Pages

লাভ স্টোরি

                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                      ।।~সিক্ত নীলাম্বরী~।।
       রফিক স্যার।

-ভাইয়া, কেমন আছেন?

-ভালো ।তুমি কি আমার জুনিয়র ?

-জ্বী, ভাইয়া ।

-কোন ডিপার্টমেন্ট এ পড়? তোমার নাম কি?

-আমার পরিচয় জানা কি খুব দরকার?

-খুব দরকার না । কিন্তু বললে ভাল হত । না বলতে চাইলে থাক।

-ভাইয়া আপনাকে একটা প্রশ্ন করি?

-কর।

-আপু কিসে পড়ে?

-কোন আপু?

-আপনার গার্লফ্রেন্ড এর কথা বলছি।

-আমার আবার গার্লফ্রেন্ড !! আমি দেখতে মোটেও সুন্দর না, আনস্মার্ট।আমার সাথে কে প্রেম করবে ?

-আপনি মোটেও আনস্মার্ট না । আপনি অনেক সুন্দর।

-তুমি কি আমাকে চিন?

-হুম,চিনি ।।

-তাহলে তোমার পরিচয়টা দাও ।

-এখন পরিচয় দিব না ।এতটুকু বলি আমি সেকেন্ড ইয়ারে পড়ি ।

-কোন ডিপার্টমেন্ট ?

-এটা বলব না । আপনাকে এই প্রশ্নটা করেছি বলে কিছু মনে করেননি তো ? এটা আমার এক বান্ধবী জানতে চেয়েছিল ।

-তোমার বান্ধবী কে?

-এটাও বলতে পারবনা । বললে ও রাগ করবে । আপনি আমাকে বিশ্বাস করতে পারেন একজন বন্ধু অথবা ছোট বোন হিসেবে ।

-আমি তোমাকে কি মনে করব বন্ধু না ছোট বোন ?

-আপনার ইচ্ছা ।

-তুমিই বল ।

-আপনি আমাকে ছোট বোন মনে করতে পারেন ।

-পরে কিন্তু আবার বন্ধুতে কনভার্ট হতে পারবে না ।

-কেন কনভার্ট হব? একটা বোনের কাছে বড় ভাই সবচেয়ে ভাল বন্ধু ।

-ঠিক আছে । আমি কিন্তু তোমাকে তুই করে বলব ।

-তাহলে আমি আপনাকে তুমি করে বলব ।

-তোকে আমি কি নামে ডাকব?

-সিক্ত অথবা নীল অথবা নীলাম্বরী ।

-তোর এই সাহিত্যিক নাম বাদ দিয়ে আসলনামটা বল ।

-এখন বলব না । আরো দুই বছর পরে বলব ।

-এখন বললে কি হবে? ।

-ভাইয়া, আমার কোন বড় ভাই নেই । বড় ভাই থাকলে তাকে আমি ভাইয়ামনি ডাকতাম । তোমাকেই ভাইয়ামনি বলব ।

-বলিস । তোর বিয়েতে তুই কি চাস?

-তুমি যা দেবে তাতেই আমি খুশি ।

-জানিস ভার্সিটিতে তুই আমার সবচেয়ে আদরের ছোট আপুনি । আপু এতটুকু বল তুই কে?

-ভাইয়ামনি,তুমি আমাকে দেখেছ ।

-কোথায় দেখেছি ?

-আজ থাক, পরে কথা হবে ।



মেয়েটাকে কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারছিলাম না । পরিচয় চাইলে কিছুই বলে না । তন্ময় অথবা নীতু কি আমাকে বোকা বানাচ্ছে? তন্ময়কে বললাম, তুই কেন আমার সাথে দুষ্টামি করছিস? তন্ময় বলল আমি কেন তোর সাথে এমন করব? তখন মনে হল এটা নীতু হতে পারে । আমি মেয়েটাকে কিছুটা অপমান করলাম। তুই কি আমাকে ভালবাসিস? সরাসরি বললেই তো পারিস । তোমাকে আমি ভাইয়ামনি বলি আর তুমি এসব কি বলছ? ঠিকই বলেছি । তোর পরিচয়টা দিলে কি হয় । তোমাকে আমার আপন মনে হয়েছে একটা কারনেই তোমার মত করে কেউ আমাকে আপু ডাকেনি । তোমার মতকরে কেউ কাছে টানেনি । তুমি যদি আমাকে বিশ্বাস না কর তাহলে আমার সাথে আর কনট্যাক্ট করো না । আমার কোন ছোট বোন নেই ।



এই মেয়েটা আমাকে মায়ার জালে আবদ্ধ করে ফেলছে । আসল কথাটাই বলিনি ওর সাথে আমার পরিচয় ফেসবুকে। আমি তখন চতুর্থ বর্ষে পড়ি। "সিক্ত নীলাম্বরী" ইনফো দেখে বুঝলাম আমাদের ভাসির্টিতেইপড়ে। জুনিয়র কোন মেয়ে । তাই একসেপ্ট করেছিলাম । খুব মিষ্টি মেয়ে । খুব সহজেই মানুষকে আপন করতে পারে । ল্যাপটপের স্কীনে যখন ভাইয়ামনি লেখাটা দেখি, তখন মনে হয় একটা আদুরে গলায় কেউ আমাকে ভাইয়া মনি ডাকছে । চারদিন ও অনলাইনে আসেনি । আমার অনেক খারাপ লেগেছে । আমার ছোট আপুটা কেন আমাকে ভাইয়ামনি বলে না । বুঝতেও পারলাম না কখন নীলটা আমার হৃদয়ের অনেকটা অংশ দখল করে ফেলেছে । মেসেজ দিল, ভাইয়ামনি আমার খুব জ্বর হয়েছিল । এখন ভাল আছি । তুমি কি আমাকে মিস করছিলে ? বৃষ্টিতে ভিজেছিস? ভাইয়াকে কষ্ট দিতে খুব ভাল লাগে তাইনা? আয় ভাইয়ার বুকে আয় । তোকে একটু আদর করি । মেয়েটা অনেক ভাল এতে কোন সন্দেহ থাকল না । এভাবে এক বছর কেটেগেল । আমি ওর সাথে দেখা করতে চাইলাম । ও বলল ভাইয়া আর একবছর পরে । আমি ওকে ফোন নাম্বার দিলাম । বললাম যদি কখনো কোন প্রয়োজন হয় ভাইয়াকে ফোন দিস।



ভার্সিটি লাইফ শেষ । জব নিয়ে ব্যস্ত সময় কাটছে । আমার ছোট আপুটাকে আর আগের মত সময় দিতে পারি না। মাঝে মাঝে অভিমান করে। সপ্তাহে দু একটা মেসেজ দিতেই হবে। না দিলেই মেসেজ পাঠাবে ভাইয়ামনি আমাকে ভুলে গেছ? কাজের চাপটা বেড়ে গেল। একমাস ওকে কোন মেসেজ দিই নি । কিন্তু ওর কোন অভিমান সিক্ত মেসেজ নেই। মেসেজ পাঠালাম কেমন আছিস, নীল? কোন রিপ্লে পেলাম না। ভাবলাম রাগ করেছে । খুব অভিমানী মেয়েটা । ওর ফোন নাম্বার আমাকে দেয়নি । ঠিকানাও জানি না । তাই যোগাযোগ ও করতে পারছিলাম না ।



কয়েকদিন পর একটা অপরিচিত নাম্বার থেকে কল আসল রিসিভ করতেই বলল, ভাইয়ামনি আমি খুব অসুস্থ । তুমি আমাকে দেখতে চাইলে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে চলে আস । ওর কথা বলতে কষ্ট হচ্ছিল । আমি দেরি না করে চলে গেলাম । ওকে দেখে চিনতে পারলাম ও অনামিকা । বেশ শান্ত ভদ্র মেয়েটা আমার বন্ধুর কাজিন তিশার বান্ধবী ও। তিশার সাথে ক্যাম্পাসে ওকে দেখেছি কখনো কথা হয়নি । বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছিল আমার নীলটা আর বেশীক্ষন থাকবেনা। নীল কথা রেখেছে । আমাদের দেখা হল একবছর পরেই কিন্তু এভাবে দেখা হবে কখনো ভাবতে পারিনি । নীল হয়ত আমাকে আগে থেকেই কষ্ট দেওয়ার পরিকল্পনাটা করে রেখেছিল । অশ্রু ধরে রাখতে পারলাম না।



আমাকে কাঁদতে না করল । সারাটা বিকাল ওর পাশে ছিলাম । আমার কেমন লাগছিল সেটা বলে বুঝাতে পারব না । রাতে আমাকে বাসায় চলে যেতে বলল । বাসায় গিয়ে একটু পর পর ফোনে ওর খবর নিচ্ছিলাম । কখনযে ঘুমিয়ে গেছি খেয়াল নেই। সকালে জানতে পারলাম নীল আর নেই । বাস্তবে ছোট বোনের প্রতি ভাইয়ের ভালোবাসা কেমন হয় জানি না । নীলকে আমি কতটা ভালবাসি সেটাও বলতে পারবনা । শুধু অনুভব করলাম আমার হৃদয়ের একটা অংশ কে যেন ছিড়ে নিয়ে যাচ্ছে ।

নীলের শেষ মেসেজ......
ভাইয়ামনি আমি তোমার নীল আকাশে ছোট্ট সিক্ত নীলাম্বরী । পাবে আমায় খুব কাছে ডাক যদি একটু ভালবেসে ।

No comments:

Post a Comment

আপনার মন্তব্য দিন