Pages

কে আছ?

১.
- আমি খুব ডিজহার্টেড
' কেন? কি হল আবার?'
- কিছুই ভালো লাগে না আমার। চারপাশে সবাই, কিন্তু মনে হয় কোথাও কেউ নেই।
' হ্যা, 'কোথাও কেউ নেই' এর মুনা ই তো তুমি!
- নামে মাত্র মিল। কিন্তু ওর ভালবাসার বাকের ভাই আমার নেই।
' আমি কি তোমার জন্য কিছু করতে পারি মুনা?'
- কেউ এখন আর আমার জন্য কিছুই করতে পারবে না!
' এক কাজ করি বরং...'
- কি কাজ?
' আমি খুব আনন্দে আছি। তুমি কিছুদিনের জন্য আমার হৃদয়টাকে ধার নাও।
- হি হি হি
' হেসো না, সত্যি বলছি। আমরা আমাদের হৃদয়কে বদল করি। তাতে যদি তোমার মনের কিছুটা ইম্প্রুভ হয়!'
- নাহ! এখন আর কিছুতেই কিছু হবার নয়।
' আমি যদি তোমাকে আদর করি! তোমার কাছে আসি...'
- এগুলো অনেক শুনেছি। আদর ছাড়াও তো কাছে আসা যায়... বন্ধুর কষ্টকে বোঝার জন্য বন্ধু হিসাবেই থাকাটা কি যথেষ্ট নয়?
'স্যরি মুনা। আমি আসলে ওভাবে ভাবিনি।'
- ইটস ওকে জাফর। তোমার বলার ভিতরের আদরটুকু আমি নিলাম।
' খেয়েছ? এখন তো লাঞ্চ টাইম? '
- আমার কিচ্ছু ভালো লাগেনা...
' দেখ এটা ঠিক না। টাইমলি খাবে, হাসার সময় হাসবে, অফিসে সবার সাথে আরো ডিপলি মেশার চেষ্টা করো। মরে গেলে এই যে কষ্টটা পাচ্ছ, এর ভিতরের আনন্দটুকুও তো একেবারে মরে যাবে! তখন?'
- তুমি দূরের বন্ধু হয়েও আমার জন্য এতোটা ফিল করো! ... আর কাছের মানুষগুলো কেন এতোটা দূরে সরে গেলো?
ইনবক্সে আর থাকতে ভালো লাগছে না মুনার।
তেজগাঁও এর নভো টাওয়ার।
একটি মাল্টি ন্যাশনাল সুইং থ্রেড কোম্পানির কাষ্টমার সার্ভিস অফিসার এই মেয়েটি। মুনা যার নাম। এইতো কিছুদিন আগেও উচ্ছলতার ডালি বয়ে বেড়ানো এক রঙিন প্রজাপতি ছিল সে। না হেসে কথাই বের হতো না ওর। এতোটা মিষ্টি মেয়ে, প্রথম দেখায় যে কারো হৃদয় তোলপাড় করে দেবার অদ্ভুদ ক্ষমতা ছিল ওর। সে যে কোনো যায়গায় এলেই ব্যাকগ্রাউন্ডে যেন মিজিক বেজে উঠত। উপস্থিত সবার ভিতরে অন্য রকম ভালোলাগার সতেজ ছোঁয়া কীভাবে যেন এসে যেত।
সেই মেয়ে আজ হাসতে জানে না।
ওর হৃদয় বৈতরণীর ওপাশে আজ কেউ নেই।
লাঞ্চ সে বাসা থেকেই নিয়ে আসে। এই যে এখনো হট পট ওর সামনে। কিন্তু খেতে ইচ্ছে করছে না। ফেসবুক থেকে লগ আউট করল। একটা গান শুনলে মনটা কি আরো খারাপ হবে?
ভাবল একটু। হোক না। আজম খান এর একটা গান ইদানিং শুনছে। ওটাই ছেড়ে ওর রুমের লাইট অফ করে দিলো।
জানালার কারটেন আরো এডজাস্ট করে অন্ধকারের বন্ধ খাঁচায় নিজেকে সমর্পণ করল।
টেবিলের ওপর ড্রয়ার থেকে একটা ফটো ফ্রেম বের করে রাখল।
ছবির মানুষটা হাসি মুখে ওর দিকে চেয়ে আছে।
সেই চেনা মুখ!
সেই চোখ... আর সেই পাগল করা দৃষ্টি!
যাতে সে নিজেকে হারিয়ে ফেলেছিল।
প্রথমে একটু ভালোলাগা... এরপর শিহরণ... বুকের কোথায় যেন উথাল-পাথাল ঢেউ... ধীরে ধীরে সব কিছু স্থির হয়ে আসা। দম বন্ধ করা এক শীতল স্রোত ওকে হঠাত ই নিজের থেকে টেনে নিয়ে যায়। সে ফেরার চেষ্টা ও করেনা।
শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষটিতে গানের সুরের সাথে সাথে বিষন্নতা এবং অচেনা এক কষ্ট তাল মিলিয়ে ভেসে বেড়ায়।ওর কান হয়ে হৃদয়ের সেই শেষ সীমায় পৌঁছে যায় একজন প্রেমিক শিল্পীর অনুভুতির কিছু শাব্দিক প্রকাশ...
... একটাই দুঃখ আমার
বোঝনি তুমি কখনো...
সুউচ্চ এই টাওয়ারটির নির্জন একটি কক্ষে এক বিষন্ন মেঘ বালিকা হৃদয়ের ঝরা পাতা গুলোকে বাতাসে উড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করে... অদম্য আবেগকে নিয়ন্ত্রণের কোনো চেস্টাই সে করে না! শব্দ, সুর আর অনুভব - এই তিন মিলিয়ে বাইরের প্রচন্ড দাবদাহের কষ্টের চেয়েও হাজারগুণ বেশী প্রখরতায় সে দগ্ধ হতে হতে একসময় আর পারে না।
নীরবে বৃষ্টি নামে নভো টাওয়ারের সেই নির্জন রুমটিতে...
২.
অনুভূতির ব্যবচ্ছেদ!
এই দুটি শব্দ অনেকক্ষণ মুনার কানে বেজে চলেছে।
অনুভূতির ব্যবচ্ছেদ... অনুভূতির ... চ্ছেদ... ভূতির... ব্যব...
এভাবে কান থেকে ব্রেইনে, ব্রেইন থেকে হৃদয়ে- এরপর কোথাও কিছু নেই। সব কিছু শূন্য। শুধু এই শুন্যতার মাঝেও চাপ চাপ দম আটকানো অনুভূতি। নিজে নিজেকে কেটে ছিড়ে ফেলার যন্ত্রনায় কালো হয়ে যাওয়া। সবাই ব্যাথায় নীল হয়ে যায়। কিন্তু মুনা কালো হয়। কষ্টকে সে বর্ণহীন মনে করে। আর কালো? সে তো রঙের অনুপস্থিতির ফলেই উদ্ভব হয়।অনেকেই কষ্ট পেলে সৃষ্টিশীল কিছু তৈরি করতে পারে। কিন্তু মুনার অনুভূতিতে যা কিছু সৃষ্টিশীল তা কেবলমাত্র আনন্দঘন হৃদয়েই করা সম্ভব। নেগেটিভ মানষিকতা দিয়ে পজিটিভ কিছু অর্জন কি সম্ভব? সৃষ্টি সে তো পজিটিভ- সারপ্লাস অফ এ নিউয়ার লুক।
অফিস বন্ধ থাকাতে বাসায় বসে বসে অসহ্য স্লো গতির মুহুর্তগুলোকে কাটাতে হচ্ছে। সেই সাথে নিজের ভিতরে আসা যাওয়া রত অনুভূতিগুলোর পোষ্টমর্টেম করে করে ক্লান্ত হয়ে যাওয়া। অতীতকে যতই পিছনে ফেলে আসে, সে অনেক দূরে আবদ্ধ ব্যাগে করে ফেলে আসা বিড়ালের মতো কীভাবে যেন পথ চিনে চিনে আবারো ওর মনের দরজায় এসে হাজির হয়। ওর বর্তমানকে বিষন্নতায় ভরিয়ে দিতেই কি?
বন্ধুরাও এখন ওর থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। এইতো কিছুদিন আগেও সে ছিল সবার মধ্যমণি। সেই স্কুল জীবন থেকেই ওরা সবাই একেবারে ভার্সিটির পাঠ চুকানো পর্যন্তই এক সাথে। কেউ কেউ অবশ্য কলেজের গন্ডী ছাড়িয়ে ওর থেকে আলাদা হয়ে গেছে। কিন্তু যোগাযোগটুকু কীভাবে যেন থেকেই যায়। পলকা সুতোর আলগা একটা বাঁধন! কিন্তু আজ সেই বাঁধনটুকুও ছিড়ে যায় যায় অবস্থায়।
ওরা ৫ জন খুব কাছের। বন্ধু বলতে সবাই যা বুঝে ওরা তাঁর সীমানা পেরিয়েও আরো কিছু বেশী ছিল যেন। পাঁচজন মিলে যেন এক জন। চিন্তা-ভাবনা আর রুচী-মেজাজের দিক থেকে ওরা এক আত্মা ছিল। দুই বান্ধবী আর তিন বন্ধু। রিতা, সে, রিয়াজ, সেলিম ও জাহিদ। ওরা সবাই ঢাকাতেই । ভার্সিটি শেষ করেই যে যার ক্যারিয়ার নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়লেও সবার সাথে প্রতিদিনই যোগাযোগ হতো। তিন বন্ধু বিয়ে করে সংসার শুরু করলেও ওদের দু বান্ধবীর এখনো ঐ পথে হাঁটাই হয়নি। কেবল শুরু করতে পা দিয়েছে মাত্র... এমন সময়েই...
এক সাথে অনেক কিছুই খুব দ্রুত ঘটে গেলো। জীবনের আটাশটি বসন্ত এক সাথে পার করে দেয়া বন্ধুরা কীভাবে যেন পর হয়ে গেলো! ওদের পঞ্চ পান্ডবের ভিতরে এক দুর্যোধনের আগমনই এই দূরত্বের কারণ। সেও ওদের বন্ধু ছিল। তবে কলেজ লাইফ পর্যন্তই। কলেজের সীমানা পেরিয়ে সে দেশের বাইরে- সব পাওয়ার দেশ, স্বপ্নের দেশ আমেরিকাতে চলে যায়। মুনা, রিতারা যখন ইউনিভার্সিটির দিনগুলো হাসি-আনন্দে কাটাচ্ছে, সে তখন সাত সাগর আর তেরো নদীর ওপাড়ের এক দেশে নিজেকে স্টাবলিশ করায় ব্যস্ত। এর ভিতরে একজনকে বিয়েও করে। মোটকথা এই বন্ধুটি তাঁর জীবনের অর্ধেকেরও বেশী ধাপ ওদের আগেই অতিক্রম করে ফেলে। তবে বাকি অর্ধেক পার হবার আগেই তাঁর ডিভোর্স হয়ে যায়। এক মেয়েকে নিয়ে তার স্ত্রী আলাদা হয়ে গেলো। দেশে বসে মুনা এসব রিতার মাধ্যমেই সব জেনেছিল। রিতার সাথে এই দুর্যোধন বন্ধুটির নেটে যোগাযোগ ছিল। মানুষটির নাম নোমান।
মানুষ?
সে কি এখন মুনার কাছে কেবলই একজন মানুষ? যাকে নিয়ে দিন এবং রাতের শুরু থেকে শেষ অবধি- চিন্তায় অনুভূতির রথে চড়ে আকাশ-পাতাল সব ভাবনার দরোজায় কড়া নেড়ে নেড়ে নিজের ভিতরে তাঁকে খুঁজে ফেরা... শারীরিক-মানষিক সব উপলব্ধির ঘেরাটোপে দুজনকে এক করে নেবার আকুলতা... একটা সর্বগ্রাসী ভালোবাসা যাকে নিয়ে প্রস্ফুটিত হবার স্বপ্ন দেখে এসেছে, সে কিনা আজ মুনার কাছে স্রেফ একজন ‘মানুষ’?!
হ্যা!
সে আসলেই এখন একজন আউটসাইডার। কিন্তু এমনই একজন যার জন্য সে নিজে তিলে তিলে কষ্ট পাচ্ছে। ভালোবাসা, জেদ, জিঘাংসা-সব কিছু একসাথে মিশে গিয়ে আজ মুনাকে নিজের হৃদয়ের ব্যবচ্ছেদ করতে বাধ্য করছে। নোমান নামের ঐ মানুষটি আসলে কোনো মানুষই নয়। মানুষ নামধারণকারী এক হৃদয়হরণকারী কসাই সে। একজন খেলোয়াড়... নিত্য নতুন হৃদয়ের খোঁজে এক অতৃপ্ত পিশাচ।
চমকে উঠে মুনা। একি ভাবছে? নিজের অজান্তেই সে চিন্তার কত গভীরে এক পংকিল নর্দামায় ডুবে যেতে বসেছিল। নোমান যাই থাক- তাঁকে সে ভালবাসত... এখনো কি বাসে না? না হলে ওর সমগ্র সত্ত্বাকে ঘিরে এই একটি নাম কেন এখনো শিহরণ জাগাতে বার বার ওর কাছে ফিরে আসে?
বাইরে বেশ জোর হাওয়া বইছে। জানালার পর্দাকে ইচ্ছেমতো এদিক সেদিক উড়িয়ে নিয়ে যাওয়া এই পাগলা হাওয়া মুনার হৃদয়কেও মাতাল করে দিলো কয়েক মুহুর্তের জন্য! অনেক আগে এরকম এক পরিবেশে একটি পুরুষালি ঠোঁট ওর খুব কাছে আসতে গিয়েও পারেনি। তবে দুদিক থেকেই ইচ্ছের ভিতরে বাস করা উদগ্র কামনা কম বেশী দংশন করেছিল। মুনা নিজেকে সামলে নিতে পেরেছিল। কারণ সে নোমানকে সত্যিকারের ভালোবেসেছিল। কিন্তু নোমান শুধু মুনাকে চাইতো... সেখানে হৃদয়ের থেকে দেহের প্রতি তাঁর আসক্তি বেশী ছিল।
একটা জোর হাওয়া বইতেই জানালার পাশের বেডসাইড টেবিল থেকে সশব্দে কিছু একটা পড়তেই মুনার চিন্তার জাল ছিন্ন হল। এগিয়ে গিয়ে দেখে বইটি পড়ে আছে। ওকে গিফট করা নোমানের সেই কবিতার বই। পুর্নেন্দু পত্রীর ‘কথোপকথন’। নোমান কিছু কিছু কবিতা হাইলাইট করেছে ওকে দেবার আগে। এমন ই একটি ঘন্টাখানেক আগেও মুনা পড়েছে। (‘কথোপকথন ২১’’)...
" তোমাদের ওখানে এখন লোডশেডিং কী রকম?
- বোলো না। দিন নেই, রাত নেই, জ্বালিয়ে মারছে।
- তুমি তখন কী করো?
- দরজা খুলে দিই।
জানলা খুলে দিই।
পর্দা খুলে দিই।
আজকাল হাওয়াও হয়েছে তেমন ফন্দিবাজ।
যেমনি অন্ধকার, অমনি মানুষের
ত্রিসীমানা ছেড়ে দৌড়।
- তুমি তখন কী করো?
গায়ে জামা-কাপড় রাখতে পারি না।
সব খুলে দিই,
চোখের চশমা, চুলের বিনুনি, বুকের আঁচল, লাজ-
লজ্জা সব।
- টাকা থাকলে তোমার নামে নতুন ঘাট
বাঁধিয়ে দিতুম কাশী মিত্তিরে
এমন তোমার উথাল-পাতাল দয়া।
তুমি অন্ধকারকে সর্বস্ব, সব অগ্নিস্ফুলিঙ্গ
খুলে দিতে পার কত সহজে।
আর শুভঙ্কর মেঘের মত একটু ঝুঁকলেই
কী হচ্ছে কি?
শুভঙ্কর তার খিদে-তেষ্টার ডালপালা নাড়লেই
কী হচ্ছে কি?
শুভঙ্কর রোদে-পোড়া হরিণের জিভ নাড়ালেই
কী হচ্ছে কি
পরের জন্মে দশদিগন্তের অন্ধকার হবো আমি। "
নোমান ইচ্ছে করে বেছে বেছে এমন এমন কবিতা ওকে আবৃত্তি করে শোনাত, যেখানে নারী দেহ কিংবা সেক্স প্রাধান্য পেত। মুনার কাছাকাছি থাকার সময়টাতে সে সর্বক্ষণ ওকেই কামনা করত। একজন কামুক পুরুষের জ্বালা ধরানো কথা আর চোখের কামনার আগুনে পুড়তে পুড়তে নিজেকে রক্ষার চিন্তায় ব্যস্ত মুনা, একাধারে লোকটার প্রতি সীমাহীন মমতাও অনুভব করত। শুধু যদি সে ওকে সত্যিকারের ভালোবেসে একবার ছুঁয়ে দিত! মুনা ওর নারীদেহের সকল সম্পদ অবলীলায় ভালোবাসা সহ ওকে দিয়ে দিত। কিন্তু সে তো ছিল এক হৃদয়হীন লোলুপ পুরুষ।
মুনা এখন ‘সিঙ্গেল’ জীবন লীড করছে। নোমানের মত পুরুষের লোলুপ দৃষ্টি পথে ঘাটে অফিসে-সর্বত্র সে অনুভব করে। এই একাকী থাকাটাই বোধ হয় ওর দোষ। ওদের পঞ্চ পান্ডব ছাড়া অন্যদের সাথে মিশে দেখেছে। সে নিজে ওদেরকে বন্ধু ভাবলেও শেষ পর্যন্ত বন্ধু আর বন্ধু থাকে না... সবাই ওকে খাদ্য ভাবতে শুরু করে। সে এমন এক সমাজে বাস করছে, যেখানে নারীকে এখনো ভোগের সামগ্রী থেকে অন্য কিছু ভেবে দেখাটা অধিকাংশ পুরুষই শিখেনি। আজ এই মুহুর্তে নিজকে বড্ড অসহায় মনে হচ্ছে। মা নেই... বাবা ও সেই ওর শিশু বেলায় চলে গেছেন না ফেরার দেশে। আজ যদি বাবা থাকতেন! একমাত্র তিনিই ওকে বুঝতে পারতেন... এই বিশাল পৃথিবীতে এক টুকরো মেঘ হয়ে ওনার এই মেঘ বালিকাটিকে ছায়া দিতেন... সকল বিষন্নতাকে যত্ন করে মুছে দিয়ে আনন্দে ভরপুর এক সোনালী রোদমাখা চত্বরে নিয়ে যেতেন।
জানালা দিয়ে বাইরের দমকা হাওয়ার তান্ডব দেখতে দেখতে দুচোখে প্লাবন নিয়ে এক বিষন্ন মেঘ বালিকা দাঁড়িয়ে থাকে।
নিশ্চুপ... নির্ণিমেষ দৃষ্টির এক প্রান্তে বর্তমান, যেখানে নোমান নামের একজন মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে... অপর প্রান্তে ওর প্রিয় পঞ্চ পান্ডবের বাকি চার পান্ডব অভিমানে তারাও মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে! আর এদের মাঝে মুনা নামের একজন হৃদয়ে ভালোবাসা নিয়ে অপেক্ষা করছে... কিন্তু দু’প্রান্তে আদৌ কেঊ কি রয়েছে তা গ্রহন করার?

বন্ধু হতে চেয়ে তোমার

ছেলেবেলায় কোনো পাগল দেখলে জিজ্ঞেস করতাম, ‘ এই পাগল, তোর পাগলি কই?’ পাগল নিশ্চুপ থাকতো... একা একা
বিড় বিড় করতে করতে বিভ্রান্ত মস্তিষ্ক নিয়ে চলে যেত। তখন খুব জানতে ইচ্ছে করত সে কি বলছে। আজ অনেক বড় হয়েছি! এতোটা বড় হয়েছি যে কল্পনায় সেই পাগলকে নিয়ে আসতে পারি। শুধুই কি তাই? ওর হারিয়ে যাওয়া পাগলিও সাথে থাকে। তবে এরা ডিজিটাল যুগের পাগলা-পাগলি। আমার খুব পরিচিত এক ক্যাম্পাসে এই জুটি পাগলা-পাগলি হিসেবে বেশ খ্যাত। এই গল্পে সঙ্গত কারনে ছদ্মনামে এদের পরিচয় দিয়েছি। নিজেদের ভিতর খুব উচ্চ মার্গের সংলাপে এরা ব্যস্ত থাকে। এদেরকে নিয়েই কিছু লিখতে ইচ্ছে করছে। তবে সুস্থ মস্তিষ্কের কেউ এগুলো পড়ে পাগল হলে আমি দায়ী থাকবো না কিন্তু...]
১.
একদিন কথা হচ্ছে দুজনার।
পাগলঃ ‘ কি ভাবছ?’
পাগলিঃ ‘ ভাবছি কৃষ্ণচূড়ার রং এতো লাল কেন? লালের প্রতি কঠিন একটা মোহ আছে আমার। কেমন মাতাল মাতাল লাগে!
- ‘তোমায় আমি সেই লাল এর উৎসমুখে নিয়ে যাবো একদিন। সেখানে দিগন্ত বিস্তৃত রক্তিম আভা নিয়ে সারি সারি কৃষ্ণচুড়া! এ জগতকে রাঙানোর কাজে এতোটাই ব্যস্ত যে বিশ্বচরাচরের আর কোনোদিকে ওদের খেয়াল নেই।‘
: ’ জানো, আমার জানালায় যে গাছটা উঁকি দিচ্ছে, তার গায়ে পাতার চেয়ে ফুল বেশী। সবসময় যেন আমাকে প্রলুব্ধ করছে!'
-‘ হ্যা, ঠিক তোমার মতো! পাতার চেয়ে ফুল বেশী... তুমি যতটা না নারী তাঁর থেকে প্রেমিকা বেশী... ভালবাসার ডালি নিয়ে অপেক্ষারত একজন বিশেষ কেউ!
:’ উফ! আমাকে মাটির এক হাত উপরে তুলে দিচ্ছ কেন বলতো?
-‘ আচ্ছা এখুনি নামিয়ে আনছি। তবে ওখানে গেলে মাতাল হবার সকল উপকরণও তুমি পাবে। দেখব কতটা মাতাল হতে পারো!’
:’ ইস...মাতাল হতে আমার বয়েই গেছে! তবে তুমি পাশে থাকলে আমি এমনিতেই অবসন্ন হয়ে যাই!’
-‘ এবার কি আমাকে ওপরে তুলে দিতে চাও?’
:’ নাহ! চল হাত ধরে এক সাথে কিছুক্ষণ হাঁটি...’
আর একদিন...
কাঁটা পাহাড়ের ছোট্ট যাত্রী ছাউনিতে আমাদের পরিচিত সেই পাগল তাঁর পাগলিকে নিয়ে বসে আছে। আকাশের অবস্থা খুব গম্ভীর। যে কোনো মুহুর্তেই মনে হয়ে কেঁদে ফেলবে। ওরা দুজন বসে আছে... গল্প করছে...
পাগলঃ 'দেখেছ মেঘগুলো আকাশকে কি করেছে? কেমন ভয়ংকর লাগছে না ওদেরকে!'
পাগলিঃ - কি হাস্যকর কথা বলছ তুমি! মেঘ আবার ভয়ংকর হয় নাকি... মেঘ মানে তো আকাশের মন খারাপ...
' ঠিক আমার মতো?'
- তোমার বুঝি মন খারাপ?
' কেন বোঝনা? আকাশের পানে আর আমার দিকে তাকিয়ে দেখ... কিংবা নিজের মনকে জিজ্ঞেস কর...'
- বাহ রে! মানুষ আর আকাশ কি এক হতে পারে...!
' কেন পারে না? আকাশের মতো উদার বিশাল হতে তো তোমরাই আমাদেরকে বল! বল না?'
- মেঘ আকাশের শুদ্ধ আত্মা... অভিমানী রূপ। অভিমান কি পুরুষের সাজে? আকাশ হল নারীর মতন, মেঘ তাঁর অশ্রুজল...
' নাহ! শুধু তোমাদেরই সাজে?'
- রাগ করলা বুঝি?
' রাগ করলে কি করবে? রাগ ভাঙ্গাবে? আমাকে মানাবে? যা চাই তা দিবে?'
- কি চাও? বাদাম খাবে? নাও খাও...
' নাহ! ইস যদি আকাশ হতে পারতুম! তাও তোমার অশ্রু জলের কাছাকাছি তো থাকতাম। তোমার শুভ্র জলের উষ্ণ পরশ মাখিয়ে নিতাম সারা দেহে।'
- হি হি হি... আচ্ছা এতো কিছু থাকতে আমার চোখের জল ই চাইলে তুমি?!
' কীভাবে বুঝলে শুধু ওটাই চেয়েছি? আর সেই 'এতো কিছু' গুলো কি? আমায় বলবে?'
- নাহ! বলব না। ... মানুষ তাঁর প্রিয়ার মুখে হাসি দেখতে চায় আর তুমি অশ্রু?!
' ওটা যে আনন্দাশ্রু জানু! আনন্দজল ও বলতে পারো, তবে সেটা বলাতে আবার শ্রুতিকটু কিংবা ভাষাগত বিভ্রম হবে নাতো?'
-যাও, ফাজলামো কর না।
' আমি আগেই বলেছিলাম। কি রাগ করলে?'
-হ্যা!
' এখন উপায়? কি করলে রাগ কমবে শুনি?'
-আমার কথা শুনতে হবে। শুনবে?
' কোনটা শুনি নি?'
-না, বল শুনবে?
' আগে বলই না ?'
-চল বৃষ্টিতে ভিজি!
' মাথা খারাপ?! তোমার না সাইনোসাইটিসের প্রব্লেম?'
-তুমি সাথে আছ না জানু! আর কোনো প্রব্লেম নেই।
' আমার সমস্যা আছে।'
-তোমার আবার কি সমস্যা?
' আমার হিংসা হয়।'
-কাকে নিয়ে?
' বৃষ্টির প্রতি... '
-মানে?
' তোমার সাথে সারাদিন ঘুরে ঘুরে কি পাই? বাদামের খোসা রাখার জন্য খালি ঠোঙ্গা... না হয়, চুল ছেড়ে দিবে তুমি- চুলের কাটা পরম নির্ভরতায় থেকে যায় আমার হাতে...
-এর সাথে বৃষ্টির সম্পর্কটা বুঝলাম না?
‘বুঝলে না? বৃষ্টি না চাইতেই তোমার সারা শরীরে ইচ্ছেমত ঝাঁপিয়ে পড়তে পারে! তোমাতে অবগাহন করে সে মৃদু লয়ে-কখনো বা বেগে না হয় টিপটিপ... টিপটিপ... ঝিরঝিরে অনুভুতির শিহরণ জাগানোর অলিখিত অধিকার সে পেয়ে গেলো না চাইতেই!’
-আর?
‘ তোমার ক্ষীন কটিকে কামড়ে ধরা ঐ একটুকরো আকাশ রঙ্গা সিফন শাড়ি, যা পারেনি লুকোতে তোমার হৃদয়কে ঢেকে রাখা মাংসল পাহাড়। দেখ, কি অবলীলায় সে ওগুলোকেও লেপ্টে দিয়ে দলিত-মথিত করে যায়... আর ব্যঙ্গ করে আমায়! ‘
-উফ! আর শুনতে চাই না। থামো, থামো।
‘ না, শোনই না।‘
-আর শুনবো না। এর থেকে আজ না হয় বৃষ্টিই হও তুমি! তোমার কথার শরের থেকে অন্তত কম আঘাত দেবে!
‘বলছ?’
-হ্যা! চল, আজ তোমার আকাশের মন খারাপ। আমি নারী-আমায় ইচ্ছেমত খাবলে খুবলে আঘাত করে যদি তার মন ভালো করা যায়?
‘পিঞ্চ মারছ?’
-না সাহেব, চল, আজ তোমার আকাশে এই মেঘ বালিকা নিজের স্বরূপ উন্মোচন করবে। যার জন্য এতোদিন অপেক্ষা করে আছ। তোমায় আর বাদামের খোসা রাখার ঠোঙ্গা হাতে বয়ে বেড়াতে হবে না... কিংবা চুলের কাঁটার সযতন আবাসভুমি হবে না তোমার হাত।
‘ আমি আসলে কথার কথা হিসাবে বলেছিলাম... ‘
-চল, এখন আর ব্যাক করার সুযোগ নেই তোমার।
কাটা পাহাড়ের নির্জন পীচঢালা পথে পাগলি পাগলের হাত ধরে টেনে নিয়ে যায়। ওদের দুজনের ওপর প্রচন্ড এক হিংস্রতায় ঝাঁপিয়ে পড়ে বৃষ্টি। চারিদিক অন্ধকার.. আর এর মাঝে সাদা ফোটা ফোটা হয়ে ঝরে পড়া আকাশের আনন্দজল আদিম উচ্ছ্বাসে ওদের দুজনকে শিহরিত করে... কামনার জমাট বাঁধা ঠান্ডায় কেঁপে ঊঠে একে অপরের চোখে তাকিয়ে ইচ্ছেমতো পুড়ে যাবার জন্য যথেষ্ট এক ফায়ারপ্লেস দেখতে পায়!!
২.
জোড়ায় জোড়ায় ছেলেমেয়েরা বসে আছে। চ্যাট করছে। লাইব্রেরীর বারান্দায়। এখানে ওয়াইফাই এর নেট বেশী পাওয়া যায়। অধিকাংশই মোবাইলে নেট ইউজ করছে। ল্যাপটপ এবং ট্যাবের সংখ্যাও কম নয়। ছড়িয়ে ছিটিয়ে বসে থাকলেও কেমন একটা প্যাটার্ণ আপনাতেই এসে গেছে। চারুকলার যে ছেলেটি ওর গার্লফ্রেন্ডকে নিয়ে বসে আছে... তাঁর চোখের ভাষা পড়তে ব্যস্ত... ওকে বললেই সে এই প্যাটার্ণটি এঁকে দিতো!
দক্ষিণ পাশের এল সেপ কোনাটিতে পাগলি পাগলকে নিয়ে...
পাগলি চশমা পড়ে আছে। ক'দিন ধরে খুব জ্বালাচ্ছে তাঁর চোখ দুটো । শেষে ডাক্তারের শরনাপন্ন... এবং এখন চার চোখ নিয়ে পাগলের পাশে বসে থাকা। থেকে থেকে পাগল হাসছিল। অনেকক্ষণ এটা বুঝতে পারলেও এতোক্ষণ কিছু বলেনি পাগলি। এবারে আর সহ্য হল না। ল্যাপটপ থেকে চোখ তুলে বলল,
- কি ব্যাপার? সেই কখন থেকে তোমায় দেখছি হেসেই যাচ্ছ?
' আমার হাসতে কি মানা নাকি? আমি কি রামগরুরের ছানা?'
- দেখ ঢং করবা না। এমনিতেই চোখের জ্বালায় অতিষ্ট... তোমার যন্ত্রণা টলারেট করতে পারব না বাপু আগেই বলে দিচ্ছি।
' ওকে ওকে ... '
- বল কেন হাসছিলে?
' তোমাকে দেখে!'
-মানে? আমি এখন হাসির পাত্র হয়ে গেলাম?
' পাত্র নয় পাত্রী'...
রাগে চোখ থেকে চশমা খুলে নিল... অভ্যাস নাই বলে বার বার খুলে পাশে রেখে চলেছিল এতোক্ষণ। মুগ্ধ হয়ে পাগল তাকিয়ে ছিল। এবারে আরো বেশী হল। রাগে পাগলি ফনা তোলা সাপের মত ফোঁস ফোঁস করছে। তাল মিলিয়ে ওর উদ্ধত বুক দুটোও ঊঠানামা করছে। আর কাকের চোখের মত কালো চোখ দুটি যেখানে অনবরত পাগল হারিয়ে যায়, সেগুলো জলন্ত অঙ্গার কখন হয়ে উঠবে সেই অপেক্ষায় ছিল সে। কিন্তু বিনা মেঘে আষাঢ়ের বৃষ্টি নামছে সেই দু'চোখ বেয়ে। হতভম্ব পাগল... আশেপাশে তাকায়... একটু কি বিব্রত বোধ করে?
' কি হল? এ্যাই, আমি দুষ্টুমি করেছি...'
- হি হি হি... তো আমি কি করছি?
চোখ দিয়ে ঝরে পড়া মুক্তোবিন্দুর দিকে তাকিয়ে পাগল হাস্যরত ওর প্রিয়াকে দেখে অবাক হয়। ইতোমধ্যে সে রুমাল দিয়ে নিজেকে ফ্রেশ করছে...
- তুমি কি মনে করেছ আমি কাঁদছি?
' তো কি করছিলে? হাসছিলে? সবাই কীভাবে দেখছিল...'
- এতেই মন খারাপ হয়ে গেলো? একেবারে ছেলেমানুষ! শোন, জীবনে কখনো চশমা পড়েছি? আজ সেই তখন থেকে চুলকাচ্ছে। আর আমার নিয়ন্ত্রণের বাইরেই ঐ ঢল নেমেছিল ।
' এখন তো দেখছি একেবারে আগুনে রং ধরেছে তোমার চোখ! চল আর কাজ করতে হবে না... বন্ধ কর... '
দেশের সব থেকে বড় শহীদ মিনারের দিকে ওরা হেঁটে যায়। ল্যাপটপের ব্যাগ কাঁধে পাগলির ডান হাত ধরে পাগল জীবনের পথ ধরে আগায়। শহীদ মিনারকে মাঝে রেখে বৃত্তাকারে সবুজ ঘাসের গালিচা আর যায়গায় যায়গায় ফুলের গাছ... ছোট-বড়-মাঝারি... আর ঝোপওয়ালা... এক কালারফুল জগৎ! ঘাসের কার্পেটে পাগলের কোলে মাথা রেখে পাগলি শুয়ে আছে। বিকেলের অস্তগামী সুর্য তাঁর কোমল হাসিতে ওদেরকে আশীর্বাদ করছে... নাম না জানা পাখীরা ওদেরকে গান শোনাচ্ছে... রং বে রঙের প্রজাপতি ঊড়ছে... কখনো কাছে আসছে... পরক্ষনেই দূরে চলে যাচ্ছে। কিন্তু ধরা দিচ্ছে না! জীবনটাও তো এমনি... তাঁর আসল রূপ নিয়ে কারো কাছেই ধরা দেয় না।পাগলির কথায় পাগলের ধ্যান ছুটে যায়...
- এ্যাই শুনছ!
' হ্যা!'
- আমি চশমা বাদ দিয়ে লেন্স নিলে কেমন হয়? কালার লেন্স?
' খুব খারাপ হয়'
- মানে?
' তোমার চোখ এমনিতেই সুন্দর!'
- কেমন সুন্দর? কি রং আমার চোখের? বলতো?
'এই তো ঝামেলায় ফেলে দিলে... কখনো কালো... কখনো মনে হয় বাদামী... আর সময়ে সময়ে আগুনে রূপ ধারণ করে!'
- ব্যাখ্যা কর, প্লীইইইজ...
' যখন তোমার হৃদয় উপত্যকাকে চোখের মুগ্ধ দৃষ্টি দিয়ে ছুঁয়ে দেই, তখন শান্ত নদীর কালো জলের মতো তুমি অপেক্ষার প্রহর গোনো। তখন কালো...
-তারপর!
' একটু কাছে গিয়ে উপত্যকার বন্ধুর পথে হাঁটার জন্য ডিভাইডার গুলোকে সরানোর চেষ্টা করতেই ও দুটো বাদামী হয়ে যায়'
- আর শেষটা?
' ওটা বললে তুমি আমাকে এখুনি পোড়াতে চাইবে'
- না চাইব না।
' তোমার হৃদয় উপত্যকাকে আমি অনুভব করতে চাইলেই ওগুলো আগুনের রঙে নিজেকে রাঙিয়ে নেয়... আমি ভয়ে নিজেকে আবার সেই শান্ত জলের কাছে ফিরিয়ে নিয়ে আসি।'
- তাঁর মানে আমার আবেগের উপর চোখের রঙের ওঠানামা?
' হ্যা! ব্যাপারটা তো সেরকমই মনে হচ্ছে...। হাহ হা হা'
পাগলি এবার উঠে বসে।
পাগলের সাথে সামনা সামনি... চোখে চোখ রাখে...
পাগল একটা ঢোক গিলে... দেখে পাগলির চোখ আগুনে রং ধারণ করেছে !
পাগলি হাসে... হীরের কুঁচির মত জ্বলজ্বলে চোখে ও হাসতেই থাকে।
- আমার আগুনে চোখের অর্থ তুমি এতোদিন যা জেনে এসেছ সেটা ভুল ছিল জানু! তোমাকে আমার হৃদয় উপত্যকা থেকে নামিয়ে দেবার জন্য নয়... উপত্যকায় তোমার ইচ্ছেমতো বিচরণ করে... প্রবল এক ঝড় হয়ে আমাকে এলোমেলো করে দেবার আহ্বানেই ও দুটো আগুন হয়ে উঠতো! কিন্তু আফসোস! তুমি বুঝলে না বন্ধু...
' এখন ও তো বেশী দেরী হয়নি!'
একে অপরের দিকে তাকায়।
বোঝার মাঝেও কিছু যেন বাকি রয়ে যায়... সেই না বোঝাকে খুব নিবিড়ভাবে বুঝতে ওরা দুজন নিজেদের অজান্তে খুব কাছে এসে যায়। দিনের আলোয় সবার সামনে থেকেও ওরা খুব কাছাকাছি চলে আসে। সবুজ ঘাসের গালিচা আহবান করে... পাখীরা লজ্জায় মুখ লুকায়... আর প্রজাপতি রঙিন চাদর দিয়ে ওদেরকে ঢেকে দেয়!
আদম -হাওয়া ছাড়া এখন আর কোথাও কেউ নেই...
সৃষ্টি সুখের উল্লাসে সমগ্র প্রকৃতি ও কাঁপছে।
৩.
-তুমি আমাকে আর ছোঁবে না
' কেন হঠাৎ আবার কি হল?'
- ছোঁবে না, ব্যস।
আমাদের পরিচিত পাগল-পাগলি নতুন কলা ভবনের সামনের সিঁড়িতে বসে আছে। ওদেরকে পাগল ও পাগলি হিসাবে পরিচয় করালেও ওদের যার যার নাম রয়েছে। শিহাব ও রুনা। এরাই ওরা। আজ রুনার মন খারাপ। ভীষণ খারাপ।
এবং বিমর্ষ।
সকাল থেকেই হৃদয়ের ঈষাণ কোণে কালো মেঘের আনাগোনা সে টের পাচ্ছে।একটা অমূলক ভয় ভিতরে কাজ করছে। শিহাবের উপস্থিতিও সেটা কাটাতে পারছে না। মোট কথা আজ ওর আকাশে একরাশ কালো মেঘ, অন্য দিনের চেয়ে ভিন্ন বার্তা নিয়ে এসেছে।
শিহাবঃ ' আমি কি কোনোভাবে তোমাকে হার্ট করেছি?'
রুনাঃ - জানি না। আমার কিচ্ছু ভালো লাগছে না।
' চলো দুজনে হাত ধরে কিছুক্ষণ ঘুরে বেড়াই'
- তুমি কি আমার শরীর ছাড়া আমাকে কল্পনা করতে পার না? যখনি কাছে আসবে শুধু ধরা ধরি আর ছুঁয়ে দিতে চাও... কেন ?
' হোয়াট?!'
- হৃদয়টা কি তোমার কাছে কোনো মাইনে রাখে না?
' আমি কোনো হৃদয় বিশেষজ্ঞ নই'
- তবে কি তুমি? একজন ডোম? যে মৃতদেহকে ব্যবচ্ছেদ করায় আনন্দ পায়?
' তুমি এভাবে কথা বলছ কেন?
- স্যরি...
দুজনে অনেকক্ষণ চুপ করে থাকে। শিহাব পকেট থেকে একটা ছোট্ট প্যাকেট বের করে। রুনার দিকে সম্মানজনক দূরত্ব রেখে ওটা বাড়িয়ে দেয়।
- কি ওতে?
' খুলে দেখ'
র‍্যাপিং পেপারে মোড়া ক্ষুদ্র প্যাকেটি খুলেই আশ্চর্য হয়ে যায় রুনা।
একটু আনন্দ...বিস্ময় এবং পেয়েও হারানোর বেদনা ওকে তাড়িত করে। একটু কষ্টও কি মনকে ব্যথাতুর করে দেয় ?! ... বিচিত্র এক ভাব মুহুর্তেই খেলা করে যায় ওর ভিতর।
ঘাস ফুলের অতি সাধারণ দু'টি ফুল যাকে কানের দুলে রূপ দেয়া হয়েছে। রুনা যে কোনো ধরণের অলঙ্কার ব্যবহারের বিরোধী। সে নিজেকে সকল সাজগোজ এবং প্রসাধনী মুক্ত রেখে চলে। এটা শিহাব ভালোই জানে।
- এটা কেন?
' তুমি তো আর কৃত্তিম জিনিস পড়বে না... তাই অনেক খুঁজে খুঁজে এই দুটো সংগ্রহ করলাম। এতে তোমার নিয়মের ব্যাঘাত ঘটবে না। তুমি নারী... তোমাতে আর প্রকৃতি এক হবে এগুলো পড়লে!'
- তবে তুমি নিজে পড়িয়ে দাও!
' নাহ! তোমাকে আর যদি ছুঁয়েছি কখনো!
- এখন আমি বলছি!
' কি পেয়েছ আমাকে? ইচ্ছে হল কাছে আসবে, ইচ্ছে হল দূরে ঠেলে দেবে?'
ঘাস ফুল দুটির দিকে দীর্ঘক্ষণ তাকিয়ে থাকে রুনা। এরপর যখন সে কথা বলে শিহাবের কানে তা মনে হয় যেন কোনো দূর গ্রহ থেকে কেউ কথা বলছে... যাতে হৃদয় নিংড়ানো কষ্ট এবং না পাওয়ার বেদনা মিশে আছে।
- তুমি আমি দুজনেই ইতিপুর্বে হৃদয়ের ব্যাপারে অন্য কারো কাছ থেকে ফিরে এসেছি। সোজা কথায় আমরা রিজেক্টেড। যাকে ভালোবাসতাম তাঁকে পেতে চেয়েছি পাগলের মতো... কিন্তু তাঁর মন ও শরীর দুটোই হাফ ডান পাওয়া হয়েছে আমার... একটা অতৃপ্তি- অসম্পুর্ণতা আমাকে আগ্রহহীনা করে ফেলেছে... আমি একা থেকেও একা ছিলাম না। অতীত আমাকে বেঁধে রেখেছিল। আমার পৃথিবীটা আমি আমার মত গুছিয়ে নিতে চেয়েছিলাম... যেখানে বন্ধুরা ওয়েলকাম বাট প্রেমিক নইব নইব চ...
' এটা তোমার অনুভুতি। এর ভিতরে আমি এলাম কীভাবে?'
- তুমিও যে কোনোভাবেই হোক প্রত্যাখ্যাত হয়ে মোমের মত গলানো হৃদয় নিয়ে আমার কাছে এলে। তোমার মনটা একেবারে শুন্য হয়েছিল। আমিও একটা শুন্য মন খুঁজছিলাম... যেখানে আমি নিজের মত করে বসত গেঁড়ে তাকেও আমার শুন্য মনে নিয়ে আসতে পারি। যে প্রথমে আমার বন্ধু হবে... ধীরে ধীরে একজন অন্যজনে অবগাহন... সমর্পণ... কিন্তু তুমি তোমার ছেলেমানুষি আর উচ্ছলতা দিয়ে যেভাবে আমাকে আকর্ষণ করছিলে... একসময় নিজেকে ধরে রাখা আমার জন্যও টাফ হয়ে পড়ল। আমি তোমার রিক্তের বেদনাকে আড়াল করে দিতে, তোমাকে এবং আমার নিজেকেও একটু সুখী দেখতে চেয়ে ভেসে গেলাম।
' তাই?'
- হ্যা! এবং কি অদ্ভুত ব্যাপার জানো, ভেসে গিয়েই বুঝলাম কি করছি আমি... ফিরতে চাইলাম। তবে তোমাকে কষ্ট দিতেও মন চাইছিল না। আমি কি করব বল এখন?
' প্রথমত; মনটাকে আর শুন্য ভেব না। যেভাবেই হোক আর যাই হোক কিছু তো পেয়েছ। নিজেকে শুন্য হতে দিও না। আমি এই মুহুর্ত থেকে তোমাকে বোঝার চেষ্টা করছি। কিন্তু প্রতিটি মানুষ আলাদা... তুমি যা ভাবছ সেটা তোমার ভাবনা, আমারটা আমার নিজের। তোমার একটা কথা অবশ্য ঠিক। বন্ধুর চেয়ে আপন আর কেউ হয় না। নিজের অভিজ্ঞতায় বলছি, সম্পর্কের ভেতর থেকে দেখেছি, বাইরে থেকেও দেখেছি!'
- তুমি আমাকে আরো বোঝ... আমি তোমার হাত ধরে সময়ের ওপর সব ছেড়ে দিলাম... এবং আমি এই মুহুর্ত থেকে দরোজার বাইরেই কমফোর্ট ফিল করছি। এখন আমার হাত ছেড়ে দেয়া কিংবা আরো শক্ত করে ধরে থাকা তোমার ব্যাপার।
' একসময় হয়তো তুমি দরোজা অতিক্রম করতে পারবে... তবে সেটা কত দিন...মাস...বছর লাগবে আমরা কেউ জানি না!'
- আমি একটা বন্ধু চেয়েছি, যে আমার সাথে বৃষ্টিতে ভিজবে কিন্তু আমার ভেজা শরীর তাঁকে টানবে না... আমি তাঁর সাথে পুকুরের এপার থেকে ওপারে সাঁতড়িয়ে যেতে চাই... আমি ওড়না পড়ি না, এটা সে দেখবে না!
' আমি ওড়নার নীচের সব কিছু এতো দেখেছি যে ওটা আমার না দেখলেও চলবে'
- আবার শুরু করলে?
' না, সিরিয়াস মুড থেকে একটু রিল্যাক্স মুডে আসার চেষ্টা করলাম। তোমার দিক থেকে একে অপচেস্টা ও বলতে পারো।'
ঘাসফুলের কানের দুল দুটিকে দেখিয়ে রুনা শিহাবকে বলে,
- এখন কি এগুলো আমাকে পড়িয়ে দেবে?
' না, যেদিন তোমার প্রেমিক থেকে বন্ধু হতে পারব, সেদিনই ও দুটো পড়াবো।'
- প্রোমিজ? নাকি রাগ করে বলছ?
' ইটস আ জেন্টেলম্যান প্রোমিজ... এন্ড আই রিয়েলি মীন ইট'
- বেশ! তবে এগুলো আমি যত্ন করে রেখে দিচ্ছি সেদিনের অপেক্ষায়।
' Happy
- একটা কথা, তুমি যেদিন ওটা করে দেখাতে পারবে, সেদিন কদম ফুটবে। আমি নিজে সেই কদমের অপেক্ষায় রইলাম!
' কদম কত ভাগ্যবান! কেউ তাঁর জন্য অপেক্ষা করছে... আর আমি?'
- যাও!... তোমাকে ও কদম দেয়া হবে
' না, আমি কদম প্রদানকারিনীকে চাই!'
একজন প্রেমিক তাঁর প্রেমিকাকে নিয়ে পাশাপাশি হেঁটে চললো। আশেপাশে আরো অনেকে হাত ধরে চলছে... কিন্তু সে প্রেমিক থেকে আগে বন্ধু হবার সাধনায় নেমেছে। তাই নিরাপদ দূরত্বে থেকেই দুজনে হৃদয়ের কাছাকাছি থাকার আপ্রাণ চেষ্টারত... রুনার আকাশের কালো মেঘগুলো সাদা মেঘবালিকায় পরিণত হয়েছে। শিহাব সেই মেঘবালিকাদের দেখে দেখে পথ চলছে।
৪.
ক'দিন ধরে ঝগড়া... কথা বন্ধ রুনা ও শিহাবের।
মামুলি এক ব্যাপার নিয়ে। প্রায়ই এমন হয় ওদের দুজনের ভিতর। ভীষণ ছেলেমানুষ ওরা।
শিহাবের খুব ইচ্ছে করছে রুনাকে এক নজর দেখতে। কিন্তু ইগোর বেড়াজাল ডিঙ্গাতে পারছে না সে।মোবাইল হাতে নিয়ে সেভ করা পরিচিত নাম্বারটি বের করেছে অনেকবার... সবুজ বাটনটিতে জাস্ট একটা প্রেস করাটা যে এতো ভারী হয়ে উঠবে- আগে কি কখনো ভেবেছে সে? এরকম অস্থিরতায় কেটে গেলো কয়েকটি দিন।
একদিন গভীর রাতে দুঃস্বপ্ন দেখে শিহাবের ঘুম ভাঙ্গে। এক সমুদ্র ঘামের মধ্যে ভাসতে ভাসতে সে জেগে উঠে। স্বপ্নটা এতোটাই বাস্তব যে তাঁর রেশ যেন শিহাবের সারা ঘরে ছড়িয়ে আছে... তাঁর প্রিয়া চলে যাচ্ছে তাঁকে ছেড়ে!
বুকের গভীরে চিনচিনে ব্যাথাটা বাড়ে... পানি খায়... কিন্তু অস্থিরতা কমে না।
ঘড়ি দেখে শিহাব।
রাত তিনটা।
জানালার পর্দা সরাতেই ঘরের ভেতর ঝাঁপিয়ে পড়ে জোছনা... তাঁকে বলে দেয়, " পাহাড়ী বৃষ্টিতে আমার ভেজা হয়ে গেছে... এখন কেবল আর একটা ইচ্ছেপূরন বাকি। সেও হয়ে যাবে... পাহাড়ি পূর্ণিমার তরল আগুনে পুড়ব বলে অপেক্ষায় আছি কখন গৃহত্যাগী জোছনা উঠে..."। শিহাবের চোখ ভিজে উঠে... তাঁর কেবল মনে হতে থাকে এই জীবনে রুনার মিষ্টি মুখটি সে বুঝি আর দেখতে পাবেনা!
ঘর ছেড়ে বেড়িয়ে পড়ে শিহাব।
রুনার বাসার পথে এগোয়।
গোকুলনগর থেকে সিএন্ডবি কম দূরে নয়... কিন্তু শিহাব যেন উড়ে চলে।
শিহাব যখন রুমার বাসার সামনে পৌঁছায় ততোক্ষণে তাঁর হাঁফ ছুটে গেছে... বাসার গেটে হেলান দিয়ে দাঁড়ায়... আকাশের পানে তাকায় চিবুক সোজা করে। হ্যা... রুনার রুমে ডিম লাইট জ্বলছে... ফ্যান ঘুরছে আর তাতে প্রবল ঝড় উঠেছে জানালার পর্দায়।
ঝড় উঠেছে শিহাবের বুকেও... খুব কাছ থেকে খুব সন্তর্পনে প্রিয়াকে দেখতে পেয়ে আবেগী ঝড়!! পকেট থেকে সেল ফোন বের করে শিহাব। কিছুক্ষণ হাতে নিয়ে পরিচিত নাম্বারটির ওপর হাত বুলিয়ে যায়... যেন রুনার হৃদয়ের দুই অলিন্দেই তাঁর ঘোরা হয়ে গেলো। নিশ্চিন্ত... ক্লান্ত... তবে একটা পরম নির্ভরতা অনুভব করছে।ওর প্রিয়া শান্তিতে ঘুমাচ্ছে! কি দরকার ওকে সেখান থেকে জাগানোর? সে যে এসেছিল সেটা সে নাই বা জানলো... আর ভালোবাসায় দেখানোটা কম... উপলব্ধিটা বেশী হওয়া উচিত।
যে পথ দিয়ে সে এসেছিল চরম উদ্ভ্রান্তের মত... মোবাইল পকেটে রেখে সে পথ দিয়েই পায়ে পায়ে ফিরে যায় শিহাব।
জানালার পর্দা বাতাসে উড়ছে। তারই ফাঁক দিয়ে রুনা শিহাবকে চলে যেতে দেখে। একটা অপসৃয়মান ছায়ার মতো রুনাকে হৃদয়ে নিয়ে ফিরে গেলো মানুষটা!
সে কেন এসেছিল?
এসেছিলোই যখন ওকে ডাকলো না কেন?
মোবাইল বের করেও ফোন করল না কেন?
এতোগুলো কেন'র উত্তর কি জানা হবে কখনো??
ভাবতে ভাবতে রুনা নিজে এটা বিস্মৃত হল, ঠিক এই সময়ে সে ঘুম থেকে উঠে জানালার পাশে কিসের জন্য দাড়িয়েছিল? প্রকৃতি আমাদেরকে নিয়ে খেলা করে... অনেক রহস্য দেখিয়ে দেয়... আবার এমন অনেক সহজ কিছুও দেখতে দেয় না... ভুলিয়ে দেয়। আর এই ভুল-ভোলানি খেলার একটা মাত্র যায়গাই সে বেছে নিয়েছে...সকল অনুভুতির জন্ম হয় যেখানে... সেই হৃদয়!!
৫.
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রজাপতি মেলায়... বিভিন্ন যায়গা থেকে দলবেঁধে- একা একা অথবা জোড় বেঁধে সুন্দরের প্রতি চিরন্তন আকর্ষনে সবাই এসেছে। সব বয়সের নারী-পুরুষ- শিশু রয়েছে। এ যেন রঙিন প্রজাপতির হাটে রঙের মেলা বসেছে! কত রঙিন পোষাকে দর্শনার্থীদেরকে দেখা যাচ্ছে।এদের মাঝে আমাদের সেই পাগল-পাগলি, রুনা এবং শিহাবও রয়েছে।
তবে আজ একা ওরা।
আলাদা আলাদা ইতস্তত বিক্ষিপ্ত ভাবে ঘুরে বেড়াচ্ছে।
গত পরশুদিন শিহাব মধ্যরাতে রুনার বাসার সামনে এসে রুনাকে দেখে যাবার পর আজ এই প্রথম ওরা বাইরে বের হল। উদ্বোধনী অনুষ্ঠান জহির রায়হান মিলনায়তনে এই এখুনি শুরু হতে যাচ্ছে। তুহিন স্যার, মুকিত মজুমদার বাবু এবং মাননীয় ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য সহ প্রাণীবিদ্যা বিভাগের চেয়্যারম্যান স্টেজে চলে এসেছেন। বেলুন উড়িয়ে অনুষ্ঠানের সুত্রপাত হল। এখন ওনারা বক্তব্য রাখছেন।
অডিটোরিয়ামের সিঁড়ির সামনেই দর্শকদের আসন। সেখানে বসে বসেই রুনা তুহিন স্যারের সূচনা বক্তব্য শুনছে... চোখ সামনের দিকে কিন্তু মন একজনকে খুঁজে ফিরছে। বেশ কয়েকবার ডাইনে-বায়ে তাকিয়েছে... সে আছে কিনা দেখছে। কিন্তু তাঁর চোখ শিহাবের সেই পরিচিত-ভালোলাগা অবয়বকে পায়নি।
রুনার চোখ যাকে খুঁজে বেড়াচ্ছে, সে একেবারে রুনার পিছনে। বেশ পিছনে। তবে শিহাবের ওখান থেকে শুধু রুনার কাঁধ ও মাথা দেখা যাচ্ছে। ওর চুলের সাথে অবহেলায় পড়ে থাকা বেলী ফুলকে সে এখান থেকেই স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে। রুনা যে কয়েকবার এদিক সেদিক তাকিয়েছে, সেটা ও দেখেছে। প্রথমে মজা লাগলেও পরক্ষণেই বিষন্নতায় ছেয়ে যায় শিহাবের মন। ওর বন্ধু ওকে খুঁজে পাচ্ছে না... কি অসহায় লাগছে রুনাকে এখন!
নিজের চিন্তায় নিজেই চমকে যায় শিহাব।
বন্ধু?!
আসলেই কি সে বন্ধু ভেবেছে রুনাকে?
এইমাত্র?
দশ দিককে স্তব্ধ করে দিয়ে হৃদয় ও ব্রেইনকে প্যারালাইজড করা এক অনুভুতিতে আচ্ছন্ন শিহাব পায়ে পায়ে সামনের দিকে আগায়। কয়েকজনের সাথে অভদ্রজনিত ধাক্কায় তাঁদের ভ্রুকুটিকে নিজের অজান্তেই উপেক্ষা করে একসময় রুনার কাছে যেতে পারে।
এখন রুনা একবার পিছনে ফিরলেই ওকে দেখতে পাবে। কিন্তু শিহাব সব সময় দেখে এসেছে, জীবনে তোমার যখন অন্তত একবার পিছনে ফিরে দেখা প্রয়োজন- ঠিক সেই সময়টাতে আর ফেরা হয় না। রুনাকে কি সে ডাকবে?
নাকি অপেক্ষা করবে? কখন সে ওকে দেখে। প্রয়োজনে শিহাব এক যুগ ঠায় দাঁড়িয়ে থাকবে।
কতক্ষণ ওভাবে ছিল শিহাব নিজেও বলতে পারবে না। তবে পরিচিত কন্ঠের আওয়াজে সে অনেক দূর থেকে কাছে চলে আসে... দেখে সাময়িকভাবে অনেক দূরে চলে যাওয়া সেই প্রিয় মুখ একেবারে ওর কাছে... তাঁর শরীর ভেদ করে হৃদয়ের কোনো এক গভীর থেকে মনকে মাতাল করে দেয়া ভালবাসার পারফিউম ওকে ক্লোরোফর্মের মত সাময়িক বিবশ করে দিতে চায়। চোখে চোখে নীরবে কথা না বলেই সমঝোতা হয়ে গেলো।সঠিক সময়ে দু'জনেই পিছনে ফিরতে পেরেছে। রুনা তাঁর আসন থেকে উঠে শিহাবের পিছু নেয়... দুই পাশে গাছ নিয়ে কালো পীচ ঢালা একটি নির্জন রাস্তা ধরে রুনা-শিহাব হাঁটতে থাকে।
পাশাপাশি থেকেও বেশ খানিকটা ব্যবধানে হাঁটছে ওরা। নীরবে একে অপরের হৃদয়ের ভালোলাগার উত্তাপটুকু অনুভব করছে। এলোমেলো বাতাসে রুনার অবাধ্য চুলগুলো উড়ছে... সেগুলোর সাথে ওর মনটাও কি? একসময় রুনা বলে-
- জানো, এরকম পরিবেশে 'ওর' সাথে সেই সময়গুলোতে ওর হাত ধরে হাঁটতে খুব ইচ্ছে করত। কিন্তু সে আমার হাতের থেকে আমার শরীরের বিশেষ যায়গাগুলো স্পর্শ করতে পছন্দ করত।
' বাদ দাও তো... যে চলে গেছে লেট হিম গো... গো ফরএভার'
- আরে শোনই না। আমি যখনই তাকে বলেছি, তোমার হাতটা একটু ধরি... চল একটু হাঁটি... সে কি বলত জানো?
' কি বলতো?'
- তুমি একটি গেঁয়ো মেয়ে, এই যুগে এখনও হাত ধরাধরি... রাবিশ... আমি নীরবে চোখের জল লুকানোর জন্য ওর সেই অপমান হেসে উড়িয়ে দিতাম। কিন্ত বিশ্বাস কর, আমার হৃদয়টা ভেঙ্গে যেতো। কতবার যে সেটি ছিন্নভিন্ন হয়েছে! তোমায় যদি দেখাতে পারতাম!
' তুমি আমার হাত ধরবে?
শিহাবের বাড়িয়ে দেয়া হাতকে দেখে রুনা... ওর চোখের পানে তাকায়। সেখানে নীরবে কিছু একটা খোঁজে... নিজের মনের ভিতরেও একটু ঘুরে আসে। শিহাব হাসে, বলে-
'ভয় নেই, এটা প্রেমিকের হাত নয়!'
- তবে কার হাত?
' বন্ধুর হাত!'
- বন্ধু? হতে পেরেছ?
' হ্যা!
- আমাকে ছেড়ে যাবে না তো? এই হাত মুহুর্তে লোভীর হাতে পরিণত হবে নাতো?
' না... একবার বন্ধু হতে পেরেছি যখন... মনে হয় না আর পিছে ফিরতে পারব।
রুনা পরম নির্ভরতায় শিহাবের হাত ধরে... দুজন প্রেমিক-প্রেমিকার হাত একজন বন্ধুর হাতে পরিণত হয়। একটা লম্বা সাপের মতো আঁকাবাঁকা পথ ধরে জীবনের বাঁকা পথের পথিক হয়ে ওরা আগাতে থাকে। পিছনে ফেলে যায় কিছু বিষাক্ত নিঃশ্বাস... তিক্ততায় ভরা কিছু মুহুর্ত... আর... আর... ধুত্তুরি, থাকনা ওগুলো পিছনেই পড়ে।

শেষ দেখা

বৃষ্টি হচ্ছে খুব । জেরিন বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে । বৃষ্টির শীতল ফোঁটা তীরের মতো ওর মুখে এসে বিঁধছে । কাল
কয়েকদিন আগেও ওরা দুইজন অনেক ভালো বন্ধু ছিল , যাকে বলে বেস্ট ফ্রেন্ডস । কিন্তু এখন কেউ কারো সাথে কথা পর্যন্ত বলে না ! একটি ঘটনা তাদের মধ্যে দূরত্বের বিশাল দেয়াল দাঁড় করিয়ে দিয়েছে ।
ভার্সিটিতে সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা , অথচ তার কোন চিন্তা নেই । সে দাঁড়িয়ে আবরারের কথা ভাবছে । আবার ওর সাথে দেখা হবে !
ঘটনা শুরু হয়েছিলো একমাস আগে । যেভাবে বলা হচ্ছে আসলে তেমন গুরতর বিষয় নয় । থাক, আসল কথায় আসা যাক । জেরিন একটা ম্যাগাজিনে লেখালেখির কাজ করে , মোটামুটি ভালোই পরিচিত সে । খুব অল্প সময়েই ভালো একটা পরিচিতি লাভ করেছে সে । এদিকে আবরার নিজে নিজে কবিতা , গল্প লিখলেও সেগুলো প্রকাশের সুযোগ এখন পর্যন্ত পায়নি । ওদের দুজনের মধ্যে পরিচয়ও তেমন ছিল না তবে আবরার জেরিনকে চিনতো স্বাভাবিকভাবেই ।
জেরিন যে ম্যাগাজিনে লিখত তার একটা মাসিক মিটিং হল এবং ওরা দুইজনই সে মিটিংএ ছিল । এভাবেই ওদের ভালোমতো পরিচয় , ফেসবুকে অ্যাড ইত্যাদি হয়ে গেলো । প্রায় প্রতিদিনই কথা হতো ওদের , খুব অল্প সময়ই ভালো বন্ধুত্ব হয়ে গেলো দুজনের মধ্যে । যাই হোক না কেন আবরার জেরিনের প্রতি দুর্বল হতে শুরু করে । একসময়ে ভালোবেসে ফেলে জেরিনকে । কিন্তু এবিষয়ে কিছুই বলে না জেরিনকে , পাছে বন্ধুত্ব না ভেঙে যায় ! একদিন কথা বলার মাঝে আবরার ওকে জিজ্ঞেস করলো ,
- আচ্ছা ! আমার ব্যাপারে তোমার ফিলিংস কি ?
- তোমার ব্যাপারে আমার ফিলিংস খুব ভালো ।
- বুঝিয়ে বলো ।
- তুমি খুব ভালো একটা ছেলে । অল্প সময়ই তুমি আমার খুব ভালো বন্ধু হয়ে গিয়েছ ।
- ও আচ্ছা !
- তোমারটা বলো ।
- আমি একটা কথাই বলব । আমি তোমার সাথে থাকতে চাই ।
- এক্সপ্লেইন করবে , প্লিজ ?
- আমি তো তোমার কাছ থেকে না শুনতে পারব না ।
- হাহাহাহা । তুমি কি আমাকে প্রপোস করলে ?
- না , বাদ দাও । তবে প্রপোস হলে কি করতে ?
- বলতাম , ‘আমি এখনো কিছু ভাববো না । ওয়েট করতে পারলে করো , নাহলে রাস্তা মাপো !!
- ও আচ্ছা !! বাদ দাও !
এরপর আবরার এ নিয়ে আর কিছুই বলতে পারেনি । কিন্তু জেরিনের মনে আসলে কি ছিল তা বোঝা গেলো না । মেয়েদের স্বভাবটাই এমন । কিছু বলতে না চাইলে হাতে পায়ে ধরেও সেটা বলানো যায় না ! হাসিখুশি স্বভাবের আবরার ভেতরে ভেতরে শুধু অশান্তি আর দুশ্চিন্তার মাঝে দিন পার করতে লাগলো । আর জেরিন তো আগের মতোই আছে , কোনো পরিবর্তন নেই ।
এর মাঝে ম্যাগাজিনে আবরার একটা লেখা জমা দিলো , সে খুব আত্মবিশ্বাসী ছিল যে ওর লেখাটা ছাপা না হয়ে যাবেই না !! জেরিনকেও জানালো , জেরিনও ওকে বেস্ট উইশ জানালো ।
দেখা গেলো ওর লেখাটা ছাপা হলো না । খুব দুঃখ পেলো আবরার , নিজের প্রতিই রাগ হলো । এদিকে হতাশা নিয়ে ফেসবুকে একটা স্ট্যাটাস দিলে জেরিনেরও ব্যাপারটা চোখে পড়লো । ও তৎক্ষণাৎ আবরারকে ফোন দিলো –
- তোমার লেখাটা আমাকে একটু দেখাতে পারবে ?
- কেনো ? লেখা দেখে কি করবে ?
- দাও না ! আমি একটু দেখবো ।
- দেখা লাগবে না ।
আবরার ঠাস করে ফোন রেখে দিলো । কিছুই ভালো লাগছে না ।
এর কয়েকদিন পরেই ওদের মাসিক মিটিং হলো । আবরার অবাক হয়ে লক্ষ্য করলো অনেকেই ওর সাথে অস্বাভাবিক আচরণ করছে । ঠিকমতো কথা বলছে না , বললেও আজগুবি ব্যাপার নিয়ে খোঁচা দিচ্ছে । এমনকি জেরিন ওর সাথে কথা না বলেই মিটিং শেষে চলে গেলো , একবার তাকালো না পর্যন্ত ! এর মাঝে ফারহানের সাথে ওর দেখা হলো । ফারহান ওদের সাথেই ম্যাগাজিনে টুকটাক কাজ করে । তবে ইদানীং ফারহান অনেক পরিচিতি লাভ করছে , আবরারের চাইতেও বেশি । আর ফারহান খুব খোঁচা মেরে কথা বলে , তাই আবরার ওকে একটু সাবধানী দৃষ্টিতে দেখে । ফারহান এসেই ওর পিঠে থাবা মেরে বললো –
- কীরে রোমিও !! কি খবর ?
- হুম । এইতো !
- শুনলাম তোর একটা লেখা নাকি খুব ভালো হইসে কিন্তু ছাপায়নাই !! তাই নাকি তুই খুব কষ্ট পাইসিশ ??
- তেমন কিছু না । এই আর কি !!
- আসলে তোর লেখাতো ছাপা হবে না রে !!
- মানে ?? কি বলতেসিশ ??
- হুম !! শুনলাম তুই আমাদের টিমের অনেক মেয়েদের সাথে ফিল্ডিং মাইরা বেড়াস ! উপর থেকেই বলা হইসে । এমন করলে তোর কোনো কাজই কোনো কিনারা পাবে না !
- আমি গেলাম ।
ঝড়ের বেগে চলে আসলো আবরার । এগুলো ও কি শুনছে ?? ছি ছি !! লজ্জায় মাথাটা উঠাতেও পারছে না সে । শেষপর্যন্ত এমন অভিযোগ ! আর ভাবতে পারছে না । বাসায় ফিরে চিন্তা করলো আবরার । জেরিন ছাড়া তো কোনো মেয়ের সাথেই সেভাবে কথা বলে না ও ! তাহলে কি জেরিনই সব বলে দিয়েছে ? তাতে ওর কি লাভ ? না , ওকে অবিশ্বাস করতে পারছে না আবরার । আবার বুঝতেও পারছে না কে অভিযোগ করেছে ওর বিরুদ্ধে ।
সিদ্ধান্ত নিলো আবরার । জেরিনের সাথে প্রতিদিন কথা বলা বন্ধ করে দেবে । কথা বললেও কাজের কথাই বলবে , এর বাইরে আর একটা কথাও নয় ।
প্রায় দুই মাস পার হয়ে গিয়েছে । আবরার ম্যাগাজিনের মাসিক মিটিংএ যায় নি এরপর । জেরিনের সাথেও ভালোভাবে কথা হয় নি । এখন ও ভাবলো , ‘জেরিনের সাথে কথা বন্ধ রেখে কি লাভ ?? ওকে তো আমি ভালোবাসি । আর ওর সাথে কথা বন্ধ রেখেই কি কোনো লাভ হবে ?’
জেরিনকে ফোন করলো । ওপাশ থেকে জেরিনের কণ্ঠ শোনা গেলো –
- হ্যালো ।
- আমি আবরার । আচ্ছা আমাদের মাঝে কথা কেন বন্ধ হলো ?
- জানি না । হয়তো এরজন্য আমিই দায়ী ।
- আচ্ছা থাক । চলো , আগের সময়ে ফিরে যাই ।
- হাহাহা ! ওকে ।
এরপর থেকে আগের মতোই ওদের কথা হতে থাকলো । জেরিন দুইমাসে আর বদলায় নি । একসময়ে আবরার ভাবলো ওর মনের কথা সোজাসুজি জেরিনকে বলবে । এমন অশান্তি আর সহ্য করতে পারছে না সে । একদিন আবরার বলতে শুরু করলো –
- জেরিন , তোমাকে একটা কথা বলতে চাই ।
- হুম । বলো ।
- কাউকে বোলো না ।
- আচ্ছা ঠিকাছে । বলো ।
- আসলে !! আমি তোমাকে ভালোবাসি ।
- কি !! কবে ? কিভাবে ?
- হয়ে গেছে । আমি জানি না । তিনমাস আগে থেকেই ।
- তখন কেনো বলনি ?
- ভেবেছিলাম তোমার মন জিতে নিয়ে বলবো , তাই বলি নি ।
- আসলে এসব কথার কোনো অর্থ নেই । আমি আরকজনকে ভালোবাসি ।
- কি ?? তবে যে বলেছিলে তুমি এগুলো নিয়ে ভাবছো না ? ওয়েট করতে হবে !!
- আমি কারো প্রেমে পড়লে ভাববো সেটা নিশ্চয়ই বলেছি ।
- না । বলনি । তুমি মিথ্যা বলছো ।
- মিথ্যা কেনো বলবো ? আমি সত্যি আরকজনকে ভালোবাসি ।
- ভালো থেকো । আর তোমার সাথে কথা হবে না ।
এরপর থেকে আবরার জেরিনের সাথে আর কোনোদিন কথা বলেনি । এরমাঝেই দুই বছর কেটে গিয়েছে । একই ভার্সিটিতে পড়ার কারণে মাঝে মাঝেই দুইজনের দেখা হয়ে যায় , তবে কেউই কারো সাথে কথা বলে না । আবরার আসলে এখন জেরিনকে ভয় পায় , জেরিনও অস্বস্তিতে ভোগে ওর সাথে দেখা হলে । তবে এক বিচিত্র কারণে আবরার বিশ্বাস করে যে জেরিন ওকে ভালোবাসে , কোনো এক কারণে ওকে মিথ্যা বলেছে । আবরার এ বিশ্বাস নিয়েই এতদিন ছিল । কিন্তু এখন আর থাকতে পারে না , খুব কষ্টে থাকতে হয় তাকে । খুব অগোছালো জীবন পার করছে সে , কেউই তা বুঝে না । পৃথিবীতে মানুষের কষ্ট দেখার সময় কোথায় ?? সবাই ছুটে চলছে নিজের গতিতে , কেউ সফল হতে আবার কেউ তাদের সফলতাকে ধ্বংস করতে ।
একদিন অন্যমনস্ক হয়ে রাস্তায় হাঁটার সময় প্রবল বেগে ছুটতে থাকা একটা দোতলা বাসের সাথে ধাক্কা খায় আবরার । ঘটনাস্থলেই মৃত্যু !! কে জানে ! শেষ মুহূর্তে হয়তো নিজের মনের মানুষটার দুষ্টু হাসিটাই কল্পনায় দেখেছিলো !!
আবরারের মৃত্যুর খবর পেয়ে সবাই এসেছিলো । এমনকি ম্যাগাজিনের মানুষগুলোও এসেছিলো সবার সাথে । কেউ কেউ কষ্ট পেয়েছিলো ঠিক , আবার অনেকের মনেই কোনো প্রতিক্রিয়া হয় নি । একসময় যে যার মতো চলে গেলো । ব্যস্ত সবাই , এতো সময় তো নেই !!
শুধু সবার আড়ালে একজন এসেছিলো ভালোবাসার মানুষকে শেষ দেখা দেখতে । অনেক কেঁদেছিল সে । নিজের ভুলের জন্য মানুষটিকে হারিয়ে ফেলার অমানবিক কষ্টে । সে যে মুখ ফুটে বলতে পারে নি ভালবাসার কথা । কারণ সে চেয়েছিলো মানুষটা কোনো বিপদে না পড়ুক , চেয়েছিলো মানুষটা ভালো থাকুক । কিন্তু কই ?? সে তো চলেই গেলো । এভাবে শেষ দেখা হবে তা কল্পনাতেও ভাবতে পারে নি !
আবরারের বিশ্বাস সত্যি হয়েছিলো । কিন্তু ততদিনে সবকিছু শেষ । আবরার স্থান নিয়েছে পৃথিবীর বাইরে , অনেক দূরে ! আর জেরিন ? সে ভালো আছে । তবে আবরারের মৃত্যু তাকে দুঃস্বপ্নের মতো তাড়া করে বেড়ায় , প্রতিদিন !

একটি ব্যর্থ প্রেমের গল্প

- আচ্ছা , আপনি হিমুর বইগুলো পড়েছেন ? অনেক সুন্দর না গল্পগুলো ? ইশ ! আমি তো হিমুর প্রেমে পড়েছি অনেক আগে
- ও আচ্ছা ! তাই নাকি ? হিমুতো বন্ধনে জড়ায় না , জানেন না ? বাস্তবে হিমু থাকলে তো আপনার দশা রূপার মতই হতো ।
- নাহ ! আমি ওকে আমার প্রেমের ফাঁদে ফেলতাম । সে আমাকে ছেড়ে যেতেই পারত না ।
- তাই ? আপনি ছেলেদের খুব ভালোভাবে পটাতে পারেন মনে হচ্ছে !
। বাস্তবে হিমু থাকলে তাকেই আমি বিয়ে করতাম ।
এভাবেই তার সাথে আমার প্রথম কথা হয়েছিল । প্রথম দেখাও হয়েছিল সেদিন , এক বিয়ের অনুষ্ঠানে । আমি ছিলাম বরপক্ষ আর ও ছিল কনেপক্ষ । বিয়ের অনুষ্ঠান আমার কাছে খুব বিরক্তিকর লাগে , তবুও খাওয়াদাওয়ার লোভে না গিয়ে পারি না । তো সেদিন এমন একটা অস্বস্তিকর গরমের দিনে এক বন্ধুর নিমন্ত্রণ রক্ষা করতে গেলাম এক অপরিচিত কমিউনিটি সেন্টারে । রাত আটটার বেশি বাজে , তবুও কেন খেতে ডাকছে না সে চিন্তা করতে করতে আমার প্রিয় এক্সপেরিয়াতে ফেসবুকে মেসেজ দেখছিলাম । তখনি পিছন থেকে একটি মেয়ের গলা শুনতে পেলাম ।
- আপনি কি বরের কিছু হন ?
পিছন ঘুরে তাকালাম । নীল শাড়ি পড়া এক নারী । প্রথম দেখাতেই ধাক্কামত খেলাম । মনে হল আকাশ থেকে কোন নীলপরী নেমে এসেছে ডানা লুকিয়ে । বাইরে থেকে সে ধাক্কাটা সামলে জবাব দিলাম , ‘হে । আমি বরের বন্ধু । আপনি ?’
- আমি কনের খালাতো বোন । তো , একা দাঁড়িয়ে আছেন যে ? সাথে কেউ নেই বুঝি ?
- আসলেই নেই । আর আমার এসব লোকারণ্য ভালো লাগেনা । তাই নীরব জায়গা খুঁজে নিয়ে একটু নিঃশ্বাস নিচ্ছি । আপনি একা কেন ?
- আমি ? আমিও একা থাকতে পছন্দ করি । দুইজন একা মানুষ এক হয়ে কথা বলছি , কেমন না ব্যাপারটা ? হা হা হা ।
এভাবেই কথা হচ্ছিল আগন্তুকের সঙ্গে । আগন্তুক ? না তো । তেমন তো লাগছে না , মনে হচ্ছে অনেক পুরনো বন্ধু আমরা । পরিচয় , নাম , সবই জানলাম । বয়সে তিন বছরের ছোট , নাম মৃদুলা । নাম শুনে মনে হল এ নামটা ওর সাথেই যায় । যাই হোক , সেদিন অনুষ্ঠান শেষে যখন ফিরছিলাম তখন কি যেন মনে করে তাকে আমার মোবাইল নাম্বারটা দিয়ে আসলাম । সেও হাসিমুখে নিল , বলল , ‘আবার দেখা হবে ।‘ আমিও জানতাম আবার ওর সাথে আমার দেখা হবে , খুব শীঘ্রই ।
সেদিন রাতে বাড়ি ফেরার পর ক্লান্তি আমাকে ছাড়ল না । সটান হয়ে শুয়ে ঘুমে তলিয়ে গেলাম । স্বর্গের পরী মৃদুলার কথা মনে করার জন্য এক সেকেন্ড সময়ও পেলাম না ।
পরদিন সকালে মোবাইলে দেখলাম ৩টা মিসড কল , সবগুলোই একটি অপরিচিত নাম্বার থেকে । পাত্তা দিলাম না , মনে করলাম দরকার হলে আবার ফোন করবে । একটা ওয়ার্কশপে যোগ দেয়ার কথা ছিল সেদিন , তাড়াহুড়ো করে বেরিয়ে পড়লাম ।
দুই ঘণ্টা পরঃ
বন্ধুদের সাথে কথা বলছিলাম , হঠাৎ নারীকণ্ঠ শুনতে পেলাম , ‘শুনছেন ?’
পিছন ফিরে তাকালাম । মৃদুলা । ভেবেছিলাম খুব শীঘ্রই দেখা হবে কিন্তু এতটাই কম সময়ের মধ্যে হবে চিন্তা করতে পারিনি । আমি হাসিমুখে জিজ্ঞেস করলাম , ‘আপনি ? এখানে?’
- ওয়ার্কশপে এসেছি । আপনি ?
- আমিও । আমি আর আমার বন্ধুরা অনেক আগে থেকেই এমন একটা ওয়ার্কশপের জন্য অপেক্ষা করছিলাম ।
বাই দা ওয়ে , আজও কি আপনি একা ?
- না । আমার দুই বান্ধবী এসেছে । আমি আপনাকে দেখে আসলাম । ও হে , কাল রাতে আপনার নাম্বারে ফোন করেছিলাম কিন্তু পাইনি ।
- ওইটা আপনার নাম্বার ? আমি বুঝিনি । আসলে কাল রাতে খুব ক্লান্ত লাগছিল , তাই আগে আগে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম । দুঃখিত ।
- ঠিক আছে । আমার জন্য আপনি আপনার ঘুম মাটি করবেন নাকি ? আমি কি আপনার প্রেমিকা ? হা হা হা ।
এভাবে কিছুক্ষণ কথা বলার পর ও চলে গেল । যাবার পরপরই আমার বন্ধুরা আমার দিকে তাকিয়ে চোখ ঘুরোতে লাগল যেন আমি কতকিছু করে ফেলেছি । বন্ধুদের এই একটা সমস্যা , কোনকিছুই স্বাভাবিক করে নিতে পারে না । সবসময় মনে করে ‘ডাল মে কুচ কালা হে ।’
থাক ওদের কথা । মৃদুলার সাথে দেখা হবার পর থেকে মনে কেমন যেন একটা চঞ্চলতা অনুভব করছিলাম । কেন জানি না , একটা আলাদা শান্তি পাচ্ছিলাম । মনের মাঝে একরকম সাম্রাজ্যবাদ ভর করছিল বারবার । নাহ , আজ রাতে আমিই ওকে ফোন করব । যখন বাড়ি ফিরছিলাম , হেডফোনে গান বাজছিলঃ
আমার হিয়ার মাঝে লুকিয়ে ছিলে ,
দেখতে আমি পাইনি তোমায় , দেখতে আমি পাইনি ।
এত সহজে কেউ আমাকে দুর্বল করে ফেলবে , চিন্তা করিনি । মেয়েরা বোধহয় এমনি , খুব সহজে মায়ায় জড়িয়ে ফেলতে পারে । সেই মায়ায় আটকা পড়ে সুখের স্বপ্ন দেখে আমার মত সুপ্ত প্রেমিকেরা ।
রাতে ফোন করলাম । প্রথমবার সাড়া পেলাম না । আবার করলাম , তখন রিসিভ করল , ‘হ্যালো ।’ আহা , কি মিষ্টি গলা মৃদুলা নামের নারীটির ! সারারাত কথা হল , কি কথা হল সেসব বলব না । এতকিছু না বলাই ভালো । এরপর থেকে মৃদুলা ছিল আমার প্রতিদিনের মানুষ । কথা , দেখা , সময় কাটানো , সবই হতো । ও কবিতা খুব পছন্দ করে আর আমি নিজেও মাঝে মাঝে কবিতা লিখি । ওকে স্বরচিত কবিতা পড়ে শোনাতাম , ও মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে শুনত । ওকে নিয়ে লেখা কবিতাও ওকে শুনিয়েছি কিন্তু বলতে পারিনি সেগুলো ওকে নিয়ে লেখা । একসময় অনুমতি নিয়ে তুমি করে বলতে শুরু করলাম । এভাবে চলতে চলতে কখন যে ওকে নিজের করে নিয়েছি বলতে পারব না । ভালবেসে ফেলেছি ওকে । কিন্তু বলার মত যথেষ্ট সাহস আমার ছিল না , যদি চলে যায় এই ভয় ছিল সবসময় । একবার ওকে জিজ্ঞেস করলাম , ‘আচ্ছা , তুমি আমাকে তুমি করে বলতে পারো না ? আপনি শুনতে আমার ভালো লাগে না ।’ ও বলল , ‘নাহ । আপনার জন্য তুমি আসে না । আপনি তো বড় । আপনিই বলি ।’
- তুমি বিয়ে করলে তোমার হাসব্যান্ডকে কি আপনি করে বলবে ?
- হয়তো বলব । হা হা হা ।
আরকিছু বলতে পারলাম না । বলার সাহস হল না । সাম্রাজ্যবাদী মনটা কেমন যেন পতনের ধ্বনি শুনতে পেল । একটা জিনিস বুঝলাম , ‘ভালবাসার রাজ্যে গণতন্ত্রের কোন স্থান নেই ।’
এরপর থেকে মৃদুলা কেমন যেন হেঁয়ালি হয়ে গেল । অর্ধেক কথা বলে , বেশি হাসে , ফাজলামোর প্রবণতা বেশি । আমার কাছে ও কেমন যেন অচেনা মানুষ হয়ে গেল । মনে হল এ আমার মৃদুলা নয় , অন্য আরেকজন । আমার মৃদুলার হয়ে এই মৃদুলা প্রক্সি দিচ্ছে ।
এরকম আর সহ্য করতে পারলাম না । ঠিক করলাম মনের কথা সব বলে ফেলব । রাতে ফোন করতে গেলাম , দেখলাম ওয়েটিং । দুই – তিনবার চেষ্টা করলাম । নাহ , ওয়েটিং ।
ঘুমিয়ে যাচ্ছিলাম , ও ফোন দিল । রিসিভ করলাম , ‘হ্যালো ।’
- আপনাকে একটা কথা বলব । কাল দেখা করতে পারবেন ?
- আমিও তোমাকে একটা কথা বলব । ঠিক আছে ।
- আচ্ছা । কাল সকাল ১১টায় …………….. আসবেন । রাখি ।
সাথে সাথেই ফোন রেখে দিল । আমাকে কিছু বলার সুযোগই দিল না । মেজাজটা খারাপ হয়ে গেল ।
পরদিন একটু ভালো করে সেজেগুজে গেলাম , মনের কথা বলব তাই । ওর সাথে দেখা হল ।
- বল তোমার কথা ।
- আপনি না কি বলবেন বলছিলেন ?
- তোমারটা আগে বল , তারপর আমি বলব ।
মৃদুলা ব্যাগ থেকে একটা রঙিন খাম বের করল , ‘আমার বিয়ের কার্ড । আগামী সপ্তাহে বিয়ে । আপনি আসবেন কিন্তু ।’
মুহূর্তের জন্য অনুভূতিহীন হয়ে গেলাম । বাস্তবে ফিরতে একটু সময় লাগল কিন্তু ওর সামনে নিজেকে সামলে নিলাম । ওকে বললাম , ‘কংগ্রাচুলেশন ! তো পাত্র কি করে ?’
- কানাডায় থাকে । নিজেরা বিজনেস করেছে । অনেক ভালো ছেলে । প্রতিদিনই তো কথা বলি । ওকে কিন্তু আপনিই বলি । হা হা হা ।
- হুম । ভালো । শাদি মোবারক । আমার একটা কাজ আছে , আমি আসি ।
- আপনি না কি বলবেন বলছিলেন ?
- থাক । অন্য আরেকদিন বলব । আজ আসি ।
চলে আসলাম । পিছে পড়ে রইল মৃদুলা , ওর জন্য লেখা কবিতা আর আমার না বলা মনের কথা । বাসায় ফিরে কার্ডটা ছিঁড়ে ফেলে দিলাম , অন্য নামের পাশে ওর নাম দেখার ইচ্ছা বা সাহস আমার হলনা ।
ভালবাসায় ভদ্রতা বলে কিছু রাখতে নেই , হতে হয় সোজাসাপটা । নাহয় ভদ্রতাই সাড়া জীবনের দীর্ঘশ্বাস হয়ে যেতে পারে । আর গণতন্ত্রেরও স্থান নেই এখানে , দরকার সাম্রাজ্যবাদী মন । সাম্রাজ্যবাদই তোমাকে ভালোবাসার জয় এনে দিতে পারবে ।
সেদিনের পর আর কোনদিন মৃদুলার সাথে যোগাযোগ করিনি । মৃদুলাও করেনি । স্বামীর সাথে সুখের সংসার করছে , আমাকে কেন মনে রাখবে ? আর মনে রাখলেও কয়েকদিনের বন্ধুই ভেবেছে , এর বেশিকিছু নয় । এরপর আর ভালবাসতে পারিনি , একাই আছি । এখন আমি একামনেই সম্রাট , একনায়ক । আমার মন জুড়ে এখন সাম্রাজ্যবাদ । কিন্তু সবশেষে আমি একটি ব্যর্থ প্রেমের কাহিনীর একজন ব্যর্থ প্রেমিক হয়েই থাকলাম ।

অভিমানিনী কান্না ভালবাসার গল্প



ভালবাসার গল্প By-S.M Rafiq Sir .
টিভিটা খুলেই চোখ পড়ল নিউজ স্ক্রলের দিকে। কারওয়ান বাজার মোড়ে সড়ক দুর্ঘটনা। মুহূর্তেই ভয়ে কাঁটা দিয়ে উঠল সমস্ত শরীর। লিখন তো ওইদিক দিয়েই অফিসে যায়। ওর কিছু হয়নি তো? দৌড়ে মোবাইলটা নিয়ে ফোন করলাম লিখনের ফোনে।মনে হল অনন্তকাল ধরে রিং হচ্ছে।নো আনসার! কাঁপা কাঁপা হাতে আরেকবার ফোন করলাম।
হ্যালো।
তুমি ঠিক আছো? ওর কন্ঠটা শুনে মনে হল জীবন ফিরে পেলাম!
কেন, আমার আবার কখন কি হল? আমি মিটিং এ। অফিস টাইমে যে কেন ফোন কর, বুঝিনা। কি বলবে একটু তাড়াতাড়ি বল।
না, কিছু বলবনা।
ওকে, টা টা।
কতটা নিষ্ঠুর হয়ে গেছে লিখন আজকাল।আমি তো ওকে লাঞ্চ ব্রেক ছাড়া ফোনই করিনা, আজ করেছি কতটা টেনশনে পড়ে তা যদি ওকে বোঝাতে পারতাম। এমন রুক্ষ ব্যবহার করার কি খুব দরকার ছিল? লাঞ্চের সময়ও তো প্রতিদিন আমিই ফোন করি। ও খাওয়াদাওয়া করল কিনা না জানা পর্যন্ত কিছুই মুখে তুলতে ইচ্ছা করে না। কই ও তো কোনদিন জানতে চায়না আমি খেয়েছি কিনা। অফিস থেকে আসার কথা সন্ধ্যে সাতটার মধ্যে, মাঝে মাঝেই আটটা-নয়টা বাজে। আমি তো রাগ করিনা, ঝগড়াও করিনা। শুধু একদিন ভেবেছিলাম কথা বলবনা ওর সাথে। কিন্তু আমার এই অভিমান বেশিক্ষণ ধরে রাখতে পারলাম না। সেদিন ও অফিসিয়াল ফাইল নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ল, আমি কথা বলছি কিনা এইটা খেয়ালই করলনা। ও তো এমন ছিলনা। আমাদের ভার্সিটি লাইফের প্রেম। অনেক প্ল্যানিং ছিল বিয়ে নিয়ে। আমি নতুন নতুন রান্না করে ওকে খাওয়াব, খেতে যেমনই হোক ও প্রশংসা করবে, যত ব্যস্ততাই থাকুক অফিস থেকে আসার পর আমরা অনেক অনেক গল্প করব, আর ছুটির দিনগুলো বেড়াতে যাব দূরে কোথাও। একসাথেই ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করেছি আমরা। কিন্তু সংসারে সময় দিতে পারবনা ভেবে নিজেই সিদ্ধান্ত নিয়েছি চাকরি না করার। ইচ্ছা ছিল আগে সংসারটা গুছিয়ে নিয়ে তারপর ওসব চাকরির চিন্তা করব। ওর নতুন চাকরিজীবন, আমি পাশে না থাকলে কি ও পারবে এতটা প্রেশার নিতে? ওর চাকরির তিন মাস হতে চলল, এখন ওর ব্যস্ততার মাঝে আমাকে কোথাও খুঁজে পাইনা। তবু অপেক্ষা করি, হয়তো আসবে আমাদের স্বপ্ন সত্যি হওয়ার দিন।
একটা বাজে, ওর লাঞ্চের সময় হয়ে গেছে, আবার কি ফোন করা ঠিক হবে? দোটানার মধ্যেও ফোন টা করেই ফেললাম।
সীমা, আমি জরুরি মিটিং এ আছি, প্লিজ এভাবে বারবার ফোন করনা।
তুমি কি লাঞ্চ করেছ?
না, দেরি হবে।
কখন খাবে? শরীর খারাপ করবে তো।
উফ, তুমি কেন আমার সিচুয়েশনটা একটুও বোঝার চেষ্টা করনা বলতো? এখন রাখলাম, আমার মিটিং শেষ হলে খেয়ে নেব। বাই।
মনের অজান্তেই চোখ জলে ভিজে উঠল। আমি কি সত্যি পারছিনা ওর যোগ্য সহধর্মিনী হতে?
সারাটা দিন কাঁদলাম। কারো সাথে শেয়ার করতেও ভাল লাগেনা, যদি কেউ আমাদের ভালবাসাকে ছোট করে! প্রেমের বিয়ে সুখের হয়না- এই উদাহরণের মধ্যে যদি কেউ আমাকে ফেলে! আমার একটুও ভাল লাগবেনা। ও তো আমাকে বলে ছিল চাকরিটা পার্মানেন্ট না হওয়া পর্যন্ত ওকে অনেক ব্যস্ত থাকতে হবে, আমাকে ধৈর্য্যশীল হতে হবে, আমিও বুঝি, তবু মনে হয় ও কি আমাকে আর একটু বেশি সময় দিতে পারতনা?
কলিংবেল এর শব্দে ঘুম ভেঙ্গে গেল, ওহ, ঘড়ির দিকে চোখ পড়তেই চমকে উঠলাম। পাঁচটা বাজে। কিন্তু এখন আবার কে এল? দরজা খুলতেই দেখি অবাক হয়ে গেলাম, লিখন!
তুমি? এত তাড়াতাড়ি?
আই লাভ ইউ, মাই ডিয়ার ওয়াইফ!
মানে? আর তোমার হাতে এত্ গোলাপ কেন?
তোমার জন্য, তোমার মনে নেই? আজ কত তারিখ? আজ আমাদের প্রথম দেখা হওয়ার তারিখটা তুমি কি ভাবে ভুলে গেলে?
সরি, মনে ছিলনা, কিন্তু তোমার কিভাবে মনে থাকল?
তুমি তো জানো, আমি কাজের মধ্যে থাকলে কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত অন্য কিছু ভাবতে পারিনা, একটা এসাইনমেন্ট ছিল, আজ প্রেজেন্ট করলাম, সবাই খুব প্রশংসা করেছে, আমার চাকরি পার্মানেন্ট উইথ প্রমশোন ফ্রম নেক্সট মান্থ!
সত্যি?
হ্যাঁ, আর আমার এই সব কিছুর ক্রেডিট তো তোমার সোনা। আমি তোমাকে কতটা ভালবাসি তা তুমি কখনই জানবেনা, আমি তো সেভাবে এক্সপ্রেস করতে পারিনা। তুমি আমার উপর অনেক অভিমান কর তাই না? সরি…আচ্ছা, তুমি আমার সরি গ্রান্ট করেছ কিভাবে বুঝব? বোঝাতে হলে চটপট রেডী হয়ে এস, আজ বাইরে ডিনার করব, ক্যান্ডল লাইট ডিনার।
আমি জানিনা কেন অঝোর ধারায় কাঁদতে লাগলাম, সারাদিন কষ্ট পেয়ে অনেক কেঁদেছি আবার এখন কাঁদছি অনাবিল আনন্দ নিয়ে। কি বলব আমি লিখনকে? নিজেকে খুব স্বার্থপর মনে হচ্ছিল।কি নাকি ভেবেছি এতগুলো দিন, অকারনে কস্ট পেয়েছি।
কি হল, এত কাঁদছ কেন? এখন কান্নার আবার কি হল?
কিছুই বলতে পারছিলামনা, শুধু ফিসফিস করে বললাম, আমি তোমাকে অনেক অনেক ভালবাসি আর সবসময় বাসব…।।

পাপড়ি গুলো ঝরে পড়া ভালবাসার গল্প

ভালবাসার গল্প
ভালবাসার গল্প
লিখেছেন -
রফিক স্যার।

Make Money at : http://bit.ly/copy_win
রফিক স্যার।

Make Money at : http://bit.ly/copy_win
রফিক স্যার।

Make Money at : http://bit.ly/copy_win
একেবারে গোসল করে বের হয়েছে সিহাব। এই ঠাণ্ডার মধ্যেও গোসল। আজ প্রথম দেখা হবে সূচির সাথে, ভালবাসার পর।একটু ভালভাবে না গেলে কি হয়?সাদা গোলাপি চেকের শার্টটা পরে যেতে বলল সূচি। উঠেই ইস্রি করে গায়ে পরে নিল। উপরে নিজের সবচেয়ে দামী জ্যাকেটটা। মোটামুটি দৌড়ে বের হল সিহাব। তবে রাস্তায়ই থেমে গেল। প্রতিদিন এই মেয়েটার সাথে, বাসা থেকে বের হবার পরই দেখা হয়।মেয়েটা মুনা। যেই বাড়িটায় সিহাব থাকে, সেই বাড়িওয়ালার মেয়ে। সিহাবরা থাকে দোতলায়। আর বাড়িওয়ালারা নিচ তলায়। মুনাকে দেখেই সালাম দেয় সিহাব।মুনা সিহাবের ছোট, তুমি করে বলে। তবুও সালাম দেয়।
- ভালো আছেন ভাইয়া?
- হ্যাঁ ভালো। তুমি?
- জ্বি ভালো। আজকেও সালাম দিলেন? আমি আপনার ছোট কিন্তু।
- সালাম সবাইকেই দেয়া যায়।
- তাই ?
- হ্যাঁ।
- কোথাও যাচ্ছেন বুঝি?
- হ্যাঁ, এক বন্ধুর সাথে দেখা করব।
- হুম দেখেই বোঝা যাচ্ছে।অনেক সাজগোজ করে বের হয়েছেন আজ। প্রতিদিন তো একটা হাফ প্যান্ট পরা অবস্থায়, আপনাকে দিনের শুরুতে দেখি।
সিহাব একটু লজ্জা পেল।প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠেই, একটু হাওয়া বাতাস খেতে বের হয় সিহাব। আসলে হাওয়া বাতাস না, মুনার লাগানো ফুল গাছের, ফুলের ঘ্রাণ নিতে আসে।ফুলের ঘ্রাণ নিয়ে দিন শুরু করলে, দিনটা অনেক ভালো যায়।মনটা অনেক পবিত্র লাগে।আর এই কাজটা ঘুমানোর সময় পরে থাকা থ্রি কোয়ার্টার পরেই করে। ঠাণ্ডার মধ্যেও তাই পরেই আসে।আর ঘ্রাণ নেবার পরে, পিছন ফিরে মুনার সাথে দেখা হয়। একটা সালাম দিয়ে সিহাব চলে যায়।কোনদিন টুকটাক কথা হয়।
- না আসলে, ওভাবেই চলে আসি তো। আচ্ছা কাল থেকে ফুল প্যান্ট পরে বের হব সকালে।
- হিহি, ওটা আপনার ইচ্ছা। ভাইয়া, আজ কিন্তু ফুলের ঘ্রাণ নিতে আসেন নি।
- আজ একটু ব্যাস্ত ছিলাম, সকালে উঠে। আর প্রতিদিন চুরি করে তোমার গাছের ফুলের ঘ্রাণ নেই, এটাও ঠিক না।
- আমার কিন্তু ভালোই লাগে ভাইয়া।
- আজও আসতাম, তবে তাড়াহুড়ায় আসতে পারিনি। আজ প্রথম দেখা ওর সাথে, বুঝই তো। কত কাজ।
- কার সাথে দেখা করতে যাচ্ছেন, প্রেমিকা?
- না মানে।
- হিহি, বুঝতে পারছি তো।
হাসলেও হঠাৎ মুনার মনটা খারাপ হয়ে গিয়েছে। মুখ ভার।সিহাব এখানে মন খারাপের কিছু পায় নি।বুঝতেও চায় নি। মেয়েদের মনে ব্যাপারগুলো অনেক জটিল। এতো সহজে বুঝে নেয়া যায় না।সিহাব একটু তাড়া দেখিয়ে বলল, মুনা, আমি আসি। দেরী হয়ে যাচ্ছে।
- ওও হ্যাঁ ভাইয়া। আপনার দেরী হয়ে যাচ্ছে।যান তাহলে।
- আচ্ছা।
- ভাইয়া, একটা কথা বলব?
- হ্যাঁ বল।
- আপনাকে আজ অনেক সুন্দর লাগছে। আপু অনেক পছন্দ করবে।
- ধন্যবাদ।
- আর একটা কথা বলি?
- বল।
- আপনি প্রতিদিন আমার বাগানের, ফুলের ঘ্রাণ নিতে আসবেন কিন্তু।
- আচ্ছা আসব।
মুনা মেয়েটার চোখে জল চলে এসেছে। কোনমতে কান্না আঁটকে রেখেছে।সিহাব এই চোখের জলের মানে জানে না। জানতেও চায় না। দেরী হয়ে যাচ্ছে।সূচি এসে অপেক্ষা করবে। সিহাব চলে গেল অনেক দ্রুত। আজ মনটা অনেক ভালো। সূচির সাথে প্রথম দেখা, ভালবাসার পর। সিহাব চলে যাচ্ছে। আর মুনা পিছন থেকে দেখছে। হয়ত হারিয়ে যাচ্ছে কিছু। বুকের ভিতর কষ্ট হচ্ছে মুনার। চোখের ভিতর ব্যথা করছে।আসলেই হারিয়ে ফেলছে কিছু মুনা। প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে, ফুল গাছ গুলোর যত্ন করে মুনা অপেক্ষা করে। কখন সিহাব আসবে। সিহাব ঘুম ঘুম চোখে এদিক ওদিক তাকিয়ে, লুকিয়ে লুকিয়ে ফুলের ঘ্রাণ নেয়। মুনাও লুকিয়ে লুকিয়ে দেখে। কেন যেন দেখতে অনেক ভালো লাগে, এভাবে ছেলেটাকে। ঘ্রাণ নেয়া শেষ হলেই,মুনা বের হয়ে আসে। সিহাব মুনাকে দেখে বোকা বোকা চোখে তাকিয়ে ,একটা সালাম দেয়। সিহাবের এই বোকা বোকা চেহারা দেখে বড্ড হাসি পায়।হাসে না মুনা।হাসি লুকিয়ে, একটু আধটু কথা বলে। প্রতিদিন কথা বলে। কখন যেন এই জিনিসটার প্রেমেই পড়ে গিয়েছে মুনা। বুঝতে পারেনি। কখন যেন সিহাবকে ভালবেসে ফেলেছে, টের পায় নি। অনেক দিন বলতে গিয়েই বলতে পারেনি। একটা ছেলে হাফ প্যান্ট পরে, বোকা বোকা চোখে তাকিয়ে আছে। তাকে ভালবাসি বলা যায় নাকি? তার চেয়ে কয়েকদিন পর,মুনার জন্মদিন। মুনা চেয়েছিল, সেদিন সিহাবের সাথে সারাদিন ঘুরবে। সিহাব একটা পাঞ্জাবী পরবে,যে কোন রঙের। আর মুনা আকাশী রঙের শাড়ি। সেদিন চুপ করে হাত ধরে বলে দিবে, সিহাব ভাইয়া, আপনাকে আমি ভালবাসি। সারাজীবন এভাবে হাত ধরে থাকতে চাই? রাখবেন তো?কেন রাখবেন না? রাখতে হবে।আমি কি দেখতে দেখতে অসুন্দর? কত মিষ্টি একটা মেয়ে।
মুনার আর এই কথাগুলো বলা হল না। বুকের ভিতরের ভালবাসা ,বুকের ভিতর রয়ে গেল। ফুল গাছ গুলোর উপর খুব রাগ হচ্ছে। কেন হচ্ছে মুনা জানেনা।সবগুলো গাছ গিয়ে নষ্ট করে ফেলল।নষ্ট করে কাঁদছে মুনা।অনেক যত্নে রেখেছিল ফুল গাছ গুলোকে মুনা। নষ্ট করে কাঁদছে। অনেক যত্নে বুকের মাঝে জমিয়ে রাখা, ভালবাসা হারিয়ে যাওয়াতে কাঁদছে। সিহাবের আসতে হবে না ফুলের ঘ্রাণ নিতে। মুনা এটা চায় না আর।
ভালবাসতে সবাই পারে। ভালবাসার কথা বলতে সবাই পারে না।কেউ বলে দেয় মনের কথা।কেউ বুঝিয়ে দেয় না বলেও।কেউ বুকের মাঝে জমিয়ে রাখে। জমিয়ে রাখতে রাখতে একদিন হারিয়ে যায় ভালবাসা। চোখের জলে সেই ভালবাসা ফিরে আসে না। ভালবাসতে

বন্ধুত্বের প্রেম অথবা প্রেমের বন্ধুত্ব


valobasar golpoবুকের বামপাশে একটা চিনচিনে ব্যথা হচ্ছে।তার সাথে শুরু হয়েছে প্রচণ্ড মাথাব্যথা।প্রচণ্ড অভিমানও হচ্ছে।মনে হচ্ছে অভিমানগুলো জমা আছে বলেই চিনচিনে ব্যথাটা হচ্ছে।মন খুলে কাঁদলে সেই অভিমানগুলোও বুক থেকে বেরিয়ে যেতো,সাথে কমে যেতো ব্যথাও।প্রিয় মানুষটাকে হারানোর কষ্টটা বুঝি এমনি হয়।আমার এই প্রিয়মানুষটার নাম বীথি।জ্ঞান হবার পর থেকে এই একটা মেয়েকেই চিনে এসেছি।ওই ছিল আমার বন্ধু,শত্রু,অভিভাবক সব।এতদিনের সম্পর্কটা সামান্য কয়েকটা কথার জন্য এভাবে ভঙ্গুর হয়ে গেল।এই বীথিই যে আমাকে প্রপোজ করে বসবে তা আমি ঘুনাক্ষরেও ভাবিনি।কোনকালেই ওকে এই চোখে দেখিনি।ওর মুখে এই কথাটা শুনে বুকটা যেমন কষ্টে ফেটে যাচ্ছিল,তেমনি ওর প্রতি রাগও হচ্ছিল।যে বন্ধুত্বে প্রেম প্রবেশ করে সেটা হয় পরিপূর্ণ প্রেম হয়ে যায়,নয়তো সেটা বন্ধুত্বটাকেই ধ্বংস করে দেয়।আমার ক্ষেত্রে বন্ধুত্বটাকেই গলা টিপে হত্যা করেছে।সমবয়স্ক কাউকে নিজের জীবনসঙ্গী হিসেবে কল্পনাও করতে পারি না।এইসব কিছুই বীথি ভাল করেই জানতো।আর এজন্যই ওর প্রতি খুব রাগ আর অভিমান হচ্ছিল।তারপরও ভেবেছিলাম সব ভুলে আবার আগের মতো করে নেব।কিন্তু শত চেষ্টাতেও আগের মত হল না।কোথায় যেন সম্পর্কের সুরটা কেটে গেছে।

বীথির সাথে এভাবে বন্ধুত্ব নষ্ট হয়ে যাওয়ায় আমি প্রচণ্ড একা হয়ে গেলাম।আমার আসলে তেমন কোন বন্ধুও ছিল না।কেমন যেন বাধনহাঁরা হয়ে গেলাম।পরীক্ষার রেজাল্টও খারাপ হতে লাগলো,পাশাপাশি হতাশা আমাকে প্রচণ্ড ভাবে ঘিরে ধরল।বীথির সাথে ক্লাসে দেখা হলে খুব মায়া বোধ করতাম,মনে হতো ওর ইচ্ছাটা পূর্ণ করে দেই।নিজেকে হাজারবার বোঝানোর পরও বীথিকে ওইভাবে কল্পনা করতে পারছিলাম না।সেই থেকে ঠিক করলাম কোন সমবয়স্ক মেয়ের সাথেই বন্ধুত্ব করবোনা।সময় কাটানোর জন্য ব্যস্ত হয়ে গেলাম ভার্চুয়াল জগতে।

তখনো ফেসবুকের প্রচলন তেমন হয়নি,চারিদিকে শুধু মিগের জয়জয়কার।সেখানে রুমি খান নামে একজনের সাথে পরিচয় হল।কেন জানিনা অল্পকিছুদিনের মাঝেই তার সাথে খুব চমৎকার একটা সম্পর্ক হয়ে গেল।ছেলেটা আমার সমবয়সী আর খুব বন্ধুবৎসল টাইপের।বন্ধু দিবসের দিন ওর সাথে ফোনে প্রথম কথা হল।ওইদিন আমি যেন কারেন্টের শক খেলাম।সেদিন আমার অতিপরিচিত ছেলে ‘রুমি’ মেয়ে হয়ে গেল।আমি এতোটাই অবাক হলাম যে কথাই বলতে পারছিলাম না।ভুলটা আসলে হয়েছিল আমারই।রুমি নামের যে মেয়ে হতে পারে সেটা আমার ধারনাই ছিল।তাছাড়া আমি যে ‘সমবয়সী নারীবিদ্বেষী’ হয়ে পরেছি তা আমার চ্যাট থেকেই রুমি বুঝে নিয়েছে।এজন্যই রুমি ইচ্ছে করে ওটা ক্লিয়ার করেনি।শুধু আমার ‘কাণ্ডকারখানা’ দেখে মজা নিয়ে গেছে।যেটাই হোক না চাইতেও আমার জীবনে বীথির মত আরেকজন মেয়েবন্ধুর আগমন হল।ওর সাথে যে এতদিনে পরিমান ঘনিষ্ঠতা হয়েছে তাতে অবশ্য ফিরে আসবারও উপায় ছিল না।তবুও বীথির স্মৃতি মাথায় রেখেই রুমির সাথে মিশতে লাগলাম।

মানুষকে আপন করে নেবার অদ্ভুত একটা ক্ষমতা আছে রুমির।অতি অল্প সময়েই আমার আপন কেউ হয়ে গেল।আমার পড়াশুনা থেকে শুরু করে প্রাত্যহিক অনেক সিদ্ধান্তেই ও আমাকে সাহায্য করতো।আমার প্রতি ওর take care এর বর্ণনা দিলে সত্যি সত্যিই মনে হবে সে আমায় ভালবাসে।অন্তত আমার বন্ধুরা তাই ভাবতো।কিন্তু ও এমন ভাবে take care করতো,তাতে আমার কখনই মনে হয়নি যে সে আমাকে ওইভাবে চিন্তা করে।যেমনটা সকাল ঘুম উঠতে দেরি হলেই এমন একটা ‘সুন্দর’ বাংলা গালি দিবে যে ঘুম থেকে না উঠে পারা যায় না।আর ওর হাতে যে প্রতিদিন কতো খামচি খেতে হয় তারতো ইয়ত্তা নেই।ও ছিল কখনো মা,কখনো বড় বোন আর কখনোবা আমার বন্ধু হিসেবে।রুমির জন্যই বীথির স্মৃতি আমার মাথা থেকে মুছে যেতে বেশি সময় লাগলো না।বরং অনেকক্ষেত্রেই বীথিকে ছাপিয়ে গিয়েছিলো রুমি।বীথির কারনে আমার মনে যে আতঙ্ক তৈরি হয়েছিল সেটা রুমি অল্পদিনেই কাটিয়ে দিয়েছিল।ওর কাছে এমন কিছু ছিল না আমি শেয়ার করতাম না।এমনকি ছেলেদের ‘স্পেশাল’ ব্যাপারগুলাও বাদ যেত না।রাস্তায় কোন মেয়ে দেখলে আমরা ছেলেরা যেভাবে আলাপ করি ওর সাথেও সেভাবে করতাম।রুমিকে প্রায়ই বলতাম কলেজের জুনিয়র মেয়েদের কারো সাথে প্রেম করবো।কিন্তু কোন মেয়ে ভাল লাগলেও সেই ভালোলাগাটা বেশীদিন থিতু হত না।এজন্য রুমিকে কোন মেয়ের ব্যাপারে বললেই হেসে বলতো তোর দ্বারা আর যাই হোক প্রেম হবে না।

এভাবেই তাইরে নাইরে করে ভালয় ভালয় ভার্সিটি লাইফের ৩ টা বছর পার করে দিলাম।অবশেষে আমার জীবনে প্রেম এলো।নতুন বর্ষে কেমিস্ট্রিতে ভর্তি হওয়া দিয়াকে দেখেই বুঝতে পেরেছিলাম প্রেম কি জিনিস।টলটলে চোখ আর হালকা টোল পরা কাচা হলুদ বর্ণের মেয়েটায় আমার সমস্ত পৃথিবী কেন্দ্রিভুত হয়ে গেল।আগে কোন সুন্দরী মেয়ে দেখলেই রুমিকে বলতাম ভাল লাগার কথা।কিন্তু দিয়ার কথাটা অন্য কেউতো নয়ই, রুমিকেও বলতে পারলাম না।দিয়াকে প্রপোজ করবো সেই সাহসটাও সঞ্চয় করতে পারলাম না।পুরো কলেজ জুড়ে যে আমি সবাইকে জ্ঞান দিয়ে বেড়াতাম প্রেম না করার জন্য,সেই আমিই যদি প্রেম করি তবে আর রক্ষা নেই। তাছাড়া দিয়া যদি আমাকে ফিরিয়ে দেয়,তবে এই মুখ নিয়ে ভার্সিটিতে থাকতে পারব না।নিজের ভালোলাগা প্রকাশ না করতে পেরে কেমন যেন কুঁকড়ে গেলাম।ক্লাসে অনিয়মিত হয়ে গেলাম আর রুমিকেও এড়িয়ে চলতে লাগলাম।এইভাবে প্রায় ৩ মাস পার হয়ে গেল।ডুবে যাওয়া মানুষের মত খড়কুটো আঁকড়ে ধরতে চাইলাম।রুমিকে বললাম দিয়ার নাম্বার জোগাড় করে দিতে।কপালে যা আছে ভেবে দিয়াকে ফোন দিয়েই বসলাম।প্রথম দিন কথা বলেই চমকে গেলাম।দিয়া বোধহয় এতদিন আমার ফোনেরই অপেক্ষা করছিল।মাত্র ৭দিন কথা বলতেই দিয়া আমাকে হ্যাঁ বলে দিল।আমি যেন স্বর্গ হাতে পেয়ে গেলাম।প্রিয় মানুষকে নিজের করে পাওয়ার আনন্দের মাঝেও কেমন যেন একটা অস্বস্তি কাজ করছিল।দিয়ার এতো সহজে মেনে নেয়াটা আমি কেন যেন মেলাতে পারলাম না।সেই রহস্য ভেদ করলো দিয়াই।আমার হঠাৎ স্তব্দ হয়ে যাওয়াটা রুমি কিছুতেই মেনে নিতে পারছিল না।তাছাড়া আমিও কিছু বলছিলাম না।বাধ্য হয়েই চুরি করে আমার ডায়েরি থেকে দিয়ার কথা জানতে পারে।সেই থেকে ২টা মাস তার দায়িত্ব ছিল দিয়ার মাথায় আমার ভুত ঢুকিয়ে দেয়া।এবং এই কাজটা সে দক্ষতার সাথে করেছে।

রুমি এমনিতেই আমার সবচেয়ে বন্ধুদের একজন।এই ঘটনার পর ওর প্রতি আমার ভালোলাগাটা অসম্ভব রকম বেড়ে গেলো।দিয়াকে আরো কাছে টানতে যা যা করার সবই রুমি আমাকে শিখিয়ে দিল।মেয়েরা মেয়েদের মন ভাল বুঝে।তাই খুব অল্প সময়েই দিয়ার সঙ্গে আমার বোঝাপরাটা হয়ে গেল।দিয়ার সঙ্গে প্রেম হয়ে গেলেও রুমিকে নিঃসঙ্গ করার মতো অকৃতজ্ঞ হলাম না।আমার প্রেমটা যে রুমির জন্যই হয়েছে তা দিয়া ভাল করেই জানতো।তাই হয়তো প্রথমদিকে রুমির সাথে বন্ধুত্বের সম্পর্কে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি দিয়া।কিন্তু দুর্ভাগ্যই বলতে হবে আমার।আর দশটা মেয়ের চেয়ে দিয়াও বেতিক্রম হতে পারল না।প্রথম দিক থেকেই দিয়া রুমির সাথে আমার সম্পর্কটা অবচেতনভাবেই ঘৃণা করে এসেছে।কিন্তু অল্পকিছুদিনের মধ্যেই সেটা সচেতন ঘৃণায় পরিনত হল।সেটা বুঝেই রুমিও আমাকে এড়িয়ে চলতে লাগলো।দিয়ার এই ব্যাপারটায় আমি খুব বেশি দুঃখ পেলাম,যদিও মুখে কিছুই বললাম না।কিন্তু ওই থেকেই কেন জানিনা দিয়ার সাথে ছোটখাট ব্যাপার নিয়ে ঝামেলা লেগেই থাকতো।এই ঝামেলার হাত ধরেই মাত্র ১১ মাসের মাথায় আমাদের সম্পর্কের ইতি ঘটলো।ওর প্রতি এতই বিরক্ত হয়ে পরেছিলাম যে সম্পর্ক ভেঙ্গে যাওয়ায় একটুও খারাপ লাগেনি।রুমি বোধহয় এই কারনে কিছুটা অপরাধবোধে ভুগত।এইজন্যই বরাবরের মতো এড়িয়ে চলতো।কিন্তু এরপর আমার জীবনে যা ঘটলো তা বোধহয় দুঃস্বপ্নেও ভাবিনি।জানুয়ারির এক শীতের রাতে রুমির বাসা থেকে ফোন করে বলল,আমার আর রুমির সম্পর্কটা প্রেম কিনা জানতে চাইল।মাথায় বাজ পরলেও বোধহয় এতো অবাক হতাম না।কয়েকদিন পর রুমির মা ফোন করে অনেক কান্নাকাটি করলো।রুমি কিছুতেই বিয়ে করতে রাজি হচ্ছে না।আবার কাউকে পছন্দ করে কিনা সেটাও বলছে না।রুমির ভাইয়ের ধারনা আমাকে ভালবাসে বলেই ও বিয়েতে রাজি হচ্ছে না।জীবনে দ্বিতীয়বারের মত স্থবির হয়ে গেলাম।রুমি কি চাইছে তা আমার আর বুঝতে বাকি রইল না।দুঃখে মরে যেতে ইচ্ছে করলো।আমি ভাল করেই বুঝতে পারলাম আমি যদি ওর সাথে সম্পর্ক রাখি,তাহলে আর ওর বিয়ে করা হবে না।ওর কাছ থেকে সরে আসার জন্যই মিথ্যে ছুতো ধরে বিশাল ঝগড়া লাগিয়ে রুমির সাথে সম্পর্ক চুকিয়ে দিলাম।আমার এরকম বদলে যাওয়া দেখে রুমি বোধহয় মারাত্মক অবাক হল।

অনেক কষ্ট হলেও রুমির সাথে যোগাযোগ করিনি।এই ঘটনার এক বছর পর পারিবারিক সম্মতিতে নুহার সাথে আমার বিয়ে ঠিক হয়।ভেবেছিলাম কিন্তু রুমিকে বিয়ের দাওয়াত দিয়ে কাটা ঘায়ে আর নুনের ছিটা দেবো না।সম্পর্ক না রাখলেও রুমিকে আমি এক মুহূর্তের জন্যও ভুলতে পারিনি।তাই বিয়ের দাওয়াত না দিয়ে পারলাম না।সেইদিন অনেক দ্বিধা নিয়ে ভয়ে ভয়ে রুমিকে জিজ্ঞেস করেই ফেললাম কেন সে বিয়ে করছে না।উত্তর না দিয়ে রুমি কাঁদতে লাগলো।অনেক জোরাজুরির পর সে বলল ডাক্তার বলেছেন রুমির মা হবার সম্ভাবনা খুব কম।তিন বছর আগে হরমোন টেস্টে এটা ধরা পরেছে,যেটা এখনো রুমির পরিবারের কেউ জানেনা।সেদিন রুমির কান্না দেখে নিজেকে কিছুতেই সামলাতে পারলাম না।তীব্র অপরাধবোধ আমাকে ঘিরে ধরল।রুমিকে এতদিন আমি কতোটাই না ভুল বুঝেছি।আর ভুল বুঝে কতো পবিত্র একটা সম্পর্ক ভেঙ্গে ফেলেছি।

নুহার সাথে আমার বিয়ে হয়েছে ১৭ মাস হয়ে গেলো।এঁর মধ্যে নুহা আমাকে একজন দেবদূত উপহার দিয়েছে।এর জন্য আমি ওর কাছে অনেক কৃতজ্ঞ।নুহার সবচেয়ে ভালো দিক হচ্ছে সে সবকিছুকেই সহজভাবে নিতে পারে।আমার সাথে রুমির সম্পর্কটা খুব সহজভাবেই নিয়েছে।আজমিনের জন্মের সময় রুমিই ছিল সব।নিজেকে মাঝে মাঝে খুব ভাগ্যবান মনে হয়।নুহা না চাইলে আমার জীবনের সবচেয়ে সেরা বন্ধুটাকে হয়তো আর কাছে পাওয়া হতো না।নুহার তাগিদেই দেশে রুমির চিকিৎসার অনেক চেষ্টা করেছি।কিন্তু ভাগ্যদেবী এখনো সাড়া দেয়নি।এইবার আমি আর নুহা মিলে ঠিক করেছি রুমিকে সিঙ্গাপুরে নিয়ে চিকিৎসা করাবো।ভাগ্যদেবীর সাথে এইবার আমার একটা সেইরকম বোঝাপড়া হবে।আমার পৃথিবীসেরা বন্ধুটার ভাগ্য নিয়ে আর ছিনিমিনি খেলতে দেবো না তাকে...

ভালোবাসা দিবস উপলক্ষে বিশেষ গল্প অঝর ধারা


কিছুদিন ধরেই মনটা কু ডাকছে, আমার ঘুমদেবী সম্ভবত কারো সাথে ভেগেছে। ঘুম আসেনা তো আসেই
valobasa diboser golpo
না। আর কেনই বা যাবে না। প্রতিরাতেই চোখদুটো জুড়ে থাকতে চাইত, কিন্তু প্রায়ই জোর করে বিদায় করতাম। ভোর সাড়ে পাঁচটা, ফ্ল্যাটে তালা ঝুলিয়ে বেড়িয়ে পড়লাম। উত্তরা ৩নম্বরের জসীমউদ্দিনের ওভারব্রীজের কাছে আসতেই দেখলাম কেউ একজন উপরে তাকিয়ে হাউকাউ করছে। উপরে তাকিয়ে দেখি একটা মেয়ে অন্যদিকে তাকিয়ে আছে। কাধে ব্যাগ হাতে এপ্রন টাইপের কিছু। সম্পর্কে বাপ মেয়ে হবে হয়তো।

তবে মেয়েটা মেডিক্যাল ছাত্রী নাকি নার্স তা বোধগম্য হয়নি। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে লোকটার একাকী হাউকাউ শোনেই বুঝলাম কোন এক দুরূহ কারনে এই সাতসকালে দুজনেই ঘর থেকে বিতারিত। আমি সিগারেট নিয়ে পকেটে হাত দিয়েই মনে হল লাইটার নিয়ে বের হইনি। তাকিয়ে দেখি আঙ্কেল সিগারেট ধরাচ্ছেন। কোন কিছু না ভেবেই উনার কাছে আগুন চাইলাম, তখনি তিনি একটা অগ্নি চাহনি দিয়ে বললেন,
- তোমার সাহস তো কম না, তুমি একজন আর্মি পারসনের কাছে সিগারেট ধরাতে আগুন চাইছ! তুমি কি জান, আমি একজন কর্নেল।

- আঙ্কেল, আপনার গায়ে তো ইউনিফর্ম নেই, তাই বুঝিনি। আর আপনাকে দেখে তা মনে হয়নি।
- আসলে হয়েছে কি বারখুরদার, আমি দেখতে বরাবরের মতই ইয়াং। [মুখ ভর্তি মুলায়েম হাসি দিয়ে]
- ওহ, না মানে আমি ভেবেছিলাম আপনি রিটায়ার্ড করেছেন।
সাথে সাথেই আঙ্কেলের চিকেনশর্মা টাইপের Expressionটা অগ্নিশর্মা হয়ে গেল।ব্রিজে উঠলাম ঐপাড়ে দোকান খোলা থাকবে ভেবে। রাস্তাটার দিকে তাকিয়ে ছিলাম, গাড়ি তেমন একটা নেই। আর তাছাড়া সকালের হালকা শীত শীত আমেজ। সে এক অসাধারণ অনুভূতি।প্রায় প্রতিদিনই এখানে দাঁড়িয়ে আমি সকাল দেখতাম। তারপর Scholasticaর বাচ্চাদের দেখতাম। প্রত্যেককেই কেউ না কেউ দিয়ে যেতে আসে। দূর থেকেই দেখতাম।

কিছুক্ষণ পর নিচে নেমে একটা দোকান পেয়ে গেলাম। প্রায় আধাভাসমান দোকান। এর আগে দোকানটা দেখিনি। দোকানে একটা ছেলে বসা। শরীরের আকৃতিটা Square Shapeএর ছিল। দৈর্ঘ্যে যা, প্রস্থেও তাই। ঠিক তখনি দেখলাম ব্রিজের উপরে যাকে দেখেছিলাম, সেই মেয়েটি দোকান থেকে বের হয়ে গেল। দোকানের সামনে রাখা টুলটায় বসতেই ছেলেটি চা দিতে চাইল।
- আমি চা খাইনা। কফি হবে?
- না, তয় আমার চা খায়া দেহেন। অঝর আফা আমার চা না খাইয়া কেলাসেই [ক্লাসে] যায় না।
- তোর অঝর আপাটা আবার কে? কই ক্লাস করে?
- আরে আপনে দোকানে আসতেই যেই আফা বাইর হইল। ঐটাই অঝর আফা। ডাক্তারি পড়ে।
- বুঝলাম, তোর চা তুই খা। বিল আমি দিচ্ছি। বলেই সিগারেট টানতে শুরু করলাম।

ছেলেটার সাথে কথা বলতে ভালই লাগত। খুব সহজ সরল। বেচারার নাম রইস উদ্দিন। তার অঝর আপু ছোট করে রাসু ডাকে আর তাতে সে মহা খুশি। প্রায় প্রতিদিনই রাসুর চা বারে বসা হত। রাসুর অঝর আপুর সাথে প্রায় সকালেই দেখা হত। এসে রাসুর সাথেই চা খেত, সাথে ক্ষণিকের খোশ গল্প, তারপরেই চলে যেত।
এক সকালে, ব্রিজে দাঁড়িয়ে আছি, ঠিক তখনি বেশ ভালো টাইপের ঝগড়ার শব্দ কানে আসতে লাগল। বুঝলাম রাসুর সাথে ঝামেলা বেঁধেছে, সাথে যখন মেয়েলি আওয়াজ এল তখন দ্রুত নিচে যেয়ে দেখলাম একটা ছেলে রাসুর গলা চেপে ধরে আছে আর পাশে আরেকটা ছেলে অঝরের দিকে তাকিয়ে হাসছে। আর অঝর ২টাকেই বকা ঝকা করছে রাসুকে ছেড়ে দেবার জন্যে।ঝামেলায় জড়াতে ভালো লাগেনা। কিন্তু এখানে চুপ থাকা হয় নি। সামনে গিয়ে বললাম,

- কিরে, তোর হাত তো দেখি অনেক লম্বা হয়ে গেছে, বল তো কেটে দেই।
- ঐ মিয়া নিজের কাজে যান, এইখানে পার্ট নিতে আইসেন না। বহুত মাইর জুটবে।
বুঝলাম কথায় কাজ হবে না। তাকিয়ে দেখি টুলের পাশে একটা গিটার পরে আছে। আর কিছু না ভেবেই গীটারটা হাতে নিয়ে ছেলেটার মাথায় মারলাম। কোনা লেগেছিল, তাই ছেলেটার মাথা দিয়ে রক্ত পড়া শুরু হল। ব্যাপারটা এতই দ্রুত হল যে কেউ কিছু বলতে পারছিল না। ছেলেটা চিৎকার দিয়ে মাথা চেপে শুয়ে পড়ল আর পাশেরটা কি কি যেন হুমকি দিতে দিতে পালিয়ে গেল। সামনেই মেডিক্যাল কলেজ যেটায় অঝর পড়ে।
- রাসু দোকানে থাক, ভয় পাবি না। আমি হারামিটাকে হাসপাতালে রেখেই আসছি। অঝর আমার সাথে এস।

এটাই অঝরের সাথে আমার প্রথম কথা। আমি কোন মতে ছেলেটাকে উঠিয়ে হাসপাতালের দিকে চললাম আর অঝর সুবুধ বালিকার মত পেছনে আসছে। হাসপাতালের ভেতরে অঝরের সাথে অনেকক্ষণ কথা হল। সেখানেই জানতে পারলাম,
- ছেলেগুলো চা সিগারেট আরও কি সব খেয়েছে। তারপর বিল না দিয়ে চলে যাচ্ছিল, আমি বিলের কথা বলতেই ওরা আমাকে বাজে কথা বলে আর তখন রাসু ছেলেটাকে মারতে ধরে। আর তারপরে তো আপনি এলেন।
- গীটারটা কার ছিল?
- দুর্ভাগ্যবশত আমার ছিল, ভেবেছিলাম ঠিক করিয়ে বাজানো শিখব, তার আগেই তো ১২টা বাজিয়ে দিলেন।

লজ্জায় আর কথা বাড়াইনি। হাসপাতাল থেকে বের হবার আগে ছেলেটাকে কিছু বলে এলাম। তারপর থেকে আর তাদের রাসুর দোকানের আশেপাশে দেখা যায় নি।
ঐদিন সায়েন্সল্যাব থেকে Oscar Schmidtএর একটা গীটার কিনে আনলাম। তারপর এটা নিয়ে পরদিন সকালে রাসুর দোকানে গেলাম। ঢুকেই দেখি অঝর আর রাসু চা খাচ্ছে আর হাসাহাসি করছে। আমি যেতেই চা এনে দিল।
- রাসু আমি চা খাইনা রে।
- ভাই, খাইয়া দেহেন একবার।
- বললাম তো, আমি খাই না।
- আজব তো, এতো করে সাধছে, নিচ্ছেন না কেন, আপনার সমস্যাটা কি? [অঝর with ঝাজ]

ঝাড়ি খেয়ে মুখে দিয়েই দেখি কফি। রাসু বলে উঠল,
- আফা গতকাল ফ্লাক্সডা কিনায়া আনছে, যখন আমি কইলাম আফনে চা খান না, কফি খান।
অঝর সাথে সাথেই প্রতিবাদ করে উঠল,
- মোটেও না, রাসুর Business যেন বেশী হয় সে জন্যে দেয়া।
ওর চেহারা দেখেই বুঝলাম লজ্জা পাচ্ছিল। তখন ওর দিকে গীটারটা বাড়িয়ে দিয়ে বললাম,
- কাল যে ভেঙেছি, সে জন্যে না, আজকের ফ্লাক্সটার জন্যে এটা।
- লাগবে না।
- আরে আজব, লাগবে না তো কাল আফসোস করলে কেন? আমার এতোগুলা টাকা বেঁচে যেত।
- আপনার কাছে রেখে দিলেই তো আর নষ্ট হবে না।
- আমার বাসায় এমনিতেই ২টা পড়ে আছে। এতগুলো দিয়ে কি আমি Exhibition করব?
- ওকে নিচ্ছি, আর আপনার টাকা নিয়ে আফসোস করতে হবে না। আমি কিস্তিতে শোধ করে দেব।
- এই মেয়ে আমাকে কি তুমি গ্রামীণ ব্যাংক পাইছো?
- আপনার কাছে ২টা গীটার, তার মানে আপনি গাইতে পারেন?

আমি অবাক, মুহূর্তেই ঝগড়ার ঝড় গায়েব। মেয়েটা পারেও।
- না আমি গাইতে পারি না, গীটার বাজানো আমার শখ। তাই মাঝে মাঝে নিয়ে টুংটাং করি।
- আমাকে এখন একটু বাজিয়ে শোনাতে হবে।
- হ, ভাইজান, আমিও শুনুম।
- আহা, এত সহজে ছারছি না, আমাকে তো বুঝতে হবে আমাকে কি ভালো নাকি পচা গীটার দেয়া হচ্ছে।
- আমি কারো সামনে বাজাই না।
- আপনাকে বাজাতেই হবে। [পুরাই ক্ষ্যাপা]
হুট করেই দেখি রাসু পায়ে ধরে বসে পড়েছে।
- আরে ছাড়, কি শুরু করলি?
- ভাই, আমার খুব শখ গীটার বাজানো শুনুম, আর আফা এতবার কইছে। আফারে কেউ কষ্ট দিলে আমার অনেক খারাপ লাগে।
- ওকে ওকে, তুই উঠ।

ব্যাপক ইমুশনাল পরিস্থিতি। কি আর করা, অবশেষে Slashএর কিছু Instrumental বাজালাম। বাজাবার সময় অবাক হয়ে দেখাল, ২জন মুগ্ধ শ্রোতা অনেক একাগ্রতা নিয়ে শুনছে। বাজানো শেষ হবার পরেও আরও ৩-৪বারের মত বাজাতে হয়েছিল। আর ছুটি পাবার জন্যে কথা দিতে হয়েছিল যে প্রতিদিন বাজিয়ে শোনাতে হবে। শুরুটা এভাবেই হয়েছিল। আগে অঝর তার ক্লাসমেটদের নিয়ে আসত। এখন একা আসে। রাসু আমার আর অঝরের জন্যে আলাদা টুল বসিয়েছে। আমি এলেই একটা নতুন বেনসনের প্যাকেট আরেকটা লাইটার দিয়ে যাবে। ওখানে গেলে নিজেকে মহারাজা মহারাজা মনে হত। দিনগুলো কেমন যেন স্বপ্নের মত লাগছিল। জীবনটা এতো সুন্দর হতে পারে, আমি তা কখনই ভাবি নি। এর মাঝেই কবে যে অঝর আপনি থেকে তুমিতে উঠে এসেছে খেয়াল করতে পারিনি। মাঝে মাঝেই ফোনে কথা হত।

শীত আসি আসি করছে, অফিসের কাজে বাইরে থাকতে হচ্ছিল। টানা ২দিন বৃষ্টি, পরোটা আমার উপর দিয়েই গেছে।অবশেষে বাসায় ফেরার সময় দুনিয়া কাঁপানো জর নিয়ে ফিরলাম। এটা নতুন কিছু না, অভ্যেস আছে। শুধু প্রথমবারের মত বাসায় না থেকে রাসুর দোকানে যেতে ইচ্ছে হচ্ছিল। কিন্তু শরীরের যা অবস্থা, বিছানা ছাড়তেই জান যাবার অবস্থা।পরদিন দুপুরবেলা, কলিং বেল একটানা বেজেই চলছে। চেষ্টা করেও উঠতে পারছিনা। পরে উঠে অনেক কষ্টে দরজা খুলেই দেখি রাসু দাঁড়িয়ে।
- ভাই, কি হইছে আপনের? ফোন বন্ধ, দোকানে আসেন না। কি হইছে?
- আরে তেমন কিছু না, একটু জর হয়েছে।

রাসু আমার কপালে হাত দিয়ে মনে হয় কারেন্টের শক খেল। হাত দিয়েই উল্টা দিকে দউর। বুঝলাম না কি হল। দরজা বন্ধ করে শুয়ে পড়লাম। জ্ঞান হারাবার অবস্থা। এরকম অনেকবার হয়েছে, তাই ভয় হচ্ছে না। একসময় মনে হল আমাকে কেউ টানছে, তারপর মাথায় পানি দেয়ার অনুভূতি হচ্ছিল। একসময় চোখ খুললাম, দেখি অঝর আর রাসু বিছানার পাশে বসে আছে।
- অবশেষে মহারাজের জাগার সময় হল। [খুব রাগত স্বরে অঝর বলছিল]
- আফা, আমি যাই। পরে আবার আসুম নে। [বলেই রাসু বেড়িয়ে গেল]
- তোমার সমস্যা কি? একটা মানুষ এভাবে থাকে কি করে? মোবাইল বন্ধ, কোন খোজ নাই। একটা বার জানাবার প্রয়োজনও মনে হয় নি? আমি কি কেউ না? তুমি জানো, কত বার তোমার সাথে contact করতে চেয়েছি, ফোন বন্ধ, এখানেও আসনা। রাসু আর আমি কত চিন্তা করেছি? আজ যখন রাসু তোমার জরের কথা জানাল, ক্লাস ফেলে ছুটে আসি, এসে তোমার অবস্থা দেখে রাসুকে দিয়ে Medicine আনাই। আমি আর রাসু মিলে তো তোমাকে নিয়ে কোথাও যেতেও পারতাম না, এখানে থেকে যদি তোমার কিছু হয়ে যেত? কি কিছু বলছনা কেন?

- আরে এভাবে বলছ কেন?এটা এমন কিছু না। এমনিতেই ঠিক হয়ে যেত। তুমি অযথাই দুশ্চিন্তা করছ।
- অযথাই মানে কি? এভাবে থাক কেমন করে। তোমার Family Memberরা কোথায়? তোমার বাবা মা কি করে?
- হুহ, শুধু ঝগড়া করে।
- মানে?
- মানে কিছুই না, বাদ দাও, এই নিয়ে কথা বলতে চাই না।
- না আজ তোমাকে বলতেই হবে। বল তুমি।
- বাবা মা এই মুহূর্তে কোথায় আছে তা আমি সত্যি জানিনা। তবে যতটুকু ধারনা, সম্ভবত বেঁচেই আছে।
- হেয়ালি রাখ, আজকে তোমাকে বলতেই হবে। এতটা লোকানোর কি আছে। আর আমাকে যদি বলার মত কেউ মনে না কর তাহলে থাক, জোর করব না। [বলেই ঢুকরে কেঁদে উঠল]

এই মেয়েটা পারেও। অবাক হলাম, আমার কাহিনী জানার কি দরকার, আমি নিজেই তো মনে করতে চাই না। এমনিতে তো ভালই ছিলাম। অঝরের দিকে তাকাতেই দেখি সে কাঁদছে। কেন কাঁদছে তা আমার জানা নেই। আমি এমন কেউ নই যার জন্যে কাঁদতে হবে। তারপরেও কেন যেন খুব ভালো লাগছিল এই ভেবে, জীবনে প্রথমবার কেউ আমার ব্যাপারে জানতে চাইছে।

- আমি তখন অনেক ছোট, ঠিক মত বুঝতেও শিখিনি। তখন শুনেছিলাম, আমার দুনিয়াতে আসাটা আব্বু আম্মু কারোরই পছন্দ হয় নি। আমার জন্যে আম্মু ভালো একটা চাকরি ছেরে দিয়েছিল। কারন সে সময়ে হয়ত মাতৃত্বকালিন ছুটির System ছিল না। আব্বুর দেশের বাইরে কিছু Business Conference ছিল, ঐগুলোও বাদ দিতে হয়েছিল। আর এই জন্যে দুজনেরই অনেক সমস্যা হয়েছিল।প্রায় প্রতিদিন অনেক ঝগড়া হত। বাড়িতে আত্মীয় স্বজনেরা আসা ছেড়ে দিয়েছিল। আব্বু আম্মু আলাদা থাকত। তারপর থেকে তাদের সম্পর্কের অবনতি শুরু হয়, যেটা প্রতিনিয়ত খারাপ থেকে জঘন্য পর্যায়ে চলে যেতে থাকে। আমি কারো কাছেই থাকতে পারতাম না। রাতে একা ঘুমাতে খুব ভয় লাগত। প্রায় প্রতি রাতেই একবার আব্বুর দরজার সামনে আরেকবার আম্মুর দরজার সামনে যেয়ে ডাকাডাকি করতাম। কেউ শুনত না। একরাতে আব্বু দরজা খোলে এসে আমাকে অনেক মারে, বয়স তখন ৪এর মত ছিল। আমার এখনও মনে আছে প্রথমে অনেক বেথা পাচ্ছিলাম, পরে শুধু শরীরটা নড়ছিল, আমি অনুভূতি শুন্য হয়ে পরেছিলাম। তারপর থেকে মার খাওয়ার ভয়ে আর কাউকে কখনো ডাকিনি।

একসময় স্কুলে ভর্তি হলাম, আমি খুব ভালো করে পড়তে লাগলাম, যদি ভালো রেজাল্ট দেখে আব্বু আম্মু একবারের জন্যে হলেও বুকে জড়িয়ে নেয়। আমি কখনো দ্বিতীয় হইনি। খুব কষ্ট লাগত যখন Parents Dayতে সবার বাবা মা আসত, যখন রেজাল্ট হলেই ক্লাসমেটদের বাবা মা তাদের গিফট দিত। আমি আজ পর্যন্ত একটা খেলনা কারো কাছ থেকে পাইনি। আব্বু আম্মুর কারো কোন সমস্যা হলেই আমাকে মারত। একসময় ইচ্ছে হত পালিয়ে যাই বা আত্মহত্যা করি। কেন যেন পারিনি। তাই ওভারব্রিজে দাঁড়িয়ে Scholasticaর বাচ্চাদের দেখে আপনমনে ভাবতাম, যদি আমার জীবনটাও এমন হত। বাবা মায়ের হাত ধরে আসা যাওয়া করতে পারতাম। তারপর ক্লাস নাইনে হোস্টেলে চলে গেলাম। তারপর অনেক ভাল ছিলাম, শুধু রাতে ঘুমাতে পারতাম না। এখনও আমার রাতে ঘুমাতে ভয় হয়।

হোস্টেলে ভালো ছিলাম কারন সেখানে কারনে অকারনে আমানুষের মত মার খেতে হত না। স্কুল বন্ধের কথা শুনলে যেখানে সবাই খুশিতে আত্মহারা হয়ে যেত, সেখানে আমি বিমর্ষ হয়ে পড়তাম। আমার তো যাবার কোন জায়গা নেই। কুমিল্লা ক্যাডেট কলেজের পেছনেই একটা চায়ের দোকান ছিল, সেখানে কাজ জুটিয়ে নিয়েছিলাম। জতদিন বন্ধ, দোকানেই থাকব, সব কাজ করব, ২বেলা খেতে দেবে। এভাবেই HSC শেষ হয়, তারপর BUETএ ইঞ্জিনিয়ারিং শেষ করে এখন এখানে। কখনো কোন ক্লোজ বন্ধু পাইনি, না ভুল বললাম, কারো সাথে তেমনভাবে মিশিনি। সম্পর্কের প্রতি অনিহা এসে যায়। বাবা মা মাঝে মাঝে টাকা পাঠাত, ড্রাইভারকে দিয়ে খোঁজ নিত, এখন যে একাউন্টে টাকা আসত, সেটা আর চেক করিনা। ড্রাইভারের সাথে কথাও বলি না। রাসুর সাথে চলার কারন তাকে দেখে ছোটবেলার কথা মনে পরে যায়। এমন একটা চায়ের দোকানেই রাতে মাথা গুঁজার জন্যে দিনরাত খাটতে হয়েছিল। আমি শুধু উপরে তাকিয়ে একতাই প্রশ্ন করতাম, কি এমন অপরাধ ছিল, যে কারনে আমি আমার শৈশব হারিয়েছি।

মুখ দিয়ে আর কথা বেরুচ্ছিল না। ঠিক তখনি গালে অঝরের হাতের স্পর্শ পাই। অবাক হলাম, চোখের পানিতে গাল ভিজে গেছে। এর আগে শেষবারের মত কবে কেঁদেছিলাম, মনে নেই।
- ধুর, জ্বরের ঘোরে কি কি সব প্রলাপ করেই যাচ্ছি? আমার কথা বাদ দাও। বক বক করার স্বভাব তো, তাই
- আবির, আমি এখন বের হব। অনেক দেরি হয়ে গেছে। কাল সকালে শরীর ভালো লাগলে চা বারে এস। তুমি না এলে সকালটা মলিন লাগে।ঔষধ খেয়ে নিও।
- চল, তোমাকে পৌঁছে দেই।
- এই অবস্থায় বের হতে হবে না, আমি রাসুকে পাঠিয়ে দিচ্ছি।

আজ প্রথমবারের মত বেঁচে থাকার মানে খুঁজে পাচ্ছিলাম। আবার ভয় হচ্ছিল, স্বপ্ন দেখছি না তো আবার! পরদিন বেশ সকালেই বেড়িয়ে পড়লাম। শীতটা ভালই পড়েছে। তাই গায়ে জ্যাকেট জড়িয়ে নিলাম। দোকানে যেয়ে দেখি, অঝর গায়ে শাল জড়িয়ে আছে, আর রাসু ৫-৬টা সার্ট আর গেঞ্জি গায়ে দিয়ে কাপছে। ওর পোশাক দেখে হাসি পেল। সব খুলতে বললাম, অবাক হলাম যখন দেখলাম এই শীতে একটা গেঞ্জি রেখে বাকিগুলো খুলে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। জ্যাকেটটা খুলে রাসুকে পড়িয়ে দিলাম। জ্যাকেটটা বেচারার হাঁটু পর্যন্ত নেমে গেছে। ঐদিন আমি আর অঝর মিলে রাসুর জন্যে শপিং করে আনলাম। শপিঙের সময় বেশ খাটনি গেছে। সারমর্মঃ রাসুর সাইজ এন্টিক।

একদিন সকালে এসে দেখি অঝর নেই। রাসু আপনমনে একটা হকিতে তেল মারছে।
- অঝর আসেনি?কি করিস তুই?
- ভাই মাথা গরম, আফারে কেডায় জানি জালায়। তাই এইডা ঠিক করতাছি। খালি সামনে পাই একবার, মাইরা ছাতু বানায়া দিমু।
- মানে কি, তোকে কে বলছে?
- আফায় কইল, খুব মন খারাপ ছিল, নৃপ নামের কে নাকি জালাইতাছে।
আমারও অফিসে কাজ ছিল, তাই আর সময় নষ্ট না করে চলে আসি। পরে ফোনে জানতে পারি ওর আক্কেল দাঁত গজাচ্ছে। সবাই এটার নাম নৃপ দিয়েছে। পরে যখন রাসুর সামনে তা বলা হল, বেচারা লজ্জায় মেরুন কালারের হয়ে গিয়েছিল। অঝর আর রাসু প্রায় আমার বাসায় চলে আসত। দুজনের কাছেই চাবি ছিল। প্রায় সময় বাসায় ৩জনের পার্টি হত। ৩জনের এই ছোট দুনিয়াটা আমার কাছে স্বর্গ হয়ে উঠল। একদিন ফোনে,
- আবির, তুমি কি জানো তুমি একটা উচু প্রজাতির গ আকার ধা?
- আয় হায়, এটা বুঝতে এতদিন লাগল?
- ফাজলামো রাখ, ১৪ই ফেব্রুয়ারির প্ল্যান কি?
- অফিস আছে।
- বহুত হইছে, শোন ছেলে, ১৪তারিখ বিকালে চলে আসবা। আমাদের কলেজের পেছনের যায়গাটায় আমাকে ঘুরতে নিয়ে যাবে। তারপর আমাকে প্রপোজ করবে। আমি জানি তুমি আমাকে পছন্দ কর। শুধু তুমি কেন, সবাই করে। আমি প্রপোজ করব না, করলে পরে সারাজীবন তুমি ভাব নেবে। কি বললাম, বুঝলা কিছু?

ফোনটা কখন কেটে গেল বুঝিনি। কি হচ্ছে এসব? সত্যি নাকি এটা কেবলি স্বপ্নখোরের স্বপ্নঘোর! যাই হোক, ঠিক হল ১৪ তারিখ বিকাল ৫টায় দেখা হবে। ঝামেলা শেষ করতেই দেরি হয়ে গেল। তারপরে কি দেব না দেব, কিছুই মাথায় আসছিল না। অনেক ইচ্ছে ছিল ফুল দেব, কেন যেন অনেকবার ফুলের দোকানের পাশে থেকে ঘুরে এসেছি। লজ্জায় কেনা হয় নি। পরে অনেকগুলো চকলেট নিলাম। যেতেই ৫:২০ বেজে গেল। সামনে যেতেই যে একটা টাফ লুক দিল, জীবনেও ভুলব না।

- No, excuse. সোজা হাট। তোমার হাতে শুধু ১০ মিনিট আছে।
কি করি কি বলি, কিছুই বুঝে উঠতে পারছিলাম না। হাঁটছি, টুকটাক কথা হচ্ছে আর আমি ওকে একটার পর একটা চকলেট দিচ্ছি। একসময় আবার উল্টা ঘুরে সে কলেজের দিকে আসতে শুরু করল। কলেজের গেইটে এসেই বলল,
- আর মাত্র এক মিনিট।
যা আছে কপালে, বলতেই হবে। বাকি চকলেটগুলো ওর হাতে একসাথে দিয়ে “আলাভু” বলেই দউর। এক দউরে রসুর চা বারে। সাথে সাথেই ওর কল, অনেক সাহস নিয়ে রিসিভ করলাম। ফোনে শুধুই ওর হাসি শোনা যাচ্ছে। সে কি হাসি। তারপর মাথায় এল, কি করতে যাচ্ছি। আমি এমন একজন যার কেউ থেকেও নেই। ভবিষ্যৎ কি, তা জানিনা। পরদিনই অঝরকে ডেকে সব বললাম। আমাকে ওদের পরিবারের কেউ কখনই মেনে নেবে না। ও কোন কথাই শুনল না। বলে,
- আমার কাউকেই লাগবে না। আর আমি তো ডাক্তার হচ্ছি, তোমাকে কিছুই করতে হবে না, সারাক্ষন আমার পাশে থাকবে আর ভালবাসবে। পারবে তো?

আমার কিছুই বলার ছিল না, ভয় পাচ্ছিলাম। এত সুখ, Digest হবে তো? অঝর স্বপ্ন দেখতে ভালবাসত। সেই প্রথম যে আমাকে স্বপ্ন দেখতে শিখিয়েছিল। স্বপ্নের মত করেই দিনগুলো কেটে যাচ্ছিল। আর বাসায় এলেই ২টা মিলে বসত, গীটার বাজাতে হবে। একদিন বাথরোমে গান গাইছিলাম, কুটনা রাসু তা শুনে ফেলে আর অঝরকে জানিয়ে দেয়। তারপরদিন অঝর দেখা হতেই মারতে শুরু করল, থামার পর বলল
- এতক্ষণ হাতে বুঝিয়েছি, এখন মুখে বুঝাচ্ছি। একবারেই বলব। এখুনি একটা গান গাও
মানে কি, কি বলে মেয়েটা, আমি কিছু বলতে যাব, সেই পরিচিত টাফ লুক। বুঝলাম পার পাব না। গাইলাম একটা। শেষ হতেই আবার মার শুরু।
- আরে, গান খারাপ হতেই পারে, তাই বলে কি মারতে হবে নাকি?
- ভাব নাও আমার সাথে না? তুমি গান গাও আর আমাকে শুনাও নি? আজকে আর ছাড়ছি না, বলেই তেড়ে এল।

এভাবেই চলছিল খুনসুটি টুনাটুনির সংসার। আমি অবাক হতাম, অঝর ডাক্তার, আমি ইঞ্জিনিয়ার। দুজনেই বেশ বেস্ত থাকি, তারপরেও কত ভালো আছি। বাবা মা কেন পারেনি? কেন?

কিছুদিন পরের কথা, অঝর কেমন যেন হয়ে গেছে, কিছু জানতে চাইলেই বলে, সামনে প্রফ, তাই একটু ঝামেলায় আছে। রাসু আমাকে কিছু বলতে চেয়েও পারছে না। কিছু একটা হয়েছে। আমি বুঝতে পারছি না। হুট করেই অঝরের কল দেয়া বা ধরার হারটা কমে গেল। আমার অঝর আর আগের মত নেই। অনেক চেঞ্জ হয়ে গেছে। একরাতে অঝর বাসায় এল, রাসু ছিল, তাকে বেড়িয়ে যেতে বলল, রাসু সাথে সাথেই বেড়িয়ে গেল। সে চুপ করে বসে আছে। তারপর
- আবির তোমাকে কিছু কথা বলার ছিল।
- বল
- তুমি আসার আগে একজন ছিল আমার জীবনে। আমার সবকিছু জুড়েই। সবকিছুই ঠিকঠাক ভাবে চলছিল, পরে পারিবারিক সমস্যার কারনে সে আমাকে ছেড়ে চলে যায়। এখন আবার সে ফিরে আসতে চায়, আমি কি করব বুঝতে পারছি না। আমাকে তুমি বল আমি কি করব। বলেই ফুঁপিয়ে কাঁদতে লাগল।

মানতে পারছিলাম না, কেন আমার সাথেই এমনটা হবে, কেন আপন বলে কেউ আমার থাকবে না। আমার চারিদিকে অন্ধকার ছেয়ে যাচ্ছিল। বলতে ইচ্ছে হচ্ছিল, অঝর, তুমি জানো কি, আমি শুধু তোমার স্বপ্ন দেখি, তোমার পথ চেয়ে বসে থাকি, আমার হৃদয় জুড়ে ভালবাসা শুধু তোমার জন্যেই। সারাবেলা শুধু তোমার কথাই ভাবি, তোমার স্মৃতিগুলো আমায় ঘিরে রাখে সবসময়। আমার সমস্ত প্রার্থনা তোমাকে ঘিরেই। সারাটা জীবন তোমার হাতটি ধরে কাটিয়ে দিতে চাই, তোমাকে ছেড়ে কোথাও যেতে চাই না, প্লিজ রাগ কর না আমার সাথে। আমাকে ছেড়ে যেও না। তুমি ছাড়া আর কেউ নেই যে আমার। মনের জমানো কথামালা মনের ভেতরেই গুমরে মরল।

- তোমাকে আমার জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিলাম অঝর। তোমাকে তোমার জান্নাত ফিরিয়ে দিলাম। ভালো থেক। অঝর আর কোন কথা না বলেই চলে গেল। জীবনটা আবার অর্থহীন মনে হচ্ছিল। রাসুর দোকানে আর যাওয়া হচ্ছিল না। কাজে বেস্ত হয়ে সব ভুলে থাকার চেষ্টা করলাম। একদিন সন্ধ্যায় অঝরের কল, সে কাঁদছে আর দেখা করতে চাইছে। কে যেন ওর বয়ফ্রেন্ডের মাথা ফাটিয়ে দিয়েছে। সে অঝরের সাথে দেখা করতে এসেছিল। যাবার বেলায় অঘটনটা ঘটে। হাসপাতালের যাবতীয় ঝামেলা শেষ করে ফেরার পথে দেখি রাসুর দোকান বন্ধ, কয়েকদিন ধরে নাকি দোকানে আসে না। পরে যেখানে মাথা ফেটেছে, সেখানে যেয়ে রক্ত মাখা একটা হকি পাই। পরে আর বুঝতে বাকি থাকে না কি হয়েছিল। বাসায় ফিরে দেখি রাসু বসে আছে।

- রাসু, এমনটা কেন করলি?
- অঝর আফারে আপনের সাথে ছাড়া আর কারো সাথে দেখলে আমার অনেক কষ্ট হয় ভাইজান। আর আপনের কষ্ট আমার সহ্য হয় না।
- আমি কাল এখান থেকে চট্রগ্রামে চলে যাচ্ছি। সেখানেই থাকব। তুই জাবি আমার সাথে?
- আপনে যেখানেই যান, আপনার পাশেই থাকব। ভাই কেন এমন হইল, এরপরে কি করবেন?
- এরপর –
“কি হয়েছে ?” , “কেন ?” – দূরে থাক ।
আমি ও আমরা আছি ভালো, শুধু -
ভালবাসা টুকু নির্বাক ।

ভালোবাসি বলতে হবে না


প্রেমের কবিতা আমায় ভালোবাসি বলতে হবে না
শুধু তোমার ঐ শতরঞ্জিত মুখে
আমার নামটি উচ্চারন কর
আমি জ্ঞানহীন যাব।

আমায় দামী কোন উপহার দিতে হবে না
শুধু তোমার পবিত্র হাত দু'টি দিয়ে
আমায় ছুঁয়ে দিও
আমি হারিয়ে যাব।

আমাকে কখনো আর বলতে হবে না
'তোমাকে আজ খুব সুন্দর লাগছে'
শুধ আমার দিকে চোখ দুটো বাঁকিয়ে তাকাও
আমি স্বর্গ দেখে নেব তোমার চোখে।

আমার দিকে দৌড়ে আসতে হবে না তোমাকে
শুধু তোমার নগ্ন পা দু'খানি দিয়ে
আমার পানে একপা' হাটো
আমি হাইপার ডাইভ গতীতে তোমার কাছে ছুটে যাব।

আমাকে ভালোবেসে ফুল হাতে দাড়াঁতে হবে না আজ
শুধু আমি আসলে মুচকি একটু হেসে
জিঙ্গেস করবে, কেমন আছ ?
আমি ভালোবাসা খুজে নেব তোমার হাসিতে।

আমার সাথে বেরুতে হবে না কখনো
একবার ভালোবাসি বললেই হবে,
সেদিন থেকেই আমার ভ্যালেনটাইন শুরু হবে....
আজ না আমার ভ্যালেনটাইন শুরু করতে ইচ্ছে করছে
একবার বলবে 'ভালোবাসি ভালোবাসি'.

যে ভালোবাসা সবচেয়ে দামী


প্রেমের গল্পলিখেছেন - রফিক স্যার।
________________________________
-ইথার ভাইয়া দাড়া, আমিও আসতেসি...
- কই আসবি রে তুই মিমি??
-আমি জানি তুই আজও কলেজের বাহানা দিয়ে আব্বুর সাথে লুকিয়ে লুকিয়ে দেখা করতে আব্বুর অফিসে যাচ্ছিস...!
সতের বছরের কিশোর ইথার তার পাঁচ বছরের ছোট্ট বোন মিমির কথা শুনে বাসার দরজা দিয়ে বের হতে নিয়েও থমকে দাড়িয়ে রইল.......
- কিরে দুষ্টু ভাইয়া,আমার চকলেট কালারের হিল জুতাটা কই লুকায়া রেখেছিস,আব্বু বলেছিল আব্বুর সাথে বেড়াতে গেলে আমি যেন আব্বুর দেয়া ওই জুতাটা পড়ে যাই...! আর কিছুক্ষণ আগে টিভিতে দেখলাম আজ ভ্যালেন্টাইন ডে.. ভুলে গেছিস আমাদের প্ল্যান?
- ইঁদুর তোর জুতা খেয়ে ফেলেছেরে মিমি... আমি কলেজে যাই,আসার সময় ঠিক অমনই একটা জুতা আনব,তারপর যাইস।
- তুই প্রতিদিনই এটা বলিস আর আসার সময় একটা করে কিটক্যাট চকলেট নিয়ে আসিস আমার জন্য.. কিন্তু আমি জানি আব্বু-ই চকলেট দেয় তোর কাছে আমাকে দেয়ার জন্য,আর তুই চুরি করে সব চকলেট খেয়ে মাত্র একটা কিটক্যাট নিয়ে এসে আমার হাতে ধরায়া দিস প্রতিদিন!
-আল্পনা আন্টি ..................
মিমিকে ধরো,গেট টা একটু লাগাও আমি যাই...!
**********************
......সিঁড়ি বেয়ে ইথারের দ্রুত গতিতে নামার শব্দের সাথে সাথে ধীরে ধীরে মিলিয়ে যায় পেছন থেকে আসা কোমল কন্ঠের " ভাইয়া...... ভাইয়া......" চিৎকার।
********************
একমাস দুই দিন পার হয়ে গেছে প্লেন দূর্ঘটনায় মিমি - ইথারের বাবা মিনহাজ চৌধুরী মারা যাওয়ার। উনি বেঁচে থাকতে বিজনেস এর ব্যস্ততায় খুব কম দিনই বাসায় থাকতেন, তবে যেদিনই বাসায় আসতেন, ইথারকে ইথারের পছন্দের ক্যাপ কিনে দিতেন,মিমি কে অনেক চকলেট কিনে দিতেন। ইথার ওর আদরের বোন মিমিকে রাগানোর জন্য মিমির পড়ার টেবিলের ড্রয়ার থেকে কিটক্যাট চুরি করে খেত! আসলে,রাগলে মিমির ছোট্ট মুখটা গোলাপী ক্যন্ডিফ্লস এর মতো হয়ে যায়,এটা দেখতে ভীষন ভালোলাগে ইথারের। আর মিমি ইথারের আলমারি খুলে শখের রং - বেরংয়ের ক্যাপের কালেকশন থেকে ক্যাপ চুরি করে লুকিয়ে রেখে ভাইকে রাগিয়ে মজা পেত!
ইথারের চোখ জ্বালা করে এসব ভাবলেই.. যে, ভাগ্যের নির্মম খেলায়... আজ আর ইথারের কিটক্যাট চকলেট চুরি করে খাওয়া হয়না বরং ইথার নিজেই মিমির জন্যে কিটক্যাট নিয়ে আসে।আর মিমিটা তো সারাদিন "আব্বু.. আব্বু.." করেতে করতে ,আগের মতো ক্যাপ লুকিয়ে ভাইকে রাগানোর কথা ভুলেই গেছে...! নিষ্পাপ পাগলীটা এখনও কেন বোঝেনা যে ওর বাবা আর কোনদিন ওকে সন্ধ্যাববেলায় ব্যালকনিতে কোলে নিয়ে বসে মজার মজার গল্প শুনাবেনা, চকলেট কিনে সারপ্রাইজ দেবেনা!

********************
চোখের জলের ফোঁটা গাল বেয়ে পিচঢালা রাস্তায় পড়ল........ ফেব্রুয়ারীর ফাল্গুনী রোদে তপ্ত রোড শুষে নিল সেই নোনতা দুঃখ,কিন্তু কোনভাবেই বুকের ভার কমাতে পারেনা ইথার! সৃষ্টিকর্তার কাছে শুধু প্রশ্ন করে......" আম্মু তো দু বছর আগেই অন্যকোথাও বিয়ে করে চলে গেছে,একটিবারও ফিরে তাকায়নি আমাদের দিকে, আর শেষ পর্যন্ত বাবার ছায়াটুকুও কেন মুছে গেল আজ...! "
********************
হঠাৎ প্যান্টের পকেটে ঘুমিয়ে থাকা মোবাইলের জাগ্রত ভাইব্রেশনে চমকে ওঠে ইথার... রিসিভ করতেই শুনতে পায় ওদের ক্লাসের রিশাতের মায়ের কান্নাজড়ানো কন্ঠ।
- ইথার,বাবা... রিশাত কি গতকাল সন্ধ্যায় কোচিং ক্লাসে গেছিলো?
- না আন্টি, কেন?
-রিশাত তো আমারে হুমকি, ধমক দিয়া আমার আলমারি থেইকা গতকালও টাকা নিয়ে গেছেগা কোন ডিজে পার্টিতে!তুমিতো জানো বাবা,রিশাত রে আমি একাই মানুষ করসি,ভালোবাসা,ভালো শিক্ষার কমতি হইতে দেইনি কুনুদিন।কিন্তু একটু বড় হওয়ার পর থেকাই রিশাত আমারে খ্যাত বলে,বন্ধুদের সামনে মা বইলা পরিচয় দিতেও চায়না........!
কিছু বলার ভাষা হারিয়ে গেছে ইথারের!
*******************
হঠাৎ ইথারের অশ্রুনীল চোখের দৃষ্টিতে আটকে গেল আজকের ভালোবাসা দিবসে... একটি অতি সাধারণ অথচ অমূল্য ভালোবাসার দৃশ্য..... রাস্তার পাশে ফুটপাতের কোনায় উষ্কো-খুষ্কো চুলের এক মাঝবয়সী লোক তার বালক বয়সী ছেলেটিকে মাটির হাড়িতে করে ডালভাত মুখে তুলে খাইয়ে দিচ্ছেন।ছেলেটিও কি মধুর তৃপ্তি সহকারে খাচ্ছে.................. তা দেখে ছেলেটার বাবার মুখে কি অদ্ভুত তৃপ্তি মাখা ভালোবাসার হাসি...!
ইথারের মনে পড়ছে সেই দিনগুলো...যখন আব্বু ওকে আর মিমিকে নিয়ে ছুটির দিনে মুভি দেখতে গিয়ে রেস্টুরেন্টে বসে হাতে তুলে খাইয়ে দিতেন.....।আবার বাসায় যেদিন বাবার সাথে খেতে বসা হতো,ইথার আর মিমি ইচ্ছে করে খাবারের প্রতি অনীহা দেখাত,বাবা যেন আদর করে খাইয়ে দেয়,এই আশায়.. আর তখন সেই ছোট্ট আশাগুলো মিষ্টি করে পূরন করে দিত ওদের আব্বু! এ বছর,আব্বুকে নিয়ে ইথার আর মিমি ভ্যালেন্টাইন ডে পালন করবে,এমনই প্ল্যান ছিল!
আজ ভ্যালেন্টাইনস ডে..... আগামীতে হয়ত কোন জীবনসঙ্গী ভালোবাসা দিবসে পাশে রবে,কিন্তু সবচেয়ে বড় কথা বাবাকে নিয়ে ভ্যালেন্টাইনস ডে পালনের সুযোগ এ জীবনে আর কোনদিন আসবেনা! কেন সারাটি জীবনের জন্যে অপূরনীয় রয়ে গেল মা বাবার ভালোবাসা পাবার তৃষ্ণা..!! "
আসলেই পৃথিবীটা বড় অদ্ভুত!
মা বাবাকে সম্মান করার শিক্ষা ইথারদের মধ্যে আছে কিন্তু রিশানের মতো মা ইথারের ভাগ্যে জোটেনি,আর ফুটপাতের ওই ছেলেটির ইথারদের মতো দোতালা ডুপ্লেক্স বাড়ি আর বিলাসবহুল খাবারের প্রাচুর্য নেই,কিন্তু "বাবা" নামক বিশেষ মূল্যবান সম্পদ আছে,যা ইথার আর মিমির নেই!
উৎসর্গঃ সেইসব ইথারদের.. যাদের সব আছে ,বাবা কে নিয়ে ভ্যালেন্টাইন ডে পালনের মতো বিশাল মনও আছে কিন্তু মা বাবা নেই,আর সেইসব রিশানদের.. যারা মা বাবার ভালোবাসাকে পথের ধূলোর চেয়েও নিকৃষ্ট মনে করে মিথ্যা মোহে দিব্যি বেঁচে আছে।

বাংলা প্রেমের এস এম এস প্রেমিকা খুশী হবেই এবার


প্রেমের এস এম এস, ভালবাসার এস এম এস, বাংলা এস এম এস,  

হারিয়ে যেতে ইচ্ছে করে অনেক দূরে যেখানে রয়েছে তোমার ভালোবাসার সূখের নীড়। আর সেই নীড়ে কাটিয়ে দিতে চাই শত জনম। আমি কল্পনার সাগরে ভেসে চলে জাব, জাব তোমার হৃদয় সৈকতে, তুমি দিবেনা ধরা?
Harie jete esse kore onek dure jekhane royese tomer Valobaser suker nir. ar sei nire katie deta chi soto jonom. ami kolponer sagore vese chole jabo, jabo tomer ridoy soykote, tumi debena dhora?
তুমি কি জান পাখি কেন ডাকে? “তোমার ঘুম ভাংবে বলে। তুমি কি জান ফুল কেন ফুটে? “তুমি দেখবে বলে। তুমি কি জান আকাশ কেন কাদে? “তোমার মন খারাপ বলে। তুমি কি জান তোমাকে সবাই পছন্দ করে কেন? “তুমি খুব ভাল বলে। তুমি কি জান তুমি এত ভালো কেন? “তুমি আমার “বন্দু” বলে।
Tumi ki jano pakhi keno dake? "Tomar ghum vangbe bole". Tumi ki jano full keno fute? "Tumi dekhbe bole". Tumi ki jano akash keno kade? "Tomar mon kharap bole". Tumi ki jano tomake sobai posondho kore keno? "Tumi khub valo bole". Tumi ki jano tumi ato valo keno? "Tumi amar "friend" bole.
শুভ ক্ষন, শুভ দিন। মনে রেখ চির দিন। কষ্ট গুলো দূরে রেখ, স্বপ্ন গুলো পুরন করো, নতুন ভালো স্বপ্ন দেখো, আমার কথা মনে রেখ।
Suvo khon, suvo din. Mone rekho cirodin. Kosto gulo dure rekho, Shopno gulo puron karo, Notun valo shopno dekho, Amar kotha mone rekho.

আকাশ বলে তুমি নীল। বাতাস বলে তুমি বিল। নদী বলে তুমি সিমা হিন। চাঁদ বলে তুমি সুন্দর। ঘাস বলে তুমি সবুজ। ফুল বলে তুমি অবুজ। কিন্তু আমি বলি, “তুমি কেমন আছ?”
Grisser Anarkoli, Borsar Anjoli, Soroter Gitali, Hemonter Mitali, Shiter pitha puli, Bosonter Full koli, Emni kore vore jak jiboner sob pata Guli.
বন্ধু মানে সুখের সাথী। বন্ধু মনে রাগ। বন্ধু মানে দুঃখ সূখের সমান সমান ভাগ। বন্ধু মানে হালকা হেসে চোখের কোনের জল। বন্ধু মানে মনে পরলে একটা ছোট কল।
 Bondhu mane sukher sathe. Bondhu mane rag. Bondhu mane dukkho sukher soman soman vag. Bondhu mane halka hase cokher koner jal. Bondhu mane mone porla ekta choto call.
কিছু কথা কিছু ‍পরিচয়, ক্ষনিকের হয়। কিছু ব্যাথা কিছু সৃষ্টি, ভূলার নয়। কিছু মানুষ কিছু বন্ধু চিরদিনের হয়। “আই মিছ ইউ”।
Kiso kotha kiso poricoy, Khoniker hoy. Kiso betha kiso sristy, Volar noy. Kiso manus kiso bondho, Chero diner hoy. "I Miss You."
নতুন আশা, নতুন প্রান। নতুন সুরে, নতুন গান। নতুন ঊষার, নতুন আলো। নতুন বছর কাটুক ভালো।..........শুভ নববর্ষ........
Natun asa, Natun pran. Natun sure, Natun ghan. Natun ushar, Natun alo. Natun bochor katuk valo...........SHUVO NOBOBORSHO.........
নীল আকাশের মেঘের ভেলায়, ঘাসের উপর শিশির কনায়, প্রজাপতির রঙ্গীন ডানায়, ফালগুনের ফুলের মেলায়, একটা কথা তোমাকে জানাতে চাই >>>>>>>>>> শুভ 1লা বৈশাখ <<<<<<<<<<
Hor dom hoi hoi, Boishakh elo oi, Kolar patay Elish panta. Eshan kone megher barta. Shuvo Noboborsho.
জীবনের রং বড় বিচিত্র, কখনো লাল কখনো নীল। কখনো মুক্ত পাখির মতো। কখনো আবার চুপসে যাওয়া ফুলের মতো। হারিয়ে যায় কত চেনা মুখ। থেকে যায় সুধু অনাবিল সূখ।
Jibonar rong boro bicitro, Kakhono lal kakhono nil. Kakhono mokto Pakhir moto. Kakhono abar cupse jawoa fuler moto. Hariya jay koto cena mukh. Thake jay onabil shuk.
নীল নীলিমায় দূরে কোথায় মন যে হারায় বেকুলতায় মনে পরে যায়। একটা কথা ই মন জানতে চায় অবেলায় অবসরে মনে কি পরে আমায় “আই মিছ ইউ”
Nil nilimay dure kothay mon je haray bakolotay mone pore jay. Akti kotha e mon jantay chay abalay obosoray mine ki pore amay "I Miss You"
ভোরের মিষ্টি রোদের আলোয় মিছ কল দিয়, কান্ত দুপুরে মনে পরলে এসএমএস কর, গভীর নিঝুম রাতে যদি ভয় লাগে তবে ফোন কর ভূতের গল্প শুনাব কেমন।
Vorer misti roder aloy misscall dio, Klanto dupure mone porle sms koro, Govir nijhum rate jode voy lage Tobe phone koro VUTER golpo sunabo kemon.

এক টু কানে শুনো। এক টু আমায় জানো? এক টু সময় দিয়। এক টু খবর নিয়ো? এক টু যখন একা। এক টু দিয়ো দেখা? এক টু নিয়ো খোঁজ। এক টু ভেবো রোজ? এক টু আমায় ডেকো। ভীষন ভালো থেকো???
Ajka tome soneso ke rater bangla khobor kalka nake bristy hobe vijba sara shohor. Vijba abar dalan cotha vijba tomar bare, Dorojata khole rakho aste pare ame.

নতুন সকাল নতুন দিন। শুভ হোক ঈদের দিন। নতুন রাত বাকা চাঁদ। রঙ্গীন হোক ঈদের রাত।
........... ঈদ মোবারক ........
Noton sokal noton din. Shovo hok eider din. Noton rat baka chad. Rogin hok eider 
rat.  ............. EID MUBARAk ..............

ভালোবাসার মাঝে সুক আছে। ভালো থাকার মাঝে কষ্ট আছে। দূরে রাখার মাঝে টান আছে। মনে রাখার মাঝে প্রান আছে। তাই মনে রেখ আমায় চিরদিন।
Sara Khon valo theko, Valobasha mone rekho. Diner bela hashi mukha, Rater bela onek sukha, Nana ronger shapno dekho, Shapner majhe amay rekho. "Happy Valentine Day"

দূর নীলিমায় নয়, আছি তোমার পাশে, খুজে দেখ আমায়, পাবে হৃদয়ের মাঝে, শুনবনা কোন গল্প, গাইবো শুধু গান যে-গান-এ আছে শুধু ভালোবাসার টান......”শুভ ভালোবাসা দিবস”
Dur nilimay noy, Aci tomar pashe, Khoja dekho Amai, Pabe Redoyer maje, Sunbona kono golpo, Gaibo sudu gaan je-gaan-a ase sudu valobasar tan....."Happy Valentine Day"

সকাল তো অনেক হয় বর্ষার মতো নয়, সময় তো অনেক হয় গোধূলীর মতো নয়, রাত তো অনেক হয় পূর্নীমার মতো নয়, বন্ধু তো অনেক হয় তোমার মতো নয়। দয়া করে এসএমএস করো।
Shokal to onek hoy borsar moto noy, Somoy to onek hoy ghodhulir moto noy, Rat to onek hoy pornemar moto noy, Bondho to onek hoy tomar moto noy. Please SMS koro.
কিছু কিছু কবিতা লিখার আগে ভাষা হারিয়ে যায়। কিছু কিছু কথা বলার আগে সময় ফুরিয়ে যায়। কিছু কিছু স্বপ্ন দেখার আগে ঘুম ভেঙ্গে যায়। কিছু কিছু মানুষ আপন হওয়ার আগে দূরে চলে যায়। কেন এমন হয়?
Kisu kisu kobita lekhar age vasa hariye jay. Kisu kisu kotha bolar age somoy furiye jay. Kisu kisu shopno dekhar age ghum vhenge jay. Kesu kesu manus apon howar age dure chole jay. Keno amon hoy?
রাতে জোসনা, দিনে আলো, কেন তোমায় লাগে ভালো? গোলাপ লাল, কোকিল কালো, সবার চাইতে তুমি ভালো। আকাশ নীল, মেঘ সাদা, সবার চাইতে তুমি আলাদা। “শুভ সকাল”
 Rate Josna, Dina alo, Keno tomai lage valo? Golap lal, Kokil kalo, Sobar cheya tome valo. Akash nil,Megh sada, Sobar cheya tome alada. "Shovo Sokal"

টিপ টিপ বৃষ্টির টুপ টুপ শব্দ, ঝির ঝির বাতাসের মৃধু মৃধু গন্ধ। মিট মিট তারাদের লুকু চুরি খেলা, এই নিয়ে ভালো থেকো সারা বেলা.......{শুভ সকাল}
Tip Tip bristir tup tup sobdo, Jhir jhir bataser mridu mridu gondho. Miti miti tarader lukochuri khela, ai niye valo thako sara bela..... {Shovo Sokal}
সূখের জন্য “স্বপ্ন”, দুখের জন্য “হাসি”, দিনের জন্য “আলো”, চাঁদের জন্য “নিশি”, মনের জন্য “আশা”, তোমার জন্য রহিল আমার “ভালোবাসা”.......শুভ সকাল।
Suker jonno "Shopno", Dukher jonno "Hasi", Diner jonno "Alo", Chader jonno "Nishe", Moner Jonno "Asha", Tomar jonno rohelo amar "Valobasha"......Shovo Sokal.

১ টা দিন, ১ টা রাত। আজকে হলো শবে-বরাত। সকলকে দাও নামাজ এর দাওয়াত। আল্লাহ কে ডেকো সারা রাত। মাফ হবে সকল পাপ। তা হলে পাবে জান্নাত। “শুভ শবে-বরাত”
1Ta din, 1 Ta rat. Ajka holo sobe-Borat. Sobai k dao namaz er daoat. ALLAH k dako sara rat. Maf hobe sokol pap. Ta hole pabe Jannat."Shovo Sobe-Borat"
যদি দেখা না হয় ভেবোনা দূরে আছি। যদি কথা না হয় ভেবোনা ভূলে গেছি। যদি না হাসি ভেবোনা অভিমান করেছি। যদি ফোন না করি ভেবোনা হারিয়ে গেছি। মনে রেখো তোমায় আমি ভালোবাসি।
Jodi dekha na hoy Vebona dure aci. Jodi kotha na hoy vabona vule gase. Jodi na hasi vebona oviman koresi. Jodi phone na kori vebona harea gase. Mone rakho tomai ame valobasi.
টিপ টিপ বৃষ্টি পরে। একা বসে আছি ঘরে। তুমি আছো কেমন করে। জানাও আমায় এস এম এস করে। তোমার কথা মনে করে। মেসেজ দিলাম সেন্ট করে।
Tip tip brishti pore. Eka bose achi ghore. Tumi acho kemon kore. Janao amay sms kore. Tumar kotha mone kore. Message dilam sent kore.