Pages

বন্ধুতায় ভালোবাসায়

সূর্যের শেষ আলোটুকু যাই যাই করছে পশ্চিমাকাশে। ছবি তোলার পর্যাপ্ত আলো পাওয়া না-পাওয়া নিয়ে তাই সংশয় আলোকচিত্রীর চোখে-মুখে। ব্যস্ত রাস্তায় রিকশা আর যান্ত্রিক বাহনের দুরন্ত পদচারণ; এলোমেলো বিচ্ছিন্ন ছন্দ। এভাবেই কিছুক্ষণ; অতঃপর সজলকে হেঁটে আসতে দেখা গেল রাস্তার সব ব্যস্ততা আর গোধূলির আবির পেছনে ফেলে। বিপরীত দিক থেকে মমও নামলেন গাড়ি থেকে। এসেই পরিচিত সেই আন্তরিকতা। একে অপরের গলা ধরাধরি করে গলাগলি কিছুক্ষণ। নানা ভঙ্গিমায় ক্যামেরার স্ক্রিনে কিছু স্থির মুহূর্ত। তার পরের সময়টা কেবলই আড্ডার। প্রথমেই শুনে আসা যাক প্রথম পরিচয়ের গল্প। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় অনুষদের ছাত্র ছিলেন সজল। একই বিশ্ববিদ্যালয়ে মম পড়তেন নাট্যকলায়। দুজনের পরিচয়, দেখা, কথাবার্তা সেখানেই। মমর সব কিছু মনে নেই ঠিকঠাক। বলতে গিয়ে গুলিয়ে ফেলছেন- এখানে না ওখানে! সজল শুধরে দিলেন, 'রেজিস্ট্রার বিল্ডিংয়ের সামনেই প্রথম দেখা হয়েছিল, মনে করে দেখো।' মাথা দুলিয়ে, চোখ বুজে কিছুক্ষণ ভাবলেন মম। তারপর বললেন, 'যা-ই হোক। ওকে আমি চিনি অভিনেতা, মডেল সজল হিসেবেই। টিভিতে দেখতাম নিয়মিত।' সজল তখন বিশ্ববিদ্যালয়ে মমর সিনিয়র ভাই। অভিনয় করার কল্যাণে এমন কতজনের সঙ্গেই তো পরিচয় ঘটে রোজ! তখনকার আলাপগুলো তাই ছিল অতি ফরমাল- 'কেমন আছেন?', 'আপনার অভিনয় ভালো লাগে'- এই টাইপের। ২০০৬ সালের লাক্স-চ্যানেল আই প্রতিযোগিতায় শীর্ষ স্থান দখলের পর তৌকীর আহমেদের 'দারুচিনি দ্বীপ' ছবিতে অভিনয় করেন মম। চোখ পড়ে সজলের, 'এই মেয়ে তো দুর্দান্ত অভিনয় করে!' তার পর থেকে বন্ধুত্বের বরফ জমে একটু একটু করে। জমছে তো জমছেই। একটু সময়ের জন্যও এত দিনে বিন্দুমাত্র ভাঙন ধরেনি এ সম্পর্কে। সময়ের হাত ধরে 'আপনি' থেকে 'তুমি'তে নেমে এসেছেন মম। সজল অবশ্য প্রথম থেকেই 'তুই' বলতে অভ্যস্ত। বন্ধুত্বের নানা আকৃতি থাকে, ব্যক্তিভেদে ভিন্ন হয় তার রূপ। সজল ও মমর মাঝের বন্ধুত্বটা তাই একটু অন্য রকম। দুজনই দাবি করলেন, কাজের বাইরে তাঁদের দেখা হয়ে ওঠে না প্রায়। তার চেয়েও কম হয় মুঠোফোনে কথাবার্তা। শুটিং ইউনিটে দুজনই ব্যস্ত থাকেন চরিত্র আর ডায়লগ ভাবনা নিয়ে। সাহায্য করেন একে অন্যকে। মমর কথায় কান পাতলেই বোঝা যায় আসল ব্যাপার- 'সজলের একটা বড় গুণ হচ্ছে, প্রশংসাটা ও খুব ভালো পারে। এটা কিন্তু পজিটিভ। কোন ড্রেসে আমাকে সুন্দর দেখাচ্ছে বা খারাপ লাগছে, মেকআপ ঠিক আছে কি না অথবা অভিনয় ভালো হচ্ছে কি না, আরো ভালো করা যায় কিভাবে- সব কিছুই খুব নিখুঁতভাবে বলতে পারে সজল। কো-আর্টিস্ট হিসেবে এমন হওয়াটা খুবই ইমপরটেন্ট।' এর মানে এমন নয়, বন্ধু হিসেবে তাঁরা খুবই ফরমাল; বরং হৈ-হুল্লোড় আর দুষ্টুমি করেই কাটে পাশাপাশি-কাছাকাছির মুহূর্তগুলো। সজল কিন্তু মমকে পছন্দ করেন অন্য কারণে। শুনুন সজলের মুখেই, 'মমর ভেতরে বাঙালিয়ানা আছে। ও যে ড্রেসেই থাকুক না কেন, একটু গভীরভাবে তাকালে প্রথম দেখেই মনে হবে, সুন্দর একটা বাঙালি মেয়ে!' সজলের কথা শুনে পাশে বসা মম লজ্জায় কিছুটা লাল- 'ও, তা-ই! এটা কিন্তু জানা ছিল না সজল ভাই।' দুজনের ভেতরের এই কেমিস্ট্রি ব্যক্তিজীবনের গণ্ডি পেরিয়ে প্রভাব ফেলে কাজে। গুড পারফরম্যান্স; খুশি পরিচালক আর তারপরের ফলাফলটা? ভালো বলতে পারবেন দর্শকই। জনপ্রিয়তার মাপকাঠিতে এ জুটির প্রায় অর্ধশত নাটকের বেশির ভাগই উতরে গেছে সফলতার সঙ্গে। সজল তো বলেই ফেললেন, 'আমাদের দুজনের একসঙ্গে চলচ্চিত্রে অভিনয় করার দরকার ছিল।' চলচ্চিত্রে অভিনয় করছেন দুজনই। কিন্তু ভিন্ন ভিন্ন চলচ্চিত্রে। 'দারুচিনি দ্বীপ'-এর পর মম অভিনয় করতে যাচ্ছেন মাসুদ হাসান উজ্জ্বলের 'এই মুহূর্তে' ছবিতে। অন্যদিকে সজল অভিনয় শুরু করলেন তন্ময় তানসেনের 'রান-আউট' চলচ্চিত্রে। মমর এটা দ্বিতীয় চলচ্চিত্র হলেও এখানে এই প্রথম পা ফেলছেন সজল। তা-ই হয়ে গেল কিছু পরামর্শ আর অভিজ্ঞতা বিনিময়। বিদায় নেওয়ার সময় দুজনের চোখে-মুখেই একরাশ ভালো লাগার ছোঁয়া। চোখে চোখে কেবলই বলে যাওয়া- 'বন্ধু, ভালো থেকো, ভালো রেখো, আগলে রেখো ভালোবাসায়...

No comments:

Post a Comment

আপনার মন্তব্য দিন