Pages

মস্তিষ্কের স্মৃতিশক্তি বাড়ানোর ১৬ টি কার্যকরী কৌশল

মস্তিষ্ক
স্মৃতিশক্তির জন্যই মানুষ হিসেবে আমাদের পরিচয়। স্মৃতি ক্ষমতা আপনার মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য এবং জীবনীশক্তির উপর নির্ভর করে। মানসিকভাবে দুর্বল স্মৃতিশক্তির জন্য প্রতিদিনের কাজে আমাদের অনেক সমস্যায় পড়তে হয়। মাত্র ৫ মিনিট আগের বলা কথার স্মৃতিও হারিয়ে যায় মস্তিষ্ক থেকে। ছোটোখাটো জিনিস কোথায় রেখেছি তা হুট করেই ভুলে যাই, এইসকল ছোটোখাটো ব্যাপার খুব বেশি ঝামেলা তৈরি না করলেও এগুলো সত্যিকার অর্থেই যন্ত্রণার।
১.পর্যাপ্ত ঘুম
প্রতিদিনের ঘুম মস্তিষ্ক সুরক্ষা রাখার জন্য অনেক কার্যকরী। কারণ ঘুমের মধ্য মস্তিষ্ক বিশ্রাম পায়। পূর্ণবয়স্ক মানুষের দৈনিক আট ঘন্টা ঘুমানো প্রয়োজন। ভাল ঘুম আপনার মস্তিষ্ককে অধিক কার্যকরী করে তোলে। ঘুমের সময় সাম্প্রতিক সময়ের তথ্যগুলোকে মস্তিষ্কসংরক্ষণ করতে থাকে। আর ঘুমকে বলা হয় মেমোরি চার্জার। ঘুমের সময় আপনার মেমোরি পরবর্তী স্মৃতি ধরার জন্য প্রস্তুত হয়।
২. মস্তিষ্কের ব্যায়াম
প্রথমে শুনলে হয়ত পাগলামী ভাবতে পারেন কিন্তু আপনি আপনার মস্তিষ্ককে যত বেশি কাজে লাগাবেন, আপনার মস্তিষ্ক তত বেশি কাজ করবে…যেমন সবজি কাটার ছুরিটি দিয়ে যত বেশি কাটা কাটা করবেন ছুরিটি তত বেশি ধার হবে। মানুষের মস্তিষ্ক একটি বিস্ময়কর ক্ষমতা, এই ক্ষমতা স্নায়ু নমনিয়তা হিসাবে পরিচিত হয়। অধিকার উদ্দীপনার সঙ্গে আপনার মস্তিষ্ক নতুন স্নায়বিক পথ গঠন করে ও উপস্থিত সংযোগ পরিবর্তন করে। এবং নতুন কোন শেখার বিষয় স্মৃতি আসে যখন নিজেই পুর্ণনির্মাণ মস্তিষ্ক এর অবিশ্বাস্য ক্ষমতা অধিকারী হবেন। আপনি আপনার জ্ঞানীয় ক্ষমতার বৃদ্ধিতে নতুন তথ্য জানতে পারেন, যা স্নায়ু নমনিয়তা শক্তি বৃদ্ধি করবে।
 ৩.পাজল বা ওয়ার্ড
গবেষণায় দেখা যায় যাদের নিয়মিত পাজল সমাধান, স্ক্রাবল, সুডোকো মেলানোর অভ্যাস রয়েছে তাদের মস্তিষ্ক অন্যদের তুলনায় অনেক বেশি উন্নত। যখন খেলা হয় তখন মস্তিস্কের স্মৃতি এলাকাগুলো সহ পুরো মস্তিস্কের সমস্ত স্নায়ুগুলো সক্রিয় হয় যা কিনা স্মৃতি বৃদ্ধিতে সহায়তা করে এছাড়াও তাদের স্মৃতিশক্তির দুর্বলতা জনিত সমস্যাও হয় না। তাই সময় পেলেই এইধরনের খেলা খেলে নিন। এইসব গেম প্রায়ই বুদ্ধিজীবী কার্যকলাপ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ যে মস্তিষ্কের লক্ষ্যপূর্ণ এলাকায় উদ্দীপিত করতে পারেন।
৪. মেলোথেরাপি মিউসিক
থেরাপিকে সাধারণত মেলোথেরাপি বলা হয়। এটি  দুর্বল স্মৃতিশক্তি কে কমিয়ে দেয় একেবারেই। এই মেলোথেরাপির মাধ্যমে মনোযোগ নির্দিষ্ট হওয়ার ক্ষমতা বাড়ে। গবেষণায় দেখে গিয়েছে ক্লাসিক ধরণের গান মস্তিষ্কের ধারণ ক্ষমতা বাড়ায় শিশু কিশোরদের মধ্যেও।
৫. বই পড়া
বই পড়া হচ্ছে মস্তিষ্কের সবচাইতে ভালো ব্যায়াম। যে ধরণের বই…ই হোক না কেন বই পড়ার বিষয়টি মস্তিষ্কের স্নায়ু সচল রাখতে সহায়তা করে। এমনকি খবরের কাগজ, ম্যাগাজিন যাই হোক না কেন অবসর সময়ে তা পড়ে নিলে মস্তিষ্কের বেশ ভালো ব্যায়াম হয়। এতে করে স্মৃতিশক্তিও উন্নত হয়।
৬. লেখালেখি
নতুন ভাষা শেখা নতুন একটি ভাষা শেখা এবং লেখার মাধ্যমে নিজের আত্মবিশ্বাস যেমন বাড়ে তেমনই কমে যায়  স্মৃতিশক্তি দুর্বল হওয়ার সম্ভাবনা। নতুন একটি ভাষা শেখা, বোঝা এবং প্রয়োগ করার মাধ্যমে মস্তিষ্কের কর্মদক্ষতা বাড়ে যা স্মৃতিশক্তিকে দুর্বল হতে বাঁধা দেয়।
৭. মস্তিষ্ক প্রশিক্ষণ ও  উদ্দীপিত
মুখস্থকৃত বিষয়ের উপর ‘আমল করা। মনোবিজ্ঞানী এ ব্যাপারে একমত যে, কোনো একটি বিষয় যত বেশিবার পড়া হয় তা আমাদের মস্তিষ্কে স্মৃতিতে দৃঢ়ভাবে জমা হয়। মৌলিক জ্ঞানীয় দক্ষতা কাজ স্মৃতি এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণের গতি হিসাবে পরিচিত। মুখস্থ দিয়ে মস্তিষ্ক প্রশিক্ষণ হয়। ল্যাপটপ, ট্যাবলেট, ফোন বা ব্যক্তিগত কম্পিউটার এর মাধ্যমে শিক্ষাগত সাধন হয়। মস্তিষ্কের প্রশিক্ষণ ফলে আমাদের চিন্তা সৃজনশীল, বুদ্ধিমান, অন্তর্দৃষ্টিপূর্ণ নিশ্চিত হতে পারে।
৮. যোগাযোগ
যোগাযোগ আমাদের সাধারণ বুদ্ধি মাত্রা জন্য গুরুত্বপূর্ণ, যা আমাদের শব্দভান্ডার বৃদ্ধি পায়। এটি একটি মজার সামাজিক কার্যকলাপ। বিষণ্ণতা এবং অতিরিক্ত মানসিক চাপ স্মৃতি শক্তি কমে যাওয়ার অন্যতম কারণ। তাই সামাজিক কর্মকাণ্ডে নিজেকে যুক্ত করুন। সামাজিক কর্মকাণ্ড বিষণ্ণতা এবং মানসিক চাপ থেকে বেরিয়ে আসতে সহায়তা করে। যদি আপনি একা একা থাকেন তবে দিনের কিছুটা সময় কাটান আপনার প্রিয় কোন বন্ধু বা প্রিয় কোন ব্যক্তির সাথে। এতে আপনার বিষণ্ণতা কমবে।
৯. শারীরিক ব্যায়াম
শারীরিক ব্যায়াম-শারীরিক, মানসিক এবং এমনকি বুদ্ধিহীনতা সমস্যার বিস্তৃত একটি বড় সমাধান। ব্যায়াম করলে আপনার শরীরে অক্সিজেনের পরিমাণ বৃদ্ধি পায় এবং আপনার মস্তিষ্ক গ্রহণ করে গ্লুকোজ, যা আপনার রক্ত প্রবাহ বৃদ্ধি পায়. ব্যায়াম শারীরিক সমন্বয় জড়িত হিসাবে এটি শারীরিক কার্যকলাপ পরিবর্তন করে। ব্যায়াম মস্তিষ্কের নতুন মস্তিষ্ক কোষ (নিউরন) বৃদ্ধি করে।
১০. অক্ষর জ্ঞান
আপনি মনে রাখতে চান, আক্ষরিক জ্ঞান  স্মৃতি দায়িত্বশীল করে যারা কোন অংশ অনুশীলন করে আপনার মস্তিষ্কের এলাকায়  রক্ত প্রবাহ সৃষ্টি করে। আপনি একটি গল্প লিখা ও পড়ার কাজ শুরু করতে পারেন – এই কার্যক্রম সব মনে রাখা এবং তথ্য মুখস্থ করা আপনার ক্ষমতা উন্নত করতে সাহায্য করবে।
 ১১. গান শোনো
গবেষণায় দেখা গেছে সঙ্গীত শোনার মাধ্যমে পুরানো স্মৃতি পুনরায় ডাকা খুব সহায়ক। কিছু সংগীত স্মৃতিশক্তি বাড়াতে উপকারি। কোন ঘটনার সময় আপনি যদি কোন গান শুনেন তবে পুনরায় সেই গান শোনার সময় সেই ঘটনার স্মৃতি আপনার মস্তিষ্কে জেগে উঠবে যা আপনার মস্তিষ্ককে সচল করবে।
 ১২. মস্তিষ্কের খাবার
মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বাড়ানোর জন্য অবশ্যই আপনাকে ভিটামিন যুক্ত পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে। তাজা ফলমূল, গাঢ় সবুজ শাকসবজি, মাছ, মাংস, ডিম, দুধ, গমের রুটি প্রভৃতি প্রোটিন ও মিনারেল সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করুন। পরিমান মতো বিশুদ্ধ পানি পান করুন। প্রচুর চর্বিযুক্ত খাবার পরিহার করুন। বিশেষ করে বাসি-দূষিত খাবার খাবেন না। ধূমপান ও মাদক সেবন থেকে বিরত থাকুন। এগুলো মস্তিষ্কের জন্য ভয়ানক ক্ষতিকর।
১৩. প্রকৃত ধারণা
কোন স্মৃতি মনে করার জন্য, তার পড়াশোনা তথ্য কল্পনা করতে পারেন। আপনার পাঠ্যপুস্তক প্রদর্শিত, অথবা আপনি একটি বই অধ্যয়নরত এমন ভাবতে পারেন, এটা আপনার মনে রাখার স্মৃতিকে বাড়িয়ে দিবে।
১৪. দক্ষতা আয়ত্ত করুন
খুব সম্প্রতি একটি সুইডিশ গবেষণায় পাওয়া গেছে যে যারা নতুন ভাষা শিখেছে তাদের অন্যদের নাম মনে রাখার ক্ষেত্রে স্মৃতি শক্তি বেড়েছে। অন্যান্য কর্মকাণ্ড যেমন সেলাই শেখা বা স্কিইং শেখা ইত্যাদিও স্মৃতি বাড়াতে সহায়ক । সুতরাং, স্মৃতি বাড়াতে নতুন নতুন দক্ষতাকে আয়ত্ত করার অভ্যাস গড়ে তুলুন ।
১৫. কায়িক শ্রম
শারীরিক পরিশ্রম পুরো শরীর এবং মস্তিস্কে রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করে । এই রক্ত সঞ্চালন আমাদের স্মৃতিকে উন্নত করতে সহায়তা করে । সুতরাং দিনের কিছু সময় অতিবাহিত করুন শারীরিক পরিশ্রম বা ব্যায়াম করে।
১৬.নিজে নিজে অভ্যাস
নিজে নিজে কথা বলা বা আপনমনে কথা বলার কাজটি খুব বেশি পাগলামি মনে হলেও এটি অনেক বেশি কার্যকরী। গবেষণায় দেখা যায়….যারা আপনমনে কথা বলেন তাদের স্মৃতিশক্তির তুলনায় যাদের এই অভ্যাস নাই তাদের স্মৃতিশক্তি বেশ কম। এমনকি নিজেকেই নিজে গল্প শোনানোর বিষয়টি স্মৃতিভ্রষ্টের সমস্যা দূর করে।
স্মৃতি শক্তি কমে যাওয়ার পেছনে অন্য কোন শারীরিক বা মানসিক সমস্যা থাকতে পারে। কেউ যদি স্মৃতি শক্তি জনিত গুরুতর সমস্যায় ভোগেন তাহলে অবশ্যই তাকে ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে।

No comments:

Post a Comment

আপনার মন্তব্য দিন