Pages

"® বিশেষ_করে_আপুদের_উদ্দেশ্যে ®"

RAFIQ SIR


আপনাকে যদি জিজ্জেস করা হয়.....
"এই পৃথিবীতে কারা বেশি সুন্দর,
নারী না পুরুষ..? "
দাঁড়ান,,,,, বিতর্কে যাওয়ার আগে বলুন...
.
★ মুরগী দেখতে বেশি সুন্দর,
নাকি মোরগ..?
★ ষাড় দেখতে বেশি সুন্দর,
নাকি গাভী ?
★ ময়ূর দেখতে বেশি সুন্দর
নাকি ময়ূরী..?
★ সিংহ দেখতে বেশি সুন্দর,
নাকি সিংহী..?
★ হরিন দেখতে বেশি সুন্দর,
নাকি হরিনী..?
★ গাধা দেখতে বেশি সুন্দর,
নাকি গাধী..?
.
‪#‎আপনার_যদি_চোখ_থেকে_থাকে_তাহলে____‬
অবশ্যই আপনি বললেন..., ময়ূর, সিংহ,
হরিন,
মোরগ,গাধা, ষাড় এরাই
দেখতে বেশি সুন্দর...!
শুধু তাই নয়.., এমনকি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র
পিপড়া,
ফড়িং
থেকে শুরু করে হাতি, জিরাফ পর্যন্ত
তাকালেও
আপনি পুরুষ জাতিকেই সুন্দর বলবেন...!!
.
এবং পুরুষ জাতি তার সেই সৌন্দর্য আর
শক্তি দিয়েই তার বিপরীত
স্ত্রী জাতিকে আকর্ষিত করার
চেষ্টা করে থাকে..!
.
মোরগ তার পাখা ঝাপটে, ময়ূর তার
পেখম মেলে..,
সিংহ তার কেশর দিয়ে, বাঘ তার
শক্তি দিয়ে...,
সোনা ব্যাঙ মুখে নীল বেলুন
ফুলিয়ে আর শব্দ করে..,
এমনকি ঝিঁঝিঁ পোকাও তার
পাখা ঝাপটে
তীব্র শব্দ করে তার
প্রিয়জনকে আকর্ষিত
করে..!!
.
কারন একটাই, স্ত্রী জাতি মহামূল্যবান

লোভনীয়..
পুরুষ জাতির কাছে...,, পুরুষরা তাদের
সমস্ত শক্তি
দিয়ে, সৌন্দর্য দিয়ে তাদের জয় করার
চেষ্টা করে..!!
.
★★ কিন্তু সমস্ত প্রাণীজগৎ এ নিয়ম
মেনে চললেও..,, আমরা মনুষ্য
জাতি এতটা নিচে নেমে গেছি যে,
আজকের মডার্ন মেয়েরা,
নিজেদের সমস্ত কিছু দেখিয়ে,
বস্তা বস্তা,
আটা ময়দা মেখে, পুরুষদের লালায়িত
করছে...
আর, পুরুষরা জানে তারা সুন্দর, তাই
তারা কারো
কাছ থেকে প্রশংসা পেতে আগ্রহী নয়,
অপরদিকে,
নারীরা দেখতে যেমনই হোক, তাদের
রূপের প্রশংসা
না করলে সমস্যা..!!
.
তাই, আপুদের উদ্দেশ্যে বলি...
"আপনারা অনেক মুল্যবান,
আমি একটি স্ত্রী ককুরের জন্য বহু ককুরকে
লড়তে দেখেছি, ডিস্কোভারিতে,
একটি স্ত্রী ক্যাঙারুর
জন্য দুই ক্যাঙারুর রক্তাক্ত যুদ্ধ
দেখেছি...,, এমনকি
পৃথিবীর প্রথম খুন, কাবিল তার ভাই
হাবিলকে খুন করেছিল হাবিলের
স্ত্রীর জন্য....!!
যেখানে পুরুষরা আপনাদের জন্য পাগল
হবে সেখানে আপনারা এসব করে কেন

নিজেদের দাম কমাচ্ছেন..?

*কাকে ভালবাসতে হবে*

RAFIQ SIR
গল্পটি পড়ে নাম আপনাই দিয়েন
(অনেকেই বলে সত্যিকারের
ভালবাসা নাকি নেই
আমি তো তাদের
বলি কাকে ভালবাসতে হবে সেটাই
তো তুমি জানো না...
জানতে চাইলে একটু কষ্ট করে নিচের
লেখাটি পড়ুন
কথ দিচ্ছি আপনার কষ্ট
বিফলে যাবে না )
______________________________
_______________
___________
হ্যালো সাখা (সাখা হচ্ছে নিশাতের
দেওয়া নাম )
হ্যা নিশাত বল
ফোন তুলতে এতক্ষণ লাগলো কেন ??
( রেগে )
স্যরি ওয়াস রুমে ছিলাম
অকে অকে কাল তো ভালবাসা দিবস
কোথায়
দেখা করবা ?
তুমি যেখানে বলবা সেখানেই
অকে নন্দন পার্কে ঠিক ৯ টায়
আচ্ছা
হুম এবার যদি দেরি কর তাইলে খবর
আছে কিন্তু
আচ্ছা ঠিক আছে লেইট করব না
নিশাত একটু না অনেক বেশিই
রাগী সামান্য
লেইট করলেই অনেক বকা আর সেই
সাথে অনেক শাস্তি ও দেয়
কি শাস্তি দেয় সেটা ত বলা যাবে না
তাই ১৪ই ফেব্রুয়ারিতে খুব সকালে ঘুম
থেকে উঠলাম এবং তারাতারি করে ৭
টায়
বাসা থেকে বের হলাম ।
অনেক যানযট অতিক্রম করে ৮ঃ৩০ টার
দিকে পার্কে পৌছালাম তারপর
একটা জায়গায় বসে নিশাতের জন্য
অপেক্ষা করতে লাগলাম । এরই
মধ্যে একটা ১৪-১৫ বছরের
ছেলে গোলাপ
বিক্রি করছে আর এটা আমার চোখে পরলো
ওহ তাড়াতারি করতে গিয়ে তো ফুলই
আনা হলো না
কিরে ফুল কত করে
ভাইজান ৩৫ টাকা পিস
অকে আমারে এই ফুলটা দে
না ভাইজান
এইটা দেওয়া জাইবো না প্লিজ
আপনি আরেকটা নেন
কেন ?
ভাইজান এইটা আমি আমার জন্য রাখছি
কিরে কাউকে ভালবাসিস নাকি
হ্যা ভাইজান আমি একজন রে অনেক
বেশী ভালোবাসি আমার চেয়ে ও
বেশী জানেন ভাইজান
আমারে না সে প্রতিদিন খাইয়ে দেয়
আমি যদি একটু অসুস্থ হই
তাইলে সে সারা রাইত আমার
পাশে বসে থাকে রাইত জেগে আমার
মাথায়
হাত বুলায়া দেয় সে একটু ও ঘুমায় না
তাই নাকি এত ভালবাসে তরে
হ্যা ভাইজান ।। ভাইজান দেখছেন
ওনারা কি করতেছে ? আমি ও
না গিয়ে তারে এই ভাবে চুমা দিব
তবে আমি দিব তার কপালে ।। ভাইজান
নিলে তারাতারি টাকা দেন আর
৫টা বাকি আছে বেইচা আমারে বাইত
যাইতে হইবো সে আমার লাইগা রাস্তায়
চাইয়া আছে ...
আচ্ছা দে সব গুলাই আমাকে দিয়ে দে এই
নে তরে ২০০ টাকা দিলাম
অকে ভাইজান
ফুল বিক্রি করে ছেলেটি চলে যাচ্ছে
সাখা ভাবতেছে কি বলল এসব ...
তাহলে তো একবার তার ভালবাসার
মানুষটা কে দেখে আসতে হয়
সাখা ছেলেটার পিছু নিল কিছুক্ষন পর
দেখলো ছেলেটা একটা হোটেলে ডুকে কিছু
কিনলো তার পর আবার
হাটতে লাগলো কিচ্ছুন
হাটার পর দেখলাম ছেলেটির জন্য
বস্তির
সামনের রাস্তায় একজন তার অপেক্ষায়
দাঁড়িয়ে আছে ছেলেটি তার কপালে চুমু
দিল
আর তাকে বস্তির ভিতর
নিয়ে গেলো আমি ও
ভিতরে গেলেম দেখলাম তার কপালে চুমু
দিচ্ছে আর ভিতরে যাচ্ছে তার
ভালবাসার
মানুষ তার বৃদ্ধ মা । ছেলেটি ঘরের
ভিতর
গিয়ে তার মায়ের হাতে ওই
সেরা ফুলটি দিলো আর দোকান
থেকে কিনে আনা বিরিয়ানির প্যকেট
টি তার মায়ের হাতে দিলো আর বলল
মা গো আমি তোমায় অনেক
ভালবাসি অতঃপর
তার মা তাকে খাইয়ে দিচ্ছে আর
সে তার
মা কে খাইয়ে দিচ্ছে ...
আমি নিস্তব্ধ হয়ে গেলাম আর আমার
হাতের
ফুল গুলোর দিকে তাকিয়ে ভাবলাম
প্রতিদিনই
তো লেইট করার জন্য নিশাতের
কাছে বকা শুনি আজ ও না হয় একটু শুনলাম
এই
বলে ...
আমার মায়ের কাছে ছোটে গেলেম আর এই
ফুল গুলো মাকে দিয়ে বললাম
মা গো তোমায়
অনেক ভালবাসি অনেক অনেক বেশি

* আমার জন্ম কি শুধুই ভূল ? *

আমার জন্ম কি শুধুই ভূল ?ভূল হলে তো আর কিছুই করার নেই ।কোন রকমে বেঁচে থাকলেই হলো ।বেঁচে থাকার দায়ে দু'দানা অন্ন না হয় নষ্ট হলো ।তাতে কি ?পৃথিবীতে আমি একজনের জন্য আর খাদ্যের ভাণ্ডারে অভাব পরে যাবে না ।এটা আমি ভালোই জানি ।শুধু জানি না আমার জন্মের
উদ্দেশ্য কি এই পৃথিবীর , এই ছোট্ট নগরীতে ।ভাবতে ভাবতে পার করে দিলাম দেড়যুগ ।ভাবনার মাঝে ছিলো আলস্যের ছড়াছড়ি ।না হয় আরো আগে পেয়ে যেতাম প্রশ্নের উত্তরটা । যাচ্ছে চলে আমার বেঁচে থাকা অবিরাম গতিবিহীন।
মা একদিন বলেছিলো , আমরা নারী জাতি ।আমাদের পৃথিবীতে প্রয়োজন কেন জানিস ?ভোগের জন্য ।

তখন ভাবতাম এ কেমন ভোগ ?গিলে খাওয়া ,চিবিয়ে খাওয়া ,চেঁটে খাওয়া ,নাকি গোঘ্রাসে খাওয়া ?এখন মনে হচ্ছে কিছুটা বুঝতে পারছি ।আবীর আমাকে ফোনে করে মাঝে মাঝে বলে ,সুপ্তি অনেক মিস্ করছি প্লিজ জান আসোনা দেখা করি । এই দেখা করাটা আগে আমি ঠিক ভাবতাম ,আমার প্রতি আবীরের ভালোবাসার ব্যাকুলতা ।

কিন্তু প্রথম দেখাতে বুঝে গেলাম এই দেখা করাটা আবীরের লিপ্সা ।আমাকে ভোগ করার লিপ্সা ।চোখ দিয়ে ভোগ ,মুখ দিয়ে ভোগ ,কথা দিয়ে ভোগ ,হাত দিয়ে ভোগ ,মন দিয়ে ভোগ ।এই ভোগটা নাকি ভালোবাসা ।বর্তমানে ভালোবাসা কি ভোগের পণ্য হয়ে গেলো ? এই ভোগ পণ্যের বাজারদর কেমন ?খুব চড়া নাকি একদম তরল ?ভালোবাসার রাজ্যে কি এখন বিশ্ব মন্দা বিদ্যামান ?আমি সুপ্তি তো এমন ভালোবাসা চাই না।

চাই না হতে ভোগের রাজ্যের পণ্য ।আমি চাই হৃদয় ছোঁয়া ভালোবাসা ।কেউ কি হৃদয় ছুঁতে চাই না ?সবাই কি শুধু ছুঁতে চায় এই শরীরটা ?এই শরীরটা কি সব
পুরুষের জন্য উনমুক্ত ?আমরা নারীরা কি পুরুষের শরীরটা দেখা মাত্র কুকুরের মতো জিভ বের করে লালা ফেলি ?এই সব কথা গুলো বেশ কয়েকটা দিন ধরে আমাকে জ্বালিয়ে মারছে । কাকে করি এতো গুলো প্রশ্ন ?কে দিবে আমার সব
প্রশ্নের উত্তর ?আচ্ছা এই সব কখা আমাকে ভোগ করতে চায় এমন একজন মানুষকে করলে কেমন হয ? মুঠোফোনটা হাতে নিয়ে আবীরকে ফোন দিলাম ।

হ্যালো আবীর ?
হ্যাঁ প্রিয়তমা বলো ।

আবীরকে সব কথা খুলে বললাম ।
আবীর বললো ,সুপ্তি তুমি কি সব প্রশ্নের উত্তর চাও ?
হ্যাঁ চাই ।
সুপ্তি যা বলেছো ,যা ভাবচ্ছো ,সবই তোমার ভূল ধারোনা । এই সব কিছু যদি ভোগ হয় তাহলে বিধাতা আমাদের সৃষ্টি করতেন না ।যদি সব কিছুই ভোগ হয় তাহলে আমরা হাজারটা ভোগ করছি প্রতিদিন ।মা কে ভোগ করছি ,বাবা কে ভোগ করছি ,ঘর থেকে বের হওয়ার পর সকল মানুষকে ভোগ করছি । এই ধরণীর মাটি ,বায়ু ,জল সব সব সব ভোগ করছি ।সব রকম ভোগ একনা ।সব রকম ভোগ লিপ্সা না ।তুমি যে ভাবে বলছো তাহলেতো তুমি তোমার জন্মদাতা পিতা ও গর্ভধারিণীর ভোগের ফল । সুপ্তি সকল কিছুই বিধাতার এক অসীম লীলা ।শুধু তা নয় সকল কিছুই আমাদের জীবন-যাপন ,প্রকৃতির জন্য হচ্ছে ।সুপ্তি আমাদের প্রথম দেখায় ,আমি যে তোমার হাত ধরেছি মনে আছে ?
হ্যাঁ মনে আছে আবীর ।

আমি জানি সুপ্তি ঐ ব্যাপারটাকেও ভোগ ভাবচ্ছো । ঐটা কিন্তু ভোগ ছিলনা ।শুধু ব্যাকুল ভালোবাসার স্পর্শ ছিলো তা ।সুপ্তি ভালোবাসা থেকেই আমাদের
দুজনের মন কাছাকাছি যেতে চাইবে ।তা কখনো ভোগ না ।সুপ্তি বুঝেছো ?
হ্যাঁ আবীর বুঝলাম ।সব বুঝলাম ।

তাহলে আমি এতোদিন ভূল বুঝলাম ,ভূল ভাবলাম ,ভূল জানলাম ।আবীর আমাকে ভূল বুঝো না ।

তোমার মতো করে কেউ আমাকে বোঝায় নি ।
মোটেই না । সুপ্তি তোমার ভূল ধারোণাটাই ছিল ভোগ ।. . . . . .

*তোমায় ভালোবেসে আর কত কাদবো*

~~~ সত্যি অনেক হৃদয়স্পর্শী ~~~
→→ একটি সত্য ঘটনা অবলম্বনে →→
আমার মার একটি চোখ ছিল । আমি তাকে দেখতেই পারতাম না । সব জায়গাতেই তার জন্য আমার লজ্জা পেতে হত । তার বিদঘুটে চেহারা দেখে সবাই আমাকে উপহাস করত ।
আমি সবসময়ই বলতাম যে তুমি মরতে পারনা ?? তোমার জন্য আর কত হাস্যকর পাত্রে পরিণত হব আমি ??
যাই হোক, এক সময় আমি উচ্চশিক্ষার জন্য বাহিরে পড়তে গেলাম । সেখানে সফল ভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়ে আমি বিয়ে করলাম । আমি আমার স্ত্রী আর ২ টি মেয়ে নিয়ে বেশ ভালই সুখে ছিলাম ।
একদিন মা আমার সাথে দেখা করার জন্য আসলেন । এত বছরের মধ্যে আমার বা আমার পরিবারের কারো সাথে মার দেখা হয় নাই । মা যখন দরজার সামনে দাঁড়ালেন, তখন আমার সন্তানেরা মা'কে দেখে হেসে ফেলল । আমি লজ্জায় তখন তাকে ধমক দিয়ে বললাম ,"কে আপনি ? এখানে কেন এসেছেন ? আপনার সাহস কত যে আপনি আমার সন্তানদের ভয় দেখাচ্ছেন ? "
মা বুঝতে পেরে বলল, ওহ ! দুঃখিত । আমি ভুল জায়গায় এসেছি ।
কিছুদিন পর আমি এক নিকট প্রতিবেশীর কাছে খবর পেলাম যে আমার মা মারা গেছে । আমার মাঝে তেমন কোন প্রতিক্রিয়া হলনা । আমি গেলাম আমাদের সেই পুরনো বাড়িতে ।
একজন প্রতিবেশী আমাকে একটি চিঠি দিয়ে বলল যে আমার মা আমার কাছে দিতে বলেছেন ।
আমি চিঠিটি পড়া শুরু করলাম । >>>>>
" আমার প্রানপ্রিয় পুত্র ,
আমি সবসময় তোমাকে নিয়েই ভাবি । আমি অতিশয় লজ্জিত যে আমি তোমার সন্তানদের ভয় দেখিয়েছিলাম ।
আমি খুবই দুঃখিত যে আমি সবসময়ই তোমাকে হাসির পাত্রে পরিণত করেছি ।
দেখ, আসলে তুমি ছোটবেলায় খুবই ভয়ংকর এক্সিডেন্ট করেছিলে, যার জন্য তোমার একটি চোখ নষ্ট হয়ে যায়। মা হিসেবে আমি তা মানতে পারিনি । তাই আমি তোমাকে আমার একটি চোখ দিয়ে দিই।
আমি মা হিসেবে খুবই আনন্দিত যে আমার ছেলে এই দুনিয়াকে প্রানভরে দেখছে ।
তোমাকে আমি অনেক ভালবাসি ।
তোমার মা ।"
আমার কিছুই বলার নেই। একটা কথাই বলবো, মা-বাবার প্রতি বিরূপ না হয়ে তাঁদের প্রতি ভালোবাসা দেখান। তাঁদের মনে কষ্ট দিয়েন না।                                                                                                                                                  

*শহীদের রক্তের দাগ যেভাবে মুছে গেল 'ভালোবাসা দিবসের' জোয়ারে *

কালের রথের চাকা অবিরত ঘুরছে। কালের যাত্রার ধ্বনি কেউ হয়তো শুনছে বা কারো সে দিকে ভ্রূক্ষেপ নেই। সময়ের

RAFIQ SIR

স্রোতে নতুন ইতিহাসের জন্ম হচ্ছে, কোন ইতিহাস নতুন দীপ্তিতে উজ্জ্বল হয়ে প্রেরণা দিচ্ছে, কোনটি মুছে যাচ্ছে, কিংবা মুছে ফেলা হচ্ছে। সময়ের আবর্তনে প্রত্যেকটা বছরের ফেব্রুয়ারি মাসটা বাঙালির কাছে অন্যরকম আবেদন নিয়ে হাজির হয়। এই একটা মাস এলেই সুপ্তিমগ্ন জাতি হঠাৎ খানিকটা সম্বিত প্রাপ্ত হয়ে ভাষা বিকৃতির জন্য কুম্ভীরাশ্রু বিসর্জন করে। সর্বোপরি ভাষা প্রতিযোগ, অনুযোগ, ভাষা প্রীতিজনিত আধিখ্যেতা, লেখক প্রকাশকদের বইমেলা উপলক্ষে তৎপরতা আর উদযাপনের বাগাড়ম্বতা বুঝিয়ে দেয় মাসটা ফেব্রুয়ারি। তারপর আবার বিগত দুই দশক যাবত সাড়ম্বরে ভ্যালেন্টাইন্স ডে উদযাপন ফেব্রুয়ারির ব্যাতিক্রমী মাত্রা       বাড়িয়ে দিয়েছে। দিবসখানা এলেই তরুণ-তরুণীর প্রেমের ফল্গুধারা দামিনী বেগে ধাবিত হয়, সদ্যোজাত শিশুও বোধ করি প্রচার যন্ত্রের কল্যাণে তারিখটা অন্তরে-মস্তিষ্কে প্রোথিত করে নেয়।  প্রয়াত বরেণ্য লেখক হুমায়ুন আজাদ বলেছিলেন ““বাঙালি আন্দোলন করে, সাধারণত ব্যর্থ হয়, কখনো কখনো সফল হয়; এবং সফল হওয়ার পর মনে থাকে না কেনো তারা আন্দোলন করেছিলো”।” উক্তিটির অবতারণার কারণ ১৪ই ফেব্রুয়ারি কিংবা ভালোবাসা দিবস সম্পর্কে লিখতে গিয়ে এর চেয়ে ভালো কোন উদ্ধৃতি দেয়া অসম্ভব। আত্মবিস্মৃত জাতির চেতনার মর্মমূলে অনেকেই বারে বারে আঘাত হেনেছেন, জানি না কতটুকু সফল হয়েছেন, সফল হলে বোধ করি আমাকে লিখতে হত না।  ইতিহাসের পাতা ওল্টাই।ফিরে যাই স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনের সেই অগ্নিঝরা দিনগুলোতে। বিনা রক্তপাতে সামরিক অভ্যুথানের মাধ্যমে ক্ষমতা গ্রহণকারী জেনারেল এরশাদের সামরিক স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে প্রথম প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল বাংলার সংশপ্তক ছাত্রসমাজ।মজিদ খান প্রণীত বৈষম্যমূলক ও বাণিজ্যিকীকরণের শিক্ষানীতি প্রত্যাখ্যান করে সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ ধর্মঘট ও মিছিলের ডাক দেয়। সেই মিছিলে এরশাদের পেটোয়া পুলিশ বাহিনী হামলা চালায়। বেয়নট দিয়ে খুচিয়ে হত্যা করে ছাত্রনেতা জয়নালকে, গুলিতে নিহত হয় কাঞ্চন, প্রাণ হারায় দীপালি সাহা নামে এক অবুঝ শিশুর। সেই দিন এরশাদ নিজের অজান্তে বারুদে আগুন দিয়েছিল, আর সেই বিদ্রোহের আগুন দাবানলের মত ছড়িয়ে পড়েছিল জাতির সমস্ত চেতনায়। জয়নাল-কাঞ্চনদের দেখানো পথে হেঁটেছিলেন নূর হোসেন,ডাঃ মিলন সহ নাম না জানা আরো অনেকে।আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় এরশাদ ক্ষমতাচ্যুত হয়, গণতন্ত্রের পতাকা শহীদের রক্তে স্নাত হয়ে আবার উড্ডীন হয়।  স্বাধীনতা পরবর্তী এই বৃহৎ আন্দোলন সংগ্রামের উদবোধন লগ্ন ছিল ফেব্রুয়ারি মাসের একটা তারিখ। ১৪ই ফেব্রুয়ারি।ছাত্রজনতার প্রথম প্রতিবা্দ, প্রথম বিক্ষোভে ফেটে পড়া, প্রথম আত্মদান, সামরিক বেষ্টনী থেকে গণতন্ত্রকে মুক্ত করার জন্য।কিন্তু হায়!বিশ্ববেহায়ার আরশ কাঁপানো সেই শহীদী আত্মদান ভ্যালেন্টাইন্স ডে”র আড়ালে চাপা পড়ে গেছে অনেকটা নিঃশব্দে।ধুর্ত শেয়াল এরশাদ অবৈধ ক্ষমতাকে জনগণের কাছে জায়েজ করার জন্য অনেক কুকর্ম করেছিলেন। যেমনি ভাবে ইসলামকে বানিয়েছিলেন রাষ্ট্রধর্ম। নিজের ললাট থেকে অমোচনীয় কলঙ্ক তিলক মুছে ফেলার জন্য সুযোগ খুঁজতে থাকা এরশাদের সাথে হাত মেলালেন বুদ্ধিজীবীর লেবাস ধারণকারী তারই মত আরো এক খচ্চর প্রজাতির অন্তর্ভুক্ত নপুংসক শফিক রেহমান।রেহমান সাহেব আমদানি করলেন বিশ্ব ভালোবাসা দিবস।প্রেমের জোয়ারে ভাসিয়ে দিলেন বাংলার নগর-বন্দর, গ্রাম-গঞ্জ।ধুয়ে দিলেন সংগ্রামমুখর জাতীয় ইতিহাস। উদ্ভট উট এরশাদ এক্ষেত্রে সাফল্য পেয়েছেন।জয়নাল-দীপালীর রক্তের দাগ মুছে ফেলেছেন জাতির স্নৃতি থেকে,শফিক রেহমানের হাত ধরে গঙ্গায় ডুব দিয়ে নিজের শ্রীচরিত্রকে আরো পরিশুদ্ধ করেছেন,উপস্থাপন করেছেন একজন সংস্কৃতিমনা হিসেবে।বঙ্গজননীর আঁচল জেনারেল এরশাদের বুটের আঘাতে শত ছিন্ন হলেও লুটপাটের প্রশ্নে, ক্ষমতার গদিতে আরোহণের স্বার্থে আমাদের হাসিনা ও খালেদা মা কিন্তু ওই খচ্চরটাকে পালাক্রমে নিজেদের আঁচলের তলায় আশ্রয় দিয়েছেন।শফিক রেহমান এরশাদকে দিয়েছে ঢাল , খালেদা জিয়া শিরস্ত্রাণ , হাসিনা দান করেছেন বর্ম ।আর আমরা আত্মবিস্মৃত ,নির্লিপ্ত, নিবীর্যের মত হুজুগের কৃষ্ণগহবরে অর্পণ করেছি সংগ্রামী ঐতিহ্য, শৌর্য ,বিবেক, চেতনা।  এই যে কথিত ভ্যালেন্টাইন্স ডে , কি এর ইতিহাস? আমি গরু খোঁজার মত করে যা পেলাম তা হচ্ছে সম্পুর্ণ গাজাখুঁড়ি মার্কা ,উদ্ভ্‌ট, ক্ষেত্রেবিশেষে বানোয়াট। একই দিবস অথচ ইতিহাস একাধিক তথ্য প্রদান করে যা স্রেফ ঠাকুরমার ঝুলির গল্পের মত।একটা ইতিহাস এরকম খ্রিস্টপূর্ব চতুর্থ শতাব্দীতে রোমে এক ধরনের উৎসবের প্রচলন হয়। এ উৎসবে তরুণীরা স্বেচ্ছাপ্রণোদিত হয়ে নাম লিখে বাক্সে জমা রাখত। এরপর রোমান যুবকেরা লটারির মাধ্যমে এক বছরের জন্য কোন তরুণীকে সংগী হিসেবে পেত।আবার বছর শেষে লটারি করা হত নতুন সঙ্গী নির্বাচনের জন্য। এ সংস্কৃতি প্রায় ৮০০ বছর ধরে চলেছিল। কিন্তু কোথায়ও উল্লেখ করা হয়নি সঙ্গী নির্বাচনের কাল ১৪ই ফেব্রুয়ারি।ক্যাথলিকদের মতবিরোধের কারণে এ ধারা পরিবর্তন করে নতুন ধারা পরিবর্তনের প্রয়োজন হয়। তখন রোমানরা ভ্যালেন্টাইনকে হাজির করে। এ ভদ্রলোক নাকি প্রেমের জন্য আত্মবিসর্জন দিয়েছেন ।তো তার আত্মত্যাগ কিরূপ? ২৭০ খ্রিস্টাব্দের রোম সম্রাট ক্লডিয়াস বিয়ের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেন।ভ্যালেন্টাইন মহাশয় মানুষকে প্রেমে উৎসাহিত করতেন। সম্রাটের রোষানলে পড়ে বেচারার মাথা যায়। প্রাপ্ত তথ্য মতে ভ্যালেন্টাইনের শিরচ্ছেদের তারিখ ২৪ ফেব্রুয়ারি ১৪ নয়।আবার বলা হয় ভ্যালেন্টাইন একজন সন্ত। সুদর্শন সন্ত ভ্যালেন্টাইনের রূপে মুগ্ধ রাণী ভ্যালেন্টাইনকে ভালোবেসে ফেলে।ভ্যালেন্টাইনের সাথে রাণীর পরকীয়া বিষয়টি আঁচ করতে পেরে ক্ষুদ্ধ রাজা অভাগা ভ্যালেন্টাইনের শিরচ্ছেদ করেন।  এ সব তথাকথিত ভালোবাসা দিবসের ইতিহাস যে কতটুকু বানোয়াট, সামঞ্জস্যহীন, পৌরণিক কাহিনী অনুকরণে কাট পেস্ট করে মেরে দেওয়া তা আর বলার প্রয়োজন নেই।আরো একটু স্পষ্ট করে বললে বলতে হয় কর্পোরেটদের নগ্ন বাণিজ্যের বেশ্যাবৃত্তির প্রকৃষ্ট উদাহরণ এই ভালোবাসা দিবস। হলমার্কের মত বৃহৎ গিফট প্রতিষ্ঠানগুলো যখন  পণ্য বিক্রয়ার্থে কাল্পনিক দিবস সৃষ্টি করে প্রচার যন্ত্র মারফত সমগ্র বিশ্বের তরুণ-তরুণীকে প্রেমের নামে স্থূল , উদযাপন সর্বস্বতার ঘোরটোপে বন্দী করে ফেলতে পারে তখন খানিকটা হলেও কর্পোরেটদের অপরিমেয় শক্তি সন্মন্ধে আঁচ করা যায়।  পুঁজিবাদী সমাজের পণ্যায়নের অখন্ড বৃত্তের কেন্দ্রে ঘুরপাক খাচ্ছে আমাদের প্রেম, ভালোবাসা, মনুষ্যত্ব।বিশ্বায়নের নামে সংহার করে চলেছে অনুন্নত দেশের সংস্কৃতি।পয়দা করছে , আমদানি করছে এক উদ্ভট , বিকৃত ও ভোগবাদ সর্বস্ব জীবনাচারণ। প্রেম মানুষের সবচেয়ে সুকুমার ভাবাবেগ, উচ্চতর হৃদয়বৃত্তির বিকাশ যার বৈচিত্র্যময় শৈ্ল্পিক  আত্মপ্রকাশ , বিকাশ ঘটে ষোড়শ শতকে বুর্জোয়া বিপ্লবের অব্যবহিত সময়গুলোতে। শেক্সপীয়রের অমর নাটক রোমিও-জুলিয়েটের ট্র্যাজিক পরিণতির মধ্যে ছিল সামন্তীয় সমাজ ভাঙ্গার আর্তনাদ, ছিল প্রতিবাদ সেই সমাজের বিরুদ্ধে যা মানুষের মানবিক বিকাশ রুদ্ধ করে দেয়।সাম্য , মৈত্রী, স্বাধীনতার বাণী ধারণকারী বুর্জোয়া বিপ্লব মানুষের মুক্তির বারতা নিয়ে আবির্ভুত হয়েছিল। ঘটিয়েছিল মানুষের অনুভূতির নান্দনিক বিকাশ শিল্পে , সাহিত্যে , কাব্যে, সংগীতে, ভাস্কর্যে, চিত্রকলায়। কিন্তু ইতিহাসের আমোঘ নিয়মে সেই প্রগতিশীল সমাজ আজ অশ্লীল বেনিয়াবাদ তথা মুনাফাবৃত্তির জন্য সংহার করে চলেছে মানুষের প্রেম, মনুষ্যত্ব , চেতনা। কর্পোরেটওয়ালারা পণ্যের ক্ষণস্থায়িত্বের সাথে আমাদের মানবিক আবেগগুলো সঙ্গতিপুর্ণ করে ফেলেছে। স্থূল, দৈহিক কামনা তাড়িত, বর্তমান ভালোবাসায় নেই প্রকৃত সুকুমারবোধের নির্যাস।ভালোবাসা স্থানান্তরিত হয়েছে ফাস্টফুডের দোকানে , গিফটের প্যাকেটের ভেতর আর মোবাইল ফোন কোম্পানির হাতের মুঠোয়।আর তাই আজকের প্রেম ভালোবাসা উদযাপন সর্বস্ব, ক্ষণস্থায়ী, অনেকটা কর্পোরেটদের বানানো ভালোবাসা দিবসের কাহিনীর মত ঠিক যেভাবে রোমান তরুণ-তরুণীরা প্রত্যেক বছর সঙ্গী পরিবর্তন করত লটারির মাধ্যমে।অবাক হওয়ার কিছুই নেই যখন দেখা যায় বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া কোন অখ্যাত তরুণের কণ্ঠে ভেসে আসে”চলে গেছ তাতে কি /নতুন একটা পেয়েছি তোমার চেয়ে অনেক সুন্দরী...।আমাদের অনুভূতি ভোতা হয়ে গেছে কারণ রবীন্দ্রনাথের প্রেমের গান কিংবা জীবনান্দের কবিতা আজকাল্ আধুনিক প্রেমের হাটে বিকোয় না, তরুণদের ভালোবাসা জাগ্রত করে না, প্রবল উন্নাসিকতা থেকে একটিই আওয়াজ বের হয় ”উফ শিট ম্যান ,রবি ট্যাগর এ ব্যাকডেটেড গাই, জাস্ট ঘুম আনে আর কিচ্ছুই না”।  আজকাল পত্রিকাওয়ালা কিংবা টেলিভিশন মিডিয়া সোৎসাহে প্রেমের কনসাল্টেন্সি প্রদান করে, কাকে বেছে নেওয়া যায়, কিভাবে পটানো যায়, কিভাবে সতর্ক থাকা যায় প্রতারণার হাত থেকে।  ১৪ই ফেব্রুয়ারি দিনটিতে টেলিভিশন চ্যানেল গুলো চেঁচিয়ে মরবে আর পত্রিকাওয়ালাদের কলম ভাংবে ভালোবাসার জয়গান গাইতে গাইতে লিখতে লিখতে। কিন্তু এরা কেউ একবারো বলবে না আজ স্বৈরাচার প্রতিরোধ দিবস, জয়নাল দীপালির রক্তে স্নাত, সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে শাণিত চেতনাবোধের প্রথম উজ্জীবন লগ্ন।বলতে দ্বিধা নেই আমাদের সংগ্রামী চেতনা ক্রমঅপসৃয়মান,জাগ্রত হওয়ার কোন স্পৃহা আমাদের মধ্যে কাজ করে না । জাগার কোন সুযোগ আছে কি ?কারণ জাগরণের গানে পৃষ্টপোষকতা করে কর্পোরেটরা যার সতীর সতীত্ব বেশ্যার সুখ দুইই চায়।  চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে করে ,ক্ষয়িষ্ণু পুঁজিবাদ উৎসারিত বিকৃত ,উদযাপন স্বর্বস্ব সংস্কৃতির নোংরা স্রোতে সংগ্রামী চেতনাকে নিমজ্জনের হাত থেকে কেউ কি রক্ষা করবে না?সেই স্রোতের বিপরীতে দাঁড়িয়ে কেউ কি স্লোগান মুখর ঝাঁঝালো মিছিলে উচ্চারণ করবে না, “১৪ই ফেব্রুয়ারি দিচ্ছে ডাক, স্বৈরাচার নিপাত যাক” ।তবে কি কর্পোরেট সংস্কৃতির কাছে নতজানু , ম্রিয়মান হয়ে পড়বে আমাদের অনিরুদ্ধ সংগ্রামী তেজ, শৌর্য?  কিন্তু এখনো হতাশ হই নি কিংবা হতাশ হতে চাই না ।জানি, বিশ্বাস করি এ কথা মিথ্যা হতে পারে না যে ইতিহাস কথা কয়। ইতিহাস প্রেরণা নিয়ে হাজির হয়।ভুলিয়ে দেওয়ার , ভুলে যাওয়ার কোন অবকাশ নেই যখন দেখি সেনা সমর্থিত তত্বাবধায়ক সরকারের বিরুদ্ধে ছাত্র জনতার বিক্ষোভ ফুঁসে ওঠে, শত  দমন পীড়নের পরও নির্ভীক অপরাজেয় বাংলার ছাত্র সমাজ পর্বতের মত অবিচল থাকে তখন জয়নাল-মিলন-নূর হোসেন আবারো নজরুলের সেই দুরন্ত পথিকের মত হাজির হয়। জয়নালের উদ্দেশ্যে আমাদের তখন বলতে হয়-  ‘‘সহস্র প্রাণের উদ্বোধনই তো তোমার মরণের স্বার্থকতা’’  তিউনিসিয়া থেকে মিশর,জর্ডান থেকে আলজেরিয়া যেখানেই সামরিক স্বৈরশাসন সেখানেই মৃত্যুঞ্জয়ী জয়নাল-বারুজিজদের আত্মা ঘুরে বেড়ায়। আর পালিয়ে বাঁচতে হয় এরশাদ, বেন আলী, হোসনে মোবারকদের। যুগে যুগে অনিবার, শতবার...

*ভালোবাসা দিবসের কয়েকটি মজার তথ্য*


ঋতুরাজ বসন্তের আগমনী ধ্বনির পর দিনই ভালোবাসা দিবসে (ভ্যালেনটাইনস ডে) বিশ্বব্যাপী তরুণ-তরুণীরা মেতে ওঠে ভালোবাসার চিরন্তন বানী নিয়ে। এক জন অপর জনকে বলে ওঠে, আমি ওকে অনেক ভালোবাসি, ও যেন কখনো আমাকে ভুল না বোঝে।’ ভালোবাসা দিবসে প্রিয় মানুষটির উদ্দেশে এ কথা বলেন তরুণ-তরুণীরা। অপর জনও বলে ‘সব সময় যেন আমি আমার চেয়ে ওকেই বেশি ভালোবাসি।’ 
 
ইদানিংকালে বাংলাদেশের তরুণ-তরুণীরাও ভালোবাসা দিবসে ভালোবাসার মানুষকে নিয়ে ঘুরে বেড়ায়, নিজেদের পছন্দমত জিনিসপত্র কেনাকাটা করে থাকে। পরিবার-পরিজনের বিষয়টি মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে ভালোবাসায় ভরিয়ে দিতে চায় একে অপরের হৃদয়-মন-প্রাণ। দুই জনের পরিবার তাদের এই সম্পর্ককে ভালোভাবে মেনে নিক বা না নিক, তারা একে অপরকে ভালোবাসে। প্রতি বছর ১৪ ফেব্রুয়ারি ভ্যালেনটাইনস ডে বা বিশ্ব ভালোবাসা দিবসটি বিশ্বের সকল মানুষের কাছে ভালোবাসার চিরন্তন বাণী নিয়ে হাজির হয়। দিনটিকে ঘিরে চলে উৎসব-আনন্দ আর অনুষ্ঠানের নানা আয়োজনে। কিন্তু এই ভালোবাসা দিবসটির পটভূমি কি সে কথা বেশির ভাগ প্রেমিক-প্রেমিকা জানেন না। তাদের উদ্দেশ্যে ডিজিটাল জার্নাল অনলাইন থেকে দেয়া হলো এ দিবসের কয়েকটি মজার তথ্য।
 
প্রাচীন রোমের খ্রিস্টান সাধু সেন্ট ভালেন্টিনাস’র নামে উদ্্যাপিত হচ্ছে ভ্যালেনটাইনস ডে’র। তিনি ব্যক্তিগত জীবনে খুব একটা আমুদে প্রকৃতির লোক ছিলেন না। এখন পর্যন্ত নিশ্চিত তথ্য পাওয়া যায়নি যে খ্রিস্টান সাধু রোমের ভ্যালেনটাইন ছিলেন, নাকি টার্নি শহরের ভ্যালেনটাইন ছিলেন। এমনকি তার প্রেম দীর্ঘস্থায়ী ছিল না কি ক্ষণস্থায়ী ছিলো, এ ব্যাপারে বেশি কিছু জানা যায়নি। শুধুমাত্র জানা গেছে, যখন রোমানরা তার শিরচ্ছেদ করেছিলেন তার আগে তিনি প্রিয়তমাকে একটি চিঠি লিখেছিলেন। ঐ চিঠির শেষে তিনি ‘তোমার ভ্যালেনটাইন’ লিখেছিলেন। 
 
এক ব্রিটিশ প্রকাশক ১৭৯৭ সালে তরুণ প্রেমিকদের জন্য একগুচ্ছ আবেগ মাখানো পদ্য প্রকাশ করেছিলেন। যে সব তরুণরা নিজের আবেগ পদ্যের মাধমে প্রকাশ করতে পারেন না সেসব তরুণদের সহায়তার উদ্দেশ্যেই এটি প্রকাশ করেছিলেন। এরই ধারাবাহিকতায় বিশ্ব ভালোবাসা দিবসে গ্রেটিংস কার্ড বিনিময়ের চল শুরু হয়েছিলো বলে ধারণা করা হয়।
 
ভালোবাসা দিবসে হৃদয় আকৃতির যে প্রতীক ব্যবহার করা হয়, তার ধারণা এসেছে সিলফিয়াম নামের এক ধরণের ঔষধি গাছের বীজ থেকে। মজার ব্যাপার হলো, বহুকাল আগে ধর্মীয়ভাবে আঁকা বিভিন্ন চিত্রপটে পাইনগাছের মোচার আকৃতিকে হূদয়াকৃতির সাথে তুলনা করা হতো।
যুক্তরাষ্ট্রের শুভেচ্ছাকার্ড এ্যাসোসিয়েশনের দেয়া তথ্য মতে, যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি বছর ভ্যালেনটাইনস ডেতে ১৯ কোটির মত প্রেমিক-প্রেমিকারা ভালোবাসার শুভেচ্ছা কার্ড পেয়ে থাকেন। ফ্রান্সের প্রত্যেক ব্যক্তিকে তিনটি করে কার্ড পাঠালে এ সংখ্যার সমান হবে। 
 
এত কোটি কোটি কার্ড, ভালোবাসা দিবসের এত শুভেচ্ছাবাণী আদান-প্রদান করা হয় এর শুরুটা হয়েছিলো ফ্রান্সের ডিউক ওরফে চার্লস নামের এক সৈনিকের কাছ থেকে। ভালোবাসা দিবসের প্রথম চিরকুটটি পাঠিয়েছিলেন ফ্রান্সের ওরলিঁও শহরের ডিউক নামের এই সৈনিক, তার ডাক নাম ছিল চার্লস। ১৪১৫ সালের যুদ্ধে পরাজয়ের পর তাকে টাওয়ার অব লন্ডনে কারাবন্দী করে রাখা হয়েছিল। তিনিই প্রথম ভালোবাসা দিবসে তার প্রিয়তমাকে একটি চিরকুট পাঠিয়েছিলেন।
 
অপরদিকে, ১৯২৮ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি বা ভ্যালেনটাইনস দিবসে সিফিলিস রোগের প্রচলিত চিকিৎসা পদ্ধতি আবিষ্কার হয়েছিল।
 
২০১০ সালের ভ্যালেনটাইনস দিবসে বিশ্বব্যাপী মোট এক কোটি ৫০ লাখ ই-ভ্যালেনটাইনস কার্ড বিনিময় হয়েছিলো। কাগজের কার্ডের পাশাপাশি বর্তমান ডিজিটাল যুগে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে ই-কার্ড, যা ইন্টারনেটের মাধ্যমে পাঠানো হয়।
 
ভালোবাসা দিবসের উপহার হিসেবে ২০ শতকের মাঝামাঝি সময় থেকে কার্ড, গোলাপ ফুল, লাল সাটিন কাপড়ে মোড়ানো চকলেট, হৃদয় আকৃতির বাক্সসহ নানা ধরণের বিনিময়ের চল শুরু হয়। ১৯৮০ সাল থেকে নতুন মাত্রা যুক্ত করতে হীরাশিল্পের সাথে জড়িত ব্যক্তিরা এই দিনটিতে প্রিয়জনকে হীরার তৈরি অলঙ্কার উপহার দেয়ার বিষয়ে মানুষকে উৎসাহিত করতে শুরু করেন।
 
২০১৪ সালের ভ্যালেনটাইনস ডে উপলক্ষে যুক্তরাষ্ট্রের ম্যানহাটনের একটি রেস্তোঁরা ক্রেতাদের অভিনব কায়দায় এক ডিনারের প্যাকেজ অফার করেছে। অফারটির নাম রাখা হয়েছে, ‘জীবনে একবারই ৩০ হাজার ডলারের ভ্যালেনটাইনস দিবসের ডিনার’। এই প্যাকেজের মধ্যে নানা ধরণের খাবারের সাথে রাখা হয়েছে এক আউন্স পরিমাণ বিশেষ ধরণের মাছের ডিম, চকলেটের লাভা কেক, শেল্টার দ্বীপের অজস্র ঝিনুক ও ২৪-ক্যারেট সোনার পাতা।

*পৃথিবীতে প্রেম বলে কিছু নেই? (ভালোবাসা দিবস স্মরণে)*

মেয়েটার সঙ্গে পরিচয় হলো মিসকল দিতে গিয়ে মোবাইল ফোনে।


পলাশ ব্যাপারটি জানালো তার ঘনিষ্ঠ বন্ধুকে কানে কানে।
মাথায় হাত দিয়ে বন্ধু করল ওয়াদা
জান যাবে তবু এই খবর কাউকে জানাব না- দাদা।

প্রতিশ্রুতির আদান-প্রদানের ঘন্টা খানেক পর
পলাশের ফোন বাজে, রুমমেটরা বলে, ওই ধর ধর...
মোবাইল রিসিভ করে পলাশ, আর করে চিন্তা
আহ-হা, সদ্য পরিচিত মেয়েটার সঙ্গে কেমন হবে
প্রথম দেখার দিনটা।

মেয়েটারই ফোন, আচ্ছা আপনি ভালোবাসেন কোন রং
প্রশ্ন তো নয় যেন বিলাতি কায়দায় করে যাচ্ছে ঢং।
পলাশ কী উত্তর দেবে, ইয়ে ভালোবাসি...ইয়ে মানে আমি
বাকপটু বলে খ্যাত পলাশের শুরু হয় তোতলামি।

প্রতিশ্রুতির আদান-প্রদানের ঘন্টা তিনেক পর
পলাশের ফোন বাজে, বন্ধুরা ঘিরে ধরে, সে বলে ওই তোরা সর...
'কি করছেন আপনি? বলো না একটু বলো না'
মেয়েটার কথা শুনে পলাশের বুক
ভীষণ তরপায়, সবাই শুনে করছে ধুকধুক
বন্ধুরা বলে, যাহ শালা এবারও হলো না।

প্রতিশ্রুতির আদান-প্রদানের ঘন্টা দশেক পর
পলাশের ফোন বাজে, কথা বলতে গিয়ে কণ্ঠ করে ঘড়ঘড়...
ও প্রান্তে জিজ্ঞেস করে, আচ্ছা আপনি প্রেম করেন?
কিংবা ঘরে বউ-টউ আছে নাকি?
উত্তর দিবে কি, প্রশ্ন শুনে পলাশের অজ্ঞান হওয়া বাকি।

প্রতিশ্রুতির আদান-প্রদানের ঘন্টা চব্বিশেক পর
পলাশের ফোন বাজে, দরজা বন্ধ করে, আবহময় করে ফেলে ঘর...
'আমি কি কাল আপনার সঙ্গে, পিজা হাটে দেখা করতে পারি?'
একি শোনালে তুমি, হায় মরি মরি...

উত্তর কি দেবে, ভেবে ভেবে অস্থিরতায় জীবন্ত লাশ হয়ে যায় পলাশ
তাই...
প্রিয় পাঠক, পলাশ এখন কি করবে আপনাদের কাছে জানতে চাই।

*ভালোবাসা দিবসে প্রপোজে এগিয়ে নারীরা!*

Propose-Day
১৪ ফেব্রুয়ারিকে ভ্যালেন্টাইন’স ডে বা ‘ভালোবাসা দিবস’ হিসেবে উদযাপন বাংলাদেশে খুব বেশি দিন শুরু হয়নি। বাংলাদেশের পুরুষরা বেশিরভাগ সময়ই নারীকে প্রপোজ করে থাকে। কারণ আমাদের নারীরা অনেকটাই অন্তর্মুখী। এদিকে সম্প্রতি ব্রিটেনের এক জরিপে দেখা গেছে, সেদেশে ‘ভালোবাসা দিবসে’ প্রপোজে পুরুষদের চেয়ে নারীরাই এগিয়ে।
লন্ডনের হাই স্ট্রিট জিওয়েলার এইচ স্যামুয়েলের ওই গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতি ১০ জন নারীর মধ্যে ৬ জনই তাদের পছন্দের পুরুষকে প্রেম নিবেদনের জন্য ১৪ ফেব্রুয়ারি ‘ভালোবাসা দিবস’কেই বেছে নেন। এক্ষেত্রে পুরুষদের হার ১০ জনে ৪ জন
জি নিউজ ও মেইল অনলাইন জানিয়েছে, ভালোবাসা দিবসে রোমান্টিক পরিবেশ আর খাবার খেতে খেতে কাউকে প্রেম নিবেদন করাটা অত্যন্ত রোমঞ্চকর ব্রিটিশ নারীদের কাছে। তবে পুরুষরা মনে করেন, এই দিনে বিয়ের প্রস্তাবে সবচেয়ে বেশি সাড়া পাওয়া যায়।
গবেষণায় দেখা গেছে, ব্রিটিশরা প্রতিদিনের মেলামেশা, ছুটি কাটানোর স্থানকে প্রেম নিবেদনের জন্য বেছে নেন। এজন্য অফিসকে পছন্দ করে না কেউই।
এইচ স্যামুয়েলের একজন মুখপাত্র জানান, প্রতিটি যুগল প্রেম নিবেদনের জন্য আলাদা করে ভাবেন। ১ হাজার জনের ওপর সমীক্ষা চালিয়ে একটি নতুন ট্রেন্ড খুঁজে পেয়েছেন তারা। যেখানে দেখা গেছে, অধিকাংশ ক্ষেত্রে নারীরাই প্রেম নিবেদনে এগিয়ে।
তিনি জানান, প্রেম নিবেদনে ব্রিটেনের একুশ শতকের যুগলদের পুরনো দিনের ধ্যান-ধারণা আর পছন্দ নয়। মেয়েদের সামনে ছেলেদের হাটু গেড়ে গোলাপ হাতে প্রেম নিবেদনের দিন আর নেই। বরং এই ভূমিকায় এখন নারীরাই এগিয়ে।
এই ট্রেন্ড আরও জনপ্রিয় হয়ে উঠছে বলেও জানান তিনি।

*সেন্ট ভ্যালেন্টাইন: ভালোবাসা দিবস’র জনক *

ভালোবাসা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না, শুধুমাত্র অনুভূতি দিয়ে প্রকাশ করতে হয়। এটি একটি মানবিক অনুভূতি ও আবেগকেন্দ্রিক অভিজ্ঞতা। এর রং-রূপ-গন্ধ কিছুই নেই আছে শুধু অনুভূতি। বিশেষ কোন মানুষের জন্য ভালোবাসা স্নেহের শক্তিশালী বহিঃপ্রকাশ। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হয়তো এমন মুহূর্তকেই স্মরণ করে লিখেছিলেন, ‘দোহাই তোদের, এতটুকু চুপ কর/ভালোবাসিবারে, দে মোরে অবসর।’ জীবজগতের মধ্যে আন্তঃসম্পর্ক হল ভালোবাসা। যার শক্তিতে পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত জয় করা যায়। পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি উচ্চরিত শব্দগুলোর মধ্যে একটি হলো ‘ভালোবাসা’। একে বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে একে ভাগ করা যায়। যেমন: ধর্মীয় ভালোবাসা, বন্ধুদের প্রতি ভালোবাসা প্রভৃতি। পৃথিবীর প্রত্যেকটি প্রাণীর মধ্যে ভালোবাসা বিদ্যমান। ভালোবাসায় যৌনকামনা বা শারীরিক লিপ্সা একটা গৌণ বিষয়। এখানে মানবিক আবেগটাই বেশি গুরুত্ব বহন করে। আরো সঠিকভাবে বলতে গেলে কোনো ব্যক্তি বা বস্তুর প্রতি অতিরিক্ত স্নেহ প্রায় সময়ই খুব আনন্দদায়ক হতে পারে এমনকি কোন কাজ বা খাদ্যের প্রতিও। আর এই অতি আনন্দদায়ক অনুভূতিই হলো ভালোবাসা। ভালোবাসা শুধুই প্রেমিক আর প্রেমিকার জন্য নয়। মা-বাবা, স্বামী-স্ত্রী, ভাইবোন, প্রিয় সন্তান, পরিবার, সমাজ এমনকি দেশের জন্যও ভালোবাসা। তবে আবেগধর্মী ভালোবাসা সাধারণত গভীর হয়, বিশেষ কারো সাথে নিজের সকল অনুভূতি ভাগ করা, এমনকি শরীরের ব্যাপারটাও এই ভালোবাসা থেকে পৃথক করা যায় না। সেন্ট ভ্যালেন্টাইন স ডে বা বিশ্ব ভালোবাসা দিবস (সংক্ষেপে ভ্যালেন্টাইন’স ডে নামে পরিচিত) একটি বার্ষিক উৎসবের দিন যা ১৪ ফেব্রুয়ারি; প্রেম ও অনুরাগের মধ্যে উদযাপিত করা হয়। দিবসটিকে ঘিরে বিশ্বব্যাপি রয়েছে নানা আয়োজন। এ দিনে প্রিয়জন তার ভালোবাসার মানুষকে ফুল, চিঠি, কার্ড, গহনা প্রভৃতি উপহার প্রদান করার মাধ্যমে দিনটি উদ্ যাপন করে থাকে।   খ্রিস্টানজগতে পাদ্রী-সাধু-সন্তদের কাজের স্মরণে কিছু জনপ্রিয় দিবস রয়েছে। যেমন: ১৭ মার্চ- সেন্ট প যাট্রিক ডে, ২৩ এপ্রিল- সেন্ট জজ ডে, ২৪ আগস্ট- সেন্ট বার্থোলোমিজম ডে, ১ নভেম্বর- আল সেইন্টম ডে, ১১ নভেম্বর- সেন্ট মার্টিন ডে, ৩০ নভেম্বর- সেন্ট এন্ড্রু ডে প্রভৃতি। পরবর্তীতে খ্রিস্টিয় এই ভ্যালেন্টাইন দিবসের চেতনা বিনষ্ট হওয়ায় ১৭৭৬ সালে ফ্রান্স সরকার কর্তৃক ভ্যালেইটাইন উৎসব নিষিদ্ধ হয়। এক সময় ইংল্যান্ডে ক্ষমতাসীন পিউরিটানরাও প্রশাসনিকভাবে এ দিবস উদযাপন করা থেকে বিরত থাকার জন্যে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। এছাড়া হাঙ্গেরি, অস্ট্রিয়া ও জার্মানিতে বিভিন্ন সময় এ দিবস নিয়ে বির্তক সৃষ্টি হয়।   দেশে দেশে ভালোবাসা দিবস এ উৎসব বর্তমানে সারাবিশ্বে মহাসমারোহে উদযাপন করা হয়। ইউরোপের সব দেশেই এ দিবস পালন করা হয়ে থাকে। মার্কিনিদের মধ্যে ভ্যালেন্টাইন ডে পালনের হার বেশি। জরিপে দেখা গেছে, চার মার্কিনির মধ্যে তিনজনই দিবসটি পালন করে। আমেরিকায় এ দিনে ১৬ কোটি কার্ড, ১৩ কোটি গোলাপ বিনিময় হয়। যুক্তরাজ্যে আনুমানিক মোট জনসংখ্যার অর্ধেক প্রায় ১০০ কোটি পাউন্ড ব্যয় করে এই দিবসের জন্য কার্ড, ফুল, চকোলেট এবং অন্যান্য উপহারসামগ্রী ও শুভেচ্ছা কার্ড ক্রয় করে; এছাড়া প্রায় ২.৫ কোটি শুভেচ্ছা কার্ড আদান-প্রদান করা হয়। উনিশ শতকেই উত্তর আমেরিকায় ভ্যালেন্টাইন’স ডে পালন শুরু হয় ব্রিটিশ অভিবাসীদের মাধ্যমে। ব্যাপক হারে ভ্যালেন্টাইন কার্ড বিনিময় শুরু ১৮৪৭ সালে ম্যাসাসুয়েটসের অরকেস্টারে। চীনে ভালোবাসা প্রকাশের সমৃদ্ধ ইতিহাস রয়েছে। ভ্যালেন্টাইন ডে পালনের আগে তারা বছরের দুই দিন পালন করতো ভালোবাসা দিবস। এখন চীনে ব্যাপক হারে দিবসটি পালিত হয়। পশ্চিমা ধাঁচে ১৪ ফেব্রুয়ারিই তারা ভালোবাসা দিবস পালন করে। ভারতেও তরুণ-তরুণীরা এ দিবস পালন করে উৎসবের আমেজে। আমাদের দেশে বছরের অন্যান্য অসংখ্য দিবসের মত বিশ্ব ভালোবাসা দিবস বা ভ্যালেন্টাইন’স ডে পালন হচ্ছে বিগত কয়েক বছর ধরে। ইন্টারনেটের এই যুগে পোস্ট কার্ডের পরিবর্তে ই-কার্ডের ব্যবহার আর এসএমএস/এমএসএস বা ই-মেইল। ভালোবাসা দিবসকে সামনে রেখে বিভিন্ন ওয়েব সাইট ভালবেসে ভালোভাবে সাজানো হয়। এসব সাইট থেকে যেমন ই-কার্ড পাঠানো যায় তেমনি ভালোবাসার এসএমএস, কবিতা ইত্যাদি সংগ্রহ করা যায়। ১৪ ফেব্রুয়ারি সারা দিন মুঠোফোন, ফেইসবুক ও টুইটারে শুভেচ্ছা বিনিময় চলবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা, চারুকলা, রবীন্দ্রসরোবর, সংসদ ভবন চত্বর, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, রমনা বটমূল, চন্দ্রিমা উদ্যান মুখর থাকবে সারা দিন। আশা করি সবারই ভালোবাসা দিবস কাটবে আনন্দ-উচ্ছ্বাস আর অফুরন্ত ভালোবাসায় ।

*ভালোবাসা এবং ভালো বাসার মধ্যে পার্থক্য *

ভাষাগত সমস্যার কারণে ইদানীং ভালোবাসা এবং ভালো বাসার মধ্যে যে সমস্যা পরিলক্ষিত হচ্ছে, তারই পার্থক্যমূলক একটি ছক নিচে উল্লেখ করেছি। বর্তমানে যাদের মধ্যে নব ভালোবাসার উদ্ভব হয়েছে এবং পুরনো ভালোবাসা অন্তরে নিহিত আছে, তাদের জন্য এই ছক কতটা কার্যকর ভেবে দেখুন। যারা নতুন বাড়ি বা বাসা বানাচ্ছেন অথবা পুরনো মালিক, তাদের জন্য কতটুকু প্রযোজ্য, সময় নিয়ে ভাবুন। ফেব্রুয়ারি মাসের ১৪ তারিখ ভালোবাসা দিবস। ভালোবাসার এই মাসে কিঞ্চিৎ যাচাই-বাছাই করে নিই কোনটা সত্যি! মনের ভালোবাসা, নাকি থাকার ভালো বাসা! ভালোবাসা ভালো বাসা মনে মনে মিল হলে দ্রুত ভালোবাসা হয়ে যায়। অনেক খুঁজেও মনমতো ভালো বাসা পাওয়া যায় না। যদিওবা পাওয়া যায় ভাড়া বেশি। ভালোবাসা করতে সুন্দর চেহারা এবং ভালো মনের মানুষ লাগে। ভালো বাসা বানাতে অনেক টাকা লাগে। ভালোবাসা হলে প্রেয়সীকে নিয়ে ঘুরতে হয় এবং মাঝেমধ্যে চাইনিজও খাওয়াতে হয়। ভালো বাসার মালিক হলে সরকারকে ট্যাক্স দিতে হয়। ভালোবাসা হলে ভালোবাসার মানুষের কথামতো চলতে হয়। না চললে সম্পর্কের অবনতি হয়। ভালো বাসা ভাড়া দিলে ভাড়াটিয়া এবং মালিকের মধ্যে নানা বিষয়ে ঝগড়া-বিবাদ হয়। ভালোবাসা ভালো লাগে যদি ভালোবাসার মানুষের ব্যবহার, আচার-আচরণ ভালো হয়। ভালো বাসা সুন্দর লাগে যদি নির্মাণে মোজাইক, টাইলস এবং আধুনিক ফিটিংস ব্যবহার করা হয়। ভালোবাসা করতে বিভিন্ন উপাদান লাগে। যেমন_ মানুষ, সৌন্দর্য, মন এবং অর্থ। ভালো বাসা বানাতে বিভিন্ন উপাদান লাগে। যেমন_ উন্নতমানের ইট, বালু, সিমেন্ট এবং রড। ভালোবাসায় অর্থ খরচ, মিথ্যে বলা এবং সময়ের অপচয় হয়। ভালো বাসায় দরজা, জানালা এবং ছাদ থাকে। ভালোবাসা শান্তি দূর করে। অশান্তি বিরাজ করে। ভালো বাসায় শান্তিতে এবং নিশ্চিন্তে ঘুমানো যায়। ভালোবাসা মনের ব্যাপার। ভালো বাসা আবাসনের সু-ব্যবস্থা করে।

*ভালোবাসা বিষয়ক কিছু বাণী *



* ভালবাসা একটি সাময়িক সমাধি - প্লেটো * প্রেমের আনন্দ থাকে শুধু সল্পক্ষন প্রমের ব্যাদনা থাকে সমস্ত জীবন - রবীন্দ্রনাথ * ভালবাসার জন্য যার পতন হয়, বিধাতার কাছে সে আকাশের উজ্জল তারার মত উজ্জল । - বেন জনসন * ভালবাসার অর্থ হলো যাকে তুমি ভালবাসো তার মত জীবন যাপন করা । - টলস্টয় * নারীর প্রেমে মিলনের সুর বাজে , আর পুরুষের প্রেমে বিচ্ছেদের বেদনা । - রবীন্দ্রনাথ * যৌবনে যার জীবনে প্রেম এলোনা তার জীবন বৃথা । - শংকর * প্রেম হল সিগারেটের মতো , যার আরাম্ভ হল অগ্নি দিয়ে আর শেষ পরিনতি ছাইয়েতে । - বার্নার্ডশ * প্রেম ও হাসির মধ্য দিয়ে বাচতে হবে । - হোরেস * ভালবাসা আচ্ছাদন নয় বরং চোখের জল ।  - ইমারসন * ভালবাসা যা দেয় তার চেয়ে বেশী কেড়ে নেয় ।  - টেনিসন * ভালবাসা তালাবদ্ধ হ্রদয়ের দরজা মুহূর্তে খুলে দেয় । - টমাস * পুরুষ অনে ঠেকে , অনেক ঘা খেয়ে ভালবাসতে শেখে । - রবীন্দ্রনাথ * সত্যিকারের ভালবাসার তার পাত্র বা পাত্রীকে সুস্থ ও সুখী দেখতে চায় । - শরত্‍চন্দ্র * প্রেম মানুষকে সংযমী , চরিত্রবান , বলবান , সাধনার দৃঢ়বান করে , যুবককে সংগ্রামশীল , মসত্‍ ও গৌরবশীল করে । - লুত্‍ফর রসমান * মেয়ে মানুষের ভালবাসা সবুর করতে পারেনা , বিধাতা তার হাতে সে অবসর দেননি । - রবীন্দ্রনাথ * কামনা একটা প্রবল সাময়িক উত্তেজনা আর প্রেম হচ্ছে ধীর প্রশান্ত ও চিরন্তন । - কাজী নজরুল * তুমি আমায় ভালবাস তাই তো আমি কবি আমার এ রূপ সে যে তোমার ভালবাসার ছবি । - কাজী নজরুল * রঙিন ঠোটের সরুলতা হতে একটি চুমুরে ছিড়ে  বেধে রাখা যায় রূপহীন সেই ভালবাসার কথাটিরে। - জসীমউদ্দিন * চলো যাই প্রেম আর বিশ্বাসের আলো হাতে নিয়ে এগিয়ে পেরিয়ে যাই ঘৃনার নদীর সাঁকো । - আহসান হাবিব – একটাই প্রশ্ন, যার কোনো উত্তর আজও আমি দিতে পারিনি। সেটা হচ্ছে, একজন নারী কী চায়? - সিগমুন্ড ফ্রয়েড, মনোবিজ্ঞানী – বিয়ে হচ্ছে বুদ্ধির কাছে কল্পনার জয় আর দ্বিতীয় বিয়ে হচ্ছে অভিজ্ঞতার কাছে আশার জয়। - স্যামুয়েল জনসন, লেখক – ভালোবাসায় পতনের জন্য কোনোভাবেই আমরা মহাকর্ষ-অভিকর্ষকে দায়ী করতে পারি না। - অ্যালবার্ট আইনস্টাইন, বিজ্ঞানী – আমরা কোনোভাবেই ভালোবাসার ওপর মূল্য নির্ধারণ করতে পারি না, কিন্তু ভালোবাসার জন্য দরকারি সব উপকরণের ওপর মূল্য নির্ধারণ করতেই হবে। - ম্যালানি ক্লার্ক, আইরিশ অভিনেত্রী – ভালোবাসা হচ্ছে একটা আদর্শ ব্যাপার আর বিয়ে হচ্ছে বাস্তব। আদর্শ ও বাস্তবতার দ্বন্দ্ব তাই কখনো নিষ্পত্তি হবে না। -গ্যেটে, কবি – ভালোবাসা হচ্ছে একধরনের মায়া যেখানে পুরুষ এক নারীকে অন্য নারী থেকে আলাদা করে দেখে আর নারী এক পুরুষকে অন্য পুরুষ থেকে আলাদা করে দেখে। -লুইস ম্যাকেন, আমেরিকান সাংবাদিক – একটি হৃদয় কখনো কখনো ভেঙে যেতে পারে কিন্তু তখনো সেটা একই রকম রক্ত সরবরাহ করে। - ফ্রাইড গ্রিন টমাটোস চলচ্চিত্রের সংলাপ

*এই দিনে তুমি আর আমি *



ভালোবেসেছি, ভালোবাসি, ভালোবাসব— কথাগুলো প্রকাশ করার জন্য যা প্রয়োজন, সব করব। দুজন দুজনকে ভালো লাগার কথা বলে ফেলেছেন, একজনের ভালোবাসা ছুঁয়ে গেছে আরেকজনের মন—এরপর প্রথমবারের এসেছে ভালোবাসা দিবস।যে দিনটিতে নিজের আবেগ, ভালোবাসার প্রকাশটা ঘটাতে পারেন ইচ্ছেমতো।সারা দিনে একবার হলেও হাসি ফোটাতে হবে প্রিয় মানুষটির মুখে। দুই দিন বাকি আর ভালোবাসা দিবসের। তাই কীভাবে মনের মানুষের কাছে নিজের আবেগ তুলে ধরবেন, সেই পরিকল্পনাগুলো শেষ মুহূর্তে আরেকবার ঝালিয়ে নিতে পারেন।শত হলেও একসঙ্গে প্রথম ভালোবাসা দিবস। বছরের ৩৬৪ দিন কী দোষ করল? এই এক দিনেই কি বোঝাতে হবে, আমি তোমায় ভালোবাসি। বছরের প্রতিটি দিনই তো ভালোবাসার জন্য। তবে বিশেষ একটি দিন বিশেষভাবে পালন করলে ক্ষতি কী! বরং প্রিয় মানুষটির মনে যত অনুযোগ আছে, আপনার বিরুদ্ধে সেগুলোকে আলতো টোকায় সরিয়ে দেওয়ার জন্য এ দিনটিই মোক্ষম। তো কী করা যায় ভালোবাসা দিবসে? তালিকার প্রথমেই আসবে উপহারের কথা। উপহার দিতেই হবে, তা নয়। প্রথম ভালোবাসা দিবসে কিছু একটা দেওয়ার বাসনা হতেই পারে। এ ক্ষেত্রে মেয়েদের জন্য ছোট পাথর বসানো রুপার লকেট কিংবা দুল হতে পারে আদর্শ উপহার, জানান আড়ং-এর বিপণন বিভাগের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা তাসনিম হোসেন। ছেলেদের জন্য ওয়ালেট, বেল্ট কিংবা স্যান্ডেল হতে পারে। ইন্ডিগোর ডিজাইন ডিরেক্টর শৈবাল সাহা জানান, হাতে তৈরি ডায়েরি বেশ ভালো উপহার হতে পারে। দুজনার সুন্দর মুহূর্তগুলো সেখানে আটকে রাখা যাবে। এ ছাড়া ছবির ফ্রেম, ব্যাগ, ফতুয়া, শার্ট, সালোয়ার-কামিজ ও শাড়ি উপহার হিসেবে মন ভালো করে দেবে। আর ভালোবাবাসা দিবসের শুভেচ্ছা জানাতে পাঠাতে পারেন বিশেষ এসএমএস। ১২ তারিখে ঢাকা থেকে গোপালগঞ্জ যাচ্ছেন শাহরিয়ার আহমেদ (ছদ্মনাম)। উদ্দেশ্য, প্রিয় মানুষটির সঙ্গে পুরো দিন কাটাবেন। দুজন দুজনকে ব্রিটিশ নামে ডাকেন। তিন বছর ধরে চিনতেন একে অন্যকে। তিন মাস আগে ভালোবাসার কথা প্রকাশ করেন। ১৪ তারিখ সকালে রেহানাকে (ছদ্মনাম) বাসার সামনে থেকে তুলবেন। এরপর সারা দিন টইটই করে ঘুরবেন। মুঠোফোনে কথাগুলো বলার সময় শাহরিয়ারের আনন্দ ও উত্তেজনা বেশ ভালোভাবেই বোঝা যাচ্ছিল। প্রেয়সীর জন্য সঙ্গে করে নিয়ে যাচ্ছেন অনেক বই। চমক নষ্ট হয়ে যাবে বলে তিনি নাম প্রকাশ করতে চাননি। মেহেদি (ছদ্মনাম) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যবস্থাপনা বিভাগে পড়ছেন। বাক্স ভর্তি করে দেওয়ার জন্য বেশ কয়েক রকম উপহার কেনা হয়ে গেছে। ছোট টেডি বিয়ার, আয়না, গোলাপ ফুলের পাপড়ি, হূদয় আকারের বেলুন, কার্ড ইত্যাদি। রাত ১২টার সময় কাছের এক বান্ধবীর মাধ্যমে প্রিয়জনকে বেলুন এবং কিছু পুতুল দেবেন। রাতে শুভেচ্ছা জানাবেন না। এ জন্য মৃদু ঝাড়ি খেতে হবে বটে, সেটা সারপ্রাইজেরই অংশ। দুপুরে একসঙ্গে খাবেন। তারপর শুধুই ঘুরে বেড়াবেন। নিজেকে সুন্দর করে উপস্থাপন করার বিষয়টিও এই দিনে অনেকের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। শৈবাল সাহা বলেন, ‘ইউরোপে ভালোবাসা দিবসে লাল রংটি বেশি চোখে পড়ে। বাংলাদেশে ভালোবাসা ও কষ্টের রং হিসেবে নীল রংকে প্রাধান্য দেওয়া হয়। ইন্ডিগোর পোশাকের মূল রং নীল। আমরা ভালোবাসা দিবস উপলক্ষে তরুণ-তরুণীদের জন্য পোশাক তৈরি করেছি।’ প্রিয় মানুষটির পছন্দের রং পরতে পারেন। এ দিনটিতে ঘুরে বেড়ানোর জন্য নিরাপদ স্থান বেছে নেওয়াটা বুদ্ধিমানের কাজ হবে। যেহেতু প্রথম ভালোবাসা দিবস, শুধু দুজনে মিলেই উদ্যাপন করুন। অকারণে ঝগড়া না করাটাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে। যেটুকু সময় পাবেন, নিজেদের মতো করে সাজিয়ে নিন। পছন্দ করেন, এমন কোনো জায়গায় খেতে পারেন। প্রিয় মানুষটি কোনো পরিকল্পনা না করলে আপনি করে ফেলুন। শত হলেও প্রথম ভালোবাসা দিবস। সুন্দর কিছু মুহূর্তই স্মরণীয় করে রাখবে দিনটিকে।

*ভালোবাসার পোস্টমর্টেম *



‘আমি তোমাকে ভালোবাসি’ ‘I Love You এমন কথা যদি কেউ আপনাকে বলে, তবে বুঝবেন আপনার প্রতি বক্তার একটা ভালোলাগা কাজ করছিলো বহুদিন থেকেই। কেননা, চট করে কেউ কাউকে এ কথা বলতে পারে না। বলার আগে বক্তার ভেতরের যে আবেগ কাজ করে, তা একদিনে জন্মায় নি।’ ভালোবাসা সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে অনেকেই এভাবে বলেন। আবার প্রথম দেখায় প্রেম, অনেকের ক্ষেত্রেই ঘটেছে। এটা নিছক প্রেম না মোহ এটা বিচার করার মতো কাউকে খুঁজে পাওয়া যাবে না। তবে প্রথম দেখায় প্রেম হয়ে যাওয়ার পর অনেকেই ঘর বেঁধেছে। এটিও সত্য। ভালোবাসতে কিংবা ভালোবাসা পেতে যে একটা নির্দিষ্ট সময়সীমা থাকবে এমন কোন ধরাবাঁধা নিয়ম নেই। একটা ছন্দ পড়েছিলাম, রবীন্দ্রনাথের, ‘প্রেমের এই ফাঁদ পাতা ভূবনে/কে কখন ধরা পড়ে কে জানে।’ তাই কখন প্রেমে পড়বেন, এটা বলা দুষ্কর। এমনটাও কেউ কেউ বলেন ‘দিনের পর দিন, মাসের পর মাস কিংবা বছরের পর বছরও কেটে যাওয়ার পরও, একই সাথে বসবাস করেও ভালোবাসি কথাটি শোনার সৌভাগ্য অনেকের হয় না। যাদের হয় না, তারা দুর্ভাগা। ভালোবাসতে গেলে বা ভালোবাসা পেতে গেলে গুণের দরকার, এটা চেহারায় পায় না। আবার, একটা প্রবাদ আছে, ‘আগে দর্শনধারী পরে গুণবিচারি’ এটিও ফেলে দেবার মতো নয়। কেউ যদি কারো চেহারার সৌন্দর্য দেখে প্রেমের প্রস্তাব দেয়, তবে তার স্থায়িস্থটা কমই হয় বৈকি। মান্না দে যদিও গেয়েছেন, ‘ও কেন এতো সুন্দরী হলো/অমনি করে ফিরে তাকালো/দেখে তো আমি মুগ্ধ হবোই/ আমি তো মানুষ...। কিন্তু কেউ যদি কারো পাশে থেকে, তার ব্যক্তিত্বের প্রতি আকৃষ্ট হয়, তবে তার স্থায়ীত্বটা দীর্ঘ হয়, এমনটাই দেখা গেছে। কেননা দেহজ সৌন্দর্য একটা সময়ে আর প্রকট থাকে না। পক্ষান্তরে মনের সৌন্দর্য সবসময়ই আকৃষ্ট করতে পারে। তাই যদি না-ই হতো, তবে বয়ষ্ক যতো দম্পতি আছেন, তারা একে অন্যকে রেখে পালাতেন। দর্শনধারী এবং গুণবিচারি দুটোই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু দর্শনধারী এবং তার পাশাপাশি যদি কারো সুন্দর, আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্ব বা গুণ থাকে, সেক্ষেত্রে ভালোবাসাটা অনেক অনেক দীর্ঘস্থায়ীত্ব লাভ করে। কারো প্রকৃত ভালোবাসা পেতে হলে ব্যক্তির দৈহিক সৌন্দর্য এবং মনোজগতের সৌন্দর্য দুটোরই দরকার। প্রথমটার প্রতি আকর্ষণ প্রথম দেখাতেও হয়ে যেতে পারে আবার অনেকটা সময়ও লাগতে পারে। আর মনোজগতের সৌন্দর্য খুঁজে পাওয়া যায় সহাবস্থানের ফলে। এ দুটো বিষয় যার ভেতর আছে, তার প্রতি দিনে দিনে ভালোলাগা কাজ করতে থাকে। এ ভালোলাগাগুলো জমতে জমতে বুকের ভেতরে ভালোরকমভাবে বাসা বেঁধে ফেলে। আর যায় কোথায়! মুখ ফসকে এক সময় বলে বসে, ‘আমি তোমাকে ভালোবাসি’। তো! ভালোবাসা হয়ে গেলো! এখন! ভালোবাসা শব্দটির যদি পোস্টমর্টেম করি তো দাঁড়ায়, ভা- ভালোর বসত, ল- লক্ষ্যের প্রতি আকর্ষণ, বা- বাধা ডিঙানো এবং সা- সাধ্যের মধ্যে নিয়ে আসার সাধনা। অপরদিকে ইংরেজি খঙঠঊ হচ্ছে, এল- লস্ট অব হার্ট, ও- ওশেন অব টিয়ার, ভি- ভ্যালি অব সরে্যা এবং ই- ইন্ড অব লাইফ। বাংলা পোস্ট মর্টেমটা আমার আবিষ্কার, ইংরেজিটা ম্যাগাজিনে পড়া। কোন ম্যাগাজিনে পড়েছি মনে না থাকলেও অন্তত ইংরেজিটার মতো আমি কাউকে নিরুৎসাহিত করি নি এই যা রক্ষে। নইলে বাংলাদেশে একটা বিশেষ দিনকে পালন করতে তরুণ-তরুণীরা যেভাবে অতি উৎসাহী হয়ে উঠে, তাদের নিরুৎসাহিত করে শেষতক মার খাবো নাকি! ভালোবাসার বা প্রেমের পরিণতি কী? আবার কী! প্রেমের পরিণতি হয় মিলন নয়তো বিরহ। ভালোবাসা এমন মোহনীয় শক্তি, এটা মিলনে যেমন থাকে তেমনি বিরহেও থাকে। শরৎচন্দ্র বলেছেন, ‘বড় প্রেম শুধু কাছেই টানে না দূরেও ঠেলিয়া দেয়।’ ভালোবাসা শেষ পর্যন্ত মিলনে গড়ায় এমনটাই সচারাচর ঘটে থাকে। কিন্তু দেহজ ও মনোজ সৌন্দর্যে আকৃষ্ট হবার পর ভালোবাসার ভয়ে পালিয়ে বেড়ানোর মতো দুর্ভাগাও জগতে আছে। ভালোবাসার অনুভূতি কেমন! এক কথায় বিচিত্র। ‘ভালোবাসি’ কথাটা প্রথমবারের মতো বলার বা শোনার মুহূর্তে আপনার যে অনুভূতি, এটা আপনি ব্যাখ্যা দিতে পারবেন না। শ্যামল মিত্র যেমন গেয়েছেন, ‘ভালোবাসো তুমি বলেছো অনেকবার/তবো সেদিনেরও মতো লাগে নি তো কভূ আর/ সেদিন আমার প্রথম ফাগুন বেলা/মাধবী শাখায় অনেক ফুলের মেলা/সে ফাগুন আরও এসেছে যে বারেবার...।’ প্রথমবারের মতো ‘ভালোবাসি’ শোনার সাথে সাথে আপনার ভেতরে একটা চনমনে ভাবের জন্ম নিতে পারে। শব্দের শক্তি আছে। ভালোবাসি শব্দের যে শক্তি এটা আপনার রক্তে একটা নাচন তুলতে পারে, ঝিমঝিম করে উঠতে পারে সারা দেহ। ভালোবাসি শব্দটার শক্তির আবেশে আপনি বিবশ হয়ে যেতে পারেন। আপনার অস্তিত্বে কাঁপন তুলতে পারে এ শব্দ। উলটপালট হয়ে যেতে পারে পরবর্তী জীবন। সুতরাং.... ভালোবাসার কি শ্রেণিবিন্যাস হয়! একশোবার হয়। ভালোবাসারও আছে রকমফের। সকাম ও নিষ্কাম প্রেম বা ভালোবাসা। এটা দৃষ্টিভঙ্গির বিষয়। ভালোবাসা সম্পর্কে এতোক্ষণ যে কথাগুলো বললাম, এটা প্রাপ্ত বয়ষ্ক নর-নারীর স্বাভাবিক প্রণয় বা প্রেম। এ ভালোবাসার সাথে দেহজ সম্পর্ক থাকবে। যে ভালোবাসা কামের দিকে ধেয়ে যায়, বুঝতে হবে সেখানে পাশাপাশি দুটি মেরুর অস্তিত্ব আছে, নর এবং নারী। যে ভালোবাসা সমস্ত সৃষ্টিজগতের জন্য, সেখানে কাম থাকবে না। বিশ্ব প্রেমে পরমতসহিষ্ণুতা, সহনশীলতা, বিশ্ব ভ্রাতৃত্ব, শান্তি, কল্যাণ, অগ্রগতি, করুণা, শ্রদ্ধা, ¯েœহ ইত্যাদির অবস্থানটাই প্রকট থাকে। নিষ্কাম ভালোবাসাটা ব্যাপক অর্থে প্রকাশ পায়। ¯্রষ্টার প্রতি অবনত মস্তকে যে নিবেদন, এর পুরোটাই নিষ্কাম। বাবা-মা তার সন্তানকে ভালোবাসেন, ভাই তার বোনকে ভালোবাসে কিংবা বোন ভাইকে। ছোট বড়কে ভালোবাসে, বড় ছোটকে। এগুলোও নিষ্কাম। ভালোবাসা বয়স, জাতি, ধর্ম, বর্ণ, গোত্রভেদে হয় না। ১৯৯৩ সাল থেকে বাংলাদেশে ১৪ ফেব্রুয়ারিকে ঘিরে যে বিশ্ব ভালোবাসা দিবস পালিত হয়ে আসছে, সেটা আসলে কোন অর্থে গৃহীত? আমরা দেখছি, এ দিনটিকে একটি বিশেষ বয়সের নর-নারী অন্যরকমভাবে গ্রহণ করেছে। যেখানে নিছক আনন্দ আর উপভোগ প্রাধান্য পেয়েছে। মূল লক্ষ্য থেকে সরে গেলে যা হয়, এখানেও তাই হয়েছে। আমার ভেতরে কৌতুহল ছিলো, কেন আমরা ভালোবাসা প্রকাশ করতে একটি বিশেষ দিনকে বেছে নেবো! কী আছে এর পেছনে? এটা কোন ধরনের ভালোবাসা, যে সবাই এ দিনে হুমড়ি খেয়ে পড়ে? কেন এ ভ্যালেন্টাইন ডে? কে ছিলো ভ্যালেন্টাইন? কেনইবা ১৪ ফেব্রুয়ারি! এক ভ্যালেন্টাইন ছিলেন পাদ্রি এবং সেই সাথে চিকিৎসক। পাদ্রি মানে; উনি খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বী ছিলেন। সে সময় রোমানরা দেব-দেবীর পূজা করতো বিধায় রোমানরা তখন খ্রিস্টিয়ান ধর্মে বিশ্বাসী ছিল না। তাই ধর্ম প্রচারের অভিযোগে ২৭০ খ্রিস্টাব্দে রোমের সম্রাট দ্বিতীয় ক্লডিয়াস-এর আদেশে ভ্যালেন্টাইন এর মৃত্যুদ- দেয়া হয়। তিনি যখন জেলে বন্দী ছিলেন (২৬৯ খ্রিস্টাব্দ) তখন ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা তাকে ভালবাসার কথা জানিয়ে জেলের জানালা দিয়ে চিঠি ছুড়ে দিতো। বন্দী অবস্থাতেই জেলার এর অন্ধ মেয়ের চোখের সফল চিকিৎসা করে দৃষ্টি শক্তি ফিরিয়ে দিতে সক্ষম হন এ সাধক। এতে মেয়েটির সাথে তার সখ্যতা গড়ে উঠে। অনেকের মতে, সেন্ট ভ্যালেন্টাইন এর নাম অনুসারেই পোপ প্রথম জুলিয়াস ৪৯৬ খ্রিস্টব্দে ১৪ই ফেব্রুয়ারিকে সেন্ট ভ্যালেন্টাইনস্ ডে হিসেবে ঘোষণা করেন। কেউ আরো একজন ভ্যালেন্টাইন এর নাম উল্লেখ করেছেন। যিনি রাজার আদেশ অমান্য করে প্রেম করেছিলেন এবং পরে বিয়ে করেছিলেন। আদেশটা হলো: কোন যুবক যুবতি বিয়ে করতে পারবে না। কারণ, ঐ সময়ে রোমান সম্রাট ক্লডিয়াস যুদ্ধের জন্য ভালো সৈন্য সংগ্রহ করতে এ আদেশ করেন। ভ্যালেন্টাইন এ আদেশ অমান্য করেন, ফলে তার মৃত্যুদ- হয়। কী চেয়েছিলেন ভ্যালেন্টাইন- সকাম ভালোবাসা না নিষ্কাম? গির্জার একজন

*ক্ষমার দিন ভালবাসার দিন ১৪ ফেব্রুয়ারি *



ভালোবাসা, প্রকৃতির দান, নাকি স্রষ্টার সৃষ্টি। ত্যাগস্বীকার, যতœ, সহভাগিতা যদি ভালোবাসা হয়, তবে আমি ভালোবাসতে পেরেছি। আর যদি দেহের তৃপ্তি হয়, তবে আমি ভালোবাসতে পারি নি সময়টা ২০০৬, নটরডেম কলেজে ভর্তি হলাম। পড়াশুনার পাশাপাশি নটরডেম ইংলিশ কোর্সে কাজ করি। তখন পরিচয় স্মৃতির সাথে। সেই আমাকে ভালোবাসার কথা প্রথম বলেছিলো। অনেক দ্বিধা-দ্বন্দ্বের পর ভালোবাসার ডাকে সাড়াও দেই। জানি না, তার মনে কি ছিলো। তবে এইটুকু বলবো, আমিই ওকে ভালোবেসেছি। ও তখন এসএসসি পরীক্ষা দেবে, প্রস্তুতি নিচ্ছে। প্রতিদিন ফোন করে ঘুম থেকে জাগাতে হত। পরীক্ষার ফরম ফিলাপের টাকা, যাবতীয় খরচ সবই দিতে হত। আমার তেমন সম্বল ছিলো না। কাজের বিনিময়ে পড়াশুনা চালাতাম, আর দু’টো টিউশনি করে হাত খরচ। ও হোস্টেলে থেকে পড়তো। জানি না, ওর বাবা-মা ওকে টাকা-পয়সা দিতো কিনা। বিভিন্ন সময়ে টাকা থেকে শুরু করে যাই চাইতো সবই দিতে হতো আমাকে। মাঝে মাঝে বলতো আমি ওর জীবনের সব। ও আমাকে দৈহিক ক্ষুধার কথাও বলতো, কিন্তু আমার ভালোবাসার মূল্যবোধ আমাকে তা হতে দেয় নি। ও পাশ করলো। কেমন করে যেন ও আমার সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দিলো। অনেক খুঁজে ছিলাম। দেখা হয় নি। বুঝতে পারছিলাম না, কোন কারণে ও চলে গেল। ২০০৭ এর ভালোবাসা দিবসে আমি বাংলা একাডেমি বইমেলায় বন্ধুদের সাথে যাই। তখন প্রায় এক বছর পর স্মৃতিকে দেখি। খুব ঘনিষ্টভাবে আমারই এক বন্ধুর সাথে। বলতে পারবো না সেদিনের অনুভূতি। আরেক বন্ধু বললো, রায়হানের সাথে ওই মেয়েটিকে নিয়ে রায়হান প্রায়ই আমার খালি বাসায় মজা করতে আসে। মেয়েটিকে মনে হয় তোর সাথে দেখেছিলাম। ওকে জিজ্ঞেসও করেছিলাম তোকে চিনে কিনা। বললো, চিনে না। এরপর আমার আর কিইবা বাকি থাকে। আমিও ওদের কাউকে কিছু বলি নি।আমি চাই নি আমার ভালোবাসা ছোট হোক। আমিতো সত্যি সত্যি ওকে ভালোবেসেছি। দু’বছর পর আবার দেখা হয়েছিলো, রবীন্দ্রসরোবরে স্মৃতির সাথে। আমাকে দেখে একটা ভয় চলে এসেছিলো মনে হয় ওর চোখে-মুখে। ও চোখের বাইরে পালিয়ে যায়। কয়েকদিন পর রায়হানের বিয়ের কার্ড পাই। খুলে কিছুটা অবাক হলাম, কনের জায়গায় স্মৃতির বদলে অন্যের নাম। স্মৃতির জন্য কেন যেন মায়া হলো। ঠিক তার একদিন পর একটি এসএমএস এলো আমার ফোনে। ‘আমাকে ক্ষমা করে দিও।’ আমি বুঝতে পেরেছিলাম কে। অনেক দ্বিধা সত্ত্বেও ফোন দেই। কিন্তু ফোন বন্ধ পাই। পরদিন সৈকত এসে খবর দিলো, স্মৃতি আর নেই। কেন যেন ওইদিন খুব কাঁদতে ইচ্ছে হচ্ছিলো। ওই দিনটি ছিলো সেই একই দিন ১৪ ফেব্রুয়ারি। মনে পড়ে আজো সেই ১৪ ফেব্রুয়ারি। দিনটি ভালোবাসার দিন, আর আমার কি সত্যিই সেদিন ভালোবাসার দিন ছিলো! অনেকদিন বাদে আমিই নিজেকে নিজে উত্তর দেই, আমিই ভালোবাসতে পেরেছি। কারণ সেদিনের ভালবাসা দিবসে আমি ওকে ঘৃণা নয় ক্ষমা করেছিলাম।

ভালোবাসা ভালোবাসা



'হাত বাড়িয়ে ছুঁই না তোকে/মন বাড়িয়ে ছুঁই/দুইকে আমি এক করি না/এককে করি দুই/হেমের মাঝে শুই না যবে/প্রেমের মাঝে শুই/তুই কেমন করে যাবি?/পা বাড়ালেই পায়ের ছায়া/আমাকে তুই পাবি।'... কবি নির্মলেন্দু গুণের ভাষায় ভালোবাসার সুগভীর অনুভূতি এমনই। সেই সুদূর বৈষ্ণব পদাবলী থেকে রবীন্দ্র-নজরুল যুগ পেরিয়ে বাংলা কবিতায় প্রেমের শাশ্বত রূপ শতমুখী ফল্গুধারায় প্রবাহিত হলেও হৃদয় দিয়ে হৃদয় ছোঁয়ার তৃষ্ণা অনন্ত বহমান। প্রতীক্ষিতের ছায়া হয়ে থাকা আর তাকে মন দিয়ে ছুঁয়ে যাওয়ার অদম্য বাসনা লালন করার নামই ভালোবাসা। অদ্ভুত এক আবেশে মোহাচ্ছন্ন হয়ে থাকাই বোধ হয় প্রেমের ধর্ম। হিয়ার পরশে হিয়ার সার্বক্ষণিক ছুঁয়ে ছুঁয়ে যাওয়া, হৃদয় মনে সারা অনুভবে প্রিয়জনের প্রতিচ্ছায়া মিশে থাকা, প্রগাঢ় এক মোহ, সেকি কেবলই মায়া? জগতের সবাই ভালোবাসতে চায়, ভালোবাসা পেতে চায়। 'একটি কথার দ্বিধা থরথর চূড়ে' ভর করা সাতটি অমরাবতী যে গভীর কথায় তারই নাম ভালোবাসা। সেই অনন্য ভালোবাসার একটি বিশেষ দিন আজ। আজ ভ্যালেনটাইনস ডে। বিশ্ব ভালোবাসা দিবস। মানব-মানবীর প্রেমের বাইরেও রয়েছে ভালোবাসার অনন্য এক ফল্গুধারা। তাই তো আছে ঘূর্ণাবর্ত। আহ্নিকগতি, বার্ষিকগতি, দিবা-রাত্রির পালাবদল আর জোয়ার-ভাটার টান, সে তো চন্দ্রসূর্যের ভালোবাসারই ফসল! ভালোবাসার দ্রোহে-বিদ্রোহে কাঁপে চরাচর। ভালোবেসে বৃক্ষ হয় ফলবতী। ভালোবাসার আরেক নাম প্রেম। ভালোবাসার গভীরতা পৃথিবীর কোনো ফ্যাদোমিটারেই পরিমাপ যোগ্য নয়। স্নেহ-প্রীতি, প্রেম আর ভালোবাসার বন্ধনে আবদ্ধ হতে আজ সারাবিশ্বে উদযাপিত হচ্ছে বিশেষ দিন। প্রতীক্ষার যামিনী পোহানোর মধ্য দিয়ে আজ এসেছে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ ১৪ ফেব্রুয়ারি, 'বিশ্ব ভালোবাসা দিবস।' সারা পৃথিবীর মতো বাংলাদেশেও আজ ধ্বনিত হবে ভালোবাসার পঙক্তিমালা, গুঞ্জরিত ভালোবাসার গানের অমর সুরলহরী। আজ সারাদিন তরুণ-তরুণীদের হাতে থাকবে লাল গোলাপ, চোখে আনন্দময় আগামীর স্বপ্ন। দুরু দুরু হৃদয়ে আনন্দ-উত্তেজনা। হাতে হাত রেখে বাকিটা জীবন কাটানোর প্রত্যয়। ভালোবাসার বন্ধন আর প্রেমের চাদরে ঢেকে যাবে হৃদয়ের পুরোটা প্রাঙ্গণ। প্রিয়জনকে পাশে বসিয়ে অনেকেই আজ টুক করে বলে ফেলবে হৃদয়ের গভীরে লালিত সেই না বলা কথাটি। সারা দুনিয়ার মানুষ পরস্পরকে ভালোবাসবে। স্বামী ভালোবাসবে স্ত্রীকে, স্ত্রী স্বামীকে, পিতামাতা সন্তানকে, সন্তান প্রিয় বাবা-মাকে হৃদয় উজাড় করে দেবে মধুর ভাব বিনিময়ে। ভালোবাসায় অনুরাগের তীব্রতা যেমন, বাঞ্ছিতকে হারানোর ভয়ও কম নয়। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভাষায় 'অমন আড়াল দিয়ে/লুকিয়ে গেলে চলবে না/এবার হৃদয় মাঝে লুকিয়ে বোসো/কেউ জানবে না/কেউ বলবে না।' অথবা মনে মনে আওড়ে উঠবে সবাই_ 'যত গোপনে ভালবাসি পরান ভরি/পরান ভরি উঠে শোভাতে/যেমন কালো মেঘে অরুণ-আলো লেগে/মাধুরী ওঠে জেগে প্রভাতে।' যে 'ভালোবাসা দিবস' ঘিরে দুনিয়ায় এত মাতামাতি, তার সূচনা একটি পরিণয়ের ঘটনা দিয়ে। প্রথা ভেঙে সেন্ট ভ্যালেনটাইন বিয়ে করেন তার প্রেয়সীকে। তিনি নিশ্চিত জানতেন, এ বিয়ে করলে তাকে মৃত্যুর জন্য 'হেমলক' পান করতে হবে। তবু তিনি ভালোবেসে বিয়ে করেছিলেন এবং আলিঙ্গন করে নিয়েছেন মৃত্যুকেই। তারপর কেটে গেছে কয়েক শতাব্দী। বিশ্বের দেশে দেশে দিনটি এখন উদযাপিত হচ্ছে 'ভ্যালেন্টাইনস ডে' হিসেবে। যদিও বিশ্বের নানা দেশে এ নিয়ে রয়েছে নানা মত। রোমানরা এ দিন আর ঘটনা নিয়ে তাদের বিশ্বাসটা ভিন্নভাবে পোষণ করেন। ভালোবাসা দিবসে আজ দেশজুড়ে নানা আয়োজন আর বর্ণাঢ্য সব কর্মসূচি রয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসেও রয়েছে বর্ণিল আয়োজন। টেলিভিশন চ্যানেলগুলোও সম্প্রচার করবে নাটক, আলোচনাসহ নানা অনুষ্ঠান। রাজধানীর উদ্যানমালা, সংসদ চত্বর, একুশের বইমেলা, পাঁচতারকা হোটেল, কফিশপ, ফাস্টফুড কোর্ট আর ধানমণ্ডির রবীন্দ্রসরোবরে ঢল নামবে ভালোবাসায় নিবিষ্ট লাখো মানুষের। আজকের দিনটি সবার জন্য হয়ে উঠুক গভীর আনন্দ, আবেগ ও গোলাপের সৌরভে সুরভিত প্রেমময় একটি দিন ।

এক বাক্স ভালোবাসা



ভালোবাসার মানুষটিকে খুশি করার মতো ভালোলাগা খুব কমই পাওয়া যায়। আর তাই, যে যার সাধ্য মতো ভালোবাসা দিবসে প্রিয়জনের জন্য উপহার কিনতে ব্যস্ত। রাজধানীর কয়েকটি শপিং সেন্টার ঘুরে দেখা গেল কার্ডের দোকানগুলোতে উপচে পড়া ভীর। বসুন্ধরা সিটির আর্চিস গ্যালারির ম্যানেজার রাসেল বলেন, ভ্যালেনটাইন’স ডে উপলক্ষে এখানে কার্ড, শোপিস, চকোলেট বক্স, এবং মগ বেশি বিক্রি হচ্ছে। আকার এবং ডিজাইনের ওপর নির্ভর করে এগুলোর দাম ১৫০ টাকা থেকে ২০০০ টাকা। নিউ মার্কেটে হলমার্ক-এ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী কেয়া এসেছে, প্রিয়জনের জন্য উপহার কিনতে। তবে সে কিছুতেই সিদ্ধান্ত নিতে পারছিল না কী নেবে। পরে তাকে বিক্রেতা সুমন সাহায্য করলেন, একটি চাবির রিং আর মগ পছন্দ করতে। শুধু কেয়া নয়, আসলে আমারা অনেকেই বুঝে উঠতে পারিনা কী দিয়ে প্রিয় মানুষটিকে সবচেয়ে খুশি করা যায়। আপনারদের সুবিধার জন্য উপহারের কিছু ধারনা দিয়ে দিচ্ছি। আগেই ঠিক করে নিন কোন উপহারটি আপনি কিনতে চান। তাহলে ভ্যালেনটাইন’স ডে এর কেনাকাটা অনেক সহজ হয়ে যাবে। মেয়েদের জন্য কিনতে পারেন:  কার্ড, ফুল, মগ, সানগ্লাস, চকোলেট, গয়না, ব্যাগ, হাতঘড়ি, সুগন্ধি, গয়নার বক্স, ফুলদানি, পেইন্টিংস, ফটোফ্রেম, মোবাইল ফোন সেট, পোশাক, ডায়েরি, সিডি, বই। ছেলেদের জন্য: কার্ড, ফুল, মগ, সানগ্লাস, চকোলেট, মানিব্যাগ, সুগন্ধি, চাবির রিং, শেভিং কিটস, হাতঘড়ি, বেল্ট, পোশাক, সিডি, ফটোফ্রেম, কলম, কাফলিংক সেট, টাই, ব্যাগ, আর বই। ভ্যালেনটাইন’স ডে-এ উপহার দেওয়া-নেওয়া শুধু প্রেমিক প্রেমিকার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। স্বামী-স্ত্রী, বাবা-মা, ভাই-বোন, সন্তান এবং যে কোনো প্রিয় বন্ধুর জন্যই উপহার দিতে পারেন। ছোট একটি উপহার মানুষের সর্ম্পক আরও বেশি মধুর করে তোলে। যে উপহার কিনছেন: উপহার পছন্দের ক্ষেত্রে যাকে উপহার দেবেন তার বয়স, রুচি, পছন্দ এবং প্রয়োজন বিবেচনা করুন। উপহার অনেক দামী হতে হবে এমন কোনো কথা নেই। প্রিয়জনের জন্য শুধুমাত্র একটি লাল গোলাপের আবেদন টাকা দিয়ে মাপা যাবে না।  যিনি উপহার পাচ্ছেন: প্রতিটি উপহারের সঙ্গে অনেক ভালোবাসা, গুরুত্ব এবং আন্তরিকতা থাকে। উপহার কখনোই টাকার পরিমাপে দেখতে হয় না। আর উপহারটি পছন্দ না হলেও সামনে বলা ঠিক নয় বরং মনে করে বিশেষ উপলক্ষে আপনাকে উপহার দেওয়ার জন্য তাকে ধন্যবাদ জানান। ভ্যালেনটাইন’স ডের উপহার কিনতে যেতে পারেন, আড়ং, আলমাস, দেশি দশ, আইস কুল, হলমার্ক, আর্চিস গ্যালারিসহ বিভিন্ন গিফট শপে।

ভালোবাসা দিবসে আপনি যা করবেন




এ পৃথিবীতে আমাদের চলতে গেলে অনেকের সাথে সম্পর্ক থাকে। পরিবার ছাড়াও বাইরে কোনও প্রিয় মানুষ হয়ে উঠতে পারে যেকোন কেউ। এই প্রিয়জন সম্পর্ক গড়ে ওঠে দুজনের ভালোলাগা ও ভালোবাসা দিয়ে। মানুষের প্রিয় ভালবাসার একটি সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে প্রয়োজন শুধুমাত্রই ভালোবাসা। ভালবাসার বিনিময়েই ভালোবাসা পাওয়া যায়। এছাড়া অন্য কিছু দিয়ে ভালোবাসা পাওয়া যায়না। আমি তোমাকে ভালবাসি- এই ছোট্ট একটি লাইন আপনার সঙ্গীকে সুখী করতে, আপনার প্রেমকে দীর্ঘদিন বাঁচিয়ে রাখতে আর আপনার সম্পর্কটাকে আরও মজবুত করতে যথেষ্ট কার্যকর ভূমিকা রাখবে। সে ভালোবাসার সম্পর্ক চলমান থাকলে কিছু কিছু বিষয় এড়িয়ে যাওয়া ভালো। আর কিছু বিষয়কে আরো গভীরভাবে সঙ্গ দিতে হয়। নানা সমস্যা ও বিতর্ক থাকবে একটি প্রিয় ভালোবাসার সম্পর্কে। সেসব সমস্যা আর বিতর্ককে জয় করে ভালোবাসতে পারাই একটি ভালোবাসা সম্পর্কের কৃতিত্ব। ভালোবাসার পথচলায় যেসব বিষয়গুলো অন্তরঙ্গভাবে জড়িত থাকে তার মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য কয়েকটি হলো-  জীবনের উত্থান-পতন:  প্রত্যেকটা মানুষের জীবনেই একটা সময় আসে যখন মানসিকভাবে কিছুটা বিরক্ত, খুব চাপ যা”েছ মনের ওপর দিয়ে অথবা আপনি কিছুটা সময় একা থাকতে চান।  এই ব্যাপারগুলো যেমন আপনার বেলায় ঘটতে পারে ঠিক তেমনি আপনার সঙ্গীর বেলাতেও ঘটতে পারে।  প্রতিটি সম্পর্কেই জোয়ারভাটা আসে।  এই জোয়ারভাটায় যতক্ষণ আপনি শারীরিক অথবা মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত না হ”েছন ততক্ষণ সম্পর্কটা চালিয়ে যেতে পারেন।  আপনার সঙ্গীর যখন খারাপ সময় যা”েছ তখন তাকে বলুন আই লাভ ইউ, দেখবেন জীবনের মধুর একটি দিন আপনার দরজায় কড়া নাড়ছে।  ক্ষমা কর“ন, ভুলে যান: বর্তমানের ভেতরে কখনওই অতীতকে টেনে আনা ঠিক নয়।  অতীতের কোনও দুঃখজনক অথবা আপমানজনক কথা বারবার মনে করা একেবারেই অনুচিত। সঙ্গীর বিশ্বাসকে গ্রহণ করুন : দুটি মানুষ দুটি মতাদশের, ভিন্ন ধারার হবে এটাই স্বাভাবিক।  আপনার মতের সঙ্গে মিলছে না বলে আপনি তার যুক্তিকে পাত্তাই দেবেন না, এই ভুল করবেন না।  তার মতামতকে গুর“ত্ব দিন, গ্রহণ কর“ন।  তাকে বোঝান যে, তার মতামতের যথেষ্ট গুর“ত্ব আপনার কাছে আছে।  দেখবেন, সেও আপনার মতামতকে যথেষ্ট গুর“ত্ব দি”েছ। প্রয়োজন নিয়ে কথা বলুন: আমরা প্রায় সবাই একই ধরনের একটা ভুল করে থাকি।  তা হলো, আমরা ধরেই নেই, কেউ যখন আমাকে ভালবাসবে, তখন সে আমার সব জেনেই ভালবাসবে।  এই ধারণা মনের ভেতরে পুষে রাখা একেবারেই অনুচিত। আপনার সঙ্গী আপনার মনকে বুঝতে পারবে, এ ধারণা থেকে দূরে সরে আসুন।  ভালবাসার মানুষকে ভালবাসি বলতে পারা সততার লক্ষণ। দ্বিমত পোষণ করতে ভয় পাবেন না: দুইজন মানুষের একটা মত হবে এটা ভাবা একেবারেই বোকামি।  বরঞ্চ ভিন্নমত থাকাটাই স্বাভাবিক।  তাই বলে ভিন্ন ধারণা কখনও আপনার সম্পর্ককে নষ্ট করবে না।  আপনাকে বুঝতে হবে আপনি যে তার সঙ্গে একমত নয় তা ঠিক রেখেও কীভাবে তাকে ভালবাসি বলা যায়।  জিজ্ঞেস কর“ন: মাঝে মাঝে আপনি বুঝতে পারেন না কীভাবে তিনি আপনার জন্মদিন অথবা আপনার সঙ্গে ঘুরতে যাওয়ার কথা ভুলে যান।  জিজ্ঞেস কর“ন কেন, এটা নিয়ে রাগ হয়ে লঙ্কাকাণ্ড বাধিয়ে ফেললে কোনও লাভ নেই।  আপনি যদি আপনার সঙ্গীর এই ব্যবহারের মূল কারণ জানতে পারেন তাহলে তা অভিযোগ করা থেকে ভালো হবে।  কৌতূহল নিয়ে ভালবাসি বলুন।  তার ভালো লাগবে। সমস্যার মুখোমুখি হোন: লাইফ ইজ নট এ বেড অব রোজেজ।  জীবনে সমস্যা আসবে এবং সেগুলোকে মোকাবেলা করাটাই আমাদের লক্ষ্য।  তাই কোনও সমস্যা এলে হতাশ হলে চলবে না।  সমস্যাকে কখনও অবহেলা করবেন না।  সঙ্গীর সঙ্গে সমস্যা নিয়ে কথা বলুন।  এমন তো হতে পারে সে আপনাকে ভালো একটা সমাধান দিতে পারে।  আপনার অনুভূতি খুলে বলুন।  আপনার সঙ্গীর কি ই”ছা তা জেনে নিন। তাহার কথাও শুনুন: দুজন মিলে যখন কোনও বিষয়ে কথা বলবেন তখন শুধু আপনিই বলে যাবেন এটা করবেন না।  তার কথা শুনুন মনোযোগ দিয়ে, তার কথাকে প্রাধান্য দিন।  দুজনের কথা থেকে ভালো একটা সমাধান বের হয়ে আসতে পারে।  একসঙ্গে মজা কর“ন: খেয়াল কর“ন কি আপনাকে হাসায়।  মুভি, কৌতুক অথবা কার্যকলাপ যাই আপনার পছন্দ আলাদা কর“ন। ভালোবাসি বলার আগে মনে রাখুন আপনার সঙ্গীর সেন্স অব হিউমার আপনার থেকে আলাদা হতেই পারে তাই বলে তাকে আপনি অবহেলা করবেন এটা তো হতে পারে না। অবহেলা না করে বরং একে শ্রদ্ধা করতে হবে। হতেও পারে তার সেন্স অব হিউমার আপনাকে অবাক করে দেবে। কাছাকাছি থাকতে হলে: বিয়ের আগে এক ধরনের জীবন থাকে। বিয়ের পর সেটার পরিবর্তিত রূপ দেখা যায়।  এটা নিয়ে হতাশ হওয়ার কিছু নেই।  জীবনে পরিবর্তন আসবে এটা মেনে নিতে হবে এবং মেনে নেওয়াটাই হবে স্বাভাবিক বিষয়।  বিয়ের পরে হয়তো আপনি কিছুটা হলেও আলাদা হয়ে যাবেন।  নানা ধরনের পরিবর্তন আসবে তখন। দৈনন্দিন র“টিন অথবা অর্থনৈতিক সংগ্রাম আসতে পারে এবং আপনি তখনই সফল হবেন যখন এগুলোকে ঠিকমতো চালনা করতে পারবেন।  তাই বলে ভালবাসি বলতে ভুলবেন না, জীবন যত কঠিনই হোক তাকে সহজ করে নিতে হবে।  তাই  এমনভাবে ভালবাসি বলুন যাতে আপনার সঙ্গী বুঝতে পারে যে জীবনটা যতই কঠিন হোক না কেন আপনি তাকে আজীবন ভালবাসবেন এবং একসঙ্গে থাকবেন।    লক্ষ্য এবং স্বপ্ন সম্পর্কে ধারণা দিন: আপনার জীবনের লক্ষ্য এবং স্বপ্ন সম্পর্কে আপনার সঙ্গীকে পরিষ্কার ধারণা দিন এবং তাকে এগুলোর সঙ্গে জড়িয়ে নিন। এ বিষয়ে তার মতামত নিতে চাইবেন। যখনই আপনি আপনার জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপে জড়িয়ে নেবেন তখন এমনিতেই আপনার ভালবাসি শুনতে ভালো লাগবে।  আপনি প্রথমে ক্ষমা চেয়ে নিন: একজন মানুষ ভুল করতেই পারে। আপনিও অনেক সময় ভুল করেন।  তাই যেকোনও সম্পর্কেই ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টি থাকা প্রয়োজন। দুজনেই যদি চলার পথটি মসৃণ করার চেষ্টা করেন তাহলে দুজনই সুখী হবেন।  ভুলে যাওয়ার, ক্ষমা করার, পূর্ণ করার ই”ছা নিয়ে ভালবাসি বলুন। ভালবাসার মানুষকে আপনার মতো করে নিন: আপনার ভালোবাসার মানুষটিকে আপনার মতো করে তুলুন। আপনি সম্পর্কে তাকে খোলাখুলিভাবে ফুটিয়ে তুলুন। তাছাড়া আপনিও তার মতো হোন যাকে আপনি পছন্দ করেন। শ্রদ্ধা কর“ন, অর্থপূর্ণ কাজ কর“ন, সামাজিক কাজে যুক্ত থাকুন, আপনার আগ্রহকে আবিষ্কার কর“ন এবং আপনার সঙ্গীর সঙ্গে শেয়ার কর“ন। এতে করে দুজনের মধ্যে ভালোবাস বাড়বে।  দুজনই যদি দুজনার কাছে পরিষ্কার থাকেন তাহলে কোনও সমস্যাই সমস্যা সৃষ্টি করতে পারবে না। সহযোগিতা : ভেবে দেখুন তো, ছোটাবেলায় আপনার ওপর যখন বাবা-মা কিছু চাপিয়ে দিতেন তখন কি সেটা আপনার ভালো লাগত? মনে হয় না।  তাহলে আপনার সঙ্গীর কেন ভালো লাগবে।  কখনও আপনার সঙ্গীর ওপর সব ভার চাপিয়ে দেবেন না।  হোক তা বা”চাদের দেখাশোনা করার কাজ অথবা ঘর পরিষ্কার কিংবা  আত্মীয়দের সঙ্গে যোগাযোগ অথবা অর্থ উপার্জন করার বিষয়। তাকে সহযোগিতা কর“ন প্রতিটি কাজে। খারাপ সময়গুলোকে মূল্যায়ন কর“ন: ভুল সঙ্গী পছন্দ করেছেন? অথবা আসক্তির মতো ভালবাসার খারাপ দিক? একই ভুল বারবার করেছেন? যদি আপনার সম্পর্ক ভালো না হয় তাহলে কীভাবে ভালবাসি বলতে হবে তা জেনেও লাভ হবে না।  তাই সঙ্গীর ভুলগুলোকে ধরিয়ে দিন।

*ভালোবাসি তাই*

ভালোবাসা দিবসকে ঘিরে প্রিয় মানুষকে নিয়ে সবাই ব্যস্ত কল্পনার জগৎকে সাজাতে। কারও কারও মন চায় পছন্দের মানুষের হাত ধরে কোথাও হারিয়ে যেতে... লিখেছেন ওয়াজেদ মহান কয়েক দিন ধরেই ফারিহা ভীষণ ব্যস্ত। প্রতিদিনই সে নিয়ম করে বিভিন্ন শপিংমল ঘুরে বেড়াচ্ছে। খুব দেখেশুনে নিজের পছন্দমতো কিনেছে লাল শাড়ি। সঙ্গে লালটিপ, চুড়ি, জুতাসহ দরকারি সবকিছুই। তার অনেক স্বপ্ন এবারের ভালোবাসা দিবসকে ঘিরে। খুব সুন্দর করে সাজবে, দারুণ করে খোঁপা বাঁধবে আর সে খোঁপায় পরবে তার পছন্দের ফুল। ভালোবাসা দিবসে ভোরের আলো ফোটার পরপরই গিয়ে দাঁড়াবে অসীমের সামনে। অসীমকে অনেক বড় রকমের একটা সারপ্রাইজ দেওয়ার ইচ্ছা তার। ঠিক এভাবেই সারা পৃথিবীর কপোত-কপোতিরা স্বপ্ন বুনছে ভালোবাসা দিবসকে ঘিরে। শত বছর ধরে ভালোবাসা ছড়িয়ে আসা এ দিনটি প্রেমিক-প্রেমিকাদের কাছে এক বিশেষ গুরুত্ব নিয়ে হাজির হচ্ছে। এবারের আয়োজনেও কমতি হবে না কোথাও। শীতের শেষ দিনগুলোতে প্রকৃতির মধ্যে একটা হাহাকার আর শূন্যতা বিরাজ করলেও ভালোবাসা দিবসে এসে সেই শূন্যতা পুরোপুরি বিলীন হয়ে যায়। স্বপ্নদোলায় দুলতে দুলতে এই একটি দিনে এসে সবাই তার পছন্দের মানুষকে বলে ফেলতে চায়_ 'ভালোবাসি'। অনেকেই হয়তো পছন্দের মানুষকে ভালোবাসার বার্তাটা পেঁৗছে দিতে পারেন খুব সাহসের সঙ্গেই আবার অনেকের ক্ষেত্রে সেটা না বলাই থেকে যায়। সে যাই হোক না কেন, কয়েকটি বছর ধরেই বাংলাদেশের মানুষের কাছে ভালোবাসা দিবস অন্যরকম এক আবহ নিয়ে হাজির হচ্ছে। অনেকেই এ দিনটিকে নিরেট ভালোবাসার দিন হিসেবে মেনে নিলেও কারও কারও আছে ভিন্ন প্রতিক্রিয়া। ধানমণ্ডি সাতমসজিদ রোডে কথা হচ্ছিল চাকরিজীবী এ কে আজিমের সঙ্গে। তার কাছে ভালোবাসা দিবসের কথা জানতে চাইতেই বললেন, আসলে 'ভালোবাসা দিবস' নামে কিছু নেই। এটা আমাদের বর্তমান প্রজন্মের ধার করা একটি বিদেশি সংস্কৃতি, এটি দেশীয় সংস্কৃতির বারোটা বাজাচ্ছে। অনেকটা ক্ষুব্ধ কণ্ঠেই আজিম প্রতিবাদ জানালেন এ দিনটির গুরুত্ব নিয়ে। সে কথা না হয় মেনে নিলাম, কিন্তু রাসমিন-নাদির দম্পতির কাছে ভালোবাসা দিবস নিয়ে শোনা গেল ভিন্ন কথা। তাদের মতে, 'ভালোবাসা দিবস' পুরোপুরি ভিনদেশি একটা সংস্কৃতি ঠিক আছে; কিন্তু এখন যেহেতু এদিনকে ঘিরে মানুষ একটু বেশি আবেগতাড়িত হচ্ছে, ভালোবাসার চর্চা করছে, সেটা মেনে নিতে তো ক্ষতি নেই। তাতে বরং ভালোবাসার গভীরতা বাড়ে। অনেকেই আবার এ দিনটিকে অনেকটা ঈদের দিনের মতো মনে করে ফেলছেন। বাইরের সব ব্যস্ততা থেকে রীতিমতো ছুটি নিয়ে ওই দিনটি প্রিয়জনের সঙ্গে কাটানোর পরিকল্পনা করছেন। তেমনই শোনা গেল জনপ্রিয় টিভি অভিনেত্রী নাদিয়ার কণ্ঠে। তার ভাষায়, বিয়ের আগে আমার কাছে ভালোবাসার দিনটি ছিল অন্যরকম। সারাদিন শিমুলের সঙ্গে ঘুরে বেড়ানো, মজা করা, বাইরে খেতে যাওয়া... আর এখন আমি চেষ্টা করি ওই দিন নিজেকে ফ্রি রাখতে। একটা দিন দু'জনে একটু নিজেদের মতো করে কাটাতে। কিন্তু বিয়ের আগের ভালোবাসা দিবসের সঙ্গে এখনকার ভালোবাসা দিবসের আনন্দে অনেক পার্থক্য। আর সেটা হয়তো সময়ের প্রয়োজনেই। আসলে প্রতিটি মানুষের কাছেই ভালোবাসা আর ভালোবাসা দিবসের সংজ্ঞা তার নিজের মতো। কেউ হয়তো মুখে 'ভালোবাসি' বলেই ভালোবাসার সুখ খুঁজে পান; আবার কেউবা চান একটু বেশি কিছু। ভালোবাসা দিবস অনেক উত্তেজনা আর রোমাঞ্চকর হয়ে ধরা দেয়; আবার কারও কাছে বিপরীত। হয়তো কিছুই নয়, আবার কারও কাছে অনেক কিছুই। অনেকেই এ দিনটিকে সামনে রেখে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হন পরস্পরের প্রতি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ছোটখাটো কোনো বিষয় নিয়ে দু'জনের মনোমালিন্য ঝগড়ায় রূপ নেয়। ফলস্বরূপ ভালোবাসা দিবসে দু'জন দুই মেরুতে। কিন্তু নিজেদের মধ্যে প্রচণ্ড ভালোবাসা ও পারস্পরিক বোঝাপড়া থাকলে এমনটি হওয়ার কথা নয় বলে মনে করেন ঢাকা সিটি কলেজের ইংরেজি তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী রিপা। দাম্পত্য জীবনের তিনটি বছর হাসি-আনন্দেই পার করেছেন আর এ বিশেষ দিনটিতে তারা নিজেদের মধ্যেই পরিকল্পনা করে নিয়েছেন কীভাবে দিনটি পালন করবেন। বাস্তব অর্থে এ বিশেষ দিনে প্রিয় মানুষের জন্য একগুচ্ছ ফুল, ছোট একটা উপহার আর হাসিমুখে বলা 'ভালোবাসি' শব্দটিই তো ভালোবাসার গভীরতা অনেক বাড়িয়ে দিতে পারে। জনপ্রিয় অভিনেতা আজিজুল হাকিমের কথাটা অনেকটা তেমনই। তার কাছে ভালোবাসার দিনটির গুরুত্বটা অন্য আরেকটা বিশেষ দিনের মতোই। মেয়ে নাসাহ আর হৃদের কাছ থেকে যখন ছোট প্যাকেটে মোড়া উপহারের সঙ্গে 'বাবা, তোমাকে ভালোবাসি' কথাটা শোনেন, তখন তার মনে হয় ভালোবাসা দিবস কেন প্রতি মাসে একবার করে আসে না? মূলত ভালোবাসার পরিধিটা ঠিক এমনই। ভাই-বোন, মা-বাবা, বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়স্বজন_ সব সম্পর্কের মধ্যেই ভালোবাসা এক বিরাট সেতুবন্ধ। আর এ বিশেষ দিনের ভালোবাসাও সবার জন্যই। অভিনেতা শহীদুজ্জামান সেলিম দম্পতির কাছে ভালোবাসার দিনটি অনেকটা তেমনই। ওই দিনটিতে রোজি সেলিম নিজ হাতে রান্না করেন। পরিবারের সবাই মিলে একসঙ্গে খেতে বসেন। কখনও বা বাইরে ঘুরতে যান মেয়েদের সঙ্গে নিয়ে। আর এ সময়ের জনপ্রিয় জুটি তাহসান-মিথিলার কাছেও ভালোবাসা দিবসটি অন্যরকম অনুভূতির। দু'জনে নিজেদের মতো করে সময় কাটানো, একটু লংড্রাইভে বেরিয়ে পড়া, রাতের আলো-আঁধারিতে ডিনার করে প্রফুল্ল মনে বাসায় ফেরা... এমনভাবেই কেটে যায় বিশেষ দিনটি। তবুও অনেক কথা থেকে যায়, কারও কারও ক্ষেত্রে বছরের পর বছর পাশাপাশি একসঙ্গে চলেও বলা হয় না 'ভালোবাসি'; কিংবা একপেশে ভালোবাসায় নিজের অস্তিত্বকে হুমকির মাঝে ফেলে দিয়ে হারানোর ভয়ে ভালোবাসা থেকে দূরে থেকে যাওয়াও ভালোবাসা দিবসকে অনেক ব্যথিত করে দেয়। সেই জায়গায় যেন ভালোবাসা দিবস পেঁৗছতে পারে না।

*ভালোবাসার বিজ্ঞান *




‘ক্লাউড নাইন’-বলা হয় মানুষ যখন প্রেমে পড়ে তখন সে ক্লাউড নাইন-এ থাকে। আরও সহজ করে বললে, এত ভালোলাগার অনুভূতিতে বিভোর থাকে যে খাটিঁ বাংলায় বলা যায়, মানসিকভাবে সুখের সপ্তম আসমানে অবস্থান করে। সাধারণভাবে মানুষ তার বুকের বামপাশে থাকা হৃদয় আর তাতে জেগে ওঠা অনুভূতি নিয়ে যত গল্প, গান আর কবিতার সমুদ্রেই সাঁতার কাটুক না কেন, বিজ্ঞান সেই হৃদয় আর মস্তিস্কের পরতে পরতে গবেষণা চালিয়েছে মানুষের ভালোবাসার বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা বের করতে। যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার ‘ইন্সটিটিউট অফ হার্টম্যাথ’ টানা ২০ বছর ধরে তীক্ষ নজর রেখেছিল হৃদয়ের অলি-গলিতে, যাতে করে জানা যায় মানুষের আবেগ, অনুভুতি আর প্রেম বা ভালোবাসার কলকাঠি নাড়ে শরীরের কোন অংশ বা কোন উপাদান। এই গবেষণায় বেরিয়ে এসেছে যে, মানুষের হৃদয় থেকে এক ধরণের (ইলেকট্রম্যাগনেটিক ফিল্ডস) ত্বরিত চুম্বকক্ষেত্র নি:সৃত হয় এবং এটি নির্ভর করে আবেগের ধরণের উপর। আরও মজার ব্যাপার হলো, কখনো কখনো মানুষের শরীরের চতুর্দিকে কয়েক ফুট পর্যন্ত এই ত্বরিত চুম্বক-ক্ষেত্রের রেশ পাওয়া যায়।   প্রেমে পড়লে ‘গাল লাল হয়ে যায়, হৃদস্পন্দনের গতি বেড়ে যায়, হাতের তালু ঘেমে যায়’-এসব লক্ষণের কথা বলতে অবশ্য কারও বিশেষজ্ঞ হওয়ার দরকার হয় না। কারণ শুধু হার্টম্যাথ ইন্সটি্টিউট নয়, হৃদয় নিয়ে বা হৃদয়ঘটিত রহস্যজনক ব্যাপার-স্যাপার নিয়ে সব মানুষই-তো প্রতিদিনই কোন না কোনভাবে গবেষণা করছে। তবে, প্রাতিষ্ঠানিক গবেষণা থেকে এটা বেরিয়ে এসেছে যে, প্রেমে পড়লে মানুষের শরীরের ভেতরে বেশ কিছূ রাসায়নিক পরিবর্তন আসে। আর এতে কলকাঠি নাড়ে কয়েক ধরণের হরমোন। অর্থাৎ প্রেমে পড়ার ঐ তিনটি ধাপে আলাদা আলাদা হরমোন মুখ্য ভুমিকা পালন করে। লালসা: শুনতে যেমনই শোনা যাক, প্রেমে পড়ার শুরুতে লালসা’ই প্রথম ভুমিকা পালন করে। এর জন্য অবশ্য কাউকে দোষ দেয়া ঠিক হবে না। কারণ, দোষ হলে তা টেস্টোষ্টেরন আর অস্ট্রোজেন নামের দুটি লালসা জাগানিয়া হরমোনের দোষ। এই দুটি হরমোন মানুষকে এমনভাবে তাড়িত করে যে বলা হয়, এই হরমোন দুটির প্রভাবে প্রেমে পড়লে একেবারে মরিয়া আচরণ পর্যন্ত করতে পারে কেউ। তাহলে, এই দুটি হরমোন দ্বারা যারা বেশি প্রভাবিত তারাই হয়তো প্রেমের জন্য অনেক কিছুই করতে পারে-সেটা মহানুভবতাও হতে পারে, হিংস্রতাও হতে পারে। আকর্ষণ: এটা প্রেমে পড়ার দ্বিতীয় ধাপ। লালসা’র কারণে এই পরের ধাপে মানুষ একজন অপরজনের প্রতি আকর্ষণ অনুভব করতে থাকে। বলা হয়, এটাই প্রেমের প্রকৃত ধাপ। এই ধাপে পৌঁছালে মানুষ পছন্দের ঐ মানুষটি ছাড়া অন্য কিছুই ভাবতে পারে না। এমনকি খাওয়া-ঘুমানোও নাকি ভুলে যায়। এ পর্যায়ে নেতৃত্বে চলে আসে,‘মনোয়ামাইন’ নামে এক গুচ্ছ স্নায়ুকোষ। এর একটি হলো, ডোপামাইন। অবাক ব্যাপার হলো, কোকেন বা নিকোটিন নিলে এই স্নায়ুকোষ যেমন সাড়া দেয়, প্রেমের অনুভতিতেও ঠিক একইভাবে সাড়া দেয়। এরপর বলাই যেতে পারে যে, প্রেমে পড়াটা এক ধরণের নেশায় আসক্ত হওয়ার মতো। ডোপামাইন সক্রিয় হয়ে ওঠার সাথে সাথে নড়েচড়ে বসে এড্রিনালিনও। আর তার ফলেই হাতের তালু ঘামতে থাকে, গাল লাল হয়ে যায়, বেড়ে যায় হৃদস্পন্দন। আকর্ষণের এই ধাপে এসে ‘সেরোটোনিন’ নামের এক রাসায়নিক উপাদানের কথা না বললেই নয়। কারণ, এটি প্রেমে আসক্ত কাউকে সাময়িকভাবে প্রকৃত অর্থেই পাগল বানায়। সম্পৃক্ততা: এটাকে বলা হচ্ছে, সম্পর্কের উচ্চতর ধাপ। এই ধাপেই নির্ধারিত হয় সম্পর্কের স্থায়ীত্ব। কারণ, প্রেমের ক্ষেত্রে মানুষ কখনোই শুধু আকর্ষণ পর্যন্ত সীমাবদ্ধ থাকতে পারে না। এই পর্যায়ে পৌঁছালেই মানুষ বিয়ে থেকে শুরু করে সংসার পর্যন্ত স্বপ্ন দেখে। তবে সম্পর্কের এই স্থায়ীত্বের অনুভূতি আনার জন্য দুটি হরমোনকে কৃতিত্ব দিতেই হবে। এর একটি ভাসোপ্রেসিন, অন্যটি অক্সিটোসিন। মা যখন সন্তান জন্ম দেয় তখন এই অক্সিটোসিন হরমোন নির্গত হয়। এই হরমোনের কারণেই মায়ের সাথে সন্তানের বাঁধন তৈরি হয়। এতকিছু জানার পর, প্রেম বা ভালোবাসা হরমোনের খেলা এমনটা মনে হতেই পারে। তবে, এখানেই ইতি টানা শেষ হবে না। কারণ মানুষ কখনো কখনো জিন দ্বারাও প্রভাবিত হয়। যেমন: দীর্ঘস্থায়ী সম্পর্ক তৈরির ক্ষেত্রে কাউকে যদি এমন চিন্তা করতে দেখেন যে..ঐ নির্দিষ্ট মানুষের সাথে তার সম্পর্ক হলে পরবর্তী প্রজন্ম কেমন হবে, তাহলে বুঝবেন সে এক্ষেত্রে জিন দ্বারা প্রভাবিত হচ্ছে। তবে, হরমোন আর জিন এর সঠিক তথ্য থাকলে বিজ্ঞানের পক্ষে কোন একটা সম্পর্কের ভবিষ্যতও বলে দেয়া সম্ভব। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, এখনো সহজলভ্য নয় এই বিজ্ঞান প্রেমে পড়ার ক্ষেত্রে বেশিরভাগ সময়ই চেহারা বেশি গুরুত্ব পায়। ভূমিকা আছে গন্ধেরও। তবে এসবের মধ্যে দিয়ে মানুষ্ আসলে নিজের অজান্তে তেমন মানুষই খোজেঁ যারা দেখতে বা গন্ধের দিক দিয়ে বাবা-মা’র মতো। চমকে ওঠার মতো একটা কথা বলে এই ‘ভালোবাসার বিজ্ঞান’ পর্ব শেষ করি। সেটা হলো, গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, প্রেমে পড়লে মানুষের মাথা বা ব্রেন যেভাবে কাজ করে, যে কোন ধরণের মানসিক অসুস্থতার ক্ষেত্রেও মাথা বা ব্রেন একই রকম কাজ করে। 

*নতুন সম্পর্কের টান*

 নতুন সম্পর্কে বিশ্বাসী আমরা, পুরনোকে ভুলে যাই। তাই মাঝে মাঝে নতুন সম্পর্কের ভিড়ে কেন জানি সেই পুরনো সম্পর্কগুলো হারিয়ে যায়... সম্পর্ক মানেই কিছু আবেগ, অনুভূতি আর অদৃশ্যময় বন্ধনের আবদ্ধতা। আমরা কেউই সে আবদ্ধতার বাইরে নই। জীবনের প্রয়োজনে কিছু আধো ছেঁড়া সম্পর্কও তাই আমাদের মেনে নিতে হয়। মেনে নিতে হয় সম্পর্কের লাঞ্ছনা-বঞ্চনাসহ আরও কত কী! তাই তো অবস্থানভেদে সম্পর্কের সংজ্ঞাও অনেক হয়। কখনও কখনও সম্পর্ক একপ্রকার মায়া। সে মায়া আমরা কখনোই কাটিয়ে উঠতে পারি না। পারি না সে অদৃশ্য বন্ধনের অদৃশ্য সব গিঁট খুলে দিতে। এতদসত্ত্বেও সম্পর্কের কিছু টান বেশিদিন টিকে থাকে না। আবার একেবারে ছিঁড়েও যায় না। তবুও দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা সম্পর্কে কিছু পরিবর্তন আসে। সেই সঙ্গে নতুন নতুন সম্পর্কের বিষয়ে টান আসে। নতুন সম্পর্কের আড়ালে এক সময় পুরনো সম্পর্ক আকাশের গাঢ় মেঘের আড়ালে লুকিয়ে রয়। নতুনের ডাকে আমাদের মাঝে পুরনো সম্পর্কের অদৃশ্য দেয়াল তৈরি হয়। এদের কেউ হারাতে হারাতে একবারে অভিমান নিয়ে হারিয়ে যায়। নয়তো বদলায়। নিজের জীবনশৈলীকে পাল্টায়। এত সম্পর্কতেও পরিবর্তন আসেতে পারে। স্থায়ীভাবে জোড়া লেগে যেতে পারে ধূসর হাওয়ার সম্পর্কগুলো। আমাদের চারপাশের যত সম্পর্ক রয়েছে সবগুলোকে দু'ভাগে ভাগ করা যায়। এর প্রথমটি পারিবারিক সম্পর্ক আর দ্বিতীয়টি সামাজিক সম্পর্ক। পারিপাশর্ি্বক বিবেচনায় বেঁচে থাকতে এ দুটি সম্পর্কের প্রতিই আমাদের শ্রদ্ধাশীল হতে হবে বলে মনে করেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ও হাসপাতালের মনোরোগ বিশেষজ্ঞ (এমবিবিএস, এমডি-সাইকিঅ্যাটরি) ডা. ওয়াসিমা রহমান। তিনি বলেন, আমাদের মাঝে কিছু সম্পর্ক রয়েছে যা ভেঙে ফেলাই ভালো। যেমন পরিবার বা বন্ধুদের মধ্যে কেউ যদি নেশাগ্রস্ত হয়, সে ক্ষেত্রে সম্পর্ক ভেঙে ফেলাই ভালো। তবে সম্পর্কটি ভাঙার আগে তাকে সুস্থ পথে ফেরানোর চেষ্টা করা উচিত। সম্পর্ক আড়াল যদি আমার থেকেই হয়, তবে তার সব দায় আমারই_ এটা স্বাভাবিক। তাই প্রথমেই আমাকে যে বিষয়টা খেয়াল রাখতে হবে তা হলো, পরিবার বা সামাজিক কোনো সম্পর্কের গুরুত্বটা আমার কাছে বেশি। ওই মুহূর্তে যে সম্পর্কটা মেনে চলা উচিত, তখন আমাকে সেদিকেই আগে যেতে হবে। আমাদের সমাজে বিয়ের মাধ্যমে বাবা-মায়ের সঙ্গে সম্পর্কের আড়াল বেশি সৃষ্টি হয়। তাই এক্ষেত্রে প্রয়োজনটার গুরুত্ব বেশি দিতে হবে। ব্যস্ততার মাঝেও নিজেকে সময় দিতে হবে। বাবা-মা, ছেলেমেয়ে এমনকি স্ত্রীকেও সময় দিতে হবে। পারিবারিক সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে এই নিয়মের বাইরে কখনোই কিছু নয়। তবে সম্পর্কের বাইরের আত্মীয়-স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশীকে যতটুকু সম্ভব সময় দিতে হবে। মনে রাখতে হবে আমাদের চারপাশের সব সম্পর্ক আমাদের নতুন করে বেঁচে থাকার একেকটি উপাদান। সম্পর্ক বিষয়টি দ্বৈত। এর এক পাশ আড়াল হবে তো অন্য পাশ জেগে উঠবে। তাই কখনো যদি মনে হয়, 'আমাকে কেউ আড়াল করতে চাইছে' তখন নিজেরও কিছু করার থাকতে পারে। প্রথমেই বুঝতে হবে যার দ্বারা সম্পর্ক আড়াল হচ্ছে সে কী আদৌ তা ইচ্ছা করে করছে, নাকি আপনার প্রতি তার মাঝে কোনো ভুল ধারণা জন্ম নিয়েছে? এমন কিছু প্রশ্ন যদি আপনার মনে জাগে সে ক্ষেত্রে আপনি তাকে সরাসরি জিজ্ঞাসা করতে পারেন কেন সে এমনটি করছে। সে যদি ব্যস্ততার প্রসঙ্গ তোলে তাহলে তা নিয়ে আপনাকেই ভাবতে হবে। তার ব্যস্ততায় আপনাকেই সম্পর্কের হাল টেনে ধরতে হবে। আপনাকে নিয়ে তার মধ্যে কোনো বিরূপ ধারণা জন্মালে আপনার দ্বারাই সে মুখোশ উন্মোচন করতে পারেন। এতে সম্পর্ক থাক বা না থাক আপনার প্রতি অন্তত তার ভুল ধারণার অবসান ঘটবে। মনে রাখবেন, সম্পর্কের টান যদি দু'দিক থেকেই ছিঁড়ে যায় তবে তা জোড়া লাগানো বেশ কঠিন হয়ে দাঁড়াবে।

*ভালোবাসা ছাড়া আর আছে কী *



ভালোবেসে যাঁরা ঘর বেঁধেছেন, তাঁরা সবাই মনে করেন—প্রতিটা দিনই ভালোবাসার দিন। তার পরও সারা বিশ্বে ১৪ ফেব্রুয়ারিকে ‘বিশ্ব ভালোবাসা’ দিবস হিসেবে গ্রহণ করেছে সবাই। আমাদের সাংস্কৃতিক অঙ্গনের পাঁচ তারকা-দম্পতির মুখোমুখি হয়েছিল আনন্দ। জেনে নিন ভালোবাসার ছোট্ট বাসায় কেমন আছেন তাঁরা! তিশা-ফারুকী প্রেমের বয়স পাঁচ বছর, বিয়ের বয়স সাত মাস। প্রতিদিন সকালে দুজন চলে যান নিজ নিজ কাজে। সারা দিন মুঠোফোনে কথা আর রাতের বেলা একসঙ্গে বসে খাওয়া, রাত জেগে টিভি দেখা—এই তাঁদের রুটিন। এর মধ্যেই রয়েছে খুনসুটি আর ভালোবাসা। তিশার মন্দ দিক কী? প্রশ্ন শুনেই ফারুকী তিশার কোর্টে পাঠালেন প্রশ্নটা, ‘এই, তোমার মন্দ দিক কী?’ তিশা বললেন, ‘তুমি বলো। আমিও শুনি।’ এবার ফারুকী বিপদে। একটু ভেবে বললেন, ‘একটা খারাপ দিক আছে। সকালবেলা ঘুম থেকে ওঠার পর আমার অভ্যাস হচ্ছে খবরের কাগজে চোখ বোলানো। তিশার এটা একদম অপছন্দ। ওই সময়টা তিশা কাজে লাগাতে চায়, চায় সারা দিনের কর্মব্যস্ততা জানাতে। আর একটা খারাপ দিক, টেলিভিশনের রিমোটটা থাকে ওর দখলে। ওর পছন্দের চ্যানেল দেখতে হয়।’ প্রশ্ন করলাম, সংসার কি তিশা-শাসিত? ফারুকীর মুখে একগাল হাসি, ‘পুুরোপুরি। ও যা বলে আমি এই সংসারে তা-ই পালন করি। এমনকি আমার প্রতিদিনের পকেট-খরচটাও তিশা হিসাব করে দেয়। ওই টাকাতেই সারাটা দিন চলতে হয়।’ তিশা অবশ্য ফারুকীর কথায় সম্মতি দিয়ে এর একটা ব্যাখ্যাও দিলেন। ‘আসলে, সংসার করতে তো একটা ঘর লাগে। আর ঘরের আগে প্রয়োজন হয় একটা পিলারের। ফারুকী হচ্ছে আমার সংসারের পিলার। ফারুকী মানিব্যাগ হারিয়ে ফেলে। এ জন্য আমি নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা এক জায়গায় রেখে দিই। ও ওখান থেকে টাকা নেয়। তা ছাড়া ফারুকী নিজেকে একজন নির্যাতিত স্বামী বলে পরিচয় দিতে মজা পায়। আমি ওকে খুশি রাখতেই টাকা-পয়সা নিয়ন্ত্রণ করি।’ বলছিলেন তিশা। কে বেশি ঝগড়াটে? ফারকী বললেন, ‘এই সাত মাসে সে রকম ঝগড়াঝাটি হয়েছে বলে মনে হয় না। যতটুকুই খুনসুটি হয়েছে, সেই বিচারে তিশা একটু বেশি নম্বর পাবে।’ তিশা বললেন, ‘ফারুকীর একটা ব্যাপারে আমি খুবই ভয় পাই। অত্যন্ত বাজেভাবে রেগে যায় ও। আমি তখন চুপ মেরে যাই। আবার আমি যখন রেগে যাই,..।’ ফারুকী কথা কেড়ে নিয়ে বলেন, ‘তিশা রেগে গেলে আমি সঙ্গে সঙ্গে স্যরি বলি। তবে সরাসরি বলি না। ওর চারপাশে ঘুরঘুর করতে থাকি। বিভিন্ন বিষয়ে প্রশ্ন করি। জানতে চাই ওর কাজের খবর। পরিবারের খবর। তিশা তখন বুঝতে পারে যে আমি স্যরি বলার জন্যই এমনটা করছি। ও হেসে দেয়।’ সংসারজীবনে দুজনই দুজনকে চমক দেওয়ার জন্য তৈরি থাকেন। যেমন, ফারুকী দেশের বাইরে গেছেন। ফেরার দিন হয়তো ফারুকী তিশাকে ফোন করে জানতে চাইলেন, ‘এই, তুমি কোথায়?’ তিশা জানালেন শ্রীপুরে। ফারুকী দেশে এসে আবার ফোন করলেন তিশাকে। ‘তুমি কোথায়?’ তিশা বললেন, ‘ও, ফারুকী! তুমি চলে আসছ! স্যরি, আমি না এখনো কাজ শেষ করতে পারিনি। তুমি বাসায় যাও, আমি আসছি। এখানে অনেক বৃষ্টি হচ্ছে। রাগ কোরো না।’ সরয়ার ফারুকী বাসায় ঢুকে দেখেন ঘরের মধ্যে একটা ভূত বসে আছে। ‘এই ভূতটাই হচ্ছে তিশা। ও আমাকে এভাবেই চমকে দেয় বলে আমি ওকে ভূত বলে ডাকি।’ বলছিলেন ফারকী। ফারুকীও তিশাকে অনেক কিছু দিয়ে চমকে দিতে চান। কিন্তু উৎসাহ এতটাই থাকে যে চমক দেওয়ার আগেই সব বলে দেন। তিশার শুটিং। ফারুকীর ফোন, ‘তিশা, তুমি কোথায়?’ তিশার উত্তর, ‘উত্তরায় শুটিংয়ে।’ ফারুকী বললেন, ‘তিশা, তুমি থাকো, আমি আসছি, তোমাকে চমক দেব। চমক আর দেওয়া হয় না। এটাই বোধহয় ভালোবাসা।’ আসছে ভালোবাসা দিবসে কী করছেন তিশা-ফারুকী? তিশা বললেন, ‘ফারুকী ব্যাংককে থাকবে আর আমি শুটিংয়ে। ফারুকী দেশের বাইরে না গেলে দুজন মিলে একটা পরিকল্পনা তো করবই। বিয়ের পরে আমরা প্রথম ভালোবাসা দিবস পাচ্ছি। অবশ্য প্রতিটি দিনই আমাদের ভালোবাসার দিন। ’  সাগর মৈত্রী চাঁদনী-বাপ্পা ‘তুমি চোখে রাখো চোখ/ চোখে চোখে কথা হোক’ চাঁদনীর পানে চেয়ে বাপ্পা বোধহয় এটাই বোঝাতে চাইছিলেন। কারণটা কি জানেন, রাত নয়টা থেকে দলছুটের সরদারটা নিজের স্টুডিওতে বসে ছিলেন চাঁদনীর অপেক্ষায়। ‘শ্যাওলাটাকে আঁকড়ে ধরে নদীর খাঁজে শুতে রাজি’ গাওয়া বাপ্পা মজুমদার মনে মনে যতই বলুন না কেন, ‘তাড়াতাড়ি আসো, চাদনী’, কিন্তু পথের পায়ে তো বাঁধা যানজটের শিকল আর নৃত্যশিল্পী চাঁদনীর পায়ে বাঁধা নাচের ঘুঙুর। ঢাকা শহরে যেহেতু তাঁরা দুজন একসঙ্গে বাসা বেঁধেছেন তাই এক-আধটু নাগরিক জ্বালা তো পোহাতেই হবে। সেটা জেনেই বোধহয় বাপ্পাও তাঁর মুগ্ধ করা হাসিটা হেসে চাঁদনীকে একঝলক দেখে গেলেন। এরপর স্টুডিওতে ঢুকে কাজের ছলে চাঁদনীকে একটু বুঝিয়ে দিলেন, ‘মন ছুঁয়েছ মন দিয়েছি/ আছে কিছু দেনা/ তাই বলে কি ভাবছ নাকি—মনটা তোমার কেনা?’ মিষ্টি অভিমানের ছোট্ট পালার ক্ষণটা পোক্ত হওয়ার আগেই বাপ্পা ও চাঁদনী হাসিমুখে বসে পড়লেন আনন্দের মুখোমুখি। সুরদরিয়ার নাবিক বাপ্পা আর নৃত্যতনয়া চাঁদনীর সম্পর্ক অনেক দিনের। দুজনের প্রশংসায় পঞ্চমুখ তাঁরা। চাঁদনী যদি বলেন, ‘বাপ্পা কাজের প্রতি খুবই সিরিয়াস’, বাপ্পাও সঙ্গে সঙ্গে শুনিয়ে দেন, ‘আমার প্রতিটা কাজেই চাঁদনীর সাপোর্ট সবচেয়ে বেশি’। বাপ্পা বলেন, ‘আমরা দুজনই সারা দিন গান, শুটিং, নাচ নিয়ে ব্যস্ত থাকি। তাই প্রায়ই দিনের বেলা দেখা হয় না আমাদের।’ এ কারণেই রাতের প্রহর কয়টি সিনেমা দেখে, গল্প করে আর পারসিয়া ও পুটলিকে (তাঁদের পোষা কুকুর) আদর করতে করতেই কাটিয়ে দেন বলে জানালেন চাঁদনী। তার পরও যান্ত্রিক জীবনের শত ব্যস্ততার মধ্যেও বাপ্পা চাঁদনীকে আইসক্রিম খাওয়াতে নিয়ে যান, রাতে বাইরে খেতে নিয়ে যান, দুজন একসঙ্গে ঘুরতে বেরিয়ে পড়েন। চাঁদনীও তাই বাপ্পার জন্মদিনে, বাপ্পার বাবা বারীণ মজুমদার ও বাপ্পার মায়ের জন্মদিনে ছায়ার মতো লেগে থাকেন বাপ্পার সঙ্গে। চাঁদনীর বিশেষ দিনগুলোতে হাতে কোনো কাজ রাখেন না বাপ্পা। যেমন, চাঁদনীর শেষ জন্মদিনে বাপ্পা ও চাঁদনী দুজন মিলেই ব্যাংককে গিয়েছিলেন। এ ছাড়া কাজপাগল বাপ্পা কিন্তু সময় করে ভালোবাসার উপহার দিতে ভোলেন না, সে কথাও মনে করিয়ে দিলেন চাঁদনী। গেল বছর ভালোবাসা দিবসে বাপ্পা মজুমদার চাঁদনীকে তাঁর প্রিয় পোষা কুকুর পুটলিকে উপহার দিয়েছিলেন। মজুমদার পরিবারের কর্তা-গিন্নি দুজনই প্রাণীপ্রিয়। তবে একটাতেই বাপ্পা-চাঁদনীর অমিল। গাল ফুলিয়ে সে কথাই জানালেন বাপ্পার স্ত্রী চাঁদনী, ‘আমি কফি পছন্দ করি, আর বাপ্পার পছন্দ চা।’  আলী আসিফ তিনা-রিয়াজ তিন বছর হলো বিয়ে হয়েছে তাঁদের। গলফ হাইটসের বিশাল বাসার মধ্যে ঢুকে দেখা গেল বেশ শান্ত পরিবেশ। কথাটি বলতেই তিনা বললেন, ‘মোটেও না। সারাক্ষণ আমরা দুজন যা করি, তাতে তো মনে হয় এ বাসায় অনেক মানুষ থাকে। এই যেমন ধরুন, আমরা ছোঁয়াছুঁয়ি খেলি। ও তো টিভির রিমোটটা নিজের নিয়ন্ত্রণে রেখে সারাক্ষণ এইচবিও চ্যানেলে অ্যাকশন ছবি দেখে। ওর সঙ্গে থাকতে থাকতে আমিও এখন এইচবিও দেখি।’ বলছিলেন তিনা। সংসারে কার বেশি অবদান? রিয়াজ বললেন, ‘অবশ্যই তিনার।’ তিনা বললেন, ‘দুজনেরই। আসলে, আমরা দুজনই এক মন, এক প্রাণ। জানা গেল, দুজনের মধ্যে মাঝেমধ্যেই খুনসুটি হয়, মান-অভিমান হয়। আর সবকিছুতেই দ্রুত সন্ধি করেন রিয়াজ। একটি ঘটনা: তিনার জন্মদিন। রিয়াজ এমন একটা ভাব দেখালেন যে, তাঁর সে কথা মনেই নেই। তিনা রাগ করে বাবার বাড়ি চলে গেলেন। রিয়াজ এই সুযোগে কাঁটাবনে গিয়ে লাভ বার্ড আর নানা রকম পাখি এনে নিজেদের ঘরে রাখলেন।

*হৃদয় সমর্পণ*



ক্যাম্পাসে ক্লাস শুরু হতে না হতেই একজনকে ভালো লেগে গেল। তারপর মনের কথা জানানোর কত চেষ্টা। এসএমএস, ফেইসবুক কিংবা সহপাঠীর সাহায্য নিতেও পিছপা হন না। অনেকে আবার সাহস করে ভালো লাগার কথাটা বলতে পারে না। মনের পরী মনেই থেকে যায়। এবার থাকছে প্রিয়জনকে ভালোবাসার কথা জানানোর দারুণ কৌশল। সামনে দাঁড়িয়ে : ভালোবাসার কথা জানানোর সবচেয়ে ভালো উপায় সামনে দাঁড়িয়ে তার সঙ্গে সরাসরি কথা বলা। ফুল হাতে সামনাসামনি ভালো লাগার কথা বলার মধ্যে যে অকৃত্রিম আবেগ, তা এসএমএস বা ফেইসবুকে নেই। নিজেই বলুন : কথাটা নিজেই বলুন। বলা তো যায় না, মধ্যস্থতাকারী হিসেবে যার সাহায্য নিয়েছেন, দেখা গেল সাহায্য নিলে আপনাকে সরিয়ে তিনি নিজেই মাঠে নেমে পড়েছেন! বন্ধু হোন : চলতি পথের হঠাৎ দেখায় মনে ধরে গেল, তারপর গানে গানে প্রেম নিবেদন...। এমন ঘটনা কেবল সিনেমায়ই সম্ভব; বাস্তবে নয়। কাউকে ভালো লাগলে কাছাকাছি যাওয়ার চেষ্টা করুন। আপনাকে ভালোভাবে জানার সুযোগ দিন। তারপর সুযোগ বুঝে...। মোক্ষম সময় : পছন্দের মানুষ হয়তো পড়াশোনা কিংবা ব্যক্তিগত নানা ঝামেলায় অস্থির। এমন সময় প্রেমের প্রস্তাব দিলে অবশ্যই না শুনতে হবে। ফলে মেজাজ-মর্জি বুঝে বলুন। সবচেয়ে ভালো হয় বিশেষ দিন, যেমন_ভালোবাসা দিবস, পহেলা ফাল্গুন কিংবা পহেলা বৈশাখের শুভলগ্নে মনের কথা জানানো। কাছের মানুষ : প্রিয় মানুষের বন্ধুরা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তার বন্ধুদের সঙ্গে যদি আপনার সদ্ভাব থাকে, তাহলে ধরে নিন, কাজ অর্ধেক হয়ে গেছে। তারাই আপনার নানা গুণ-কীর্তি জানিয়ে তাকে রাজি করাবেন। দুঃসময়ের সঙ্গী : দুঃসময়ে তাকে সাহস দিন, পাশে থাকুন। নিশ্চিত, মন গলবে। সাগরের কিনারে : মনের মানুষ যদি হয় সহপাঠী, তাহলে তার সঙ্গে যান ডিপার্টমেন্টের স্টাডি ট্যুর কিংবা পিকনিকে। পাহাড়, সাগর আর অরণ্যের সানি্নধ্যে অতি পাষাণেরও মন গলতে বাধ্য। ধৈর্য ধরুন : মনের কথা জানানোর পর অপেক্ষা করুন। তাকে ভাবতে দিন। দিনে হাজার বার ফোন কিংবা এসএসএম করে উত্তর জানতে চাইলে ফল হবে হিতে বিপরীত। উপহারের আড়ালে : বিভিন্ন কারণেই যাঁদের পক্ষে সরাসরি মনের কথা জানানো সম্ভব হচ্ছে না, তাঁরা বেছে নিতে পারেন উপহার দেওয়ার দারুণ কার্যকর রাস্তা। তার পছন্দের বই, সিডি কিংবা ডিভিডি দিন। উপহারের সঙ্গে জুড়ে দিন মনের কথা। প্রিয় শিল্পীর গান শুনে তার মন গলতেই পারে। ইথারে ইথারে : মনের মানুষটি যদি রেডিও শুনতে পছন্দ করে, তাহলে তার পছন্দের এফএমে তাকে উৎসর্গ করে গানের অনুরোধ পাঠান; কাজ হবে। আলাদা হোন : তার কাছে নিজেকে তুলে ধরুন অন্যদের চেয়ে আলাদাভাবে। গতানুগতিক হ্যাংলামো কেউই পছন্দ করে না। তার পছন্দ : তার পছন্দ-অপছন্দ লক্ষ করুন। সে হয়তো রবীন্দ্রসংগীতের ভক্ত, আপনি মেতে আছেন মেটালিকা নিয়ে, তাহলে তো বরফ গলবে না। সবজান্তা হয়ে : ক্যাম্পাসের অনেক প্রেমই শুরু হয় পড়াশোনাঘটিত ব্যাপার থেকে। পর দিন পরীক্ষা নিয়ে প্রিয়জন হিমশিম খাচ্ছে, এমন দুর্দিনে আপনার পরামর্শ অথবা নোটের কপি তাকে ভরসা দেবে। অতঃপর কৃতজ্ঞতা স্বীকার হিসেবে হৃদয় সমর্পণ...। অন্তর্জালে যাত্রা : পছন্দের মানুষকে মনের কথা জানানোর জন্য সরাসরি কথা বলার বিকল্প না থাকলেও এসএমএস ও ফেইসবুক আপনার কাজ অনেকটাই সহজ করে দিতে পারে। সুন্দর এসএমএস কিংবা স্ট্যাটাসও আপনার প্রতি দুর্বলতার জন্ম দিতে পারে।? সাবলীল হোন : প্রিয়জনকে মনের কথা বলার সময় সাবলীল হোন। এ ক্ষেত্রে জড়তা নার্ভাসনেসেরই প্রমাণ দেবে।

ভালোবাসা দিবসের ভালো কিছু ওয়েবসাইট




ভালোবাসার সংজ্ঞা যুগে যুগে অনেকে অনেকভাবে দিয়েছে। তবে ভালোবাসার জয়ের কথা গেয়েছে সবাই। আমাদের দেশে বছরে অনান্য অসংখ্য দিবসের মত বিশ্ব ভালবাসা দিবস বা ভ্যালেন্টাইনস ডে পালন হচ্ছে বিগত কয়েক বছর ধরে। এর ইতিহাস সবারই জানা তার পরেও নতুন করে জেনে নিতে পারেন http://en.wikipedia.org/wiki/Valentine’s_Day, www.historychannel.com/exhibits/valentine বা www.history.com/minisites/valentine সাইট থেকে। ইন্টারনেটের এই যুগে পোষ্ট কার্ডের পরিবর্তে ই-কার্ডের ব্যবহার আর এসএমএস/এমএসএস অথবা ইমেইল। আর ভালোবাসা দিবসের কথা মাথায় রেখে বিভিন্ন ওয়েব সাইট ভালবেসে ভালোভাবে সাজানো হয়। এসব সাইট থেকে যেমন ই-কার্ড পাঠানো যায় তমেনই ভালোবাসার এসএমএস, কবিতা ইত্যাদি সংগ্রহ করা যায়। এমনই কিছূ ওয়েব সাইটের ঠিকানা দেওয়া হলো। www.mydearvalentine.com www.thelovemovie.com www.valentine1.com www.123greetings.com/events/valentines_day www.flickr.com/photos/tags/valentine http://valentinemovie.warnerbros.com www.theholidayspot.com/valentine www.celebrating-valentinesday.com www.marlo.com/holiday/v/vale.htm www.poemsforfree.com/valpo.html www.romanceforeveryone.com www.everythingvalentine.com

*বলা হয়নি ভালোবাসি *




দুজন পাশাপাশি আর মনে মনে জানি দুজনেরই মনের অনুভূতি। তবুও কেন যেন এ অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করা হয় না। বলা হয় না 'ভালোবাসি'। দূরত্বের সমস্যা নয়, দ্বিধাই আমাদের অনেককেই এমন নির্বাক করে রাখে। অথচ একটু সাহস করে মনের কথাটুকু বলে ফেললেই ছুঁয়ে ফেলা যায় ভালোবাসার রং। এ নিয়ে লিখেছেন প্রাঞ্জল সেলিম মানুষ যখন বিশ্ব ভালোবাসা দিবস সম্পর্কে জানত না, তখন পৃথিবীতে ভালোবাসার অভাব ছিল না। আজ পৃথিবীতে ভালোবাসার বড় অভাব। যেন তাই আজ একটি বিশেষ দিবসকে কেন্দ্র করে সৃষ্টি হয় ভালোবাসার গুণগান। কিন্তু ব্যাপারটা কি আসলে তাই? অনেকে বলবেন না, ভালোবাসা আসলে একটি মানবিক অনুভূতি এবং আবেগকেন্দ্রিক একটি অভিজ্ঞতা। বিশেষ কোনো মানুষের জন্য স্নেহের শক্তিশালী বহিঃপ্রকাশ হচ্ছে ভালোবাসা। তবুও ভালোবাসাকে বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে ভাগ করা যায়। আবেগধর্মী ভালোবাসা সাধারণত গভীর হয়, বিশেষ কারও সাথে নিজের সকল মানবীয় অনুভূতি ভাগ করে নেওয়া। আরও সঠিকভাবে বলতে গেলে, যেকোনো ব্যক্তি বা বস্তুর প্রতি অতিরিক্ত স্নেহ প্রায় সময় খুবই আনন্দদায়ক হতে পারে। আর এই অতি আনন্দদায়ক অনুভূতিই হলো ভালোবাসা। এখানে মানবিক আবেগটাই বেশি গুরুত্ব বহন করে। অনেকেই ভালোবেসে বিয়ে করেন, কিন্তু এই ভালোবাসার মানুষটিকে ভালোবেসে একটা সামান্য গোলাপ কিনে দেওয়ার কথাও মনে থাকে না তাদের। বাস্তবতার আড়ালে যেন হারিয়ে যায় সব। অথচ একসময় এই মানুষটারই ছোট থেকে ছোট ভালোলাগাগুলো ছিল অনেক কিছু। ইউনিভার্সিটি থেকে সব বন্ধুরা হয়তো কোথাও বাইরে খেতে গেছে। সেখানে সবাই পিজ্জা অর্ডার করল। সবার খাবার আনা হলে দেখা গেল, সাথে একটা বার্গারও চলে এসেছে। ছেলেটা তার পছন্দের মানুষটার জন্য আগে থেকেই বার্গার অর্ডার দিয়ে রেখেছিল, কারণ সে জানত তার পছন্দের খাবারের কথাটি। আবার দেখা গেল, ছেলেটা তার বন্ধুটির জন্য সারাদিন তার সাথে রয়েছে, কোনো কাজ করতে তাকে সাহায্য করছে। সেটা কি শুধুই বন্ধুত্ব নাকি তার থেকেও কিছু বেশি ভালোলাগা। আর বন্ধুরা তো সাথে নেই, শুধু সে-ই রয়ে গেছে। এই সাথে থাকা তো ভালোবাসার কারণেই। প্রিয় মানুষটার জন্য কেউ হয়তো ছুটে গেছেন তার পছন্দের ফুলটি কিনে আনার জন্য। কিংবা তাকে উপহার দিয়েছেন তার প্রিয় কোনো বই। খেয়াল রেখেছেন ভালোলাগার ছোটখাটো বিষয়গুলোর প্রতি। হয়তো সবাই মিলে গেছেন সিনেমা দেখতে। সবার ভোটে নির্বাচিত হয়েছে একটা মুভি। হঠাত্ মাঝখান থেকে মেয়েটা বলে উঠল, 'আমি এই সিনেমা না, অন্যটা দেখব।' সিনেমার নামটায় আর সবাই অবাক না হলেও ছেলেটা অবাক হয়, ছেলেটার মন একটু দুলে উঠল, কারণ এ-তো তার প্রিয় সিনেমা। মেয়েটা তার মনের খবর বুঝল কীভাবে! সবাই তার বন্ধু কিন্তু তার মাঝ থেকে মেয়েটাই শুধু বুঝল তার প্রিয় সিনেমার কথাটা। আবার হয়তো দুই বন্ধু কোথাও যাওয়ার পথে একসাথে থাকলেও কারও সাথে কারও কথা হয়নি। নিশ্চুপ ছিল দুজনেই। হয়তো কেউই বলার মতো কোনো কথা খুঁজে পাচ্ছিল না। কিন্তু তারপরও এই নিরবতা মোটেও অস্বস্তিকর মনে হয়নি তাদের কাছে। বরং এই মৌনতার মাঝেই মিশে ছিল তার মনের না-বলা কথাটা। সবাই তো বন্ধু। সবার ভালো লাগা, মন্দ লাগার খেয়াল রাখছে সবাই। কিন্তু এর মধ্যেই বিশেষ দুজনের যেন পরস্পরের প্রতি একটু বেশি নজর। একজন মুখ না খুলতেই বুঝে যাচ্ছে অপরজন। মেয়েটির বন্ধুদের কাছে ছেলেটি খোঁজ নিচ্ছে সে কী খেতে ভালোবাসে। ছেলেটির জন্য মার্কেট ঘুরে মেয়েটি খুঁজে বের করছে বিশেষ একটি টি-শার্ট। কিংবা রাতের বেলায় কেন একজনের ফোন ওয়েটিং পাওয়া গেল এ নিয়ে আরেকজনের অভিমান। পরীক্ষার আগে কেন ও পড়ছে না, এ নিয়ে বাড়তি উদ্বেগ। এ কি শুধু বন্ধুত্ব? নাকি বন্ধুত্বটা যে পরের ধাপে যেতে চলেছে তারই ইঙ্গিত? বুঝে নিতে হবে দুজনকেই। এগুলোর মধ্যেই যেন লুকিয়ে ছিল পরস্পরের প্রতি না-বলা ভালোবাসাটা। এসব টুকরো মুহূর্তগুলোকে সাথে করেই একটু একটু করে গড়ে উঠেছে আমাদের ভালোবাসার রাজপ্রাসাদটি। আর যদি তাই হবে, তাহলে বলতে হয় যে ভালোবাসার কোনো সীমা নেই, বয়স নেই। মনের মানুষটিকে কাছে পেলেই অথবা বিয়ের পরেই বাস্তবতার আড়ালে যে সব মিলিয়ে যাবে, তা ঠিক না। মনের মানুষটাকে যেকোনো মুহূর্তেই জানিয়ে দেওয়া যায়, না-বলা এই ভালোবাসার কথাটা। আর তাই আমাদের সবারই উচিত, 'অনেকদিন বলা হয় না ভালোবাসি' কথাটা বলে আফসোস না করে, এই মুহূর্তেই ভালোবাসার মানুষটিকে জানিয়ে দেওয়া মনের না বলা কথাটা।

বন্ধুতায় ভালোবাসায়

সূর্যের শেষ আলোটুকু যাই যাই করছে পশ্চিমাকাশে। ছবি তোলার পর্যাপ্ত আলো পাওয়া না-পাওয়া নিয়ে তাই সংশয় আলোকচিত্রীর চোখে-মুখে। ব্যস্ত রাস্তায় রিকশা আর যান্ত্রিক বাহনের দুরন্ত পদচারণ; এলোমেলো বিচ্ছিন্ন ছন্দ। এভাবেই কিছুক্ষণ; অতঃপর সজলকে হেঁটে আসতে দেখা গেল রাস্তার সব ব্যস্ততা আর গোধূলির আবির পেছনে ফেলে। বিপরীত দিক থেকে মমও নামলেন গাড়ি থেকে। এসেই পরিচিত সেই আন্তরিকতা। একে অপরের গলা ধরাধরি করে গলাগলি কিছুক্ষণ। নানা ভঙ্গিমায় ক্যামেরার স্ক্রিনে কিছু স্থির মুহূর্ত। তার পরের সময়টা কেবলই আড্ডার। প্রথমেই শুনে আসা যাক প্রথম পরিচয়ের গল্প। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় অনুষদের ছাত্র ছিলেন সজল। একই বিশ্ববিদ্যালয়ে মম পড়তেন নাট্যকলায়। দুজনের পরিচয়, দেখা, কথাবার্তা সেখানেই। মমর সব কিছু মনে নেই ঠিকঠাক। বলতে গিয়ে গুলিয়ে ফেলছেন- এখানে না ওখানে! সজল শুধরে দিলেন, 'রেজিস্ট্রার বিল্ডিংয়ের সামনেই প্রথম দেখা হয়েছিল, মনে করে দেখো।' মাথা দুলিয়ে, চোখ বুজে কিছুক্ষণ ভাবলেন মম। তারপর বললেন, 'যা-ই হোক। ওকে আমি চিনি অভিনেতা, মডেল সজল হিসেবেই। টিভিতে দেখতাম নিয়মিত।' সজল তখন বিশ্ববিদ্যালয়ে মমর সিনিয়র ভাই। অভিনয় করার কল্যাণে এমন কতজনের সঙ্গেই তো পরিচয় ঘটে রোজ! তখনকার আলাপগুলো তাই ছিল অতি ফরমাল- 'কেমন আছেন?', 'আপনার অভিনয় ভালো লাগে'- এই টাইপের। ২০০৬ সালের লাক্স-চ্যানেল আই প্রতিযোগিতায় শীর্ষ স্থান দখলের পর তৌকীর আহমেদের 'দারুচিনি দ্বীপ' ছবিতে অভিনয় করেন মম। চোখ পড়ে সজলের, 'এই মেয়ে তো দুর্দান্ত অভিনয় করে!' তার পর থেকে বন্ধুত্বের বরফ জমে একটু একটু করে। জমছে তো জমছেই। একটু সময়ের জন্যও এত দিনে বিন্দুমাত্র ভাঙন ধরেনি এ সম্পর্কে। সময়ের হাত ধরে 'আপনি' থেকে 'তুমি'তে নেমে এসেছেন মম। সজল অবশ্য প্রথম থেকেই 'তুই' বলতে অভ্যস্ত। বন্ধুত্বের নানা আকৃতি থাকে, ব্যক্তিভেদে ভিন্ন হয় তার রূপ। সজল ও মমর মাঝের বন্ধুত্বটা তাই একটু অন্য রকম। দুজনই দাবি করলেন, কাজের বাইরে তাঁদের দেখা হয়ে ওঠে না প্রায়। তার চেয়েও কম হয় মুঠোফোনে কথাবার্তা। শুটিং ইউনিটে দুজনই ব্যস্ত থাকেন চরিত্র আর ডায়লগ ভাবনা নিয়ে। সাহায্য করেন একে অন্যকে। মমর কথায় কান পাতলেই বোঝা যায় আসল ব্যাপার- 'সজলের একটা বড় গুণ হচ্ছে, প্রশংসাটা ও খুব ভালো পারে। এটা কিন্তু পজিটিভ। কোন ড্রেসে আমাকে সুন্দর দেখাচ্ছে বা খারাপ লাগছে, মেকআপ ঠিক আছে কি না অথবা অভিনয় ভালো হচ্ছে কি না, আরো ভালো করা যায় কিভাবে- সব কিছুই খুব নিখুঁতভাবে বলতে পারে সজল। কো-আর্টিস্ট হিসেবে এমন হওয়াটা খুবই ইমপরটেন্ট।' এর মানে এমন নয়, বন্ধু হিসেবে তাঁরা খুবই ফরমাল; বরং হৈ-হুল্লোড় আর দুষ্টুমি করেই কাটে পাশাপাশি-কাছাকাছির মুহূর্তগুলো। সজল কিন্তু মমকে পছন্দ করেন অন্য কারণে। শুনুন সজলের মুখেই, 'মমর ভেতরে বাঙালিয়ানা আছে। ও যে ড্রেসেই থাকুক না কেন, একটু গভীরভাবে তাকালে প্রথম দেখেই মনে হবে, সুন্দর একটা বাঙালি মেয়ে!' সজলের কথা শুনে পাশে বসা মম লজ্জায় কিছুটা লাল- 'ও, তা-ই! এটা কিন্তু জানা ছিল না সজল ভাই।' দুজনের ভেতরের এই কেমিস্ট্রি ব্যক্তিজীবনের গণ্ডি পেরিয়ে প্রভাব ফেলে কাজে। গুড পারফরম্যান্স; খুশি পরিচালক আর তারপরের ফলাফলটা? ভালো বলতে পারবেন দর্শকই। জনপ্রিয়তার মাপকাঠিতে এ জুটির প্রায় অর্ধশত নাটকের বেশির ভাগই উতরে গেছে সফলতার সঙ্গে। সজল তো বলেই ফেললেন, 'আমাদের দুজনের একসঙ্গে চলচ্চিত্রে অভিনয় করার দরকার ছিল।' চলচ্চিত্রে অভিনয় করছেন দুজনই। কিন্তু ভিন্ন ভিন্ন চলচ্চিত্রে। 'দারুচিনি দ্বীপ'-এর পর মম অভিনয় করতে যাচ্ছেন মাসুদ হাসান উজ্জ্বলের 'এই মুহূর্তে' ছবিতে। অন্যদিকে সজল অভিনয় শুরু করলেন তন্ময় তানসেনের 'রান-আউট' চলচ্চিত্রে। মমর এটা দ্বিতীয় চলচ্চিত্র হলেও এখানে এই প্রথম পা ফেলছেন সজল। তা-ই হয়ে গেল কিছু পরামর্শ আর অভিজ্ঞতা বিনিময়। বিদায় নেওয়ার সময় দুজনের চোখে-মুখেই একরাশ ভালো লাগার ছোঁয়া। চোখে চোখে কেবলই বলে যাওয়া- 'বন্ধু, ভালো থেকো, ভালো রেখো, আগলে রেখো ভালোবাসায়...