Pages

রোমান্টিক প্রেমের গল্প- ‘তুমি ভালো আছো তো?’

জানি আমার এই লেখাটি তুমি পড়তে পারবে না। কারণ, তুমি পাহাড়ী এক চঞ্চলা সরলা মেয়ে। যেখানে তুমি থাকো সেখানে এখনো ইন্টারনেট প্রযুক্তি এখনও পর্যন্ত পৌঁছুতে পারেনি। এক সময় নদীর দেশ সন্দ্বীপ ছিল তোমার পূর্ব পুরুষদের বসবাস। সে অনেক আগের কথা তোমাকে বলে লাভ নেই। তুমি তো পাহাড়ী মেয়ে। এখন পাহাড়ী মেয়ে নামেই তুমি পরিচিত সবার কাছে। আমার কাছেও।
আচ্ছা তোমার সাথে আমার কি করে দেখা হয়েছে তা কি তুমি জানো। না জানো না। তুমি জানতে চাও ও নি কখনো। মোবাইলে তোমার সাথে দু’একবার কথা হয়েছে। তবে আমার সাথে তুমি তেমন প্রাণ খুলে কথা বলোনি বলতে চাওনি। আমি মনে করেছিলাম প্রথম প্রথম তাই একটু লজ্জা পাচ্ছো তাই। ধীরে ধীরে সব ঠিকঠাক হয়ে যাবে। কিন্তু ধীরে ধীরে সবকিছু ঠিক হয়ে যায়নি। এখন দেখি সব বেঠিক হয়ে গেছে। যার ফলে এখন আর বলতে গেলে তোমার সাথে তেমন কথাই হয় না আমার। শেষবার তোমাকে কল করলে তোমার মা রিসিভ করে; তাই আমি তোমার মায়ের কণ্ঠস্বর শুনে আমি কথা বলতে চাইনি। তোমার মা হ্যালো বলে আমাকে এমন একটা গালি দিল তা আমি প্রকাশ করতে পারছি না। কারণ লেখাটা যখন পত্রিকার পাতায় প্রকাশ হবে তখন পাঠক বন্ধুরা আমাকে গাল মন্দ করবে। কেন আমি একটা মেয়ের জন্য শুধু শুধু গালি খেতে গেলাম। কিন্তু তারা তো বুঝবে না। আমি কেন গালি খেলাম। তারা তো বুঝবে না যে আমি আর এখন আমাতে নেই; হারিয়ে গেছি তোমার অস্তিত্বের মধ্যে। তোমার ঠেঁটের মধ্যে, চোখের মধ্যে, বুকের মধ্যে, মায়ার জালে এখন আমি বন্দি।
ও আচ্ছা ভালো কথা তোমার সাথে প্রথম আমার কবে দেখা হয় সে কথা কিন্তু এখনো বলা হয়নি। সে এক গল্পের মতো ঘটনা। প্রত্যেক মানুষের জীবনেই আকস্মিক এমন কিছু ঘটনা ঘটে যা তার স্বাভাবিক চলাফেরায় ব্যাঘাত ঘটায়। তেমনি তোমাকে দেখার পরও আমার যেন সবকিছু এলোমেলো হয়ে গেল। শয়নে, স্বপনে, জাগরণে, রাতে, দিনে, সবুজ প্রকৃতিতে, বর্ষার বৃষ্টিতে কেবল তোমাকেই অনুভব করি। রাতের তারা, জোছনার আলো, দিনের সূর্য, আকাশের ছুটে চলা মেঘ, পাখির নীড়ে ফেরা আর বনহরিণীর মায়াবী চোখের মাঝে আমি কেবল তোমারই প্রতিচ্ছবিই দেখতে পাই। ঘরের চালে বৃষ্টির শব্দ আর নদীর ছলাৎ ছলাৎ ঢেউয়ের মাঝে আমি তোমার নূপুরের ধব্বনি শুনতে পাই। সে সময় এক আশ্চর্য সুর লহরি ভেসে উঠে আমার কানে। তখন আমার দেহে উঠে ঝড় মনে জাগে তুপান।
দেখছো, আমি মনে হয় পাগল হয়ে গেছি কি বলতে গিয়ে কি বলে পেল্লাম। বলার কথা ছিল তোমার সাথে দেখা হওয়ার প্রথম মধুর মুহূর্তের কথা। এমনি অগোছালো আবোল তাবোল কত কি যে বলে ফেললাম। তার মাথা মুন্ডূ আমি কিচ্ছু জানিনা। ২০১০ সালের বাংলা বৈশাখ মাসের কোন একদিন আমি নানার বাড়িতে বেড়াতে গেলাম। নানার বাড়িটা আমাকে প্রতিনিয়তই আকর্ষণ করে। তাই বছরে কম হলেও দু’একবার আমাকে সেখানে যেতেই হয়। ছোটবেলায় মায়ের সাথে বছরে তিন-চারবার যাওয়া হতো। এখন বড় হওয়াতে আর আগের মতো যাওয়া হয় না। তবে তবুও আমাকে নানার বাড়িতে যেতে হয়। কারণ, আমার নানার বাড়িটি আমার কাছে যেন এক স্বর্গরাজ্যে। চারিদিকে সবুজ বৃক্ষরাজি মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকে। বাড়ির পাশেই চা-বাগান। তার পূর্ব পাশে চিকন সাপের মতো একটা নদী। বর্ষাকালে সে নদীর পানিতে লাল-সাদার একটা মিশ্রণ থাকে। আমি ছোটবেলায় মামাতো ভাই আর খালাতো ভাইয়ের সাথে কতদিন যে ন্যাংটো হয়ে সে নদীতে গোসল করেছি তার হিসেব নেই। ও যাহ্ তোমার কাছে ন্যংটো হওয়ার কথা বলছি। একথা বলাতে আমার যে কি লজ্জা হচ্ছে তুমি যদি দেখতে। অবশ্যই এখন তো বড় হয়ে গেছি। কিশোর বেলায় ছোট ছোট লুঙ্গি আর প্যান্ট পরে তারপর গোসল করতে নামতাম। পানির স্রোতের সাথে গা ভাসিয়ে আমরা ঘাট থেকে অনেক দূর চলে যেতাম। এরপর উল্টো সাঁতার কেটে তবেই ঘাটে এসে ভিড়তাম। অবশ্যই নদীর পানি কম হওয়াতে এরকম দুঃসাহসিক অভিযানের সাহস করতাম।
দেখছো আমার কিচ্ছু মনে থাকে না। আবারও একই ভুল। এবার আর ভুল হবে না ছট জলদি বলবো তোমাকে প্রথম দেখার কথা। আমার খালাতো ভাই নুরু। যে আমার ছোটবেলার বন্ধু। এক সাথে কত গর্জন গাছের চারা কুঁড়িয়েছি তার কথা আর কি বলবো সে এক স্বর্ণালী সময়। রূপালি স্মৃতি। গর্জন গাছের কচি চারা বিক্রি করে আমরা রূপসী বাজারে সিনেমা দেখতাম। একটা ছবির নাম এখনো মনে আছে ‘মৃত্যুক্ষুধা’। আমার সে খালাতো ভাই একবার এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে পাস না করাতে ওর মন খারাপ হয়ে গেল। এমনিতেই খালু মারা যাওয়াতে তাদের পারিবারিক বন্ধন কিছুটা হলেও শিথিল হয়ে পড়েছে। তাই একখন্ড জায়গা বিক্রি করে খালাম্মা ওকে মালায়েশিয়া পাঠিয়ে দিল। সে বিদেশ থেকে সাত বছর থেকে এসে বিয়ে করেছে সুন্দরী এক মেয়েকে। বিয়ের সময় আমাকে দাওয়াত দেয়নি। সময়ের ব্যবধানে, নদীর বয়ে চলা পানির সাথে ষড়ঋতুর সাথে পাল্লা দিয়ে সবকিছু বুঝি এভাবেই পরিবর্তন হয়ে যায়। বিয়ে করার পর দু’একবার খালতো ভাইয়ের সাথে কথা হয়েছিল মোবাইলে। অবশ্যই মাঝখানে সে ঢাকায় এসে দুইবার ঘুরে গেল আমার সাতে দেখা হয়নি। তই আমি খালতো ভাইয়ের বাড়িতে গিয়ে খালতো ভাইয়ের বৌকে দেখলাম। দেখে আমার চোখ ভরে গেল। এত সুন্দর! একটি মেয়েকে সে শয্যাসঙ্গী হিসেবে পেয়েছে। হালকা-পাতলা গড়নের একেবারে প্রমাণ সাইসের একখান মেয়ে। যার দেহের ভাজে ভাজে, চোখের মায়াবী চাহনিতে, হাটাচলায়, কথাবার্তায়, হাসিতে রূপের দ্যুতি ছড়িয়ে যাচ্ছে অবিরত। আমি ভাবীকে দেখে মোহিত হয়ে গেলাম। মনে মনে কিছুটা ঈর্ষান্বিতও হলাম। শুনতে পেলাম ভাবীর একটা বোন আছে খুব সুন্দরী। সবার ছোট। রাঙা আপেলের মত গোলগাল মুখ তার। অন্য সবার বিয়ে হয়ে গেছে।
তাই সেদিন তোমাকে দেখার এত হাউশ হয় আমার মনে। জানো খালতো ভাই সকালে আমাকে বলে রেখেছে আজকে সন্ধ্যার সে শ্বশুর বাড়িতে যাবে সাথে আমাকেও বলছে যাবার জন্য। আমি তো মনে মনে খুশি তোমাকে দেখতে পাবো তাই। বিকালে দু’জন হাঁটা দিলাম খালতো ভাইয়ের শ্বশুর বাড়ির উদ্দেশ্যে। বাজার পর্যন্ত আসার পর খালতো ভাই বললো-‘প্রথম যয়রে কিচ্ছু নওন নাগতো না। কি নিবি?’। আমি শুনে টাব্বুশ হয়ে গেলাম। মনে মনে বললাম বিদেশ থেকে এসে বেটা বিয়ে করলি, দাওয়াত তো দিলিই না; তার উপর এখন আমাকে কিছু নিতে বলছিস। যাক আমি মনের কথা মনেই রাখলাম। হেসে হেসে বললাম হ্যাঁ তাইতো কি নেয়া যায়। চল মিষ্টি নিই। আমি আরেক খালতো ভাইয়ের দোকান থেকে এক কেজী মিষ্টি কিনলাম।
লাল মাটির আঁকাবাঁকা রাস্তা। চারিদিকে সবুজ আর সবুজ। জিরিজিরি শো শো বাতাস। পাখির কিচির মিচির ডাক, নীড়ে ফেরার অপরূপ দৃশ্য! মাঝে মাঝে পাহাড়ী মানুষ বাজার থেকে ফিরছে কেউবা এমন সন্ধ্যায়ও বাজারে যাচ্ছে। যারা সন্ধ্যায় বাজারে যাচ্ছে তারা তাস খেলে ছবি দেখে অনেক রাতে গান গাইতে গাইতে লাল টিলার মাটির ঘরে ফিরবে। সেখানে কুপি জ্বালিয়ে তাদের বৌরা তাদের প্রতিক্ষায় নিশি যাপন করছে। এভাবে হেঁটে হেঁটে আমরা দু’জন খালাতো ভাইয়ের শ্বশুর বাড়িতে পৌঁছলাম।
একটা টিলার উপর মাটির ঘর। উপরে নতুন টিনের ছাউনি। মনে হয় এ্যারাবিয়ান হর্স হবে। না হয় রাতের বেলায় এমন ঝিকিমিকি খেলা খেলছে কেমন করে। আকাশে চাঁদ, তারপাশে তারারা চারপাশে র্ঘিরে ধরেছে চাঁদকে। নিচে জোনাকপোকার মিটিমিটি আলো জ্বলছে। বাড়ির ভেতর আম, কাঁঠাল, আনারস আর পেয়ারার বাগান। ঘরের পিছনে একটা টিউবওয়েল। আমরা দু’জন প্রথমে হাতমুখ ধুয়ে নিলাম। এরপর ঘরে গিয়ে বসতেই দেখলাম শরবত আর নাস্তা হাজির। নস্তা মুখে দেয়ার আগেই খালতো ভাইকে বললাম তোর শালীকে ডাক।
এমনি তোমাকে ডাকলো আমাদের নুরু। আর তাতেই তুমি এসে হাজির। এসে প্রথমে আমাকে সালাম দিলে। তোমার চোখ ছিল মায়া হরিণীর মত। চুল ছিল দেবীর মত। মুখ ছিল গোলাপের মত। কান ছিল জবা ফুলের মতো। নাক ছিল বাঁশির মত। হাত ছিল কলার পাতার মত। আর বুকের উপর লুকায়িত ছিল দু’টি আধা-পাকা ডালিম। কেননা তুমি তখনও এতটা বড় হয়ে উঠোনি। বয়স ছিল বড়জোর পনের। তোমার চেহারার কারুকার্যময়তা আর হাসির ঝলক এক মুহূতেই আমাকে বিমোহিত করে দিল। আমি হারিয়ে গেলাম নতুন এক আবেশে। হাবুডুবু খেতে লাগলাম তোমার রূপের সাগরে। তুমি হয়ে উঠলে আমার কল্পণা রাজ্যের অপরূপা দেবী। যেন দেবী অ্যাফ্রোদিতি নতুন করে মর্ত্যলোকে আবির্ভূত হয়েছেন পাহাড়ী এই জনপদে। আমি অপলক নেত্রে মাত্র একবার তোমার মুখের দিকে. বুকের দিকে, চোখের দিকে, পায়ের দিকে, কোমরের দিকে, গলার দিকে, চিবুকের দিকে, পাছার দিকে তাঁকালাম। কেননা তোমার মা মানে যাকে আমি খালাম্মা বলে ডাকতে লাগলাম তিনি আমার সামনে চেয়ারে বসা। তাই বেশি তাঁকাতে সাহস করলাম না। একবার দেখেই তোমাকে আমার ভালো লেগে গেল। আমি একটা আপেলের টুকরো তোমার দিকে বাড়িয়ে নিলাম। আমার চেয়ারের পাশে তোমাকে বসালাম। আমি কোন মেয়ের সাথে কাথা বলা তো দূরে থেকে চোখ তুলেও ভালো করে কখনো তাকাইনি। সেই আমি কেন জানি নির্লজ্জের মতো তোমাকে আমার পাশে বসালাম। তুমি আমার পাশে বসে শরবত আর আপেল খেলে। তুমি খাচ্ছ আর মনে হয় আমি খাচ্ছি। খাওয়া নাস্তা করা শেষ হলে তুমি চলে যেতে চেয়েছিলে আমি তোমাকে বসিয়ে রাখলাম। তুমি বসে থাকলে চুপটি মেরে। তোমার লজ্জা করছিলো আমি বুঝতে পারলাম।
তুমি পাহাড়ী গ্রামের মেয়ে লজ্জা তোমাদের ভূষণ তাই তোমার লজ্জা করছে। এতে তোমার দোষ নেই, দোষ তো আমার; যে তোমাকে বসিয়ে রেখেছি শুধু শুধু। কিন্তু কি করবো বলো আমার যে তোমার সাথে গল্প করতে ইচ্ছে করছে। তোমার জামার গন্ধ শুকতে ইচ্ছে করছে। তোমার ঘর্মাক্ত শরীরের সুভাস নিতে ইচ্ছে করছে। তোমার হাসি দেখতে ইচ্ছে করছে। তোমার পা দেখতে ইচ্ছে করছে। গোলাপের মত পাতলা ঠোঁট দেখতে ইচ্ছে করছে। আমি তোমার সাথে গল্প করছি। জিজ্ঞেস করছিলাম কোন ক্লাশে পড়ো? তুমি বললে ক্লাশ এইটে পড়ো। আমি বললাম রাতে ভাত খাওয়ার পর বাংলা বই নিয়ে এসো আমি বুঝিয়ে দেব। কিন্তু ভাত খাওয়ার পর আমি চেয়ারে বসে থাকলাম অনেকক্ষণ কিন্তু তুমি এলে না। আমার মনে ভীষণ মন খারাপ হল। ব্যাথা আর হাকার নিয়ে আমি শুতে চলে গেলাম। একা বিছানায় কি ঘুম আসে। তাই আমি এদিক ওদিক বিছানায় গড়াগড়ি খেতে লাগলাম। মশা বেশি ছিল না তবুও ইচ্ছে করে মশা বলে খালাম্মাকে ডাকলাম মশারি দেওয়ার জন্য। আমার ইচ্ছে ডাক শুনে খালাম্মা নিশ্চয় তোমাকে পাঠাবে। যেমন ভাবা তেমন কাজ দেখলাম তুমি বগলে করে মশারি নিয়ে এসে আমার খাটের চারপাশে টাঙিয়ে দিলে। আমি সাদা সাদা তোমার হাত দুটো দেখছিলাম। ইচ্ছে করছিলো আমার বুকের ভেতর তোমাকে জড়িয়ে ধরি। কিন্তু ইচ্ছে করলেও কি সব কিছু করা যায়। করতে না পারলেও তরুণরা সুন্দরী তরুণীদের কথা ভাবতে ভাবতে বিছানা ভিজিয়ে ফেলে তবুও তারা ভাবে। আমিও সে রাতে তোমাকে নিয়ে ভাবতে ভাবতে বিছানা...।
তুমি এখন কি করছে। সকালে নাস্তা করেছো তো। আজকে সকালে প্রাইভেট আছে নাকি। আজকে স্কুলে যাওয়ার সময় কি ড্রেস পরবে। ও আচ্ছা তোমাদের ড্রেসের রং তো একটাই আকাশী রঙের ফ্রক। নীল রঙের স্কার্প। আর সাদা রঙের পায়জামা। স্কুল থেকে কখন ফিরবে। হেঁটে হেঁটে স্কুলে যাবে তোমার কষ্ট হবে না। আামর ইচ্ছে করছে কি জানো, তোমাকে কোলে করে স্কুলে দিয়ে আসি। কি নির্লজ্জের মত যা তা বলছি। না কোলে করে নয় তোমাকে মোটরসাইকেলে করে দিয়ে আসলে কেমন হয়। তুমি আমার পেছনে বসে আমাকে জড়িয়ে ধরবে। হিন্দি নায়কদের মতো তোমাকে স্কুলে পৌঁছে দিয়ে বাইরে ওয়েট করবো।
যা কি যা তা বলছি তোমাকে নিয়ে। তুমি আবার রাগ করবে। তোমার আবার রাগ বেশি। একদিন মোবাইলে কি যেন বলেছি এমনিতেই মা আসবে বলে মোবাইল যে রাখলে আর ধরলে না। আজ পর্যন্তও না। ও হ্যাঁ একদিনের কথা যখন তোমার সাথে কথা হতে দু’চারটা। তার দুএকটা মিষ্টি দুএকটা তোতো। জানো একদিন দুপুরবেলা ভাত খেয়ে আমি শুয়ে আছি তাই। চোখে অনেক ঘুম ছিল তাই ঘুম এসে গেল। ঠিক তখনই তুমি মিসড্কল দিলে। তখন বিকেল চারটা কি পাঁচটা তা ঠিক মনে করতে পারছি না। ঘুম থেকে উঠে গোসল করে পাবলিক লাইব্রেরীতে গেলাম। আমার আবার বিকালে গোসল করার অভ্যাস। যারা বিয়ে করে তারা প্রতিদিন সকাল øান করতে হয়; আমার সে ঝামেলা নাই। লাইব্রেরীতে গিয়ে তোমাকে কল দিলাম। ওই প্রান্ত থেকে তুমি হ্যালো বলে কোমল স্বরে কথা বললে। তোমার স্বরকে সেদিন আমার কাছে টুনটুনি পাখির মতো মনে হল। তাই তোমাকে সেদিন থেকে মনে মনে আমি টুনটুনি পাখি বলেই ডাকলাম। কিন্তু সে কথা এ পর্যন্ত কোনদিন তোমাকে জানাইনি। আচ্ছা বলতে পারো তোমাকে এত বেশি আমার মনে পড়ে কেন? জানি তুমি এর জবাব দিতে পারবে না। কারণ তুমি সেই পরিস্থিতিতে এখনও পড়নি। তোমার অবস্থা হয়েছে রাধিকার মতো। যার মনে-দেহে প্রেম জেগেছিল পরে। প্রথমে কৃষ্ণ প্রেমের বিষাক্ত অনলে দগ্ধ হয়েছে। পরে রাধিকার শরীর জ্বলেছিল প্রেমের আগুণে। তোমরা মেয়েরা হচ্ছ রাধিকার জাত। পুরুষের মনকে জ্বালিয়ে ছারখার করে ছাইয়ের ভষ্মে রূপান্তরিত করো এরপর ছাইয়ের স্তুপে শান্তি খুঁজতে আসো। মনে হচ্ছে খুব শক্ত কথা বলে ফেললাম। অথচ তোমার সাথে আমার দেখা হয়েছিল মাত্র একবার। কথা হয়েছিল দু’চারবার আর হয়নি। এই প্রথম তোমার সাথে আমার দেখা আর হয়নি; হবে কিনা উপরওয়ালা জানেন। যিনি আমার দেহ-মনে তোমার জন্য প্রেমের সঞ্চার করেছেন।
আচ্ছা তুমি এখন রাতে কার কাছে শোও। আগে তো তোমার মায়ের সাথে ঘুমাতে। এখনও কি তাহলে মায়ের কাছে শোও। আচ্ছা তোমার মা মানে খালাম্মার এখনো কি রাতে মাথা ব্যথা উঠে। আচ্ছা তুমি রাতে কি পরে ঘুমাও। গায়ে কি থাকে। শুধু কি স্কার্প। জানো শহরের মেয়েরা ঢোলা একটা গেঞ্জি পরে ঘুমাতে যায়। বুকের ভিতরের ডালিমগুলো তখন নিচের দিকে ঝুলে থাকে। আচ্ছা তোমারগুলোর সাইজ এখন কত বড় হয়েছে। কাত হয়ে শুলে কি ওদুটোও ঝুলে পড়ে। চিৎ হয়ে শুলে কি উপরের দিকে খাড়া হয়ে থাকে। আচ্ছা বোটার রঙ কি লাল না বাদামী। তোমারগুলোর বোটা বাদামীই হবে। কেননা তোমার রঙ তো গৌর বর্ণের। আচ্ছা রাতে কি ব্রাশ করে ঘুমাও। এখন থেকে অভ্যাস করে না হয় তোমাকে ম্যারাথন চুম্বন দিতে গেন্না লাগবে। ম্যারাথন চুম্বন দিতে না পারলে কি চুম্বনে মজা পাওয়া যায়। ইউরোপের দম্পতিরা নাকি ম্যারাথন চুম্বন করে। চুম্বনেরও যে একটা আর্ট থাকে বাঙালিরা তা বোঝে না। ভালবাসার শৃংগারের যে একটা পুলক আছে সুখ আছে শৈল্পিকরূপ আছে তা বাঙালি দম্পতিরা জানে না। তারা শুধু বছর বছর বাচ্চা নিতে পারে।
আচ্ছা সকালে তোমার মা যখন রান্না করে এখনো কি তাঁর পাশে বসে তুমি পা দোলাতে থাকো। তোমার পা দোলানিতে একটা আর্ট আছে। যে দেখেনি সে বুঝবে না। আমি দেখেছি আমি বুঝবো। আচ্ছা তুমি কি নূপুর পরো। সেজে গুজে বিকালে কি তোমার বান্ধবীদের সাথে পাহাড়ী পথে ঘুরে বেড়াও। খোঁপায় কি বলফুল পরো। ঠোটে কি লিপিষ্টিক দাও। তোমার ঠোঁট তো এমনিতেই সুন্দর! লিপিষ্টিক না দিলে আরো সুন্দর দেখায়। হালকা গোলাপী রঙের চিকন একটা ঠোঁট। জানিনা কত মধু তোমার ঠোঁটে তুমি ধারণ করে আছো।
আচ্ছা তোমার ফুল বাগানটি কি এখন আছে। গোলাপ, রঞ্জন, ক্যামিলিয়া, সূর্যমুখী, নানা জাতের পাতা বাহার, আর তার পাশে একটি শিউলি গাছ। এ বছর কি শিউলি ফোটেছে। এখন তো শিউলি ফোটার দিন। তুমি বলেছিলে তোমাদের ঘরের দক্ষিণ দিকে নাকি একটি বড় জলাধার আছে। সেখানে নানা রঙের শাপলা-শালুক ফোটে। তার পাশে একটি কাশবন। শরৎকালে সেখানে কাশফুল ফোটে। আচ্ছা বিকালে যখন বান্ধবীদের সাথে বের হও তখন তোমার খোপায় কি ফুল বাঁধো। গলায় কি বনফুলের মালা থাকে। পায়ে নূপুর পরো না বুনো কোন লতা জড়িয়ে থাকে তোমার আলতা রাঙা পা দু’খানায়। তুমি যখন পাহাড়ী বনপথে হেঁটে যাও তখন তোমাকে চঞ্চলা মায়া হরিণীর মত দেখায় তাই না। তখন তুমি কালো চোখে মায়া দিয়ে এদিক ওদিক তাকাও। তখন কি ভয়ে তোমার ছোট দু’টি বুক উঠানামা করতে থাকে।
শুনলাম তোমার জন্য নাকি বিয়ের প্রস্তাব এসেছে গতমাসে। এখন বিয়ে করোনা। তোমার নরম তুলতুলে শরীরে স্বামীর দলন পীড়ন সহ্য হবেনা। গ্রামের সুন্দরী মেয়েদের একটাই সমস্যা তারা একটু বড় হলেই চারদিক থেকে তাদের জন্য বিয়ের প্রস্তাব আসতে থাকে। অনেকের ইচ্ছা থাকলেও মেয়েদেরকে পড়ালেখা শিখাতে পারে না। হায়রে আমাদের সমাজ ব্যবস্থা! তোমার কবে হুস ফিরে আসবে। আরো অনেক কিছু বলার ছিল আজ থাক সময় হলে অন্য একদিন বলা যাবে।
তুমি সুখে থেকো। ভালো থেকো। মনে পড়লে ফোন দিও। অন্তত একটি মিসড্কল হলেও দিও। তোমার নরম কোমল হাতের লিখা চিঠি দিও। হে আমার কিন্নরী, অপ্সরী, মায়াবতী, মনোহারিনী, রূপের রাণী তুমি ভালো থেকো, সুখে থেকো সকাল-দুপুর-সন্ধ্যা আর রাতে। হে আমার রূপের রজকন্যা, লক্ষ্মীসোনা, যাদুর কনা, টুনটুনি পাখি তুমি অনেক অনেক ভালো থেকো। এত কিছুর পরও তোমাকে নিয়ে আমার উৎকন্ঠা আর দুঃশ্চিন্তার শেষ নেই। তবুও বারে বারে বলতে ইচ্ছে করে ‘তুমি ভালো আছো তো?’

No comments:

Post a Comment

আপনার মন্তব্য দিন