Pages

"ভালোবেসেছি এবং ভালোবাসবো"

সকাল বেলা কানের কাছে এসে কে যেন ডাকতেছে
"এই রফিক তাড়াতাড়ি ওঠ,তোর না আজকে কোথায় যাওয়ার কথা"
মাথাটা পুরাই গন্ডগোল পাকায় গেল,এমন একটা শান্তির ঘুমের মাঝে কে সেই আপদ যে আমার অশান্তির কারন তা দেখার জন্যই চোখ খুললাম । ওহ এইটা হল চিরশত্রু ঝুমুর । একটা চিত্‍কার দিয়া বললাম "ওইতোর সমস্যাটা কি,প্রতিদিন এই একই ভাবে আমার ঘুম ভাঙ্গাস কেন ? "
তার নির্লিপ্ত জবাব "তুই বলছিলি ঘুম থেকে উঠিয়ে দিতে ,তাই দিলাম,না হলে সকাল বেলা তোর আজাইরা বকা শুনতে আমার বয়েই গেছে,যাই হোক রেডি হ,কলেজ এ দেরি হয়ে যাচ্ছে ,আমি রেডি হয়ে নিচে ওয়েট করতেছি ।"
কিছু বলার আগেই উনি মুখটা গোমরা করে বাসায় চলে গেলেন ।


পরে ভাবলাম আসলেই এই মেয়েটাকে অনেক কষ্ট দেই । সেই ৫ বছর আগে থেকে বর্তমানে এতিম এই ছেলেটার সবকিছুর খেয়াল রাখে এই ঝুমুর । স্কুল পেরিয়ে কলেজের গন্ডিও প্রায় শেষের দিকে কিন্তু সকাল বেলা ও ই আমার ঘুম ভাঙ্গায় , মনে পড়ে না কোনদিন একা একা জেগেছি কিনা । যখন বাবা ছিল তখনও ওর ডাকেই সকালের সোনা রোদের মুখ দেখতাম ।এইতো সেদিন আমাদের বাড়িতে আসলো ওরা , একদিন খেলার ছলে বলেই ফেললাম "এই শোন সকালে প্রতিদিন তুই আমাকে ঘুম থেকে তুলে দিবি " বলতে বলতে পাঁচটা বছর হয়ে গেল তবু ওর রুটিন ভঙ্গ হয় না । আমাকে জ্বালাতে ওর মনে হয় খুব মজা লাগে ।দুর ভাবতে ভাবতে কলেজে দেরি হয়ে যাচ্ছে । রেডি হয়ে নিচে গেলাম ,আমি জানতাম ও অলরেডি দাড়িয়ে আছে । একই গাড়িতে দুজন কলেজে যাই । ও পড়ে শহীদ আনোয়ার এ আর আমি সিটি কলেজে । ওকে নামিয়ে দিয়ে আমি কলেজে যাই ।


নিয়মতান্ত্রিক জীবনটা এভাবেই চলছিল ।ওর সাথে কাটানো প্রতিটা মুহুর্ত খুব উপভোগ করতাম । বন্ধুত্ত্বের বাহিরে সম্পর্কটাকে কখোনোই অন্য কিছু ভাবার ইচ্ছা হয়নি । হয়ত তাতে সম্পর্কটাতে একটা কালিমা পরে যেত । ইচ্ছে ডানার উড়ন্ত ইচ্ছে গুলো ,কিছু খেয়ালিপনা,কখোনো বেয়ারাপনা এভাবেই চলছিল আমার আর ঝুমুর এর বন্ধুত্ত্বের ভালোবাসার ডিঙ্গা । ইচ্ছে হলেই ঘুরতে যেতাম , স্পেশাল দিন গুলোতে খুব বেশী মজা করতাম।একদিনের একটা ঘটনা ভ্যালাইন্টাইনস ডে তে আমরা ফুচকা খাচ্ছি ,ওকে একটা ছেলে এসে বলল "এই শোনআই লাভ ইউ"
ঝুমুর তো সেটা নিয়া বিশাল একটা কাহিনীকরে বসল,ফুচকা গুলা সব ছেলেটার মাথার উপর ঢেলে দিলো । আমি শুধু সাইড নায়কের মত দেখলাম,হাসতে হাসতে পেটে ব্যাথা হয়ে গেল ।তারপর ঝুমুর ছেলেটাকে বলল"এখন আবার বলো তো "
ছেলেটা কোথায় যে পালাবে সেই পথ খুঁজে পাচ্ছিল না ।
এভাবেই হাসি আনন্দে দিনগুলি কাটছিল আমাদের ।


একদিন ও আমাকে বলল "রাফি আমি যখন থাকবো না তখন তোর ঘুম ভাঙ্গাবে কে ?"
আমি বললাম "কেনো,আমার বউ !!"
সেদিনের পর থেকে ওকে অনেকটা চুপচাপ হয়ে যেতে দেখলাম । সকালে ও আর আমার ঘুম ভাঙ্গাতে আসে না , একা একাই কলেজে চলে যায় , আমি ঠিক মত খাই কিনা সে খবর ও নেয় না ।


একদিন ওদের বাসায় গেলাম,ওর রুমে গিয়ে ওর গলাটা টিপে ধরে বললাম "হারামি আমার সাথে কথা বলিস না কেন?আমি কি করছি?"
ঝুমুর আমার হাতটা সরিয়ে দিয়ে বলল,"রাফি আমরা এখন বড় হয়েছি , নিজেদের দ্বায়িত্ব নিজেদের বুজে নেওয়া উচিত"
আমি এতক্ষন খেয়াল করি নি,ওর হাসিটা কেমন শুকনো লাগছিলো,মনে হচ্ছিল অনেক শুকিয়ে গেছে ঝুমুর , ওর চোখে মুখে যে চাঞ্চল্যতা ছিল তা কোথায় যেন হারিয়ে গেছে । আমার বুকের ভেতরটা কেমন যেনো মোচড় দিয়ে উঠল । ওকে বললাম "তুই অনেক শুকিয়ে গেছিস , কি হয়েছে তোর আমাকে বল? আমি তোর সব কষ্টের ভাগ নিতে চাই ।"
ও শুধু শুকনো একটু হাসল ।


সেদিন বিকেল বেলা আমরা আবার আগের মত বের হলাম ঘুরতে । এর ভিতরে ঝুমুর মাথার ভিতরে বিশাল এক টেনশন ঢুকিয়ে দিয়েছে । সব মিলিয়ে বিশাল ফাপরে পরলাম। একটা নির্জন জায়গাতে বসলাম আমরা ,ও আমার পাশে এসে বসল-
"আমার হাতটা একটু ধরবি ?"
এই একই হাত আমি বহুবার ধরেছি ,সেটা দুষ্টামির ছলেই হোক আর যাই হোক । কখোনো মনে দ্বিধা হয়নি ,আজ কেমন যেন লাগছিল । আমি পারলাম না ওর হাতটা ধরতে।
"কিরে ধরতে বলছি ধর"
ঝুমুরের ধমকে আচমকা লাফিয়ে উঠে ওর হাতটা ধরলাম ।
"আমাকে তোর বুকে একটু ঠাই দিবি ? আমি তোর বুকে মাথা রেখে বাচতে চাই , আমি তোর ঘুম ভাঙ্গাতে চাই জীবনের শেষ সকালটা পর্যন্ত , বল এই অধিকার টুকু দিবিনা ??"
আমি ঝুমুরকে না করতে পারিনি ,ওর মাঝে আমি বেচে থাকার প্রেরনা দেখেছি , ওর আবদার টুকু আমি ফেলতে পারিনি , ও আমার জীবনের একটি অংশ একথাটা ও মনে না করিয়ে দিলে আমি বুঝতেই পারতাম না । ভালোবাসার রক্তিম আভায় রন্জিত হয়েছি ,ভালোবেসেছি ,ভালোবাসবো ।

[আমার না হলেও এটা অন্য কারো ভালোবাসার গল্প ,সাথে রয়েছে কিছু কল্পনার রং]

No comments:

Post a Comment

আপনার মন্তব্য দিন