Pages

জীবনভর ধরে রাখুন ভালোবাসার তারুণ্য

amitumi_love forever
বিবাহিত দম্পতি হোক, কিংবা দীর্ঘ দিনের প্রেমিক যুগল… একটা অভিযোগ কিন্তু কমবেশি সকলের একই রকম। “ও বদলে গেছে”… “আগে অনেক সুন্দর সময় কাটাতাম”… “ও আমাকে আগের মত ভালবাসে না”… ইত্যাদি অভিযোগ ওঠেনি এমন সম্পর্ক খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। আর হবে নাই না কেন, অভিযোগ তো মিথ্যেও নয়। নারী-পুরুষের প্রেমময় সম্পর্ক যেমন সত্য, তেমনি সত্য এই অভিযোগ গুলোও। তবে শুনতে যত আদুরে মনে হচ্ছে, বাস্তবে কিন্তু মোটেও তা নয়। বরং প্রতিকার করা না হলে এই আদুরে অভিযোগ গুলোই জমতে জমতে প্রাণঘাতী হয়ে দাঁড়ায় প্রিয় সম্পর্কটির জন্য।
কঠোর হলেও, এটা কিন্তু বাস্তবতারই অংশ যে সময়ের সাথে সাথে সম্পর্কের রঙগুলো কেমন ফিকে হতে শুরু করে। দৈনন্দিন জীবনের হাজারো যন্ত্রণার আড়ালে কোথায় যেন হারিয়ে যায় সোনালি দিনগুলি। ভীষণ ভালবেসে পরস্পরকে বিয়ে করার পরেও দেখা যায় একটা সময়ে দূরত্ব এসে উপস্থিত হয়, এককালের বড় কাছের মানুষটাকে কেমন যেন অচেনা লাগতে শুরু করে। মনটা হয়তো আনচান করে খুব, মনে হয় যে বর্ণিল দিনগুলো ফিরে আসুক আবার। কিন্তু তারা ফিরে তো আসেই না, বরং হয়ত দূরত্বটা একসময় এমন হয়ে যায় যে সম্পর্ক ভাঙ্গনের দিকে গড়ায়। প্রেমে হয় “ব্রেক আপ”, বিবাহে হয় “ডিভোর্স” কিংবা একে অপরকে দোষারোপ করতে করতেই কাটিয়ে দেয়া জীবন।
কিন্তু প্রকৃত দোষটা আসলে কার? আপনার, নাকি?
আমি কিন্তু বলবো আপনারই! হ্যাঁ, আপনারই দোষ প্রথমে।
সম্পর্কের ভাঙ্গনের পিছনে সঙ্গীর দোষ খোঁজার চেষ্টা না করে একটাবার নিজের ভূমিকা একটু ভেবে দেখুন তো? আপনি কি করেছেন সম্পর্কটা ধরে রাখার জন্য? আপনি কি করেছেন দূরত্ব কমাবার জন্য? যদি ঠিক ভাবে চেষ্টা করতেন, তাহলে তো এই দূরত্ব সৃষ্টি হবারই কথা ছিল না… তাই না? ভালোবাসা পেতে চাইলে আগে ভালোবাসা দিতে পারতে হয়। আরেকজন হাত বাড়াবে এই আশায় বসে না থেকে নিজেকেই বাড়িয়ে দিতে হয় হাত, নিজেকেই নিতে হয় প্রথম পদক্ষেপ গুলো। সম্পর্কের ক্ষেত্রে আপনি যদি নিজের অবস্থানে দাঁড়িয়ে থাকেন, দেখবেন সঙ্গী মানুষটিও আছে আপনার পাশেই। আর আজীবন তরুণ আছে আপনাদের সম্পর্ক।

-প্রথম প্রেমের উচ্ছ্বাসটা যে সারাজীবন থাকবে না, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু সম্পর্ক তো আর জামা নয় যে পুরানো হলেই ফেলে দিতে হবে। বরং সম্পর্ক সে অল্প কয়েকটা জিনিশের মাঝে একটা, যা সময়ের সাথে সাথে আরও সুন্দর হয়। কেবল সেই সৌন্দর্যকে ধরে রাখতে জানতে হয়। সময়ের সাথে সাথে আপনি বদলাচ্ছেন না? ঠিক তেমনি আপনাদের সম্পর্কও বদলাচ্ছে। এই পরিবর্তনকে মোটেও খারাপ ভাবে নেবেন না। পরিবর্তনই তো জীবনে নতুন মাত্রা যোগ করে।
– হয়তো একটা সময় সারারাত ফোনে কথা হতো বা চ্যাট হতো, এখন হয় না। তারমানে কিন্তু এই নয় যে ভালোবাসা কমে গেছে। প্রেমের শুরুতে পরস্পরকে জানার বোঝার জন্য অনেক কথাই বলে হয়, কিংবা বলা হয়ে যায়। কিন্তু বছরের পর বছর তো আর মানুষ সারারাত ফোনে কথা বলে বা চ্যাট করে কাটাতে পারবে না। তাই কথা বলা কিংবা অনলাইনে সময় দেয়ার পরিমাণকে কখনোই ভালোবাসার মাপকাঠি হিসাবে বিবেচনা করবেন না।
– দম্পতি হন কিংবা প্রেমিক- প্রেমিকা, যে সময়টুকু একসাথে পাবেন তার শতভাগ ফায়দা তোলার চেষ্টা করুন। কথা বলুন পরস্পরের সাথে। সময়ের সাথে সাথে বাক্য বিনিয়ের অভ্যাসটা চলে যায় বলেই মূলত সম্পর্কে দূরত্ব তৈরি হয়। একটা জিনিস মনে রাখবেন, সঙ্গী মানুষটির কোনও অতিপ্রাকৃত ক্ষমতা নেই যে সে আপনার মনের কথা বুঝে নিতে পারবে। আপনাকে বলতে হবে নিজের মনের কথা, এবং তার টাও আগ্রহ নিয়ে শুনতে হবে।
– পরস্পরকে সব সময়েই টুকটাক সারপ্রাইজ দিতে থাকুন। সারপ্রাইজ সম্পর্ককে সুন্দর আর আকর্ষণীয় রাখে। “ওকে তো পেয়েই গেছি”… এমন মনোভাব ত্যাগ করুন। কাউকে পেয়ে যাওয়াটা সোজা, ধরে রাখাটাই বেশি কঠিন। তাই পাবার জন্য যতটা প্রয়াস করেছেন, ধরে রাখবার জন্য তার চাইতে বেশি করুন।
– একসাথে নিয়মিত বেড়াতে যান, সিনেমা দেখুন, বন্ধুদের আড্ডায় অংশ নিন। এই ব্যাপারগুলো খুব সূক্ষ্মভাবে সম্পর্ককে ঘনিষ্ঠ রাখে।
– দম্পতিরা একসাথে খাবারের পর্ব সারুন, এবং যতই কাজের ঝামেলা থাকুক না কেন একত্রে ঘুমাতে যান। এই ছোট ব্যাপার গুলো সম্পর্ক মজবুত রাখে।
– সন্তান সন্ততি থাকলে দুজনের সম্মিলিত সিধান্ত মতেই তাদের লালন-পালন করুন। বিবাহিত দম্পতিদের জন্য সন্তান একটি মজবুত সেতুবন্ধন।
-প্রেমিক যুগলেরা কেবল প্রেম নিয়ে চিন্তা না করে প্রেমের ভবিষ্যৎ নিয়েও করবেন। এবং সাথে নিজের ভবিষ্যতও। আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা অবশ্যই সঙ্গীর সাথে ভাগ করে নিবেন, এবং দুজনে হাত ধরেই সামনে বাড়বেন জীবনের পথে। তাতে পথ চলাটা যেমন সোজা হবে, তেমনি সম্পর্ক থাকবে অটুট।
– রাগ বা ঝগড়ার সময়ে আমরা অনেক কিছু বলে ফেলি, যা হয়তো পরে আর ভেবে দেখিনা। রাগের মাথায় বলা কথাগুলোর জন্য অবশ্যই সরি বলুন। বিন্দু বিন্দু অভিমান জমেই কিন্তু সিন্ধু হয়ে যায়।
– সঙ্গী/ সঙ্গিনীর প্রশংসা করতে ভুলবেন না। চিন্তাও করতে পারবেন না যে এপ্নার একটি প্রশংসা বাক্য কি ভীষণ খুশি দেবার ক্ষমতা রাখে।
– প্রিয় মানুষটির জন্য নিজেকে সুন্দর রাখুন। বিয়ে হয়ে গিয়েছে বা প্রেম অনেক পুরানো হয়ে গিয়েছে বলে আকর্ষণের চর্চার দরকার নেই, কিংবা নিজে সুন্দর করে উপস্থাপনের দরকার নেই… এটা একদমই ভুল ধারনা। প্রিয় মানুষটির জন্য নিজেকে সাজান, কেবল আর কেবল তার চোখেই আকর্ষণীয় হতে।
সম্পর্ক আজীবন তরুণ রাখাটা নির্ভর করে কেবল আপনারই ওপর। অন্য মানুষটা আগ্রহ দেখাচ্ছে না? ক্ষতি কিছু নেই। আপনি বাড়িয়ে দিন হাত, দেখবেন তিনি ঠিক এসে ধরেছেন। ভালোবাসার সাড়া কেবল ভালোবাসাতেই মেলে। তাই ভালোবাসার চর্চা করুন। নিজে ভালো থাকুন, ভালো রাখুন ভালোবাসার মানুষটিকে।

No comments:

Post a Comment

আপনার মন্তব্য দিন