Pages

"অপূর্ণতা"

                                                                                                                                                                             ন্যাকামি জিনিসটা কখনোই তপুর মধ্যে ছিল না,থাকলেও সেটা উল্লেখ করার মত না।শুধুমাত্র ন্যাকামির কারণে সে প্রেম জিনিসটা খুব অপছন্দ করতো।আর বেশীরভাগ মেয়েরা যেহেতু ন্যাকা হয় তাই মেয়েদের সাথেও তেমন একটা মিশতে পারতো না সে।অবশ্য ছেলেদের সাথেও যে খুব একটা মিশতো তাও না।একটু আড়ালেই থাকতে পছন্দ করতো।তাই দেখা যেত মেডিকেল কোচিং এর ক্লাসে সে চুপচাপ এক কোণায় বসে স্যারদের লেকচার শুনছে স
ে।এইচ এস সি এর রেসাল্ট এর পর যখন কোচিং এ স্যাররা জিজ্ঞাস করল রেসাল্ট কি,তখন বলতে একটু খারাপই লাগছিল তার।কারণ ক্লাসে সবচেয়ে খারাপ রেসাল্ট মনে হয় ওরই ছিল।ক্লাস শেষে কিছুটা মন খারাপ করেই বের হচ্ছিল,হঠাত্‍ একটা মেয়ে বলল,"এই,তুমি সারাক্ষণ মন খারাপ করে বসে থাকো কেন,কেউ ছ্যাকা দিসে?" হঠাত্‍ এই কথা শুনে তপু একটু অবাকই হলো,সাথে কিছুটা বিরক্তও।ইদানিং সবারই ধারণা শুধুমাত্র ছ্যাকা খেলেই মন খারাপ হয়,আর কোন কারণ থাকতে পারে না।আর খোচা খোচা দাড়ি রাখলেই সবাই দেবদাস মনে করে।তপুর এই টাইপ খুচরা দাড়ি ছিল।তাই প্রেম না করলেও দেবদাস কথাটা শুনতে শুনতে ওর কান ঝালাপালা হয়ে গিয়েছিল।যাই হোক,মেয়েটাকে সে বলল,"না আপু,আসলে আমার চেহারাটাই এমন" মেয়েটা বলল,"তোমার চেহারা এমন বুঝলাম,bt আমার চেহারা কি আপুর মত, আমি কি তোমার আপু লাগি" মেয়েটার চেহারা ভালই ছিল।তপু কোন কথা না খুজে পেয়ে বলে ফেলল,"আসলে তা না,তুমি তো আমার বোনের মতই" বলেই সে বুঝল সে কি ভুল করেছে।কারণ মেয়েটা তার কথা শুনে হাসতে হাসতে চিত্‍পটাং।তপু বুঝলনা এই কথায় এত হাসার কি আছে।সেদিন আরো কিছুক্ষণ মেয়েটার সাথে কথা হলো তার।কথার ফাকে মেয়েটার নামও জেনে ফেলল,রাইসা।

রাইসা।খুবই অস্থির একটা মেয়ে।প্রচুর কথা বলে।মেডিকেলে পড়ার বিন্দুমাত্র ইচ্ছা না থাকলেও বাবা মার মন রক্ষার্থে সে কোচিং করছে।তবে কোচিং এ এসেও তার অস্থিরতা বজায় রেখেছে।কোচিং এ কে কি করে এসব দেখেই তার সময় কাটত।এভাবেই তপুকে তার চোখে পড়ে।রাইসা বুঝতো না একটা ছেলে কিভাবে এত শান্তভাবে থাকতে পারে।তবে তপুকে দেখে তার একটু মায়াও লাগত।কারণ তপুকে খুবই বিষন্ন মনে হত।তবে তপুর সাথে কথা বলে সে বুঝল তপু আসলে কি জিনিস,পুরাই নিমকা শয়তান।

দেখতে দেখতে দুইজন ভাল বন্ধু হয়ে গেল।যদিও তপু একটু ঘরকুণো ছিল।কিন্তু রাইসা কোথাও যেতে বললে সে না করতে পারত না।আসলে রাইসার সাথে ঘুরতে তার ভালই লাগত।ফোনে ওদের কথা কমই হতো কারণ তপু ফোনে কথা বলা এত পছন্দ করত না।তবে ফেসবুকে প্রচুর চ্যাট হতো। একে অপরের প্রতি দুজনই দূর্বল হয়ে পড়ছিল কিন্তু কেওই কাউকে বুঝতে দিচ্ছিল না।ভর্তি পরীক্ষার দিন ঘনায় আসলে তপু কুমিল্লা চলে আসে।তপুর সিট পড়েছিল কুমিল্লায়।রাইসা ঢাকা থেকেই পরীক্ষা দেয়।দুজনের পরীক্ষাই খারাপ হয়।একে তো পরীক্ষা খারাপ হয়েছে তার উপর দুজনের অনেকদিন দেখা নাই তাই দুজনেরই মন খারাপ।কিন্তু চ্যাট এ কেও কাউকে সেটা বুঝতে দেয় না।তবে দুজনে চ্যাট চলতেই থাকে।তপু মনে মনে প্ল্যান করে মেডিকেলের রেসাল্টটা পজিটিভ হলে সে রাইসাকে সবকিছু খুলে বলবে।তপু আর অপেক্ষা করতে পারছিলনা।রেসাল্ট এর টেনশানে ঘুম পুরাই গায়েব হয়ে গিয়ছিল।একদিকে রেসাল্টের টেনশান অন্যদিকে এর উপর নির্ভর করছে প্রিয় মানুষকে মনের কথা বলার সম্ভাবনা।

আজকে রেসাল্ট দিবে।সকাল থেকেই অস্থির ভাবে সারা ঘরে পায়চারি করছে তপু। মা বারবার এসে অভয় দিয়ে যাচ্ছে,"এত টেনশান করিসনা,এবার না হলো এরপরেরবার হবে" কিন্তু তপুই জানে সে কেন এত টেনশান করছে।সকাল থেকে রাইসা বেশ কয়েকবার ফোন দিয়েছে।বলেছে রেসাল্ট পেলে যেন সাথে সাথে জানায়।bt তপু যখন রেসাল্ট পেল তখন সে বুঝতে পারছিলনা কি করবে।রেসাল্ট নেগেটিভ।রাগে,দুঃখে সে অন্ধকার দেখতে লাগল।এমনকি রাইসার রেসাল্ট জানার মত সাহসও ছিল না তার।ফোন অফ করে সে ঘুমায় পড়ল।রাইসার সাথে সবধরণের যোগাযোগ বন্ধ করে দিল।কিছুদিন নিজেকে নিজের মধ্যে বন্দী করে রাখল।

এদিকে রাইসা মেডিকেলে চান্স পায়নি।রেসাল্ট পাওয়ার সাথে সাথে তপুকে অনেকবার ফোন দিল সে,কিন্তু ফোন বন্ধ।এরপর বেশ কিছুদিন ফোন করেও তপুর ফোন অন পেলনা।এদিকে রাইসার বাসার অবস্থাও খুব একটা ভালনা।মেডিকেলে না টিকায় ওর বাসায় খুব ঝামেলা হচ্ছে।এই সময় তপুকে ওর খুব দরকার ছিল।
২মাস কেটে গেছে।এরমধ্যে একবারও তপু রাইসার সাথে যোগাযোগ করেনি।সে বুঝতে পারছে রাইসা অনেক রাগ করেছে।তাই সে ভাবল রাইসাকে ফোন করে সরি বলবে।কিন্তু রাইসার ফোন বন্ধ।ফেসবুকে যেয়ে দেখে রাইসার একটা মেসেজ।তপুর কল্পনাতেও ছিলনা ওর জন্য কি অপেক্ষা করছে।মেসেজ পড়ে তপু জানতে পারল,মেডিকেলে না টিকায় রাইসার বাবা মা ঠিক করে রাইসাকে তারা আর পড়ালেখা করাবেনা।তারা রাইসার জন্য পাত্র দেখা শুরু করে অল্পদিনের মধ্যেই ওর বিয়ে ঠিক করে ফেলে।রাইসা তপুকে জানানোর অনেক চেষ্টা করেও পারেনি। মেসেজটা পড়ে তপূ পাথর হয়ে গেল।মেসেজে রাইসার বিয়ের তারিখটা দেখলো,তিনদিন আগেই সেটা পার হয়ে গেছে।
কম্পিউটার স্ক্রিনের মেসেজটার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তপু।মেসেজটার শেষ লাইনটায় চোখ আটকে আছে তার

"অনেক ভালবাসি তোকে,তপু কিন্তু তোকে আর পাওয়া হলোনা"

No comments:

Post a Comment

আপনার মন্তব্য দিন