Pages

হৃদয় স্পর্শে

সায়াহ্নঃ- হ্যালো.......!!!
 মৃদুলাঃ- কেমন আছেন? সায়াহ্নঃ- জি ভাল। কে বলছেন?
 মৃদুলাঃ- নাম বললে চিনবেন না। আমি আপনার কোচিং এর স্টুডেন্ট। এই মুহূর্তে আমার একজন গাইড দরকার। আমি যদি মাঝে মাঝে আপনাকে ফোন করি তবে কি খুব বিরক্ত হবেন?
 সায়াহ্নঃ- তুমি কোন ব্যাচ এর ছাত্রী? মৃদুলাঃ- জি ভাইয়া, আপনি আর আমাদের ব্যাচ এর ক্লাস নেন না।
 সায়াহ্নঃ- আর কিছু বলবে? মৃদুলাঃ- আপনি কি বাইরে? সায়াহ্নঃ- হ্যাঁ।
 মৃদুলাঃ- বাইরে তো খুব বৃষ্টি। আচ্ছা ঠিক আছে আমি রাখি।

-মৃদুলার সাথে সায়াহ্ন এর প্রথম কথা বলা। পর দিন আবার ফোন দেই মৃদুলা। আর এভাবেই শুরু হয় দুজন এর কথা বলা।

 যেদিন সায়াহ্ন মৃদুলাদের প্রথম ক্লাস নেয়, ঠিক সেদিন থেকেই মৃদুলার ভাল লাগা শুরু। ধীরে ধীরে ভাল লাগা বাড়তে থাকে। সায়াহ্ন কি মৃদুলার প্রতি দুর্বল কিনা তা বোঝার আগেই অন্য একটি মেয়ের সাথে রিলেশন এর কথা জানতে পায় মৃদুলা। সায়াহ্ন নিজেই বলে মৃদুলা কে। ধীরে ধীরে দূরে সরে যেতে থাকে মৃদুলা। ফোন দেয়া বন্ধ করে দেয়। কিন্তু কয়েক মাস পর সায়াহ্ন নিজেই আবার মৃদুলা কে ফোন দিয়ে বলে তার ব্রেক আপ হয়ে যাওয়ার কথা। আবার শুরু হয় তাদের মাঝে কথা বলা। মৃদুলার স্বভাব ছিল কথায় কথায় ওকে পচানো। সায়াহ্ন ও তার পাগলামি তে হাসত।
 গুছিয়ে নেওয়া মৃদুলা নিজের অজান্তেই ধিরে ধিরে আবার সায়াহ্ন এর মায়ায় জড়িয়ে পড়ে। মলিন হওয়া স্বপ্ন গুলা আবার নতুন রঙে সাজে। এবার আর হারাতে দিবে না সায়াহ্ন কে। প্রতি রাতেই ভাবে আজ ওর লুকিয়ে রাখা সব কথা বলে দিবে ওকে। বলে দিবে কতটা ভালবাসে। সেই বলি বলি করে না বলা কথাটা আর বলা হয়না। ইচ্ছে কোটরেই থেকে যায় অজানা এক ভয়ে।
 লুকিয়ে থাকা ভালবাসাটা হয়ত এমনি হয়। পাওয়া না পাওয়ার হিসাব গুনতে গিয়ে দুকুল এর মাঝখানে বসে থাকে হৃদয়। ফেরা হয়না ভোলা পথে আপন ঠিকানায়। ফেলা হয়া নোঙ্গর নতুন ঠিকানায়। পেয়েও না হারাই আবার অজানা একটা ভয়। উথাল পাথাল করে দেয় এই অনিশ্চয়তার ভাবনা গুলো।
 এভাবেই কেটে গেল বেশ কিছু দিন। মৃদুলা হঠাৎ একদিন ঠিক করে আজ বলে দিবে সব কথা। পাওয়া না পাওয়ার মাঝে ঝুলে থাকারচে হারিয়ে ফেলার কষ্টটা হয়ত কম। কিছু সময় পরেই সায়াহ্ন এর ফোন আসলো। বেশ হাসি খুশি লাগছে ওকে। মৃদুলা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে এক গোছা সাহস সঞ্চার করল বুকে। কিন্তু বিধাতার সেই পুরনো নিয়ম হাত ছানি দিল আবার। সবটুকু স্বপ্ন গড়া হয়ে গেলে ঘুম ভাঙ্গার সময় হয় আসে।

মৃদুলার ভালবাসায় স্বপ্নে বিভোর ঘুম ভাঙ্গাল সায়াহ্ন। তানিশা নামের এক সুন্দরীর নিবেদিত প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে ও। মৃদুলার না বলা হাজারো কথা নিমেষেই কোথায় যেন হাড়িয়ে গেল। কান্না মাখা হাসি কণ্ঠে উইশ করল সায়াহ্ন কে। এলোমেলো হয়ে গেল আবার সব কিছু। কেও দেখি নি, কেও জানেনি, কেও হয়ত জানবেও না দু চোখে অঝর বৃষ্টি নিয়ে আকাশ সমান ভালোবাসা ছোট্ট হৃদয় চাপা রয়ে গেল ঠিক যেন আধারে মিশে যাওয়া জোনাকির শেষ আলোটুকুর মত।

 এরপর সায়াহ্ন এর অতি আগ্রহ ছাড়া খুব একটা যোগাযোগ হয়না ওদের মাঝে। একদিন ফোন এ সায়াহ্ন তার ভালবাসার মানুষ টির কথা এমন ভাবে বলা শুরু করল মৃদুলার নিজের প্রতি কন্ট্রোল হারিয়ে ফেলল। কোনও কথা না বলে একনাগারে সে “ভাল ভাল” বলছিল। সায়াহ্ন জানত মৃদুলা একজন কে পছন্দ করে ৩ বছর ধরে কিন্তু সে এখনো বলতে পারে নি।
 সায়াহ্ন ওকে বলল, “মৃদুলা, তুমি আজই তাকে বলে দাও তোমার কথাগুলো। তোমার মতো মেয়ে কে কেউ ফিরিয়ে দিতে পারবে না।
 মৃদুলা কোন কথা না বলে ফোনটা কেটে দিয়ে একটা মেসেজ পাঠাল সায়াহ্ন কে-
 “যাকে আমি গত ৩ বছর ধরে আমার প্রতিটা স্বপ্নে একে রেখেছি, সে আপনি। কিন্তু আমি জানি আপনি আমাকে ফিরিয়ে দিবেন, দুর্ভাগ্য আমার। আমি ভেবেছিলাম এই ৩ বছর ধরে আপনার প্রতি আমার ভাল লাগাটা একটু হলেও ধরতে পারবেন। কি বোকা আমি তাই না।?
 ভাল থাকুন, আপনার ভালবাসার মানুষ টির সাথে। আশা করি, ঐ মেয়ে টির মতো ও আপনাকে ছেড়ে যাবে না।

“ এরপর কেটে গেছে ৩ টি মাস। কিন্তু সায়াহ্ন আর মৃদুলা কে ফোন দেয় নি। মৃদুলা হয়ত সায়াহ্ন কে এখনো ভালবাসে। আগের মতই হয়ত এখনও ভাঙ্গা গড়ার স্বপ্ন আকে। ওর আকাশেই হয়তো সকাল সন্ধ্যা সাদা গাংচিল হয়ে নীড়ের ঠিকানা খোজে আজও।


পাওয়া না পাওয়ার হিসাব ভুলে হয়ত এভাবেই খুজবে জীবন খাতায় রোয়ে যাওয়া বাকি দিন গুলতে। আর হৃদয় স্পর্শে বলবে ভালবাসি......ভালবাসি এখনো।

No comments:

Post a Comment

আপনার মন্তব্য দিন