Pages

ঔষধীগুণে পূর্ণ কলার খোসা দিয়ে স্বাস্থ্য ও ত্বকের পরিচর্চা

কলার খোসা
কলা আমরা এমনি খেতে অভ্যস্ত, তেমনি কর্নফ্লেক্সের সঙ্গে, কলার পুডিং, মাফিন, কেক এমনকী কলার বড়াও বেশ উপাদেয়। তবে কলা যেভাবেই খাই না কেন খোসাটি কিন্তু যায় সেই ডাস্টবিনে। চমৎকার পুষ্টিগুণসম্পন্ন এই ফলটিতে রয়েছে প্রোটিন এবং প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন। রয়েছে তিনটি প্রয়োজনীয় প্রাকৃতিক সুগার: গ্লুকোজ, ফ্রুকটোজ ও সুক্রোজ। আমাদের দেহের এমন কিছু সমস্যা রয়েছে, যা রোধে ওষুধের থেকে কলা অনেক কার্যকর। চলুন জেনে নেই কিভাবে ঔষধীগুণে পূর্ণ কলার খোসা দিয়ে স্বাস্থ্য ও ত্বকের পরিচর্চা করা যায়-

ক্যানসার ও হৃদরোগ

জাপানের এক গবেষণায় দেখা গিয়েছে সবুজ খোসার থেকে বেশি উপকারী হলুদ খোসা। এই খোসা রক্তে শ্বেতকণিকার পরিামণ ঠিক রেখে ক্যানসার মোকাবিলা করতে পারে। আবার কলায় রয়েছে ডোপামিন, যার সাহায্যে কিডনিতে রক্ত চলাচল প্রক্রিয়া সচল থাকে।

অবসাদ কাটাতে

সবুজ খোসার মধ্যে থাকা অ্যামাইনো অ্যাসিড ট্রিপ্টোফ্যানের কারণে রাতে ভাল ঘুম হয়। অনেক গবেষণায় দেখা গিয়েছে সবুজ খোসার মধ্যে থাকা সিরোটোনিন অবসাদের মোকাবিলা করতেও সক্ষম। তাই ময়লা হিসেবে কলার খোসা ফেলে দেওয়ার চেয়ে তা রান্না করে খাওয়া যেতে পারে।

ওজন কমাতে

কলার খোসায় থাকা প্রচুর পরিমাণ অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট শরীরের কোলেস্টেরলের মাত্রাও নিয়ন্ত্রণে রাখে। কলায় প্রচুর পরিমাণে সলিউবল এবং ইনসলিউবল ফাইবার আছে যা কোলস্টেরল দ্রুত কমাতে সাহায্য করে ও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে। সেইসঙ্গে আপনার ওজনও রাখে নিয়ন্ত্রণে। কলাতে রয়েছে পটাসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ভিটামিন ৬, ভিটামিন ১২ এবং ফাইবার যা পাচনতন্ত্রকে স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে। কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।

রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ

কলার খোসায় প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি অক্সিড্যান্ট, পটাসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম এবং ভিটামিন বি৬ আর অত্যাবশ্যকীয় খনিজ উপাদান রয়েছে। কলার খোসা শরীরে রক্তচাপের মাত্রাও নিয়ন্ত্রণে রাখে। যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। অধিক পটাশিয়ামযুক্ত বলে রক্তচাপ ও হৃদরোগের রোগীদের জন্য খুবই উপকারী একটি উপাদান।

অর্শ্বরোগ

অর্শ্বরোগ ও মলের সাথে রক্ত গেলে চামড়াসহ দুটি কলা আগুণে পুড়ে বা কাবাব করে খেয়ে নিন, আপনার অর্শ্বরোগ ও মলে রক্ত যাওয়া অবস্থা ক্রমেই উন্নত হবে।

অতিবেগুনি রশ্মি

অতিবেগুনি রশ্মির ছোবল থেকে চোখকে বাঁচায় এই খোসার মধ্যে থাকা লুটিন নামক পদার্থ, যা দৃষ্টিশক্তি বাড়াতেও উপকারী। চোখে ছানি পড়ার হাত থেকে রক্ষা করতে পারে কলার খোসা। চোখের চুলকানি ও চোখের অবসাদ দূর করতে চোখের ওপর কলার খোসা মেখে নিতে পারেন। চোখ ভাল রাখতে এবং চোখকে ছানি পড়া থেকে বিরত রাখতেও সাহায্য করে।

আঁচিল দূর করতে

অনেকেই শরীরে অতিরিক্ত আঁচিল নিয়ে অনেক বিব্রত অবস্থায় পরেন। ঘরোয়া ভাবে কলার খোসা এই আঁচিল দূর করতেও সাহায্য করতে পারে। কলার খোসার ভেতরের অংশ আঁচিলের ওপর রেখে কাপড় বা সুতা দিয়ে বেঁধে রাখুন সারা রাত। নিয়মিত ব্যবহারে আঁচিল শুকিয়ে পড়ে যাবে। তবে ৭ দিনের মধ্যে এ পদ্ধতিতে আঁচিল পড়ে না গেলে ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়া উচিৎ।

দাদের ওষুধ

কলার খোসা দাদের ওষুধ হিসেবেও কাজ করে। চুলকালে সেই অংশে কলার খোসা ঘষে দিলে চুলকানি বন্ধ হবে এবং দ্রুত দাদ সেরে যাবে।

খোসপাঁচড়া দূর করে

ত্বকে কোথাও ঘা বা পাঁচড়া-জাতীয় কিছু হলে সেই জায়গায় কলার খোসা মেখে রাখুন, অথবা কলার খোসা পানির মধ্যে সেদ্ধ করে সেই পানি দিয়ে সংক্রমিত জায়গা কয়েক দিন ধুয়ে ফেলুন উপকার পাবেন।

পোকা-মাকড় কামড়ালে

যদি কোনো পোকা-মাকড় হঠাৎ কামড় দিয়ে বসে এবং চুলকাতে থাকে এর জন্য কলার খোসা কাজে লাগাতে পারেন। দ্রুত ব্যথা ও চুলকানি সেরে যাবে।

ঝকঝকে সাদা দাঁতের জন্য

ঘরোয়া উপায়ে দাঁত সাদা করতে চাইলে ব্যবহার করতে পারেন কলার খোসা। কলার খোসার ভেতরের দিকটা দাঁতে ঘষতে থাকুন ২ মিনিট ধরে। এরপর ৫ মিনিট অপেক্ষা করুন। এরপর আপনার নিয়মিত টুথপেস্ট দিয়ে দাঁত মেজে ফেলুন। মাত্র ৭ দিনেই দাঁত হয়ে উঠবে ঝকঝকে সাদা।

ব্রণ দূর করতে

মুখের ব্রণ দূর করতে কলার খোসা উপকারী। এই উপায়ের মাধ্যমে একবার সেরে গেলে ব্রণ আর ফিরে আসে না। মুখে ভালো করে ঘষে সারারাত রেখে দিলে ব্রণের সমস্যা কাটবে।

মুখের দাগ দূর করতে

কলার খোসা ব্যবহার করে সহজেই মুখের দাগ দূর করা যায়। মধুর সঙ্গে কলার খোসা মিশিয়ে মুখে ভালো করে ঘষলে এই দাগ দূর হয়।

বলিরেখা দূর করতে

ত্বকের জন্যও কলার খোসা অনেক উপকারী। কলার খোসায় অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট রয়েছে, যা বলিরেখা ঢাকে ত্বকের টান টান ভাব ফিরিয়ে দিতে পারে। এটি ত্বককে সজীব রাখতে সাহায্য করতে পারে।

মসৃণ ত্বকের জন্য

মুখমণ্ডল যদি শুষ্ক আর খসখসে হয়, কলার খোসার ভেতরের অংশ মুখে লাগিয়ে রাখুন কিছুক্ষণ। তারপর ধুয়ে ফেলুন। দেখবেন ত্বক মসৃণ ও মোলায়েম হয়ে গেছে।

No comments:

Post a Comment

আপনার মন্তব্য দিন