Pages

*ভালোবাসি তাই*

ভালোবাসা দিবসকে ঘিরে প্রিয় মানুষকে নিয়ে সবাই ব্যস্ত কল্পনার জগৎকে সাজাতে। কারও কারও মন চায় পছন্দের মানুষের হাত ধরে কোথাও হারিয়ে যেতে... লিখেছেন ওয়াজেদ মহান কয়েক দিন ধরেই ফারিহা ভীষণ ব্যস্ত। প্রতিদিনই সে নিয়ম করে বিভিন্ন শপিংমল ঘুরে বেড়াচ্ছে। খুব দেখেশুনে নিজের পছন্দমতো কিনেছে লাল শাড়ি। সঙ্গে লালটিপ, চুড়ি, জুতাসহ দরকারি সবকিছুই। তার অনেক স্বপ্ন এবারের ভালোবাসা দিবসকে ঘিরে। খুব সুন্দর করে সাজবে, দারুণ করে খোঁপা বাঁধবে আর সে খোঁপায় পরবে তার পছন্দের ফুল। ভালোবাসা দিবসে ভোরের আলো ফোটার পরপরই গিয়ে দাঁড়াবে অসীমের সামনে। অসীমকে অনেক বড় রকমের একটা সারপ্রাইজ দেওয়ার ইচ্ছা তার। ঠিক এভাবেই সারা পৃথিবীর কপোত-কপোতিরা স্বপ্ন বুনছে ভালোবাসা দিবসকে ঘিরে। শত বছর ধরে ভালোবাসা ছড়িয়ে আসা এ দিনটি প্রেমিক-প্রেমিকাদের কাছে এক বিশেষ গুরুত্ব নিয়ে হাজির হচ্ছে। এবারের আয়োজনেও কমতি হবে না কোথাও। শীতের শেষ দিনগুলোতে প্রকৃতির মধ্যে একটা হাহাকার আর শূন্যতা বিরাজ করলেও ভালোবাসা দিবসে এসে সেই শূন্যতা পুরোপুরি বিলীন হয়ে যায়। স্বপ্নদোলায় দুলতে দুলতে এই একটি দিনে এসে সবাই তার পছন্দের মানুষকে বলে ফেলতে চায়_ 'ভালোবাসি'। অনেকেই হয়তো পছন্দের মানুষকে ভালোবাসার বার্তাটা পেঁৗছে দিতে পারেন খুব সাহসের সঙ্গেই আবার অনেকের ক্ষেত্রে সেটা না বলাই থেকে যায়। সে যাই হোক না কেন, কয়েকটি বছর ধরেই বাংলাদেশের মানুষের কাছে ভালোবাসা দিবস অন্যরকম এক আবহ নিয়ে হাজির হচ্ছে। অনেকেই এ দিনটিকে নিরেট ভালোবাসার দিন হিসেবে মেনে নিলেও কারও কারও আছে ভিন্ন প্রতিক্রিয়া। ধানমণ্ডি সাতমসজিদ রোডে কথা হচ্ছিল চাকরিজীবী এ কে আজিমের সঙ্গে। তার কাছে ভালোবাসা দিবসের কথা জানতে চাইতেই বললেন, আসলে 'ভালোবাসা দিবস' নামে কিছু নেই। এটা আমাদের বর্তমান প্রজন্মের ধার করা একটি বিদেশি সংস্কৃতি, এটি দেশীয় সংস্কৃতির বারোটা বাজাচ্ছে। অনেকটা ক্ষুব্ধ কণ্ঠেই আজিম প্রতিবাদ জানালেন এ দিনটির গুরুত্ব নিয়ে। সে কথা না হয় মেনে নিলাম, কিন্তু রাসমিন-নাদির দম্পতির কাছে ভালোবাসা দিবস নিয়ে শোনা গেল ভিন্ন কথা। তাদের মতে, 'ভালোবাসা দিবস' পুরোপুরি ভিনদেশি একটা সংস্কৃতি ঠিক আছে; কিন্তু এখন যেহেতু এদিনকে ঘিরে মানুষ একটু বেশি আবেগতাড়িত হচ্ছে, ভালোবাসার চর্চা করছে, সেটা মেনে নিতে তো ক্ষতি নেই। তাতে বরং ভালোবাসার গভীরতা বাড়ে। অনেকেই আবার এ দিনটিকে অনেকটা ঈদের দিনের মতো মনে করে ফেলছেন। বাইরের সব ব্যস্ততা থেকে রীতিমতো ছুটি নিয়ে ওই দিনটি প্রিয়জনের সঙ্গে কাটানোর পরিকল্পনা করছেন। তেমনই শোনা গেল জনপ্রিয় টিভি অভিনেত্রী নাদিয়ার কণ্ঠে। তার ভাষায়, বিয়ের আগে আমার কাছে ভালোবাসার দিনটি ছিল অন্যরকম। সারাদিন শিমুলের সঙ্গে ঘুরে বেড়ানো, মজা করা, বাইরে খেতে যাওয়া... আর এখন আমি চেষ্টা করি ওই দিন নিজেকে ফ্রি রাখতে। একটা দিন দু'জনে একটু নিজেদের মতো করে কাটাতে। কিন্তু বিয়ের আগের ভালোবাসা দিবসের সঙ্গে এখনকার ভালোবাসা দিবসের আনন্দে অনেক পার্থক্য। আর সেটা হয়তো সময়ের প্রয়োজনেই। আসলে প্রতিটি মানুষের কাছেই ভালোবাসা আর ভালোবাসা দিবসের সংজ্ঞা তার নিজের মতো। কেউ হয়তো মুখে 'ভালোবাসি' বলেই ভালোবাসার সুখ খুঁজে পান; আবার কেউবা চান একটু বেশি কিছু। ভালোবাসা দিবস অনেক উত্তেজনা আর রোমাঞ্চকর হয়ে ধরা দেয়; আবার কারও কাছে বিপরীত। হয়তো কিছুই নয়, আবার কারও কাছে অনেক কিছুই। অনেকেই এ দিনটিকে সামনে রেখে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হন পরস্পরের প্রতি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ছোটখাটো কোনো বিষয় নিয়ে দু'জনের মনোমালিন্য ঝগড়ায় রূপ নেয়। ফলস্বরূপ ভালোবাসা দিবসে দু'জন দুই মেরুতে। কিন্তু নিজেদের মধ্যে প্রচণ্ড ভালোবাসা ও পারস্পরিক বোঝাপড়া থাকলে এমনটি হওয়ার কথা নয় বলে মনে করেন ঢাকা সিটি কলেজের ইংরেজি তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী রিপা। দাম্পত্য জীবনের তিনটি বছর হাসি-আনন্দেই পার করেছেন আর এ বিশেষ দিনটিতে তারা নিজেদের মধ্যেই পরিকল্পনা করে নিয়েছেন কীভাবে দিনটি পালন করবেন। বাস্তব অর্থে এ বিশেষ দিনে প্রিয় মানুষের জন্য একগুচ্ছ ফুল, ছোট একটা উপহার আর হাসিমুখে বলা 'ভালোবাসি' শব্দটিই তো ভালোবাসার গভীরতা অনেক বাড়িয়ে দিতে পারে। জনপ্রিয় অভিনেতা আজিজুল হাকিমের কথাটা অনেকটা তেমনই। তার কাছে ভালোবাসার দিনটির গুরুত্বটা অন্য আরেকটা বিশেষ দিনের মতোই। মেয়ে নাসাহ আর হৃদের কাছ থেকে যখন ছোট প্যাকেটে মোড়া উপহারের সঙ্গে 'বাবা, তোমাকে ভালোবাসি' কথাটা শোনেন, তখন তার মনে হয় ভালোবাসা দিবস কেন প্রতি মাসে একবার করে আসে না? মূলত ভালোবাসার পরিধিটা ঠিক এমনই। ভাই-বোন, মা-বাবা, বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়স্বজন_ সব সম্পর্কের মধ্যেই ভালোবাসা এক বিরাট সেতুবন্ধ। আর এ বিশেষ দিনের ভালোবাসাও সবার জন্যই। অভিনেতা শহীদুজ্জামান সেলিম দম্পতির কাছে ভালোবাসার দিনটি অনেকটা তেমনই। ওই দিনটিতে রোজি সেলিম নিজ হাতে রান্না করেন। পরিবারের সবাই মিলে একসঙ্গে খেতে বসেন। কখনও বা বাইরে ঘুরতে যান মেয়েদের সঙ্গে নিয়ে। আর এ সময়ের জনপ্রিয় জুটি তাহসান-মিথিলার কাছেও ভালোবাসা দিবসটি অন্যরকম অনুভূতির। দু'জনে নিজেদের মতো করে সময় কাটানো, একটু লংড্রাইভে বেরিয়ে পড়া, রাতের আলো-আঁধারিতে ডিনার করে প্রফুল্ল মনে বাসায় ফেরা... এমনভাবেই কেটে যায় বিশেষ দিনটি। তবুও অনেক কথা থেকে যায়, কারও কারও ক্ষেত্রে বছরের পর বছর পাশাপাশি একসঙ্গে চলেও বলা হয় না 'ভালোবাসি'; কিংবা একপেশে ভালোবাসায় নিজের অস্তিত্বকে হুমকির মাঝে ফেলে দিয়ে হারানোর ভয়ে ভালোবাসা থেকে দূরে থেকে যাওয়াও ভালোবাসা দিবসকে অনেক ব্যথিত করে দেয়। সেই জায়গায় যেন ভালোবাসা দিবস পেঁৗছতে পারে না।

No comments:

Post a Comment

আপনার মন্তব্য দিন