Pages

জীবন, বন্ধুত্ব ও ভালোবাসা

ধুর সালা! কটনভারের তুলাটা আবার কানে আটকে গেছে। বাবা যে কেন এই রকম একটা থার্ড ক্লাস কটনভার কিনেছে? ধুর তারও বা কি দোষ! ঐ দোকানদার ব্যাটাই তো দুই নাম্বার কটনভার বিক্রি করেছে। দুই না তিন নাম্বার! কেমন একটা অস্বস্তি লাগছে।

- এই স্বর্না!
- অ্য! ডাকছিস কেন? পাশের রুম থেকে স্বর্না উত্তর দিলো।
এই অ্য'টা ওর নতুন বদ অভ্যাসগুলোর একটি। কেউ ডাক দিলেই অ্য! খুবই বিরক্তিকর। বিরক্তি যতোটা সম্ভব ঢাকলাম।
- ডাকছি কি আর এমনি-এমনি? লক্ষি বোন আমার। রূপচর্চা পরে করিস। সোন না কি জানি(!) ওইটা নিয়ে আয় প্লিজ।

কিছুক্ষন পর...

- দাদা? তোর কানে কি আবার তুলো আটকে গেলো নাকি?
- হুঁ।ঝটপট বের করে দে!
- কোন দেশে থাকিস বলতো? তুলা কি বেছে বেছে তোর কানেই প্রবেশ করে! পুরাই অবাক হয়ে যাই, তোর কান্ড-কারখানা দেখে! কিছু খেয়াল থাকে না? আর যখন গোসল করতে গিয়েছিলি তখন তোর মোবাইলে অন্তত ২০ বার কে যেন কল করছিলো।

বিরক্তি নিয়ে মোবাইলটা বের করে দেখলাম। সংখ্যাটা বিশ নয় মাএ তিন! যাহোক অপরিচিত নাম্বারে কল ব্যাক করার কোন মানে নেই। যদি প্রয়োজন হয় তবে সে আবার কল দেবে। আমার বন্ধুদের অন্যকেউ হলে সেই নম্বরে ব্যাক করতো এবং কোন মেয়ে হলে তো কথাই নেই! সারাদিন SMS এবং মিস্ কল দিয়ে সিম অফ করতে বাধ্য করবে। কিন্তু আমি ঐ জাতীয় না। সবার কাছে বিরক্তিকর কোন প্রানী। যদিও আমার কাছে আমি অন্যরকম আলাদা কিছু; মানে স্পেশাল! খেয়াল করে শুনলাম স্বর্না তার মুখ থেকে কথার মালা ছাড়ছে তো ছাড়ছেই! মেয়েরা একটু বাঁচাল হয়। কিন্তু এই মেয়ে একটু বেশী পরিমান বাঁচাল।

- এই তুই থামবি? পারলে তুলোটা বের করে দে। নইলে যা।
- দাদা! তোর মাথা ঠিক আছে তো? আমিতো কখন সেই তুলো বের করে ফেলেছি।
- যা ভাগ তাহলে। তোর এই সব অকারনের কথাগুলো আমার শুনতে ইচ্ছে করছে না।
বিরক্ত হয়ে বলে ফেললাম। স্বর্না মূখ ভার করে চলে গেলো। ওর সাথে এই রকম ব্যবহার করা উচিত্‍ হয় নি। খুব কষ্ট পেয়েছে নিশ্চয়ই। অবস্য পাওয়ারই কথা। কারন আমার বোন আমার চেয়ে তিন বছরের ছোট হলেও একেবারে বন্ধুর মতো সম্পর্ক। আসলে গতকালের ওই ঘটনার পর কোন কিছুই ঠিক ভাবে চলছিলো না। ঐ ঘটনা মানে গতকাল ম্যাথ ক্লাশে স্যার আমাকে কান ধরে দাড় করে রেখেছেন! চিন্তা করা যায়, একজন কলেজ স্টুডেন্ট কান ধরে দাড়িয়ে আছে! এই কামলা ব্যাটা(কামাল স্যার) একেবারে কাউকে ছাড়ে না! তাও একেবারে মেয়েদের সামনে! তারপর এখন আবার এইসব নায়ক-নায়িকার কাহিনী, সিরিয়ালের কোথায় কি হলো...ইত্যাদি ইত্যাদি; নিজে তো দেখবেই আবার অন্যকেও শোনাবে।

বাড়িয়ে দাও তোমার হাত;
আমি আবার তোমার আঙ্গুল ধরতে চাই....

মোবাইলের রিংটোনটা বেজে উঠলো। ওয়েলকাম টিউন'ও এটাই সেট করা।
সেভ নাম্বার। নাম ভেসে উঠলো। 'Moda Hati'! হাতি মানে শাহরিয়া কল দিলেই ওর নাম দেখেই খুব হাসি পায়। আজ পেলো না।

- হ্যা! হাতি বল?
- তুই একটু কলেজে আসতে পারবি? খুবই প্রয়োজন।
- ওই আজতো শুক্রবার। তুই কলেজে কি গাছ খাইতে গেছস? কলা গাছ'তো নাই।
- ইয়ার্কি বাদ দে। প্লিজ; খুব দরকার।
- ওই মটু , তোর খুব দরকার হলে বাসায় চলে আয়। আমাকে এই দুপুরে বের হতে দেবেনা।
- মফিজ্জা! চান্দু! তুই হিন্দু তুই বুঝবি কি? এই শুক্রবার আমি নামাজ ফালাইয়া কলেজে আসছি তোরে বাঁশ দিতে! চান্দু , ৫ মিনিটে কলেজে না আসলে তোর খবর আছে। রাখলাম।

হাতির বাচ্চা! আমাকে কথা বলার সুযোগই দিলো না? যাহোক এখন বের হতেই হবে। কিন্তু.....

-সরি'রে! এই কান ধরে বলছি। তখন আসলে মাথাটা একটু ...
(কথাটা শুনে স্বর্না ফিক করে হেসে উঠলো।)
আমি একটু বেরোচ্ছি। প্লিজ মা'কে একটু ম্যানেজ করিস।
- দুপুরে খাবি না?
- হু। এই যাবো আর আসবো। প্লিজ, একটু ম্যানেজ করিস।
- আচ্ছা।

সাইকেলটা বাইরেই রাখা ছিলো। চাবি পকেটেই ছিলো। আমাদের এই মফস্বলে দুপুরের দিকে রাস্তাঘাটে লোকজন কম থাকে। শুক্রবার'তো থাকেই না।

মাএ পাঁচ মিনিটেই কলেজে পৌছে গেলাম। কলেজের গেট থেকে ভিতরে ঢুকলাম। একটা গাছের নিচে পুকুর পাড়ে হাতি তার বিশাল দেহ নিয়ে বসে আছে! পাশে একটা মেয়ে বসা। হাতির প্রেমিকা নাকি? বেশ ইন্টারেস্টিং লাগলো। ওদের পেছনের দিকে আমি ছিলাম। তাই কারো চেহারা দেখা যাচ্ছিলো না। কিন্তু মেয়েটাকে বেশ বাচ্চা-বাচ্চা লাগছিলো! ভাবলাম সাইকেলটা নিয়ে গিয়ে হাতির গায়ে উঠিয়ে দেই। না থাক অপরিচিত একটি মেয়ের সামনে ওকে ইনসাল্ট করা উচিত্‍ হবে না। তবে মেয়েটা না থাকলে ঠিকই গায়ে উঠিয়ে দিতাম। আমি দাড়িয়ে-দাড়িয়ে ভাবছিলাম। কিভাবে সামনে যাওয়া যায়? সাইকেলটা পাশে রেখে ঝট করে একটা মিস কল দিলাম। হাতি পিছনে তাকালো। হাতি দৌড়ে আমার কাছে আসলো। বললো,

- শুভ। তোকে আনতে তো আমার রূহ বের হয়ে গেছে। চিনিস ওকে? তোর ফেসবুক ফ্রেন্ড! স্বর্না! আমার কাজিন!
- কি? তাহলে এতোদিন বলিস নি কেন?
- ধুর। ও বলতে নিষেধ করেছিলো। ও তোকে ভালোবাসে।
- কি? তোর ধর্ম সম্পর্কে কোন ধারনা আছে?
- জানি। আমি ওকে অনেক বুঝিয়েছি। কিন্তু....
- কিন্তু....
- কিন্তু কিছু না। যা, একটা মেয়ে একা দাড়িয়ে আছে; শুধুমাএ তোর জন্যে!

একা দাড়িয়ে ছিলাম কি করবো বুঝতে পারছিলাম না। হাতি ততক্ষনে গেটের কাছে গেছে পাহারাদার হিসেবে! পাশে তাকিয়ে দেখি মেয়েটি আমার কাছে চলে এসেছে। জীবনে কখনো এরকম পরিস্থিতিতে পরিনি। ফেসবুকে আমি যতোটা হিট; বাস্তবে ততোটাই ফ্লপ! ভাবলাম একবার তাকিয়ে দেখি। মেয়েটা ব্যাগে কিছু একটা খুজছিলো! মেয়েটার মুখের দিকে তাকালাম। অসম্ভব সুন্দর। নিজের অজান্তে একটা শব্দ বের হয়ে এলো,
'অ্যঞ্জেল!'
মেয়েটা সাথে সাথে আমার দিকে তাকালো। বুঝা গেলো বেশ লজ্জা পেয়েছে! আমিও!!!

এক টুকরা কাগজ নিচে ফেলে ও দৌড় দিলো। বিস্ময়ের ঘোর কাটাতে না কাটাতে হাতি বললো, - যাই বস!
- হু। আস্তে করে বললাম!
নিজের ঘোর তখনো কাটে নি!
ঘাসের উপর বসে পড়লাম। কাগজটা তুললাম।

চিরকুট বা চিঠি কিংবা বায়োডাটা যা বলেন যেকোন কিছু হতে পারে ওটা!
পড়তে শুরু করলাম....!

হ্যালো,
আপনি অসাধারন একজন মানুষ। আপনি ফেসবুকে নিজেকে খারাপ হিসেবে অবিহিত করেন; যা আমার কাছে সবচেয়ে ভালো লাগে। সত্যি কথা বলতে কি আমি আপনার প্রেমে পড়ে গেছি। কিন্তু ফেসবুকে বলতে পারছিলাম না। আমি এখন থেকে এখানেই থাকবো ! আমি ক্লাশ ten'এ পড়ি। এই বছর এখানেই SSC Exam দিবো। তারপরো এখানে থাকার বিশাল সম্ভাবনা আছে। আমরা ২ বোন। বড় বোনের বিয়ে হয়ে গেছে। বাকিটা শাহরিয়া'র কাছ থেকে জেনে নিবেন। আপনি আমাকে পছন্দ না করলেও সারা জীবন আপনার জন্য আমি wait করবো।
-
স্বর্না
মোবাইল: 017XXXXXXXX
ইমেইল: sharnaxxxx@xxxxxx.com

ঘাসের উপর শুয়ে স্বর্নার কথা ভাবছি। একটা হাসি পেলো, গার্ল ফ্রেন্ডের নামও স্বর্না, বোনের নামও!! নাম দিয়ে কি হবে? একজন অ্যঞ্জেল আমাকে পছন্দ করে? ভাবতেই নিজেকে হিরো টাইপের কিছু একটা মনে হলো! মূহুর্তের মধ্যে ওর প্রেমে পড়ে গেলাম। আগে কখনো কোন মেয়েকে নিয়ে বিন্দুমাএ চিন্তা করিনি। আজ ভাবতে ইচ্ছা করছে। মনে করে দেখলাম, ফ্রেন্ড সাজেশনে একটি মেয়েকে দেখাচ্ছিলো,
স্বর্না আক্তার!
শাহরিয়ার নাঈম ইজ এ মিচুয়্যাল ফ্রেন্ড।
রিকোয়েস্ট পাঠালাম। অ্যসেপ্ট করলো। এরপর আমাকে মাঝে-মাঝে poke দেয়। আমার স্টাটাসে like দেয়। কিন্তু কোন ম্যাসেজ পাঠালে রিপ্লে করে না!

শুভ'ভাই! ওঠো! এইখানে শুইয়া আছো কেন? বাসা থেকে রাগ করছো নাকি?
তাকিয়ে দেখলাম দশম শ্রেনীর ছেলেরা। ক্রিকেট খেলতে এসেছে।
-ওই মিয়া, তোমরা এখানে আসছো ক্যান?
- আরে ভাই রাশেদ ভাই'রা আজ মার্চেন্টে খেলবে। আমাদের এইখানে পাঠায়ে দিছে!
- এই পিয়াস? বাজে কয়টা?
- সাড়ে ৪ টা।
- তোমাদের শুক্রবারো'তো এনায়েত কাক্কু(এনায়েত স্যার) পড়ায়?
- হু!
-প্রাইভেট পড়তে গেছিলা?
- হু! ওইখান থেকেই মাঠে আসছি!
- তোমার খাতাটা দাও।
- আগে ওঠো তো শুভ'ভাই। কি করবা?
- লাগবে! একটু পর দিয়া যাইতেছি।
- তন্ময়? আসার সময় আমার খাতাটা আনিস। [পিয়াস, তন্ময়কে ওর খাতাটা আনতে ইঙ্গিত করলো।]

পিয়াসের খাতাটা নিয়ে সাইকেলে চড়ে সোজা বাসার উদ্দেশ্যে....। রিক্সার ছোট ছোট জ্যাম সৃষ্টি হয়েছে। ১০ মিনিটের মতো লাগলো বাসায় পৌছাতে।

- তুই বাসায় ঢুকবি না। যা! আমার কাছে বলে গিয়েছিলি?
- আরে মা। এই দেখো খাতা। আমি স্যারের কাছে গিয়ে কিছু নোট নিয়ে এসেছি। স্ব-স্বর্নাকে বলে গিয়েছিলাম তো। মা আর কিছু বললো না। [স্বর্না নামটা বলতে কেমন একটা অনুভব হলো। মূখে আটকে যাচ্ছিলো]
- খাবার রাখা আছে। ইচ্ছে হলে খাস।
স্বর্না ইশারায় ডাকলো। সোজা ঘরে ঢুকে ভক্ষন কার্য শেষে মা'র কাছে বলে কলেজে গিয়ে পিয়াসের খাতা ফেরত দিয়ে মার্চেন্টস স্কুলে গেলাম। রাশেদকে দেখলাম বোলিং করছে আর ব্যাটিং করছে সুমন ভাই।

আমাকে দেখেই মেহেদী বললো, 'চান্দু কি খেলা বন্ধ করতে আসলি নাকি?'
আমি কোন জবাব না দিয়ে একটু মুচকি হাসলাম।
আমার বন্ধু রাশেদ! শুধু বন্ধুই না, ও আমার অনেক আপন। ভাবলাম ওর কাছে ব্যাপারটা শেয়ার করবো। তাছাড়া ওর অভিগ্গতার ঝুলিও বিরাট। ইন্টার ফাস্ট ইয়ারে পড়লেও এর মধ্যে তিনবার ছ্যাকা জাতীয় কিছু খেয়েছে!
আমি যাওয়ার একটু পড়েই খেলা শেষ।
- এই রাশেদ! যাবি না?
- হু! কিন্তু আগে একটা কাজ আছে। একটু বাজারের মধ্যে যাইতে হবে।
- আয়। সাইকেলে ওঠ।

রাশেদ সমর্থন দিয়ে উঠলো।

আমি প্যাডেল ঘুরিয়ে চালাতে শুরু করলাম। শুনলাম দূর থেকে সাকিব বলছে, 'চান্দুর বাচ্চা! তোর সাইকেলে বান্দরই উঠবে!'

এমনিতেই জানুয়ারী মাসের শেষের দিক। তার উপর এই বছর শীত একটু বেশীই পড়েছে। কিন্তু কারো শীত লাগছে না! কারন আমি সাইকেল চালাচ্ছি আর রাশেদ'তো এতক্ষন ক্রিকেট খেলেছে। আমি সাইকেল চালাতে চালাতে রাশেদকে সব বলছিলাম।
হঠাত্‍ রাশেদ আমাকে থামিয়ে দিয়ে এক দোকান থেকে কিছু কিনলো। এরপর আমি সাইকেল ঘুরিয়ে চালাতে শুরু করলাম। ওদের বাসা আর আমাদের বাসা প্রায় কাছা-কাছিই! আমি বেশ সংক্ষেপে আজকের ঘটনার সমাপ্তি করলাম।
শুনে রাশেদ বললো,
- শুভও প্রেম করে! মামা, মাইয়া জিনিস বহুত খারাপ। বাদ,দে! ভালো থাকবি। তারপর আবার মুসলমান। তোদের ধর্মে যেখানে এক গোত্রের সাথে অন্য গোত্রের লোকের বিয়ে হয় না। সেইখানে তুই অন্য ধর্মে গেলি? তুই ওর জন্যে ইসলাম গ্রহন করতে পারবি?
- তোরাতো আমায় সারাদিনই মুসলমান বানাস। কিন্ডার থেকে কতবার যে কলেমা পড়াইছোস? খালি গরুর মাংস খাইলেই পাক্কা!
- মন থেকে গ্রহন করতে হয়। তুইতো একবারো মন থেকে ইসলাম মানস নাই।

আমি চুপ! একটু পর বললাম,
- এখন বল এ্যসেপ্ট/রিজেক্ট কোনটা করবো?
- সেইটা তোর ইচ্ছা! সচরাচর কোন ছেলে এই রকম অফার পায় না। অ্যসেপ্টই করে ফেল। আর তুই যখন বলতাছোস খুব সুন্দর।
(একটু থেমে) ওই তোর বোনের ফেসবুক আই ডি বলতো!
- আমার বোন ফেসবুক চালায় না।
- আরে আহম্মক। এইটা'তো তোর বোনই!
- তুই আসলেই একটা বান্দর!
- ইস। চান্দুর এখনই এতো পিরিত! চান্দু....তুই তো ওর প্রেমে পড়ে গেছস। আমারে জিগাস ক্যান? আর আপনার মেয়ে বন্ধুর ছবি দেখবো। ফেসবুক আইডি'টা বলুন!
- মনে নাই। তুই আমার ফ্রেন্ডের মধ্যে একটাই স্বর্না আক্তার পাবি। ওইটাই। কিন্তু ও নিজের ছবি আপলোড করে নাই।
- যাইরে। অনেক দেরী হয়ে গেছে। কাল আবার রহমান স্যারের কেমিস্ট্রি পরীক্ষা।
- ok.bye! কাল কলেজে নাও যাইতে পারি। স্যার'কে বলিস আমার জ্বর!

বাসায় গেলাম। আমার বাবা সরকারী চাকুরিজীবী। বর্তমানে বরিশালে কর্তব্যরত। প্রত্যেকদিন ৮টা-সাড়ে ৮টা'র দিকে বাসায় ফেরেন। মাঝে মাঝে স্বর্নায় পড়া জিগ্গেস করেন। আর সেদিন স্বর্নার রক্ষা নেই। তবে বর্তমানে তিনি ঢাকা গিয়েছেন। কারন আমার ছোট পিশীর(খালা/ আন্টি) বাচ্চা হবে। আর তারা ঢাকা থাকেন। আমাদেরও যাওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু শেষে বাবা একাই গেলেন। যাক, না নিয়ে বাবা আমার বেশ উপকার করে গেছেন!

ভাবলাম স্বর্নাকে(আমার বোন) সব বলবো! না থাক বাচ্চা মেয়ে, আবার কাকে কি বলে দেয়? মনে হয় বলবে না। আর ওতো আমার বন্ধুর মতো বোন!

বই-খাতা নিয়ে স্বর্নার রুমে গেলাম।
- আজ পড়তে ইচ্ছে হচ্চে না। তোকে একটা জোশ গল্প শুনাবো। কিন্তু আগে তোর নিজের নাম চেঞ্জ করে অন্য কিছু রাখ?
- দাদা? তোর মাথা ঠিক আছে তো? কাল তোর মাসিক পরীক্ষা না?
- আরে রাখ তোর পরীক্ষা! শুনবি কিনা বল?
- হু।
- তাহলে তোর নাম এখন থেকে স্বর্নালি!
- কি?
- স্বর্নালি! শুনিস নি?
- আমি আমার নাম এত্তো বিশাল বানাতে পারবো না।
- তাহলে এই ইন্টারেস্টিং স্টোরীও শুনতে হবে না।
- লাগবে না।
আমি বুঝেছিলাম স্বর্না গল্প শুনতে নিজের নাম চেঞ্জ করতে রাজি হবে। কিন্তু ....! ওর হেল্প আমার ভীষনভাবে প্রয়োজন হবে। একই স্কুলে যেহেতু পড়ে!
-ঠিক আছে। নাম চেঞ্জ করতে হবে না। শোন তাহলে....
আমি বেশ ছোট করে সব বললাম। ও শুনলো আর হাসলো। শেষে বললো, এটা নাকি কমেডি কমেডি লাগছে! যাহোক ও বললো, যতোটা পারে আমাকে সাহায্য করবে।

অনেক রাত পর্যন্ত ফেসবুক চালালাম। কিন্তু সে অনলাইনেই আসে নি। হাতির সাথে কিছু চ্যাট করলাম। ইমেইল নিয়ে না ঘেটে সরাসরি ঐ নাম্বারেই ম্যাসেজ পাঠালাম। কোন রিপ্লে আসেনি। সারারাত শুধু স্বর্নার কথা ভেবেছি। ঘুম আসেনি। "সবার উপরে মানুষ সত্য, তাহার উপরে নাই!" কোন ব্যাটা জানি বলেছিলো। ঐ মামায় বুঝি আমার কথা ভেবেই বলেছিল! ধর্ম অনেক পড়ে, আগে তো মানুষ। সত্যিই আমি ওকে অনেক ভালোবেসে ফেলেছি। বোনের নাম'তো চেঞ্জ করাতে পারলাম না! গার্ল ফ্রেন্ডের নাম চেঞ্জ করবো। ওকে এখন থেকে আমি অ্যঞ্জেল বলে ডাকবো!

শেষ রাতে ঘুমিয়ে পরলাম। আর আমার ঘুম ভাঙ্গানো আর বাঘ শিকার করা একই কথা।
ঘুম ভাঙ্গলে দেখলাম ১১: ৩৯! ঝটপট বিছানা ছেড়ে উঠে মোবাইলে দেখলাম ৩ মিসড কল আয় ২ ম্যাসেজ। ম্যাসেজ একটা অ্যঞ্জেল পাঠিয়েছে, অন্যটা বান্দর রাশেদ। কলগুলোও রাশেদের।
রাশেদ লিখেছে, তুই নাকি অসুস্থ? সেটা শোনার আগে স্যার অসুস্থ হয়ে গেছেন!
অন্যটায় অ্যঞ্জেল লিখেছে- আজ প্রথম এখানকার স্কুলে যাচ্ছি। টিফিন টাইমে দেখা হবে?

অন্যসব স্কুলে জানুয়ারী মাসে তারাতারি ছুটি হলেও, এই স্কুল ব্যাতিক্রম। এমনিতেই SSC&HSC পরীক্ষা এখানে হয়। তাই ঐ সময় স্কুলেয় কার্যক্রম বন্ধ থাকে তাই জানুয়ারী মাসেও সব প্রিরিয়ড!
শীতকাল! ২ টায় টিফিন।
হাতিকে ম্যাসেজ পাঠালাম :
এই প্রিরিয়ড শেষ হলে বাসায় আসিস! কথা আছে!

হাতি আসলো। আমার রুমে গিয়ে ওর কাছ থেকে অ্যঞ্জেল সম্পর্কে সব শুনলাম। আমার অ্যঞ্জেলকে কোন এক কারনে এই বছরের জন্য তার খালার বাসায় পাঠানো হয়েছে! কি কারনে তা শাহরিয়া জানে না! ওর একটি কথায় খুব হাসলাম, আমার সাথে রিলেশন না হলে হাতি নাকি লাইনে দাড়িয়ে যেত!
শাহরিয়াকে নাকি বাসা থেকে বলে দিয়েছে চারটার সময় ওকে নিয়ে বাসায় ফিরতে!

- চল! মার্চেন্টস'এ একবার উঁকি মেরে আসি!
হাতি সম্মতি দেওয়ায় গেলাম।
স্কল ছাড়ার পর এখন পর্যন্ত একবারো ক্লাশ চলাকালীন সময়ে ভিতরে ঢুকিনি! দেখলাম দশম শ্রেনীর হৃদয় স্কুলের বাইরে ঘুর ঘুর করছে...!

- ওই মিয়া? ক্লাশ পালাইছো!
- হু ভাই! আজ স্যারে সিরিয়াস ভাবে ধরছে! জানো শুভ'ভাই, ক্লাশে নতুন একটা মেয়ে আসছে!
- তাতে তোমার কি?
- আমার কিছুই না। কিন্তু যা চেহারা না! হাসান প্রোপজ করছিল! পড়ে রাশেদ ভাই শুইনা হাবলু হাসান'রে এমন একটা চড় দিছে যে হাসান প্রেমের নাম ছাইড়া ওই মেয়ের কাছে ক্ষমা চাইছে!
- রাশেদ?
- হু! রাশেদ ভাই! তোমাদের কার সাথে নাকি ওর সম্পর্ক আছে! আমার তো মনে হয় রাশেদ ভাই'ই....!
- থাক! আমার থাপ্পর খাইতে না চাইলে আর বিশ্লেষন করতে হবে না।
- একবারে সবার শিক্ষা হয়ে গেছে! এখন ছেলেরা কেউ ওর সাথে কথাই বলে না!
- যাও! যাও! নিজের কাজে যাও।

টিফিনের সময় দূর থেকে আমার অ্যঞ্জেলকে দেখলাম। হাতিও ছিলো আমার সাথে। মফস্বলে নতুন একটা মেয়ের কাছে গিয়ে তারই সাথে কথা বলা যে দুঃসাধ্য তা যারা মফস্বলে থাকেন তারাই বোঝেন।
খবর রটে যাবে!
'অমুকেরে দেখছি, অমুকের সাথে কথা বলে'!

এরপর চলতে থাকে আমাদের প্রেম!
ফেসবুকে, মোবাইলে, কিংবা কখনো প্রাইভেট ফাঁকি দিয়ে অথবা মাঝে মধ্যে শাহরিয়া ওকে নিয়ে ঘুরতে বের হলে।
আর আমার বোনের সাথে অ্যঞ্জেলের কি বন্ধুত্ব!
এক ক্লাশে না পড়লেও একেবারে গলায় গলায় বন্ধুত্ব!
আমাদের সাথে সম্পর্কটা আপনি থেকে তুমিতে দাড়ায়।
SSC তে গোল্ডেন এ প্লাস পাওয়া ছেলেটা এখন সারাদিন তার অ্যঞ্জেলের কথা ভাবে।
আগের থেকে অনেক স্মার্ট হয়ে গেছি আমি!
প্রত্যেকদিন শেভ'তো লেগেই আছে, সাথে হেয়ার জেল, ফেয়ার এন্ড হ্যান্ডসাম সহ কতো কি!
আর তৈরী করে দেয়ার জন্যে মেকাপ ওম্যান(!) আমার বোন'তো ফ্রি!
আগে একান্ত প্রয়োজন না হলে হাতিদের বাসায় যেতাম না।
এখন নিয়মিত যাই।
মাঝে মাঝে ইশারায় কথা বলি।

একদিন'তো প্রায় ধরা পড়ে গিয়েছিলাম।
প্রাইভেট ফাঁকি দিয়ে আমরা কথা বলছিলাম, কলেজের এক কোনায়!
হঠাত্‍ কমার্সে'র এক স্যার উড়ে এসে জুড়ে বসলেন।
ভাগ্যিস স্যার আমাকে চিনতেন না, শেষে নিজের নাম আরেকটা বললাম!
থাকি কোথায়, অমুক গ্রামে!
অনেক দূর!
আমার টেকনিক কাজে লেগেছে দেখে অ্যঞ্জেলও সব চেঞ্জ করে বললো।

এভাবে চলতে থাকে আমার
দিন.........
মাস.........
বছর........

হঠাত্‍ একদিন শাহরিয়া এসে আমাকে বলে,
- শুভ, আমায় ক্ষমা কর দোস। আমি জানি তোর সাথে যে অপরাধ আমি করছি তা ক্ষমার অযোগ্য!
- ওই সালা, তুই আবার কি করলি! তুই আমার যে উপকার করছোস! যে অ্যঞ্জেল আমি পাইছি, এই জন্যে তো সারাজীবন আমি তোর কাছে ঋনী!
- নারে। ওই স্বর্না একটা ডাইনী। ও এতো খারাপ একটা মেয়ে তুই চিন্তা করতে পারবি না। ও খুবই বাজে একটা মেয়ে। জঘন্য চরিত্রের। আমি মূখে আনতে পারতাছি না।
- চোপ! হাতির বাচ্চা, মটু! তোর মাথা ঠিক আছে তো? নাকি হেমায়েতপুর পাঠাইতে হবে?

শাহরিয়া কিছু বলতে চাচ্ছিলো। আমি ওকে বাঁধা দিয়ে বললাম অন্য কিছু বলতে চাইলে বল, নইলে ভাগ।

অ্যঞ্জেলের সাথে আমার সম্পর্কটা এমন দাড়িয়েছে যে পৃথিবী অবিস্বাস করতে পারি, ওকে নয়!

বলতে ভূলে গেছি এর মাঝে আমি আমার সবচেয়ে আপন বন্ধু রাশেদকে হারিয়েছি। আপনারা আবার বুঝবেন না যে ও মারা গেছে! ও আমাকে ছেড়ে চলে গেছে।
কেন? জিগ্গেস করলেন না?

রাশেদ একদিন আমাকে বললো,
- মামা তুই সিরিয়াস একটা ভূল করছস?
- কি?
- আমি তোরে আগেই বলছি,
মেয়েদের হাতে পাওয়ার চেয়ে আল্লাহ্কে হাতে পাওয়া অনেক সহজ।
- কি বলবি ঠিক কইরা বল!
- আমার কাছে যতোটুক ইনফরমেশন আছে SSC পরীক্ষার্থী স্বর্না খুবই বাজে চরিত্রের।
ও নাকি এখনো হাসানের সাথে প্রেম করতাছে।
- থাবড়ায়ে দাত ফালায়ে দিমু! তুই জানোস? কারে কি বলতাছোস?
- পুরা কথাটা শোন,প্লিজ?
- কি? পুরা কথা কি? তুই স্বর্নারে লাইক করস? ওরে ভালোবাসোস?
আমার কথাটা শুনবি তো?
- স্বর্না সম্পর্কে আর একটাও বাজে কথা আমি শুনতে চাই না। তুই আসলে আমার বন্ধু না। তোর চেয়ে একটা সাপরে বিস্বাস করলে ফল পাইতাম।
- চোপ! আগে আমার কথাটা শোন!
- তোরে আমি ভয় পাই নাকি? যে তুই যা বলবি তাই শুনতে হইবে? আর একটা কথা বললে তোর সাথে আমার বন্ধুত্ব শেষ।
- তুইও আমারে ভূল বুঝলি?
- হু। বুঝলাম।
- প্লিজ শোন..
- স্বর্না সম্পর্কে কোন বাজে কথা শুনতে চাই না।
- তুই জানোস না, স্বর্না: মেহেদী, তৌফিক ভাই, তুর্য্য ভাই......

...ঠাস...
সশব্দে এক চড় কসিয়ে দিয়েছিলাম রাশেদের গালে। ও বিন্দুমাএ প্রতিবাদ করে নি। শুধু আমার দিকে একবার অসহায়ভাবে তাকিয়েছিলো। রাশেদের হাতে থাকা মোবাইল সেটটি তখন ও রাগের বশবর্তী হয়ে পাশের দেয়ালের দিকে ছুড়ে ফেলে দিয়ে সোজা হেটে গেলো। মোবাইলটি কয়েক টুকরা হয়ে গিয়েছিলো।

এভাবে আরো কয়েক দিন গেলো.....

কিন্তু সব কিছু কেমন জানি চেঞ্জ হয়ে গেছে।
স্বর্না এখন আর আমার সাথে আগের মতো কথা বলে না। কেমন একটা এড়িয়ে চলে। সব সময় বলে সামনে পরীক্ষা। সে নাকি এখন খুব বিজি!

সেই কলেজের কোনায় কিছুদিন পর আমি গেলাম।
কিন্তু একা।
একটা ছেলে একটা মেয়ের সাথে ঢলা-ঢলি করছে।
ঠিক আমাদের মতো।
মেয়েটা আর কেউ নয়, স্বর্না!
আর ছেলেটা আমাদের ক্লাশের মেহেদী।
খুব অবাক হলাম! মেহেদী'তো আমাদের ব্যাপারটা জানতো।
হায়রে বন্ধুত্ব!
খুব ইচ্ছে হচ্ছিলো সামনে যাবো।
পারলাম না।
চলে আসলাম।

আজ বুঝতে পারলাম জীবনে কি কি হারিয়েছি!
'রাশেদ' একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেললাম। ওর কাছে ক্ষমা চাওয়ার মূখ আমার নেই। আর কিভাবে চাইবো? ওর ফেসবুক, টুইটার, ওয়াপলগ কিংবা ইমেইল দীর্ঘদিন যাবত ব্যাবহার হয় না। অন্য এ্যকাউন্ট ব্যাবহার করে। আর ওর যে মোবাইল নাম্বার আমার কাছে ছিলো সেটা তো চোখের সামনে ফেলে রেখে গেলো। জিগ্গেস করলেন না, রাশেদের কাছে যাচ্ছি না কেন?
ওর আব্বু বদলী হয়ে গেছে। সাথে রাশেদরা সবাই চলে গেছে। রাঙ্গামাটি।

পরদিন,
সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখলাম মেহেদীর নতুন বান্ধবী(স্বর্না) আমাকে SMS পাঠিয়েছে। লেখাঃ
আজ ৪ টায় কলেজের কোনায় দেখা করবা? কিছু কথা আছে।

'ব্রেক আপ করতে কলেজের কোনায় যেতে হয় না'। রিপ্লে করতে চাইলাম। কিছু একটা চিন্তা করে রিপ্লে করলাম: ok.

সেই বিকাল।
সেই কলেজের এক কিনারা।
সেই আমরা দুজন।
সেই শুভ আর স্বর্না।
কিন্তু কেউ কারো সাথে কথা বলছি না। আমি নিরবতা ভাঙ্গলাম।
- কেন ডেকেছো?
- তুমি কি আমাকে সত্যিই ভালোবাসো?
- এতোদিন পর হঠাত্‍ এই কথা?
- আমার জন্য মুসলমান হতে পারবা?
- কোন একসময় পারতাম। এখন আর পারবো না।
- আমি জানি তুমি পারবা না। আমার জন্যে জীবন দিতে পারবে?
- কোন একসময় তুমিই আমার জীবন ছিলে। এখন আর নেই।
- তুমি খুব ইন্টারেস্টিং কথা বলো। কিন্তু তোমার মতো কালো, খাটো, আনস্মার্ট ছেলেকে আমার মতো সুন্দরী মেয়ে ভালোবাসতে পারে না। কখনো ভালোবাসিও নি।
- 'আমি জানি না কেন তুমি এরকম করলে? কেন এতদিনের সম্পর্ক ভেঙ্গে দিলে? এতদিন পর বুঝি চেহারায় নজর পরলো? আগে বুঝি ফেসবুক স্টাটাস ভালোবাসতে আর এখন বুঝি গায়ের গায়ের রং ভালোবাসো?' -এইটুকু বলতে চাচ্ছিলাম। মূখে আটকে গেলো। বাস্তবে বললামঃ 'আমি জানি না মেহেদী কতোটুকু ফর্সা, লম্বা বা স্মার্ট! পেছনের সব ভূলে যেও প্লিজ। সুখে থেকো। good bye......'

আমার ফেসবুক স্টাটাসের শেষে সবসময় একটা কথাই থাকে: 'Never Say Good bye.'

কিন্তু আজ নিজেই বলছিঃ 'good bye'

পরের শুক্রবার। সামনে SSC পরীক্ষা। সব পরীক্ষার্থী খুব ব্যাস্ত। এনায়েত স্যার আজও পড়াবেন। একটা গান বর্তমানে আমার ভীষন ভালো লেগেছে।

যে কটা দিন তুমি ছিলে পাশে
কেটেছিলো নৌকার পালে চোখ রেখে
আমার এ চোখে ঠোটে গালে
তুমি লেগে আছো....
যেটুকু রোদ ছিলো লুকানো মেঘ
দিয়ে বুনি তোমার সালে ভালোবাসা
আমার আঙ্গুল হাতে কাঁধে
তুমি লেগে আছো....
যেভাবে জলদি হাত মেখেছে ভাত নতুন আলুর খোসা
আর এই ভালোবাসা
আমার দেয়াল ঘড়ি কাটায়
তুমি লেগে আছো....

বিকেলে বের হলাম। মার্চেন্টস স্কুলের বারান্দায় বসে খেলা দেখছিলাম। স্কুলে নতুন ভবন তৈরী হচ্ছে। তাই মাঠের আশে পাশে ইটের টুকরা ছড়িয়ে-ছিটিয়ে ছিলো। স্বজন বললো, শুভ'ভাই, খেলবা?
না ইংগিত করলাম।

নিজের অজান্তে স্কুলের গেটের কাছে গিয়ে দাড়ালাম। একটু পরেই দেখলাম স্বর্না তার বান্ধবীদের নিয়ে এনায়েত স্যারের কাছ থেকে প্রাইভেট পড়ে ফিরছে। বর্তমানে ওকে দেখলে আমার খুব ঘৃনা অনুভব হয়। একটু দূরে সরে যেতে চাচ্ছিলাম।
কিন্তু স্বর্না ততক্ষনে গেটের কাছে এসে পড়েছে। শুনলাম আমাকে উদ্দেশ্য করে বলছে...
"ওই যে শুভকে দেখছিস না। খুব খারাপ চরিত্রের ছেলে। হিন্দু হয়ে আমাকে প্রেম নিবেদন করেছিলো, আমাকে অনেক চাপও দিছে, কিন্তু আমি...."

আর নিজেকে ধরে রাখতে পারলাম না। পায়ের কাছে থাকা আধলি ইট(ইটের অর্ধেক টুকড়া) তুলে সজোড়ে নিক্ষেপ। অব্যর্থ নিশানা। সোজা স্বর্নার মাথায়।

চিত্‍কার, চেচামেচি, লোক জড়ো হয়ে গেছে, সবাই আমার দিকে ধেয়ে আসছে........

নিজেকে হাসপাতালে আবিস্কার করলাম। সারা শরীরে বেধম ব্যাথা। শুনলাম আমার এই ঘটনায় বাবা হার্ট এ্যটাক করেছেন। খুব অনুশোচনা হচ্ছে। স্বর্না মরে নি, তবে বেশ জখম হয়েছে। মূহুর্তে পুলিশ আসলো। তারপর জেল। আমার বয়স ১৮ পেরোয় নি, কিন্তু ১৮ বছরের উপরে উঠিয়ে বিভিন্নভাবে আমাকে ফাঁসিয়ে ৩ বছরের জেল।

রাশেদ সেই রাঙ্গামাটি থেকে আমাকে দেখতে এসেছে। অনেকক্ষন কেঁদেছে, আমি কাঁদিনি। একজন কাঁদলে যে অন্যজনকে সেই কান্না থামাতে হয়।

বাবা মারা গেছেন। হে স্রষ্টা আর কতোভাবে আমাকে কষ্ট দেবে? আর এই ধরনের স্বর্না'রা কি শেষ হওয়ার নয়?

[অ(সমাপ্ত)]

No comments:

Post a Comment

আপনার মন্তব্য দিন