Pages

কখনই ভালোবাসনি……

426564_428042170558778_100000589972775_1376885_270656093_n
আজ ফাগুনের প্রথম দিন। ৩১ দিন পর নিরার কাছ যাচ্ছি। তাই খুব ভালো লাগছে। গত কয়েকটা দিন খুব বাস্ত্য ছিলাম। নতুন চাকুরি নতুন আবাসস্থল সব সামলাতে গিয়ে বেশ বেগ পেতে হয়েছে। তারপর ঢাকার বায়তুল মোকারম মার্কেট থেকে অনেক ঘুরে কিনলাম হিরার আংটি। লতার মত সরু পেচানো রিংয়ের উপর হিরার পাথর। আমার খুবেই পছন্দ হয়েছে আশা করছি ওর ও খুব পছন্দ হবে।
নিরা আমার বাল্য বন্ধু। আর এখন সে আমার ভালোবাসার মানুষ, আর ভবিৎষতে ও হবে আমার মায়াবী লক্ষি বউ।
নিরার পরিবার বেশ ধনী। ওর কোন ভাই নেই ওরা দুই বোন। তাই ওর বাবার ইচ্ছে নিরার বর কে ঘর জামাই করবেন। নিরার ও তেমনী স্বপ্ন। ও আমাকে সে ইচ্ছের কথা বলেছে আমি অবশ্য সেই কথা হেসে উড়িয়ে দিয়েছি। বলেছি ওসব আমাকে দিয়ে হবেনা। বাবুই আর চড়–ই পাখির কবিতাটা শুনিয়ে দিয়েছি প্রতিবার। নিরা রেগে গিয়ে বলেছে তুমি জানো আমার জন্য হাসান জীবন দিতে পারে, আর রকিব তো ঘড় জামাই হবার জন্য একপায়ে দাড়ানো!
আমি ওর ছেলেমানুষী কথা শুনে হেসেছি কেবল। তারপর বলি – নিরা স্বাধীনতা এত মামুলি কোন ব্যপার নয়। পৃথিবীর সব কিছু বির্সজন দেওয়া যায় কিন্তুু স্বাধীনতা নয়। অন্যর ঘড়ে অতিথি হয়ে থাকার মত মন মানুসিকতা আমার নেই।
ও রাগ করে চলে যায়। ফোন দিলে ধরতে চায়না। তারপর কয়েকদিন পর আবার সব কিছু ঠিক হয়ে যায়। ভালোবাসা আসলে এমনী।
এর মধ্যে হুট করেই আমার একটি এনজিও তে চাকুরি হয়ে গেল। কর্মস্থল মাদারীপুর শহরে। ঢাকা ছেড়ে কখনো এতো দুরে আমি থাকিনি তাই কিছুটা দ্বিধা ছিল কিন্ত পদ পদবী এবং ভালো বেতন থাকায় আমি সিদ্ধান্ত নিলাম যে চাকুরি টা করবো। সব শুনে নিরা বললো তুমি একা একটা মানুষ তোমার কি এমন হলো যে তোমাকে একটা চাকুরির জন্য ঢাকা ছেড়ে যেতে হবে? কিন্তু ও কোন উৎসাহই দেখালো না।
আমি ব্যথিত স্বরে বললাম, নিরা আমি ছোট বেলায় বাবা মাকে হারিয়েছি খালার বাসায় থেকে অনেক কষ্টে লেখাপড়া করেছি। আমি বলবো না তারা আমাকে কষ্ট দিয়েছে, ওখানে থাকতে গিয়েই বুঝেছি অন্যর সংসারে অনাহূত হওয়াটা একজন মানুষের জন্য কতটা গ্লানিকর। পরাধীনতার শৃঙ্খলে বাধা জীবনের কত যন্তনার! ডানা ভাংগা পাখির মত ছটফট করে কত রাত যে আমি পাড় করেছি তার শেষ নেই। জানি এসব ঠিক তুমি বুঝবেনা। কিন্তু আমি জানি স্বাধীনতার সুখ কত মধুর! আমি চাই স্বাধীনতা; তুমি আমাকে ভুল বুঝনা।আমি তোমাকে অনেক বেশি ভালোবাসি।
নিরা কোন কথা না বলে আমার দিকে তাকিয়ে থাকে।
নিরবতা ভেংগে আমি বলি আগামীকাল আমি মাদারীপুর যাচ্ছি আসবো মাস খানেক পরে, প্লিজ আমাকে তুমি ভুল বুঝনা। আসছে ফাগুনের প্রথম দিন আমি তোমার কাছে আসবো। ওর অভিমানী চোখে জ্বল নামে।
নতুন কর্মস্থলে এসে প্রচন্ড ব্যস্ত হয়ে পড়ি। তবে সুযোগ পেলেই ওরে ফোন দেই। তবে সর্বশেষ দশ বারো দিন যাবত ওর ফোন সেট বন্ধ পাচ্ছি। ও এমনি কারনে অকারনে রাগ করে মোবাইল ফোন বন্ধ রাখে। তাই ভাবছি ওরে আজ সারপ্রাইজ দিব।
কলিং বেল বাজানোর পর কাজের মেয়েটা দরজা খুলে দিলো। বললাম নিরাকে বল আমি এসেছি। ডোয়িং রুমে নিরা আমার সামনের সোফায় বসলো। তার চোখে প্রত্যাশিত উচ্ছাসের বদলে দেখি শিতলতা। হেসে বলি কেমন আছো?
-ভালো। দায়সারা উত্তর দেয় ও। আমি রাগ ভাঙ্গানোর উদ্দেশ্যে পকেটে হাত দেই, আংটি বের করার জন্য। এমন সময় একজন পুরুষ এসে দাড়ায় ওর পাশে। নিরা পরিচয় করিয়ে দেয় বলে ও হচ্ছে শফিক। আমাদের বিয়ে হয়েছে পাচ দিন হলো। ও আমাদের বাসায় থাকবে। শফিক সাহেব হাত বাড়িয়ে দেয়।
আমি অবাক হয়ে ওর চোখের দিকে তাকিয়ে থাকি। নিরার চোখে কোন অপরাধবোধ নেই, কোন অনুশোচনা নেই। ওর চেহারাটা স্বৈরশাসকদের মত মনে হয়।
গেট পেড়িয়ে বের হয়ে ভাবি নিরা হয়ত আমাকে কখনোই ভালোবাসেনি, ও চেয়েছিল কেবল আমার স্বাধীনতা হরন করতে। স্বাধীনতা হারানোর চেয়ে প্রেমিকা হারানো নিশ্চয় গৌরবের!RAFIQ SIR

No comments:

Post a Comment

আপনার মন্তব্য দিন