Pages

নারী ও প্রেম

নারী- মানব জগতে সৃষ্টিকর্তার এক অপরুপ সৃষ্টি। পুরুষের অপূর্ণতা পূর্ণ হয় নারীতে, নারীর অপূর্ণতা পূরুষে। নব জীবন সৃষ্টিতে পূরুষ-নারী একে অপরের অবিচ্ছেদ্য অংশ। নারী জননী, ভগ্নী। নারী দেবী, মহাশক্তির আধার। নারী আসে মাতৃত্বের স্নেহ নিয়ে, প্রেয়সীর প্রেম নিয়ে অথবা ভগ্নীর মমতা নিয়ে। একটা বিশেষ সময়ে নর নারী একে অপরের প্রতি আকৃষ্ট হয়, জন্ম নেয় প্রেম। শুরু হয় প্রেমের লুকোচুরি অভিসার যাত্রা। সমাজের তীব্র ভ্রুকুটি উপেক্ষা করে নীরবে, নির্জনে মিলিত হওয়া। স্বপ্নের জাল বোনা। প্রাপ্তির আগে বা পরে সেই নারীকে কল্পনা করা হয় নানা সৌকর্যে, নানা গুনে, নানা মহিমায়। সুর্য্য যেমন প্রভাতে, পূর্বাহ্নে, অপরাহ্নে, বা অস্তকালে বিভিন্ন বর্ণের আলোকরশ্মি দিয়ে আমাদেরকে নানা রঙের নানা মাত্রায় উদ্ভাষিত করে থাকে, তেমনি প্রেমিকের কাছে প্রিয়াও নানান রঙের আলোকচ্ছটায়, হাজারো মহিমায় উদ্ভাষিত। বিপন্ন পৃথিবীতে মানুষের বেঁচে থাকার সংগ্রাম চিরন্তন, সকল প্রতিবন্ধকতার বিরুদ্ধে। তবু এইসব প্রতিবন্ধকতা উপেক্ষা করে বাসা বাধে প্রেম। শক্তিশালী মহাবীরও প্রেমের চরণে প্রনতি জানায়। সে প্রেমের কাছে হার মানে। তার বিজয় কেতন প্রেয়সীর চরনে লুটোপুটি খায়। স্বপ্নলোকের মোনালিসার কোমল পরশ হৃদয় ছুয়ে যায়। বিধবস্ত পৃথিবীতে আবারও বসন্ত আসে। ফুল ফোটে, পাখি গান গায়। তখন প্রিয়া প্রেমিকের কাছে হয়ে ওঠে এক অনাবিল আনন্দময়ী উপহার। প্রিয়া হতে পারে কচি, আবার পরিণীতাও। প্রিয়ার সৌন্দর্য্য বর্ননায় কবি গোলাম মোস্তফা লিখেছেন,
“কি সুন্দর তুমি নারী
তুমি শক্তি, তুমি মুক্তি, তুমি স্রষ্টার সার সৃষ্টি।
তুমি সুরভী পুরিত কোমল কুসুম নবীন মাধুরী কুঞ্জে
তুমি শরৎ রাতের মধুচাঁদিনী শ্যামল পত্র পুঞ্জে।”
প্রেম বিশেষজ্ঞরা বলেন, প্রেম দু’প্রকার। দৈহিক প্রেম আর আত্মিক প্রেম। অর্থাৎ, রোমান্টিক লাভ (romantic love) এবং প্লেটোনিক লাভ (platonic love)। ইংরেজি মেটাফিজিকাল (metaphysical) ধারার প্রধান কবি জন ডান (John Donne) এই দুই মতেরই সমন্বয় ঘটিয়েছেন। তাঁর মতে, “দৈহিক প্রেমের আঙিনা মাড়িয়ে তবে আত্মিক প্রেমের আঙিনায় পৌছাতে হয়।” সুতরাং প্রেমের প্রথমিক স্তরের চাওয়া পাওয়া একটু ভিন্ন ধরনের। নিশিদিন পথ চেয়ে থাকা, নীরব ভাষায় কথা বলা। প্রাথমিক পর্যায়ে প্রেম নিছক আবেগপ্রধান। আবেগের স্রোতে বাস্তবতা হারিয়ে যায়। যেন হৃদয়ের একুল ওকুল দু’কুল ভেসে যায়। কবি সুকান্তের মতে, “হয়তো আমি যে সিড়ি দিয়ে উঠছিসেই সিড়ি দিয়েই ও নামছে। অবতরণকালীন ওর ক্ষণিক দৃষ্টি আমার চোখের উপর পড়ে আমার বুকের মধ্যে স্নিগ্ধমধুর শিহরণ জাগিয়ে যায়। পরক্ষনেই কেটে যায় আবেগের আবেশ।” তবে, নজরুল কাব্যে প্রেম এসেছে বিদ্রহের পাশাপাশি। নজরুলের ভাষায়- “মম এক হাতে বাঁকা বাঁশের বাসরী, আর হাতে রণতূর্য।”
প্রেম মানব জীবনের শ্রেষ্ঠ সম্পদ। প্রেমের ফসল জীবন। জীবনের বন্ধন প্রেম। সে প্রেম অবশ্যই হতে হবে পবিত্র, স্বর্গীয়। তবেই প্রেমের স্বার্থকতা।রফিক স্যার ।

No comments:

Post a Comment

আপনার মন্তব্য দিন