Pages

শাহজাহান-মমতাজের প্রেমকাহিনী

শ্বাশত ভালবাসার অনন্য নিদর্শন- তাজমহল। মোঘল স্থাপত্যের এই অনন্যশৈলীর মাধ্যমে মানব হৃদয়ের ভালবাসার যে বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে তা সত্যিই প্রশংশনীয়।
মনুষ্য সৃষ্ট পৃথিবীর সাতটি বিস্ময়ের একটি এ তাজমহল ভারতের উত্তর প্রদেশের আগ্রায়, যমুনা নদীর তীরে অবস্থিত। এ বিস্ময়ের সৌন্দর্যের বর্ণনা যেকোন ভাষাতীত।


তাজমহলঃ পেছনের কাহিনী
তাজমহল তৈরি করেন মোঘল সম্রাট আকবরের দৌহিত্র সম্রাট শাহজাহান, তাঁর প্রিয়তম স্ত্রী আরজুমান্দ বানু বেগমের (মমতাজ মহল নামেই বেশি পরিচিত) স্মৃতিস্তম্ভ হিসেবে। মমতাজ মহল ছিলেন শাহজাহানের তৃতীয় স্ত্রী। মমতাজ মহল ১৬৩১ সালে মাত্র ৩৯ বছর বয়সে বুরহানপরে ১৪তম সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে মারা যান। স্ত্রী হারানোর শোকে মুহ্যমান শাহজাহান তাঁর প্রাণপ্রিয় স্ত্রীর স্মৃতির জন্য নির্মাণ করেন ভালবাসার এই অপরূপ নিদর্শন।


সম্রাট শাহজাহান


মমতাজ মহল

তাজমহলের নির্মান শুরু হয় ১৬৩২ সালে; মমতাজের মৃত্যুর এক বছর পর। ২০ হাজারের বেশি শ্রমিকের প্রচেষ্টায় ১৬৪৮ সালে, মমতাজের মৃত্যুর ১৭ বছর পর গম্বুজ গুলোর নির্মান কাজ শেষ হয়; যদিও পুরো কাজ শেষ হয় ১৬৫৩ সালে। শুধু মানুষ নয়; এ মহান কীর্তির ভাগিদার ১০০০ হাতী, যারা নির্মাণের জন্য মার্বেল পাথর পরিবহনে নিয়োজিত ছিল।


তাজমহল (১৮৬০ সালে তোলা)

স্থাপত্যশৈলী
পুরো তাজমহল ১৮০ ফুট উঁচু যার প্রধান গম্বুজটি ২১৩ ফুট উঁচু এবং ৬০ ফুট চওড়া এবং এর চারপাশে চারটি মিনার আছে যার প্রতিটির উচ্চতা ১৬২.৫ ফুট। পুরো কমপ্লেক্সটির আকার ১৯০২X১০০২ ফুট। শুধু তাজমহলটি ১৮৬X১৮৬ ফুট মার্বেল পাথরের উপর নির্মিত। এর প্রধান প্রবেশদ্বার ১৫১X১১৭ ফুট চওড়া এবং ১০০ ফুট উঁচু।
তাজমহল নির্মানের জন্য পাঞ্জাব থেকে আনা হয় স্বচ্ছ মার্বেল পাথর, চীন থেকে সবুজ পাথর, তিব্বত থেকে স্বচ্ছ ও নীল পাথর এবং শ্রীলংকা থেকে নীলমনি। তাছাড়া ভারত, পাকিস্তান, পারস্য ছাড়াও বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে প্রায় ২৮ রকমের মূল্যবান পাথর দিয়ে তৈরি করা হয় এই অনন্য স্থাপত্য।
• তাজমহলের প্রধান ডিজিইনার হলেন ইরানের বিখ্যাত স্থপতি ওস্তাদ মুহাম্মদ আফেনদি।
• গম্বুজগুলো ডিজাইন করেন ইসমাইল আফেনদি
• লাহোরের কাজিম খান ছিলেন প্রধান স্বর্ণকারক
• দিল্লির চিরঞ্জীলাল হলের প্রধান ভাস্কর
• ইরানের আমানত খান হলেন খোদাই শিল্পী


তাজমহলের প্রধান প্রবেশদ্বার


তাজমহলের অভ্যন্তর

বিস্ময়কর গম্বুজঃ
তাজমহলের গম্বুজগুলো হল অন্যতম মনোমুগ্ধকর বস্তু।গম্বুজের সাদা মার্বেল গুলো সূযোর্দয়ের সময় গোলাপি আভা ছড়ায়। গোধুলিতে অপসৃয়মান সূর্যের বিভিন্ন রঙের আলো প্রতিফলন করে। আর রাতের বেলা পূর্ণিমার আলোয় গম্বুজগুলো যেন মুক্তোর মত চকচক করে। ভরা পূর্ণিমার ভালবাসার এ মহাস্থাপনা সোনালি আর নীল আলোয় লুকোচুরি খেলে। আর কুয়াশা মাখা দিনে ভালবাসার এ স্তম্ভ যেন মেঘের গায়ে ভেসে বেড়ায়। প্রচলিত আছে, গম্বুজগুলো থেকে যে রঙ-বেরঙের আলোর ছটা বিচ্ছুরিত হয় তা নারীর আবেগ ও অনুভুতিকেই প্রকাশ করে।


যমুনার কোল ঘেঁষে....


সূর্যাস্তের আলোয় রক্তিম তাজমহল

আরো কিছু তথ্যঃ
• মমতাজ মহল মারা যাওয়ার পর প্রথম তাঁকে সমাহিত করা হয় জয়নাবাদ বাগানে। ৬ মাস পর তাঁকে পুনরায় সমাহিত করা হয় আগ্রার তাজমহলে (তখনও তাজমহল নির্মিত হয়নি)।
• মমতাজ মহলের সমাধিস্থলে আল্লাহতায়ালার ৯৯ নাম খোদাই করা আছে।
• সম্রাট শাহজানের সমাধিতে খোদাই করা তাঁর মৃত্যু দিবস-- ২৬ শে রজব দিবাগত রাত্রি, ১০৭৬ হিজরি।
• ইতিহাস বলছে তাজমহল তৈরিতে সম্রাট শাহজাহানকে সেই সময়ের হিসাবে ৪১১ লাখ ৪৮ হাজার ৮২৬ রুপী ৭ আনা ৬ পয়সা গুনতে হয়েছিল।
• ভারতবর্ষে এ গল্প এখনও প্রচলিত যে সম্রাট শাহজাহান তাজমহল নির্মানের পর নির্মান শ্রমিকদের হাতের কবজি কেটে ফেলার নির্দেশ দিয়েছিলেন যাতে ধরিত্রীতে দ্বিতীয় তাজমহল তৈরি না হয়।
• মমতাজ মহলের মৃত্যুর পর সম্রাট শাহজাহান দুই বছর শোক পালন করেন, বেশিরভাগ সময় রাজকর্ম বাদ দিয়ে সম্পূর্ণ একা থাকতেন। এর পর তাঁর পুত্র আওরঙ্গজেব সিংহাসনে আরোহন করেন এবং শাহজাহানকে আগ্রার কেল্লায় বন্দী করেন। বন্দী অবস্থায় কেল্লা থেকেই তিনি তাজমহলের দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতেন এবং বন্দী দশাতেই তাঁর মৃত্যু হয়। প্রিয়তমা মমতাজ মহলের সমাধির পাশেই তাঁকে চিরনিদ্রায় শায়িত করা হয়।
• যদি আপনার প্রিয়জনকে নিয়ে তাজমহল ভ্রমণ করতে চান তাহলে পূর্ণিমার রাতে তাজমহল দর্শন করতে ভুলবেন না। রাতের জোছনা মাখা তাজমহলের রূপ, সোনায় মোড়ানো গম্বুজ আর সবুজ চাদরের লনের তুলনা এ ধরিত্রীর কারো সাথে সম্ভব নয়।


এইখানেই ঘুমিয়ে আছেন সম্রাট শাহজাহান এবং তার প্রিয় "তাজ"


তাজমহলঃ লুকানো সত্য??
উপরে যা বললাম তা কমবেশি সবাই জানেন। কিন্তু এবার একটু নড়েচড়ে বসুন। কারন এখন যা বলতে যাচ্ছি তা হয়ত অনেকের কাছেই নতুন ও অন্যরকম মনে হতে পারে।

আমাদের চেনা-জানা তাজমহলের ইতিহাসকে চ্যালেঞ্জ করে বসেন প্রফেসর পি.এন. অক (Professor P.N. Oak-- Taj Mahal: The True Story বই এর লেখক)। তিনি দাবী করেন যে তাজমহল বেগম মমতাজ মহলের সম্মানে নির্মিত প্রেমের সমাধিস্থল নয়; বরং এটা প্রাচীন দেবতা শিব (যাকে আগে বলা হত “তেজ মহালয়”) এর মন্দির যেখানে আগ্রার রাতপুতরা পূজা অর্চনা করত!! পরে শাহজাহান একে তাঁর মৃত স্ত্রীর স্মরণে স্মৃতিশালা হিসেবে গড়ে তোলেন।

ইতিহাস অনুসন্ধানে তিনি দেখতে পান যে শিব মন্দিরটি সম্রাট শাহজাহান অন্যায়ভাবে জয়পুরের মহারাজার (জয় সিং) কাছ থেকে দখল করেন। সম্রাট শাহজাহান তাঁর নিজস্ব দিনপঞ্জীতেও (বাদশাহনামা) উল্লেখ করেছেন যে, জয় সিং এর কাছ থেকে আগ্রার এক চমৎকার প্রাসাদোপম ভবন মমতাজ মহলের সমাধিস্থলের জন্য বেছে নেয়া হয়। এবং এর জন্য জয় সিংকে অনত্র জমিও দেয়া হয় সম্রাট শাহজাহানের পক্ষ থেকে।

“তাজমহল” নাম নিয়েও প্রফেসর অক সংশয় প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, মোগল আমল (এমনকি সম্রাট শাহজাহানের আমলেও) দলিলাদি ও কোর্টের নথিপত্রে কোথাও “তাজমহল” নাম উল্লেখ নাই! তাছাড়া ওই সময়ে কোন মুসলিম দেশে কোন প্রাসাদ/ভবনের নাম “মহল” রাখার প্রচলন ছিল না!
তাজমহল নাম এসেছে মমতাজ মহল থেকে---এটাও তাঁর কাছে যুক্তিযুক্ত মনে হয়নি দুইটি কারনে। প্রথমতঃ তাঁর প্রকৃত নাম কখনই মমতাজ মহল ছিল না। দ্বিতীয়তঃ কেউ কারো নামে কোন প্রাসাদের নামকরন করতে চাইলে তার নামের প্রথম দুই অক্ষর বাদ দিয়ে (মমতাজ থেকে “মম” বাদ দিয়ে তাজ) নাম রাখবেন--এটাও সহজে মেনে নেয়া যায়না।

তিনি আরো বলেন, মমতাজ আর শাহজাহানের ভালবাসার গল্প মুলতঃ রূপকথা যা ওই সময়ের লোকদের মুখ থেকে সৃষ্ট; কারন ওই সময়কার কোন সরকারী নথিপত্রে বা গ্রন্থে মমতাজ-শাহজাহানের প্রেমের কথা উল্লেখ নাই।

পাশাপশি প্রফেসর অক কিছু ডকুমেন্ট উপস্থাপন করেন যা প্রমাণ করে তাজমহল শাহজাহান শাসনামলের নয়!-
১। নিউ ইয়র্কের আর্কিওলজিস্ট মারভিন মিলার (Marvin Miller) যমুনা নদীর তীর সংলগ্ন তাজমহলের দেয়ালের নমুনা পরীক্ষা করে তাতে যে কার্বন পাওয়া যায় তা সম্রাট শাহজাহনের শাসনামলেরও ৩০০ বছরের পুরনো!
২। ইউরোপিয়ান পর্যটক যিনি ১৬৩৮ সালে আগ্রা ভ্রমন করেন (মমতাজ মারা যাওয়ার মাত্র সাত বছর পর) তিনি তার গ্রন্থে সেসময় তাজমহল তৈরির কোন সূত্র উল্লেক করেননি।

প্রফেসর অক তাজমহলের স্থাপত্যশৈলীর কিছু অসামঞ্জস্যতার কথা তুলে ধরে বলেন যে তাজমহল মুলতঃ হিন্দু মন্দির ছাড়া আর কিছুই নয়।
তিনি বলেন তাজমহলের অনেক কামরাই শাহজাহানের আমল থেকেই তালবদ্ধ করে রাখা হয়েছে যা এখনও জনসাধারনের অজানা রয়ে গেছে। প্রফেসর অক দৃঢ়তার সাথে দাবী করেন যে ওই কামরাগুলোর একটাতেই আছে দেবতা শিবের মস্তকবিহীন মূর্তি যা সচরাচর হিন্দুদের মন্দিরে দেখা যায়।

ধর্মীয় এবং রাজনৈতিক সংঘাতের আশংকায় ইন্দিরা গান্ধির সরকার প্রফেসর অকের বই বাজার থেকে উঠিয়ে নেয় এবং ভারতে এর প্রকাশনা বন্ধ করে দেয়।

...থাকুক কিছু রহস্য, রহস্য আছে বলেই তাজ হয়ত আজ এত সুন্দর...!!


সবশেষে তাজমহল প্রেমীদের কাছে একটি "বলুন দেখি" টাইপ প্রশ্নঃ

তাজমহলের কোন পাশ দিয়ে যমুনা নদী প্রবাহিত হয়েছে??
--উত্তর/দক্ষিণ/পুব/পশ্চিম

সম্রাট শাহজাহান ও মমতাজের প্রেম কাহিনী বিশ্বের সাড়া জাগানো প্রেম কাহিনীগুলোর মধ্যে অন্যতম। তাদের মতো এরকম অমর প্রেম কাহিনী আরও অনেক রয়েছে। তবে সম্রাট শাহজাহান ও মমতাজের প্রেম কাহিনীটি একটি বিশেষ কারণে সাড়া জাগিয়েছে। তা হলে মমতাজের জন্য সম্রাট শাহজাহানের বানানো বিখ্যাত সেই তাজমহল। আজ আমরা তাজমহলের খুঁটিনাটি তথ্য এখানে তুলে ধরবো।
সম্রাট শাহজাহান ও মমতাজের প্রেমের সংক্ষিপ্ত ঘটনা:
সময়টা ছিল ১৬১২ খ্রিষ্টাব্দ। সম্রাট শাহজাহানের বয়স তখন ২০ বছর। একদিন আগ্রার বাজার দিয়ে যাওয়ার পথে হঠাৎ শাহজাহানের চোখ চলে যায় পরমা সুন্দরী এক মেয়ের দিকে। আরজুমান্দ বেগম নামের মেয়েটির বয়স ১৫। প্রথম দেখাতেই আরজুমান্দ বেগমকে ভালো লেগে যায় শাহজাহানের। পরবর্তীতে ১৬১২ খ্রিস্টাব্দের ১০ মে মমতাজের বিয়ে হয় যুবরাজ খুররমের (সম্রাট শাহজাহান) সঙ্গে। (কিন্তু উইকিপিডিয়ায় বলা আছে বিয়ের সময় তাদের দুজনের বয়স ছিল যথাক্রমে ১৫ ও ১৪)।  তবে এর আগে রাজনৈতিক কারণে পারস্যের রাজকন্যাকে বিয়ে করেন সম্রাট শাহজাহান। পরবর্তীতে সম্রাট শাহজাহান তার স্ত্রীর নাম পরিবর্তন করে রাখেন মমতাজ মহল।মমতাজই ছিলেন শাহজাহানের সব চেয়ে প্রিয় বেগম । উনিশবছরের বিবাহিত জীবনে মমতাজের মোট চোদ্দটি সন্তান হয়। মমতাজ মহল ১৬৩১ সালে ৩৯ বছর বয়সে বুরহানপরে ১৪তম সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে মারা যান। স্ত্রী হারানোর শোকে মুহ্যমান শাহজাহান তাঁর প্রাণপ্রিয় স্ত্রীর স্মৃতির জন্য নির্মাণ করেন ভালবাসার এই অপরূপ নিদর্শন। স্ত্রীর মৃত্যুর পর সাতদিন সাতরাত শাহজাহান কিছু খান নি। ঘর থেকেও বার হন নি। সাতদিন পর শাহজাহান বাইরে বেরোলেন। তখন তার চুলের রং ধুসর হয়ে গেছে , মুখ ফ্যাকাসে। 
 
মমতাজ আসলে শাহজাহানের কততম স্ত্রী:
সম্রাট শাহজাহান ও মমতাজের প্রেম কাহিনী যতটা আলোচিত ততটাই আলোচিত যে, মমতাজ আসলে সম্রাট শাহজাহানের কততম স্ত্রী। উইকিপিডিয়ার মতে, মমতাজ ছিলেন সম্রাট শাহজাহানের ২য় স্ত্রী। কোথাও বলা হয়েছে মমতাজ শাহজাহানের ৩য় স্ত্রী, কোথাও বলা আছে ৪র্থ স্ত্রী। আসলে কততম স্ত্রী তা কোথাও সঠিকভাবে বলা নেই।
 
সম্রাট শাহজাহান ও মমতাজের প্রেম কাহিনী নিয়ে বিতর্ক:
পিএন অক নামের এক প্রফেসর তার “তাজমহল: দ্য ট্রু স্টরিতে”  শাহজাহান ও মমতাজের প্রেমকাহিনীর সত্যতা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন। তার লেখায় তিনি উল্লেখ করেন, মমতাজ ও শাহজাহনের ভালোবাসার গল্প মূলত রূপকথা যা লোকমুখে সৃষ্ট। কারণ এত গভীর ও চমৎকার প্রেমের কথা ভারতের ওই সময়কার কোন সরকারি নথিপত্রে বা গ্রন্থে উল্লেখ নেই। তিনি আরও কিছু ডকুমেন্টরি উপস্থাপন করেন যা প্রমাণ করে তাজমহল কখনোই সম্রাট শাহজাহানের আমলের নয়। সেগুলো হল, নিউইয়র্কের আর্কিওলজিস্ট মারভিন মিলার যমুনা নদীর তীর সংলগ্ন তাজমহলের দেয়ালের নমুনা পরীক্ষা করেন। তিনি এর কার্বন টেস্ট করে যে তথ্য পান, এই কার্বন সম্রাট শাহজাহানের শাসনামলেরও চেয়ে ৩০০ বছর বেশি পুরনো! এছাড়া আরেকটি ব্যাপার হল কোন এক ইউরোপীয়ান পর্যটক ১৬৩৮ সালে আগ্রা ভ্রমণ করেন। সময়টি শাহজাহান স্ত্রী মমতাজের মারা যাওয়ার মাত্র ৭ বছর পর। কিন্তু তিনি তার লিখিত ভারতবর্ষ ভ্রমণ গ্রন্থে তাজমহল নামক প্রাসাদের কথাই উল্লেখ করেননি।
 
বিতর্ক আরও রয়েছে:
সম্রাট শাহজাহান ও মমতাজের প্রেম কাহিনীতে বলা হয়েছে সম্রাট শাহজাহান মমতাজকে বাজারে দেখতে পান এবং প্রথম দেখাতেই মমতাজকে পছন্দ করে ফেলেন। কিন্তু এও শোনা যায় শাহজাহানের সাথে বিয়ে হওয়ার আগেও মমতাজের বিয়ে হয়েছিল এবং সম্রাট শাহজাহান মমতাজের সেই স্বামীকে হত্যা করে তারপর মমতাজকে বিয়ে করেছিল। শুধু তাই নয় মমতাজের আগেও সম্রাট শাহজাহানের আরও ৩ জন স্ত্রী ছিলেন এবং মমতাজকে বিয়ে করার পরও সম্রাট শাহজাহান আরও তিনটি বিয়ে করেন। এমনকি মমতাজ মারা যাওয়ার পর শাহজাহান মমতাজের আপন ছোট বোনকে বিয়ে করেন। তাজমহলের ডিজাইনারের নাম ছিল- ঈশা মোহাম্মদ। তিনি তার স্ত্রীকে উপহার দেয়ার জন্য একটি ভাস্কর্য বানিয়েছিলেন। পরে সম্রাট শাহজাহানের পছন্দ হওয়াতে সেই ডিজাইনের আদলে বানানো হয় বিশ্ববিখ্যাত তাজমহল এবং সেই ব্যক্তিটির চোখ নষ্ট করে দেওয়া হয় যাতে তিনি নতুন করে আর এই ডিজাইন তৈরি করতে না পারেন। শুধু তাই নয়, যে বিশ হাজার শ্রমিক দিন রাত খেটে এই মহলটি তৈরি করেছিলেন তাদের হাতও কেটে দিয়েছিলেন সম্রাট শাহজাহান। ভালোবাসার এক নিষ্ঠুর ও নৃশংসতম ইতিহাস লুকিয়ে রয়েছে সম্রাট শাহজাহান-মমতাজের প্রেম কাহিনী ও তাজমহলের পেছনে।
 
তাজমহলের নির্মাণকালীন তথ্য:
আজ যেখানে তাজমহল দাঁড়িয়ে, সেখানটা ছিল মহারাজা জয় সিংহের সম্পত্তি। শাহজাহান মধ্য-আগ্রার একটি প্রকান্ড রাজপ্রাসাদের বিনিময়ে ওই জমিটি অধিগ্রহণ করেন। তাজমহলের নির্মান শুরু হয় ১৬৩২ সালে; মমতাজের মৃত্যুর এক বছর পর। ২০ হাজারের বেশি শ্রমিকের প্রচেষ্টায় ১৬৪৮ সালে, মমতাজের মৃত্যুর ১৭ বছর পর গম্বুজ গুলোর নির্মান কাজ শেষ হয়; যদিও পুরো কাজ শেষ হয় ১৬৫৩ সালে। শুধু মানুষ নয়; এ মহান কীর্তির ভাগিদার ১০০০ হাতী, যারা নির্মাণের জন্য মার্বেল পাথর পরিবহনে নিয়োজিত ছিল। এই সৌধ নির্মাণে বিভিন্ন ধর্মের স্থাপত্যের অনুকরণ করা হয়; যেমন তাজের মাথার ত্রিশূলটি হিন্দুদের শিবমন্দিরের অনুকরণে, মুসলমানদের মসজিদের মতো করা হয় তাজমহলের চারটি মিনার ও মাথার গম্বুজ ।
 
পুরো তাজমহল ১৮০ ফুট উঁচু যার প্রধান গম্বুজটি ২১৩ ফুট উঁচু এবং ৬০ ফুট চওড়া এবং এর চারপাশে চারটি মিনার আছে যার প্রতিটির উচ্চতা ১৬২.৫ ফুট। পুরো কমপ্লেক্সটির আকার ১৯০২X১০০২ ফুট। শুধু তাজমহলটি ১৮৬X১৮৬ ফুট মার্বেল পাথরের উপর নির্মিত। এর প্রধান প্রবেশদ্বার ১৫১X১১৭ ফুট চওড়া এবং ১০০ ফুট উঁচু। তাজমহল নির্মানের জন্য পাঞ্জাব থেকে আনা হয় স্বচ্ছ মার্বেল পাথর, চীন থেকে সবুজ পাথর, তিব্বত থেকে স্বচ্ছ ও নীল পাথর এবং শ্রীলংকা থেকে নীলমনি। তাছাড়া ভারত, পাকিস্তান, পারস্য ছাড়াও বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে প্রায় ২৮ রকমের মূল্যবান পাথর দিয়ে তৈরি করা হয় এই অনন্য স্থাপত্য।
 
তৎকালীন নির্মাণ খরচ অনুমান করা কঠিন ও কিছু সমস্যার কারণে তাজমহল নির্মাণে কত খরচ হয়েছিল তার হিসাবে কিছুটা হেরফের দেখা যায়। তাজমহল নির্মাণে তৎকালীন আনুমানিক ৩২ মিলিয়ন বা $১০০০০০০ ডলার রুপি খরচ হয়েছিল বলে ধারণা করা হয়। কিন্তু শ্রমিকের খরচ, নির্মাণে যে সময় লেগেছে এবং ভিন্ন অর্থনৈতিক যুগের কারণে এর মূল্য অনেক, একে অমূল্য বলা হয।
 
তাজমহল যে জমির ওপর দাঁড়িয়ে, সেই জমি ছিল অত্যন্ত নীচু । প্রচুর মাটি ফেলে সেই জমি কে যমুনা নদীর তীরের উচ্চতা থেকে প্রায় ৫০ মিটার [১৬০ ফুট] উচু করা হয়। ঠিক এখনকার earthquake proof বহুতলের column নির্মাণের মতো্ই সেখানে অনেকগুলি পাতকুয়া খোঁড়া হয় ও তারপর সেগুলি পাথর,বালি ও মাটি দিয়ে ভরাট করা হয়। তাজমহলের এই ভিতটি ভূমিকম্প বা প্রবল প্রাকৃতিক বিপর্যয়েও ক্ষতিগ্রস্ত হবে না । ওই ভরাট-করা পাতকুয়াগুলির ওপর এক বিশাল মঞ্চ তৈরী করে তার ওপর সৌধের র্নিমাণকাজ সম্পন্ন করা হয়। এখনকার বাড়ি তৈরী করতে হলে বাঁশের তৈরী ভারা লাগে । তাজমহল নির্মাণের জন্যে যে ভারা তৈরী করা হয় তাও এক আশ্চর্য নজির । প্রকান্ড এক ইঁটের তৈরী ভারা বানানো হয়েছিল তাজমহলের ওপরের কাজের জন্যে । সেই ভারা এতটাই বড় ছিল যে রাজমিস্ত্রিরা জানায় ভারা ভাঙতে তাদের কযেক বছর সময় লেগে যাবে । তখন শাহজাহান র্নিদেশ দেন এই ভারার ইঁট যে কেউ নিয়ে যেতে পারে একেবারে বিনামূল্যে । রাতারাতি সেই প্রকান্ড ভারা অদৃশ্য হয়ে যায়।রাজ্যের হাজার হাজার গরিব কৃষক সেই ভারার ইঁট খুলে নিয়ে যায় তাদের নিজেদের গৃহ নির্মানের জন্যে।
 
এর প্রধান নকশাকার ছিলেন ওস্তাদ আহমেদ লাহুরি আরও ছিলেন আবদুল করিম মামুর খান এবং মাকরামাত খান যারা সে সময়ের সবচেয়ে নিখুঁত, পারদর্শী ও উচ্চ পর্যায়ের প্রকৌশলী এবং নকশাকার ছিলেন। এছাড়া তাজমহলের বিখ্যাত ক্যালিওগ্রাফিগুলো করেছিলেন তৎকালের ক্যালিওগ্রাফার আবদুল হক, যার প্রশংসনীয় ক্যলিওগ্রাফি দেখে মুগ্ধ হয়ে সম্রাট নিজেই তাকে ‘আমানত খান’ উপাধিতে ভূষিত করেন।
 
তাজমহল নিয়েও বিতর্ক রয়েছে:
এ বিমূর্ত শিল্পকলা তাজমহলের ইতিহাসকে চ্যালেঞ্জ করে বসেছেন প্রফেসর পিএন অক তার “তাজমহল: দ্য ট্রু স্টরিতে”। তিনি দাবি করেন, তাজমহল বেগম মমতাজের সম্মানে নির্মিত কোন প্রেমের সমাধিস্থল নয়, বরং এটি প্রাচীন হিন্দু দেবতা শিবের মন্দির। এ মন্দিরের নাম ছিল ‘তেজ মহালয়’। এই মন্দিরে আগ্রার রাজপুতরা পূজা-অর্চনা করত, তাই সাধারণের কাছে এ মন্দির অতটা পরিচিত ছিল না। আর ‘তেজ মহালয়’ থেকেই তাজমহলের নামকরণ। এটি পরে সম্রাট শাহজাহান তার মৃত স্ত্রীর স্মরণে স্মৃতিশালা হিসেবে গড়ে তোলেন। ইতিহাস অনুসন্ধান করে প্রফেসর পিএন অক যে পিলে চমকানো কথাগুলো ব্যক্ত করেন তা হল, সম্রাট শাহজাহান অন্যায়ভাবে জয়পুরের মহারাজা জয় সিংয়ের কাছ থেকে শিব মন্দিরটি অর্থাৎ তাজমহলটি দখল করে নেন। পিএন অক যে দলিল উপস্থাপন করেন - সম্রাট শাহজাহান নিজেই তার দিনপঞ্জি ‘বাদশাহনামা’তে উল্লেখ করে গেছেন, রাজা জয় সিংয়ের কাছ থেকে আগ্রার এক চমৎকার প্রাসাদোপম ভবন মমতাজ মহলের সমাধিস্থলের জন্য বেছে নেয়া হয়েছে এবং এর জন্য সম্রাটের পক্ষ থেকে রাজা জয় সিংকে অন্যত্র জমিও কিনে দেয়া হয়েছে। ‘তাজমহলের’ নাম নিয়েও প্রফেসর অক সংশয় প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, মুঘলামলে এমনকি খোদ শাহজাহানের আমলেও কোন দলিলাদি ও কোর্টের নথিপত্রে কোথাও ‘তাজমহলের’ নাম উল্লেখ নেই। আর সে সময়ে মুসলিম শাসনামলে কোন ভবন বা প্রাসাদের নাম ‘মহল’ রাখার প্রচলন ছিল না। এছাড়া ‘তাজমহল’ নামটি এসেছে মমতাজ মহল থেকে এ বিষয়টিও প্রফেসর অক মেনে নেননি। তিনি এর পেছনে দুটি কারণ উল্লেখ করেন। প্রথম কারণ, সম্রাট শাহজাহানের স্ত্রীর প্রকৃত নাম কখনোই মমতাজ ছিল না। দ্বিতীয় কারণ, সাইকোলজিক্যাললি কেউ কারও নামে প্রাসাদ নির্মাণ করলে নামের প্রথম দুই অক্ষর বাদ দিয়ে অর্থাৎ মমতাজের মম বাদ দিয়ে তাজ নাম রাখাটা মানব স্বভাবের মধ্যে পড়ে না।
 
প্রফেসর অক তাজমহলের স্থাপত্য শৈলীর কিছু অসামঞ্জস্যতার কথা উল্লেখ করে বলেন, তাজমহল মূলত হিন্দু শিব মন্দির ছাড়া আর কিছুই নয়। তিনি আরও যুক্তি দেখান, তাজমহলের কিছু কামরা শাহজাহানের আমল হতেই তালাবন্দি যা এখনও জনসাধারণের অজানা রয়ে আছে। তিনি দৃঢ়তার সঙ্গে দাবি করেন ওই সব কামরার একটাতে রয়েছে দেবতা শিবের মস্তকবিহীন মূর্তি অর্থাৎ শিব লিঙ্গ যা হিন্দুদের শিব মন্দিরে সচরাচর দেখতে পাওয়া যায়। বিখ্যাত তাজমহল নিয়ে প্রফেসর অকের এ উল্টো বক্তব্য ও ইতিহাস তিনি তার যে বইতে লিখেছিলেন তৎকালীন ভারতের ইন্দিরা গান্ধী সরকার বইটি ব্যান্ড করে দেয় ও সবগুলো কপি বাজার হতে উঠিয়ে নেয় এবং ভারতে এর দ্বিতীয় কোন কপি প্রকাশ করাও বন্ধ করে দেয়। সেখানে কারণ দেখানো হয়, যদি এ বই প্রকাশ করা হয় তাহলে ভারতে হিন্দু ও মুসলিমদের মাঝে ধমর্ীয় এবং রাজনৈতিক সংঘাত বা রায়োট বেঁধে যাওয়ার শংকা রয়েছে। পরে প্রফেসর অকের প্রচলিত ইতিহাস বিরোধী বক্তব্য এবং তার বই বিশ্লেষণে গবেষকরা এতটুকু মত দিতে পেরেছেন, তাজমহলের মার্বেল পাথর, ইসলামিক সংস্কৃতি, আলকোরআনের আয়াত ক্যালিওগ্রাফি এবং সৌন্দর্যমণ্ডিত গমু্বজের কারুকাজ এসব কিছুই সম্রাট শাহজাহানের সময়ে হয়ে থাকলেও তাজমহলের প্রাথমিক স্থাপনা শাহজাহান কর্তৃক না হয়েও থাকতে পারে।
 
পরিশেষে তর্ক-বিতর্ক যতই থাকুন তবু তাজমহল মুঘল মুসলিম স্থাপত্য কীর্তিগুলোর মধ্যে গৌরবান্বিত অলঙ্কার, একটি অনন্য কীর্তি। সপ্তাশ্চর্যের এক আশ্চর্য।

তাজমহল ও প্রফেসর পি এন ওক


ভারতের আগ্রায় অবস্থিত তাজমহলকে সারা বিশ্বে প্রেমের প্রতিক হিসাবে অনেকেই বর্ণনা করে থাকেন । কিন্তু প্রফেসর পি এন অক এই জানা এবং সর্বজন বিদিত কাহিনীকে চ্যালেঞ্জ করেছেন তার একটি গবেষণাধর্মী বই তে।
এতোদিন যাবত আমরা তাজমহল সম্পর্কে যা জেনে এসেছি তা অনেক বড় ভূল বলে তিনি দেখিয়েছেন । তিনি তাজমহলে নামকরন নিয়েই সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। তার মতে তাজমহল কোন ভাবেই মমতাজের নাম থেকে আসেনি । নমটি এসেছে "তেজ মহলয়" থেকে । তেজ মহালয়া হল হিন্দু দেবতা শিবের মন্দির। যে মন্দিরে তখনকার রাজপুতেরা পূজা-অর্চনা করতেন। রাজপরিবারের অধীনে থাকায় সাধারন মানুষের কাছে এ মন্দিরটি ছিল অচেনা। পরবর্তীতে মমতাজ মারা গেলে তাকে এখানে সমাহিত করা হয় এবং সাধারনের সামনে চলে আসে মন্দিরটি। আর তখনই মানুষের মুখে মুখে মমতাজ শাজাহানের প্রেম কাহিনী প্রচারিত হয়। কিন্তু প্রফেসর পিএন অক দেখিয়েছেন যে এ রকম প্রেম কাহিনী সে সময়ের কোথাও লিপিবদ্ধ নেই তাই এ কাহিনী লোকমুখে প্রচারিত (ধারণা প্রসূত মাত্র)।

প্রফেসর অক দাবী করেছেন যে, সম্রাট শাহজাহান নিজেই তার দিনপঞ্জি ‘বাদশাহনামা’তে উল্লেখ করে গেছেন, রাজা জয় সিংয়ের কাছ থেকে আগ্রার এক চমৎকার প্রাসাদোপম ভবন মমতাজ মহলের সমাধিস্থলের জন্য বেছে নেয়া হয়েছে এবং এর জন্য সম্রাটের পক্ষ থেকে রাজা জয় সিংকে অন্যত্র জমিও কিনে দেয়া হয়েছে। ‘তাজমহলের’ নাম নিয়েও প্রফেসর অক সংশয় প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, মুঘলামলে এমনকি খোদ শাহজাহানের আমলেও কোন দলিলাদি ও কোর্টের নথিপত্রে কোথাও ‘তাজমহলের’ নাম উল্লেখ নেই। আর সে সময়ে মুসলিম শাসনামলে কোন ভবন বা প্রাসাদের নাম ‘মহল’ রাখার প্রচলন ছিল না। এছাড়া ‘তাজমহল’ নামটি এসেছে মমতাজ মহল থেকে এ বিষয়টিও প্রফেসর অক মেনে নেননি। তিনি এর পেছনে দুটি কারণ উল্লেখ করেন। প্রথম কারণ, সম্রাট শাহজাহানের স্ত্রীর প্রকৃত নাম কখনোই মমতাজ ছিল না। দ্বিতীয় কারণ, সাইকোলজিক্যাললি কেউ কারও নামে প্রাসাদ নির্মাণ করলে নামের প্রথম দুই অক্ষর বাদ দিয়ে অর্থাৎ মমতাজের মম বাদ দিয়ে তাজ নাম রাখাটা মানব স্বভাবের মধ্যে পড়ে না।
কিছু ডকুমেন্টরি উপস্থাপন করেন যা প্রমাণ করে তাজমহল কখনোই সম্রাট শাহজাহানের আমলের নয়। সেগুলো হল, নিউইয়র্কের আর্কিওলজিস্ট মারভিন মিলার (গধৎারহ গরষষবৎ) যমুনা নদীর তীর সংলগ্ন তাজমহলের দেয়ালের নমুনা পরীক্ষা করেন। তিনি এর কার্বন টেস্ট করে যে তথ্য পান, এই কার্বন সম্রাট শাহজাহানের শাসনামলেরও চেয়ে ৩০০ বছর বেশি পুরনো! এছাড়া আরেকটি ব্যাপার হল কোন এক ইউরোপীয়ান পর্যটক ১৬৩৮ সালে আগ্রা ভ্রমণ করেন। সময়টি শাহজাহান স্ত্রী মমতাজের মারা যাওয়ার মাত্র ৭ বছর পর। কিন্তু তিনি তার লিখিত ভারতবর্ষ ভ্রমণ গ্রন্থে তাজমহল নামক প্রাসাদের কথাই উল্লেখ করেননি।
প্রফেসর অক তাজমহলের স্থাপত্য শৈলীর কিছু অসামঞ্জস্যতার কথা উল্লেখ করে বলেন, তাজমহল মূলত হিন্দু শিব মন্দির ছাড়া আর কিছুই নয়। তিনি আরও যুক্তি দেখান, তাজমহলের কিছু কামরা শাহজাহানের আমল হতেই তালাবন্দি যা এখনও জনসাধারণের অজানা রয়ে আছে। তিনি দৃঢ়তার সঙ্গে দাবি করেন ওই সব কামরার একটাতে রয়েছে দেবতা শিবের মস্তকবিহীন মূর্তি অর্থাৎ শিব লিঙ্গ যা হিন্দুদের শিব মন্দিরে সচরাচর দেখতে পাওয়া যায়। বিখ্যাত তাজমহল নিয়ে প্রফেসর অকের এ উল্টো বক্তব্য ও ইতিহাস তিনি তার যে বইতে লিখেছিলেন তৎকালীন ভারতের ইন্দিরা গান্ধী সরকার বইটি ব্যান্ড করে দেয় ও সবগুলো কপি বাজার হতে উঠিয়ে নেয় এবং ভারতে এর দ্বিতীয় কোন কপি প্রকাশ করাও বন্ধ করে দেয়। সেখানে কারণ দেখানো হয়, যদি এ বই প্রকাশ করা হয় তাহলে ভারতে হিন্দু ও মুসলিমদের মাঝে ধমর্ীয় এবং রাজনৈতিক সংঘাত বা রায়োট বেঁধে যাওয়ার শংকা রয়েছে। পরে প্রফেসর অকের প্রচলিত ইতিহাস বিরোধী বক্তব্য এবং তার বই বিশ্লেষণে গবেষকরা এতটুকু মত দিতে পেরেছেন, তাজমহলের মার্বেল পাথর, ইসলামিক সংস্কৃতি, আলকোরআনের আয়াত ক্যালিওগ্রাফি এবং সৌন্দর্যমণ্ডিত গমু্বজের কারুকাজ এসব কিছুই সম্রাট শাহজাহানের সময়ে হয়ে থাকলেও তাজমহলের প্রাথমিক স্থাপনা শাহজাহান কর্তৃক না হয়েও থাকতে পারে। তবে তাজমহল তৈরির আসল ইতিহাস যতই বির্তকিত হয়ে থাকুক, তবু তাজমহল মুঘল মুসলিম স্থাপত্য কীর্তিগুলোর মধ্যে গৌরবান্বিত অলঙ্কার, একটি অনন্য কীর্তি। সপ্তাশ্চর্যের এক আশ্চর্য।


প্রফেসর অকের এই বইটি অন্তর্জাল থেকে পড়তে পাড়েন
http://www.scribd.com/doc/66598169/The-Taj-Mahal-Is-A-Temple-Place-P-N-Oak
থেকে।

2 comments:

  1. ইতিহাস পড়ে খুবভাল লাগলো

    ReplyDelete
  2. এত বিস্তারিত লেখা পড়ে ভাল লাগলো। আশা করি আপনার কাছ থেকে আরো অনেক তথ্যবহুল লেখা ভবিষ্যতেও পাব।
    শুনেছি বাংলাদেশেও একই রকম একটি তাজমহলের রেপ্লিকা তৈরি হয়েছে, ঢাকা থেকে দশ মাইলের মধ্যেই।

    ReplyDelete

আপনার মন্তব্য দিন