডে তো মাত্র ষোল। অন্য দিকে মেয়েদের ক্ষেত্রে অধিকাংশ দেশেই ষোল; কোনো দেশে পনের ও সতেরও রয়েছে। কেউ চাইলে কোর্ট আরও কম বয়সেও অনুমতি দিয়ে থাকে। মুসলিম বিশ্বের মধ্যে একমাত্র মালায়শিয়া ও বাংলাদেশেই ছেলেদের ২১ ও মেয়েদের ১৮ বছর বয়স নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে মালায়শিয়াতে মুসলিমরা শরিয়া কোর্টের অনুমতি নিয়ে এর নিচের যে কোনো বয়সে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারে। আমার জানামতে একমাত্র বাংলাদেশেই বয়সের এই আইন ভঙ্গ করাকে ক্রিমিনাল অ্যাক্ট বা শাস্তিযোগ্য অপরাধ গণ্য করা হয়।

সবচেয়ে ভালো অবস্থানে আছে ইয়েমেন। দীর্ঘ দিন সেক্যুলাররা শাসন ক্ষমতায় থাকলেও এক্ষেত্রে তারা সাধারণ জনগনের উপর কোনো বিধান চাপিয়ে দেওয়ার সাহস পায়নি। সে দেশে প্রত্যেকেরই অধিকার আছে নিজ প্রয়োজন অনুযায়ী সুবিধেমতো সময়ে বিয়ে করার। আসলেই ইয়েমেনীরা ভাগ্যবান। আল্লাহর রসূলের কথা শাশ্বত সত্য। তারা সভ্য, তাদের হৃদয় নরম; দ্বীন ইয়েমেনে, প্রজ্ঞাও ইয়েমেনীদের মধ্যে। আল্লাহর দ্বীনের বিজয়ের জন্য এই ইয়েমেন থেকেই ১২ হাজার সৈন্যের এক বিশাল বাহিনীর আবির্ভাব ঘটবে।

যোগাযোগব্যবস্থা, তথ্য প্রযুক্তিসহ নানা বৈষয়িক এককে আমরা কিছুটা উন্নতি সাধন করেছি সত্য; কিন্তু সমাজের, বিশেষ করে যুবসমাজের নৈতিক অধঃপতন যে ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে এটা কেউই অস্বীকার করে না। একমাত্র হলুদ আলোর সমর্থকেরা ছাড়া। সবাই-ই স্বীকার করেন যে, নৈতিক দিক থেকে আমাদের বাপ-দাদাদের যুগ আমাদের এই যুগের চেয়ে অনেক ভালো ছিলো। অশ্লীলতার প্রাদুর্ভাব এতো মারাত্মক তখন ছিলো না। সেই সমাজের বিয়ের চিত্র তুলে ধরেছেন আমাদের পল্লি কবি। তিনি লিখেছেন,

ঐখানে তোর দাদির কবর ডালিম গাছের তলে
                         তিরিশ বছর ভিজিয়ে রেখেছি দুই নয়নের জলে।
এতোটুকু তারে ঘরে এনেছিনু সোনার মতন মুখ
                       পুতুলের বিয়ে ভেঙ্গে গেল বলে কেদে ভাসাইতো বুক


এখানে পুতুল খেলার বয়সে বিয়ের মধ্যে আমাদের দুমুখো প্রগতিশীলেরা নান্দনিকতা খুজে পেলেও, আয়েশা (রা.) এর পুতুল খেলার বয়সে বিয়ের মধ্যে তারা ঠিকই ধর্মান্ধতা ও ভয়ংকর অমানবিকতার গন্ধ খুজে পান! এসব প্রগতিশীলদের ব্যাপারে মন্তব্য করতেও রুচিতে বাধে। বিচারের দায়িত্ব পাঠকদের উপরই ছাড়লাম।

অনেকেই বিয়ের এই বয়স নির্ধারণকে আমাদের দেশের জনসংখ্যার আধিক্যের কারণে যৌক্তিক ঠাহর করতে পারেন। তাদের জন্য ইনশা আল্লাহ শিঘ্রই আমি জনসংখ্যার উপরে একটি আর্টিকেল লিখবো। জনসংখ্যা বৃদ্ধি সার্বিক বিবেচনায় ভালো না মন্দ—সে বিষয়টি সেখানে বিস্তারিত তুলে ধরবো ইনশা আল্লাহ।

মানুষের স্রষ্টা আল্লাহ তা’আলা মানুষের মধ্যে তার বিপরিত লিঙ্গের প্রতি এক সহজাত আকর্ষণ সৃষ্টি করেছেন। একের জন্য অন্যের সান্নিধ্যের মধ্যে শারীরিক ও মানসিক প্রশান্তি ঢেলে দিয়েছেন। আর এই সান্নিধ্য প্রাপ্তির আইনগত, ধর্মীয় ও সামাজিক নিয়মের নাম হলো বিয়ে। ইসলামে বিয়ের জন্য নির্দিষ্ট কোনো বয়স সীমা নির্ধারণ করা হয়নি। নারীরও নয়, পুরুষেরও নয়। পুরুষের বয়স বেশী হবে না নারীর—তা নিয়েও কিছু বলেনি। এটা মানুষের স্থান-কাল-পাত্র, পরিবেশ-প্রতিবেশ, মন-মনন, ব্যক্তিগত প্রয়োজন ও রুচিবোধের উপর ছেড়ে দিয়েছে। ইসলাম যেহেতু গোটা সৃষ্টিজগতের স্রষ্টা মহান আল্লাহর দেওয়া ধর্ম। তাই মানুষের মানুষের স্বভাবজাতপ্রবণতা বা ফিতরাতের দাবীকে কখনো উপেক্ষা করেনি। কোনো রকম ভান-ভনিতা, লৌকিকতা ও কপটতার আশ্রয় গ্রহণ করা হয়নি।

মানুষের স্বভাবজাত কোনো প্রবণতাকে যদি কোনোভাবে দমিয়ে রাখার অপচেষ্টা করা হয়, তখন ব্যাক-ফায়ার অনিবার্য। পানির স্বাভাবিক স্রোত যদি বন্ধ করে দেওয়া হয়, তবে সে নিশ্চয়ই বিকল্প পথ বের করে নিবে। আপনারা যারা গ্রামেগঞ্জে গিয়েছেন তারা হয়তো একটি ব্যাপার দেখে থাকবেন। বদ্ধ পুকুর বা জলাশয়ে পানি আসা-যাওয়ার যদি নালা না থাকে তাহলে বিভিন্ন জায়গা থেকে ছোট ছোট ছিদ্র তৈরি হয় পানির নিকটতম স্রোতধারার সাথে। যেটাকে আমাদের অঞ্চলে বলা হয় ‘হাইত্তা’।

২১ ও ১৮ বছর পর্যন্ত বিয়ে নিষিদ্ধ করে যে স্বাভাবিক স্রোতকে বন্ধ করা হয়েছে, তার বিকল্প ‘হাইত্তা’ আপনারা নিশ্চয়ই দেখেছেন। ডাস্টবিন থেকে নবজাতক উদ্ধার। অমুক অমুক এলাকায় রমরমা দেহ ব্যবসা। এক দড়িতে ঝুলে প্রেমিক যুগলের আত্মহত্যা। পত্রিকার পাতায় স্থান না পেলেও আপনি, হ্যা, আপনিও এমন অসংখ্য ঘটনার সাক্ষী। নিজ পরিবার, আত্মিয়-স্বজন, পাড়া প্রতিবেশীদের মধ্যে ঘটে যাওয়া অসংখ্য ঘটনার সাক্ষী আপনি নিজেই। আমাকে এর উদাহরণ দিয়ে দেখিয়ে দিতে হবে না।

যে সমাজে নাটক-ছিনেমা, গল্প-উপন্যাসে, রেডিও-টিভি-বিলবোর্ডের বিজ্ঞাপনে সারাক্ষণ মানুষকে সুড়সুড়ি দেওয়া হয়। যে সমাজে পর্ণছবি বাজারের আলু-পটলের মতো বিক্রি হয়; যে সমাজে অনলাইনে নোংরামী মাত্র একটি ক্লিকের মধ্যে সহজলভ্য করে দেওয়া হয়। অন্য দিকে সহজাত চাহিদা পুরণের বৈধ পথ বন্দ করে দেওয়া হয়, সেখানে পরিস্থিতি কেমন রুপ ধারণ করতে পারে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। যারা এখনও টের পাননি, একটু অপেক্ষা করুন। আমাকে আর বুঝিয়ে দিতে হবে না। আপনিই টের পাবেন হাড়ে হাড়ে। আপনার কলিজার টুকরা কন্যা, প্রাণপ্রিয় ছেলেই আপনাকে প্র্যাকটিক্যাল করিয়ে দেবে।

সত্যিই ভাবনার বিষয়! যেখানে ১৮ বছর বয়সে একজন মানুষ সমাজ ও রাষ্ট্র পরিচালনার মতো জনগুরুত্বপুর্ণ বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেওয়ার জন্য ভোট দেওয়ার উপযুক্ত হয়; সেখানে তাকে বিয়ের মতো একটা একান্ত ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে বলা হয় ‘তুমি অনুপযুক্ত’। বিচিত্র! সত্যিই বিচিত্র!!

বিয়ে-শাদী দেরিতে হওয়ার কারণে মানুষের মধ্যে বাস্তববাদিতা, দায়িত্বশীলতা ও পরিপক্কতারও মারাত্মক অভাব পরিলক্ষিত হয়। এই ছ্যাবলামোর প্রভাব সমাজ জীবনেও প্রতিফলিত হয়। এমন দৃশ্য আপনাদের চারপাশে অহরহ দেখে থাকবেন যে, ২৫-২৬ বছরের এক শক্ত সামর্থ্য যুবক বাপের হোটেলে খায় আর আড্ডাবাজি করে বেড়ায়। সমাজে কোনো অবদান তো রাখেই না, কারো দায়িত্ব তো নেয়ার মুরোদই নাই; বরং সে নিজেই সমাজের জন্য একটা বোঝা, একটা অভিশাপ।

রেস্পন্সিবিলিটি ছেলেদেরকে ‘পুরুষ’ বানায়। শুধু প্যান্ট পরা অর্থে পুরুষ নয়, বাস্তব অর্থে। তার চিন্তা-চেতনায় ও আচার আচরণেও তা ফুটে ওঠে । কথায়ও বলে, A man is not MAN until he takes the responsibilities of others. পুরুষ ততোক্ষণ পর্যন্ত পুরুষ হয় না, যতোক্ষন সে অন্যের দায়িত্ব ঘাড়ে না নেয়। আর এটা যতো তাড়াতাড়ি হবে, সমাজ জীবনেও ততো তাড়াতাড়ি দায়িত্বশীলতার প্রভাব পড়বে।

ইসলাম বিয়ের কোনো বয়স নির্ধারণ না করলেও নীতিগতভাবে প্রাপ্ত-বয়স্ক ছেলে-মেয়েদেরকে যথাসম্ভব তাড়াতাড়ি বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে পবিত্র ও দায়িত্বশীল জীবন যাপনে উৎসাহ দেয়। অতএব আমরাও আমাদের স্রষ্টার নির্দেশনা মানতে চাই। আমাদের অধিকার ফেরৎ চাই। আমরা চাই, আমাদের ছোট ভাই-বোনেরা, ছেলে-মেয়েরা ছাড়া গরু ছাগলের মতো এ ক্ষেতে সে ক্ষেতে মুখ দিয়ে না বেড়াক; তারা দায়িত্বশীল হোক, তাদের মানসিক স্থিতিশীলতা আসুক; তারা পৃথিবীতে অধিক প্রোডাকটিভ ও মেচিউরড ভুমিকা পালন করুক।
আল্লাহ আমাদেরকে সত্য উপলব্ধির তাওফিক দান করুন। আমীন! আমীন!! আমীন!!!

কোথায় পাব তারে


 
বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম

আমি জীবনে যখন প্রথম ‘ক্রাশ খাই’, তখনও বাগধারাটার মানে জানতাম না। জানার কথাও না, কারণ বাগধারাটার মতই খাদ্যদ্রব্য হিসেবে ‘ক্রাশ’ বেশ আধুনিক। আজ থেকে পঞ্চাশ-ষাট বছর আগে মানুষ ‘ক্রাশ’ খাওয়া তো দূরের কথা ক্রাশ খাওয়ার সুযোগও পেত না। আমরা ফিরিঙ্গিদের দেখাদেখি সিনেমা-নভেল-নাটকের বরাতে সভ্য-ভব্য হয়েছি, পাৎলুন পরে শিল্প-ঐতিহ্য চর্চায় নেমেছি। শেষমেশ ঘরের কোণে এক বাক্সে বাঈজীখানা, থিয়েটার আর সিনেমা হল বন্দী করে সভ্যতার সুঁইয়ের মাথায় আরাম করে বসেছি। নব্বইয়ের দশকে আকাশ থেকে সংষ্কৃতির বর্ষণ শুরু হবার পরে সেই সূচবৃষ্টি থেকে বাঁচে কার বাবার সাধ্য! তো রাস্তাঘাট থেকে বনেদি বৈঠকখানা, সকাল-সন্ধ্যা ‘এক লাড়কি কো দেখা তো এয়সা লাগা’ শুনে বড় হওয়া আমার জন্য যা অবধারিত ছিল, তাই হয়ে গেল। আমি ক্রাশ খেলাম।

ধর্ম মানি আর না মানি, ধর্মবোধটা আমার মধ্যে সবসময়ই টনটনে ছিল। বিড়ালতপস্বীদের কিভাবে হাত করতে হয় সেটা শয়তান ভালই জানে। অধিকাংশ ক্রাশের সূতিকাগার ‘স্যার’-এর বাসায় যে মেয়েটা আমার মনে ধরল তার মাথাসহ সারা গায়ে জড়ান ছিল বিশাল এক কাল চাদর। সুন্দর চেহারার সাথে ধার্মিক চলন – আর কি লাগে? পড়ার বইয়ের চেয়ে জানালা দিয়ে আকাশের মেঘ দেখতে বেশী ভাল লাগা শুরু করল। সে সামনে দিয়ে হেটে যায় আর আমি নড়তেই পারিনা। মা লক্ষণ দেখে জিজ্ঞাসা করলেন – কাকে পছন্দ। বললাম। তিনি বললেন –

ক. তুই এখনও মেট্রিক পাশ। তোর কি এমন যোগ্যতা আছে যার কারণে মেয়েটা তোকে পছন্দ করবে? (মোটা চশমা আর গোল-গাপ্পু চেহারা নিয়ে আমি আশার কোন কারণ দেখলাম না )
খ. তোর পায়ে সমস্যা আছে। একটা মেয়ে চাইতেই পারে যে তার স্বামী খুঁড়িয়ে হাটবে না, আর দশজনের মত সুস্থ-নীরোগ হবে। (তিতা, কিন্তু সত্যি কথা। আমি লোহার পাত লাগান জুতা পরি, দৌড়াতে পারি না)
গ. যার মাধ্যমে তুই সত্যিকার যোগ্য হয়ে উঠতে পারবি সেটা হল লেখাপড়া। কিন্তু ইন্টারে প্রেমে পড়লে আর যাই হোক লেখাপড়া হয়না। (এ মর্মে মা বিবিধ পরিসংখ্যান এবং জীবন থেকে নেয়া উদাহরণ উপস্থাপন করলেন)

আমি ক্রাশ হজম করে ফেললাম, নিবিষ্টমনে পড়াশোনায় মনোনিবেশ করলাম।

পরে বহুবার ভেবে দেখেছি মানুষ ক্রাশ খায় কেন বা প্রেমে পড়ে কেন। আল্লাহ সুরা রুমে এই প্রশ্নটার চমৎকার একটা জবাব দিয়েছেন – যেন সে ‘সুকুন’ লাভ করে। সৃষ্টিকর্তা হিসেবে আল্লাহ খুব ভাল করেই জানেন মানুষ অস্থিরতা, নিরাপত্তাহীনতা আর একাকিত্ব থেকে মুক্তি পাবে কিসে। তিনি দয়া করে আমাদের জন্য সঙ্গী সৃষ্টি করেছেন যারা আমাদের ‘সুকুন’ দেবে। সুকুন মানে শান্তিময় একটা পরিবেশে নিমজ্জিত থাকা, যেন পাহাড়ী হৃদের স্বচ্ছ জলে স্তব্ধ এক পাথর। সুকুন মানে জগতের ঝঞ্ঝাময় পরিবেশে হৃদয় জুড়ে থাকা প্রশান্তি, যেন ঝড়ো হাওয়ার তান্ডব আর মুষল বৃষ্টি থেকে পাথুরে প্রাসাদের দেয়া নিরাপত্তা। পুরুষ ও নারী এভাবেই একে অপরকে ভালবাসায় নিমগ্ন করে রাখে, নিরাপত্তা দেয়, প্রশান্তি দেয়, পৃথিবী রূঢ়তা থেকে পালিয়ে বাঁচবার একটা অভয়াশ্রম দেয়। ইসলামের দৃষ্টিতে তাই নারী-পুরুষের সম্পর্ক তাই শুধুই দৈহিক চাহিদা কিংবা বংশরক্ষার মাধ্যম নয় – এর চেয়ে অনেক গভীর কিছু। এই গভীরতা জৈবিক ডারউইনিসম বা সামাজিক ডারউইনিসম এর চশমা পড়া বস্তুবাদী মানুষ মাপতে পারবে না।

আমাদের মানুষদের খুব বড় একটা সমস্যা হল – আমরা সব ভুলে যাই। আমরা যখন ছোট ছিলাম তখন বাসায় এসে ‘বাড়ীর কাজের’ কথা ভুলে যেতাম। এখন যখন ছাত্র পড়াই, তখন হামেশাই ভুলে যাই সে সময়টার কথা যখন আমাদেরও একটুও পড়তে ইচ্ছে করত না। ঠিক তেমনি আমাদের বাবা-মা-বড় ভাইরা দিব্যি ভুলে যান ভাত পেট ভরায়, মন না। ‘থার্মোডাইনামিক্স’, ‘ফার্মাকোলজি’ কিংবা ‘বিজনেস ল’ – সবই মস্তিষ্কে দগদগে ঘা তৈরী করে, হৃদয়ের উপশম তো দূরের কথা। তারুণ্যের অস্থির বয়স পার হয়ে আসা আমাদের অভিভাবকরা কখন আমাদের জায়গায় নিজেকে দাঁড় করিয়ে ভাবেন না – তাদের সন্তানেরাও রক্ত-মাংশে গড়া মানুষ। তাদেরও সুকুন চাইবার অধিকার আছে, সুকুন পাবার দরকার আছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের দিনগুলো মনে পড়ে। কলাভবনে বসন্ত উৎসবের নাম করে ভবিষ্যৎ কপোতদম্পতি হাতে হাত ধরে ঘুরে বেড়াচ্ছে আর আমরা ব্যাকটেরিয়ার কনজুগেশন পড়েই কাহিল। ক্লাস, পরীক্ষা, প্র্যাকটিকাল আর ল্যাবরিপোর্ট লেখার যন্ত্রণার মাঝের সময়টা বন্ধুদের সাথে কাটত। বিকেলে-সন্ধ্যায় টুইশনি। রাতে বিধস্ত অবস্থায় যখন বাসায় ঢুকি তখন মন নিয়ে ভাবনার সময় মিলত না খুব। অর্থহীন শতেক কাজে নিজেকে ব্যস্ত করে রাখা, পাছে বিশাল পৃথিবীতে একা হয়ে যাই! হঠাৎ কখনও বুকের বিশাল শুন্যতা কৃষ্ণ গহবরের মত সব কিছু গ্রাস করে নিতে আসত। একটু সুকুনের জন্য কত পাপের দরজায় কড়া নাড়া! শান্তি তো মিলতই না উলটো নিজের সামনে নিজে ধরা পড়ে গেলে বিবেকের তীব্র দংশন। চারপাশের সম্পর্কগুলো দেখে আর প্রেম করার ইচ্ছে জাগতো না। খালি আল্লাহর কাছে ভিক্ষে চাইতাম এমন একজন মানুষ সঙ্গীকে যে আমার সমস্যাগুলো বুঝবে। যে একান্তই আমার হবে; আর আমি যার কাছে নিজেকে উজাড় করে দিতে পারব। যে আমার ভাল-মন্দ সব সহই গ্রহণ করবে। যে আমার গুণগুলোর গোলাপ গাছে উৎসাহের পানি দেবে; দোষগুলোর আগাছা ভালবেসে দেখিয়ে দেবে, সেগুলো উপড়ে ফেলতে হাতে হাত রাখবে। এত বড় পৃথিবী – এত মানুষ; অথচ মনের মানুষের খোঁজ মিলল না। সব মিথ্যা প্রচেষ্টা ব্যর্থ হল।

এমনই একটা সময়ে ইসলাম সম্পর্কে জানার, পড়াশোনার আগ্রহ বাড়তে থাকল। জানার সাথে সাথে আবিষ্কার করলাম এতদিন যেসব দিয়ে পরকালের আসল জীবনটাকে ভুলে ছিলাম সেগুলোর অন্তসারহীনতা। তখন হঠাৎ বুঝতে পারলাম এই বিশাল পৃথিবীরই একটা ছোট কোণে আল্লাহ ঠিক এইভাবেই আরেকজনকে মানুষকে অপেক্ষা করাচ্ছেন। আমাকে যেমন তিনি তৈরী করছেন তাকেও তিনি প্রস্তুত করছেন সেই বিশেষ ক্ষণটির জন্য। যে দিন তিনি আমাকে আমার ‘লিবাস’, আমার সারা জীবনের পরিচ্ছদের সাথে একত্রিত করবেন। যে মুহূর্তে দু’টো মানুষ কেবল আল্লাহকে ভালবেসে, তাকে সন্তুষ্ট করার উদ্দেশ্যে একসাথে জীবনের বাকি পথ পাড়ি দেবার সংকল্প করবে।

একজন মুসলিম তাই যখন আল্লাহর দরবারে হাত তুলে কেঁদে বলে, আল্লাহ এই পৃথিবীতে পবিত্র থাকতে চাই বলেই তোমার কাছে একজন পবিত্র জীবনসঙ্গী চাইছি – আল্লাহ সে হাত ঘুরিয়ে দেন না। কিন্তু তার আগে তিনি পরীক্ষা নেন, আসলেই এই চাওয়াতে কতটা আকুলতা মিশে আছে। যে জিনিসটা খুব সহজে পাওয়া যায়, তার মূল্য মানুষ বোঝে না। যা অনেক চাওয়ার পর, অনেক ধৈর্য ধরার পর মেলে তার কদর থাকে বেশী। একজন মুসলিমের জন্য তার জীবনসঙ্গীর চেয়ে মূল্যবান আর কিছুই নেই এই পৃথিবীতে। তাই আল্লাহ প্রকৃত মুসলিমদের অনেক ধৈর্যের পরীক্ষা নিয়ে তবেই তাকে সেটা দেন। এই পরীক্ষা যারা দেয় না, তাদের প্রাপ্তিটার মূল্যও তারা বোঝে না। আমাদের চারপাশে মিথ্যা ভালবাসার বন্যায় যারা ভেসে যায় তাদের সম্পর্কটা তাই খুব ঠুনকো হয়। সামান্য সন্দেহ, ছোট্ট ভুল বোঝাবুঝি কিংবা চাওয়া-পাওয়ার কষে আসা অংকের উত্তরে একটু গরমিল দেখলেই এ সম্পর্কের অস্তিত্ব নিয়ে টানাটানি পড়ে। যে সম্পর্ক সুকুন দেয়ার কথা ছিল, সেই সম্পর্ক নরকযন্ত্রনা নিয়ে হাজির হয়। কত মানুষ সেই যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে পৃথিবী ছেড়েই চলে যায়।

বিয়েকে রসুলুল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দ্বীনের অর্ধেক বলে সাব্যস্ত করেছেন১ এবং কিসের ভিত্তিতে এই সম্পর্কটা হবে তাও তিনি বলে দিয়েছেন। কিন্তু বাংলাদেশের তথাকথিত মুসলিম সমাজ ইসলামের থোড়াই কেয়ার করে। যেখানে রসুলুল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অভিভাবকদের স্পষ্ট নির্দেশ দিলেন যদি কোন মুসলিম যুবকের দ্বীন এবং ব্যবহার তোমাকে সন্তুষ্ট করে তাহলে তোমার অধীনস্থ নারীর সাথে তার বিয়ে দাও। এর অনথ্যা হলে পৃথিবীতে ফিতনা ও দুর্নীতি ছড়িয়ে পড়বে বলেও তিনি ভয় দেখিয়েছেন।২ অথচ আমাদের দেশে ছেলে দেখা বলতে বোঝান হয় ছেলের অর্থসম্পদের পরিমাণ দেখা। চরিত্রও যে একটা সম্পদ এবং একজন মুসলিম তরুণ তার সচ্চরিত্র দিয়ে একটা মেয়েকে কতটা সুখী রাখতে পারে সেটা অভিভাবকেরা ভেবে দেখেননা। একটা লম্পট বিয়ের আগে পাঁচটা প্রেম করলেও লাখ টাকা বেতন পায় বিধায় ভাল পাত্র হিসেবে বিবেচিত হয়। টাকার গুণে তার শত লুইচ্চামিও মোল্লা ছেলের দাড়ির চেয়ে অনেক বেশী সহনশীল মনে হয়। অথচ স্বয়ং আল্লাহ রব্বুল আলামিন ওয়াদা করেছেন কোন অভাবী যদি বিয়ে করে তবে তিনি আপন ঐশ্বর্যের দ্বার তার জন্য খুলে দেবেন, তাকে অভাবমুক্ত করে দেবেন।৩ মাথায় টুপি পড়া, পাঁচ ওয়াক্ত সলাত পড়া বাবারাও যখন আল্লাহর আয়াতের চেয়ে ব্যাংকের স্টেটমেন্টকে বেশী বিশ্বাস করে, তখন  দুঃখে বুক ভারী হয়ে আসে। আল্লাহর প্রতিশ্রুতি কি মসজিদের তাকে ধূলার আস্তরণে বন্দী হয়ে থাকবার জন্য নাযিল হয়েছিল? অথচ আজ পাশ্চাত্যের বিজ্ঞানীরা দেখিয়েছেন শুধুমাত্র বিবাহিত হবার কারণে প্রতিবছর মানুষের সম্পদ ৪ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পেতে পারে।৪

কিন্তু দিনশেষে আমাদের স্বীকার করে নিতে হয় বিয়ে একটা সামাজিক ইবাদাত। আমাদের বাবা-মার উপরেই আমাদের জোর চলে না, মেয়ের বাবা-মা তো দূরের কথা। তাই আমরা ফিরে যাই আমাদের শিক্ষক রসুলুল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে যিনি বিবাহযোগ্য অথচ অবিবাহিত তরুণদের শিক্ষা দিয়েছেন বিয়ে না করতে পারলে সিয়াম পালন করতে, কারণ এই সিয়াম তার জন্য ঢাল হয়ে পাপের রাশিকে প্রতিহত করবে।৫ আমি এমন মুসলিম ভাইকে চিনি যিনি বিয়ের আগে নিয়মিত একদিন অন্তর একদিন সিয়াম পালন করতেন। আলহামদুলিল্লাহ, এর ফলে আল্লাহ তাকে খুব চমৎকার একজন স্ত্রী উপহার দিয়েছেন। আমরা ফিরে যাই আমাদের প্রকৃত অভিভাবক, আমাদের রব্ব – আল্লাহর কাছে, তাকে কাতর কন্ঠে বলি –

رَبِّ إِنِّي لِمَا أَنزَلْتَ إِلَيَّ مِنْ خَيْرٍ فَقِيرٌ

হে আমার রব্ব, তুমি আমার প্রতি যেই অনুগ্রহ নাযিল করবে, আমি তারই মুখাপেক্ষী৬
হয়ত আল্লাহ মুসা আলাইহি ওয়া সাল্লামের মত স্ত্রী এবং রিযিক – দুইয়েরই ব্যবস্থা করে দেবেন। আমরা আত্মার শান্তির জন্য আল্লাহর কাছে আকুলভাবে বলি -

رَبَّنَا هَبْ لَنَا مِنْ أَزْوَاجِنَا وَذُرِّيَّاتِنَا قُرَّةَ أَعْيُنٍ وَاجْعَلْنَا لِلْمُتَّقِينَ إِمَامًا

হে আমাদের পালনকর্তা, আমাদের স্ত্রীদের পক্ষ থেকে এবং আমাদের সন্তানের পক্ষ থেকে আমাদের জন্যে চোখের শীতলতা দান করুন এবং আমাদেরকে মুত্তাকীদের জন্যে আদর্শস্বরূপ করুন৭

আল্লাহ যেন আমাদের মুসলিম তরুণ ভাই/বোনদের জন্য ইসলাম মেনে জীবন ধারণ করা সহজ করে দেন। তিনি যেন আমাদের ‘লিবাস’, আমাদের প্রাণসখা-দের সাথে আমাদের শীঘ্রই মিলিয়ে অস্থির একাকিত্ব থেকে মুক্তি দেন। আমিন।

-----------------------------------------------------------------------------------
১ আল হাকিম তার আল মুসতাদরাকে আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন।
২ আল তিরমিযি তে আবু হুরাইরা (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। আলবানি হাদিসটিকে হাসান বলেছেন।
৩ সুরা আন নূর, ২৪:৩২
৪ ওহিও স্টেট ইউনিভার্সিটির সেন্টার ফর হিউম্যান রিসোর্স রিসার্চ এর গবেষক জ্য জাগরস্কি এর গবেষণা সূত্রে
৫ সহীহ বুখারি ১৯০৫, সহীহ মুসলিম ১৪০০
৬ সূরা আল কাসাস, ২৮:২৪
৭ সূরা আল-ফুরকান, ২৫:৭৪

ভালবাসার মানুষটিকে কি কাঁদানো যায়?

ভালবাসা কথাটা প্রত্যেকের মনকেই হালকা একটা নাড়া দিবেই। প্রেমে পড়ে নি এমন মানুষের সংখ্যা নেই বললেই চলে। হোক সে বিয়ে পূর্ববর্তী প্রেম, বা বিয়ের পরে স্বামী-স্ত্রীর মাঝে প্রেম। প্রেমে পড়ে যাওয়া খুবই সহজ। কেউ সুন্দর করে আপনার দিকে একবার তাকালো, একটা লাজুক হাসি উপহার দিল, অথবা হলো আপনাদের মাঝে তুমুল ভুল বুঝাবুঝি আর ঝগড়া, যেন কেউ কাউকে দেখতে পারেন না, এই খুনসুটির রেশ ধরে তারপর যথাক্রমে বন্ধুত্ব, প্রেম, ভালবাসা! এই ভালবাসার কতো যে রূপ, আর কতোভাবেই না তা আপনার উপর এসে পড়তে পারে। সত্যি বলতে মানুষের স্বভাবগত বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী আমরা প্রত্যেকেই ভালোবাসা পেতে চাই, কেউ আমাদের জন্য ‘কেয়ার’ করে এমনটা দেখতে চাই। আমরা হতে চাই কারো জীবনের ‘স্পেশাল’ একজন। প্রকৃতিগত কারণেই বিপরীত লিঙ্গের প্রতি এক ধরণের আকর্ষণ অনুভব করি।


প্রেমের সম্পর্কটা কেমন হওয়া উচিত তা নিয়ে অনেক কথা প্রচলিত আছে। লোকমুখে খুব চলে এমন একটা কথা হলো – ‘ভালোবাসায় শুধু দিয়ে যাও, কিছু পাবার আশা করো না’ ; সত্যিকার ভালোবাসা নাকি সেটা যখন নিঃস্বার্থ ভাবে ভালোবাসা যায়, যখন প্রিয় মানুষটির জন্য সবকিছু উৎসর্গ করে দেয়া যায়, নিজের চাওয়া-পাওয়ার কথা না ভেবে তার সুখের কথাই শুধু চিন্তা করতে হয়। আসলে এটা কি সম্ভব? মানুষের নিজের কিছু চাওয়া-পাওয়া তো থাকবেই, তা যতক্ষণ পূরণ না হচ্ছে সে কীভাবে সুখী হবে?


বর্তমান সমাজে প্রায় প্রত্যেকটা ছেলেমেয়ের বিবাহ পূর্ববর্তী সম্পর্ক আছে। তারা বলে ‘প্রেম’ - এই প্রেমে কয়জন সুখে আছে? সবচেয়ে প্রিয় মানুষটিই দেখা যায় আপনাকে সবচেয়ে বেশি ‘হার্ট’ করে, কষ্ট দেয়, কখনও বা আপনাকে অবহেলা করে। আপনি কি তার অবহেলার পাত্র? আপনাকে সে ভালবাসে ‘নিজের জীবনের চেয়েও বেশি’ অথচ আপনার প্রতি তার আচরণ যাচ্ছেতাই। যখন আপনাকে দরকার হয় আপনার কাছে আসে, ভালো ব্যবহার করে, আবার মুহূর্তেই আপনার হৃদয়টাকে ভেঙ্গে টুকরো টুকরো করে দিতেও তার বাধে না। আপনাদের দিনে দুইবার ঝগড়া হয়- তুচ্ছ কারণে। আপনাদের রিলেশনের ‘মেইক আপ’ আর ‘ব্রেইক-আপ’ চলতেই থাকে। আপনার খুব কষ্ট হয়। মনে হয় যেন ভালবাসার আরেক নাম বেদনা। অথচ আপনি তারপরেও তার কাছেই আবার ছুটে যান। প্রাণ উজাড় করে ভালবাসেন।


মাঝে মাঝে প্রেমের ঘটনাগুলা এমন হয়, আপনি যাকে এতো ভালবাসেন সে হয়ত আপনাকে পাওয়ার যোগ্য পর্যন্ত নয়। সে হয়ত কোন মাদকাসক্ত, ধূমপায়ী, আপনি সারাজীবন যা অপছন্দ করে এসেছেন, কিন্তু ভালবাসার মানুষটিকে পাবার জন্যে তাও মেনে নেন। হয়ত আপনি প্রেমে পড়েছেন এমন একজনের যে কথায় কথায় আপনার সাথে রাগ করে, আপনাকে ভুল বুঝে, আপনাকে সবকিছুর জন্য দোষারোপ করে তাও আপনি বুকে পাথর বেঁধে মুখে হাসি টেনে তার কাছেই ফিরে যান কিন্তু কেন?


বার বার সম্পর্ক ভেঙ্গে দেবার কথা ভেবেও আপনি পারেন না। আপনি শুধুই তাকেই মিস করেন। আপনি শুধু তাকেই ভালবাসেন এতোকিছুর পরেও।


অনেকে আছে, প্রেম করার দু’ বছর পর জানতে পারে, তার প্রিয় মানুষটির জীবনে আরো একজন আছে! আরেক ছেলে/মেয়ের সাথে সম্পর্ক। এরপরেও আপনি ক্ষমা করে দেন। কারণ আপনি তাকে ভালবাসেন।


ব্যাপারটা আসলে ‘ভালোবাসা’-র মহৎ প্যাকেজিং এ নিজেকে হাজির করলেও মূলত বিষয়টা অতো মহান নয়। আপনি একজনকে ভালবেসে অবশ্যই কিছু পাচ্ছেন। ‘আপনার’ নিজের কাছে ঐ ব্যক্তির সাথে কথা বলতে ‘ভালো লাগে’, আপনার কাছে মনে হয় ঐ মানুষটি ছাড়া ‘আপনি’ জীবনে চলতে পারবেন না, ‘আপনার’ বেঁচে থাকা অর্থহীন। তাই নিজের মনের এই তীব্র অনুভূতির জন্য স্বার্থপরের মত আপনি নিজেই মানুষটির পিছনে ধেয়ে যান। সব দুঃখ-কষ্ট, যা মেনে নেয়া যায়না এমন সব ব্যবহার, মনটাকে এফোঁড় ওফোঁড় করে দেয় এমন কথা সহ্য করেও অশ্রুভেজা চোখ নিয়ে আপনি তারই কেনা গোলাম হয়ে পড়ে থাকেন, কারণ আপনার কাছে তার সাথে কাটানো সময়গুলো যেন অনন্য মনে হয়, সে আপনাকে দু’টি ভালবাসার কথা বলেছে- এমনটি তো কেউ বলে নি! সে আপনার কথা মন দিয়ে শুনেছে, আপনার হাতে হাত রেখেছে এসব মুহূর্ত আপনাকে বাধ্য করে তার কাছেই ফিরে যেতে। আপনি স্বীকার করুন বা না করুন- মোটের উপর তার সাথে আপনার এমন কিছু আনন্দঘন সময় আছে, যেটা পাবার আশায় আপনি তার অত্যাচারগুলিও সহ্য করে নেন।


কিন্তু একটা সম্পর্ক কি এমন হওয়া উচিত যেখানে বছরের ৩৬৫ দিনেই কষ্ট পেতে হবে। যেখানে সে আপনার কথা ভাবছে না, ভাবছে তার নিজের কথা। সে আপনাকে কষ্ট দিয়েও মজা পাচ্ছে। আপনার পছন্দ-অপছন্দের থোড়াই পাত্তা দেয় সে। এমন একটা বন্ধনে নিজেকে আপনি বেধে রাখছেন শুধু একটু ‘ভালোবাসা’ পাবার আশায়? দুইদিক থেকেই এখন সম্পর্কটা হয়ে গেল ‘নিজের আকাঙ্ক্ষা’ ‘নিজের ইচ্ছা’ কে গুরুত্ব দিয়ে। তাই আজীবন ভালোবাসার বন্ধনে থেকেও শেষ পর্যন্ত মনে হয় ‘আমি কতো একা’... দিনশেষে যেন আপনার কষ্টগুলো বুঝার মত কেউ-ই নেই। কখনো আপনি কাছের বন্ধুকে ফোন করে বুঝানোর আপ্রাণ প্রচেষ্টা করেন, কিন্তু এভাবে প্রতিদিন আর কতো? তাই একসময় নিজেই ডিপ্রেসড হয়ে পড়েন। ‘ভালোবাসা’ যা আপনাকে আনন্দ দেয়ার কথা ছিল, তা হয়ে যায় আপনার জীবনের চরম একটা ‘পেইন’ ! কিন্তু এমনটা তো হবার কথা ছিল না!


মানুষের এই ভালোবাসা পাওয়া, ভালোবাসতে চাওয়ার অনুভূতিগুলো স্বাভাবিক বৈশিষ্ট্য। তা কিভাবে সঠিকভাবে পূরণ হবে তা আল্লাহ খুব ভালোভাবে বলে দিয়েছেন। ইসলামে প্রেমপূর্ণ সম্পর্কের একমাত্র মাধ্যম বিয়ে। আল্লাহ তা'আলা মানুষের জন্য সৃষ্টি করেছেন সঙ্গী, আর তাদেরকে বানিয়েছেন পরস্পরের জন্য ‘লিবাস’ অর্থাৎ পোশাক যে আপনার দোষ-ত্রুটি গুলো ঢেকে রাখবে, আপনাকে রক্ষা করবে, যে আপনার সাথে থেকে আপনার সৌন্দর্য্য বর্ধন করবে। এমন একজন নয় যে আপনাকে ‘ব্যবহার’ করবে ইচ্ছামত তারপর দূরে ছুঁড়ে ফেলে দিবে। আপনি ভালোবাসা পাবার জন্য আকুল হন, বিয়ের আগে প্রেম না থাকলে, কীভাবে বিয়ের পরে তাকে ভালোবাসবেন বুঝতে পারেন না! অথচ আল্লাহ তা’আলার কতো সহজ হিসাব, কতো দয়া। তিনি বলেন, বিয়ে হলে তিনিই আপনার মাঝে সৃষ্টি করে দিবেন দয়া, মমতা আর প্রেম। যে আল্লাহ আপনাকে সৃষ্টি করতে সক্ষম, তিনি কি আপনাদের মাঝে ভালোবাসা সৃষ্টি করতে পারবেন না?


স্বামী বা স্ত্রীর প্রতি সম্পর্ক কেমন হবে তা নিয়েও বিস্তারিত আলোচনা আছে ইসলামে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘তোমাদের মাঝে সেই ব্যক্তি সেরা যে তার স্ত্রীর কাছে সেরা (স্ত্রীর সাথে ভালো ব্যবহার করে)’ - এ কথাটি যেই পুরুষ মেনে চলেন তিনি কীভাবে তার স্ত্রীর সাথে খারাপ ব্যবহার করবেন? স্ত্রীর প্রতি তার আচরণ হবে নম্র, ভালবাসায় মেশানো কথা দিয়ে তিনি বউ এর মন জয় করবেন, স্ত্রী কে সম্মানের সাথে দেখেশুনে রাখবেন। তেমনি নারীদের প্রতি বলা হয়েছে, যদি একজন মুসলিমাহ নামাজ পড়ে, রমযান মাসে রোজা রাখে, পবিত্রতা রক্ষা করে এবং স্বামীর কথা মেনে চলে তাহলে তাকে বলা হবেঃ ‘যে দরজা দিয়ে খুশি জান্নাতে প্রবেশ করুন’.. একজন স্ত্রী যিনি আল্লাহকে ভয় পান আর জান্নাতে যাবার স্বপ্ন দেখেন তিনি কি পারবেন স্বামীকে কষ্ট দিতে? স্বামীর ভালো কথা না শুনতে? তিনি আপ্রাণ চেষ্টা করবেন কীভাবে স্বামীকে খুশি করা যায়।


এবার চিন্তা করে দেখুন, যার মাঝে এই আল্লাহর ভয় নেই, কী তাকে আপনার সাথে খারাপ ব্যবহার করা থেকে বাঁধা দিবে? কোন মহৎ কারণে সে আপনার কথা নিজের কামনা-বাসনার চেয়ে বেশি চিন্তা করবে? অনেককে দেখেছি যারা চুটিয়ে প্রেম করে বিয়ে করবার পরেও বিবাহ জীবনে সুখী হয় না। এর কারণ অল্প বয়সের তীব্র আকর্ষণ বেশিদিন টিকে থাকে না। শারীরিক সৌন্দর্য্যের মোহ দিয়ে বেশিদিন কাউকে ভুলিয়ে রাখা যায়না, তাছাড়া চরিত্র আচার-ব্যবহার বাদে টাকা-পয়সা, রূপ-সৌন্দর্য্য এ সবই ক্ষণস্থায়ী। বিয়ের কিছুদিন পর তাই বউ কে মনে হয় বোরিং, বউ রেখে অফিসের কলিগটাকেই বেশি সুন্দর লাগে। স্বামীকে মনে হয় ‘কই আগের মত তো আর ভালবাসে না’ এর চেয়ে আমার বন্ধুটাই তো আমার ফিলিংস এর বেশি কদর করে। এভাবে সম্পর্কে নানা রকম টানাপোড়েন শুরু হয়ে যায়।


যে ব্যক্তি নিজের ইচ্ছাকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়ে আপনাকে আজ ভালবাসছে, সে আগামীকাল নিজের শখের বশে অন্য কারো কাছে ছুটে যেতেও দ্বিধা করবে না। নিজের ফ্রিডম থেকে যে নিজের সৃষ্টিকর্তাকে অবজ্ঞা করতে পারে, সে আপনাকে অবজ্ঞা করতে পারবে না? তার নিজের কি করা উচিত সেটায় সে আর কারো কথা শুনে না। আপনার কথা কেন শুনবে? তার মাঝে দায়িত্ববোধ আসে নিজের পছন্দমত সময়ে, তাই আজ সে আপনার দায়িত্ব নিলেও কাল সংসার তার কাছে বোঝা মনে হওয়া অস্বাভাবিক নয়। দুজন মানুষ আল্লাহর ভয়ে একে অপরকে ভালবসাবে, শ্রদ্ধা করবে, পরিবারের দায়িত্ব ভাগাভাগি করে নিবে- এই ভালোবাসার মাঝেই আছে প্রেম, মায়া, শান্তি। এছাড়া রাস্তাঘাটের কোনাচিপায় লুকিয়ে যেই দুইদিনের আবেগময় প্রেম চলে তা খুবই সস্তা। খুবই ভঙ্গুর।

ভালোবাসা কারে কয়...

ভালোবাসা—বিধাতার এক বিস্ময়কর মূল্যবান সৃষ্টি। ভালোবাসা চোখে দেখা যায় না। হৃদয়ে হৃদয় রেখে অনুভব করতে হয়। সব কল্যাণ বা মঙ্গলময় ও অকল্যাণ ঘটনার মূলে প্রেম-ভালোবাসা শব্দের রয়েছে নিগূঢ় অস্তিত্ব, নির্ভেজাল সম্পর্ক।
প্রিয়তমা স্ত্রী মমতাজকে ভালোবেসে যেমন সম্রাট শাহজাহান গড়েছিলেন কালের সাক্ষী প্রেমের নিদর্শন ‘তাজমহল’, অন্যদিকে হেলেন প্যারিসের প্রেম ঐতিহাসিক ট্রয় সভ্যতাকে করেছে ধ্বংস। সহস্র বছর ধরে প্রেম-ভালোবাসা যেমন সৃষ্টি করেছে শিল্প-সাহিত্য-সভ্যতা, সৃজনশীল কাব্য-কাহিনী, স্মৃতিস্তম্ভ; তেমনি অন্যদিকে সংসার ভেঙে করেছে বৈরাগী, করেছে সন্ন্যাসী, ধর্মান্তর-দেশান্তর। যুগে যুগে ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে, প্রেমে মশগুল হয়ে রচনা করেছেন অজস্র কবিতা কত শত কবি।
তারপরও ভালোবাসা বা প্রেমের সঠিক সংজ্ঞা আজও মেলেনি, জানা যায়নি। তাই তো প্রতিটি ভ্যালেনটাইন্স ডে বা ভালোবাসা দিবস একটি প্রশ্ন নিয়েই হাজির হয়— ‘ভালোবাসা কারে কয়?’ একি শুধুই যাতনাময়?
ভালোবাসা নিয়ে কালজয়ী উপন্যাস-গল্প-সিনেমা-নাটক-গান-কবিতা রচিত হলেও সত্যিকার প্রেম রহস্যময়, দুর্বোধ্য। আজও প্রেমের রহস্য এত সুকঠিন, সুবিশাল। প্রেম বিচিত্র বলেই পুরোপুরি জয় করা সম্ভব হয়নি। তাই তো এই শব্দটিতে সবার দুর্নিবার আকর্ষণ। আর আকর্ষণ থাকবে নাই-বা কেন? ভালোবাসা ছাড়া পৃথিবীতে আছে কিই-বা!
ভালোবাসা মানে কি হাতে হাত রেখে পার্কে ঘোরা? ভালোবাসা মানে কি কাঁধে বা কোলে মাথা রেখে গল্প বলা? ভালোবাসা মানে কি প্রেমিকার চুলের সুঘ্রাণ?
না! এসব শর্ত আমি মানি না।
তবে কি ভালোবাসা মানে দেহ সীমার বাইরে দুটি শুদ্ধ হৃদয়ের নির্মল আত্মীয়তা!
ভালোবাসা মানে নিজেকে কষ্টের আগুনে পুড়িয়ে মনকে খাঁটি সোনা করে গড়ে তোলা।
নাকি ভালোবাসা মানে রাধার ডাগর চোখের জল?
আর এ প্রশ্নের উত্তর জানা হয়নি বলেই একাকী কেটে গেল এতগুলো বর্ণিল বসন্ত, লাল টক্টকে অনেক ‘ভালোবাসা দিবস’। শুধু ‘ভালোবাসা’ শব্দের মানে খুঁজে পায়নি বলে আজও কাউকে বলা হলো না—
‘পৃথিবীর সব প্রেম দেব নর
আর বিশুদ্ধ অন্তর!
যদি বলো হেসে,
আর— এট্টুসখানি ভালোবেসে
চলো যাই-সখী, নিরুদ্দেশে।’
কখনও মনে হয় ভালোবাসা মানে মুক্তি। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের এই গানের কলির মতো—‘তুমি সুখ যদি নাহি পাও যাও সুখের সন্ধানে যাও/আমি তোমারে পেয়েছি হৃদয়ও মাঝে/আরো কিছু নাহি চাই গো।’
অর্থাত্ তুমি যাকে ভালোবাস তাকে মুক্ত করে দাও। সে যদি তোমাকে ভালোবাসে তাহলে তোমার কাছে ফিরে আসবে। এখানে ত্যাগই মুখ্য।
ডেল কার্নেগীর মতে, পৃথিবীতে ভালোবাসার একটিমাত্র উপায় আছে, সে হলো প্রতিদান পাওয়ার আশা না করে ভালোবেসে যাওয়া। অর্থাত্ সেই ত্যাগের গুণেই মহীয়ান হওয়ার কথা।
রবীন্দ্রনাথের মতে, ‘প্রেম এমনই বস্তু যা শুধু মস্তিষ্কে নয়, বুকের প্রতিটি রক্তকণিকার মধ্যে উপলব্ধি করতে হয়। তিনি সারাজীবন মানসী প্রতিমার ধ্যানেই মগ্ন থেকেছেন। তাকে স্পর্শ করতে পারেননি। প্রিয়ার বিরহে কাতর কবি নজরুল ইসলামও ধরতে পারেননি রহস্যময়ীর শাড়ির আঁচল। তাই তো তিনি লিখেছেন—
‘নাই-বা পেলাম আমার কণ্ঠে তোমার কণ্ঠহার
তোমায় আমি করিব সৃজন এ মোর অহংকার।’
প্লেটো বলেছেন—প্রেমের পরশে প্রত্যেকে কবি হয়ে ওঠে। কয়েক লাইন কবিতা লেখার অপচেষ্টা করে আমি যে ধৃষ্টতা দেখিয়েছি, এটাও প্রেমের পরশে কি-না বলা মুশকিল। প্রেম এবং পুরুষ দুটোই রহস্যময়! পুরুষেরা অবশ্যই ভিন্ন কথা বলে থাকেন। জে.বি. ইয়েটস বলেছেন, যে পুরুষ একটি নারীকে বুঝতে পারে, সে পৃথিবীর যে কোনো জিনিস বুঝতে পারার গৌরব করতে পারে। তারা পুরুষ বলেই হয়তো নারী হৃদয়ের রহস্য খুঁজেছেন। কিন্তু পুরুষের জটিল মন সমুদ্রের চেয়েও একটু বেশি গভীর নয় কি? যার কখনও তল খুঁজে পাওয়া যায় না, গভীরতা পরিমাপ করা যায় না। রহস্য উদ্ঘাটন এক জনমে তো নয়ই, আর জনমেও সম্ভব কিনা ভাবার বিষয়। পুরুষের মন কখনও মনে হয় হেমন্তের আকাশ; যা ক্ষণে ক্ষণে রং বদলায়। যেখানে কখনও মেঘ, কখনও বৃষ্টি, কখনও করে অনাসৃষ্টি। যে আকাশে কল্পনায় শুধু মেঘ হয়ে ভাসা যায়, ঘুড়ি হয়ে ওড়া যায়! বাস্তবে তাকে কখনও ছোঁয়া যায় কি? মনে হয়, দূরে মাটির সঙ্গে মিশেছে কোথাও, তবু ধরতে তারে পারিনি আমি আজও। যুগে যুগে প্রেম-ভালোবাসা নিয়ে রচিত হয়েছে কত কবিতা, কত গান। প্রেমের তরে কেউ হয়েছে কোরবান। তারপরও ‘ভালোবাসা’ শব্দটির শেষে প্রশ্নবোধক চিহ্ন রয়েই গেছে। কবি-সাহিত্যিক, দার্শনিক, মনীষীরা প্রেমের বিভিন্ন বিচিত্র ব্যাখ্যা দিয়েছেন, ভালোবাসাকে নানাভাবে সংজ্ঞায়িত করেছেন। তারপরও ভালোবাসা সমুদ্রের তলদেশের মতোই আজও রহস্যময় হয়েই দেখা দেয়। নিম্নে প্রেমের কিছু সংজ্ঞা তুলে ধরা হলো।
* মানুষের একটি শাশ্বত ও মহান প্রয়োজন হচ্ছে প্রেম।
—আনাতোল ফ্রাঁস
* ভালোবাসার কোনো অর্থ নেই, কোনো পরিমাপ নেই।
—সেন্ট জিরোথী
* যেখানে প্রেম নেই, সেখানে সত্যি নেই। কেবলমাত্র তারই মূল্য আছে যে কোনো কিছুকে ভালোবাসে, ভালোবাসা না থাকলে নিজের অস্তিত্ব না থাকারই শামিল। —ফয়ের বাখ
* খ্যাতির চেয়ে ভালোবাসা ভালো। —বেয়ার্ড টেলর
* যাকে সত্যিকারে ভালোবাসা যায় সে অতি অপমান, আঘাত করলে, হাজার ব্যথা দিলেও তাকে ভোলা যায় না।
— কাজী নজরুল ইসলাম
* ভালোবাসা যে পেল না, আর ভালোবাসা যে কাউকে দিতে পারল না, সংসারে তার মতো দুর্ভাগা আর নেই। —কীটস
* প্রেম হচ্ছে সবকিছুর শুরু, মধ্য এবং অন্ত। —লার্কভেয়ার
* ভালোবাসা তালাবদ্ধ হৃদয়ের দুয়ার মুহূর্তে খুলে দেয়। —টমাস মিডলটন
এখানে আশার বাণীর সুর শোনা যায়। তার মানে ভালোবাসা এমনি এক অদৃশ্য শক্তি যার ক্ষমতাবলে পৃথিবীর অনেক অসাধ্য সাধন করা সম্ভব। ভালোবেসে পাথরেও ফুল ফোটানো সম্ভব; অনেকটা এরকমই।
* একমাত্র ভালোবাসাই সারাতে পারে সব রোগ। ভালোবাসার আকাশেই জ্বলে হৃদয়ের শুকতারা। প্রেম জীবনে ধ্রুবতারা। —গ্যাটে
* সোনায় যেমন একটু পানি মিশিয়ে না নিলে গহনা মজবুত হয় না, সেরকম ভালোবাসার সঙ্গে শ্রদ্ধা, ভক্তি না মেশালে সে ভালোবাসা দীর্ঘস্থায়ী হয় না।
—নিমাই ভট্টাচার্য
প্রেম জীবনকে করে ঐশ্বর্যবান, হৃদয়কে করে বিশাল। সার্থক ভালোবাসা দুঃখ-যন্ত্রণা জয়ের মহৌষধও বটে। ধন-সম্পদ ফুরিয়ে যায়, আরাম-আয়েস অন্তর্হিত হয়, আশা শুকিয়ে যায়, রূপ-যৌবন সময়ের ব্যবধানে বিবর্ণ হয়ে যায়। কিন্তু ভালোবাসা অবিনশ্বর। ভালোবাসা স্বর্গীয়। মানুষ মরণশীল। তাই মানুষকে মৃত্যুর স্বাদ আস্বাদন করতে হয়। ভালোবাসা অমর। তাই তো সোফোক্লিস বলেছেন—হে প্রেম, তোমার শক্তি অপ্রতিরোধ্য, তুমি মরণের পরেও হয়েছো জয়ী। সভ্যতার বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে যুগে যুগে ফ্যাশনে ও রুচিতে পরিবর্তন এসেছে, বদল এসেছে ভালোবাসা প্রকাশের ধরনেও। তাই বলে প্রেমের তাত্পর্য, পবিত্রতা ভুলে গেলে হবে না। ইদানীংকার বিশেষ করে টিনএজ ছেলেমেয়েরা প্রেমের সঠিক অর্থ এবং যথার্থ মূল্যায়নে ব্যর্থ হয়ে সাময়িক আবেগে আত্মনিয়ন্ত্রণ হারিয়ে
দেহকেন্দ্রিক প্রেমের দিকে বেশি ঝুঁকছে বা ঝুঁকতে চায়। ফলে তারা না বুঝে বিপথগামী হচ্ছে এবং অন্ধকারের দিকে ধাবিত হয়ে সত্যিকার প্রেমের অপমান-অবমূল্যায়ন করছে।
কাজী নজরুল ইসলাম বলেছেন—যে ভালোবাসা দু’জনের দেহকে দু’দিক থেকে আকর্ষণ করে মিলিয়ে দেয় সে ভালোবাসা নয়, সেটা অন্য কিছু বা মোহ আর কামনা।
রবীন্দ্রনাথ বলেছেন, প্রেম হচ্ছে দুটি আত্মার নির্মল আত্মীয়তা।
শেক্সপিয়র বলেন, প্রেম চোখ দিয়ে দেখে না, হৃদয় দিয়ে অনুভব করে। প্রেম হাতে হাত রেখে নয়, কোলে মাথা রেখে নয়, চুলের ঘ্রাণ শুঁকে নয়; হৃদয়ে হৃদয় রেখে অনুভব করতে হয়। মন দিয়েই মন ছুঁয়ে দেখতে হয়। কবি রবীন্দ্রনাথ, নজরুল-শেক্সপিয়রের সঙ্গে একমত হয়ে ছন্দে ছন্দে বলতে চাই—
‘হাতে হাত রাখি না আমি/মনে মন রাখি/
মনের রঙে মন মিশিয়ে/ শুদ্ধ ছবি আঁকি।’
মানুষ সৌন্দর্যপিপাসু। সুন্দর সব সময় মানুষকে টানে, সৌন্দর্যে মুগ্ধ হওয়া মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি। কিন্তু বাইরের সৌন্দর্যে আকৃষ্ট হয়ে মনকে ছোট করা উচিত নয়। সময়ের ব্যবধানে রূপ-যৌবন এক সময় বিবর্ণ হয়ে যাবে। মন—যার মধ্যে সযত্নে লুকানো রয়েছে কর্তব্য-বিশ্বাস-ভালোবাসা। এগুলো হচ্ছে শিকড়, তাই চিরসবুজ। দেহসীমার মধ্যে প্রেমকে সীমাবদ্ধ করা নিতান্তই বোকামি। সত্যিকার সৌন্দর্য শুধু মনের চোখ দিয়েই দেখা সম্ভব।
বিশ্ববিখ্যাত দার্শনিক লিও তলস্তয় যিনি তার প্রিয়া ভ্যালেরিয়া আর্সেনেভকে উদ্দেশ করে বলেন—‘এরই মধ্যে তোমার সৌন্দর্যের প্রেমে পড়ে গেছি আমি। কিন্তু বাইরে নয়, তোমাকে ভালোবাসার শুরুটা হোক ভেতর থেকে। তোমার ভেতরটা দেখতে চাই আমি। ভালোবাসতে চাই ভেতরের তোমাকে। তোমার রূপ এক ঝলকে ঝলসে দিতে পারে যে কাউকে। মুহূর্তের মধ্যে দুমড়ে-মুচড়ে দিতে পারে যে কোনো পুরুষের হৃদয়। তাই রূপ দিয়ে তোমাকে চেনা যাবে না। তোমাকে চিনতে চাই আত্মা দিয়ে।
লিউ তলস্তয়ের সঙ্গে একাত্ম হয়ে আত্মাকে উপলব্ধি করতে চাই। ভেতরের মানুষটাকে আবিষ্কার করার দুর্গম ইচ্ছা বারবার মনকে তাড়া করে। তাই কবি-দার্শনিকদের মতের মূল্যায়ন করতে গিয়ে ছন্দের মিল খুঁজে ফিরি। অজস্র শব্দে সাজাই কবিতার লাইন—
‘প্রেম কি কেবল রূপের মোহ/জানিস তোরা কেহ?
তুষের আগুনে জ্বললেও হৃদয়/শুদ্ধ রাখিস দেহ।
ভালোবাসা ভালো বটে/মহাদামি আরো
রূপে মুগ্ধ হয়ে সখা/মন ভাঙিস না কারো।’
প্রেমের সংজ্ঞা যা-ই হোক—প্রেম শাশ্বত, প্রেম পবিত্র, প্রেম স্বর্গীয়। ভালোবাসা আছে, থাকবে প্রিয়-প্রেয়সীর হৃদয়জুড়ে, স্বামী-স্ত্রীর মধুর সম্পর্কে, বন্ধুত্বে, ভাই-বোনের নির্ভেজাল সম্পর্কে, বাবা-মার নির্ভেজাল স্বার্থহীন আদর-যত্নে। শুভাকাঙ্ক্ষী, কোনো কাছের মানুষের শাসনে-বারণে। শুধু ভালোবাসা দিবসটি ঘিরেই ভালোবাসাবাসি নয়, সত্যিকার ভালোবাসা স্থায়ী হোক সবার অন্তরে, সবসময়ের জন্য।