Pages

অশ্রুবিন্দু

"ফ্রেন্ড এবার বলেই ফেলব।এভাবে আর থাকা সম্ভব না ।"
"হুম বলে ফেল । পরে দেখবি কোনদিন তোর পরান পাখি খাচা ছেড়ে উড়াল দিয়েছে ।", তাওসিফের কথার উওরে বলল হাসান ।হাসান হচ্ছে তাওসিফের রুমমেট।তারা "নুরুঊদ্দিন মোহাম্মদ ডিগ্রী কলেজ"এর ১ম বর্ষের ছাত্র এবং তারা কলেজ হোস্টেলে থাকে।তওসিফ বলল,"যা ব্যাটা,কই একটু উত্‍সাহ দিবি তা না ,উল্টো আরো আজেবাজে কথা বলছিস।যা ভাগ ।"হাসান মুচকিহেসে চলেগেল ।আর তাওসিফ ডুব দিল তার স্বপ্নের রাজ্যে।সুখের স্বপ্ন....।এক স্বপ্নে তার রাত পার হয়ে গেল ।

"নুরুঊদ্দিন মোহাম্মদ ডিগ্রী কলেজ"।ক্লাস চলছে।দেরী করে ঘুম থেকে উঠার কারনে তৌসিফ ঠিক সময়ে ক্লাসে আসতে পারল না।পেছনের দরজা দিয়ে কোনমতে ক্লাসে ঢুকল।ঢুকেই স্বভাবসুলভ সারা ক্লাসে চোখ বুলিয়ে নিল।একটা জায়গায় এসে তা আটকে গেল। তার স্বপ্ন কন্যা...।ধীরে ধীরে সে ডুব দিল তার স্বপ্ন সমুদ্রে।কোনদিকে যে ক্লাস আওয়ার যে শেষ হয়ে গেল তা বুঝতেই পারলনা।
ছুটির পর হোস্টেলের দিকে রওয়ানা হল।সে কলেজের হোস্টেলে থাকে।ক্যাম্পাস থেকে হোস্টেল খুব বেশী দূরে নয়।পথে ক্যান্টিনে দেখতে পেল-তান্নিকে।তান্নি।তান্নি...।সেই স্বপ্ন কন্যা।যার কথা ভেবে তার সারাদিন-রাত কাটে।তাওসিফের মনে হল এখনি গিয়ে কথা বলে।কিন্তু তার মধ্যে আবার ভর করল সেই পুরনো ভয়।আজানা ভয়।মনের ইচ্ছাকে আবার চাপা দিতে হল।

রাতে সে শুয়ে আছে।এই মাত্র রাতের খাবার খেয়ে এল।পরীক্ষা সামনে তাই পড়তে বসল।কিন্তু তাতে তেমন মন বসাতে পারলনা।সে রাতের পড়ালেখাও বিসর্জন দিল তান্নির কথা ভাবতে ভাবতে ।

এভাবে বলি বলি করে অনেক দিন কেটে গেল।কিন্তু তার মনের কথা মনেই থেকে গেল ।প্রতিদিনই সে কলেজে যায় ।আবার ফিরে আসে ।কিন্তু বলি বলি করেও বলা হয় না তার না বলা কথা।

অনেকদিন পর।
একদিন কলেজের ক্যান্টিনে,তাওসিফ তার বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিচ্ছে।আড্ডা তখন সবে জমে উঠতে শুরু করেছে।তখনই সে খেয়াল করল তান্নি তার কয়েকজন বান্ধবীদের নিয়ে ক্যান্টিনে প্রবেশ করেছে।তাওসিফের মনে যেন ঝড় বয়ে গেল।আনন্দের ঝড়।এ ঝড় তার মনকে উড়িয়ে নিয়ে গেল দূরে...অনেক দূরে...।আপলক সে তাকিয়ে আছে তান্নির দিকে।হঠাত্‍ সে দেখল তান্নি এদিকে ফিরছে।তাকে অবাক করে দিয়ে হাসল।তাওসিফের মনে হল তার হৃত্‍পিন্ড যেন খাঁচা ছিঁড়ে বেরিয়ে আসবে।তান্নির হাসির জবাবে সেও একটু হাসল।অথচ সে দেখল না,তার পেছনের টেবিল থেকে আরও দুটি চোখ একই দিকে তাকিয়ে আছে।

খুশী মনে সেদিন তাওসিফ হোস্টেলে গেল।ঐ রাতটাও উত্‍সর্গ করল তান্নিকে নিয়ে ভাবার কাজে।সে খেয়াল করেছে যখনই সে তান্নির কথা ভাবে তখনি তার মন অনাবিল প্রশান্তিতে ভরে যায়।এই ভালোবাসাই তার জীবনে এনে দিয়েছে এতো শান্তি।সে মনে মনে মহান আল্লাহ তাআলার শুকরিয়া আদায় করল।এসব কথা ভাবতে ভাবাতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছে বলতে পারবেনা।

সপ্তাহখানেক পরের কথা।তাওসিফ কলেজে গেল এবং সারাদিনক্লাস করে কাটাল।সেদিন সে মনস্থির করে ফেলল আজ যে করেই হোক তান্নির সাথে কথা বলবেই।অবশ্য প্রতিদিনই এই কাজটি করতে চায়।কিন্তু তার সমস্যা একটাই সে কখন কোন মেয়ের সাথে কথা বলেনি।আর আসল ব্যাপার সে গুছিয়ে কথা বলতে পারেনা। তার ভয়,কথা বলতে গেলেই যদি তান্নি মন খারাপকরে,যদি তাকে খারাপ ছেলে মনে করে।
তবে আজ সে দূঢ় প্রতিঞ্জ,যে করেই হোক কথা বলবেই।

ছুটির পর সে কলেজ গেইটের কাছের শিমুল গাছটির তলায় দাঁড়িয়ে আছে।অবশ্য একাজটা সে প্রতিদিনই করে ।তান্নি প্রতিদিন এদিক দিয়েই পাশের বাস স্ট্যান্ডে যায়।তবে আজকে দিনটার কথা আলাদা ।আকাশের মনটা আজ বেদনার কালো মেঘে ছেয়ে আছে।যেকোন মুহুর্তে ফেটে পড়বে অঝোর ধারায়।

অনেক্ষন যাবত সে দাঁড়িয়ে আছে।কলেজের প্রায় সব ছাত্র ছাত্রীই চলে গেছে।কলেজ প্রায় ফাঁকা।অদূরেই দ্বিতীয় বর্ষের এক ছাত্র বাইক নিয়ে বসে আছে।তাকে দেখে তাওসিফ মনে মনে হাসল।সে মনে মনে ভাবল "ঐ বড় ভাই বোধ হয় আমার মত একই কারনে দাঁড়িয়ে আছে"।

ইতিমধ্যে টিপটিপ বৃষ্টি পড়তে শুরু করেছে।এ সময় বেরিয়ে এল তান্নি।তাওসিফের হৃদপিন্ডের কম্পন ভয়াবহ রকমে বেড়ে গেল।অথচ সে খেয়াল করল তান্নির যে দিকে আসার কথা সে সেদিকে আসছে না।তাওসিফ কিছুটা অবাক হয়ে গেল।তাকে আরো অবাক করে দিয়ে তান্নি এগিয়ে গেল দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রটির দিকে।কিছুক্ষন কথা বলার পর সে ছেলেটির হাত ধরে উঠে বসল তার বাইকে।তাওসিফ দম বন্ধ করে ফেলল ।দেখতে দেখতে দীর্ঘ হাইওয়ের মোড় ঘুরে তাদের বাইকটি হারিয়ে গেল অন্য পাশে।এতোক্ষনে তাওসিফের চোখ দিয়ে জল গড়াতে শুরু করেছে।বৃষ্টির জলের সাথে মিশে যাচ্ছে তার চোখের জল ।নির্জন প্রান্তরে সে একাদাঁড়িয়ে আছে।তার বুঝাতে আর বাকি নাই যে ঐ ছেলেটা তান্নির প্রেমিক ।অঝোর ধারায় বৃষ্টি নামছে তার চোখ দিয়ে ।আর তার এতোদিনের জমানো সব স্বপ্ন বেরিয়ে যাচ্ছে অশ্রুবিন্দু হয়ে। ___

লেখকের কথাঃ এ গল্পের কাহিনী বা চরিত্র সবই বাস্তব ।তবে কলেজের নামের পরিবর্তন করা হয়েছে

No comments:

Post a Comment

আপনার মন্তব্য দিন