Pages

শীর্ষ আট প্রযুক্তিবিদের রোমান্স আর প্রেম-ভালোবাসার গল্প।

প্রযুক্তি বিশ্বের এই শীর্ষ গুরুদের জীবনকথা সাই-ফাই কল্পরাজ্যের গল্পকেও যেন হার মানায়। দিন দিন সাইবার জগত্ আর প্রযুক্তিপণ্যে সংকুচিত হয়ে আসা হাল-দুনিয়ার নায়কও এখন তাঁরাই। কিন্তু এক হাতে ক্ষমতা আরেক হাতে বিপুল বিত্ত নিয়ে এই প্রযুক্তি-বীরেরা কী করেছিলেন প্রেয়সীকে মুগ্ধ করতে? কী করেছিলেন বাগদানে বা বিয়েতে? আসন্ন বসন্তের বাসন্তী হাওয়া আর ভ্যালেন্টাইন্স ডের কথা মাথায় রেখে এখানে তুলে ধরা হলো শীর্ষ আট প্রযুক্তিবিদের রোমান্স আর প্রেম-ভালোবাসার গল্প।
বিল গেটস ও তাঁর স্ত্রী মেলিন্ডা গেটসবিল গেটসবান্ধবী মেলিন্ডা ফ্রেঞ্চের সঙ্গে প্রায় ছয় বছরের সম্পর্কের পর মাইক্রোসফট সাম্রাজ্যের অধিপতি বিল গেটসের মনে একদিন সেই প্রশ্নের উদয় হয়েছিল। আর তখনই একটা আস্ত বিমান ভাড়া করে সখীকে নিয়ে তিনি উড়ে গিয়েছিলেন নেব্রাস্কা রাজ্যের ওমাহায়। বিমানে আর কোনো যাত্রী না থাকায় বলা যাচ্ছে না যে যাত্রাপথে বিল মেলিন্ডাকে ঠিক কী বলেছিলেন। তবে, বিমান থেকে নেমেই এই জুটি সোজা একটি অভিজাত জুয়েলারির দোকানে ঢুকে পড়ে। তাঁদের অভ্যর্থনা জানাতে কে উপস্থিত ছিলেন? বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ ধনী ওয়ারেন বাফেট। আসলে তিনিই দোকানটা খোলা রাখার ব্যবস্থা করেছিলেন, যাতে এই প্রেমিক জুটি নিরিবিলি বাগদানের আংটি পছন্দ করতে পারে। বাগদানের আংটি তো হলো, কিন্তু বিয়ের অনুষ্ঠান। নির্বিঘ্নে বিয়ে সারতে হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জের পুরো মানালে বে হোটেলটাই ভাড়া করেছিলেন বিল।
মার্ক জাকারবার্গবিলিয়ন ডলার ক্লাবের সদস্য হয়েও ২৯ বছর বয়সী জাকারবার্গ কিন্তু প্রিসিলা চ্যানের সঙ্গে বিয়ের পর্বটা খুবই সাদামাটাভাবেই সেরেছিলেন। প্রায় নয় বছর ধরে গড়িয়েছিল এ জুটির রোমান্স পর্ব। জাকারবার্গ যখন চ্যানকে বিয়ের প্রস্তাব দেন, তখনই বাগদানের জন্য একটি হীরা বসানো চুনির আংটি বেছে নিয়েছিলেন। আংটির দাম ২৫ হাজার ডলার। বিলিয়ন ডলার ক্লাবে দামটা বড্ড বেমানান! এ জুটির বিয়েটাও ছিল মজার। পালো আল্টোতে নিজের বাড়ির পেছনের উঠোনেই হয়েছিল বিয়ের পার্টি। আমন্ত্রিত অল্প কজন অতিথি ভেবেছিলেন চ্যানের গ্র্যাজুয়েশন পার্টি এটা। কিন্তু সবাইকে অবাক করে দিয়ে জাকারবার্গ আর চ্যান নিজেদের বিয়ের ঘোষণা দেন সেখানেই।
শন পার্কার
ন্যাপস্টারের সহ-প্রতিষ্ঠাতা এবং ফেসবুকের প্রথম প্রেসিডেন্ট শন পার্কার বিয়ের জন্য যেন সর্বশক্তি নিয়েই ঝাঁপ দিয়েছিলেন। পার্কার এবং তাঁর স্ত্রী আলেক্সান্দ্রা লেনাস লর্ড অব দ্য রিংগস সিরিজের ব্যাপক ভক্ত। ওই সিনেমার ইলেভেন ফরেস্টের আদলে একটি অনুকীর্তি বানিয়ে করা হয়েছিল ওদরে বিয়ের সেটটা। পুরো বিয়েটাই যেন জন রোনাল্ড রুয়েল টলকিয়েনের কল্পনায় সাজানোর চেষ্টা। ফ্যাশন ডিজাইনার নাইজেলা ডিকসন বিয়েতে নিমন্ত্রিত ৩৬৪ অতিথির জন্য বিশেষ পোশাকের ডিজাইন করেন। অতিথিদের মধ্যে ছিলেন এমা ওয়াটসন, স্টিং, টুইটারের প্রতিষ্ঠাতা জ্যাক ডোরসি, এমটিভির প্রতিষ্ঠাতা বব পিটম্যানসহ অনেক সেলেব্রেটি। রহস্যঘেরা আর বিলাসবহুল বিয়েতে খরচ ১০ মিলিয়ন ডলারেরও বেশি।মার্ক জাকারবার্গ ও তাঁর স্ত্রী প্রিসিলা চ্যান
মারিসা মেয়ার
ইয়াহু সিইও মারিসা মেয়ার উদ্যোক্তা জ্যাক বোগকে বিয়ে করেছিলেন ২০০৯ সালে। তখনো গুগলে কাজ করছিলেন মারিসা। সান ফ্রান্সিসকোতে জাঁকজমকপূর্ণ বিয়ের অনুষ্ঠানের অন্যতম আকর্ষণ ছিল ব্যাপক আতশবাজির খেলা। ডিজাইনার নায়েম খান আর ক্যারোলিনা হেরার নকশায় বিয়ের পোশাক পরেছিলেন মারিসা। অভ্যর্থনা উত্সব হয়েছিল বিলাসবহুল ফোর সিজনস হোটেলে।
স্টিভ জবসঅ্যাপলের সহ-প্রতিষ্ঠাতা স্টিভ জবস তাঁর জীবনসঙ্গীকে খুঁজে পেয়েছিলেন ১৯৯০ সালে, স্ট্যানফোর্ডে একটা বক্তৃতা করতে গিয়ে। মুঠোফোনের নম্বর বিনিময় হয় তখনই। কিন্তু সে রাতেই একটা বিজনেস ডিনারের দাওয়াত ছিল স্টিভের। উদ্ভাবক জবস সেদিন কী ভেবেছিলেন স্মরণ করা যাক তাঁর জবানীতেই, ‘আমি গাড়ির চাবি হাতে পার্কিংয়ে ছিলাম। ভাবলাম, এটাই যদি দুনিয়ায় আমার শেষ রাত হতো, তাহলে কি আমি ওই বিজনেস ডিনারে যেতাম, নাকি এই নারীর সঙ্গে ডিনার করতাম। আমি দৌড়ে পার্কিং থেকে বেরোলাম এবং তাঁকে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, আমার সঙ্গে ডিনারে যেতে সে রাজি কি না। সে হ্যাঁ বলেছিল এবং আমরা দুজনে শহরে হাঁটতে শুরু করলাম এবং সেই থেকেই আমরা একসঙ্গে আছি।’ ২০১১ সালে স্টিভের মৃত্যুর আগ পর্যন্তও তাঁরা তাই ছিলেন।
ল্যারি পেজ
একজন বিলিয়নার যদি বিয়ের অনুষ্ঠানের জন্য একটা আস্ত দ্বীপ নিজের মতো করে ব্যবহার করতে চান, তাহলে তিনি কী করতে পারেন? তিনি আরেক বিলিয়নারের শরণাপন্ন হতে পারেন। গুগলের সহ-প্রতিষ্ঠাতা এবং বর্তমান সিইও ল্যারি পেজও ২০০৭ সালে লুসি সাউথওয়ার্থকে বিয়ের সময় তাই করেছিলেন। ল্যারি তাঁর বন্ধু বিলিয়নার রিচার্ড ব্রানসনকে বলেছিলেন। ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জে ব্রানসনের ব্যক্তিমালিকনার নেকার দ্বীপটিই ছিল ল্যারির বিয়ের ভেন্যু। জাঁকজমকের এই বিয়েতে অতিথি ছিলেন ৬০০।
ডেভ মরিন ও তাঁর স্ত্রী ব্রিটানি বোনেটজেফ বেজোস
আমাজন ডটকমের প্রতিষ্ঠাতা এবং সিইও জেফ বেজোস জানেন তিনি কী চান। এ জন্যই হয়তো তিন মাস অভিসারের পরই ম্যাকেঞ্জিকে বিয়ে করে ফেলেন তিনি। ভোগ সাময়িকীকে দেওয়া এক সাক্ষাত্কারে বেজো জানিয়েছেন, স্ত্রীকে খুশি করতে কী করেন তিনি। ‘ও কী পরতে পছন্দ করে, তা মনোযোগের সঙ্গে লক্ষ করি আমি। আপনারা চিন্তাও করতে পারবেন না এটা কতটা কাজ করে।’ স্ত্রীকে পছন্দের পোশাক কিনে দেওয়া সম্পর্কে বেজোস বলেন, ‘আমি ওকে ফোন করে শরীরের মাপ জানতে চাই। কেন জানতে চাইছি জিজ্ঞেস করলে আমি বলি, তাতে তোমার কাজ নেই। ও এতেই আনন্দিত হয়।’ স্ত্রীকে খুশি করতে এই পন্থা অবলম্বনের জন্য অন্য পুরুষদেরও পরামর্শ দিয়েছেন বেজোস।
ডেভ মরিন‘পাথ’-এর স্রষ্টা এবং ফেসবুক ও অ্যাপলের সাবেক কর্মী ডেভ মরিন প্রেয়সীকে প্রস্তাব দিয়েছিলেন সমুদ্রসৈকতে। বান্ধবী ব্রিটানি বোনেটকে নিয়ে মালদ্বীপে উড়ে গিয়েছিলেন ডেভ। সাগরতীরের বেলাভূমিতে তিনি লেখেন, ‘বি., তুমি কী আমাকে বিয়ে করবে?’ জবাবে বোনেট লেখেন, ‘হ্যাঁ’।

No comments:

Post a Comment

আপনার মন্তব্য দিন