Pages

# তুমি ছিলে আমার #

আমি ছিলাম হিন্দু আর অরিক খ্রিস্টান ...তবু আমরা ছিলাম কলেজের সেরা জুটি ।উচ্ছলতা আর চঞ্চলতায় মেতে থাকতাম আমরা ।
প্রচন্ড ভালোবাসতো অরিক আমায় ।আর আমি তো আমিই, তাইনা ??

বাবা জেনে গেলেন আমাদের কথা ....আমার রাগী বাবা আমার বিয়ের জন্য উঠে পড়ে লাগলেন । আমি শিউরে উঠলাম ....চোখ বন্ধ করে যে মানুষটিকে দেখতে পেতাম,প্রতিটি নিঃশ্বাসে যাকে অনুভব করতাম ,তাকে হারিয়ে ফেলার ভয়ে আমার অন্তরাত্মা কেঁপে উঠল ।

আর কোন উপায় ছিল না আমার হাতে ।পরম বিশ্বাসে আমি হ

াত ধরলাম অরিকের ।
আমরা বিয়ে করলাম ।হ্যা !পালিয়ে বিয়ে করলাম আমরা ।
ছোটবেলা থেকে আমার স্বপ্ন ছিল ...লাল শাড়ি , হাত ভর্তি চুড়ি ,কপাল রাঙানো সিঁদুর ,পায়ে আলতা দিয়ে শ্বশুরবাড়ি যাবো ।
স্বপ্নকে বিসর্জন দিলাম ভালোবাসার পায়ে .....
অরিকের হাত ধরে শেষবারের মত বাসায় গেলাম । বাবা আমার গালে চড় মারলেন ।মা মুখের উপর দরজা লাগিয়ে দিলেন ....আমি আমার কাছের মানুষগুলোকে চিরদিনের জন্য হারালাম ...হলাম সমাজচ্যুত ...
আমার তীব্র একটা কষ্ট হচ্ছিল বাবার জন্য ..আমার রাগী বাবা বজ্রাহতের মত বসে আছেন ...আদরের মেয়ের কাছে এটা তিনি আশা করেন নি। জানি বাবা তুমি কষ্ট পেয়েছিলে ।
কি করতে পারতাম আমি বলো বাবা ?অরিককে যে বড্ড ভালোবাসি বাবা।
মা মুখে আঁচল চাপা দিয়ে কাঁদছিলেন ।আমার কোন উপায় ছিল না মা।অরিককে আমি ভালোবাসি।

শুরু হলো আমাদের পথচলা।আমাদের ছোট্ট সংসার।অরিকের তো কোন পিছুটান ছিল না..আর আমারও অরিক ছাড়া আর কোন আশ্রয় ছিলো না..বাবা মার স্নেহশীতল আশ্রয়..সে তো নিজেই ছেড়ে এসেছি..।

আমরা একটা ছোট্ট টোনাটুনির ঘর গড়ে তুললাম।অরিক একটা চাকরি জোগাড় করলো আর আমি বাচ্চাদের পড়াতে লাগলাম।অর্থের হয়তো অভাব ছিল..হয়তো অনেক দিনই আমরা না খেয়ে থেকেছি।তবু আমাদের ছোট্ট নীড়ে সুখের অভাব ছিল না।

দেখতে দেখতে একটা বছর পেরিয়ে গেল ..একটা বছর !দারিদ্রতাকে জয় করে ভালবাসাকে আকাশচুম্বী করার বছর।

অনেককিছু বদলে গেছে একবছরে। অরিকের প্রমোশন..আমার একটা কোম্পানিতে চাকরি..বেড়েছে আমাদের ব্যস্ততা..আমরা একজন আরেকজনকে আগের মত সময় দিতে পারিনা।
তাতে কি?আমাদের ভালোবাসা তো বদলায় নি।আমি তো বদলাই নি।

সেদিন অফিসে রূপা এসেছিল।ও আমার কলেজ ফ্রেন্ড।আসার পর একথা সেকথা বলার পর হঠাত্‍ করে বলে বসলো...কিছু মনে করিস না পুজা....একটা কথা বলবো?

আমি অবাক হয়ে তাকালাম-অনুমতি নেওয়ার কি আছে।যা ইচ্ছা বল ।
রূপা ইতস্তত করতে লাগলো । তারপর গলাটা নামিয়ে আস্তে করে বলল , অরিককে সেদিন রাস্তায় একটা মেয়ের সাথে দেখলাম । তোদের কোন রিলেটিভ ?
আমি উত্তর দিলাম, কই নাতো ।হয়তো ওর কোন কলিগ ।অফিসিয়াল কোন কাজে হয়তো ...

রূপা আর কিছু বললো না ।শুধু যাবার সময় আমার হাতটা ধরে বললো ,সাবধানে থাকিস ।যুগটা ভালো না ।

আমি হাসলাম ।বুকের কাছে খুব সূক্ষ্ম একটা কাঁটা বিঁধে রইলো ।

অরিক মাঝে মাঝে খুব খারাপ ব্যবহার করছিল আমার সাথে । ও তো এমন ছিল না । একটা বছর আমরা এক ছাদের নিচে কাটিয়েছে ....অভাবের গন্ডি পেরিয়ে এই সুখের দিনগুলোতে ওর আচরণ অসামান্জস্য লাগছিল আমার কাছে ।

দূরত্ব বাড়তে লাগলো আমাদের । দিনের পর দিন অরিকের ব্যবহার আরো খারাপ হতে লাগলো ।সেদিন ছোট্ট একটা ব্যাপার নিয়ে ও আমার গায়ে হাত তুললো ।বাবা মা তুলে গালি দিল । আমি নিস্তব্ধ হয়ে গেলাম ।এই সেই অরিক ?যাকে আমি নিজের চেয়েও বেশি ভালোবেসেছিলাম ?
তবু সব সয়ে গেলাম ।আমি তো অরিককে ভালোবাসি , তাইনা ??

এরই মাঝে টের পেলাম আমার মাঝে আরেক আমির স্বত্তা । ছোট্ট একটা নরম তুলতুলে শরীরের স্বপ্নে বিভোর হয়ে রইলাম আমি ।

অরিককে জানালাম । অরিকের নির্লিপ্ততা আমায় অবাক করলো ।
তার চেয়েও বেশি নির্বাক করলো ওর বিরক্তিসূচক উত্তর , এখন এসব ঝামেলার মানে আছে ??

সেদিন অরিকের জন্মদিন ছিল।ওকে সারপ্রাইজ দিব বলে ওকে না জানিয়ে কেকের অর্ডার দিলাম। সন্ধ্যায় কেকটা আনতে গেলাম ।শরীর যথেষ্ঠ খারাপ ।তবু গেলাম । আমার ভালবাসার মানুষটার জন্মদিনে তো আমাকেই সারপ্রাইজ দিতে হবে ,তাইনা?

কেকটা নিয়ে বের হচ্ছিলাম ।হঠাত্‍ চোখ আটকে গেল ।আমি কি ভুল দেখছি । এতো অরিক ।কিন্তু মেয়েটা কে ?একটা তীব্র আশঙ্খা আর ভয়ের শিরশিরে অনুভূতিতে শরীরটা কেঁপে উঠলো । নিজের অজান্তেই অনুসরণ করলাম ওদের ।
একটা রেস্টুরেন্টে বসলো ওরা । অরিক মেয়েটাকে খাইয়ে দিচ্ছিলো ।ঠিক যেমনভাবে একদিন আমাকে খাইয়ে দিত।
আর পারলাম না আমি । ওদের সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম আমি।অরিককে বললাম ,অরিক..যা দেখছি সেটা কি আমার বিশ্বাস করা উচিত?
অরিক কিছু বলার আগেই মেয়েটা আমায় জিঞ্জাসা করলো, কে আপনি ?
আমি বললাম ,আমি অরিকের স্ত্রী ।

সেদিন রাতে ওর সাথে আমার চরম ঝগড়া বাধলো। কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে ও আমায় ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিল।ঞ্জান হারানোর আগ মুহূর্তে মনে হলো রক্তের মাঝে যেন তলিয়ে যাচ্ছি আমি।


আমার স্বপ্নটা হারিয়ে গেল।বেঁচে রইলাম এক অসম্ভব শূণ্যতা নিয়ে ।



আবার ফিরে এলাম অরিকের সংসারে । এ কদিনে একবারো ও আমার খোঁজ নেয়নি । দুদিন কেটে গেল । একটু সুস্থ হলাম ....

আমি অরিকের জন্য রান্না করবো । নিজ হাতে রান্না করবো । ওর পছন্দের খাবার রান্না করলাম আমি ।সাথে মিশিয়ে দিলাম একটুখানি সায়ানাইড .....কেমন একটা তীব্র অনুভূতি হতে লাগলো আমার ....আমার সন্তানকে যে নিজ হাতে শেষ করেছে , আমার ভালোবাসাকে যে পায়ে পিষে চলে গিয়েছে ...আমার বিশ্বাসকে যে এভাবে শতছিন্ন করেছে ...তাকে এর চেয়ে বেশি আমি আর কি দিতে পারি !!!

শেষকথা :মানসিক ভারসাম্যহীন অবস্থায় পুজা নামের একটি মেয়েকে হাসপাতালে পাঠানো হয় । স্বামীকে বিষ প্রয়োগে হত্যা করায় এই মেয়েটিকে পুলিশ গ্রেফতার করে ।


পুজারা হারিয়ে যায় ।হারিয়ে যায় তাদের স্বপ্ন ।যে ভালোবাসার জন্য একটা মানুষ পৃথিবীতে সবচেয়ে সুখী হয় ...সে ভালোবাসাই হয়তো কাউকে নিয়ে যায় ধ্বংসের মুখোমুখি ......

1 comment:

আপনার মন্তব্য দিন